উৎসের সন্ধানে-০১ ঃ সাম্য-মানবিক মর্যাদা-ইনসাফ

‘আত্মপরিচয়ের বয়ান’ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের উৎসের সন্ধান হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি আমাদের কাছে আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে । আমরা জানতে চেষ্টা করেছি ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ বা ‘ডিক্লারেশন’ ব্যপারটা আসলে কি? এর উৎসটা কোথায়? একটা জাতির জন্য এটি কেন দরকার হয়? কিংবা বাংলাদেশের মানুষের কাছে স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যপারটার মর্মার্থ কি কিংবা এনিয়ে তর্ক, বিভক্তি এবং ঐক্যের জায়গাটি আসলে কোথায়? আমরা দেখেছি স্বাধীনতার বিষয় নিয়ে পৃথিবীতে অসংখ্য ডিক্লারেশন রয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা, মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই, মানুষে মানুষে সাম্য আর ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের একটা সামগ্রিক রূপ-ই ছিল ডিক্লারেশন। বলা চলে, ডিক্লারেশনের ধারণাটা আসলে কলোনিয়ালিজমের লগে লড়াই কিংবা জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে জনগনের ভিতর অধিকারের ধারণা থেকে স্বতস্ফূর্তভাবে বিকশিত হয়েছে। পৃথিবীর ক্ল্যাসিক্যাল ‘ডিক্লারেশন’ হিসেবে বলা চলে আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘ডিক্লারেশন’, ফরাসি বিপ্লবের মানুষ আর নাগরিকের অধিকারের ডিক্লারেশন কিংবা হাইতির কাল মানুষদের স্বাধীনতার ডিক্লারেশন আমাদের তা-ই বলে। বলা চলে, আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঠিক আগে স্বৈরতন্ত্র আর কলনিয়ালিজম থেকে মুক্ত হতেই ফরাসি আর আমেরিকানরা প্রথম এই ডিক্লারেশনের ধারনাটা হাজির করে। (দেখুনঃ ১। http://www.archives.gov/exhibits/charters/declaration_transcript.html, ২।http://www.columbia.edu/~iw6/docs/dec1793.html ) বাংলাদেশে নামক রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রেও আমরা যে ডিক্লারেশনের কথা বলি তার চিন্তা আসলে আমেরিকার স্বাধীনতার ডিক্লারেশন কিংবা ফরাসি বিপ্লবের অধিকারের ডিক্লারেশন থেকেই আগত। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার সাথে আমেরিকার স্বাধীনতার ডিক্লারেশন কিংবা ফরাসি বিপ্লবের অধিকারের ডিক্লারেশনের সাথে মৌলিক কিছু তফাত লক্ষ্য করা যায়। যেমন- বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডিক্লারেশনকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করে ফেলছি। একটাকে বলছি ‘ডিক্লারেশন’ আরেকটাকে বলছি ‘প্রক্লেমেশন’। বাংলাদেশে স্বাধীনতার ‘ডিক্লারেশন’ নিয়েও দেখি এখানে মোটাদাগে তিন চারটা তর্ক বিদ্যমান ছিল। পরবর্তীতে আদালতের রায়ের মাধ্যমে বংবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে অবিহিত করার মাধ্যমে অবশ্য এই বিতর্কের একটা অবসান ঘটে। আদালতের রায়ের আগে অবশ্য যে তর্কগুলো ছিল তার কেন্দ্র ছিল বঙ্গবন্ধু, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং আবদুল হান্নান। আবার বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা নিয়েও রয়েছে দু’টি আলাপ। যেমন-৭মার্চের ভাষণ আর ২৫মার্চ রাতের শেষ তারবার্তা। সাত তারিখের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বয়ানটা ছিল এরকম “এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম”। আর ২৫ মার্চ রাতের তারবার্তায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছেন, আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমি সংবিধান থেকে কোট করছি “ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও” জিয়াউর রহমান নিয়ে যে তর্কটা ছিল তাও অবশ্য তার ভাষণকে কেন্দ্র করে।বেলাল মোহাম্মদের 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' বইটা আমাদের এই দিকটা বুঝতে একটু সাহায্য করতে পারে যে তিনি ভাষণে আসলে কি বলেছিলেন। তার ভাষণের একটা রূপ পাওয়া যায় এমন ‘‘This is Shadhin Bangla Betar Kendro. I, Major Ziaur Rahman, on behalf of Bangobondhu Sheikh Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People's Republic of Bangladesh has been established. I have taken command as the temporary Head of the Republic. I call upon all Bengalis to rise against the attack by the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our Motherland. By the grace of Allah, victory is ours. Joy Bangla.” (Declaration of Independence of Bangladesh on March 27, 1971 at 7:45 PM); (দেখুনঃhttp://en.wikiquote.org/wiki/Ziaur_Rahman)। দেশের শাসন ক্ষমতার প্রশ্নে আমরা এই ভাষণের-ই আরেকটা রুপ দেখি ঠিক এভাবে “This is the Free Bengal Radio Station. I, Major Ziaur Rahman, on behalf of our great leader Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, do hereby declare that the independent People's Republic of Bangladesh has been established. At his direction , In the name of Sheikh Mujibur Rahman, I call upon all Bengalees to rise up against the attack of the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our motherland. Victory is, by the Grace of Allah, ours. Joy Bangla!” (দেখুনঃ History of freedom movement in Bangladesh, 1943-1973ঃ some involvement; Joyoti Sen gupta, Nayaprakash, 1974, P-325) এছাড়া আরেকটা মত রয়েছে, চটগ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর তারবার্তাটা কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে পুনরায় ঘোষণা করেন ২৬ মার্চ। (দেখুনঃ Mohammad Mostafa Kamal (2012). "Hannan, MA". In Sirajul Islam and Ahmed A. Jamal. Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second ed.). Asiatic Society of Bangladesh) এই তিনটা তর্কের বাইরে সম্প্রতি তাজউদ্দীন আহমেদের কন্যা শারমিন আহমেদ তার পিতার জীবনী ‘তাজউদ্দীনঃ নেতা ও পিতা (পৃঃ৫৯)’ তে বলছেন যে তার বাবা স্বাধীনতার একটা ঘোষণাপত্র এবং একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে ২৫রাতে দেখা করতে যান। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এই ঘোষণা দেওয়া বা টেপরেকর্ড করা সম্ভব হয়ে উঠেনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। মোটাদাগে এই তিন চারটা তর্ক আমরা বিশ্লেষণ করলে আরো নানা তর্কের সাথে পরিচিত হই। যেমন মেজর জেনারেল জিয়ার ঘোষণা নিয়ে রয়েছে আরও তর্ক। এর মধ্যে বলা হয় তিনি নিজে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে যান নাই, তাকে জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে। কিংবা আরো রয়েছে তিনি তার ভাষণে দেশের প্রধান কি প্রধান নন বলে ঘোষণা দেয়েছেন কি দেন নাই? এসব তর্কও আমাদের সামনে নানা প্রশ্ন তুলে এনেছে। জিয়া যদি না আসেন কেনইবা তাকে কালুরঘাটে নিয়ে আসা হল? কেন এই ঘোষণা তখন কোন আওয়ামীলীগ নেতা দেন নাই? কেন জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান বললেন? যাই হোক, উপর্যুক্ত তর্কগুলো খেয়াল করলে দেখি আমরা আসলে ডিক্লারেশনের একটা সাবস্টানশিয়াল এবং কম্প্রিহেন্সিভ বয়ান পাইনা। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এবং তার ঘোষণাকে অন্য যারা পাঠ করেছেন বলা হয় তার সবগুলো বিশ্লেষণ করলে আসলে আমরা পাকিস্তানের জুলুমের বিরুদ্ধে রেসিসটেন্সের একটা সাধারণ বয়ান পাই। অথচ এই রেসিসট্যান্স বা প্রতিরোধ কিন্তু তাদের ঘোষণার আগেই শুরু হয়ে গেছে জয়দেবপুরে, পিলখানায়, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট সহ আরো অনেক জায়গায়। এক্ষেত্রে মেজর জেনারেল মইনুল হোসেনের ‘এক জেনারেলের নীরব স্বাক্ষী’ একটা অকাট্য দলিল। যাই হোক এই ঘোষণাগুলা সাবস্টানশিয়াল এবং পরিপূর্ণ ছিল না বলেই আমরা স্বাধীনতার ডিক্লারেশনের একটা অবিনির্মানি (deconstructed) পরিপূর্ণ রূপ পাই অধ্যাপক ইউসুফ আলির ১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্র (Proclamation)এ। স্বাধীনতাটা কেন করছি? স্বাধীন হয়ে আমরা কেমন রাষ্ট্র গঠন করব তার পূর্ণ বয়ান রয়েছে এই ঘোষণাপত্রে। স্বাধীনতার ডিক্লারেশন কেন তার ব্যাখায় পাই ঠিক এভাবে “....যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল; এবং যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল; এবং যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহ্বান করেন; এবং যেহেতু তিনি আহূত এই অধিবেশন স্বেচ্ছার এবং বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন; এবং যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারষ্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করেন; এবং যেহেতু উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান; এবং যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে; এবং যেহেতু পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ ও গণহত্য এবং নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনার দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব কে তুলেছে; এবং................................. (দেখুনঃ ৬ষ্ঠ তফসিল, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান)” আমরা যে স্বাধীনতার কথা বলছি, তার মূলনীতিটা কি হবে তা নিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হচ্ছে “.........যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর তাদের কার্যকরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে; সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারষ্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি;........................” আমরা দেখছি স্বাধীনতার মূলনীতির বিষয়টা পষ্টভাবে এখানে বলা হচ্ছে- সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ। ঠিক যেমন আমরা আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে দেখেছি, যেখানে বলা হচ্ছে এই ডিক্লারেশনের মূলনীতিগুলো হবে “Life, Liberty and the pursuit of Happiness” কিংবা ফরাসি বিপ্লবের আগে মানুষ আর নাগরিকদের অধিকারের ডিক্লারেশনে বলা হচ্ছে, এই ডিক্লারেশনের মূলনীতি হবে স্বাধীনতা, সমতা আর ভ্রাতৃত্ব (Liberty, Equality, Fraternity)’। বাংলাদেশের পুরো জাতিগোষ্ঠিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা পৃথিবীর বুকে যে স্বাধীনতার বিপ্লবের ঘোষণা দিলাম তার মূলনীতি ঠিক করা হল ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর ইনসাফ’। এটা খুব-ই গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার যে, ২৬মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো আমাদের সামনে এসেছে, তাতে কোন দেশ বা সংস্থার প্রভাব ছিল না। বাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের একেবারে ভিতরের সহজাত কথাগুলোই প্রকাশিত হয়েছে এই ঘোষণাপত্রে। বলা চলে, আমরা যখন ডিক্লারেশনের কথা বলছি, এর জিনিওলজি খুঁজতাছি, তার সাথে পুরোপুরি মিল পাই অধ্যাপক ইউসুফ স্বাক্ষরিত ১০এপ্রিলের ঘোষণাটিতে। পৃথিবীর বুকে আমরা বাংলাদেশ নামক যে বিপ্লব করেছি তার মূলনীতি হল এই সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর ইনসাফ। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যে তিনটি মৌলিক মূলনীতির উপর ভিত্তি করে সংঘঠিত হয়েছিল, ১৯৭২ সালের পর তা নিয়ে আর কোন আলোচনা হলোনা। রাষ্ট্রের সংবিধান রচনায় এই তিনটি মূলনীতি উপেক্ষিত হল। বাংলাদেশ নামক যে বিপ্লব হল, তাতে আর এই তিনটি মূলনীতির কথা বলা হলোনা। অথচ এখনো ফরাসিরা গর্ব করে তাদের স্বাধীনতা, সাম্য আর ভ্রাতৃত্বের বয়ানকে; যেমন করে আমেরিকানরা লাইফ, লিবার্টি আর পারসুয়েট অব হ্যাপিনেসের বয়ানকে। আমরা লক্ষ্য করলাম, বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি ঠিক করতে এই জাতীয় ঐক্যের প্রতীক সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর ইনসাফের বয়ানকে পাশ কাটিয়ে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ‘সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ, সোশ্যালিজম’ এর মত বিষয়গুলোকে সংবিধানের মূলনীতি করা হল। বৈষম্যহীন ও ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্রগঠনের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০এপ্রিলে আমাদের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে তিনটি বিষয়কে মূলনীতি করা হয়েছিল তা সংবিধানের মূলনীতি করার জন্য আন্দোলন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।


নিজের সম্পর্কে লেখক



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।