আইএস উত্থানে আমেরিকার ভূমিকা
আইএস এর উত্থানের প্রেক্ষাপট,এবং অপ্রতিরোধ্য বিশাল সামরিক শক্তি নিয়ে এর আবির্ভাব সব কিছুই এখনো জটিল ধাঁধা হয়ে আছে।কার আশ্রয়ে এবং কোন প্রেক্ষাপটে এটির বেড়ে উঠা এটি এখনো স্পষ্ট নয়।তবে আমেরিকার স্বারথান্বেষী রাজনৈতিক পরিকল্পনা এবং সিআইএ এর ক্ষমতা বণ্টনের অপকৌশলের ফলে সৃষ্ট নির্যাতন ও নিষ্পেষণ এর ভিত্তি তৈরি করেছে।
সাম্প্রতিক যে হামলাগুলো হচ্ছে পশ্চিমারা যাকে‘অপ্রত্যাশিত সন্ত্রাসবাদ’ বলছে,এটি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পছন্দের সরকার বসানোর জন্য সিএআই গোপনে ও প্রকাশ্যে যে রাজনৈতিক এবং সামরিক কলকাঠি নাড়িয়েছে তার ‘একটা অপ্রত্যাশিত ফল’ বলা চলে। এসব হামলার নেপথ্যে যারা,তাদের গড়ে উঠা এক অর্থে পশ্চিমাদের পৃষ্ঠপোষকতায়।ছোট্ট পরিসরে কয়েকটি উদাহরণ দেখব।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নকে হটানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার সুন্নি তরুণকে জিহাদ মূলমন্ত্রে অনুপ্রাণিত করে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে গড়ে তোলা হয় অর্থনীতি যোগান দিতে আনা হয় ধনী পরিবারের সন্তান ওসামা বিন লাদেনকে। আইএস তালিবান বা আল কায়েদার গোড়ার ইতিহাস এটাই।
সেই আইএসের হাতে গড়ে তোলা সুন্নি যোদ্ধারাই আবার মুসলিম বিশ্বে আমেরিকার অতিরিক্ত মিলিটারাইজেশন বা মিলিটারি ঘাঁটি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা শুরু করে। উপসাগরীয় যুদ্ধে তার উদাহরণ মেলে।
‘নাইন-ইলেভেন’ ধুম্রজাল সৃষ্টি করে লাদেনের খোঁজে আফগানিস্তান হামলা আর প্রচুর বেসামরিক লোক হতাহতের ঘটনা আইএস বা জঙ্গিগোস্ঠি উত্থানে প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
ভূল তথ্যের ভিত্তিতে এবং মার্কিনপন্থি শিয়া সরকার প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে করা ইরাক যুদ্ধ ক্ষুব্ধ ইরাকি ও সুন্নি জিহাদিদের অস্ত্র হাতে তুলে নিতে একরকম বাধ্য করে।
একদিকে স্বৈরশাসক গাদ্দাফিকে উৎখাত অন্যদিকে মিসরে নির্বাচিত সরকার হটিয়ে সেনা শাসন আনয়নে ভূমিকা পালন এই দ্বৈতনীতি ও আইএস উত্থানে একটা প্রেক্ষাপট রচনা করে
সর্বশেষ সিরিয়ায় আসাদ সরকার উৎখাতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো উল্টো ফল বয়ে এনে আইএসের আবির্ভাবের পটভূমি তৈরি করে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, আমেরিকা যার বন্ধু তার আর শত্রুর অভাব হয় না। অর্থাৎ বন্ধু আমেরিকা সময়ের পরিবর্তনে শত্রুতে পরিণত হয়। একসময়ের বন্ধু সুন্নি মুজাহিদরা এখন চরম শত্রু। আমেরিকার নেওয়া কিছু ভুল সিদ্ধান্ত আর ক্ষমতার পালাবদলে পছন্দের সরকার বসানোর জন্য নেওয়া কৌশলগুলো এই অপ্রত্যাশিত ফল বয়ে এনেছে।
তথ্যসূত্রঃপ্রজেক্ট সিণ্ডিকেট