'চিন্তার পাঠশালা'র ১৪৪তম আসরের আলোচনা
বিশ্বে প্রতিটি মানুষের বিপরীতে প্রায় ১৬ কোটি কীটপতঙ্গ রয়েছে। জোনাক পোকাতে Luciferin নামক enzyme রয়েছে। এনজাইমটি বাতাসের সংস্পর্শ পেলেই জ্বলে উঠে।
শৈলীর নিয়মিত সাপ্তাহিক আড্ডা 'চিন্তার পাঠশালা'র ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ শুক্রবারে ১৪৪ তম আসরের মূল আলোচ্য বিষয় ছিলো :
১) কৃষি বিজ্ঞান কী?
২) ইল্ড(yield) কী?
৩) জেনেটিক্স কী?
৪) হাইব্রিড ও হাইব্রিডাইজেশন কী? এর ফলাফল।
৫) সবুজ বিপ্লব (Green Revolution) ।
-
৬) প্যাথলজি ও এন্টোমলজি।
৭) আগাছা বিজ্ঞান(weed science) কী?
৮) রুপান্তর ও বিবর্তনের মধ্যকার পার্থক্য।
৯) নিউট্রিশন বা পুস্টি।
১০) ফার্টিলাইজার।
১১) বিবিধ।
-
আড্ডার শুরুতেই প্রশ্ন আসে কৃষিবিজ্ঞান বলতে কী বোঝায়? উত্তর আসে, কৃষিবিজ্ঞান মানে, " Science that deals with cultivation of soil for raising crops ".
এরপরই প্রশ্ন আসে ইল্ড কী মানে কী? উত্তরে বলা হয়, ইল্ড হলো, "Production in a unit land". অর্থাৎ একক আয়তন জমিতে উৎপাদিত ফসলকে ইল্ড বলে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে ৩ টন /হেক্টর ধান উৎপন্ন হয়।
হাইব্রিড মানে কী প্রশ্ন উঠলে উত্তরে বলা হয়, " ভিন্নতর জেনেটিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুই বা ততোধিক উদ্ভিদের মধ্যে ক্রস(cross) ঘটানোকে হাইব্রিডাইজেশন( Hybridization) বলে। আর এ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট উদ্ভিদকে হাইব্রিড বলে।
উদাহরণ: Dec-Geo Woogen * Peta = IR8 ( হাইব্রিড ধানের জাত)
হাইব্রিডাইজেশনের বৈশিষ্ট্যাবলী :
১) হাইব্রিডাইজেশনের ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
যেমন, ধানের ক্ষেত্রে বলা যায়:
Local Variety Yield - 2 ton/hectare Hybrid Yield - 8 ton/ hectare
২) উদ্ভিদের নতুন ভেরাইটি / জাত সৃষ্টি হয়।
৩) জমিতে সার বেশি প্রয়োগ করতে হয়। ৪)হাইব্রিড থেকে প্রাপ্ত বীজ পরবর্তী বছর ব্যবহার করা যায় না।
৫) ফসলের স্বাদ কমে যেতে পারে।
জেনেটিক্স নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বলা হয়:
Genetics is the study of heredity & variation. অর্থাৎ, পিতামাতা থেকে সন্তানের মাঝে বৈশিষ্ট্য কিভাবে পরিবর্তিত ও বাহিত হয় তা নিয়েই আলোচনা করে জেনেটিক্স। গ্রেগর জোহান মেল্ডেল মটরশুঁটি গাছের উপর গবেষণা করে সর্বপ্রথম এ বিষয়ে সূত্র দিয়েছিলেন।
সবুজ বিপ্লব (Green revolution) নিয়ে আলোচনা উঠলে উত্তর আসে, " সবুজ বিপ্লব হলো হাইব্রিডাইজেশনের সূচনা ও উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করার যাত্রা। যার দ্বারা পৃথিবীর মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরন করা সম্ভব হয়। Norman Borlaug ছিলেন এ বিপ্লবের নেতৃত্বে। ষাটের দশকে এটি সারা বিশ্বে বিস্তৃতি লাভ করে। ১৯৭০ সালে তাকে এজন্য নোবেল দেয়া হয় যে, তিনি বিশ্বের এক বিলিয়ন লোককে খাদ্য খাইয়েছেন। সবুজ বিপ্লবের ফলে ইল্ড দ্রুত বাড়ে।
যেমন, ফিলিপাইনে হাইব্রিড IR8 দ্বারা ১৯৬০ এর দিকে উৎপাদন দ্বিগুন বেড়েছিলো।
প্যাথলজি(Pathology) বা রোগতত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন আসলে বলা হয়," যে শাখা উদ্ভিদের রোগ ও রোগের কারন ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করে তাকে প্যাথলজি বলে।
ধানের রোগসমূহ :
Brown spot, Blast, Sheath blight, Bacterial leaf blight, Tungro.
গমের রোগ :
Leaf blight, Rust, Smut.
দমনের জন্য Fungicide সমূহ :
Bavistin, Dithane M 45, Tilt, Rovral, vitavax.
Disease Triangle : রোগ হওয়ার জন্য তিনটি আবশ্যক ফেক্টর-
১) বিষাক্ত জীবানু
২) সংবেদশীল উদ্ভিদ
৩) উপযুক্ত পরিবেশ।
উদ্ভিদের রোগের ফলে বিশ্বে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনাবলি :
১) Irish famine -1845 Disease : Late blight of potato
pathogen : phytophthora infestens.
2) Bengal famine -1943 Disease : Brown spot of Rice
pathogen: bipolaris oryzae.
-
Entomology (কীটবিদ্যা) নিয়ে প্রশ্ন আসলে উত্তর আসে, " কীটবিদ্যা কীটপতঙ্গের জীবন, উপকারিতা, অপকারীতা ও দমন নিয়ে আলোচনা করে থাকে।"
কীটপতঙ্গ ফসলের পরাগায়ন ঘটিয়ে উৎপাদন যেমন বাড়ায় ঠিক তেমনি ফসলের যথেষ্ট ক্ষতিসাধনও করে। বাংলাদেশে ২০% ফসল নষ্ট হয় পোকার আক্রমণে।
ধানের কিছু পোকার নাম:-
Stem borer, Rice bug, Rice hispa, leaf hopper.
পোকা দমনের উপায় :
১) পতঙ্গরোধী জাত ব্যাবহার করা।
২) ক্রপ রোটেশন করা।
পোকা দমনের জন্য কিছু পেস্টিসাইডের নাম হচ্ছে :
Pesticides : Sevin, Marshal, Furadan, DDT, Malathion
এই সকল স্প্রে ফসলে মোট ২/৩ বার দেয়া উচিত। কিন্তু কৃষকরা ৬০-১৮০ বার পর্যন্ত দিয়ে দেয়। যা ফসলকে বিষাক্ত করে এবং মানব দেহের ক্ষতিসাধন হয়।
জোনাক পোকার আলো জ্বলার রহস্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে উত্তরে আসে,
জোনাক পোকাতে Luciferin enzym থাকায় এরকম ঘটে। এনজাইমটি বাতাসের সংস্পর্শ পেলেই জ্বলে উঠে। এই এনজাইমকে তামাক গাছে নিয়ে পরিক্ষা করা হয়েছিলো। মজার বিষয় হচ্ছে, তামাক গাছেও আলো জ্বলেছিলো।
-
Weed Science ( আগাছাবিদ্যা) নিয়ে আলোচনা উঠলে উত্তর আসে, Weed science হচ্ছে," A plant out of place." ফসলের জমিতে উৎপন্ন অপ্রয়োজনীয় উদ্ভিদকে আগাছা বলা হয়ে থাকে। আগাছা ফসলের সাথে কিছু উপাদান নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। যা ফসলের জন্য ক্ষতিকারক।
যেমন: Light, Space, Nutrition, Water. আগাছা দমনের কিছু উপাদান:-
Herbicide : 2,4-D ; Paraquat; MCPA.
Morphogenesis(রুপান্তর) ও Evolution (বিবর্তন) নিয়ে প্রশ্ন উঠলে উপস্থিত সভ্যদের মাঝে বেশ যুক্তিতর্ক হয়। বিশেষ করে প্রজাপতির জীবনচক্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আমরা জানি প্রজাপতি বিচ্ছু থেকে রুপান্তরের ফল। বিচ্ছুই একসময় রুপান্তরিত হয়ে প্রজাপতিতে পরিণত হয়। তবে বিচ্ছু থেকে প্রজাপতি হওয়া বিবর্তন নয়, রুপান্তর। কারন বিবর্তন হলে তা ধীরে ধীরে অন্যপ্রজাতিতে পরিনত হওয়ার কথা। কিন্তু প্রজাপতির জীবনচক্র দেখলে স্পষ্টত হয় যে, এটি রুপান্তর। কারন আমরা জানি, পোকার জীবনচক্রে ধারাবাহিক পরিবর্তনই হলো রুপান্তর।
Morphogenesis ঘটে এমন কিছু প্রাণী :- beetles, butterflies, moths, ant, bees flies.
প্রজাপতির জীবন চক্র :
Egg--larva-- pupa-- adult (ছবিতে দেয়া আছে)
-
কৃষির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্টান নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এরকম কিছু প্রতিষ্টানের নাম হলো:
1) BRRI : Bangladesh Rice Research Institute variety :
65 বন্যা সহিষ্ণু - BRRI dhan 51,52 খরা সহিষ্ণু -56
2) BINA: Bangladesh Institute of Nuclear Agriculture.
3) BARI: Bangladesh Agricultural Research Institute.
4) BTRI: Bangladesh Tea Research Institute.
5) BSRI: Bangladesh Sugarcane Research Institute.
6) BJRI: Bangladesh Jute Research Institute.
7) SRDI: Soil Resource Development Institute.
8) DAE: Department of Agricultural Extention :- এই ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়। -
বিভিন্ন ফল ও খাবারের পুস্টিগুন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে উত্তরে কিছু ফল ও খাবারের পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
যেমন : টক জাতীয় ফলে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন -সি পাওয়া যায়। তবে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
১) আমলকি - 463 mg/100g.
২) পেয়ারা - 210 mg/100g
৩) বাতাবীলেবু -105 mg/100g.
ভিটামিন -এ পাওয়া যায়:
১)গাজর,
২) মিষ্টিকুমড়া
৩) আম
ভিটামিন - ডি :
১) দুধ ২) ডিম ৩) সূর্যের আলো।
ফ্যাট :
১) তেল ২) ঘি ৩) ডিম
ভিটামিন - বি, ই, কে :
১) সকল শাকসবজিতে পাওয়া যায়।
আমিষ/প্রোটিন :(১০০ গ্রাম)
১) মসুর ডাল- ২৫%
২) গরুর মাংস - ২২%
৩) মাছ - ২০%
এছাড়াও আড্ডায় বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। যা সংক্ষেপে হলো:
১) আদা ও হলুদ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি এন্টিওক্সিডেন্ট।
২) শাকসবজি বাসায় নিয়ে আধাঘণ্টা বিজিয়ে রাখুন।
৩) শাকসবজি কাটার পূর্বেই ধৌত করা উচিত।
৪) সুপারি একটি কার্সিনোজেন। যা ক্যান্সারের কারন।
৫) পান টনিক হিসেবে কাজ করে এবং গলার টোন ভালো রাখে।
৬) কীটনাশক ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তাই বিশুদ্ধ খাবারের জন্য নিজের বাড়িতে আজই বাগান করা শুরু করেন।
৭) প্রতিদিন শাকসবজি খেলে কুষ্টকাঠিন্য দূর হয়।।