বঙ্গবন্ধু ও জয় বাংলা
বঙ্গবন্ধু ও জয় বাংলা শব্দ দুইটি ওতোপ্রতভাবে ভাবে জড়িত। বাঙ্গালীর ইতিহাস তো বটেই বাংলা ও বাঙ্গালীর রাজনীতি ও সংস্কৃতির একটি অন্যতম ম্লোগান বলা যায় এই জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু ছাড়া জয় বাংলা যেমন অর্থহীন তেমনি জয় বাংল ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শব্দটি পূর্ণতা পায় না। অন্তত পক্ষে স্লোগানের ক্ষেত্রে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান ধারন করেই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সবাই। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু পংথিটি একটি কবিতার মতো আর এই কবিতার সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকেই ঘিরেই। এছাড়া জয় বাংলা স্লোগান বঙ্গবন্ধুরই আবিষ্কার। কবি নজরুল ইসলামের একটি কবিতা থেকে জয় বাংলা স্লোগানটি বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন ১।
জয় বাংলা শব্দটি সর্ব প্রথম ১৯৬৯ইং ১৫ই সেপ্টেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনে সর্ব দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষধে এক সভায় ছাত্র আফতাব আহম্মেদ ও চিশতী হেলালুর রহমান ‘‘জয় বাংলা’’ স্লোগানটি উচ্চারণ করেন২। তবে ১৯৭০ সালের ১৯ই শে জানুয়ারি ঢাকা পল্টনের এক জন সভায় ছাত্র নেতা সিরাজুল আলম খান তার ভাষনে সর্ব প্রথম জয় বাংলা স্লোগানটি উচ্চারণ করেছিলেন বলে প্রচলিত আছে ৩।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই স্লোগানটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন ১৯৭০ সালের ৭ই জুন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায়৪। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনের শেষে জয় বাংলা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বস্তুত পক্ষে জয় বাংলা স্লোগানটি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে শুধু মাত্র বঙ্গবন্ধুর মুখে উচ্চারণের পর থেকেই। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে মেজর জিয়া স্বাধীনতা ঘোষনাপত্র পাঠ করার সময় জয় বাংলা বলেছিলেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এক ভাষণে তাজউদ্দিন আহম্মেদ ও ১১ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে জয় বাংলা দিয়ে ভাষণ শেষ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এটি জাতীয় স্লোগানে পরিনত হয় এবং সাথে সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু উপাধী প্রাপ্ত হওয়ার সাথে সাথে জয় বঙ্গবন্ধু যুক্ত হয়ে যায়- স্লোগানটি পরিপূর্ণতা পায় ‘‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু” হিসাবে। এই স্লোগানটি কোন রাজনৈতিক দলের নয় এই স্লোগানটি সমগ্র বাঙালী ও বাংলাদেশের স্লোগান। তাই নিবন্ধের প্রথমে বলেছিলেন- বঙ্গবন্ধু ও জয় বাংলা শব্দ দুইটি একটি অপরটির পরিপূরক একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি উচ্চারণ করা শুধুমাত্র অপূর্ণই থেকে যায় না এর ভিতর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ষড়যন্ত্রেরইঙ্গিত ও আমরা লক্ষ করি। বিশেষ করে গণজাগরণ মঞ্চের জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। গণজাগরণের আন্দোলনের প্রথম দিকে সাধারণ জনতা বিষয়টি বুঝে উঠতে না পারলেও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠে এর মূল উদ্দেশ্য। অতি বাম গড়নার উম্মাদনায় বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে জয় বাংলা উচ্চারণটি ছিল জয় বাংলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্ন করার অপকৌশল মাত্র। সাথে সাথে আন্দোলনটি বিতর্কিত হতে থাকল এবং প্রশ্নবিজ্ঞ কিছু কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে গণজাগরণের মঞ্চ আজ একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর আয়োজন, আড্ডা, অনুষ্ঠানের পরিনত হয়ে পড়েছে। অথচ গণজাগরণের মঞ্চ যদি জয় বাংলার সাথে জয় বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করে স্লোগানটি পরিপূর্ণ করে রাখত। তাহলে গনজাগরণ মঞ্চ সকল জাতীয় ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনগুলো প্রচুর জনপ্রিয়তা পেত এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একটি শক্তিশালী মোর্চা হিসাবে সাধারণ জণগণের দাবি আদায়ের একটি ক্ষেত্রে পরিণত হতে পারত। গনজাগরণ মঞ্চ এই সুযোগটি হাত ছাড়া করল।
বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামীলীগের ভিতর থেকে বের করে এনে জাতীয় ভাবে সর্ব সাধারণের নেতায় পরিনত করতে পারত। যদিও বঙ্গবন্ধুও সর্বজনীন। এতে কোন সন্দেহ নাই। রাজনৈতিক পট পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুকে আজ একটি নির্দিষ্ট দলে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু দর্শনের সংস্পর্শে না থেকেও বঙ্গবন্ধুর ছবি, ভাষণ ভাঙ্গিয়ে দিব্বি রাজনীতি করে যাচ্ছে এবং সাধারণ জনগণের বিপরীতে শোষণ-শাষন পরিচালিত করছে। বলা হচ্ছে উন্নয়নের কথা, স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার। আসলে কি তাই হচ্ছে? বঙ্গবন্ধু যে শোষিত, নীপিড়িত সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জীবন দিয়ে গিয়েছিলেন সেই মুক্তির ধারে কাছেও কি তারা আছেন। নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর (আমলা, ব্যবসায়ী) স্বার্থ রক্ষার্থে তারা সদা কাজ করে যাচ্ছে।
আলোচনা শুরু করে দিলাম জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানটির বিষয় নিয়ে। যাই হোক -আজ যারা ‘‘ জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু ’’ বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ এই প্রতিষ্ঠিত সূত্রগুলোকে প্রশ্নবিব্ধ কিংবা বির্তকিত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তারা আর যাই হোক বাঙ্গালীদের শুভাকাংঙ্খী হতে পারে না। আমার মতে যারা জয়বাংলার পর জয়বঙ্গবন্ধু বলতে দ্বিধাবোধ করেন তারা নিজেদেরকে বাঙ্গালী দেশ প্রেমিক বলে পরিচয় দিতে পারেন না তাদের অভ্যন্তরে ভিন্ন কৌশল কাজ করে, যা বাঙ্গালী জাতির জন্য শুভকর নয়। সর্বশেষে বলব বঙ্গবন্ধু সার্বজনিন এবং জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালীর গন মানুষের শ্লোগান।
তথ্য সূত্র:
১। নজরুলের ১১৬ তম জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানে (কুমিল্লা)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২৫ শে মে ২০১৫ইং এই তথ্য দেন)।
২। শুদ্ধস্বর, পৃষ্ঠা-৫৫ স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়করা, নুরুজ্জামান মানিক-২০০৯
তথ্য-উইকিপিডিয়া
৩। উইকিপিডিয়া এবং আ.স.ম আব্দুর রবের স্বাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত