বিষণ্ণতা(Depression):
“Whenever you read a cancer booklet or website or whatever, they always list depression among the side effects of cancer. But, in fact, depression is not a side effect of cancer. Depression is a side effect of dying.” ― John Green, Fault of our Stars.আমি অনেক সময়ই বিষণ্ণতায় ভুগি, যা মোটেও ভালো বিষয় নয়।আমার বিষণ্ণতার অনেকগুলো কারন থাকতে পারে। সবগুলো আমি নিজেও জানি না। কত যে নির্ঘুম রাত কেটে গেছে তার হিসেব নেই। মাঝে মাঝে আমি ব্যাখ্যা দাঁড় করাই। যাইহোক, আমার আজকের লেখার বিষয় বিষণ্ণতা। অনেকে বলে থাকেন বিষণ্ণতা ছোঁয়াচে রোগের মত, তাই এই লেখা পড়ে অন্য কেউ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হলে আমি দায়ী নই। তাই মনে সংশয় থাকলে এখনি লেখাটি পড়া বাদ দিন।
বিষণ্ণতা কী?
স্নায়ুবিজ্ঞান, জেনেটিক্স, এবং ক্লিনিকাল তদন্ত থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে , বিষণ্ণতা মস্তিষ্কের একটি ব্যাধি। বিষণ্ণতা বেশিরভাগ মানুষের জীবনেই দেখা যায়, কারো বেশী অথবা কম। বর্তমান পৃথিবীতে বিষণ্ণতা একটি মারাত্নক স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং উদ্বেগের কারন।
বিষন্নতাকে সরাসরি দুঃখময়তা(Sadness) এর সাথে মিলিয়ে ফেললে ভুল করবেন। বিষণ্ণতা একটি রোগ হলেও দুঃখময়তা একটি সাধারণ অনুভূতি।
কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতাংশ বিষণ্ণতার সংজ্ঞা দেয়-
জানি- তবু জানি নারীর হৃদয়- প্রেম- শিশু- গৃহ- নয় সবখানি; অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়- আরো-এক বিপন্ন বিষ্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে; আমাদের ক্লান্ত করে; ক্লান্ত-ক্লান্ত করে ;
লক্ষণ ও উপসর্গঃ।
- উদ্বিগ্ন, অথবা খালি মেজাজ, আশাহীনতা , বিরক্তি।
- অপরাধবোধ, অপদার্থতা, বা অনুপায় অনুভূতি।
- শখ এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডে আনন্দ হারানো।
- শক্তি কমে আসা এবং ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করা।
- অস্থির বোধ করছেন বা কষ্ট এখনও বসা হচ্ছে
- কাঠিন্য, মনোযোগহীনতা, ঘুমহীন অথবা অতিরিক্ত ঘুম এবং ক্ষুধা।
- আত্মহত্যার প্রচেষ্টা।
- শরীরে ব্যথা কিংবা কষ্ট, মাথাব্যথা, একটি স্পষ্ট শারীরিক কারন।
মন কেন বিষণ্ণ হয়?
বিষন্নতার বিভিন্ন কারন থাকতে পারে। যেমন- অর্থহীনতা(Absurdity), অসুস্থতা(Illness), হরমোনের অস্বাভাবিকতা(Hormonal Abnormalities), মানুষিক আঘাত(Trauma) ইত্যাদি।
ফলাফলঃ
ক্রমাগত বিষণ্ণতায় থাকার ফলাফল খুবই মারাত্নক। এই বিষণ্নতা অনেক সময়ই মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বিষণ্ণতায় থাকার কারনে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ আত্নহত্যা করে। অনেকে অদ্ভুত কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন। বিষন্নতায় ভুগতে থাকা বেশিরভাগ মানুষই চরম শূণ্যতায় ভুগে। যা পরবর্তীতে ওই ব্যক্তির জীবনের বিরাট ক্ষতি সাধন করতে পারে।
আবার আসেন জীবনানন্দ দাশ-
আলো –অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরেস্বপ্ন নয়,- কোন এক বোধ কাজ করে !স্বপ্ন নয়- শান্তি নয়-ভালোবাসা নয়,হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!আমি তারে পারি না এড়াতে,সে আমার হাত রাখে হাতে;সব কাজ তুচ্ছ হয়,-পণ্ড মনে হয়,সব চিন্তা – প্রার্থনায় সকল সময়শূন্য মনে হয়,শূন্য মনে হয় !
বিষণ্ণতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভুল ধারনাঃ
অনেক মানুষই একজন বিষণ্ণ মানুষের দিকে তাকিয়ে বলে কীসের এত দুঃখ তার? তার চাইতে অভাবে থাকা কত মানুষই তো আছে, তারা তো এমন করে না। অনেকে বলে, সুখে আছে তো , ভীমরতিতে ধরছে।
এসব আসলে মানুষের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বিষণ্ণতাকে একটি রোগ হিসেবে দেখতে হবে এবং বিষণ্ণায় ভুগতে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
প্রতিকারঃ
বিষন্নতা কাটিয়ে উঠার বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা এবং উপায় রয়েছে।
- মেডিকেশন(Medications)
- মনঃসমীক্ষণের দ্বারা রোগনিরাময়ের চিকিত্সা(Psychotherapies)
- ব্রেন স্টিমুলেশন থেরাপি(Brain Stimulation Therapies)
আপনি নিজে নিজে যা করতে পারেন-
- সক্রিয় হয়ে উঠার চেষ্টা করুন এবং ব্যায়াম করুন।
- নিজের জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
- অন্যান্য মানুষের সাথে সময় ব্যয় করুন এবং একটি বিশ্বস্ত বন্ধু বা আত্মীয় নির্ভর করার চেষ্টা করুন।
- নিজেকে বিছিন্ন না করার চেষ্টা করুন, এবং অন্যদের সাহায্য করতে থাকুন।
- আপনার মেজাজ ধীরে ধীরে ভালো করার চেষ্টা করুন, পারিবারিক অশান্তি থাকলে তা মিটিতে ফেলুন।
- বিষণ্নতা সম্পর্কে নিজেকে শিক্ষিত করতে থাকুন।
- বই সাজেশন-১)মাইন্ড পাওয়ার ২)সিদ্ধার্ধ, হেরমেন হেসে ।
বিষন্নতা নিয়ে দু’টি মজার ঘটনা-
শেষ বয়সে আলবার্ট আইনস্টাইন বিষন্নতায় ভুগতে শুরু করেন। আইনস্টাইনের থেরাপিষ্ট আসতেন চিকিৎসা করাতে। আইনস্টাইন বিষণ্ণতা সম্পর্কে বলেছিলেন,
“Depression is a common thing for intelligent people”
চার্লি চ্যাপলিন বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন, তো একদিন মনঃচিকিৎসকের কাছে গেলেন। মনঃচিকিৎসক চ্যাপলিনকে চিনতে পারেননি। তাই হয়ত বললেন, আপনি চার্লি চ্যাপলিনের অনুষ্ঠান দেখবেন।
চ্যাপলিন হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন, আমিই চার্লি চ্যাপলিন।
বিষণ্ণতার ভালো দিক-
শুধু খারাপ দিক নয়, বিষণ্ণতার ভালো দিকও রয়েছে। বিষণ্ণতা আমাদেরকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়, জীবনের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়।
দার্শনিক ফ্রেডরিক নীটশের উক্তি এক্ষেত্রে আশা দেখায়, "That which does not kill us makes us stronger."
সবিশেষ,
বলা যায় , বিষণ্ণতা থেকে বাঁচার প্রধান উপায় হচ্ছে নিজের মনের উপর শাসন করতে শেখা এবং সবার উচিত বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকা মানুষের প্রতি মানুষিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া।
ভালো থাকবেন।
তথ্যসুত্রঃ সাইকোলজি টুডে, সাইসেন্ট্রাল।
তথ্যসুত্রঃ সাইকোলজি টুডে, সাইসেন্ট্রাল।