রাজশাহী পদ্মার পারে ফারাক্কা লং মার্চ এর ৪০তম বার্ষিকি উদযাপন
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিচালিত ফারাক্কা লং মার্চ এর ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিশাল গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয় ১৬ মে ২০১৬, লালন শাহ মুক্তমঞ্চ, পাঠানপাড়া, (পদ্মা নদীর পাড়), রাজশাহী। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ফারাক্কা লং মার্চ উদযাপন কমিনি, রাজশাহী, বাংলাদেশ। সৌজন্যে: নদী ও পরিবেশ আন্দোলন, রাজশাহী বাংলাদেশ।
এই গণজমায়েতে বক্তব্য দেন পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড.এস আই খান, ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কবি ও গবেষক ফরহাদ মজহার, প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহমদ, পানি প্রকৌশলী এম ইনামূল হক প্রমুখ। এর আগে এ উপলক্ষে পদ্মা-ফারাক্কা বিষয়ক শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
বক্তাদের দাবি একটাই ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে দিন। এটা শুধু বাংলাদেশের জনগণের নয়, নদীনির্ভর প্রতিটি জনগোষ্ঠি গাছপালা, পশুপাখি, কীতপতঙ্গসহ সকল প্রাণের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। প্রাণবিধ্বংসী এই মরণবাঁধ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে হবে। মওলানা ভাসানী এই কথাটাই বলেছেন।
পানি নেই। পানি শূন্য আজ পদ্মা। এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা আজ ধু-ধু মরুভূমি। এর কারণ হচ্ছে ফারাক্কা বাঁধ।
১৯৭৫ সালের গোড়ার দিকে ফারাক্কা ফিডার ক্যানেলটির কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কার বাঁধ চালু করার জন্য ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়। পরীক্ষামূলক সময়টি হবে ১৯৭৫’এর ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে এই ৪১ দিন। বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে। তারপর আর সেই ৪১ দিন শেষ হয়নি। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ১৯৭৭ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল এবং ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সঙ্গে গ্যারান্টি ক্লজ ছাড়াই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী পানি চুক্তি সম্পাদন করেছে। ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ৪১ দিনের জন্য ফারাক্কা বাঁধ চালু করলেও সেই সময় মনে হয় আজও অতিবাহিত হয়নি। শুরু হয় বাংলাদেশের দুর্দশা। পানির অভাবে ধীরে ধীরে প্রমত্তা পদ্মা হয়ে ওঠে ধু-ধু বালুচর।
ফারাক্কা চুক্তির নামে ভারতের পানি-প্রতারণাও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরের পর এবছর এই প্রথম বাংলাদেশ সর্বনিম্ন পানি পেয়েছে। শুষ্ক মওসুমে ফারাক্কা বাঁধ পেরিয়ে এতো কম পানি আর কখনই বাংলাদেশের ভাগ্যে জোটেনি। এমনকি গঙ্গা চুক্তি যখন ছিল না; সেই সময়টাতে পানি নিয়ে এমন দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। পানি না পাবার প্রধান কারণ, উৎস থেকে শুরু করে গঙ্গার মাঝপথেই পানির সিংহভাগ প্রবাহ সরিয়ে নিচ্ছে ভারত। ফলে পর্যাপ্ত পানি ফারাক্কা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। সে কারণে ফারাক্কা পয়েন্টে বাংলাদেশকে দেবার মতো যথেষ্ট পানি থাকে না। মাঝখানে বাংলাদেশের মানুষ চুক্তির নামে প্রতারণার শিকার হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
নিজের সম্পর্কে লেখক
উন্নয়ন কর্মী। চিন্তা পাঠচক্রের সঙ্গে যুক্ত।