বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্তিতি,প্রতিক্রিয়া চীনের জড়িয়ে যাবার আশংকা-2
বাংলাদেশে সম্প্রতি কিছু প্রতিক্রিয়া লক্ষ্যনীয় যার মধ্যে দিয়ে আমরা কিছুটা আচঁ করতে পারছি যে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিটা কাঠামোগত (structural) পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের চরিএের মধ্য দিয়েই তা অতিদ্রুত প্রকাশ পাবে। পেয়েছেও কিছুটা। বাংলাদেশের সরকার ঘোষনা করেছে যে, তারা প্রতিরক্ষার জন্য ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করবে। প্রতিরক্ষার ভিত্তি কাঠামোটা কোন শক্তিকে মোকাবিলা করবার জন্য ব্যবহৃত হবে তা মোটামুটি পরিষ্কার এই জন্য যে, এর আগে দক্ষিন এশিয় টাস্কফোর্সের নামে "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের" উপযোগী করে বাহিনী গঠনের পরিকল্পনাটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে প্রতিরক্ষার কথা যদি আমাদের ভাবতেই হয়, তাহলে এশিয়ার সবথেকে বড় শক্তি তো ভারত নয় চীন। চীনের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি হতে সমস্যাটা কোথায়? এই প্রশ্নটি সরল হলেও তাঁর ব্যাখ্যা অনেক বিস্মৃত। তবে তার আগে বলে নেওয়া ভাল যে, জাতীয় প্রতিরক্ষার প্রশ্নে প্রতিটি রাস্ট্রকেই তার নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তিকেই সুনির্দিষ্টভাবে সুদৃড় করে নিতে হয়, তারপরেই আসে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরীর ব্যাপার। তবে এই ব্যাপারে আমাদের মাঝে ভাবনার প্রচলনটা লক্ষনীয় নয়। প্রতিরক্ষার ব্যাপারে কর্তাসত্তা হয়ে উঠবার আকাঙ্খা আমাদের মাঝখানে খুবই কম। এখন পরিবর্তিত এই বিশ্বে আমাদের মত রাষ্ট্রের টিকে থাকবার জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির প্রয়োজন ছিল তা আমরা অর্জন করতে পারিনি। তাই এখনও বাংলাদেশকে দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচনা করতে হয়। যা আবার কিনা বহিঃশক্তির কাছে নতি স্বীকার করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। এখন যে বিষয়টির দিকে নজর ফেলতে চাই তাহল কেন ভারতই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার একমাএ অবলম্বন হল। "সন্ত্রাসবাদ" বিরোধী মার্কিন "অনন্তকালীন যুদ্ধের" ঘোষনার পরে ইরাক ও আফগানিস্তানের হামলা সমগ্র বিশ্বকে এক নতুন ধরনের যুদ্ধের স্বাদ পাইয়ে দেয়। বিশেষ করে যে সব রাষ্ট্র তাদের নিজেদের অভ্যন্তরে নির্যাতন নিপীড়ন বিরোধী শক্তিগুলোকে নৃশংসভাবে দমন করে আসছিল তাদের কাছে এই সব যুদ্ধের তাৎপর্য দাড়ায় এরকম যে, বিশ্বের পরাশক্তির এহেন কাজ তাদের দমন নিপীড়ন চালাবার এক নৈতিক ভিত্তি প্রদান করে। তারা "সন্ত্রাসবাদের" বয়ানের মধ্যে দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাবার এক জোরালো ভিত্তি পেয়ে যায়। ফলাফলে, মার্কিন নীতির সাথে তাদের সখ্যতা গড়ে ওঠে। দক্ষিন এশিয়ায় মার্কিন নীতির বাস্তবায়নের ক্ষেএে জোরালো ভূমিকা রাখতে যে দেশগুলোর নাম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে অন্যতম ভারত। ভারতের আভ্যন্তরিন অসন্তোষকে ভারতীয় রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা সন্তাসবাদের চলমান বয়ান দিয়ে ব্যাখ্যা করা শুরু করে। যার ফলে কাশ্মীর সমস্যা এবং ভারতের সেভেন সিস্টারস এর সমস্যাকে ভারতের ব্যাপক জনগনের মাঝে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরবার চেষ্টা করে। সেখানে ভারতীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধকে ভারত সরকার "সন্ত্রাসী কার্যকলাপ" হিসেবে প্রতীয়মান করতে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। যার কারনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঈসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের এক ধরনের অঘোষিত অক্ষশক্তির উদয় ঘটে যায়। যার ফলে ভারতে কাশ্মীর সমস্যায় ঈসরাইলের ব্যাপক সহায়তা দান থেকে শুরু করে, ভারতের পারমানবিক কর্মসূচির বৈধতা দান হয় যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক। এটা ভারতের নগদ লাভ। ফলে southeast asia তে মার্কিন নীতির যে প্রভাব বলয়ের তৈরী হয়েছে তার বাইরে বাংলাদেশেও কোন অবস্হান নিতে চাইছে না। তার ফলাফল হিসেবে বর্তমান সরকার ভারতের সাথে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উদ্ভূদ এই পরিস্হিতিকে সামনে রেখে এটা বাংলাদেশের Diplomatic reaction. পাশাপাশি মার্কিন পুঁজির প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত দ্বার হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ। এর ফলশ্রুতিতে, রাষ্ট্রের আভ্যন্তরিন নানাবিধ সমস্যায় মার্কিন হস্তক্ষেপেই রাষ্ট্রের চরিএের গুনগত পরিবর্তন হয়েছে। যার মধ্যে একটি ঊপসর্গ সবার কাছে পরিষ্কার যে, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রাষ্ট্র পাল্টা সন্তাস হিসেবে ক্রসফায়ারে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া কোন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তি যাতে মাথা তুলে দাড়াতে না পারে তার ব্যবস্হা সরুপ রাষ্ট্রকে পুলিশি রাষ্ট্র হিসেবে তৈরী করেছে ক্ষমতাসীনরা। চীন তার পররাষ্ট্রনীতির দিক থেকে এই পরিস্হিতিকে মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতিরও আয়োজন করে রেখেছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সাথে তার টানাপড়েন সেটাই প্রমান করে, ব্রক্ষ্মপুএ বাধ, অরুনাচল ও দালাইলামা ইস্যু। তাছাড়া মিয়ানমারকে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার গ্যারিসন স্টেট বানাবার পেছনে চীনের ভূমিকা তো আমাদের সবার জানা আছে। বাংলাদেশের সাথেও চীনের সম্পর্কেরও অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে তাইওয়ানের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্হানকে চীন মার্কিন নীতির প্রতিফলন হিসেবেই মনে করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি গোষ্ঠী চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতিকে একটি অফিসিয়াল রুপ দেবার জন্য তিব্বতকে নিয়ে দ্রিক গ্যালারীতে আলোকচিএ প্রদর্শনের আয়োজন করে। পরবর্তীতে যা চীনা দূতাবাসের আপত্তিতে বন্ধ করে সরকার। তিব্বতকে নিয়ে আলোচনার জন্য ঠিক এই সময় বেছে নেওয়াকে আন্তর্জাতিক পরিস্তিতির আলোকে দেখতে চাইলে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে। বঙ্গোপসাগর সীমানায় খুব শীঘ্রই মার্কিন রনতরীর উপস্হিতি লক্ষ্য করা যেতে পারে। ইদানিং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে মার্কিন জেনারেলরা খোশগল্প! করতে ঢাকায় এসেছেন। তার আগে চীনের সামরিক কর্মকর্তারা ঢাকায় ঘুরে গেছেন। মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া হতে যাচ্ছে। এদিকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের সাথে ওবামা প্রশাসন দ্বি- পাক্ষিক আলোচনায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এতদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিয়ানমারকে বিচ্ছিন্ন করে রাখাটা যে কোন কাজে আসেনি, এটুকু হুঁশজ্ঞান বোধ হয় আমেরিকার হয়েছে। তাছাড়া সামরিক জান্তাদের ঘোষিত ২০১০ সালের নির্বাচনে আমেরিকার ইচ্ছার কাছে নতজানু থাকবে এরকম একটি সরকার আনার পরিকল্পনাও আছে মার্কিনীদের। কারন এর আগে ফায়দাটা লুটেছে চীন। অবশ্য চীনও তার মত করে একটা গনতন্ত্রের কথা বলে আসছিল। সে যাই হোক, মিয়ানমারের সম্ভাব্য ক্ষমতা কাঠামো পরিবর্তনের এই কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা, মার্কিন বহরের উপস্হিতি, চীনের সাথে সম্পর্কের অবনতি কোন দিক থেকেই বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্হানে নেই। (চলবে)
নিজের সম্পর্কে লেখক
student