গণতান্ত্রিক বিপ্লব
এখানে অক্টোবর বিপ্লবের একশ বছর উপলক্ষে চিন্তা পাঠচক্রের সঙ্গে লেনিনের ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল ডেমোক্রাসির দুই রণকৌশল’ এবং এপ্রিল থিসিস পড়ুন। লেনিনের 'এপ্রিল থিসিস' সম্পর্কে জানতে হলে প্রগতি প্রকাশনী থেকে কয়েকটি নিবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত ‘বিপ্লবী সৈন্য বাহিনী ও বিপ্লবী সরকার’ পড়তে পারেন।
ইতিহাস পাঠ স্রেফ ঘটনাঘটনের বিবরণ জানা নয়, এটা আমরা জানি। ইতিহাস তখনই প্রাসঙ্গিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন আমরা বর্তমানের সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন ও সমস্যা বুঝতে এবং তার মীমাংসার জন্য অতীতে নজির খুঁজি। অক্টোবর বিপ্লব নিয়ে চিন্তা পাঠচক্রের আগ্রহের প্রধান কারণ এটাই। আমরা বাংলাদেশ নিয়েই ভাবছি, পুরানা সোভিয়েত রাশিয়া না।
আধুনিক কালপর্বে একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা উৎখাত করবার নীতি ও কৌশল নির্ণয়ের আদর্শিক ও ব্যবহারিক তর্ক কী? লেনিন ও তাঁর বিরোধীদের মধ্যে কী ছিল সেই তর্ক? কিভাবে রুশ বিপ্লবীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সেই তর্কে লেনিনের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন, যে কারনে তাঁরা ‘বলশেভিক’ বা বিপ্লবীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হিসাবে পরিচিত হলেন? কোন যুক্তিতে বিপ্লবীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ লেনিনেকে সমর্থন করলেন?
বাকিরা পরিচিত হয়েছিলেন ‘মেনশেভিক’ নামে। রুশ ভাষায় ‘বলশেনিস্তভো’ মানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আর ‘মেনশিনস্তভো’ মানে সংখ্যালঘু। রুশ সোশ্যাল ডেমোক্রাটিক শ্রমিক পার্টির ১৯০৩ সালের অগাস্ট দ্বিতীয় কংগ্রেসে পার্টির কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর নির্বাচনে যারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে তারাই ‘মেনশেভিক’ নামে পরিচিত। অক্টোবর বিপ্লবে এবং বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় বলশেভিক ও মেনশেভিকদের ভূমিকা কি ছিল এবং উভয় পক্ষের রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে তাদের তত্ত্বের বিচার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হিসাবে বিবেচিত। ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতার পর্যালোচনা ছাড়া যারা সমাজ বিপ্লব বা সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখে তার নিছকই শিশুতোষ ছড়া আওড়ান। তরুনদের মধ্যে যারা আন্তরিক ভাবে বাংলাদেশের স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট ব্যবস্থা উৎখাত করে গণতন্ত্র কায়েম করতে চান তাদের অবশ্যই অক্টোবর বিপ্লবের সাফল্য এবং ভুলত্রুটি পুংখানুপুংখ ভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।
এই বিশ্বাস আগে ফিরিয়ে আনা দরকার যে স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট ব্যবস্থা যতোই নিপীড়িন্অমূলক হোক সঠিক নীতি ও কৌশল জানা থাকলে বিজয়ী গণ অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম সম্ভব। রাশিয়ার জারতন্ত্র উড়ে গিয়েছে! এক শ বছর আগের অক্টোবর বিপ্লব তার সুনির্দিষ্ট নজির। যেহেতু গণতন্ত্র কায়েমের নীতি ও কৌশল সংক্রান্ত বিতর্কের দলিল ও ইতিহাস এই বিপ্লবের ক্ষেত্রে সহজেই পাওয়া যায়, অতএব অক্টোবর বিপ্লবের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য তরুনদের তি আবশ্যিক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ – এতে কোন সন্দেহ নাই।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের ফারাক বোঝা। সেই ক্ষেত্রে লেনিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পূর্ণ না করে এবং সোভিয়েত রাশিয়ার অর্থনৈতিক বিকাশ অসম্পূর্ণ রেখে তিনি ‘সমাজতন্ত্র’ কায়েম করেছেন। লেনিনের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠির এই প্রচারণা কতোটা সত্য। যে কারণে লেনিনের ‘এপ্রিল থিসিস’ এবং তাকে কেন্দ্র করে তর্ক রাষ্ট্র বিজ্ঞানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ তর্ক।
প্রচলিত আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞান আমাদের পাশ্চাত্য চিন্তা ও পরাশক্তির গোলামি করতে শেখায়। রাজনীতি ও রাষ্ট্র সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারনার জন্য আমাদের সত্যিকারের রাজনৈতিক ইতিহাস পড়তে হবে। সর্বোপরি রাজনীতি একটি বিজ্ঞান। ঠিক যে মানুষের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে যান্ত্রিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, সেই চেষ্টা ব্যাক ফায়ার করে। কিন্তু রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে গণচেতনা গড়ে ওঠে, তাকে সঠিক অভিমুখে পরিচালিত করবার আদর্শিক ও ব্যাহারিক দিক বিচার এবং উভয়ের মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর ক্ষেত্রে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের কোন বিকল্প আধুনিক কালপর্বে নাই।
আপনার সংগ্রহে কি নিদেন পক্ষে এই দুটি পুস্তিকা আছে?
প্রগতি প্রকাশনী থেকে অনূদিত "বিপ্লবী সৈন্যবাহিনী ও বিপ্লবী সরকার" --এখানে পাবেন; শিরোনাম 'বর্তমান বিপ্লবে প্রলিতারিয়েতের কাজ'। অথবা এখানে দেখুন: The Tasks of the Proletariat in the present Revolution । 'গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল ডেমোক্রাসির দুই রণকৌশল'ও অনুবাদ হয়েছে। অথবা ইংরেজি অনুবাদ দেখুন: Two Tactics of Social Democracy in Democratic Revolution