পোস্ট মর্ডানিজিমঃ এক নিঃশব্দ হাহাকার
পরাবাস্তববাদ, এ্যাবসার্ডনেস কিংবা অর্থহীনতার প্রবল গ্রাস মানব মনে এসেছে এই উওর আধুনিক যুগে। মানুষের নিতান্ত একা হয়ে পড়া, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তবু সবকিছুর থেকে পিছিয়ে পড়ার ভেতর দিয়ে মানুষ নিহিলিস্ট বা ধ্বংসবাদী বনে গেছে। এ এক নৈরাজ্য, বিরোধাভাস- সবকিছু থেকেও না থাকার উপস্থিতি!
ইংরেজি সাহিত্যে পোস্ট মর্ডানিজমের শুরু হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘণ্টাধ্বনির মধ্য দিয়ে, যদিও বাংলা সাহিত্যে এসেছে আরো অনেক পরে। আব্দুল মান্নান সৈয়দ কিংবা জীবনানন্দ দাশ ধার করলেন শার্ল বোলদোয়ারের থেকে, আসলে ঘটনার ভেতর দিয়ে উনারা ভ্রমণ করেছেন; সমাজ, রাষ্ট্রে, চাকুরী- আমরা এর নাম দিয়েছি আধুনিক কল্যাণকর রাষ্ট্র, যার জটিল কাঠামোতে মানুষ নিজেই হয়েছে বন্দী। হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকি, না শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুদ্ধ আর থেমে নেই। জীবনানন্দ রাশ তাই কবিতায় স্মরণ করেছেন হিরোশিমা-নাগাসাকিকে।
কেননা জীবনানন্দ অকপট স্বীকার করলেন,
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি নাঃ আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে নক্ষত্রের নিচে"
আমরা স্মরণ করি কাফকা-লোরকাকে। সাহিত্যের বিচার বিশ্লেষণে এক নয় ওরা। কিন্তু কাফকা এই সভ্যতার নগ্নতাকে প্রকাশ করলেন। কেননা আমি যখন কাফকার চোখে তাকাই তখন দেখি এই সভ্যতা অতি চাকচিক্যময়তার নিচে ঘন অন্ধকার, আর লোরকার চোখে বিদ্রোহ। যেভাবে সাহিত্যের ইতিহাস, বয়স, কাল নির্ধারণ করা হয়- তা সবসময় তার নিজস্ব গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায় না। যে মৌলিক ধারণা, তার মানুষের মাঝে সর্বকালেই থাকে, যদিও তা ভিন্ন ভিন্ন সময় প্রকাশিত থাকে। এখানে কালরেখার বিন্দুগুলো একটি অপরটির প্রতিবিম্বের মতো কাজ করে, প্রতিফলিতও হয়।
আমি খেই হারাই ভেবে শিল্প বিপ্লবে। মানুষের কর্মহীনতা, তবু এত ক্লান্তি! নিঃশব্দ হাহাকার।
আমি জানি না'কো তার স্বাদ। খুঁজে খুঁজে পাইনি কোনদিন তারে--
দেহের ভেতর, তবু দেহের বাইরে ছিন্ন করবার চেতনা। একটি অদৃশ্য অথচ দৃশ্যমানের চেয়ে শক্তিশালী, একটি গভীর ঘুম অথচ জাগরণের চেয়ে শক্তিশালী, একটি মৃত্যু অথচ বেঁচে থাকবার চেয়ে আড়ম্বর।
কোথায় সে মনের মানুষ? কোথায় সেই নির্বাণ?
এটাই কী কোলরিজের অমর বাণী?
Water water everywhere nor a drop to drink.