'বাঙালি' এবং পশ্চিম বাংলার নির্বাচন ৫
বাদ পড়া বা পিছিয়ে পড়াদের বৃহত্তর 'বাঙালি' সমাজে অন্তর্ভূক্ত করে নেবার কঠিন কাজ বাদ দিয়ে মমতা ব্যানার্জি ‘মুসলমান তোষন’-এর সোজা পথ নিয়েছিলেন। ফলে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই তাঁকে ভুল বুঝেছে। তাঁর হিজাব পরা মোনাজাত করা দেখে আমি বারবারই ভেবেছি, তিনি পশ্চিম বাংলার মুসলমানকে কেন শুধু ধর্মীয় পরিচয়ে পর্যবসিত করতে চান? তারা তো বাঙালিও বটে। এটা তাঁর জন্য যেমন বুমেরাং হবে একই ভাবে হিন্দু মুসলমান ভেদও বাড়বে, কমবে না। বরং দরকার ছিল সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আরও বৃহত্তর পরিসরে অন্তর্ভূক্ত কিম্বা অঙ্গীভূত করে নেবার জন্য নিরলস কাজ করে যাওয়া। ‘বাঙালি’ কথাটার উচ্চবর্ণীয়, জাতিবাদি এবং সংকীর্ণ অর্থ পরিহার করে ভাষা ও সংস্কৃতিকে সকল ধর্ম, আদর্শ, ভাবচর্চার মাধ্যম বা ক্ষেত্রে পরিণত করা। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধ রচনার ক্ষেত্র হচ্ছে ভাষা এবং সংস্কৃতি, যার মধ্যে দৈনন্দিনের জীবন যাপনও অন্তর্ভূক্ত। সেখানে সামাজিকীকীকরণ Socialisation) দ্রুত ও মজবুত হলে অপরাপর ভেদবুদ্ধি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। দরকার ছিল,বর্তমানে নানান ধর্ম সম্প্রদায় এবং ইতিহাসের তিক্ত অভিজ্ঞতায় বিভক্ত ’বাঙালি’কে চুড়ান্ত সত্য জ্ঞান না করে একটি ঐতিহাসিক সম্ভাবনা হিশাবে বিবেচনা করা। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের একটি চরিত্রের মতো বলতে পারি,‘বাঙালি’ এখন যা তা না, বরং ‘বাঙালি’ আগামিতে কী হবে বা হতে পারে তার রূপ কল্পনা করতে শেখা।
বিজেপি সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও বিদ্বেষের জায়গা থেকে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ‘মুসলমান তোষণ’-এর অভিযোগ তোলে। সদর্থে যারা মমতা ব্যানার্জির মুসলমান তোষণের সমালোচনা করেন তারা জোর দিয়ে থাকেন বাদ পড়া বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির উন্নয়নের ওপর। অর্থাৎ ‘তোষণ’ নয়, দরকার উন্নয়ন। হক কথা।
বিজেপি মার্কা তোষণের অভিযোগ আমরা তুলি না, তুলছি না, বরং বাদ পড়া বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে বৃহত্তর সমাজে অন্তর্ভূক্ত করে নেবার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের দিকেই আমরা নজর দিতে চাই। সম্প্রতি অমর্ত্য সেনের প্রতীচি ইন্সটিটিউট এবং Social Network for Assistance to People-এর যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘Living Reality of Muslims in West Bengal’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে পশ্চিম বাংলার সমাজ থেকে বাদ পড়ে যাওয়া বা পিছিয়ে পড়া মুসলমান জনগোষ্ঠির দুর্দশা ছবি খুবই করুণ। ফেইসবুকে বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের আলোচনার জন্য প্রাসঙ্গিক দুই একটি পয়েন্ট ধরিয়ে দিতে চাইছি।
পশ্চিম বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় হুগলি ও হাওড়ায় নির্বাচনে তৃণমূল ভাল করেছে। এর কারণ হচ্ছে এখানে মুসলমানদের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভাল। কিন্তু উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, পুরুলিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে তৃণমূল খারাপ করেছে, এখানে মুসলমান জনগোষ্ঠি দারিদ্য সীমার নীচে বাস করে। মমতা ব্যানার্জি যদি স্রেফ ভোটের স্বার্থই দেখে থাকেন তাহলে মোনাজাত করা হিজাব পরা ইত্যাদির তো প্রয়োজন ছিল না; দরকার ছিল বাদ পড়া বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির অর্থনৈতিক উন্নতি। এরপর দরকার বাঙালির সংস্কৃতিতে ইসলাম ও বাঙালি মুসলমানের অবদান ও ভূমিকার স্বীকৃতি এবং বৃহৎ ও শক্তিশালী বাঙালি সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা। যেন সকল প্রকার সেকুলার এবং ধর্মীয় জাতিবাদকে পরাস্ত করা যায়। বাঙালির অপার সম্ভাবনা বৃহতের মধ্যে, খণ্ড খণ্ড টুকরা টাকরা হয়ে থাকার মধ্যে নয়। বিস্ময় যে বাঙালি পাশ্চাত্য অর্থে ধর্ম বা দ্বীনের বিপরীতে সেকুলার কিম্বা (বুর্জোয়া)মানবতাবাদের কথা বলে না, এটা তার ধারা না।অথচ বিস্ময় যে মানুষের অপার সম্ভাবনা ও আগামির কথা ভেবে বাঙালি ‘মানুষ ভজনা’র কথা বলে।অন্য কোন ভাষায় ‘মানুষ ভজনা’ কথাটার অনুবাদ হয় না।
তোষণ ও উন্নয়নের তর্ক কেন্দ্র করে পশ্চিম বাংলার সমাজ গবেষক শাহনেওয়াজ আলী রায়হান একটি দারুণ প্রশ্ন তুলেছেন। ‘সংখ্যালঘুর শুধু তোষণই প্রাপ্য?’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তিনি এখন বিলেতে পিএইচডি শেষ করছেন। তাঁর এই নিবন্ধে তিনি জানাচ্ছেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ অবধি সরকারি চাকুরিতে মুসলমান ছিল ৭ শতাংশ, বাম আমলে সেটা এসে দাঁড়িয়েছিল ২ শতাংশে। মমতা যখন ক্ষমতায় এলেন তখন পুলিশে লোক নেওয়া হয়েছিল। চাকুরি পাওয়া ৪০০ জনের মধ্যে মাত্র ২১ জন ছিল মুসলমান। ২৫৫ জনকে রাজ্য সরকারের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্কের চাকুরি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার মধ্যে মুসলমান ছিল মাত্র ৫ জন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কনেষ্টবল নেওয়া হয়েছিল, সেখানে ২৩৫৪ জনের মধ্যে ৪৪৫ জন মাত্র ছিলেন মুসলমান, ইত্যাদি। যাঁরা আরও পড়তে চান তারা তাঁর ‘নিখোঁজ বসন্ত’ বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
সাচার কমিটি রিপোর্ট বেরিয়েছে অনেক দিন হোল। তৃণমূলও ক্ষমতায় আছে অনেক দিন। কিন্তু মুসলমানদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় নি। সাচার কমিটি রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল বাদ পড়ে যাওয়া মুসলমান জনগোষ্ঠিকে পশ্চিম বাংলার সমাজে কার্যকর ভাবে অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া। কিন্তু মমতা সিপিএমের ভুলই অব্যাহত রাখলেন, বাদ পড়া জনগোষ্ঠিকে অন্তর্ভূক্ত করে নেবার কাজ থুয়ে তিনি মুসলমানদের বড় বড় জনসভায় যেতে শুরু করলেন, হিজাব পড়তে আরম্ভ করলেন। মুসলমান ভোটারদের সভায় মোনাজাত করলেন, এমনকি নামাজও নাকি পড়েছেন! অথচ এসব কিছুরই দরকার ছিল না। ইসলাম ধর্ম তাঁর কাছে আকর্ষণীয় মনে হলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেই পারেন, সেটাই সবচেয়ে ভাল হোত। কিন্তু বঙ্গে সনাতন ধর্মের বৈচিত্র ও মহিমাও তো কোন অংশে কম না। বাদ পড়ে যাওয়া মুসলমান জনগোষ্ঠিকে বাঙালির বৃহত্তর সমাজে অন্তর্ভূক্ত করবার জন্য দরকার ছিল আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নীতি, যাতে একদিকে মুসলমান সমাজ তাদের অর্থনৈতিক পশ্চাতপদতা, বঞ্চনা এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া অবস্থা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে পারে, যেন ধর্ম নির্বিশেষে সব্বাইকে নিয়ে একটা বৃহত্তর বাঙালি সমাজ তৈরির প্রক্রিয়ায় মুসলমান জনগোষ্ঠির অন্তর্ভূক্তি সহজ হয়। কিন্তু তিনি সেটা করলেন না। মুসলমানকে ‘মুসলমান’ ছাড়া মমতা ব্যানার্জি আর কিছু ভাবতে পারলেন না। কেন তাঁর ধারণা হোল যে হিজাব বা মোনাজাত না করলে বাঙালি মুসলমান তাঁকে স্রেফ বাঙালি হিশাবে গ্রহণ করবে না? কেন তার মনে হোল মুসলমানদের জনসভায় তিনি হিজাব না পরে গেলে তাকে পশ্চিম বাংলার উর্দুভাষী নাগরিকরা মেনে নেবেন না? এটাই কি তাহলে সকল ধর্ম গোষ্ঠির প্রতি সমান আচরণ? এর জন্যই তিনি হিজাব, নামাজ, মোনাজাত দিয়ে তাদের ভোট পাওয়া নিশ্চিত করবার চেষ্টাটাই করলেন।
বিহার বা ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যেসব মুসলমান পশ্চিম বাংলায় এসেছে ও স্থায়ী ভাবে বাস করছে তাদেরকে বাংলা সংস্কৃতির উদারপরিমণ্ডলে অন্তর্ভূক্ত এবং সেই সংস্কৃতিতে সাবলীল ভাবে অংশগ্রহণের কোন ব্যবস্থাও মমতা নিলেন না। পশ্চিম বাংলায় বৃহত্তর কোন সামাজিক পরিসর গড়ে উঠল না। যার যার ঘেট্টো, বসত বা বস্তি শহরের বিভিন্ন স্থানে পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেঁড়ে রইল। মমতা ব্যানার্জি প্রমাণ করবার কোন চেষ্টাই করলেন না যে কলকাতা ‘বাঙালির শহর’; কিন্তু এই অর্থে যে এই শহরের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি যেমন সকল ভাষাভাষিদের দিতে জানে তেমনি হিন্দি, উর্দু, উড়িয়া, অহম, মণিপুরি বা যে কোন সংস্কৃতি থেকে গ্রহণ করতেও কসুর করে না।
আমরা বাংলাদেশ থেকে কলকাতার সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা যখন দেখি তখন এটা ভেবে অবাক হই যে একটি মেট্রোপলিটান শহর হবার পরেও কলকাতার সাহিত্য ভাষার বিশেষ কোন বিবর্তন হয় নি। প্রাচীন অনড়তা এবং স্থবিরতা ভর করেছে যেখানে মেট্রোপলিটান শহরের কোন আলোড়ন কিম্বা ভাঙন নাই। অথচ যা একদমই হবার কথা ছিল না। পশ্চিম বাঙলায় ভাষা ও সংস্কৃতিতে বাঙালি মুসলমানের সক্রিয় ভূমিকা রাখবার কোন জায়গা আজও তৈরি হোল না। পশ্চিম বাংলার ভাষা এখনও সংস্কৃত ও তৎসম শব্দে আকীর্ণ উচ্চ বর্ণের হিন্দুর ভাষা রয়ে গিয়েছে। অথচ দরকার ছিল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে বাঙালি মুসলমানের উপস্থিতি দৃঢ় করা। ভাষা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিশাবে কায়েম হবার পরও পশ্চিম বাংলা আজও বাংলা ভাষায় আরবি ও ফারসি দেখে আঁতকে ওঠে।
তৃণমূল কংগ্রেস সিপিএমকে হঠিয়ে ক্ষমতায় আসে ২০১১ সালে। পশ্চিম বাংলায় সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসন উলটে যাওয়া ছিল ভারতের রাজনীতির তাৎপর্যপূর্ণ বাঁক। প্রশ্ন উঠেছে, এতো বছর ক্ষমতায় থাকার পরও পশ্চিম বাংলার মার্কস, মার্কসবাদ কিম্বা নানান কিসিমের বামপন্থা বাঙালি হিন্দুর ধর্ম পর্যালোচনার কাজকে ফেলে রেখে একাট্টা দর্মের বিরোধিতা করল কেন? ধর্মকে সংবিধান বা আইন দিয়ে মোকাবিলা না করে বুদ্ধিবৃত্তিক বা সাংস্কৃতিক ভাবে মোকাবিলার কোন দৃশ্যমান চেষ্টা কই? এখন হিন্দু ধর্মের বিশেষ উত্তর ভারতীয় রূপ যেভাবে জাতিবাদি হিন্দুর রাজনৈতিক আত্মপরিচয় নির্ণয়ে নির্ধারক ভূমিকা রেখেছে তার জন্য পশ্চিম বাংলার বুদ্ধিজীবি ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের দায় আছে। ধর্ম পর্যালোচনার কাজ বাদ দিয়ে পশ্চিম বাংলায় আমরা বাংলাদেশে মতোই একাট্টা ধর্মের বিরোধিতা দেখি, অথচ ধর্ম বিদ্বেষকেই মার্কসবাদ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। ধর্মের ঐতিহাসিক কিম্বা দার্শনিক পর্যালোচনার কোন নজির পশ্চিম বাংলার বুদ্ধিজীবি বা সাংস্কৃতিক মহলে আমরা দেখি না। অথচ মার্কসই বলেছিলেন অন্য সকল বিষয়ের পর্যালোচনার আগে দরকার ধর্মের পর্যালোচনা। এই পর্যালোচনাই রাজনীতি, রাষ্ট্র ও গণমানুষের চিন্তাচেতনা বিচারের শর্ত তৈরি করে। ধর্ম বা সংস্কৃতিকে গুরুত্বপূর্ণ গ্ণ্য না করার পেছনে বামপন্থার অনুমান হচ্ছে অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটানো গেলেই ধর্ম প্রশ্নের মীমাংসা আপনা আপনি হয়ে যাবে। ব্যতিক্রম আছে কিনা জানি না, তবে সীমান্তের এদিক থেকে মনে হয় সেকুলারিজম বলতে পশ্চিম বাংলার বামপন্থা একাট্টা ধর্ম বিরোধিতাই বুঝেছে? কিম্বা বুঝেছে সকল ধর্মের প্রতি সমান আচরণ? অর্থাৎ যার যার ধর্ম যার যার মতো থাকুক, সেকুলার কর্তব্য হোল সকলের প্রতি সমান আচরণ করা। সকল ধর্মের প্রতি সমান আচরণ – মমতা ব্যানার্জি সেটাই করেছেন, যাকে এখন ‘মুসলমান তোষণ’ বলা হচ্ছে। মূল কাজ ফেলে রেখে ভোটের জন্য একটি ধর্ম সম্প্রদায় তোষণের পরিণতি কী হতে পারে সেটা কিছুটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাবার কথা।
সিপিএমের ধর্মের প্রশ্ন মোকাবিলার ব্যর্থতা তৃণমূলের দিকে জন সমর্থন ঝুঁকে যাবার কারন হয়েছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি এই ঝোঁকের মর্ম ধরতে পারেন নি। সেই ঝোঁকই এখন আরও পরিণত হয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বা নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদের রূপ নিয়েছে। এই পরিণতির হয়তো আরও অনেক কারন থাকতে পারে। পশ্চিম বাংলার গণমানসকে বোঝার জন্য হয়তো আরও অনেক গবেষণা দরকার।
তবে দুটো বিষয় আমরা উল্লেখ করতে চাই। প্রথমে নন্দীগ্রামের ঘটনা এবং নন্দীগ্রাম কেন্দ্র করে মুসলমান জনগোষ্ঠির প্রতিক্রিয়া। সিপিএম থেকে পশ্চিম বাংলার মুসলমান মুখ ফিরিয়ে নেবার ক্ষেত্রে নন্দীগ্রাম ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে সাচার কমিটি রিপোর্ট। ভারতের সাবেক প্রধান মন্ত্রী মনোমোহন সিং ২০০৫ সালের মার্চে দিল্লি আদালতের প্রধান বিচারপতি রাজেন্দর সাচারকে প্রধান করে সাত জনের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেন। তাঁদের কাজ ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা্র ক্ষেত্রে ভারতীয় মুসলমানদের অবস্থা জানানো। সাচার কমিটি রিপোর্ট সবার পাঠের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর। এই রিপোর্ট ভারতীয় সমাজ, প্রশাসন ও রাজনীতিতে মুসলমান জনগোষ্ঠির প্রশ্নকে নতুন মাত্রা দান করে। সাচার কমিটি রিপোর্টে মুসলমান জনগোষ্ঠির দুর্দশা এবং সমাজের পেছনে পড়ে থাকা নিয়ে তুমুল আলোচনা ও তর্ক শুরু হয়। পরিষ্কার হয়ে যায়, সিপিএমের আমলেও পশ্চিম বাংলায় হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হয় নি বটে, কিন্তু শিক্ষা, সামাজিক অবস্থা এবং সরকারি চাকরিবাকরির ক্ষেত্রে মুসলমান সমাজ মারাত্মক ভাবে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে, সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়েছে। সোজা কথায় পশ্চিম বাংলার সমাজ থেকে মুসলমান জনগোষ্ঠি একদমই বাদ পড়ে গিয়েছে। বাদ পড়ে যাওয়াদের সমাজে অন্তর্ভূক্ত করা এবং তাদের প্রতি নাগরিক সমতা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি।
সাচার কমিটি রিপোর্ট মুসলমানদের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনায় বদল ঘটিয়েছে, তারা উন্নতি চায়, চাকরি চায়, জীবিকার নিশ্চয়তা চায়, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা চায়, ইত্যাদি। তৃণমূলের কাছ থেকে তারা মসজিদের ইমামদের জন্য ভাতা পেয়েছে, কিন্তু আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নিশ্চয়তা পায় নি।
অথচা মমতা দাবি করেছেন উন্নয়নের নিরানব্বই ভাগই তিনি নাকি করে ফেলেছেন!।
নিজের সম্পর্কে লেখক
কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।