কেন ইসলাম নিয়ানিরন্তর কথা কৈতে হবে: ৪

যদি মানুষকে অপরিণত, অপূর্ণ , জন্ম সূত্রেই আদি পাপে পাপী কিম্বা পাপিষ্ঠ গণ্য করা হয়, তখন মানুষ নিজের মধ্যে নয়, বাইরে নিজেকে খুঁজবে। নিজের অভাব ও অপূর্ণতা নিজের বাইরে পুত্তলি, মূর্তি, প্রতিমা বানিয়ে বা প্রতীক দিয়ে পূর্ণ করতে চাইবে। মনুষ্য রূপ পেয়ে এবং স্বয়ং সেই রূপ ধারণ করেও মানুষ নিজেকে হারিয়ে ফেলে, এটা নতুন কোন কথা নয়। অভাবী ও অপূর্ণ মানুষ মানুষের বাইরের কোন ঐশ্বরিক বস্তু, বিষয়, কল্পনা বা ধারণা তৈরি বা নির্মাণ ছাড়া স্বস্তি পায় না। নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে সে দাবি করে তার নিজের বাইরের ঐশ্বরিক শক্তির প্রতি আনুগত্য ও আস্থা ছাড়া দ্বীন বা ধর্ম অসম্ভব।

কিন্তু বিস্ময়কর যে একমাত্র ইসলামই মানুষের বাইরে ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ, কাল্পনিক, বুদ্ধি বা কামনার দ্বারা নির্মিত কোন মূর্তি খাড়া করবার বিরোধী। বাইরের পুতুল যেমন পুতুল ভেতরের পুতুলও পুত্তলি। বিস্ময়কর, কারণ একমাত্র ইসলাম গায়েবে ঈমান আনতে বলে। নিরন্তর যে সত্তা সততই অনুপস্থিত ইসলাম ভেতর বাইরের সেই নিত্য অনুপস্থিতির এবাদতের কথা বলে। এটা একদমই নতুন কথা।

গায়েব। মানুষের ভেতর বাইরে কোন মূর্তি ইসলাম বরদাশত না করার অর্থ মানুষকে তার মহিমায় নিষ্ঠ রাখা। অর্থাৎ শুধু বাইরের মূর্তি নয়। নিজের ভেতরে কল্পনা, ধারণা, বাসনা, ভোগ লিপ্সা বা কামনার যে মূর্তি সজ্ঞানে ব অজ্ঞানে মানুষ তৈরি করে সেটাও পৌত্তলিকতা। বাইরের মূর্তি পূজা যেমন পোত্তলিকতা, তেমনি নিজের কল্পনা, বুদ্ধি বা বাসনা দ্বারা কোন মূর্তি তৈয়ারি করাও মূর্তি পূজা। যারা বাইরের মূর্তির বিরোধিতা করে, কিন্তু নিজের অন্তরের কল্পনার বুদ্ধির বাসনার মূর্তি নিত্য পূজা করে তারা বহু আগেই ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গিয়েছে। তাই নিজেদের মুসলমান প্রমাণ করার জন্য তারা হিন্দুর ওপর চড়াও হয়। পোত্তলিকতা নয়, পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায়। এদের সম্পর্কে সাবধান করার জন্য বারবার ইসলামের কথাই বলতে হবে।

মানুষের নিজের মধ্যে এখন যে গুণাবলীর অভাব মানুষ বোধ করে আগামিতে সেই অভাব পূরণ সম্ভব, এখন যা নাই তা দ্বীনের চর্চার দ্বারা মানুষের মধ্যেই বিকশিত হয়, মানুষই দ্বীনের চূড়ান্ত রূপ। মানবোত্তর আর কোন দিব্য সুরত নাই। অতএব ইসলামকে রিলিজিয়ন বলা যায় না। রিলিজিয়নের পরিসমাপ্তি বলা যায়। তাই বারবারই বলব রিলিজিয়ন আর দ্বীন (বা ধর্ম )-- এক কথা নয়।

এইটুকুন বুঝলেই আপাতত আমরা অনায়াসেই ধরতে পারব 'ইসলাম' নামে যা চলছে তা মূলত খ্রিস্টিয় বা পাপিষ্ঠবাদী ধ্যান ধারনারই চর্চা। ইসলামকে যখনই আমরা 'রিলিজিয়ন' ভাবি, তখনই আমরা পাপীবাদের খপ্পরে পড়ি। রিলিজিয়ন ও দ্বীন তাই সমার্থক নয়। এই কথা বারবার নিরন্তর বলতে হবে।

তাই বারবারই বলব ইসলামের পৌত্তলিকতা বিরোধী হওয়ার অর্থ মানুষের মহিমা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্যই। পৌত্তলিকতাকে পুতুল পূজা বলে ইসলাম বিরোধিতা করে না, হোক তা বাস্তবের, কল্পনার বুদ্ধির বা বাসনার। বরং মানুষ নিজের সম্ভাবনা ও খেলাফতের দায় মানুষ ভুলে যেতে পারে বলেই ইসলাম পৌত্তলিকতা বিরোধী।

এখন ইসলাম নামে যা আমরা দেখি তা মূলত খ্রিস্টিয় ধ্যান ধারণা এবং পৌত্তলিকতারই চর্চা।

এই বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য বারবারই আমাদের ইসলামের কথা বলতে হবে।

 


নিজের সম্পর্কে লেখক

কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।