ভাসানী পাঠ ও পর্যালোচনা: ১
আজ ১৭ নভেম্বর। উনিশ শ ছিয়াত্তর সালের এই দিনে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাঁর জন্ম তারিখ ছিল ১২ ডিসেম্বর ১৮৮০। যারা ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা উৎখাত করে 'রবুবিয়াত', অর্থাৎ সামাজিক প্রতিপালন ও রুহানি জীবন ব্যবস্থা গড়তে চান তারা আজ থেকে নিদেন পক্ষে আগামি মাসের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাসানীকে প্রতিদিন একটু একটু করে বোঝার চেষ্টা করুন। ভাসানী সম্পর্কে আধুনিক 'শিক্ষিত' মূর্খদের ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন পরিহার করুন।
ভাসানী জাতিবাদী নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন দুনিয়ার মজলুমদের রুহানি নেতা, এই অর্থে একই সঙ্গে তাদের পীর। যাদের সম্পর্কে কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ বলেছিলেন 'পৌত্তলিক'রা যাদের আল্লার ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু যাদের আল্লা অবশ্যই আবার বিজয়ী করবেন। মক্কার দাম্ভিক কোরেশদের দম্ভ চূর্ণ করে রাসুলে করিম (সা) মক্কা 'জয়' করে মানুষের মহিমা কায়েম করেছিলেন, একদিন আল্লার বান্দা আবার স্ব-বমহিমায় দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন দুনিয়ায় আর কিচ্ছু থাকবে না, এক আল্লাহ ছাড়া। ইনশাল্লাহ।
ভাসানীকে বুঝতে হবে। কিন্তু কিভাবে বুঝবেন? আমি ছোট ছোট পোস্টে আমার সাধ্য অনুযায়ী আমার ভাবনা তুলে ধরার চেষ্টা করব। আজ 'তোহিদ' বা একত্ববাদ সম্পর্কে বলি।
দুনিয়ায় এক আল্লায় বিশ্বাস বা একত্ববাদ নানান রকম আছে। কিন্তু রাসুলে করিমের একত্ববাদ শুধু পারলৌকিক বা ধর্মতাত্ত্বিক ছিল না। আল্লার রাসুল একই সঙ্গে ছিলেন রাজনৈতিক এবং দ্বীনের সেনাপতি। তাঁর একত্ববাদও অতএব রাজনৈতিক ছিল। শুধু পারলৌকিক বা ধর্মতাত্ত্বিক ছিল না।
এবার ভাসানী পড়ুন:
"অজ্ঞতার কারণে মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক, জাতিগত, ভাষাগত, বর্ণগত বিভেদের যেসব প্রাচীর সৃষ্টি হইয়া আছে স্রষ্টার একত্বে বিশ্বাস তাহার মূলে কুঠারাঘাত করে, কারণ স্রষ্টার একত্ব হইতেই প্রতিষ্ঠিত হয় মানব জাতির একত্ব। স্রষ্টার একত্বে বিশ্বাসের মতই মানব জাতির একত্বে বিশ্বাসও যেহেতু ইসলামের একটি মূল সূত্র, তাই বাস্তব জীবনে এই বিশ্বাসের তাৎপর্য উপলব্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য যে গবেষণা ও অনুসন্ধান প্রয়োজন, তাহার অনুপ্রেরণাও উপরোক্ত বিশ্বাস হইতে মিলে। এইভাবে উদার অন্বেষার মাধ্যমে সংস্কার ও অজ্ঞতার বেড়াজাল ছিন্ন করিয়া, বিভেদের সব প্রাচীর গুঁড়াইয়া দিয়াই স্থাপিত হইতে পারে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি"।
আরও ব্যাখ্যা করতে হবে?
নিজের সম্পর্কে লেখক
কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।