আর্থ ধর্মকথা এবং 'কোরবানি': ১

'মনের পশু কোরবানি করা' ইসলাম বিরোধী প্রপাগাণ্ডার অংশ। এ নিয়ে প্রতিবছরই তর্ক করতে হয়। তবে এই ফালতু নীতিবাগীশতা প্রচার আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।

ইসলামে 'কোরবানি'র তাৎপর্য অনেক গভীর যা ধর্মের ইতিহাস, তুলনামূলক ধর্মবিদ্যা (Comparative Religion) এবং দর্শনের বিষয়। তবে কোরবানিকে মাংসভোগীদের উৎসবে পরিণত করা এবং গরুর মাংসের কোন অংশ দিয়ে কি ধরণের কাবাব বানানো যায় তা একান্তই পুঁজিতান্ত্রিক ভোগী ব্যবস্থার পরিণতি। পুঁজিতন্ত্র ধর্মকে কিভাবে বাণিজ্য ও ভোগের বিষয়ে পরিণত করে সেটা এক দুর্দান্ত আলোচনা হতে পারে। তবে ফ্রিজ ও মশলা কোম্পানির বিজ্ঞাপন মনোযোগের সঙ্গে পড়ে দেখতে পারেন, পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকায় ঈদের দিনের জন্য রান্নার রেসিপি; তাহলে ভোগী সংস্কৃতির কায়কারবার আপনি নিজেও আন্দাজ করতে পারবেন। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্মীয় আচার ও অনুষ্ঠান পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার বাইরের কিছু না। পুঁজির পূজা ছাড়া পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আর কোন ধর্ম নাই। থাকতে পারে না। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় 'ইলাহ' একটাই, তার নাম 'পুঁজি'। এখানে ইসলাম খুঁজতে যাবেন না। সেটা আলাদা জিনিস।

কোরবানিকে নিছকই পশু হত্যা হিসাবে চিহ্নিত করবার চেষ্টা নতুন নয়। তবে সেকুলারিজম, নাস্তিকতা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধকে ন্যায্যতা দেবার জন্য ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ বিধানকে নিন্দিত করে তোলার চেষ্টা সাম্প্রতিক। একে প্রকট করে তোলার মধ্য দিয়ে মুসলমানদের হিংসা, হিংস্রতা এবং প্রাণীর প্রতি নির্দয়তা সহজেই প্রমাণ করা যায়। যেহেতু 'কোরবানি' শব্দটি বিশেষ ভাবে মুসলমানদের ধর্মচর্চার সঙ্গে যুক্ত, তাই সেই ভাবেই তাকে বিচার করা হয়। কোরবানির বিরুদ্ধে বিশেষ প্রচারও তাই ইসলাম ও মুসলমানদেরদের বিরুদ্ধে। অথচ ধারণাগত ভাবে যাকে মানুষ ‘পরম’ জ্ঞান করে তাকে সন্তুষ্ট করবার বিভিন্ন চর্চা অন্যান্য ধর্মেও রয়েছে; ইসলাম বিদ্বেষ প্রচারের সময় অন্য ধর্মের পশু উৎসর্গের কথা আমরা মনে রাখি না বা বুঝতে পারি না। ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে ও প্রয়োজনে তার উদ্ভাবন ঘটেছে। অনেক সময় পরমের মধ্যস্থতায় সামাজিক ঐক্য দৃঢ় করবার প্রয়োজন হয়েছে। পশু উৎসর্গ করার মধ্যে অতএব মুসলমানদের কোন একচেটিয়া নাই। তবে কোরবানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গল্প, উপাখ্যান, মিথ কিম্বা ইতিহাস বর্ণনার পার্থক্য রয়েছে, ফলে তাদের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও ব্যাখ্যায় অবশ্যই স্বাতন্ত্র্য আছে। সেই দিকটা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ধর্মতত্ত্বের তুলনামূলক আলোচনা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আধুনিক সেকুলার চিন্তায় ও সমাজে কোরবানির প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী কিভাবে সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে বরং খ্রিস্টিয় চিন্তার সঙ্গে যুক্ত সেই দিকটার প্রতি নজর ফেরানোই আমাদের উদ্দেশ্য। তবে মনে রাখা দরকার আধুনিক সেকুলার চিন্তা ও সমাজের উৎপত্তি খ্রিস্টিয় ইউরোপে। এটা আমাদের সবারই জানা যে জৈন বা বৌদ্ধ ধর্মে জীব হত্যা মহাপাপ। কিন্তু এই সকল 'ধর্ম' আধুনিকতার -- বিশেষত ইসলাম বিদ্বেষী আধুনিক মন মানসের ভিত্তি নয়, ফলে জৈন বা বৌদ্ধ ধর্মের জীবের প্রতি অহিংসা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়।

লেখাটি এর আগেও শেয়ার করেছিলাম, আবারও দিচ্ছি।

more http://chintaa.com/index.php/chinta/showAerticle/384/%e0%a6%ab%e0%a6%b0%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%a6--%e0%a6%ae%e0%a6%9c%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b0/%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%8b%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-'%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%b6%e0%a7%81'-%e0%a6%a4%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%93-%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%9f-%e0%a6%a7%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ae

 


নিজের সম্পর্কে লেখক

কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।