মানুষ, রুহানিয়াত ও মক্কা বিজয়: ৩

মক্কা বিজয় নিয়ে লিখছি। এবারের রমজানেই লিখতে উদ্বুদ্ধ বোধ করেছি। শুরুও করেছিলাম রমজানেই। ঈদ শেষ হোল, কিন্তু প্রেরণাটুকু থামে নি।

মক্কা বিজয়ের লক্ষ্যে রাসুলে করিম বেরিয়েছিলেন ১০ রমজানে। রাসুলুল্লাহ এবং তাঁর সেনাবাহিনী পুরা দিনই রোজা রাখেন। আর কুদায়েদে পৌঁছে তাঁরা ইফতার করেন। দেখা যাচ্ছে জালিমদের বিরুদ্ধে লড়াই রমজানের রোজা, পরহেজগারি ও এবাদত-বন্দেগি থেকে আলাদা কিছু নয়। তুলনা করুন, আমরা রমজানকে এখন কি বানিয়েছি!

মক্কা বিজয়ের দিন জোহরের নামাজের পর তিনি ক্কাবার সামনে দাঁড়ালেন। হাতে একটি লাঠি। তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘সত্য হাজির, মিথ্যা পলাতক, মিথ্যাকে অবশ্যই, এভাবেই পালাতে হয়’ (বনিইসরাইল-৮১)। কিন্তু সত্য নিজ গুণে হাজির হয় নি। মিথ্যার বিরুদ্ধে দ্বীনের সেনাপতিকে সশস্ত্র লড়তে হয়েছে, আল্লহ রাব্বুল আলামিন তাঁর সহায় ছিলেন।

কি ছিল মক্কার সেই সত্য? মানুষে মানুষে রক্তে রক্তে গোত্রে গোত্রে গোষ্ঠিতে গোষ্ঠিতে জাতিতে জাতিতে কোন ভেদ নাই। সবাই মানুষ। কিন্তু নিজেদের তারা রক্তের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোত্র ও গোষ্ঠিতে বিভক্ত করেছে। মানুষের সমাজ গঠন না করে তারা ঝগড়া, হানাহানি ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে মানুষের অস্তিত্বকেই বিপ্নন করে তুলেছে। নিজ নিজ রক্ত, বর্ণ, গোষ্ঠ, গোত্র, জাতির জন্য আলাদা আলাদা মূর্তি বানিয়ে সেই মূর্তিকেই তারা খোদা বানিয়েছে, সেই খোদারই তারা পূজা করে। সেই সকল মূর্তিকে আল্লার অংশীদার বানিয়েছে। শেরেকি মানুষের রুহানি মহিমার বিনাশ ত্বরান্বিত করে। নিজের মহিমা ভুলে গিয়ে মানুষ নিজেকেই নিজে ভূলুন্ঠিত করে। তারা নিজ নিজ গোত্র বা গোষ্ঠির মূর্তি বানায়। পরস্পরের মধ্যে ফ্যসাদ, যুদ্ধবিগ্রহ হানাহানিতে নিজেদের বিনাশ নিজেরাই ত্বরান্বিত করে।

এটাই ছিল সেইসময় রক্তবাদী, গোত্রবাদী ও গোষ্ঠবাদী আরবদের অবস্থা। রসুল বললেন, মানুষে মানুষে এই বিভক্তি ও বিভাজন চলবে না। মানুষের জাতি একটাই। তার নাম মানুষ। মানুষের মধ্যে ভিন্নতা ও বৈচিত্র থাকবে, কারণ মানুষের মহিমা নানা ভাবে প্রকাশের জন্যই এই ভিন্নতা ও বৈচিত্র দরকার। তাদের প্রতিপালক তাই সবাইকে এক রকম তৈরি করেন নি। কিন্তু রক্ত, গোষ্ঠ, গোত্র, বর্ণ, জাতি বা সম্প্রদায়ে মানুষ বিভক্ত থাকতে পারে না। সত্য এসেছে, মিথ্যা পালিয়েছে, মিথ্যাকে এভাবেই পালাতে হবে।

পৌত্তলিকতা স্রেফ বাইরের মূর্তি বানিয়ে পূজা না, অন্তরের পুতুল বানানও বটে। তখন সেই পুতুলও বাইরের মূর্তির মতো মানুষে মানুষে ভেদ ও বিভাজনের কারন হয়ে ওঠে। যুদ্ধ ও বিগ্রহে মানুষের বিনাশ ত্বরান্বিত করে। এই বিভেদ ও বিভাজন মূর্তি পূ্জার চেয়েও ভয়ানক। বাইরের পুতুল ভাঙা যায়, কিন্তু মনের মূর্তি ভাঙা দুঃসাধ্য। এখন যেমন যার যার মনের মূর্তি অনুযায়ী মানুষ সম্প্রদায়, জাতি, দেশ, ভূখণ্ড, ইত্যাদিতে বিভক্ত, তেমনি নিজ নিজ মতাদর্শের পূজাতেও পরস্পরের সঙ্গে মানুষ যুদ্ধে লিপ্ত, হানাহানিতে রত, রক্তপাতে ভেজা। পুতুল বাহ্য জগতে মাটি, পাথর, লোহা, ব্রোঞ্জ বা অন্য যে কোন কিছু দিয়েই বানানো যায়, কিন্তু কল্পনার, বাসনার, বুদ্ধির বা স্বপ্নের মূর্তি যখন তখন বানানো যায়, সেইসব মূর্তিও হয় হাজার হাজার। লক্ষ লক্ষ। মানুষ যদি চোখে দেখার মূর্ত পুতুল বানাতে পারে, তাহলে অদেখা মূর্তিও বানাতে সক্ষম। তারপর পরস্পরের বিরুদ্ধে নিজ নিজ পুতুলের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে ভাগ হয়ে যেতে পারে মানুষ। বিভক্ত মনুষ্য সমাজ তখন তাদের নিজ নিজ মূর্তিকে বলে ‘বিশ্বাস’। দাবি করে তার মূর্তিই সত্য, অন্যের মূর্তি মিথ্যা।

অথচ যিনি মূর্তি নন, নিরন্তর গায়েব বা অনুপস্থিত, তার প্রতি ঈমান বা নিঃশর্তে আশ্রয় প্রার্থনার কথা তারা ভুলে যায়। নিজদের তৈরি মূর্তি রক্ষার জন্য তারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। মূর্তিতে ‘বিশ্বাস’ আমাদের কাছে এতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে যে ভিন্ন চিন্তা বা মতাদর্শের মানুষকে আমরা আর মানুষ বলে গণ্য করি না। মুসলমান নিজেদের সম্পর্কে যে মানসিক ও কাল্পনি্ক মূর্তি বানিয়েছে তার ফলে তারা নিজেদের মধ্যেই হানাহানিতে ব্যস্ত। নিজেদেরই তারা দিন দিন ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তারা ভুলে গিয়েছে যিনি নিরন্তর গায়েব, সর্বত্র বিরাজ করেন, তাঁর বাহ্যিক মূর্তি যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি কল্পনার, বাসনার, আকাঙ্ক্ষার কিম্বা বুদ্ধির মূর্তি তৈয়ারিও নিষিদ্ধ, মানুষ সেই মূর্তিরও দাস হয়ে পড়ে।

ভেতরে বাইরে তিনি সর্বত্রই গায়েব। অথচ তিনি আছেন বলেই আমরা সকলেই আছি। যিনি গায়েব, তাঁর কোন মূর্তি হয় না।

ইসলামে ‘গায়েবে ঈমান’ কথা হিশাবে যেমন কঠিন, ধারণা হিশাবেও গভীর। রুহানিয়াতের ভিত্তি এখানে। যিনি গায়েব, অথচ সবসময়ই আছেন, তাঁর সালাত কায়েম করাও সোজা ব্যাপার না। খুব সোজা ধারণাও নয়।

মানুষকে অন্তর বাহির সকল প্রকার মূর্তি ও পৌত্তলিকতা থেকে নিরন্তর মুক্ত ও স্বাধীন রাখার জন্যই নিঃশর্তে গায়েবে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিয়েছে ইসলাম। মানবেতিহাসে এটি এক বিশাল বৈপ্লবিক ঘটনা। মানুষ যেন কখনই নিজের পায়ে নিজেকে শেকল না পরায়, নিজের স্বাধীনতা ও মুক্তির মহিমা বুঝতে পারে তার জন্যই ইসলাম পৌত্তলিকতা বিরোধী। নিজে পৌত্তলিক থেকে পোত্তলিকতাকে ‘কুফর’ বলবার তামাশা ইসলামে নাই। নিজেকে আগে কুফরি থেকে মুক্ত করতে হবে। মানুষকে স্বাধীন ও মুক্ত রাখাই ইসলামের রাজনীতি। মানুষের এই রুহানি সফর রুদ্ধ করা অসম্ভব। মুক্ত ও স্বাধীন মানুষের ধারণাকে ইসলাম রুহানিয়াতের অতি উঁচু স্তরে নিয়ে গিয়েছে।

ভোগবাদী সমাজে কামনা বাসনার মূর্তি ভাঙ্গা খুবই দুঃসাধ্য। এই সমাজে মানুষ নিজেই নিজের কামনা বাসনার দাসে পরিণত হয়। বিশেষত পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায়। তাই পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের এই পর্বে মক্কা বিজয়ের তাৎপর্য নতুন করে ভাববার সময় হয়েছে। কোন রক্ত, গোষ্ঠ, গোত্র, বর্ণ, জাতি বা সম্প্রদায়ে মানুষ বিভক্ত থাকতে পারে না। ঘোষণা হোল, সত্য হাজির, মিথ্যা পালিয়েছে, মিথ্যাকে এভাবেই পলায়ন করতে হয়।

কিন্তু পৌত্তলিকতা বিরোধিতার রাজনৈতিক মর্ম কি আমরা মনে রেখেছি? বুঝেছি? ইসলাম কি নিজেকে সকল মানুষের দ্বীন হিশাবে হাজির করবার সামর্থ অর্জন করতে পেরেছে? আমরা কি আদৌ চিন্তা করতে সক্ষম? ইতিহাস পাঠ করি?

সেই সময়ের ক্কাবার পরিস্থিতি বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিরই আদি প্রতিরূপ মাত্র। ক্কাবায় তখন মজুদ ছিল ৩৬০টি মূর্তি। রসুল হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়ালেন। একেকটি মূর্তির দিকে তাঁর লাঠি তাক করে ধাক্কা দিলেন, মূর্তিগুলো পেছনে হেলে পড়ল। রুহানিয়াতের পথ হচ্ছে মানুষের ভেতর বাহিরের মূর্তিকে এভাবেই হেলিয়ে দেওয়া, অপাসারণ করা। সত্য হাজির, মিথ্যা পলাতক, মিথ্যাকে অবশ্যই এভাবে পালাতে হয়।

মক্কার দরজায় দাঁড়িয়ে রসুল করিম বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লার কোন শরিক নাই। আল্লাহ তার খাদেমকে সাহায্য করেছেন, তিনি কেবল দুষ্কর্মে সহযোগীদের পলায়নে বাধ্য করেছেন। মক্কার উপাসনালয়ের হেফাজত এবং হাজিদের পানি পান করানো ছাড়া অন্য সব সুবিধা, অথবা রক্ত, অথবা সম্পত্তি মালিকানার দাবি আমি বিলোপ করলাম।

অর্থাৎ রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়সাল্লাম সকল প্রকার রক্ত ও আভিজাত্যের দাবি বিলোপ করে শুধু ক্ষান্ত হন নি, সম্পত্তি মালিকানার দাবিও বিলোপ করেছেন। আল্লার সৃষ্ট দুনিয়ায় মানুষ সহ প্রতিটি জীব বা প্রাণের জৈবিক ও আত্মিক চাহিদা মেটাবার ‘হক’ বা অধিকার আছে। মানুষ তার রুহানি সত্তার বিকাশের জন্য আল্লার সৃষ্টির বরকত আস্বাদনের অধিকার রাখে। কিন্তু আল্লাহ কোন মানুষকে জমি বা ধন সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দুনিয়ায়া পাঠান নি। রাসুল ও খোলাফায়ে রাশেদিনের জীবন যাপন থেকে এই বিষয়ে আমরা অনায়াসে শিক্ষা লাভ করতে পারি। মক্কায় গোত্রে গোত্রে গোষ্ঠিতে গোষ্ঠিতে হত্যা হানাহানি বন্ধ করবার জন্য রসুল রক্তপণ কঠোর করলেন। বললেন, হে কোরাইশ, আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকে পৌত্তলিকবাদের ঔদ্ধত্য এবং পূর্ব পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা তুলে নিয়েছে। মানবজাতি আদম থেকে আসা এবং আদম মাটি থেকে। অতএব মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকতে পারে না। এরপর তিনি কোরানুল করিম থেকে পাঠ করলেন:

“হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যেন তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার”। অর্থাৎ রক্তবাদ, গোত্রবাদ বা গোষ্ঠবাদের ঘোষণা দিয়েও মানুষকে বৈচিত্র ও বিভিন্নতার নিরাকরন ঘটানোর কথা বলেন নি। বরং বৈচিত্র এবং ভিন্নতার মধ্য দিয়েই মানুষ ‘এক’-কে উপলব্ধি করুক, ‘এক’-এর সাক্ষী হোক, আল্লার রসুল সেটাই বলেছেন।

এরপর তিনি বললেন, “হে কোরাইশ। তোমাদের নিয়ে আমি এখন কি করব বলে তোমাদের মনে হয়? তারা জবাব দিল, ভালো, আপনি একজন সদাশয় ভ্রাতা, এক সদাশয় ভ্রাতার পুত্র’। তাঁর উত্তর ছিল অসীম ক্ষমার, তিনি বললেন, “তোমরা যার যার কাজে যাও, কারণ তোমরা এখন মুক্ত’। যে কোরেশরা তাঁকে হত্যার হেন কোন ষড়যন্ত নাই করে নি, যারা তাঁকে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য করেছে, তিনি তাদের ক্ষমা করে দিলেন।

মানুষের মহিমা ঘোষণা এবং মহিমা কায়েমের আলোকে মক্কা বিজয়ের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পর্কে ইঙ্গিত দেবার জন্য আমরা ইতিহাস থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিয়েছে মাত্র। বলা বাহুল্য, এই মহিমা স্রেফ রোমান্টিক কল্পনা বা ধারণা নয়। এর রাজনৈতিক মর্ম সুদূর প্রসারী। আমরা তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করে আপাতত এই কিস্তি শেষ করব।

১. কোন বিশেষ সুবিধা ভোগের অধিকার কারো নাই। সম্পদের ব্যবহার কিম্বা ও সম্পদ অর্জন নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু বিশেষ সুবিধা ভোগের হাতিয়ারে পরিণত করবার জন্য সম্পদ বা সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা নিষিদ্ধ । অর্থাৎ বিশেষ সুবিধা ক্ষমতার দ্বারা হোক, কিম্বা হোক আইনী হাতিয়ার দিয়ে ব্যাক্তিগত মালিকানা কায়েম করে, – ইসলাম তা বরদাশত করে না। সুস্থ সবল ও রুহানি জীবন যাপনের জন্য ভোগের অধিকার ইসলাম অস্বীকার করে না, অস্বীকারের প্রশ্নই আসে না। জীবন যাপনকে আরও উন্নত ও আনন্দময় করবার চেষ্টা মানুষের থাকবেই, কিন্তু সফলতার ফল অল্প কিছু ব্যক্তির কুক্ষিগত হবে, এটা ইসলামের নীতি হতে পারে না। তাই সকলের উপকার নিশ্চিত করবার জন্য জমি,পুঁজি, জ্ঞান বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির ওপর আইনী মালিকানার অধিকার ইসলাম যে মানে না, তা মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়েই ঘোষিত হয়ে রয়েছে।

যা কিছু সৃষ্টি সবই আল্লাহর, তাঁর কোন শরিক নাই। মালিকানা দাবির তর্ক শেরেকির সঙ্গে যুক্ত। শেরেকি ইসলামে গর্হিত অপরাধ। মক্কায় মানুষের অধিকার কায়েমের জন্য আইনী কিন্তু সম্পত্তির মালিকানার মধ্য দিয়ে বিশেষ সুযোগ বিলোপের ঘোষণার তাৎপর্য সুদূর প্রসারী। অভিজাত ও ধনি শ্রেণীর বিশেষ সুবিধা বিলোপ করা হয়েছে। সম্পত্তি মালিকানা ব্যবস্থার বিলোপ ঘটানো হয়েছে, মানুষ যেন নিজের রুহানি শক্তির স্বাদ উপলব্ধি করে। এই স্বল্প দিনের দুনিয়ায় মানুষ কোন কিছুরই মালিকানা দাবি করতে পারে না, কারণ মৃত্যু সেই মালিকানাকে তামাশায় পর্যবসিত করে। আল্লার রাহে সব উৎসর্গ করে দেওয়া অর্থেও মানুষ রুহানিয়াত উপলব্ধি করতে সক্ষম। ত্যাগের চেয়ে মহৎ আনন্দ মানুষের আর কিছুই হতে পারে না।

২. ইসলামে কোন রক্তবাদ, গোত্রবাদ, গোষ্ঠবাদ, জাতি, বর্ণ, ভেদাভেদ নাই। একই যুক্তিতে কোন জাতীয়তাবাদ, ভূখণ্ডবাদ, ভাষাবাদ, সংস্কৃতিবাদ ইত্যাদিও নাই। কিন্তু ভাষা, সংস্কৃতি, এলাকা ভেদে নানান প্রকার জীবন যাপন -- ইত্যাদির ভিন্নতা বা বৈচিত্র আছে, যেন আমরা পরস্পরকে জানতে পারি, পরস্পরের সঙ্গে কথোকথনে নিষ্ঠ হতে পারি। ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠির মধ্যে ভিন্নতা এবং বৈচিত্র দ্বারাই আমরা পরস্পরকে চিনি, জানি, ভালবাসি, সম্পর্ক গড়ে তুলি, কিন্তু মনুষ্য সমাজে কোন ‘অপর’ নাই। সকলেই বাপের ঔরসে মায়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেছে।

৩. অতএব ইসলামে রুহানি রাজনৈতিক কর্মসূচি হচ্ছে সকল মানুষকে এক করা। ঐক্যের পথের সকল বৈষয়িক বা আত্মিক বাধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। আল্লাহ যে রুহানি গুণ সম্পন্ন মানুষকে তাঁর খলিফা ঘোষণা করেছেন সেই রুহানি মহিমাকে জয়ী করা এবং রুহানিয়াতকে অন্তরের আলো হিশাবে শুধু নয়, বাইরে নৈর্ব্যক্তিক সত্য হিশাবে কায়েম এসবই মানুষের আত্মিক ও রাজনৈতিক পরমার্থ।

অতএব সত্য হাজির, মিথ্যা পলায়ন করতে বাধ্য। আর এভাবেই, মিথ্যা পলায়ন করে।

৩০ মে ২০২০

 


নিজের সম্পর্কে লেখক

কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।