ইসলাম, সঙ্গীত ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: ৫

বাংলার সকল তরিকার ভাবুক ভাই বোন এবং শ্রদ্ধা ভাজন মুফতি আলেম ওলেমাদের প্রতি

আসসালামো আলাইকুম!

জ্বি, গল্প আছে। জালালুদ্দিন রুমিকেও জবাব দিতে হয়েছিল।

তাঁর আমলেও কোরান হাদিসের ভয় দেখিয়ে ভূয়া যুক্তি দেওয়া হয়েছিল ইসলামে গানবাজনা হারাম। কোরানে এই রকম কোন আয়াত পাওয়া যায় নি। হালাল হারামের লিস্টেও গান নাই।

তারপর বলা হোল গান হারাম না, কিন্তু বাজনা হারাম। তারপর যখন বলা হল যে গান মানুষকে আল্লার দিকে ধাবিত করে, রসুলের প্রেমে মাতাল করে সেই গান কি করে হারাম হয়? তখন বলা হোল কিছু কিছু গান হারাম, কিন্তু সব গান হারাম না।

রুমিকে এসে তখন তাঁর ভক্তরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লার প্রেমিক, তাহলে আপনি আমাদের বলুন কোন ধরনের বাজনা হারাম?

রুমি বললেন, সারা দুনিয়ার মজলুমকে বঞ্চিত রেখে ধনীর বাড়িতে নিত্য খানাপিনা আমোদফুর্তি চলে। তখন তাদের বাসন কোসন চামচ পেয়াল পিরিচ ইত্যাদি থেকে জালিমদের টুং টাং গান বাজতে থাকে, সেই গান অনাহারী ও দরিদ্রদের কানে গিয়েও পৌঁছায়। এই অধর্মে আল্লার আরশ কেঁপে ওঠে।

সেই যে ধনীদের খাবার টেবিলের বাসন কোসন চামচ পেয়ালা পিরিচের টুংটাং সঙ্গীতঅনাহারি আর গরিবের কানে এসে পৌঁছালো, সেই গান হারাম।

কিছু কি বোঝা গেল?

আরেকটু বোঝাবার জন্য আমি জালাউদ্দীন রুমির একটি কবিতা আপনাদের নিবেদন করতে চাই। আমার অক্ষম হাতে ভাবানুবাদ করেছি। মূল কবিতাটা এই মূহূর্তে জোগাড় করতে পারি নি। ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছি। মূল পেলে আবার সংস্কার করা যাবে।

সব কিছুই যে জগতে সঙ্গীত

সঙ্গীত বাঁচিয়ে রাখার দুশ্চিন্তা কোরো না
কোন বাদ্যযন্ত্র ভাঙ্গলে ভাঙ্গুক
কিচ্ছু যায় আসে না।।

আমরা তৌহিদের ব্রহ্মাণ্ডে ডুবে যাচ্ছি
যেখানে সবকিছুই সঙ্গীত।।

মহাকাশ ভেদ করে গম গম করছে
তারযন্ত্র আর বাঁশীর মূর্ছনা

যদি সারা দুনিয়ার তানপুরা দোতারা তবলাগুলো পুড়ে যায়
তারা ভস্ম হোক
তবুও লুকিয়ে রাখা বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজতে থাকবে।।

তাই মোমবাতির শিখা কাঁপে
আমাদের আছে এক টুকরা চকমকি পাথর আর অদৃশ্য স্ফুলিঙ।।

আমদের গান গাইবার কলাবিদ্যা সাগরের ফেনার মতো
তার অপরূপ গমন ভঙ্গিমা উঠে আসছে সেই শঙ্খের হৃদয় থেকে
যার বাড়ী গভীর সমূদ্রের তলদেশে।।

ঐশ্বরিক বাক্যগুলো জলকণা আর স্রোতে ভেসে আসা কাষ্ঠখণ্ডের মতো
তাঁর অনুপস্থিতির মহিমা ধারণ করে তারা হাজির হয়
তাই তারা তৈরি হয় এক গূঢ় গভীর শক্তিশালী শেকড় থেকে
মানুষ যা কখনই দেখতে পায় না।।

বকোয়াজি বন্ধ কর
হৃদপিণ্ডের মাঝখানের দরজা খুলে দাও
রূহ আসা যাওয়া করুক ।।

 


নিজের সম্পর্কে লেখক

কবিতা লেখার চেষ্টা করি, লেখালিখি করি। কৃষিকাজ ভাল লাগে। দর্শন, কবিতা, কল্পনা ও সংকল্পের সঙ্গে গায়ের ঘাম ও শ্রম কৃষি কাজে প্রকৃতির সঙ্গে অব্যবহিত ভাবে থাকে বলে মানুষ ও প্রকৃতির ভেদ এই মেহনতে লুপ্ত হয় বলে মনে হয়। অভেদ আস্বাদনের স্বাদটা ভুলতে চাই না।



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।