সুন্নাহ কি ? সুন্নাত নামে আমরা কি ভাবছি ॥

সুন্নাহ কি ? এ জাতীয় প্রশ্ন এখন ইসলামী পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের সওয়াল জওয়াব অনুষ্টানে শোনা যায় এবং বিভিন্ন বক্তা তাদের ওয়াজ মাহফিলে এ বিষয়ে বিভিন্ন রকমের বয়ান করে থাকেন। সমষ্যা হচেছ আমরা সাধারন মানুষরা কি করে বুঝবো আসলেই সুন্নাহ কি। এ বিষয়ে ভালো করে উপলদ্ধি করার জন্য আমাদের কে সাহাবাদের কর্ম প্রদ্ধতি দেখতে হবে, কারণ সুন্নাহ পালনে তাদের সমকক্ষ প্রথিবীতে আর কোন সম্প্রদায় হতে পারবে না। সুন্নাহ ছিলো সাহাবাদের ধ্যান- খেয়াল, চোখের মনী। এ কারনে আগে জানতে হবে সুন্নাহ বলতে সাহাবা কি বুঝতেন। আমাদের আর সাহাবাদের সুন্নার ধরন কিন্তু এক রকম নয় এবং হবার কথাও নয় কারণ তারা কাছ থেকে রাসুল (স) দেখেছেণ এবং তার অনুসরন করার সুয়োগ পেয়েছেণ। সাহাবারা সুন্নাত বলতে যা বুঝেছেন বা সুন্নাত কে যে দৃষ্টিতে দেখেছেন আমরা কিন্তু সেভাবে দেখিনা। এর অনেক উদাহারন দেয়া যাবে কিন্তু আমি কয়েকটি উদাহারন দিচ্ছি- রাসূলুল্লাহ (স) যে কাজ যেভাবে করেছেন এবং যেভাবে ছেড়ে দিয়েছেন সেই কাজকে সেভাবে করা এবং সেভাবে ছেড়ে দেয়ার নাম সুন্নাত। অর্থ্যাৎ একটি হলো অর্জনীয় সুন্নাত আরেকটি হলো বর্জনীয় সুন্নাত। উদাহারন দেখুন- আল্লাহর রাসূল ভাত খাননি রুটি খেয়েছেন। এখানে আল্লাহর রাসূল তার পরিবেশের সাথে সামঞ্জষ্য রেখে খানা খেয়েছেন। এখন আপনি যদি বলেন রুটি খাওয়া সুন্নাত তাহলে এটা সুন্নাতের মনগড়া কথা। আপনাকে আমাকে দেখতে হবে রাসূল (স) খাওয়ার সময় কিভাবে খেতেন এবং কি কি আমল করতেন খাবার আগে বা পরে। এই নিগুর সত্যটি উপলদ্ধি না করার কারনে আমাদের অনেকে আবার সামান্য কিছু আধুনীক উপকরনকে নিষিদ্ধ বানিয়ে ফেলেছেণ। আমরা আরেকটা বিষয় দেখতে পারি যে, সাহাবারা ঘর বানিয়েছেন, মসজিদ বানিয়েছেন। এখানে আমাদের জন্য সুন্নাত এটা নয় যে, তারা যেভাবে ঘর বানিয়েছেণ আমরাও সেভাবে ঘর বানাবো। তারা লম্বা ঘর বানাবেন, মাটির ঘর বানিয়েছেন তো তাদের অনুশরনে আমরাও সুন্নাত মনে করে মাটির লম্বা লম্বা ঘর বানাবো এবং যারা এটা করবে না তারা কখোনোই সুন্নাত প্রেমিক হতে পারবে না। কিন্তু ভাই আমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল এ ধরনের কোন নির্দেশ দেননি এবং সাহাবারও এমন কাজে উৎসাহিত করেছেন এমন কোন নজীর আপনি কিতাব পত্র ঘাটলেও পাবেন না। (বর্তমানে কেউ কেউ খেজুর পাতার মুসজিদ বানিয়ে সুন্নাতী মসজিদ নাম দিয়েছেন। এটা হচ্ছে সুন্নাহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকার ফল। ) তাহলে এখানে আমরা কি সুন্নাত থেকে মাহরুম থাকবো। ব্যাপারটা এরকম নয়। আমাকে আপনাকে দেখতে হবে যে, নবী কারিম (স) ও তার সাহাবারা ঘর তৈরি করার সময় কি আমল করেছেন। বস্তুত আপনি যদি আল্লাহর রাসুলের কাছে এ ধরনে আশা করেন যে তিনি পোষাক এবং জাগতিক কাজ কর্মের ব্যাপারে মানুষকে নসিহাত করে একটা সীমা রেখা টেনে দিয়ে যাবেন, তাহলে এটা আপনি ভুল করবেন। কারণ তিনি শুধু মাত্র আরব সম্প্রদায়ের নবী ছিলেন না তিনি বিশ্ব নবী। আর বিশ্ব নবীর জন্য শোভনিয় নয় যে তিনি তার জাতীর তাহজিব আর তমুদ্দুন কে তার সুন্নাত বানিয়ে নেবেন। তাছারা নবী করিম (স) বলেছেন যে, জাগতিক বিষয়ে তোমরা ভালো বুঝ। এ কারনে আপনি গোটা হাদিস শাস্ত্র্য খুলে দেখুন এ জাতীয় কোন নির্দেশনা আপনি দেখতে পাবেন না। আপনি বলতে পারেন যে তাহলে আমরা প্রচলিত সুন্নাতী পোষাক বলতে যা বুঝি তা কি সুন্নাতী পোষাক নয় ? বেসক আপনি এই পোষাক পরিধান করাকে সুন্নাত বলতে পারেন িকন্তু সুন্নাতী পোষাক নয়। কারণ এখানে পোষাকের ডিজাইন সুন্নাত হবে না, হবে পোষাক পরিধানের নিয়ম এবং আল্লাহর রাসূল (স) যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা। পোষাক পরিধান করাটা মানুষের রুচি এবং তার মন মানসিকতা এবং পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। আল্লাহ পোষাকের বিষয়ে বলছেন- হে নবী তাদের জিজ্ঞেস করো, আল্লাহ যে সমস্ত সৌন্দর্য্য সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন তা কে হারাম করেছে- সুরা আ-রাফ। একবার এক ধনী সাহাবী খুবই নরমাল কাপর পরে রাসূল (স) এর দরবারে এলেন। কিন্তু হুজুর (স) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সাহাবী প্রশ্ন করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ (স) আমার কি কোন অপরাধ হয়ে গেছে। রাসূল (স) অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়ে ধন্য করেছে তার শরীরে তার নমুনা ( শুকরিয়ার লক্ষন) থাকা উচিত ছিল। এর পরের দিন সেই স্হাাবী কিছ রঙ্গিন দামি কাপর পরে হুজুরের দরবারে আসলে তিনি তাকে ডেকে এনে তার পাশে আদর করে বসালেন। এই হচ্ছে আল্লাহর রাসুলের (স) সত্যিকারের দৃষ্টি ভংগি। ভুখা নাংগা, গরীবের হালতে জীবন যাপন করার নাম সাধারন জীবন যাপন বা সুন্নাতী জীবন যাপন নয়, বরং অহংকার আর অপচয়ের কাজ থেকে দুরে থেকে জীবন যাপন করার নাম সাধারন জীবন যাপন। দেখুন আমরা আজ সত্যকে অনেক বেশি ভয় পাই। রাসূল (স) এর পজিশান উপলদ্ধি করতে ব্যার্থ হয়ে, অতি মাত্রায় রাসুলের মোহাব্বাত দেখাতে গিয়ে এক শ্রেণীর লোক কিভাবে বেদয়াতের আশ্রয় নিচ্ছে তা একটু চোখ খুলে দেখুন। আপনি প্রথিবীর এমন কিছু অঞ্চল পাবেন যেখানে মানুষের জন্য স্বাভাবিক পোষাক একেবারে বেমানান বরং সেখানে বাচতে হলে আপনাকে সেই পোষাক পরিধান করতে হবে যা তার আবহাওয়া আর সংস্কৃতিকে ফলো করা হবে। এবং পোষাক পরিধানের ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদেরকে রাসূল (স) এর নির্দেশনা মেনে নিতে হবে যা তিনি আমাদের ওপর ওয়াজিব করে দিয়েছেণ। এ বিষয়ে আমাদের সবার আরো অধ্যায়ন করা দরকার। সেদিন এক ভাই বললেন দাড়ি রাখা নাকি সুন্নাত। আমি বললাম দাড়ি রাখা এ জন্য সুন্নাত নয় যে নবী দাড়ি রেখেছেন, বরং নবী সরাসরী আল্লাহর হুকুম ফলো করেছেন। আল্লাাহ ফিতরাতের পরিবর্তন পছন্দ করেন না। দাড়ি পুরুষের জন্য স্বাভাবিকতা বা ফেতরাত। যারা দাড়ি মুন্ডন করে তারা ওয়াজিব তরক করে এজন্য যে, তারা ফেতরাত বদল করে আল্লাহর হুকুম অমান্য করেছে। আরবদের তৎকালিন সমাজে কোন পুরুষের দাড়ি না রাখাটা লজ্জাজনক ছিলো। ইবনে হিশামের বর্ননা অনুযায়ী দেখা যায় এমনও ঘটনা ঘটেছে দাড়ি না থাকাতে আরবের কোন কোন নারীরা বিয়ে পরবর্তিতে স্বামীর সাথে বাসর করতে অনিহা প্রকাশ করে বলে দিতো যে, আমি কোন রমনীকে বিবাহ করিনি। আরবের বড় বড় সর্দাররা দাড়ি রাখতো তা বুখারী খুলে দেখা যাবে। আবু জাহেলের দাড়ি বর্তমানে আমাদের রবী ঠাকুর মার্কা দাড়ি ছিলো। তারা দাড়ি রেখেছেন বলে আল্লাহর রাসূল তা রাখতে নিষেধ করতে পারতেন, যেমন আমরা দেখি তিনি ইয়াহুদীদের অনেক আমলে ব্যতিক্রম করার হুকুম দিয়েছেণ। কিন্তু দাড়ির ক্ষেত্রে আমরা তেমনটা দেখিনা। তাছাড়া হাদিসের কিতাবগুলো তন্নতন্ন করলেও দাড়ি বিষয়ক দুচারটি রেওয়াত হয়তো পাওয়া যাবে। তাহলে কি দাড়ির কোন গুরুত্ব ইসলামে ছিলনা। আসলে দাড়ি না রাখার কল্পনা সেই যুগের মুশরিক যুবকরাও করতে পারতো না এই কারনে রাসুল (স) এ বিষয়য়ে কোন সুস্পষ্ট মাপ-ঝোপ দেওয়া পছন্দ করেননি। তিনি শুধুমাত্র নাজুশীদের বিরোধীতা করতে বলেছেন এবং দাড়ি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। আরবের বাইরে অগ্নি পুজারীরা তাদের ধর্ম গুরুদের দেখানো স্টাইলে দাড়ি রাখতো। তাই আল্লাহর রাসুল (স) যে ভাবে দাড়ি রেখেছেণ, যে পরিমান দাড়ি রেখেছেন ঠিক সেভাবে দাড়ি রাখাই সুন্নাত। মুলতঃ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। আর কেউ যদি দাড়ি সুন্নাত পরিমান বড় করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তিনি সুন্নাতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন অথবা সুন্নাত তরক করার কারনে গোনাহগার হবেন কিন্তু ফেতরাত পরিবর্তনের গোনাহ থেকে বেচে যাবেন এবং তার ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। এ ব্যাপারটা ঠিক তেমনি যেমন কোন ব্যাক্তি নামাজ আদায় করল কিন্তু নামাজে কিছু প্রসিদ্ধ সুন্নাহ ছেড়ে গেল। এ ক্ষেত্রে তার নামাজতো আদায় হয়ে যাবে কিন্তু কিছু সুন্নাতের সওয়াব থেকে তিনি মাহরুম হবেন অথবা সুন্নাত ত্যাগ করার কারনে গুনাহগার হবেন। কিন্তু উম্মাতের কোন ফকিহ আজ পর্যন্ত একথা বলার সাহস পাননি যে, তার নামাজ আদায় হবে না। অন্যদিকে কেউ যদি নাজুশীদের অনুকরনে তাদের মতো করে দাড়ি রাখেন তাহলে তিনি দারুন গোনাহগার হবেন। কিন্তু আমরা এতটাই সুন্নাত ভক্ত হয়ে গেছি যে, কেউ দাড়ি না রাখলে এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু কেউ যদি দাড়ির ক্ষেত্রে অন্য কোন মাজহাব ফলো করতে চায়, অথবা সুন্নাত পালন করতে ব্যার্থ হয়ে যায়, তখনি আমাদের ঈমানী জোশ উতলে উঠে, এবং আমরা তাকে ইসলাম বিদ্ধেষী, সুন্নাহ বিদ্ধেষী বলে প্রচার করা শুরু করে দেই। কিন্তু আমাদের কাজ ছিলো এটাই যে, আমরা সেই ভাইকে বোঝাবো যে, এই ফেতানার যুগে তুমি দাড়ি রেখে যে তাকওয়ার পরিচয় দিয়েছো তা আরো পূর্ণতা পাবে যদি তুমি সুন্নাতী কায়দায় দাড়িটা রাখতে পারো। কিন্তু আমরা তা করিনা। আমার কাজ হচ্ছে ফতোয়া দেয়া। কারণ কারো দোষ ত্রুটিঅšে¦ষণ করা এখন আমাদের ঈমানী দায়িত্ব্য হয়ে দাড়িয়েছে। আজব আমাদের নেশা !! যারা এ জাতিয় ফতোয়া দিয়ে মুসলমান যুবকদের কে ইসলাম সম্পর্কে ভীত করে তুলেছেন তারাও কিন্তু জীবনে অসংখ্য সুন্নাহ হেলায় ছেড়ে দেন। অথচ এমন অনেক সুন্নাহ রয়েছে যা রাসূল নিজে করেছেন এবং উম্মতকে এ বিষয়ে উদ্বুদ করেছেন, কোথাও বা অর্ডার দিয়েছেণ। মজলুমের সাহায্য করা, সমাজের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা, সমাজের অভুক্ত অনাহারী মানুষের জন্য কিছু করা, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেয়া, ক্ষুদার্থ কে খাবার দেয়া ইত্যাদি রাসুলের (স) মাশহুর সুন্নাহ বা কোথাও কোথাও ওয়াজিব হয়ে দাড়ায়। কিন্তু আমাদের মাঝে যারা অতিরিক্ত সুন্নাতের পায়রবি করা পছন্দ করেন বা ডোল পিটিয়ে বলতে থাকেন অমুকের মাঝে সুন্নাহ নেই, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছের যে, উপরে উল্লিখিত সুন্নাহ গুলো পালনের কোন সুযোগ তারা পান কিনা। চোখের সামনে খোদার বান্দাদের লাঠি পেটা করে মেরে ফেললেও যারা চোখ তুলে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেন না, বরং চোখ নামিয়ে চলার ফতোয়া দিয়ে দেন, তারা কোন অবস্থায়ই সুন্নাতের বয়ান করতে পারেন না, যদি করেন তাহলে সেটাই হবে আসল ভন্ডামি। চোখের সামনে কোন অপরাধ বা ফাহেসা কাজ দেখলে সাহাবারা কি আমল করতেন তার একটা নমনা দেখুন। “উমাইয়া শাষক একদিন হযরত গুদাইফ (রা) কে ডেকে পাঠিয়ে বললো, আমরা দুটি বিষয়ে স্বিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এই বিষয়ে আপনার পরামর্শ আশা করছি। প্রথম হলো, আমরা জুম্মার নামাজে খুতবার মধ্যে হাত তুলে দোয়া করাব, দ্বিতীয়ত হলো, ফজর ও আসর নামাজের পরে মানুষের মাঝে কোরআন- হাদিস ও গল্প কাহিনী দিয়ে নসিহাতের ব্যবস্থা করাব। হযরত গুদাইফ (রা) বলেন, আপনাদের আবিস্কৃত বিদয়াত সমুহের মধ্যে এই দুইটি বেদয়াত দেখছি খুবই ভালো (!)। কিন্তু আল্লাহর কসম আমি আপনাদের এই কাজে মোটেও সাহায্য করব না, কারণ আমি রাসূল (স) কে বলতে শুনেছি যে, যখন কেউ একটি বেদয়াতের প্রচলন ঘটায়, তখন সেখান থেকে একটি সুন্নাত উঠে যায়। আর সকল বেদয়াতের স্থান জাহান্নামে” এবার ভাবুনতো, যে দুটি কাজ তারা করতে চেয়েছিলেন তা কি শরীয়ত বিরোধী ছিল, তার তো শরীয়াতে অনুমোদন ছিলো, তাহলে সাহাবী এটাকে বেদয়াত বললেন কেন। কারণ তারা দেখেছেন যে, রাসূল (স) ও চার খলিফার যুগে কেউ জুমার খুতবায় হাত তুলে দোয়া করেননি, এবং সময় নির্ধারন করে কোন বয়ান করেননি। তাই তিনি এটাকে বেদয়াত বলতে বাধ্য হয়েছেন। কোন কাজ দিয়ে মানুষের উপকার হতে পারে এটা জানার পরেও বেদয়াতের কারনে সাহাবার তা করেননি, কাউকে করতে দেখলে চরম ভাবে বিরোধীতা করতেন। অথচ আজ আমরা অন্যায় দেখলে তার কোন প্রতিবাদতো করিই না বরং মজলুমের বিপক্ষে দাড়ানোর উসিলা খুজি এবং জালেমদের দলভুক্ত থাকাটা গর্বের মনে কারি। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে, কোন কিছুতে স্থায়ী সমাধান না হোক কিছুটা উপকারতো হয়, -যদিও তার প্রতিক্রিয়া খুবই করুন- তার পরেও আমরা তার দিকে আসক্ত হই বেশি। কারণ মলম দিয়ে যদি চিকিৎসা করা যায় তাহলে অপারেশানের টেবিলে শুইতে চাইবে কোন পাগলে, তদ্রুপ সহজে যদি সুন্নাতের পায়রবি করা যায় তাহলে কঠিন পথে পা দেবে কে। রাসুল (স) এর নবূয়াত জীন্দেগীর আগের একটি সুন্নাত ছিলো অন্যায় এবং জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা। নবুওয়াতী পাবার আগে একবার এক কিশোর ছেলে কিছু টাকা আবু জাহেলের কাছে পাওনা ছিলো কিন্তু আবু জাহেল তা দিচ্ছিল না। ঘটনাক্রমে ছেলেটি কাবার হাতেমে নবীজি (স)কে ব্যাপারটা জানালো। নবীজি তাৎক্ষনাত দেরি না করে কিশোরটিকে নিয়ে আবু জাহেলের বাড়ি গিয়ে বললেন চাচা আপনি এই ছেলেটির পাওনা পরিশোধ করে দিন। আবূ জাহেল প্রতিবাদ না করে রাসুলের মুখের দিকে তাকিয়ে তার ব্যাক্তিত্তের প্রভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং সাথে সাথে ছেলেটির পাওনা মিটিয়ে দিল। এই হচ্ছে রাসুলের সুন্নাত। কিন্তু আমরা তালাশ করছি এমন কিছু সুন্নাত যেগুলো পালন করলে শয়তান কোন টেনশান করে না। যে সব সুন্নাত পালন করলে আবু জাহেলদের মুখোমুখি হতে হবে, আমরা সেই সব সুন্নাতকে ফেতনা আখ্যায়িত করে লাউ কদু খাওয়ার সুন্নাত পালনে ব্যাস্ত রয়েছি। আল্লাহ যদি আমাদের হেদায়েত না দেন তাহলে আর কে আছে হেদায়েত দেওয়ার মতো। এ কারনে সুন্নাতের মর্যাদা উপলদ্ধি করতে হলে আগে সুন্নাতের পজিশান ঠিক করে নিতে হবে। অস্বিকার করার উপায় নেই সুন্নাতের মধ্যেই মুমিনদের ক্ষমতা এবং কল্যান রেখে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সুন্নাতের নামে অতি মাত্রায় বাড়াবাড়ি আর আসল দায়িত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতাই মুসলমানদের এই দুর্দশার কারণ। ওপরে আমি যা কিছু বললাম তা আমার মনগড়া কথা নয়। আপনারা ইচ্ছা করলে সুন্নাতের ওপর লিখিত গবেষন ধর্মী বই বিশেষ করে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা, ইবনে কাসির এবং শাহওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দীসের লিখিত কিতাবগুলো মনযোগ সহকারে পড়–ন। আপনারা দেখতে পাবেন উম্মাতের এই বরেন্য ব্যক্তিবর্গ আমাদের মতো এতো সস্তা সুন্নাত নিয়ে কাউকে কাফের বা ইয়াহুদীদের দালাল আখ্যা দেওয়া কি রকম ঘৃনা করতেন। আমরা অবশ্যই আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত মেনে চলার চেষ্টা করবো কিন্তু ওজর বশতঃ কারো সুন্নাত ছুঠে গেলেই তাকে ইসলামের দুষমন, এবং তার সমস্ত আমল যা সে করছে তা বাতিল বলে ফতোয়া দেয়াটাই এক ধরনে ফেরকাবাজী। সম্প্রতি আমি আমার বন্ধুর দাওয়াতে তাদের বাড়িতে গিয়ে বাজারের বড় জুম্মা মসজিদে নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজে যাওয়ার আগে আমার বন্ধু আমাকে সতর্ক করে দিল যে এখানে নামাজের পর যারা দুহাত তুলে মোনাজাত দেয়না তাদের কে দারুন ভাবে হেনস্তা করা হয়। মুকীম, মুসাফির কিছুর যাচাই বাছাইর দরকার মনে করা হয় না। আমি শুনে অবাক হলাম যে, নামাজের পরে দুহাত তুলে মুনাজাত দেয়ার কোন একটি সহিহ হাদিস যেখানে কেউ দেখাতে পারবে না, সেখানে তা সুন্নাত মনে করা হচ্ছে এবং কেউ এই সুন্নাতটি পালন না করলেই তাকে অপদস্ত হতে হচ্ছে। এসব করা হচ্ছে আল্লাহর রাসূল (স) কে মোহাব্বাত করে নয়, তাদের মুরুব্বীদের দেখানো এবং শিখানো কিছু শত্রুতা যা তাদের মুরুব্বীরা লালন করতেন তা জিইয়ে রাখার জন্যই। ব্যক্তি বিশেষের প্রতি শত্রুতার বশে মানুষ বেদয়াত কে সুন্নাহ বানিয়ে তার বিরুদ্ধে লেগে যায়। এই হচ্ছে আমাদের ধর্মীয় পজিশান, এই পর্যায়ে সুন্নাতের নামে সেই পুরনো দলাদলি চালু করে আমাদের কি লাভ বলুন। প্রসঙ্গত একথা বলে রাখা ভালো যে, নামাজের পরে দু হাত তুলে দোয়া করার বিধান ইসলামী শরীয়াতের ভিতরে নিকৃষ্ট এক বিদয়াত। এই বিদয়াতের ফলে কিছু সুন্নাহ উঠে গেছে। এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ আলাদা করে লেখার ইচ্ছা আছে। তাই আসুন, যুগের চাহিদা মতো এই মুহুর্ত্যে আমরা আমাদের দায়িত্ব্য ও কর্তব্য খুব ভালো করে উপলদ্ধি করার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদেরকে তার দ্বীনের পথে চলার তৌফিক দান করুন।


নিজের সম্পর্কে লেখক

Local journalist in chandpur News paper.



ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।