মাশুল ছাড়াই চালু হল ট্রানজিট


কোন ধরনের ট্রানজিট ফি ছাড়াই ইনডিয়াকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে গত ৩০ নভেম্বর প্রথম সমঝোতা স্মারকটিকে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এই সমঝোতার ফলে দেশটির প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইনডিয়া কোন ধরনের ফি ছাড়াই তার পশ্চিমের মূল ভূখ- থেকে যুদ্ধবিক্ষুদ্ধ পূর্বাঞ্চলে যাওয়ার করিডোর সুবিধা পাবে বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহার করে। উল্লেখ্য, উনিশশ একাত্তরে সাবেক পাকিস্তানের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধে জিতে রাষ্ট্র হিশাবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর পর থেকেই ইনডিয়া এমন করিডোর সুবিধা পেতে কূটনৈতিক দেন দরবার সহ নানা উপায়ে চেষ্টা করে আসছিল।

তিরিশে নভেম্বরের ওই সমঝোতার পাশাপাশি এখন অন্যান্য বড় আকারের ট্রানজিট চুক্তিগুলার আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত শেষ করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় তড়িঘড়ি করে কাজ করছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তোড়জোড় করা হচ্ছে প্রস্তুতির কাজ শেষ করতে। গত ১৪ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানকে চিঠি দিয়ে ট্রানজিট চুক্তি সইয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন।

তাছাড়া এই করিডোর সুবিধা দিতে দরকারি বিপুল পরিমাণে সড়ক-রেলপথ ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ছয়শ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প ইতিমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু রেল অবকাঠামো নির্মাণের জন্যই ২ হাজার ৭ শত কোটি টাকার প্রকল্প শুরু করেছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, এসব প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ইনডিয়ার কাছ থেকে বার্ষিক ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ হারে ৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। গত ৭ আগষ্ট ২০১০ এ ইনডিয়ার অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির ঢাকা সফরের সময় ওই ঋণচুক্তি সই করে বাংলাদেশ। ওই চুক্তি শর্ত অনুযায়ি বাংলাদেশ তার এসব প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সব কৌশলগত ও অন্যান্য পন্য ইনডিয়ার কাছ থেকে কিনতে বাধ্য।

বাংলাদেশ যে, শুধু ইনডিয়ার কাছ থেকে অনেক চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অবকাঠামো তৈরি করে দেশটিকে করিডোর সুবিধা দিচ্ছে কোন ফি ছাড়াই- তাই নয়। একইসাথে ইনডিয়ায় কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকারের দাবিতে যুদ্ধরত ও চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধে উত্তেজনাপূর্ণ ইনডিয়ার পূর্বাঞ্চলে দেশটিকে সহজে ও বিনাখরচে ঢোকার সুযোগ দিয়ে ইনডিয়ার দ্বিমুখী যুদ্ধে অংশ নিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ঠিক কোন স্বার্থ রক্ষায় চড়া সুদে ধার নিয়ে খরচ করে ইনডিয়ার যুদ্ধে অংশ নিতে যাচ্ছে, তা সরকারের কেউ স্পষ্ট করেন নাই। এর পক্ষে কোন বিশেষজ্ঞের তরফে কোন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও পাওয়া যায় নাই।

অবশ্য কোন গবেষণা ছাড়াই বাংলাদেশের আর্থিক লাভের কথা নানা বিবৃতি ও বক্তৃতায় প্রচার করে আসছিলেন অনেক দেশী-বিদেশী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকসহ ইনডিয়া ও বাংলাদেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন কর্তাব্যক্তি ও দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন যে, করিডোর সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে মাশুল ও নানা শুল্ক বাবদ প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা কামাই করতে পারবে বাংলাদেশ।

বিপুল আয়ের আকাশ-কুসুম

করিডোর সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশকে আর্থিক লাভের খোয়াব দেখানোর কাজ ইনডিয়া নতুন করে শুরু করেছিল ২০০৭ সালে। শুরুটা করেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইনডিয়ার বিতর্কিত রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, জনাব চক্রবর্তী প্রতি বছর ‘ইনডিয়াকে ট্রানজিট প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবে।’ এর দুইবছর পরে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে দেয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, ট্রানজিট সুবিধা দিলে সরকার বছরে শুধু রাজস্ব পাবে ১৮ কোটি টাকা। যা ইনডিয়ার ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূতের চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা কম। ২০০৯’র ৬ জুলাই বাংলাদেশ সফরকারে এডিবি’র মহাপরিচালক কুনিও সেঙ্গা বর্তমান অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ইনডিয়াকে করিডোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। এডিবির মহাপরিচালক তখন বলেছিলেন, ‘ইনডিয়াকে করিডোর দিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ বাংলাদেশের নীতি পরামর্শ-কেন্দ্র সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ট্রানজিটের সমর্থনে গত ৩০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল যে, ‘বাংলাদেশ ইনডিয়াকে ট্রানজিট সুবিধা দিলে তার বিনিময়ে ট্যারিফ বাবদ বছরে প্রায় ৭০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা পাবে। মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে হবে।’ সংগঠনটি এও উল্লেখ করেছিল, ‘ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশের জিডিপি ৮০% বেশি বেড়ে যাবে।’ এফবিসিসিআই ইনডিয়ার সাথে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ১১ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ বলেছিলেন, ‘ঋণের অর্থ দিয়ে দেশের সড়ক, রেল, বন্দরসহ অবকাঠামো উন্নয়ন হবে, যা পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করবে। পণ্য পরিবহনে ইনডিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ট্রানজিট দিলে বছরে বাংলাদেশ আয় করবে ৭০০-৮০০ কোটি টাকা।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ট্রানজিটের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে ১২ আগস্ট বলেছিলেন, ‘ইনডিয়াকে বন্দর ব্যবহার করতে না দিলে এবং ট্রানজিট না দিলে বাংলাদেশের উন্নতি হবে না।’ এর দু মাস আগে অন্য এক সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘ট্রানজিট হলো বাংলাদেশের আয়-রোজগারের একটা মাধ্যম।’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বছরের ১৮ আগস্ট বলেছিলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ইনডিয়াকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হলে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবেশী দেশকে ব্যবহার করতে দিলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে।’

করিডোর সুবিধা দিতে প্রথম সমঝোতাটি হল কোন ফি ছাড়াই

ত্রিপুরার পালাটানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উচ্চ মাত্রার যন্ত্রপাতি-মালসামান (ওভার ডাইমেনশনাল কারগোÑওডিসি) পরিবহনে ইনডিয়ার সাথে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এসব জিনিসপত্র পরিবহনের জন্য ইনডিয়ার কাছ থেকে কোন ট্রানজিট ফি নেবে না সরকার। গত ৩০ নভেম্বর এ সমঝোতা স্মারকে সই করেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আজিজুর রহমান এবং ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ওটিপিসির জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আর কে মদন। স্বাক্ষরিত এই সমঝোতা স্মারকের কার্যকারিতার মেয়াদ ২০১২ এর জুন পর্যন্ত। ইনডিয়ার সাথে বাংলাদেশের গত আগস্টে হাজার কোটি টাকার ঋণচুক্তির পর এটাই প্রথম সমঝোতা চুক্তি।

ইনডিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার পালাটানায় ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (ওপিটিসি) ৭২৬ দশমিক ৬ মেগাওয়াটের একটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করবে। কোম্পানিটি আশুগঞ্জ নৌবন্দর হয়ে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করে ইনডিয়ান ট্রেইলার নিয়ে যাবে রাজ্যটির রাজধানী আগরতলায়। এতে ৯৬টি কনটেইনারে করে ওই কেন্দ্র তৈরির উচ্চ মাত্রার যন্ত্রপাতি-মালসামান বহন করা হবে। এই মালসামান-যন্ত্রপাতি আনা হবে পশ্চিমবঙ্গের রায়মঙ্গল থেকে। অবশ্যই সমঝোতায় নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যেই এই পরিবহনের কাজ শেষ করতে হবে। এবং এই নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে ইনডিয়া আশুগঞ্জ থেকে আগরতলার এ করিডোরে বাংলাদেশকে মাশুল দেবে না। কিন্তু এ মেয়াদ শেষে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলাতে ইনডিয়া এ পথ ব্যবহার করে পণ্য আনা নেয়া করবে কি না এ ব্যাপারে সমঝোতায় পরিষ্কার করে কিছুই বলা নাই। কিন্তু ট্রানজিট মাশুল ছাড়া সমঝোতা হওয়ার ফলে ভভিষ্যতে এই পথ ব্যবহার করলে ইনডিয়ার সাথে ফি ধার্য করার ব্যাপারে যেকোন আলোচনার পথই কঠিন হয়ে পড়বে।

এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লি¬ষ্ট সব পক্ষের উপস্থিতিতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সে বৈঠকে ট্রানজিট ফি আদায় করেই ইনডিয়াকে আশুগঞ্জ-আখাউড়া রুটে মালামাল পরিবহনের অনুমতি দিয়ে সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) খসড়া প্রস্তুত করে দিল্লি¬ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এ খসড়া বাদ দিয়েই ১৯৭২ সালের অভ্যন্তরীণ নৌ-ট্রানজিট প্রটোকলের কাঠামো গ্রহণ করা হয়। এই প্রটোকলের আওতায় কোন ধরনের ফি ছাড়াই ইনডিয়ার পাঠানো খসড়া এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়। এরপরই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ সমঝোতা (এমওইউ) স্বাক্ষর করা হয়েছে। কিন্তু এ খসড়া তৈরি প্রক্রিয়া এবং সমঝোতা স্বাক্ষরের সাথে অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বাদ দেয়া হয়। বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি ছাড়া অন্য দেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর একটি নজিরবিহীন ঘটনাÑ যা সরকারের রুলস অব বিজনেসের সরাসরি লঙ্ঘন।

ফি আদায় ছাড়া ইনডিয়াকে ট্রানজিট দেওয়া সম্পর্কে একটি দৈনিকের সাথে মতবিনিময়কালে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ রহমতউল্লাহ বলেছেন, ‘ইনডিয়ার অর্থায়নে আশুগঞ্জ থেকে আগরতলা সীমান্ত পর্যন্ত সড়ক অবকাঠামো তৈরি হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সড়কটি একবার ব্যবহার করা হবে। কিন্তু সড়কটি বাংলাদেশের থেকে যাবে। সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে আমাদের কোন টাকা খরচ হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা তাদের কাছ থেকে ফি নেব কেন?’ এধরনের বক্তব্যের কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ এই রাস্তা তৈরিতে বাংলাদেশ অর্থায়ন করবে চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহকারী ঋণের মাধ্যমে। প্রকল্পগুলা হবে ইনডিয়ার। দরপত্র নিয়ন্ত্রণের মত কাজগুলা বাংলাদেশ করবে; আর তা কিনবে ইনডিয়ার ব্যবসায়িক ও কোম্পানি। মালামাল তাদের কাছ থেকেই কিনতে হবে। এসব প্রকল্প তৈরিতে বাংলাদেশকে ইনডিয়া ঋণ দেবে। বিশ বছরের মধ্যে এই ঋণের টাকা কড়া সুদে বাংলাদেশকে পরিশোধও করতে হবে। তাহলে ইনডিয়া অর্থায়ন করছে এই কথার কোন মানে নাই। মোটকথা ৩০ নভেম্বর সমঝোতা হওয়া প্রকল্প দুটি ইনডিয়া থেকে নেয়া ঋণের টাকা থেকেই বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প দুটি ইতিমধ্যে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এ ব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৪৮৩ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে।

মাশুল ছাড়া ইনডিয়ার ট্রানজিটের দাবি যুক্তিযুক্ত নয়

দুই হাজার নয় সালের দুই সেপ্টেম্বর ট্রানজিট সুবিধার আওতায় কোন মাশুল ছাড়াই বাংলাদেশের রাস্তা অবকাঠামো ও নৌপথ ব্যবহারের প্রস্তাব দেয় ইনডিয়া। প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশের রাস্তা-অবকাঠামো ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যেসব ট্রাক, লরি ও যাত্রীবাহী বাস উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলাচল করবে, সেক্ষেত্রে কোন মাশুল ধার্য করা যাবে না। কেবল যানবাহন চলাচলের জন্য প্রচলিত টোল আদায় করা যেতে পারে। কিন্তু পণ্য ও মালসামান-যন্ত্রপাতির ওপর কোন মাশুল বসানো যাবে না। এ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে ইনডিয়া বারবার ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ-ইনডিয়া নৌ-প্রটোকলের কথা বলে আসছে। যেখানে এখন পরিষ্কার করে ফি ছাড়া ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্টের দাবি করছে তারা। কিন্তু ইনডিয়া ১৯৭২ সালের নৌ-ট্রানজিট প্রটোকল অনুযায়ীই ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্টের ক্ষেত্রে ফি বাদ দেয়ার কথা বলতে পারে না। কারণ গত আগস্টের সাত তারিখ ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেটা বায়াত্তর সালের এই নৌ-প্রটোকল থেকে একেবারেই আলাদা। এ চুক্তিটি হল সরবরাহকারী ঋণের মাধ্যমে ইনডিয়ার ব্যাপক প্রকল্প-অবকাঠামো তৈরির সমঝোতা চুক্তি। প্রকল্পগুলার আকার-পরিধি, বিনিয়োগের অর্থ, পলিসি, উচ্চমাত্রার পরিবহন চলাচল ও উদ্দেশ্য সহ সবমিলিয়ে এ ঋণচুক্তি বহুমাত্রিক এবং ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টিকারী। ফলে কোনঅর্থেই নৌ-প্রটোকলের কথা বলে ট্রানজিট বা করিডোর মাশুল বাদ দেয়ার দাবির কোন ভিত্তি নাই। অপরদিকে বায়াত্তর সালের ওই চুক্তি অনুযায়ী ইনডিয়া শুধু বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করার কথা। সে হিশাবে ইনডিয়া শুধু আশুগঞ্জ নৌ বন্দরই ব্যবহার করতে পারে। এবং ইনডিয়া এখন পর্যন্ত তাই করে আসছে। সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী এখন নৌপথে ইনডিয়ার পণ্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আসবে। এই নৌপথ ব্যবহার করার পর বাকিপথ বাংলাদেশের সড়কপথ হয়ে ত্রিপুরার আগরতলায় নেওয়া হবে এসব মালসামান-যন্ত্রপাতি। ফলে এতে করে ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্টের প্রসঙ্গটি চলে আসে। কারণ এ অবস্থার পর এই পুরা পথ শুধু নৌপথেই শেষ হয় না। এর সাথে সড়কঅবকাঠামো যুক্ত হচ্ছে। ফলে কোনভাবেই এ পুরা করিডোরকে আগের বায়াত্তরের নৌ-প্রটোকলের সাথে মিলিয়ে মাশুল বাদ দেয়ার যুক্তি তোলার কোন সুযোগই থাকে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কয়েক মাস আগে নৌ-ট্রানজিটের মাশুল আদায়ের ব্যাপারে নীতিমালা চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এ নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহারকারী বিদেশী জাহাজগুলো প্রতি টন পণ্যের জন্য এক হাজার টাকা ফি দেবে। ১০ জুন থেকে নীতিমালাটি কার্যকর হয়। এতে বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহারকারী একাধিক ইনডিয়ান জাহাজ এই নৌ-ট্রানজিট মাশুল দিয়েছে। এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলের শেখবাড়িয়ায় গৌরীগঙ্গা ও কাবেরী নামে দুটি ইনডিয়ান পণ্যবাহী জাহাজ আসে। জাহাজ দুটি এই নৌ-ট্রানজিট ফি দিতে অস্বীকার করে। ফলে বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ওই জাহাজ দুটি আটক করে। এনবিআর ট্রানজিট ফি ছাড়া ইনডিয়ান জাহাজ দুটি না ছাড়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়। অন্যদিকে ট্রানজিট ফি না দিয়েই জাহাজ দুটি ছাড়িয়ে নিতে ঢাকাস্থ ইনডিয়ান হাইকমিশন জোর তৎপরতা শুরু করে। এ নিয়ে ইনডিয়ান হাইকমিশনার রঞ্জিত মিত্র বৈঠক করে পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসকে ইনডিয়ার দাবি বুঝানোর চেষ্টা করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব এনবিআরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে এনবিআরের কর্মকর্তারা এ ট্রানজিট ফি আদায়ের ব্যাপারে বলেন, নৌ-ট্রানজিট ফি’র ব্যাপারে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নাই। বাংলাদেশের বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী ইনডিয়া এই ট্রানজিট ফি দিতে বাধ্য। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকের পর বলা হয়েছিল, নৌ-ট্রানজিট ফি দিতে ইনডিয়ার সাথে বাংলাদেশ আলোচনা করবে এবং তাদেরকে চাপ দেবে। পরে কোনধরনের আলোচনায় না গিয়েই সরকার নৌ-ট্রানজিট ফি আদায় স্থগিত করে দেয়। এখন উল্টা নৌ-প্রটোকলের আওতায় থাকা রুট ট্রানজিটের মধ্যে এনে ট্রানজিট ফি’কে নৌ-পথ ব্যবহারের সেবা মাশুলের সাথে একাকার করে ফেলা হচ্ছে। অথচ নৌপ্রটোকল আর ট্রানজিট এক কথা না।

আইনি বলেই ট্রানজিট ফি আদায় করতে পারে বাংলাদেশ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ট্রানজিট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রানজিটের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে যে ব্যয়, সময় ও দূরত্ব কমে যাবে তার ৭০ শতাংশ ট্রানজিট ফি হিশাবে বাংলাদেশ আদায় করতে পারে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, পণ্য পরিবহনের সময় কাস্টমস বিভাগের তরফ থেকে পণ্য পরীক্ষা করতে হবে এবং এ বাবদও একটি ফি আদায়যোগ্য। রাজস্ব বোর্ড তাদের প্রস্তাবে এও উল্লেখ করেছে যে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাথে সম্পাদিত চুক্তির ৫নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ ইনডিয়ার পণ্যের ওপর ট্রানজিট ফি আরোপ করতে পারে এবং ইনডিয়া এর বিরোধিতা করতে পারে না। কেননা ইনডিয়া এবং বাংলাদেশ উভয়েই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাথে চুক্তিবদ্ধ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধান অনুযায়ী ট্রানজিটের জন্য ফি আদায়ের সুস্পষ্ট বিধান আছে। এতে বলা হয়েছে, রাজস্ব আদায় নয়, এক দেশের পণ্য অন্য দেশে প্রবেশের জন্য শুল্ক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে সেবা দেয়, তার জন্য ওই ফি আদায় করা হবে। তা ছাড়া বিশ্ব শুল্ক কর্তৃপক্ষের বিধানে ট্রানজিট ফি আদায়ের কথা বলা হয়েছে। ইওরোপীয় ইউনিয়ন ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো ওই বিধান মেনেই একে অপরকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে।

ট্রানজিটে যারা মহা লাভালাভের স্বপ্ন দেখিয়েছেন তারা এখন চুপচাপ

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কে কি বলল তাতে কিছু যায় আসে না। আমরা বাংলাদেশকে ট্রানজিট কান্ট্রি বানাব। কারণ বাংলাদেশ ঐতিহাসিক ও ভৌগলিকভাবেই ট্রানজিট দেশ। যারা ট্রানজিটের বিরোধিতা করে তারা বোকা। ট্রানজিটের জন্য ইনডিয়ার কাছ থেকে শুল্ক নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্রানজিটের জন্য ইনডিয়ার কাছ থেকে কোন শুল্ক নেয়া হবে না। ইনডিয়ার কাছ থেকে যদি শুল্কই নেব, তবে ট্রানজিট দিলাম কেন? এরজন্য বর্তমানে যে আইন আছে তা পরিবর্তনেরও ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, ট্রানজিটের ওপর কোনভাবে শুল্ক নেয়া যাবে না। তবে যেহেতু তারা আমাদের নৌপথ, রেলপথ ও সড়কপথ ব্যবহার করবে সেজন্য কিছু একটা ফি নেয়া হবে। ট্রানজিট থেকে আয় সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে সরকারের কোন জরিপ বা সরকারের কাছে কোন তথ্য নেই। বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান কিছু জরিপ-টরিপ করেছে। সরকার বড়জোর এ নিয়ে একটি সেমিনার করতে পারে। ট্রানজিট দেয়ার জন্য রাস্তা, রেল, নৌপথ ঠিকঠাক রাখতে হয়, সেজন্য ফি বলেন আর যাই বলেন কিছু একটা নেয়া হবে। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি, ব্যবসায়িক সংগঠন এবং সিপিডি সহ অনেকেই বলেছিলেন ইনডিয়াকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারবে বাংলাদেশ। অথচ অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর থেকে এখন তারা কোন কথা বলছে না।একদম চুপচাপ হয়ে আছেন।

ট্রানজিটে ফি দিতে হবে না বলে ইনডিয়া এখন শুধু ট্রানজিটই দাবি করছে

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানসহ সরকারের বেশ কিছু আমলা ট্রানজিট ফি না নেয়ার পক্ষে। ইনডিয়ার স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট ফি সংক্রান্ত নতুন করে নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। নৌ-ট্রানজিট ফি আদায় স্থগিত করার পর এখন স্থল ও রেল ট্রানজিটেও কোন ধরনের ফি দিতে রাজি নয় ইনডিয়া। এ নিয়ে দেশটি লিখিতভাবেই আপত্তি জানিয়েছে। বাংলাদেশকে যাতে ফি না দিতে হয় এজন্য ইনডিয়ান সরকার ট্রানজিটের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ট্রানজিটের মাধ্যমে ইনডিয়া কোন পণ্য নিজেদের পরিবহনে এনে সেই একই পরিবহনের মাধ্যমে অন্য কোন শুল্কবন্দর দিয়ে তাদের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নিয়ে যেতে পারবে। এতে তাদের কোন ফি দিতে হবে না। ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে পণ্য আনার পর তা খালাস করে বাংলাদেশের পরিবহনের মাধ্যমে অন্য কোন শুল্কবন্দর দিয়ে তাদের রাজ্যে পাঠানো হবে। এতে তাদের ফি দিতে হবে। কারণ বাংলাদেশ সরকার বলছে, ট্রানশিপমেন্টে ফি নেওয়া হবে, ট্রানজিটে নেওয়া হবে না। তাই দেখা যাচ্ছে, ট্রানজিটেই ইনডিয়ার বেশি লাভ। ফলে ট্রানজিটে যেহেতু ফি দিতে হবে না তাই ইনডিয়া এখন তাদের পণ্য আনা-নেয়ার সকল প্রক্রিয়ার জন্য ট্রানজিটকেই দাবি করছে। ট্রানশিপমেন্টকে নয়। কারণ ট্রানশিপমেন্ট নিলে বাংলাদেশকে পণ্য পরিবহনে ফি দিতে হবে। কাজেই ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে বর্তমান সরকার যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখিয়েছিল সেটা শুধু স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ত্রিশে নভেম্বরের সমঝোতায় সেটাই পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।

ইনডিয়ায় বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধার জন্য সবরকম ট্রানজিট দিতে হবে

ট্রেন, বাস ও ট্রাক চলাচলের পুরা ট্রানজিট সুবিধা না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে তার দাবি করা ৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে না ইনডিয়া। ইনডিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। ইনডিয়া বাংলাদেশে ২ হাজার ৮৬টি পণ্য বাজারজাত করে। এর বিপরীতে ইনডিয়ায় বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ১৬৮টি পণ্য। ইনডিয়া শিল্প সংরক্ষণের অজুহাত তুলে বাংলাদেশের ৭শ প্রকার পণ্য সেদেশে প্রবেশনিষিদ্ধ করে। পরে এ তালিকা কমিয়ে ৪শ’তে দাঁড় করায় দেশটি। ১৯৯০-১৯৯১ অর্থবছরে ইনডিয়ার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১৪৯ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে এ ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০১৬ দশমিক ৯২ মিলিয়ন ডলারে। এ সময় টাকার অংকে বাংলাদেশের রফতানি আয় ১১ গুণ বাড়লেও ইনডিয়ার বেড়েছে ১৯ গুণ প্রায়।

ট্রানজিট থেকে বাংলাদেশ বড় ধরনের রাজস্ব যে পাচ্ছে না এটা এখন পর্যন্ত অনেকটা পরিষ্কার। এরসাথে ট্রানজিট ও করিডোরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশকে ৩৪৭ কোটি ডলার বা ২৪ হাজার ২৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এসব করিডোরের অবকাঠামো উন্নয়ন সহ রেল, সড়ক ও বন্দরের উন্নয়ন ও সংস্কারে ব্যয় করতে হবে বিপুল অংকের টাকা। আর এসব অবকাঠামো তৈরি শেষ করতে হবে ৫ বছরের মধ্যে। পাঁচ বছরে শেষ করেই তাদেরকে ট্রানজিট দিতে হবে। সম্প্রতি প্রকাশিত এডিবি’র এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করে ইনডিয়াকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে এখন শুধু মাশুল আর টোল দিয়ে বছরে ১০০ কোটি টাকাও অর্জন করা সম্ভব হবে না। এর বাইরে আবার আগামী বিশ বছরের মধ্যে এসব অবকাঠামো তৈরিতে ইনডিয়ার দেয়া ঋণের টাকাও বড় অংকের সুদে শোধ করতে হবে।

সমঝোতা স্মারকে দুই পক্ষের দায়িত্ব

ইনডিয়ার দায়িত্ব

গত ৩০ নভেম্বর সমঝোতা স্মারকে ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (ওটিপিসি) দায়িত্ব সম্পর্কে মূলত অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারে অর্থ ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটিই ইনডিয়ার পক্ষে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। আর ওটিপিসির অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিশাবে ভারত হেভি ইলেকট্রিক লিমিটেড (বিএইচইএল) কাজ করবে। বিএইচইএল বাংলাদেশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে কাজটি করবে।

সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, নৌপথে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্যবাহী কনটেইনার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আনার পর তা ওঠানামার জন্য ইনডিয়া একটি রো রো ফেরি তৈরি করবে। এটি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল তারাই নিয়োগ দেবে। এরপর নারায়ণপুরসহ কয়েকটি স্থানে পণ্য রাখার জন্য তৈরি করা হবে পার্কি বে। এ ছাড়া সুলতানপুর থেকে আখাউড়া সীমান্ত চৌকি পর্যন্ত সাড়ে পঁাঁচ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত, পুনঃসংস্কার ও মজবুত করা হবে। আবার নদী ও খালের ওপর বাইপাস নির্মাণের পাশাপাশি কংক্রিটের পাইপের মাধ্যমে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া কোথাও কোথাও রাস্তার বাঁক পরিবর্তনের ব্যবস্থা করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনে গাছপালা কাটার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ কিংবা ব্যবহারের জন্য নেওয়া হবে। এর জন্য জমির বাজারমূল্য নির্ধারণ করে মালিককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

বাংলাদেশের দায়িত্ব

বাংলাদেশের দায়িত্বের ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত উচ্চমাত্রার ভারী মালসামান-যন্ত্রপাতিভরা কনটেইনার আনা-নেওয়া হবে। কনটেইনার বহন করবে ইনডিয়ার ট্রেইলার। আর এসব পরিবহন বহরের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বাংলাদেশকেই নিশ্চিত করতে হবে।

যে সব পণ্য আনা-নেওয়া হবে: পালাটানার বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৯৬টি কনটেইনারের মাধ্যমে এই উচ্চমাত্রার মালসামান-যন্ত্রপাতি (ওডিসি) পরিবহন করা হবে। যেসব যন্ত্র পরিবহন করা হবে তার সর্বোচ্চ ওজন ৩২৫ মেট্রিক টন এবং সর্বনিম্ন ১১ মেট্রিক টন। এসব যন্ত্রাংশের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে ২৪ মিটার, ৫ দশমিক ৬ মিটার ও ৫ দশমিক ৫ মিটার। ১৬ এক্সেল যুক্ত ২৮ চাকার ট্রেইলারের মাধ্যমে এগুলো পরিবহন করা হবে, যার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৩৬ মিটার।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।