বিডিআর ঘটনা: ইনটেলিজেন্স ও রাষ্ট্র


বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সবচেয়ে কম আলোচিত দিকটা হলো ইনটেলিজেন্স বা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ। বলা যায়, বিডিআর ঘটনা ইনটেলিজেন্স বিকল বা পরাজিত হবার একটা আদর্শ ঘটনা। এই ইনটেলিজেন্স বিকল বা পরাজয় আবার ঘটেছিল দুই ক্ষেত্রে। দুই ক্ষেত্রে মানে একটা ঘটনা ঘটার আগের আগাম তথ্যের কথা বলছি। আর একটা ঘটনা ঘটে গড়াতে শুরু হয়ে জানা যাবার পর কমপক্ষে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত সময়ের কথা বলছি।

ইনটেলিজেন্স (গোয়েন্দা তথ্য) আর অস্ত্র (বাহিনী) - এরা দুজনে দুজনার। যার হাতে অস্ত্র, বাহিনীতে সংগঠিত অথচ কাজের `ইনটেলিজেন্স নাই অথবা বিকল পরাজিত - এটাকে কেবলমাত্র বাচ্চাদের খেলনা বন্দুক নিয়ে খেলাপাতির খেলার সাথেই বোধহয় তুলনা করা যায়। এই তুলনা আমরা করতেই পারি। কিন্তু সমস্যা হলো, বাহিনী গড়া খেলাপাতি খেলা না। এর উপর আবার বাহিনী গড়ার উদ্দেশ্য বলতে যদি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা অথবা সীমান্ত প্রতিরক্ষা বুঝায় - তাহলে পাঠক বুঝতেই পারছেন কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে তার।

বিডিআর ঘটনা নিয়ে বহুদিক থেকে কথাবার্তা চলছে। এখানে আমার কথা কেবল ইনটেলিজেন্স প্রসঙ্গে সীমাবদ্ধ রাখব।

বিডিআরে অপারেশন ডাল-ভাত নিয়ে জওয়ান অসন্তোষ আছে এটা প্রায় সবাই জানতেন, স্বীকার করেন। এই জানার মধ্যে মাত্রার ফারাক থাকতে পারে। কিন্তু একে পুঁজি করে ভয়াবহ পরিকল্পনা কোথায় কোন কোঠরে গিয়ে ঠেকেছে তা এককথায় বলা যায়, ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলোর কেউই জানতে পারেন নি। ২৫ তারিখে সকালে ডাকা দরবারে জমায়েত হবার পর সবাই একেবারে বোল্ট ফ্রম দা ব্লু । বিডিআর সেনা অফিসার, সেনাবাহিনী, সামরিক বেসামরিক ইনটেলিজেন্স - সবাই আকাশ থেকে পড়েছেন। সবাই না হলেও অনুমান করি, তখন অন্তত জেনারেলদের টের পাবার কথা - একটা মারাত্মক ইনটেলিজেন্সের ফেইলিওর, পরাজয় বা বিপর্যয় ঘটে গেছে। কেমন, কী ধরণের ইনটেলিজেন্সের ফেইলিওর? না, এটা মুম্বাই ঘটনার মত কোন সন্ত্রাসী হামলায় ইনটেলিজেন্সের পরাজয় নয়। এটা সেনা-অফিসারের নিজের সৈনিক জীবনকে রক্ষার মামলা। নিজের ঘরের, ব্যারাকের মধ্যে নিজেকে রক্ষার মামলা। সেই ইনটেলিজেন্সের পরাজয়। নিজেকে রক্ষা মানে এখানে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তার প্রশ্নও বটে। এই নির্মম পরিকল্পনা বিডিআরের ভিতর থেকেই হোক কি দেশে-বিদেশে যেখান থেকেই হোক - তাতে আমার বক্তব্যের কোন হেরফের নাই। কারণ মূলকথা বা ফ্যাক্টস হলো, ইনটেলিজেন্সের একটা চরম ব্যর্থতা ঘটে গেছে। ঘটনার কোন খবর এমনকি ইঙ্গিতটুকুও কারও কাছে ছিল না। আর্মির অন্তত তিনটা গোয়েন্দা সংস্হা আছে। সিভিল প্রশাসনেরও আছে এরকম, সংখ্যায় বোধ হয় একটা বেশি। এছাড়া আছে র‌্যাব। এগুলো সব কাজির গরু খাতায় থাকার মত থেকে গিয়েছে, কিন্তু কোন কাজে লাগে নাই। কেন কাজে লাগে নাই বললাম এর জন্য পাঠক, কোন রেফারেন্সে যাব না। কারণ আমরা দেখতেই পেয়েছি, এছাড়া, কোন ইনটেলিজেন্স ইউনিট এখনও দাবি করে নাই যে তারা কোন কিছু টের পেয়েছিল।

ডিজি শাকিলের কাছে - জওয়ানদের সাধারণ অসন্তোষের আছে - এর বেশি যে তথ্য ছিল না তা বুঝতে আমাদের কষ্ট হয় না। ঐদিন দরবার ডাকার মধ্যে কোন শঙ্কা বিপদ থাকলে অন্তত নিজে না মরার জন্য হলেও তিনি নিশ্চয় দরবার বাতিল করতেন। পাল্টা কোন ব্যবস্হা নিতেন। অর্থাৎ আমরা দেখছি, কোর পরিকল্পনাকারীর অন্তত ভিতরের যারা ছিল সেই বিডিআর সিপাহিরা সবকিছুই করতে সক্ষম হয়েছে, সংগঠিত নড়াচড়া করতে পেরেছে কোন ধরণের ইনটেলিজেন্স (গোয়েন্দা তথ্য) সৃষ্টি বা উত্তেজনা তৈরি না করেই। আর এটাই সামরিক বেসামরিক সমস্ত ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মারাত্মক ব্যর্থতা, বিকলতা, বিপর্যয়।

বিডিআর ঘটনাকে নিয়ে যত ধরণের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আছে - এর সবগুলোও একসাথে বা কোন একটা সত্য হলেও কথা একই থাকে - এটা ইনটেলিজেন্স ইউনিটের ব্যর্থতা, বিকলতা। ডিজি শাকিল সহ প্রায় শত খানেক সেনা অফিসার নিজেদের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন ইনটেলিজেন্স ইউনিটের ব্যর্থতা, বিকলতা কী জিনিষ। ইনটেলিজেন্স (গোয়েন্দা তথ্য) কত গুরুত্ত্বপূর্ণ। এটা জীবন মরণের প্রশ্ন। রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তার প্রশ্ন। এখানে কোন ধরণের গাফিলতিকে অস্ত্র সহ্য করে না। রাষ্ট্রকে হুমকির মুখে ফেলে দেবার জন্যও এটাই যথেষ্ট।

এই কথাগুলো লিখতে লিখতে একটা কথা মনে পড়ল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো একদিন আগেই ঐ দরবার হলে গিয়েছিলেন। তাহলে তাঁর বেঁচে যাবার কারণ কি এই যে, পরিকল্পনাকারীদের পরিকল্পনায় তিনি টার্গেট ছিলেন না। স্রেফ একারণেই কী তার পরিদর্শনের দিনটা সম্ভবত - ঐদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি নয়? রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমি শিউরে উঠছি।

ইনটেলিজেন্সের পরাজয়ের সাথে, ডিজি শাকিলের ও তাঁর নিকট সহ কমান্ডদের বিষয়ে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সাধারণ জওয়ানদের মধ্যে একটা অসন্তোষ আছে এতো তাঁরা জানতেন (যার উপর দাড়িয়ে, একে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনাকারীরা সেনাবাহিনী বনাম বিডিআর জওয়ান বলে বিবাদ খাড়া করতে পেরেছিল) - এই ক্ষোভকে (তা যতই ছোট বা মতান্তরে বড় হোক না কেন) প্রশমিত করার জন্য সরকারের প্রধানকে এত কাছে পেয়েও তাঁকে ইতিবাচক অর্থেই ব্যবহারের কথা তাঁরা চিন্তা করেন নাই কেন? এটাই সেই প্রশ্ন। এই অসন্তোষ তাদের সীমিত তথ্য বিচারে যতই কম জানা থাক, আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাঁরা একে পুষে রাখার পথ বেছে নিয়েছিলেন। এটা যে যেকোন দিকে মহীরুহ হয়ে উঠার পথে পটেনশিয়াল - এই পটেনশিয়াল করে রাখার জন্য কী তাঁরা দায়ী নন? এই ঝুঁকি তাঁরা কেন নিতে গেলেন? ঝুঁকি নেয়া কেন সঠিক বলে মনে হলো? আমি যদি ধরে নেই ডাল-ভাত কর্মসূচিতে কোন দূর্নীতি গাফিলতি নাই; ধরা যাক, সমস্যা হলো ভুল বুঝা, বিডিআর কমান্ডকে জওয়ানরা ভুল বুঝেছেন, বা সরকারী আমলাতান্ত্রিক কোন জট যার কারণে যার জন্য জওয়ানদের উপযুক্ত বা অনুপযুক্ত আকাঙ্খা ক্ষোভে পরিণত হতে পেরেছে -সেটা যাইই হোক - প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য নিয়ে এটা সবচেয়ে সহজে মোকাবিলার, অসন্তোষ তা যতই ছোট বা বড় হোক তাকে খামোশ করে ফেলার এই সুযোগ কেন ডিজি শাকিলের ও তাঁর সহ কমান্ডরা উপেক্ষা করলেন, হেলায় সুযোগ নষ্ট করলেন? সমস্যা যাই থাক প্রধানমন্ত্রীর একটা আশ্বাসই কী এখানে যথেষ্ট ছিল না? অন্তত এতে ২৫ ফেব্রুয়ারীর পরিকল্পনার ভিতর বা বাইরের যারাই করুক তাদের মুখ থেকে ভাতের থালা কেড়ে নেবার মত একটা কাজ হতে উঠতে পারত না সেটা? এই বিশাল প্রশ্ন আমার পিছু ছাড়ছে না। তবে কী আসলে ডাল-ভাত কর্মসূচিতে কোন দূর্নীতি বা বড় কোন ঘাপলা ছিল যার জন্য সরকারী প্রশাসন বা প্রধানমন্ত্রীকে জানালে নিজেরা বিপদে বা ঝামেলা-জটিলতায় পড়ার সম্ভবনা ছিল - ব্যাপারটা কি এরকম? যার জন্য মনে করা হয়েছিল এটা নিজেরাই সামাল দিতে পারতে হবে? এটা যদি সত্যি হয় তাহলে বলব - এত সর্টকাট ও একচোখা - কেবল নিজেদের বাঁচানোর চিন্তা কেন তাঁরা চিন্তা করবেন? আর আসলেই কী তাঁরা শেষ পর্যন্ত নিজেদের বাঁচাতে পারলেন? নিজেকে বাঁচানোর সঠিক পথও তাঁরা বেছে নিতে পারেন নাই, দেখাই যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর পরিদর্শনের একদিন পর জওয়ানরা অসন্তোষ প্রকাশ করবে অথবা এই অসন্তোষকে কেউ ব্যবহার করবে, কেয়ামত লাগিয়ে দিবে - এটাকে বিডিআর ডিজি শাকিল ও তাঁর সহযোগী নেতৃত্ত্ব চেয়ে চেয়ে দেখবেন? সমর সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত নেবার এধরণ অগ্রহণযোগ্য, আত্মঘাতি - এটা আর আমার বলার অপেক্ষায় নাই। এটাকে নেতৃত্ত্ব ও কমান্ডের ব্যর্থতা বললে সম্ভবত কম বলা হবে। জওয়ান অসন্তোষ - এর কারণ দুর্নীতি বা মিস ম্যানেজমেন্ট হোক বা না হোক, ধরা যাক জওয়ানরা নেতৃত্ত্বকে ভুল বুঝেছিল; তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট করার সুযোগ নেয়াটাই তো সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হত। এটাই সারকথায় আমি বিডিআর নেতৃত্ত্ব, কমান্ডের ব্যর্থতা বলছি।

আল্লাহ আমাকে মাফ করুক। ডিজি শাকিলসহ তাঁর কিছু সহযোদ্ধা এখন সমস্ত অভিযোগের উর্ধে চলে গেছেন। ফলে পাঠক এটা তাঁদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ আকারে দেখবেন না। বরং অতীত ঘটনার একটা মূল্যায়ন হিসাবে দেখবেন। আমরা যারা বাংলাদেশের বেঁচে আছি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা যাদের কাছে গুরুত্ত্বপূর্ণ তাদের আগামির জন্য এই মূল্যায়ন।

দ্বিতীয়বার বিকল, বিপর্যয়:

একটা ইনটেলিজেন্সের ফেইলিওর ঘটতেই পারে। ঘটে কখনও কখনও। ২৫ ফেব্রুয়ারী সকালে ঘটনা যখন শুরু হয়ে গেছে তখন; এবার নিশ্চয় সেনা প্রধান মঈন পর্যন্ত সেনা জগতের সবার মেনে নেবার কথা যে ইনটেলিজেন্স ফেইলিওর, একটা বিকল অবস্হা ঘটে গেছে। স্বভাবতই ইনটেলিজেন্সের দিক থেকে তখন প্রথম কাজ হবে দ্রুত সেটার ক্ষতি কাটিয়ে সামলে তোলার ব্যবস্হা নেয়া, হাতছুট ঘটনাটাকে হাতের মধ্যে নিয়ে আসা। একদিকে যে হাতছুট ঘটনা ঘটে গেছে তাকে যতটা সম্ভব পরিপূর্ণ জানা, অন্যদিকে, আগামি আরও কী ঘটতে যাচ্ছে -সেই আগাম খবর সংগ্রহ। ডবল কাজ। আমি সামরিক লোক নই, সামরিক ব্যকগ্রাউন্ডের পাঠক যারা আছেন তারা নিশ্চয় আমার চেয়ে ভাল বুঝবেন আমি আসলে কী বলছি। আমি সৈন্যসামন্ত ট্যাঙ্ক, আর্মোরড কার জড়ো করে পাল্টা হামলার জন্য তৈরি হবার কথা বলছি না। প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতৃত্ত্ব "রাজনৈতিক সমাধানের পথে" যেতে চাক বা না চাক, পাল্টা দমনের অনুমতি দেক বা দেক - এসব সৈন্যসামন্ত ট্যাঙ্ক, আর্মোরড প্রস্তুতি তাদের অবশ্যই নিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু আমি সেদিকে যাচ্ছি না। আমি ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলোর কথা বলছি। হাতছুট ঘটনা যতটা সম্ভব পরিপূর্ণ জানা, অন্যদিকে, আগামি আরও কী ঘটতে যাচ্ছে -সেই আগাম খবর সংগ্রহ। অন্তত ঘাটতি যা ঘটে গেছে তা গেছে কিন্তু মরিয়াভাবে আগামি আরও কী ঘটতে যাচ্ছে সেটাকে অবশ্যই জানতেই হবে। তবেই তথ্যের ঘাটতি এবং ক্ষতি মোকাবিলার সক্ষম হবে সে। ঘটনার ঘটে যাবার পর ঘটনার পিছনে যাকে সবসময় ছুটতে হয় সে সংগঠন ইনটেলিজেন্স শব্দটার প্রতি অবিচার করে। ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলোকে ঘটনার আগে থাকতে হবে সব সময় - তবেই ওটা নামের যোগ্য। ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলোকে ঘটনার পিছনে যদি কখনও ছুটতেই দেখা যায়, এর মানে হলো, এটা ওর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। এতে যদি সফল না হয় - মানে আবার ঘটনার আগে, সামনে জায়গা দখল করতে না পারে তবে ওটা ইনটেলিজেন্স ইউনিটের মৃত দেহ। লাশটা আছে প্রাণবায়ু বের হয়ে গেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারীর প্রথম ব্যর্থতার পর ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলো কী আবার ওদের নামের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল - আমার কথা এখন সেদিকে ধাবিত হবে।

যারা এ্যকশনে বিডিআরের সদর দপ্তরের দিকে যাবে এমন ইউনিটগুলো থেকে ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলো স্বাধীন, তাদের কাজ আলাদা। ফলে অন্য ইউনিটগুলো প্রস্তুতি নিতে থাক, তাকে বেরিয়ে পরতে হবে তথ্য সংগ্রহে। হাজির হতে হবে সারা শহরে, বিশেষত ঘটনাস্হল পিলখানার আশেপাশে। সবগুলো বিডিআর গেটে, সম্ভব, সুযোগ করে তুলতে পারলে ভিতরে একদম ঘটনার মুখোমুখি ছদ্মবেশে বা এজেন্টের মাধ্যমে। আমাদের সাধারণ বুঝ তাই বলবে।

ডিজিএফআইয়ের পরিচালক সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে জানাচ্ছেন , আমার এ্যকশনে যাবার জন্য তৈরি ছিলাম, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতৃত্ব "রাজনৈতিক সমাধানের পথে" যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের অনুমতি দেয়নি। এই হলো তাঁর সারকথা।

এখানে, একটা কথা খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতৃত্ত্ব এ্যকশনে যাবার জন্য অনুমতি নাই দিতে পারে। কিন্তু ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলো কর্মতৎপরতার উপর এই অনুমতি প্রদান বা না প্রদান - প্রযোজ্য নয়। ইনটেলিজেন্স কর্মতৎপরতা চালাতে, তথ্য সংগ্রহ করতে সেনার বাইরের কারও অনুমতির প্রয়োজন নাই। কারণ এটা তার রুটিন কাজ। উপরন্তু এটা তখন বাহিনী ও রাষ্ট্রকে রক্ষার বিষয়। ফলে ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলোর যেসব স্টান্ডিং অর্ডার আছে সেটাই এর একমাত্র ও যথেষ্ট এক্তিয়ার ও নির্দেশ। পাঠক একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে ঐ পরিস্হিতিতে সামরিক বা রাজনৈতিক যা সিদ্ধান্ত আমরা নিতে চাই না কেন - সিদ্ধান্ত বেছে নিতে বা পছন্দ করতে আমাদের নগদ টাটকা তথ্য লাগবে। এধরণের তথ্যের ঘাটতি বা খামতি যত থাকবে ব্যক্তিগত ইমোশনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত কিংবা কেবল সামরিক বিবেচনায় বা কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় - কোন একটার দিকে ঝুঁকে পড়ে সিদ্ধান্ত নেবার সম্ভাবনা ততই বেশি হবে। এটা আমরা বুঝতে পারি। আদর্শভাবে (ideally) বললে, কেবল যতটুক সম্ভব একুউরেট ইনটেলিজেন্স তথ্য হওয়া উচিত ঐ সময়ের সব ধরণের সবার সিদ্ধান্তের ভিত্তি। ফলে আমরা ধরে নিতে পারি, ঘটনা শুরু হয়ে যাবার পর ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলো কর্মতৎপরতার ও সংগৃহিত তথ্যের ভুমিকা ঐ পরিস্হিতিতে ছিল সবচেয়ে নির্ধারক।

দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব:

এখন সেনাবাহিনী এ্যকশনে যাবার যে প্রস্তাব রেখেছিল সেই প্রস্তাব কোন কোন ইনটেলিজেন্স তথ্য বা ফ্যাক্টসের উপরে দাঁড়িয়ে তৈরি করা হয়েছিল? আদৌ কী ইনটেলিজেন্স তথ্য বা ফ্যাক্টস ঐ প্রস্তাবের ভিত্তি ছিল? না কী - আমাদের সহযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা হয়েছে, বন্দি করে রাখা হয়েছে, পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছে, উদ্ধারের জন্য আমাদের অনেকে ফোন পেয়েছে - কাজেই বিদ্রোহ দমন ও সহযোদ্ধাদের পরিবারসহ উদ্ধারে একশনে যাবার জন্য আমরা রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বের কাছে প্রস্তাব রাখছি - এজাতীয় প্রস্তাব রাখা হয়েছিল? এরকম হলে এটা প্রস্তাব ঠিকই হয়ত কিন্তু কোন ইনটেলিজেন্স তথ্য বা ফ্যাক্টসের উপরে এই প্রস্তাব দাঁড়ানো নয় - ফলে অন্ধকারে ঘরে সাপের মত অবস্হা বলা যায়। আর ইমোশনেও ভরপুর। আবার, রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বের "রাজনৈতিক সমাধানের পথে" যাবার পক্ষে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছিল এখানেও কোন সবল ইনটেলিজেন্স তথ্য বা ফ্যাক্টসের সমাহার ছিল তা দেখা যায় নি। ফলে ওটাও একই দোষে দুষ্ট বলা যায়। যেমন যদি প্রশ্ন করা হয় রাজনৈতিক নেতৃত্ত্ব যেদিকেই সিদ্ধান্ত নেক তা নিতে কোন কোন ইনটেলিজেন্স তথ্য বা ফ্যাক্টসের উপর ভিত্তি করে নেয়া? সামরিক, বেসামরিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলো কর্মতৎপরতার কী তথ্য তাদেরকে দিতে পেরেছিল? অথবা মঈন সাহেব কী ইনটেলিজেন্স তথ্য বা ফ্যাক্টস দিয়ে "রাজনৈতিক সমাধানের পথে" সিদ্ধান্তের অসারত্ত্ব দেখিয়ে আগানোর বিপদগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন কী না? অস্ত্র হাতে বলপ্রয়োগ যার পেশা, রাষ্ট্র বা প্রতিরক্ষা নিয়ে যার কায়কারবার, আবেগের বশে কোন সিদ্ধান্ত সেই সৈনিকের জন্য মানানসই নয়। আমাদের সহকর্মী মারা যাচ্ছে বা জিম্মি হয়ে আছে শুধু এই আবেগে নয়, মঈন সাহেব কী কোন ইনটেলিজেন্স তথ্য বা ফ্যাক্টসের উপর দাড়িয়ে "রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের" বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছিলেন? সোজাসাপ্টা এর উত্তর হলো না। এমন কোন দাবি আমরা শুনিনি। তার মানে ব্যাপারটা হলো: তখন আমাদের কাছে কী তথ্য ছিল এর কোন গুরুত্ত্বই নাই। বরং সিদ্ধান্ত নিতে বা প্রভাবিত কর‌তে রাজনীতিকদের ক্ষমতা বেশি না সমর নায়কদের ক্ষমতা বেশি এরই একটা ফালতু মহড়া দেখেছি আমরা। অথচ বিষয়টা ছিল রাষ্ট্রের বিপদ ও নিরাপত্তার। ফলে এটা হওয়ার কথা রাষ্ট্রের বিপদ ও নিরাপত্তা সূত্রে সামরিক, যেটা একই সঙ্গে রাজনৈতিকও বটে। কারণ রাষ্ট্রের কাছে সামরিক বা রাজনৈতিক এরকম কোন দ্বিবিভাগ নাই। ক্যন্টানমেন্টের মুখ চেয়ে না প্রধানমন্ত্রীর অফিসের মুখ চেয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে - এই ভাবনাটাই আত্মঘাতি, রাষ্ট্র স্বার্থ বিরোধী।

যাই হোক, ঐ সময় এ্যকশনে যাওয়া অথবা "রাজনৈতিক সমাধানের পথে" যাওয়া - কোনটাই ইনটেলিজেন্স তথ্য বা ফ্যাক্টসের উপর দাঁড়িয়ে নেয়া হয় নাই। ইনটেলিজেন্স তথ্য বা ফ্যাক্টসের উপর দাঁড়ানো সিদ্ধান্ত বলতে যা বুঝায় তা আমরা দেখিনি।

এটাই হলো মূল কথা। কারণ, পর্যাপ্ত ইনটেলিজেন্স তখনও যোগাড় নাই। কারা ওরা, কী তাদের মোটিভ, আসলেই কতজন মূল সংগঠক, বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিদের আলোচনার আগেই কী বেশির ভাগ অফিসারকে মেরে ফেলা হয়েছে, আলোচনাটা কালক্ষেপণ, লাশ সামলানোর সময় দেয়া - বাইরের সামরিক, বেসামরিক ইনটেলিজেন্স তখনও কেউ জানে না। এই হলো পরিস্হিতি।

একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবার প্রসঙ্গে ফিরব। ইনটেলিজেন্স ইউনিট আগেই বলেছি কাঠামোর দিক থেকে স্বাধীন। এ্যকশন ইউনিটের প্রস্তুতি হওয়া না হওয়ার সাথে ওর নড়াচড়া আটকিয়ে নাই। রাজনৈতিক নেতৃত্তে এ্যকশনের অনুমতি দেয়া না দেয়ার সাথেও ওর নড়াচড়ার সম্পর্ক নাই। ইনটেলিজেন্স তথ্য সংগ্রহ, একে তো একটা রুটিন কাজ এর উপর এর কাজ এ্যকশন নয়। ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্তে এ্যকশনের অনুমতি দেয়া না দেয়ার সাথে এর কাজে বন্ধ রাখার কিছু নাই। ২৪ ঘন্টাই সে সচল। তাহলে আমরা ধরে নিচ্ছি ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলো সর্বোচ্চ ক্ষমতায় সচল হয়েছিল, সকালে ঘটনার পর থেকেই । বেসামরিক ইউনিটগুলো (এসবি, ডিবি, সিআইডি, র‌্যাব ইত্যাদি) কেও সর্বোচ্চ ক্ষমতায় সচল হতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কারণ, একের সাথে অন্যের ইনটেলিজেন্স তথ্য ক্রসচেক করে সলিড করার ব্যাপার আছে। কিন্তু সেনা -প্রস্তাব বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে এসবের অবদান কী? নির্ধিদ্ধায় বলা যায় সামরিক এ্যকশন বা "রাজনৈতিক সমাধানের পথে" কোনটার পক্ষেই কোন সলিড ইনটেলিজেন্স তথ্য ছিল না। এটা ইনটেলিজেন্সের দোষের কথা নয়, ফ্যাক্টস অর্থে। বাস্তব হলো, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ঘটনার আগে প্রথমবার ইনটেলিজেন্স সেই যে ঘটনার পিছনে পড়েছিল তা আর উতরিয়ে ঘটনার সামনে পর্যন্ত আর সে আসতে পারেনি। বলা যায় এটাই দ্বিতীয়বার ইনটেলিজেন্স বিকল ও বিপর্যয়।

এই পরিস্হিতিতে সিদ্ধান্ত-প্রস্তাব যেমন আবেগ, ক্ষোভ প্রতিশোধের দিকে ঝুকে নেওয়ার চেষ্টা থাকে, ঠিক তেমনি এই তথ্য-অন্ধকারের মধ্যে হাসিনা আলোচক খুঁজতে প্রতিমন্ত্রী নানককে পাঠিয়ে বিডিআরের ডিএডিসহ (কোথাও কোথাও রিপোর্ট হতে দেখেছি তিনি ডিএডি নানকের পূর্বপরিচিত, সহপাঠি বা আত্মীয়) ১৪ জন প্রতিনিধি যোগাড় করে এনেছিলেন। যাই বুঝে নানক সাদা পতাকা তুলে থাকুন না কেন সজ্ঞানে বা বোকার মত তিনি যে প্রতারিত হয়েছিলেন ঘটনা পরবর্তীতে তাঁর প্রতিক্রিয়া দেখে তা বুঝা যায়। তিনি দাবী করেছেন লাখ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সংসদের বক্তৃতাতেও তিনি অজ্ঞাত ষড়যন্ত্রকারীদের কথা বলেছেন। তবে সাদা পতাকা তুলে আপোষ আলোচনার সময়ে নয়, এটা যে তাঁর পরবর্তিকালের উপলব্দি - তা বলাই বাহুল্য।

১৪ জন প্রতিনিধি যোগাড় করে আনা হলো ঠিকই কিন্তু নিজেদের কী অবস্হানে দাড়িয়ে আমরা ওদের সাথে কথা বলছিলাম - আমাদের জানা নাই। হাসিনার কাছে কোন তথ্য নাই। সামরিক বেসামরিক কোন ইনটেলিজেন্স ইউনিট তাকে তথ্য যুগিয়ে সবল করেছিলেন - এমন দাবি আমরা এখনও শুনি নি। সবচেয়ে দূর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, আগেই বলেছি, পর্যাপ্ত ইনটেলিজেন্স তখনও যোগাড় নাই। কোন কোন পরিস্হিতি এমন হতেই পারে। কিন্তু ইনটেলিজেন্স বিকল ও বিপর্যয়ের ঐ পরিস্হিতি থেকে বেরোতে হবে তো! এটাই তো হবে প্রাথমিক লক্ষ্য। যাতে বাস্তব ঘটনার উপর দাঁড়িয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত, অবস্হান, কোন পথে আগাবো তা বুঝে নিতে পারি। দিশা ঠিক করতে পারি। ১৪ জন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল ওদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, ভিতরের অবস্হা জানা। খেয়াল করবেন, এই তথ্য সবার; সামরিক, রাজনৈতিক বলে বেকুবি ভাগের কোন সুযোগ নাই এখানে। তথ্য জোগাড়ে সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। কেবল মঈন সাহেব না, আইজি নূর মোহাম্মদও তার এক হালি ইনটেলিজেন্স সংগঠন থেকে ভিতরের কোন সলিড তথ্য হাজির করতে পারেন নাই। কিন্তু উনি মেয়ে-জামাই শোকে অস্হির ছিলেন। যাই হোক, আমাদের দূর্ভাগ্য ১৪ জন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার প্রাথমিক লক্ষ্য তথ্যের ঘাটতি পূরণ - এমন ছিল না।

ওদিকে গতকাল প্রধানমণ্ত্রী সেনাকুঞ্জে ক্ষুব্ধ সেনাদের বক্তব্য শুনেছেন ঠান্ডা মাথায়। ওখানে নানকের উপর অনেক সেনা অফিসারই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রথম আলো দেখুন। অফিসারেরা হাসিনাকে বলেছেন, "আপনি জানেন না আপনার কাছের লোকজন আপনার সাথে ছলনা করেছে। বিভ্রান্ত করেছে। ওদের বিশ্বাস করবেন না"। "সমঝোতার নামে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা ও লাশ গুম করা এবং জওয়ানদের পালানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে"।

সাধারণ মানুষ, সেনা সদস্য নয়, হিসাবে নিকটজন সহযোদ্ধা হারানোর বেদনা, কষ্টের ক্ষোভ এরকমই হবার কথা। কোন অস্বাভাবিকত্ত্ব নাই এতে। কিন্তু সেনা অফিসার হিসাবে এটা বড়ই বেমানান। কারণ এই তথ্যগুলো ঘটনার দিন দুপুরের দিকে চলা সমঝোতা আলোচনার সময়ও সেনাবাহিনী বা রাজনৈতিক নেতৃত্ত্বকে বেসামরিক অথবা সামরিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটগুলো দিতে পারেনি। বলতে পারেনি, নানক বা সরকারী উদ্যোক্তারা প্রতারক। অথবা প্রতারকদের সাথে তাদের আলোচনায় কালক্ষেপণ লাশ সামলানোর কাল ক্ষেপণ।

আসলে ঘটনা হলো ভিতরে কী চলছে - কোন ইনটেলিজেন্স তথ্য কারও কাছেই ছিল না। অথচ একজন সেনা অফিসারও সেনা ইনটেলিজেন্স ইউনিটের এই ব্যর্থতার দায়ের দিকে চোখ ফেরাতে অপারগ। এখন পর্যন্ত কোন ইনটেলিজেন্স ইউনিট বা এর প্রধান এই ব্যর্থতার দায় অনুভব করেছেন - আমরা দেখিনি। শেষ বিচারে এই দায় সেনাপ্রধানেরও। আমরা এখনও এর কোন অনুভব, প্রতিক্রিয়া দেখিনি।

আরও অনেকের মত সংসদে হাসিনা একটা অভিযোগ করেছেন। বলছেন, পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে বাইরের লোক অবাধে ভিতরে ঢুকেছে, বের হয়েছে। বাইরের লোকের একাজে উস্কানি দিয়েছে বা করেছে। তিনি কারও নাম বলার চেয়ে ইঙ্গিতপূর্ণভাবেই কিছু বলতে চেয়েছেন, বুঝা যায়। হাসিনার কথা থেকে আবার ইনটেলিজেন্সের কথা মনে এলো। আমি এবার ইনটেলিজেন্স বলতে পুরা ঘটনার উদ্ঘাটন বলছি না, যা এখনও করা যায় নাই। অন্তত ঘটনার শুরু হবার পর পিলখানা বিডিআরের ভিতরের অবস্হা কী, কারা করেছে তাও নয়, কী করেছে সেই ইনটেলিজেন্সও আমাদের কারও কাছে ছিল না। যোগাড় করা যায়নি। সামরিক ইনটেলিজেন্সের ব্যর্থতার কথা অনেক বলেছি। আইজি যার জামাই ভিতরে মরে পরে আছে, তাঁর এসবি, ডিবি, সিআইডি র‌্যাব কেউই ভিতরের কোন তথ্য যোগাড় করতে পারলো না কেন? ধরা যাক, হাসিনার রাজনৈতিক কথার মধ্যে একআনার সত্যতা আছে তাহলে "বাইরের লোক অবাধে ভিতরে ঢুকেছে, বের হয়েছে" - এর মাঝে একজন সামরিক/বেসামরিক ইনটেলিজেন্সের লোক ঢুকতে ও তথ্য সংগ্রহ করে আসতে পারলো না কেন? এমনকি হাসিনার কথাটা রাজনৈতিক-গিমিক হিসাবে পুরাটাই অসত্য হলেও তো একটা ইনটেলিজেন্স সদস্যের অনুপ্রবেশও কী স্বাভাবিক ছিল না? এটাই দ্বিতীয়বারের ইনটেলিজেন্সের ব্যর্থতা, ঘটনার পিছনে পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতেই বাংলাদেশের সব ইনটেলিজেন্স শেষ হয়ে গেছে।

হাসিনার কথা যাই হোক, বাস্তব সত্য হলো, প্রায় সাত-আত হাজার ২৬ তারিখ বিকেলে পিলখানা ছেড়ে ভেগে যেতে পেরেছে। বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনীকে তিন কিলোমিটার দূরে সরে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আবারও বলছি সাদা পোষাকে সামরিক, বেসামরিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের কাজ করতে সমস্যা কোথায়? এটা কী করে সম্ভব যে মাত্র দুই তিনশ জন ভিতরে রইল আর প্রায় সাত-আত হাজার জওয়ান বের হয়ে পালিয়ে যাবার পর আমার টের পাচ্ছি তারা পালিয়েছে - আর ইনটেলিজেন্স কিছুই জানতে পারল না? বাইরের লোক গাড়ি অস্ত্রসহ ঢুকেছে, অনেক অফিসারই বাইরের গাড়ি নিজের চোখে দেখেছেন বলছেন। ঢুকতে না দেখা তো একটা ব্যর্থতা, আচ্ছা নাই দেখুন, বাইরের লোক, গাড়ি - এগুলো বের হয়ে গেল কী করে? কোন সাদা পোষাকের সামরিক, বেসামরিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের সদস্য এটা দেখতে বা হদিস করতে পারলেন না কেন? এটা কী পর্যায়ের ব্যর্থতা? আমার ব্যাখ্যার অতীত!

আসলে, সেনাপ্রধানের এ্যকশনে যাবার আগ্রহ যত বেশি দেখা গেছে, ইনটেলিজেন্সের সংগ্রহের উপর আগ্রহ তার যেন ততটাই কম। খুব সম্ভব, সেনা অফিসারদের ক্ষোভ, প্রতিশোধের আগুন সামলানোর দিকে মূল নজরের কারণেই এই দূর্দশা। একজন সৈনিক বা তার সৈনিকতার কাজের চেয়ে আবেগ বেশি ভারি হয়ে গেলে তাতে সেনাপ্রধানও নিজেকে কী দূর্দশায় ফেলতে পারেন - আমরা সেই নমুনাই যেন দেখলাম। ক্রিটিক্যাল সময়ে জেনারেলদের যদি বাকী সহযোদ্ধাদের আবেগ সামলাতেই দিন যায় তো পুরা বাহিনীর পেশাদারিত্ত্ব মান নিয়ে সন্দেহ করার অবকাশ আছে - এই প্রশ্ন মনে উঁকি দেয়।

শেষ কথা বলি।

কথাটা বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে লিখতে বসি নাই। নিজের যুক্তি সাজিয়ে লিখতে গিয়ে দেখলাম, শেষে কথাটা এসে পরেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র বলে একক কিছু একজিস্ট বোধহয় করে না। নাই। আছে কেবল বাহিনী আর "নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি'। আলাদা আলাদা করে যার কেউই রাষ্ট্র নয়। ফলে এখন মনে হচ্ছে - রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, ইনটেলিজেন্স ইউনিট নিয়ে খামাখাই এতক্ষণ কিছু তত্ত্বীয়-হাত মক্‌শ করলাম।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।