হেফাজতের দাবি: নাকচ করলেই নাকচ হয় না
এক
এপ্রিলের ৮ তারিখে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রচার করে বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ যথারীতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংকটের সময় উদ্ধার করেছে। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল হেফাজতে ইসলামের তেরো দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। ছয়ই এপ্রিলে ঢাকা শহরের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলাম শুধু নিজেদের আবির্ভাবকেই স্পষ্ট করে তোলেনি, একই সঙ্গে তাদের ১৩ দফা সামনে নিয়ে এসে সরকার ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সুশীলদের মহাবিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছে। তাছাড়া ঢাকার কূটনৈতিক মহলও নড়েচড়ে বসেছিল। হেফাজতের মহাসমাবেশে এতো লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটবে এটা কারো কল্পনার মধ্যেও ছিল না।
হেফাজতে ইসলাম ও তাদের ১৩ দফা দাবির প্রতি কূটনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া ধরা পড়ে ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আলব্রেক্ট কোনৎসের বক্তব্য থেকে। তিনি বলেছেন, দাবিগুলোর মধ্যে ‘মৌলবাদের বৈশিষ্ট্য’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৈপ্লবিক কায়দায় ইরানে ক্ষমতার রূপান্তর এবং তার ফলে নতুন ধরণের পাশ্চাত্য বিরোধী রাষ্ট্রের উদ্ভব পাশ্চাত্য দেশগুলোর জন্য সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তার কারন হয়ে রয়েছে। তার প্রতিই কোনৎসের ভীতি। তিনি বলেছেন, ১৩ দফা দাবি “বাংলাদেশের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ। এটি ইরানের মতো ধর্মীয় প্রজাতন্ত্র নয়। আমরা এ বিষয়গুলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে লক্ষ্য করেছি। কলকাতার পূর্বে অবস্থিত কোন অঞ্চলে এগুলো দেখিনি”।
বাংলাদেশকে কোনৎসে কলকাতার পূবে আছে ভাবছেন, ভূগোলের দিক থেকে কথাটা মিথ্যা নয়, তবে ইতিহাস ভূগোলবিদ্যা নয়। সেই দিক থেকে বাংলাদেশ কলকাতার ঠিক কোনদিকে আছে সেটা ভিন্ন গবেষণার বিষয়। এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রতিকী অর্থে যদি বাংলাদেশকে কলকাতা দিয়ে বুঝতে হবে বুঝিয়ে থাকেন তাহলে তাকে ঔপনিবেশিক মস্তিষ্কের পুরানা নমুনা জ্ঞান করে আমরা উপেক্ষা করতে পারি। অন্য কিছু বোঝাতে চাইছেন কি? কিন্তু কলকাতার পূবে আর কোন্ অঞ্চলের কথা তিনি বলছেন বোঝা গেল না। এ অঞ্চলের ইতিহাস সম্পর্কে তার ধারণা ঠিক কি বেঠিক সে তর্ক নিরর্থক। বরং পাশ্চাত্য দেশগুলো বাংলাদেশকে কিভাবে দেখে এবং সমাজের ওপরতলার ধনী, অভিজাত ও সুশীল শ্রেণীর কাছে তাদের কী প্রত্যাশা জার্মান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য থেকে সেটা বেশ ভাল বোঝা যায়। তিনি বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিজিসিসিআই) আয়োজিত একটি মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ জানান চলমান সঙ্কট নিরসনে তারা যেন ভূমিকা রাখেন। অর্থাৎ দুই রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা খুঁজে বের করার কথাই তিনি বলছিলেন। কোনৎসে আশা করেন, “ব্যবসায়ীরা ধর্ম নিরপেক্ষতার ঐতিহ্য বজায় রাখতে কোন না কোন পথ খুঁজে বের করবেন। ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। এ ইস্যুতে মতপার্থক্যের কারণেই এ ভূখণ্ড পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে গেছে। কারণ পশ্চিম পাকিস্তান কখনও ধর্মনিরপেক্ষ ছিল না পূর্ববঙ্গ ছিল”। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য রক্ষায় আপনারা কি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন?” আসলে ঢাক্র কূটনৈতিক মহল হেফাজতের সমাবেশের পর এই রকমপি ভাবছে। তাঁর দাবি, “বাংলাদেশে ধর্মীয় আচার-আচরণ মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই ঐতিহ্য, মৌলবাদ এটাকে রাজপথে নিয়ে আসে”। [কোনৎসে ২০১৩]
‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ সংক্রান্ত ইস্যুতে পাকিস্তানী শাসকদের সঙ্গে ‘মতপার্থক্য’ একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের কারণ -- কোনৎসের এই ইতিহাস পাঠকে সিরিয়াসলি নেওয়া ঠিক হবে না। ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীরাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এই সরলীকরণে আপত্তি জানাবেন। পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের যে বর্ণবাদী বয়ানটা হাজির রয়েছে এতে তা খারিজ হয়ে যাবার আশংকা দেখা দেয়। জাতীয় নিপীড়নের যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের বিরুদ্ধে ‘বাঙালি’ লড়েছে সেই দিকগুলোও এতে আড়াল হয়ে যায়। এমনকি ‘মৌলবাদী’ বলে যে হেফাজতে ইসলামের তিনি বিরোধিতা করবার জন্য ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করছেন সেই মৌলবাদীরাও তাঁর বক্তব্যে একমত হবে না। তারা তাদের সাম্প্রতিক সভাসমাবেশে বলেছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই সকল তর্ক নতুন সংযোজনা। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম অনুমান না করে বাস্তবে আসলে কি ঘটছে তার দিকে নজর রাখাই বেশি জরুরী।
এই ধরণের বিভিন্ন শক্তিশালী মহল থেকে প্রতিক্রিয়ার কারণে তের দফার প্রতি শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গী জানাটা জরুরী হয়ে পড়েছিল। একইসঙ্গে প্রশ্নসংকুল হয়ে পড়েছিল আরো কিছু প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক বিষয়ও । শেখ হাসিনা যেন তার অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন তার জন্যই বিবিসি তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।
দুই
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে শেখ হাসিনার ভূমিকা এই উপমহাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, তিনিই প্রধান সেনাপতি। পাশ্চাত্য শক্তির কাছে তাঁর গুরুত্ব হচ্ছে তিনি ১৬ কোটি মানুষের একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কথা বাদ দিলে শুধু জনসংখ্যার কারণেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার হুমকি। বাংলাদেশের বর্তমান সংঘাতসংকুল পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তি বলয়গুলো বুঝতে চাইছে রাজনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর শেখ হাসিনার কতোটা নিয়ন্ত্রণ । বোঝানোর সেই সুবিধাটাই বিবিসি করে দিয়েছে।
বোঝাবুঝির ক্ষেত্রে চারটে বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। বিবিসি ওয়ার্ল্ডের সাক্ষাৎকারে প্রথমে শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেছেন ব্লাসফেমি আইন তিনি করছেন না। দুই, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা সম্পর্কে তাঁর অবস্থান হচ্ছে তিনি দাবিগুলো খতিয়ে দেখবেন, ‘যুক্তিযুক্ত’ মনে হলে গ্রহণ করবেন, না হলে করবেন না। তিন, তিনি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করছেন না। যদিও এই ধরণের একটি কথা শোনা গিয়েছিল। চার, তিনি বিরোধী দলের দাবি মানছেন না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। তার দাবি হচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠান সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, সংসদে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তিনি সংবিধানে কোন ‘পরিবর্তন আনবেন না। এরপরেও যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তারা আসন হারাবে।
প্রথম আলো শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার ঘটা করে প্রথম পাতায় ছেপেছে। সাক্ষাৎকারটিকে তারা অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়েছে। সুশীল রাজনীতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলকে এটা জানানোর দরকার ছিল যে শেখ হাসিনা ব্লাসফেমি আইন করছেন না। তাছাড়া হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের পর তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিশাবে দেখানো দরকার তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম। সেই দিক থেকেই তার এই সাক্ষাৎকার দরকারি ছিল। বিবিসি সময়মতো তাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে।
কিন্তু শেখ হাসিনা যে সাক্ষাৎকারে ১৩ দফা সম্পর্কে তার মনের কথা বলছেন না সেটা বোঝা গেল ১১ এপ্রিল আইনমন্ত্রী শফিক রহমানের বক্তব্যে। শফিক রহমান পরিষ্কার বললেন, ‘সরকারের কাছে তেরো দফার একটিও গ্রহণযোগ্য নয়’। তার দাবি, ‘হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে একটিরও সাংবিধানিক ও আইনগত কার্যকারিতা নেই। এসব দাবি দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। তাই এসব দাবি পূরণের উদ্যোগ নেওয়ার আইনি অধিকার সরকারের নেই’। সরকারের এ অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে সংবিধান ও আইনের আলোকে। আইন মন্ত্রণালয় ১৩ দফা পর্যালোচনা করে সরকারের এই অবস্থান নির্ধারণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের মতামত শাখা হেফাজতের দাবিগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে এপ্রিলের ৯ তারিখে এই মতামত চূড়ান্ত করে।শেখ হাসিনা বলেছিলেন যুক্তিযুক্ত হলে তিনি ১৩ দফার দাবিগুলো বিবেচনা করবেন। আইনমন্ত্রীর ঢালাও ভাবে ১৩ দফ শুধু নাকচই করেন নি, শেখ হাসিনা যে যুক্তির কথা বলেছেন তার মানেও পরিষ্কার করেছেন। সেটা হচ্ছে সংবিধান ও আইনের যুক্তি। অর্থাৎ সংবিধান ও আইনের যুক্তিতে শেখ হাসিনার সরকার ১৩ দফা নাকচ করে দিয়েছে।
তর্কের খাতিরে ধরা যাক, আসলেই সংবিধান ও আইনের সঙ্গে তেরো দফা সাংঘর্ষিক। কিন্তু রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নী সংস্থা বা জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সরকার চাইলে নতুন আইন অবশ্যই প্রণয়ণ করতে পারে। বাধাটা মোটেও সাংবিধানিক বা আইনী নয়। সরকার যে আইন করতে চায় সেই আইন অবশ্যই সংসদে পাশ করিয়ে আনতে পারে। আমরা প্রজন্ম চত্বরের দাবি অনুযায়ী শেখ হাসিনা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করেছেন। আইনশাস্ত্র, আই্নের নৈতিক ভিত্তি এবং অভিযুক্তের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবার ক্ষেত্রে যে নীতিমালা আন্তর্জাতিক ভাবে মেনে চলা হয় সেই সকল নীতি শেখ হাসিনা অনায়াসে ভঙ্গ করেই প্রজন্ম চত্বরের দাবি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু ১৩ দফা সম্পর্কে সংবিধান ও আইনের দোহাই দিল সরকার।
বলাবাহুল্য হেফাজতে ইসলাম শেখ হাসিনার এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছে। আল্লামা আহমদ শফী ১৩ দফার ব্যখ্যা দিয়েছেন। তা ছাড়াও সরকার যে-যুক্তিগুলো দিয়েছে তার প্রতিটি দফা ও সরকারের ব্যাখ্যা ধরে ধরে নিজেদের পক্ষে পালটা আরও বিস্তৃত যুক্তি হেফাজতে ইসলাম হাজির করেছে [কাসেমী ২০১৩]। মতাদর্শিক ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামের এই লড়াই চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত ইতিবাচক হিশাবে দেখা জরুরী। তেরো দফার সমালোচনার মুখে তাকে নতুন করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টার অর্থ হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম তার দাবিকে সমাজের বাইরের থাকা বদ্ধমূল কোন ধ্যানধারণা মনে করে না। নিজেদের পক্ষে যেসকল যুক্তি তাঁরা খাড়া করছেন তা অধিকাংশ সময় ধর্মীয় যুক্তিও নয়। বরং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, রাষ্ট্রের সুরক্ষা ও জনজীবনে শৃংখলা রক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত। এমনকি যাকে আপাতদৃষ্টিতে ধর্মীয় দাবি বলে মনে হচ্ছে তার যৌক্তিক ভিত্তির ন্যায্যতা যে সংবিধান কিম্বা কোরান-হাদিস নয় সেটাও হেফাজতে ইসলাম পরিষ্কার দেখিয়ে দিচ্ছে। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
‘কোরান-সুন্নাহ বিরোধী সকল আইন বাতিল করা’ সম্পর্কে সরকারের বক্তব্য হচ্ছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮, ১২, ২৮(১) ও ৩৮-এ প্রদত্ত রক্ষাকবচের ফলে তেরো দফার এই প্রথম দাবিটি সংবিধানের পরিপন্থী। সরকারের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম বলছে, “হেফাজতে ইসলামের দাবিতে কোথাও বলা হয় নি যে, কোরান-সুন্নাহ বিরোধী আইন বাতিল করার ক্ষেত্রে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা আছে। হেফাজত দেশের জনগোষ্ঠির ৯০ ভাগ মুসলমানের পক্ষ থেকে এ দাবিটি জানিয়েছে। বর্তমানে সরকার নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে দেশের জনগোষ্ঠীর সাথে এই মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল যে, তারা কোরান-সুন্নাহ পরিপন্থী কোন আইন পাশ পাশ করবে না। সুতরাং তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবার তাগিদেই হেফাজতের এই দাবিটি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে জনগণের কাছে পরিপূর্ণ ভাবে দায় বদ্ধ”
তর্কটা তাহলে মোটেও সাংবিধানিক নয় বরং রাজনৈতিক। প্রথমত, গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণা ও অনুমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। গণতন্ত্র বলতে আমরা যদি বুঝি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় ধারণ করা তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় সংবিধানকে ধারণ করতে হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী বলা হচ্ছে “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে” বাংলাদেশের সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। প্রশ্ন হচ্ছে, কোরান ও সুন্নাহ পরিপন্থী আইন বহাল রাখা বা আইন প্রণয়ন করা যদি “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি”র সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে কি হবে? এই তর্ক পাশ কাটিয়ে যাবার উপায় নাই। এই তর্ককে ইতিবাচক তর্কে রূপান্তরিত করতে হলে সংবিধানের দোহাই দিয়ে কোন লাভ হবে না। বরং গণতন্ত্র আসলে কী এবং ইসলাম ও আধুনিক রাষ্ট্রের সম্পর্ক সংক্রান্ত গোড়ার প্রশ্নের অন্দর মহলে আন্তরিকতার সঙ্গে সকল পক্ষকেই প্রবেশ করতে হবে। ইসলামের দিক থেকে প্রশ্ন হতে পারে একটি আধুনিক রাষ্ট্র কায়েম ইসলামের নীতিনৈতিকতা কিম্বা ইসলাম কায়েমের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা। গণতন্ত্র ও ইসলামের সম্পর্ক কি সাংঘর্ষিক, নাকি সঙ্গতি রচনা ও সমন্বয় সম্ভব। কিভাবে সেটা সম্ভব? তাছাড়া আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কি নিছকই একটি আইনী প্রতিষ্ঠান, কিম্বা তার সংবিধান কি নিছকই আইন? নাকি ভিন্ন কিছু। যেখানে প্রবল ও প্রকট পুঁজিতান্ত্রিক সমাজ বিদ্যমান, যেখানে মুসলমান কিম্বা অমুলমান সকলেই বিশ্বব্যপী পুঁজির পুঞ্জিভবন ও আত্মস্ফীতির নিয়মের অধীন, যেখানে পুঁজির হুকুম তামিল না করলে কারো পক্ষেই জীবন ধারণ সম্ভব নয় -- সেখানে প্রশ্ন, ধর্মের বিশেষত ইসলাম কায়েমের আন্দোলন পুঁজির বিনাশ সাধনের সংগ্রাম ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে কিনা। হেফাজতের দাবি মানা বা না মানা ভিন্ন বিষয়, কিন্তু তাদের নগদ অবদান হচ্ছে এই তর্কগুলো করতে তারা সমাজকে বাধ্য করছে।
এই দাবির পক্ষে হেফাজতের দ্বিতীয় যুক্তিও ধর্মীয় যুক্তি নয়। হেফাজত বলছে কোরান-সুন্নাহ পরিপন্থী কোন আইন সরকার প্রণয়ন করবে না, এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। তাহলে জনগণকে এই সরকার প্রতারিত করতে পারে না। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। প্রশ্ন হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর এই ধরণের প্রতারনামূলক প্রতিশ্রুতি আমরা গণতন্ত্রের নামে করতে দেব কিনা।
এই একটি উদাহরণই প্রমাণ করবার জন্য যথেষ্ট যে ১৩ দফা সংক্রান্ত তর্ককে ধর্মীয় দাবি হিশাবে নাকচ করবার কোন সুযোগ নাই। আমরা এখন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি নিয়ে আলোচনা করে দেখাবার চেষ্টা করব ১৩ দফা দাবির মধ্যে একটিও দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয় বলে সরকার যে দাবি করছে তার কোন ভিত্তি নাই।
তিন
ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী ব্লাসফেমি মহা অপরাধ। শরিয়া আইনের অবস্থান থেকে ব্লাসফেমির দাবি তোলা হেফাজতে ইসলামের পক্ষে মোটেও অযৌক্তিক নয়। পৃথিবীর কোন দেশেই অবাধ বাক ও ভাব প্রকাশের অধিকার নাই। মানুষ সামাজিক জীব, সমাজেই তাকে বাস করতে হবে। সমাজের অধিকাংশ সদস্যকে আঘাত দিয়ে ব্যাক্তির পক্ষে সমাজে টিকে থাকা কঠিন। তবে, আধুনিক রাষ্ট্র বলা বাহুল্য ধর্মরাষ্ট্র নয়। তবুও এই ধরণের সংকট সামাল দেবার জন্য রাষ্ট্র তার সেকুলার জায়গা থেকেই ‘বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের ওপর ‘আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ’ আরোপ করতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই ধরণের ‘যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ’ আরোপের আইন প্রণয়ণের দাবি অবশ্যই হেফাজতে ইসলাম করতে পারে। নাগরিক হিশাবে এই দাবি তোলা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার তাদের আছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার সে অধিকার অস্বীকার করছে।
কি যুক্তিতে রাষ্ট্র ‘যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ আরোপ করে বা করতে বাধ্য? বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী (১) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা একটি বড় যুক্তি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র আজ নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে কিনা সেটা শেখ হাসিনাকে অবশ্যই বিবেচনা করে দেখতে হবে; (২) বিদেশী রাষ্ট্র সমূহের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। রসুলে করিমের এই অমার্যাদার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে বহু দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সেই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা শেখ হাসিনার দায়িত্ব; (৩) জনশৃংখলা আরেকটি বড় কারন। বাংলাদেশে কিছু ব্লগারদের কারনে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে এবং ইতোমধ্যে বহু মানুষ শহিদ হয়েছে এবং শহিদ হবার জন্য প্রস্তুত রয়েছে সে কারণেও শেখ হাসিনাকে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বাধ্য; (৪) আদালত অবমাননা। গত বছর ব্লগে বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এই ধরণের লেখালিখি বন্ধ করবার জন্য কতিপয় ব্লগ ও ব্লগারদের সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং অন্যদেরও খুঁজে বের করবার জন্য নির্দেশও জারি করতে হয়েছিল উচ্চ আদালতকে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকার কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করে নি। শেখ হাসিনার সরকার আদালত অবমাননার জন্যও এই ক্ষেত্রে দায়ী। এরপর রয়েছে (৫) মানহানি। এতে সারাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মানহানি ঘটেছে। কারণ নবি করিমের অপমান তাদের বুকে শেলের মতো বিঁধেছে। শেষ যুক্তি হচ্ছে (৬) অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা। অর্থাৎ রাষ্ট্র কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এই ধরণের কুৎসাকারীদের ওপর হামলা হতে পারে। এই ধরণের লেখালিখি অপরাধে প্ররোচনা ঘটাতে পারে। সেই কারণেও বাক ও ভাব প্রকাশের ওপর যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপের প্রয়োজনীয়তা আছে। হয়তো ব্লগার রাজিব এই ধরণের আইনে আগেই যদি গ্রেফতার হোত তাহলে আজ তাকে নিহত হতে হোত না। তার লেখালিখি অপরাধ সংঘটনে প্ররোচিত করেছে। এই হত্যার জন্য তো সরকারই আসলে দায়ী।
এটা পরিষ্কার যে ‘ব্লাসফেমি’ নিয়ে যে তর্ক চলছে তা কূটতর্ক মাত্র। এই অনুমানও কাজ করে বাংলাদেশের মওলানা মাশায়েখরা প্রাগৈতিহাসিক জীব। তাঁরা কিছু জানেন না। এই অনুমান ঠিক নয়। হেফাজতে ইসলাম বারবারই দাবি করছে আমরা রাজনৈতিক দল নই, ধর্মীয় ও অরাজনৈতিক সংগঠন। সেটা তাঁরা তাদের ছয় তারিখের সমাবেশে প্রমাণ করেছেন। জামায়াত, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি কাউকেই তারা তাদের সমাবেশ থেকে ফায়দা তুলতে দেন নি। প্রশাসনকে কথা দিয়েছেন ৫টায় তাদের সমাবেশ শেষ হবে, ওয়াদা মাফিক সমাবেশ শেষ করে তারা চলে গিয়েছেন।
অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হিশাবে ইসলাম হেফাজতের কর্তব্য থেকেই হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব মনে করেছেন এই রাষ্ট্রের অধীনে রসুলে করিমের ইজ্জত ভূলুন্ঠিত হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কটুক্তি ও কদর্য ভাষায় দীর্ঘদিন ধরে লেখালিখি হতে থাকলেও রাষ্ট্র বা সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি। অথচ শেখ হাসিনা বিবিসির কাছে দাবি করেছেন প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষা করা যায়। প্রথম আলো শিরোনাম করেছে “আমরা সব সময় ধর্মীয় অনুভূতিকে রক্ষার চেষ্টা করি”। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। তিনি ফৌজদারি দণ্ডবিধি, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং সম্প্রতি পাশ হওয়া তথ্য প্রযুক্তি আইনের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের কোন উল্লেখ করেন নি। ব্লগে কুৎসিত লেখালিখি চলতে থাকলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি। আগেই বলেছি গত বছর এই ধরণের লেখালিখি বন্ধ করবার জন্য কতিপয় ব্লগ ও ব্লগারদের সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত এবং অন্যদেরও খুঁজে বের করবার জন্য নির্দেশ উচ্চ আদালত দেবার পরেও সরকার কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করে নি।
অথচ ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারী শেখ মুজিবর রহমানকে সমালোচনার জন্য ঝিনাইদহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিমুল কুমার বিশ্বাস হরিণাকুণ্ড সরকারী লালন শাহ কলেজের ছাত্র আবু নাইম জুবায়েরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। জামিন দিতে অস্বীকার করেছেন। আদালত বলেছে শেখ মুজিবর রহমানকে ফেইসবুকে সমালোচনা করা হয়েছে তার প্রমাণ আদালতের কাছে আছে।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে সরকার যদি বঙ্গবন্ধু বা প্রধানমন্ত্রীর অবমাননার জন্য কাউকে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি দিতে পারে তাহলে রাসুল (সা.)-এর অবমাননাকারীদের শাস্তি দিতে এত গড়িমসি কেন? বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের পক্ষ থেকে প্রশ্নটি তুলবার ধরণ গুরুত্বপূর্ণ। রসুল (সা।)-এর ইজ্জত ও মর্যাদা রক্ষা রাষ্ট্র ও সরকারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু শেখ মুজিবর রহমান এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে পড়ে। আখেরি নবির ইজ্জতের চেয়েও শেখ মুজিবর রহমান ও প্রধান মন্ত্রীর ইজ্জতের মূল্য বেশি। হেফাজতে ইসলাম প্রশ্নটি তুলেছে বিদ্যমান রাষ্ট্রের চরিত্র এবং জালিম শাসকদের রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে।
হেফাজতে ইসলাম যখন বলে সরকারকে ব্লাসফেমি আইন করতে বাধ্য করা হবে তখন মধ্যবিত্ত শ্রেণি আতংকিত হয়ে পড়ে। অথচ ধর্মীয় সংগঠন ধর্মের ভাষাতেই কথা বলবে। এতে আতংকিত হবার কিছুই নাই। সমাজে যে কেউই তার নিজের জায়গা থেকে দাবি তুলতেই পারে। আমাদের বিচার করে দেখতে হবে গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনার দিক থেকে এই দাবিগুলো রাষ্ট্র কতোটুকু গ্রহণ করতে সক্ষম। নিঃসন্দেহে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পক্ষে সব দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান ধরে আমরা যে আলোচনা করেছি তাতে রসুলের ইজ্জত রক্ষার জন্য সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আইন প্রণয়ন মোটেও গণতন্ত্রের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোন পদক্ষেপ নয়। নিজের দেশের জনগণের মর্ম বেদনা ও অনুভূতির চেয়েও শেখ হাসিনা বিদেশিদের সন্তুষ্ট করবার দিকেই মনোযোগ দিয়েছেন।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী এই জন্যই সম্ভবত হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, “সরকার দেশের কোটি কোটি মুসলমানের মনের ভাষা বুঝতে না পারলে চরম মূল্য দিতে হবে”। যদি তিনি ধর্মের ভাষায় কথা না বলে গণতন্ত্রের ভাষায় বলতেন তাহলে এই হুঁশিয়ারির খুব একটা হেরফের হোত না। তিনি বলতেন কোটি কোটি নাগরিকের মনের ভাষা বুঝতে শেখ হাসিনা ভুল করছেন। এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।
না। আমরা কোন মূল্য দিতে রাজি নই। আমরা চাই সকলেই হুঁশে থাকুক। আলাপ আলোচনা কথাবার্তার পথ যেন সমাজে রুদ্ধ না হয়। হয়তো এর মধ্য দিয়েই আমাদের গঠনমূলক পথ সন্ধান করে নিতে হবে।
যেসব নাগরিকদের আমরা নাগরিকতার বাইরে রেখে দিতে চাই, যদি তাঁদের সমষ্টির অন্তর্ভুক্ত করে আমরা ভাবতে না শিখি এবং তাঁদের দাবির মর্ম যদি গণতান্ত্রিক চিন্তা চেতনার জায়গা থেকে বুঝতে আমরা ভুল করি তাহলে বাংলাদেশকে রক্তাক্ত পথেই আমরা ঠেলে দেব। কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। এই সমাজ ও রাষ্ট্র তাদেরও। এই সত্য যেন আমরা না ভুলি।
সেই সত্যকে সামনে নিয়ে আসার অর্থ এই নয় যে হেফাজতের সঙ্গে অন্যদের চিন্তার পার্থক্য থাকবে না। কিম্বা পার্থক্যের কারনে সমষ্টির সদস্য হিশাবে সকলের জন্য মান্য নীতি ও নির্দেশ নির্ধারণ করা কঠিন হবে। তা না হলে একই রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে থাকার চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। সেই ক্ষেত্রে কপটতা ও প্রতারণা পরিহার যেমন দরকার, তেমনি দরকার সমাজের যে কোন স্তর থেকেই উঠুক না কেন মানুষের ক্ষোভ, বিক্ষোভ দাবির প্রতি আন্তরিক মনোযোগ এবং তাঁরা যে ভাষায় কথা বলছেন সেই ভাষাকে বোঝার চেষ্টা করা। এই সঙ্গত অনুমানে যে কোন দাবি নিয়ে আন্তরিক তর্ক বা পর্যালোচনা সমাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। বিশেষত যদি সেই তর্ক হাজির হয় সেই সকল শ্রেণি বা জনগোষ্ঠির কাছ থেকে যাদের সমাজের অধিপতি চিন্তা দাবিয়ে রাখে। অন্যকে অস্বীকার বা কিম্বা তাদের কণ্ঠস্বরে দাবিয়ে রাখতে গেলে সেটা ক্রোধ ও হিংসা হয়ে হাজির হয়। তথাকথিত আধুনিক ও প্রগতিশীলদের আভিজাত্য ও অহঙ্কারই এই ক্ষেত্রে সমাজের অগ্রগতির জন্য বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উপলব্ধি আশা করি অনেক বরফ ভেঙ্গে দেবে। হেফাজতের দাবিনামা ধর্ম, নীতিনৈতিকতা ও রাষ্ট্র সম্পর্কে যেসব প্রশ্নগুলো তুলছে তাকে কেন্দ্র করে আমরা চিন্তা ও পর্যালোচনার আরও অগ্রসর স্তরে প্রবেশ করতে পারব আশা করি।
২৭ এপ্রিল ২০১৩। ১৫ বৈশাখ ১৪১৯। শ্যামলী।
-----
তথ্যসূত্রঃ
[কোনৎসে ২০১৩]
মানবজমিন । মঙ্গলবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৩
http://www.mzamin.com/details.php?nid=NTAwNTI=&ty=MA==&s=MTg=&c=MQ==
[কাসেমী ২০১৩]
হেফাজতে ইসলামী নায়েবে আমীর মাও. নূর হোছাইন কাসেমী ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম –মহাসচিব জুনায়েদ আল-হাবীবের অভিমত সম্বলিত ‘তেরো দফা দাবী, সরকারের অবস্থান ও পর্যালোচনা’ -- মাও. রেজাউল করিম, মাও.আব্দুল মালেক, মাও। উমায়ের কোব্বাদি ও মাও। আওলমগীর আল-আমান।