নাগরিক ও মানবিক অধিকারের রাজনীতি
আজকাল কোন সভাসমিতিতে যেতে ইচ্ছা করে না। এটা পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার নয়। প্রায় সবসময়ই দেখি, যে কথা বলি কোন সময়ই সেটা ঠিক ভাবে গণমাধ্যমে আসে না। প্রতিটি পত্রিকা তাদের নিজেদের মতো করেই তাদের যে-বাক্য পছন্দের সেটাই সারকথা হিসাবে হাজির করে। এতে অসুবিধা নাই। যদি উদ্ধৃতি সঠিক হয়। যে-প্রসঙ্গে বাক্যটি বলা বা যুক্তির যে ধারাবাহিকতায় কথাটি উঠেছিল তা না হয় উহ্যই থাকল। কিন্তু বিপদ হয়ে দাঁড়ায় যা বলেছি ঠিক তার উলটা যদি পত্রিকায় ছাপা হয়। এর ফলে বন্ধু ও শুভার্থী মহলে জবাবদিহি করতে করতে জান বেরিয়ে যাবার হাল হয়। ভাগ্য ভালো যে আমি লেখালিখি করি। ফলে অন্য লেখালিখির মধ্যে বিভ্রান্তি কাটিয়ে ওঠা কিছুটা সম্ভব হয়। ক্ষতি যা হবার তাতো হয়ই।
অগাস্টের তিন তারিখে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির একটি সভা হয়েছে বহুদিন পর। সম্প্রতি আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমানকে আবার গত ২৭ জুলাই রিমান্ডে আনা হয়েছিল। রিমান্ডে আনার উদ্দেশ্য কোন জিজ্ঞাসাবাদ নয়, স্রেফ তাঁকে নির্যাতন করা। তার প্রতিবাদ করবার জন্য সভা। সেই সভায় যে কথা বলেছি তা ভুল ভাবে কোথাও উদ্ধৃত হয় কিনা সেটা ভেবে আগাম কয়েকটি কথা বলে রাখা দরকার মনে করছি।
________________________________________
বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশকে একটি পত্রিকা অফিসে ঢুকে বাংলাদেশের একজন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেফতার করতে দেখেছি। মনে হচ্ছিল আমি একটি যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। দমন-নিপীড়নের পুরা পুলিশী যন্ত্র মহাজোটের সরকার তাঁর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল। এক দিক থেকে মাহমুদুর রহমানের জন্য আমার ঈর্ষাই হচ্ছিল। একটি সরকারের গোড়ায় তিনি কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর লেখার দ্বারা যেমন, তেমনি দৈনিক আমার দেশের ভূমিকার দ্বারাও বটে। পত্রিকা অফিস থেকে তাঁকে যেভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা নিন্দিত হয়েছে দেশেবিদেশে। দেশের চেয়েও বিদেশে বেশী। অনেক সাংবাদিক তাঁকে গ্রেফতার করবার সেই কুখ্যাত অপারেশান প্রত্যক্ষ করেছেন। তাদের কারনে সেই গ্রেফতারের ঘটনা একটা কাহিনী হয়ে ওঠে।
________________________________________
এই প্রথম মাহমুদুর রহমান শেখ হাসিনার সরকারের অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা নয়। এর আগেও আদালত অবমাননার দায়ে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং পুলিশী হেফাজতে তাঁর প্রাণনাশেরও চেষ্টা করা হয়েছে। তখন গ্রেফতারের সময় আমি দৈনিক আমার দেশে হাজির ছিলাম। বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশকে একটি পত্রিকা অফিসে ঢুকে বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেফতার করতে দেখেছি। মনে হচ্ছিল আমি একটি যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। দমন-নিপীড়নের পুরা পুলিশী যন্ত্র মহাজোটের সরকার তাঁর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল। এক দিক থেকে মাহমুদুর রহমানের জন্য আমার ঈর্ষাই হচ্ছিল। একটি সরকারের গোড়ায় তিনি কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর লেখার দ্বারা যেমন, তেমনি দৈনিক আমার দেশের ভূমিকার দ্বারাও বটে। পত্রিকা অফিস থেকে তাঁকে যেভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা নিন্দিত হয়েছে দেশেবিদেশে। দেশের চেয়েও বিদেশে বেশী। অনেক সাংবাদিক তাঁকে গ্রেফতার করবার সেই কুখ্যাত অপারেশান প্রত্যক্ষ করেছেন। তাদের কারনে সেই গ্রেফতারের ঘটনা একটা কাহিনী হয়ে ওঠে।
এবার মাহমুদুর রহমানকে পাকড়াও করবার বীররসাত্মক দৃশ্য কোন সাংবাদিকের প্রত্যক্ষ করবার সুযোগ দেওয়া হয় নি। আগেই জানাজানি ছিল সরকার তাঁকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ছোট দেশ, কোন কিছুই বিশেষ গোপন থাকে না। মাহমুদুর রহমান সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যদি গ্রেফতার হতে হয় তবে তিনি তাঁর পত্রিকার অফিস থেকেই গ্রেফতার হবেন। যারা তার শুভার্থী ছিলেন, তাদের ভয় ছিল ভিন্ন। নানান সত্যমিথ্যা তথ্যসূত্র এবং কিছুটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাঁদের অনেকেই অনুমান করছিলেন, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার চেয়ে কোন দুর্ঘটনা বা অন্য কোন সাজানো নাটকের মধ্য দিয়ে ক্ষতি করাই সরকারের দিক থেকে শ্রেয়। হত্যার পরিকল্পনাও কোন মহলে থাকতে পারে। বিচিত্র নয় মোটেও। শুভার্থীরা মাহমুদুর রহমানকে তার পত্রিকা অফিসে থাকাই অনুমোদন করেছিলেন। তাঁকে তাঁর নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সচেতন হবার পরামর্শও দিচ্ছিলেন তাঁর বন্ধুরা। মাহমুদুর রহমান সেটাই করলেন। আমার ধারণা সেটা ছিল সাবধানী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।
এবার যখন তাঁকে ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হোল সরকার দৈনিক আমার দেশকে দৃশ্যমান যুদ্ধক্ষেত্র বানায় নি। তবে গুপ্ত কমান্ডো অপারেশানের ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছিল। গণমাধ্যমগুলোও ওৎ পেতে ছিল। তাদের চোখ ফাঁকি দেবার জন্য মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হোল গেরিলা কায়দায়। সাদা পোশাকে আইনশৃংখলাবাহিনীর লোকজন ভোরে ঢুকে গেল দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়। তিনি নাস্তা খেয়ে চা খাচ্ছিলেন, অস্ত্রের মুখে তারা তাকে তুলে নিয়ে গেল। এরপর তেরো দিনের রিমান্ড, নির্যাতন, মাহমুদুর রহমানের অনশন ও তা ভাঙা এবং তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর ইত্যাদি অনেক ঘটনা ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমে খবরগুলো এসেছে।
এবার যখন তাঁকে রিমান্ডে আনা হোল তখন কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে তুলবার সময়টা বেছে নেওয়া হয়েছিল এমন ভাবে যাতে ইফতারের সময়টা পথেই পড়ে। মাহমুদ ধর্মপ্রাণ মানুষ। বলাবাহুল্য, তিনি যে কোন পরিস্থিতিতে রোজা থাকেন। তিনি প্রিজন ভ্যানে রোজা ভাঙবার জন্য মুখে দেবার কিছু পান নি। সেটা নির্যাতন। শুধু কিছু না দেবার কারনে নয়। এই আচরণের মধ্য দিয়ে তাঁর ধর্মবিশ্বাসকে হেয় করবার চেষ্টাও ছিল। মানবাধিকার কর্মীরা সম্ভবত এটাও দাবি করবেন যে সময়মতো রোজা ভেঙ্গে ইফতার করতে না দিয়ে তার ধর্মাচরণ বা ধর্মপালনের অধিকারও ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
প্রিজনভ্যানে শুধু পানি পান করে মাহমুদুর রহমান ইফতার করেন। তাকে নেয়া হয় মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে। সেখানে ১২/১৫ ফুটের একটি সেলে ৩৫ জন বন্দীর সঙ্গে গাদাগাদি করে দমবন্ধ পরিবেশে তাকে রাখা হয়। তিনদিন তিন রাত তাঁকে সেখানে থাকতে হয়েছে। নিদ্রাহীন, খাওয়া ছাড়া, গোসল করতে পারেন নি, টয়লেটও সেই ঘরে ছিল না। রিমান্ড শেষে নিম্ন আদালতে তিনি তাঁর আইনজীবীর কাছে নির্যাতনের বীভৎস বর্ণনা দেন। সেহরি ও ইফতারে তিনি পানি ছাড়া কিছুই খাননি। পায়খানা-প্রস্রাবের উৎকট দুর্গন্ধে একাকার এক নারকীয় পরিবেশের মধ্যে তাকে স্রেফ নির্যাতন করবার জন্যই রাখা হয়েছিল। জেলে অকথ্য নির্যাতনের ফলে তার শরীর ভেঙে পড়েছে। তাঁর ওজন ৭১ কেজি থেকে কমে ৬০ কেজি হয়েছে। প্রেসার কমে গেছে। শরীরে নানান শারীরিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে।
এই ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবার জন্যই নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সভা। মাহমুদুর রহমান এই ক্ষেত্রে ব্যক্তিমাত্র নন। পুলিশী হেফাজতে যেভাবে নির্যাতন চালানো হয় -- যেই হোক -- তার প্রতিবাদ করা মানবাধিকারের দিক থেকে কর্তব্য অবশ্যই। কিন্তু এই কর্তব্যের দুটো দিক আছে। এক. সুনির্দিষ্ট ভাবে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনার বিরুদ্ধে আইনী ও প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার জোর দাবি তোলা। দুই. একই সঙ্গে মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে নৈতিক ও কাঠা্মোগত সংকট সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মাহমুদুর রহমানকে নজির হিশাবে ধরে রাষ্ট্রের সেই ক্ষয়ের দিকটা স্পষ্ট করে তোলা। প্রথম দিকটি নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির অনেকেরই দায়, কারন মাহমুদুর রহমান কমিটির অনেকেরই বন্ধু। কিন্তু দ্বিতীয়টিই তাদের প্রধান নাগরিক দায়িত্ব। এই দুটো কর্তব্যের পার্থক্য সম্পর্কে স্পষ্ট থাকা দরকার। যারা তার বন্ধু এবং তার রাজনৈতিক মতাদর্শ সমর্থন করেন তাদের দায়বোধের মধ্যে পক্ষপাত থাকতে পারে। সেটা দোষের নয়। কিন্তু সাধারণ ভাবে বাংলাদেশের যে কোন নাগরিকের মানবাধিকার লংঘিত হলে তার প্রতিবাদ করা প্রত্যকেরই নাগরিক দায়িত্ব। তার মানে যদি ভিন্ন কোন মত বা চিন্তার কেউ রাষ্ট্রের দ্বারা নির্যাতীত হোত তাহলে তার পক্ষেও সমান আগ্রহ ও সংকল্প নিয়ে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে দাঁড়াতে হবে। যদি সেই নাগরিক কর্তব্য পালন করতে আমরা ব্যর্থ হই তাহলে এই সরকারকে নিন্দা করার নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। এই ধরণের কঠিন ও দুরূহ জায়গাগুলোতে নিজেদের নাগরিক দায়িত্ব পালন না করে যদি শুধু বলা হয় শেখ হাসিনার সরকার ফ্যাসিস্ট – তখন কথাগুলো গালাগালির মতো শোনায়। কোন কাজে আসে না। পক্ষপাতদুষ্টতার ক্ষতি এই ধরণের মানবাধিকার রক্ষার উদ্যোগকে দুর্বল করে রাখবে।
তাছাড়া বুঝতে হবে, আসলে আমাদের খোদ রাষ্ট্রব্যবস্থাই ফ্যাসিবাদী। রাষ্ট্রের এই রূপান্তর একদিনে ঘটে নি, কিম্বা শেখ হাসিনার একার কারনে এটা হয় নি। অনেকে বলে থাকে তাঁরা বাকশালী আমলেরই পুনরার্বিভাব দেখছেন। আসলে ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন ভাবে বাকশাল আসে নি। বরং বলা যায় আমরা বাকশাল হয়েই ছিলাম। নির্বাচন করে তাকে সরকারের রূপ দিয়েছি মাত্র। ধীরে ধীরে আমরা এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। সেই ক্ষেত্রে বিরোধী দলের ভূমিকাও কম নয়। এই অর্থে যে তারা কোন গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারা তৈরী করতে পারে নি। তাদের কাছ থেকে বৈপ্লবিক কিছু আশা করা বাতুলতা। গণতন্ত্র বলতে সমাজের উচ্চকোটির মানুষ যাকে ‘উদারনীতি’ বা লিবারেলিজম বলে যদি তারা সেই রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সংস্কৃতিও কিছুটা চর্চা করত তাহলে বাংলাদেশের দুর্দশা এখনকার মতো এতো চরমে পৌঁছাত না। বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়, কিন্তু তারা গণতন্ত্র চায় কিনা সেই সন্দেহ তো নাগরিকদের মনে রয়ে গিয়েছে। নাগরিক ও মানবিক অধিকারে তারা কতোটা বিশ্বাসী সেই সন্দেহ কিন্তু যায় নি। এই ক্ষেত্রে তাদের রেকর্ডও খুব ফরসা নয়। অতএব তাদের নেতিবাচক ভূমিকা স্পষ্ট করে বলাও নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির কাজ। অর্থাৎ সমাজে দলীয় বিভাজন ও বিভক্তির যে ঘেঁটুগুলো তৈরী হয়ে আছে সেই সকল অন্ধকার জায়গাগুলো থেকে বেরিয়ে এসে আমরা কিভাবে নাগরিক হয়ে উঠতে পারি এবং নিজ নিজ চিন্তা বা রাজনীতির ঘোর বিরোধীরও নাগরিক ও মানবিক অধিকারের পক্ষে নিঃশর্ত দাঁড়াতে পারি সেই দিকেই আমাদের সমস্ত মনোযোগ নিবিষ্ট করতে হবে। এটাই প্রধান নাগরিক দায়িত্ব। এই দিকটার ওপরই মানবাধিকার কর্মীদের বিশেষ ভাবে মনোযোগী হতে হবে বলে আমি মনে করি।
এই মনোযোগ নাই বলেই আমরা ধরতে পারি না বা ভুলে যাই, ফ্যাসিবাদ আমাদের সমাজে ও সংস্কৃতির মধ্যেই আছে, নিবিড় ভাবে। আমামদের মধ্যেই আছে। আমরা নিজেরটা বুঝি ষোল আনা, কিন্তু বিরোধী পক্ষেরও কিছু অধিকার আছে যা অলঙ্ঘনীয় সেই সত্য বুঝতে চাই না । এভাবে একটি সমাজ চলতে পারে না। ফ্যসিবাদ শুধু সরকারে নাই, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই আছে। রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী রূপান্তরের শর্ত আমাদের মধ্য দিয়েই সমাজের সদা তৎপর। আমরা তো নাগরিক হয়ে উঠিনি। অথচ নাগরিকতার বিকাশের সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের লড়াই অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। ফলে একেকজন খুদে হিটলার হয়ে সমাজে বিরাট বিরাট বুলি আউড়িয়ে যেতে আমাদের বিশেষ অসুবিধা হয় না। যদি নিজেরা নিজেদের আন্তরিক ভাবে সমালোচনা করতে পারি তাহলে মাহমুদুর রহমানের নাগরিক ও মানবিক অধিকারের বিষয়টি বুঝতে আমাদের জন্য সহায়ক হবে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সঙ্গে নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নটা সাধারণত তাদেরই ভাল বোঝার কথা ছিল যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল মনে করেন। কারণ এই ‘অধিকার’ ব্যাপারটি ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বৈপ্লবিক কায়দায় ইতিহাসে হাজির হয়েছিল। আমরা তো ফরাসি বিপ্লবের মানবিক ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণার (Declaration of the Rights of Men and of the Citizens) কথা জানি। বাংলাদেশে যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল মনে করেন তাঁদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই দেখি যাদের তারা পছন্দ করেন না, কিম্বা তাদের রাজনীতির বিরোধী গণ্য করেন তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার সমর্থন করার কোন নৈতিক বা আদর্শগত কারণ খুঁজে পান না।। রাজনৈতিক আদর্শ বলতে যারা ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস এবং ধর্মকে ব্যাক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করেন তারা তাদের মতাদর্শের বিরোধী কোন ব্যাক্তির মানবাধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছেন সেটা দেখা যায় না। কোন নাগরিক যদি তাদের মতাদর্শিক অবস্থান সমর্থন না করেন তখন তাদের সাংবিধানিক অধিকার কিম্বা নাগরিক ও মানবিক অধিকা্রের পক্ষে দাঁড়ানোকে তারা তাদের গণতান্ত্রিক কর্তব্যের অন্তর্গত মনে করেন এমন কোন প্রমাণ আমরা দেখি না। এতে মনে হয় গণতন্ত্র কিম্বা নাগরিক ও মানবিক অধিকার তাদের মুখ্য আদর্শ নয়। বলছি এ কারনে যে তাদের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে নাগরিক ও মানবিক অধিকারের সম্পর্ক কোথায় সেটা অস্পষ্ট। এই অস্পষ্টতা সমাজের সর্বত্র। যদি তথাকথিত ‘প্রগতিশীল’দের এই দুর্দশা দেখি তো অন্যদের প্রসঙ্গ তো দূরের ব্যাপার। ভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী কোন নাগরিকের নাগরিক ও মানবিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে তারা তার বিরোধিতা করেন না। রক্ষা তো দূরের কথা । এই কর্তব্য পালন গণতান্ত্রিক ও প্রতিশীল রাজনীতির জন্য জরুরী বলেও মনে করেন না। এই না করাটা আদৌ তাদের আদর্শের পরিপন্থি কিনা সেটা তারা বিবেচনায় নিতেও সক্ষম নন। কিন্তু তারপরও তারা নিজেদের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দাবি করেন।
________________________________________
ফ্যাসিবাদ আমাদের সমাজে ও সংস্কৃতির মধ্যেই আছে, নিবিড় ভাবে, শুধু সরকারে নাই। রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী রূপান্তরের শর্ত সমাজের মধ্যেই সদা তৎপর। আমরা তো নাগরিক হয়ে উঠিনি। অথচ নাগরিকতার বিকাশের সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের লড়াই অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। ফলে একেকজন খুদে হিটলার হয়ে সমাজে বিরাট বিরাট বুলি আউড়িয়ে যেতে আমাদের বিশেষ অসুবিধা হয় না
________________________________________
বিবেচনায় নিতে অক্ষমতার সঙ্গে গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামের প্রশ্ন জড়িত, কারণ ফ্যাসিস্ট রাষ্টব্যবস্থার রূপান্তরই যে এখনকার প্রধান ও একমাত্র রাজনৈতিক কর্তব্য অনেকের এটা মনে না করার কারন এখানেই নিহিত। যারা ইসলামপন্থী তাদের কোন নাগরিক ও মানবিক অধিকার নাই – এই ফ্যাসিস্ট চিন্তা আমাদের সমাজে বদ্ধমূল। তাদের কথা থাক। মাহমুদুর রহমানের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করে এই সমাজ সম্পর্কে অনেক কিছুরই পাঠ আমরা নিতে পারি। মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যারা তাদের আদর্শ মেলাতে পারেন না, তারা সরাসরি মাহমুদুর রহমানের বিরোধিতা করেন। তাতে অসুবিধা নাই। কিন্তু এই বিরোধিতাই বাংলাদেশের জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ কিম্বা মতাদর্শ নির্বিশেষে যে কোন নাগরিকের নাগরিক ও মানবিক অধিকারেরও বিরোধিতা হয়ে দাঁড়ায়। মানবাধিকারের কথা মুখে বললেও তার সঙ্গে নিজ নিজ আদর্শ ও আদর্শ চর্চার সম্পর্ক কোথায় সেটা বোঝার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কিম্বা নাগরিক সচেতনতা আমরা এখনও তৈরী করতে পারি নি। আসলে বাংলাদেশের সংকট শুধু সরকারের নয়, এটা রাষ্ট্রীয় সংকট। আর এই রাষ্ট্রীয় সংকটের বীজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অর্থাৎ সমাজের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের বীজ রয়েছে। যার ফলে কাউকে যখন পছন্দ করি না, কিম্বা ব্যাক্তির মতাদর্শিক অবস্থান মেনে নিতে পারিনা, বিরোধিতা করি, তখন বলে গণতান্ত্রিক নীতিনৈতিকতার জায়গাগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা গুয়েগোবরে করে ফেলি। তার নাগরিক ও মানবিক অধিকারও অস্বীকার করি।
অবশ্যই বলা দরকার, নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি যদি কোন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই নির্দলীয় হতে হবে। এটা কথার কথা হলে হবে না। এটা সত্যি কথা যে শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ফলে নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য তাদের লড়াইয়ের একটা তাগিদ সমাজে থাকবে এবং এই ধরণের কমিটির সঙ্গে তাঁরাই এখন সবার আগে দলীয় স্বার্থ রক্ষার কারনে যুক্ত হবেন। কিন্তু কমিটিকে স্পষ্ট করতে হবে এই সংগঠন তাদের দলের প্রচারের যন্ত্র হবে না। বর্তমান সরকারের দমনপীড়ন বিরোধিতার কথা বলতে গেলে আগের সরকারের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। আগেই বলেছি, বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধী দলের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষার রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। আগামি দিনে ভাল হবে তারও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ঠিক এ কারনেই ব্যাক্তি মাহমুদুর রহমানের ওপর দমন পীড়ন নির্যাতনের বিরোধিতা যতোটা গুরুত্বপূর্ণ, সাধারন ভাবে নীতি হিসাবে নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষার প্রশ্ন তোলা সমান গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের আগে যেসকল সরকার নাগরিকদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে তারাও সমান ভাবে নিন্দনীয়। এই নীতিগত দিকটি স্পষ্ট না হলে বর্তমান সরকারের বিরোধিতা এর আগের সরকারগুলোর পক্ষে সাফাই সঙ্গীত হয়ে ওঠে। বিশেষত যখন বিরোধী দলের এখনকার বক্তব্যে তাদের নিজেদের অতীত সম্পর্কে কোন আত্ম-সমালোচনা বা পর্যালোচনার কোন লক্ষণ আমরা দেখি না। কিম্বা নাগরিক ও মানবিক অধিকারের সঙ্গে রাষ্ট্র ও সরকারের সম্পর্ক তারা কিভাবে দেখে সেই বিষয়ে তারা নিশ্চুপ থাকে। এর অর্থ দাঁড়ায় শেখ হাসিনার আমলে রাষ্ট্রের সংবিধানে যে বদল ঘটেছে এবং রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী রূপান্তর ঘটেছে, সেই রাষ্ট্রকে বহাল রেখেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। শেখ হাসিনার সরকারকে তখন ফ্যাসিবাদী বলাটা প্রহসন হয়ে দাঁড়ায়। বিএনপির নেতারা যা হামেশাই করছেন। এতে বিএনপির পক্ষে জনসমর্থন বাড়ছে কিনা সন্দেহ। এই হিশাব ভুল যে সাধারণ মানুষ বর্তমান সরকারকে অপছন্দ করে বলে আগামি দিনে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে। বিএনপির উচিত ক্ষমতায় এসে বিএনপি কি করবে সেটা অবিলম্বে বলা। দশ টাকা দরে চাল খাওয়াবো সেইসব মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নয়। কিম্বা তারেক রহমান সম্প্রতি বিলাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যেসব কথাবার্তা বলেছেন সেইসবও নয়। অতি সাধারণ জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্ন আগে। যেমন, বিএনপি কি ঘাতক বাহিনী হিসাবে পরিচিত র্যা ব বহাল রাখবে, নাকি বিলুপ্ত করবে? রিমান্ড বন্ধ হবে, নাকি হবে না। বিচারবিভাগ কি স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে নাকি পারবে না, ইত্যাদি।
নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির কাজ হচ্ছে নাগরিক ও মানবিক অধিকারের প্রশ্নে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বাধ্য করা। জাতীয় সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে তারাও কি ক্ষমতায় এসে শেখ মুজিবের বক্তৃতার মতো জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সংবিধানে ঢুকিয়ে দেবেন? কে জানে। তাদের আমলেও কি তারা বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক দলের অধীন সংস্থার মতো ব্যবহার করবেন? কী গ্যারান্টি দেবেন তারা যাতে নাগরিকরা সুবিচার পাবে? দিল্লীর সঙ্গে বাংলাদেশের যে সকল সমঝোতা ও চুক্তি হয়েছে সেইসব কি অক্ষুণ্ণ থাকবে? এই রকম বেশ কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন রয়েছে বিরোধী দলের কাছে তার উত্তর জনগণ প্রত্যাশা করে।
অনেকে এই বলে সমালোচনা করেন যে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিতে যাঁরা আছেন তাঁদের অধিকাংশই বিএনপির সঙ্গে সক্রিয়। এ কথা অস্বীকার করবার কোন উপায় নাই। বাংলাদেশে অনেক সামাজিক সংগঠন রয়েছে যারা আওয়ামি লীগের সঙ্গে যুক্ত বা আদর্শিক ভাবে আওয়ামি রাজনীতিই বাস্তবায়ন করে। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে সেই ভাবে দলীয় হলে চলবে না। বিভিন্ন অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আদর্শগত ঝোঁক থাকতেই পারে। সে আদর্শকে যদি ফলপ্রসূ করতে হয় তার জন্যও দলীয় কাঠামোর বাইরে নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নকে সুস্পষ্ট ও দৃঢ় ভাবে হাজির করতে হবে। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে দেখাতে হবে তারা মাহমুদুর রহমানের ওপর দমন-নির্যাতনের বিরোধিতা করছেন এ কারনে নয় তিনি একসময় বিএনপি সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ছিলেন। বরং এ কারনে যে মাহমুদুর রহমানকে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার যে চরিত্র ও বৈশিষ্ট আমরা দেখছি তারা তা উন্মোচন করছেন। একে বহাল রেখে বাংলাদেশের জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা অসম্ভব। এর খোল নলচে বদলে দেওয়া ছাড়া আর কোন পথ নাই। যদি বিএনপি রাষ্ট্রের এই চরিত্র ও কাঠামো বহাল রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে সেটা স্রেফ ক্ষমতার অভিলাষ ছাড়া কিছু নয়। তাহলে বিএনপির কঠোর সমালোচনাই এখনকার প্রধান নাগরিক কর্তব্য। সত্যি কথা হচ্ছে বাংলাদেশের আগামি রাজনীতির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন বড় সমস্যা নয়। কারণ তার চেহারা স্পষ্ট এবং আওয়ামি লীগ গত সাড়ে চার বছরে যা হারিয়েছে তা উদ্ধার করতে পারবে কিনা সন্দেহ। এখন মূল সমস্যা বিএনপি।
________________________________________
নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির কাজ হচ্ছে নাগরিক ও মানবিক অধিকারের প্রশ্নে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বাধ্য করা। জাতীয় সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়ে তারাও কি ক্ষমতায় এসে শেখ মুজিবের বক্তৃতার মতো জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সংবিধানে ঢুকিয়ে দেবেন? কে জানে। তাদের আমলেও কি তারা বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক দলের অধীন সংস্থার মতো ব্যবহার করবেন? কী গ্যারান্টি দেবেন তারা যাতে নাগরিকরা সুবিচার পাবে? দিল্লীর সঙ্গে বাংলাদেশের যে সকল সমঝোতা ও চুক্তি হয়েছে সেইসব কি অক্ষুণ্ণ থাকবে? এই রকম বেশ কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন রয়েছে বিরোধী দলের কাছে তার উত্তর জনগণ প্রত্যাশা করে।
________________________________________
যদি নাগরিক ও মানবিক অধিকার রক্ষা করা এই নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির প্রধান কাজ হয় তাহলে বিএনপির সঙ্গে এই ক্ষেত্রে আদর্শগত বিরোধ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির এই সভাটির গুরুত্ব হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত থাকা। একদিকে সেটা মুশকিলের, অন্যদিকে সেটা সুবিধার। মুশকিলের কারণ সাধারণ মানুষের কাছে নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি এতে নিজেকে বিএনপি ঘেঁষা সংগঠন হিশাবে হাজির করল। এতে কমিটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ালো নাকি কমলো সেই উত্তর আমার জানা নাই। আগামি দিনগুলোতে সেটা আমরা দেখব। কিন্তু সুবিধাটুকু হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে সভায় বসিয়ে তাঁকে কথাগুলো শুনিয়ে দেওয়া। যা এখানেও লিখছি। এই সুবিধাটুকু সভার সভাপতি হিসাবে আমি গ্রহণ করেছিলাম। সেখানে যে কথাগুলো বলেছি গণমাধ্যমে সেইসব আসেনি বলে নিজের কথা এখন নিজেই এখানে বলছি। শুরুতে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অনুযোগ করেছি নিজের কথা বলবার উসিলা হিসাবে।
নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি তাদের নিয়েই বিশেষ ভাবে গঠিত হয়েছে যারা বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই দিক থেকে এর একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি আছে। কিন্তু এখানেও বোঝা দরকার নাগরিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন কোন বিশেষ পেশার বা পেশাজীবীদের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন নয়। বরং পেশাজীবীদের এটাই প্রমাণ করতে হবে তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ পেশার বাইরে একজন সচেতন নাগরিকও বটে। তাঁদের নিজেদের কাছেও স্পষ্ট থাকতে হবে নাগরিক অধিকার রক্ষার সঙ্গে পেশাজীবির স্বার্থ সবসময় ও সব অবস্থায় সুসঙ্গত নাও থাকতে পারে। অবস্থা বিশেষে সেটা সাংঘর্ষিকও হতে পারে। এই ধরণের নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি গঠনের ন্যায্যতা একটিমাত্র জায়গায়। সেটা হোলঃ কোন নাগরিকের নাগরিক অধিকার হরণ করবার কোন এখতিয়ার রাষ্ট্রের নাই – এই নীতির জায়গায় শক্ত ভাবে দাঁড়িয়ে নাগরিকদের পক্ষে দাঁড়ানো এবং তাদের সচেতন করে তোলা। একই ভাবে কোন নাগরিকেরও অন্যের অধিকার অস্বীকার বা তার বাস্তবায়নে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিরও অধিকার নাই। এই ধরণের কোন সংঘাত যেন সৃষ্টি না হয় তার জন্য রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য বিধিবিধান প্রণয়ন করতে পারে। কিন্তু কোন নাগরিকের অধিকার হরণ করতে পারে না।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে শেখ হাসিনা আমাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার হরন করেছেন, গালভরা উন্নয়নের কথা বলে বিএনপি আমাদের হাতে পায়ের সেই শৃংখলকে আরও রক্তাক্ত করুক আমরা তা চাই না। তাহলে কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফের ভিত্তিতে আমরা নতুন ভাবে বাংলাদেশ গড়তে পারি সেই দিক নির্দেশনাই নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটিকে দিতে হবে।
সেটা যেন আমরা সকলে বুঝি, এটাই মিনতি।
৫ অগাস্ট ২০১৩। ২১ শ্রাবণ ১৪২০। শ্যামলী