২. যেমন বেণী তেমনি রবে চুল ভিজাবো না!!
কূটনৈতিক মহলের তৎপরতা
‘যেমন বেণী তেমনি রবে চুল ভেজাবো না’ শিরোনামে কিছু কথা বলা শুরু করেছিলাম। এ লেখা তারই ধারাবাহিকতা।
ইতোমধ্যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার কূটনৈতিক মহল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা সুষ্ঠ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। তারা চাইছেন বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন আছে তেমনি থাকুক; বড় কিসিমের গড়বড় কিম্বা দেশের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আলগা হয়ে যাক তারা চান না। তারা চাইছেন, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার কোন বদল না ঘটিয়ে ক্ষমতার হাতবদল কোন প্রকার সংঘর্ষ ছাড়া ঘটুক। তারা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরী করতে চান যাতে প্রধান প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। বিশেষতপাশ্চাত্যের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনপন্থি জামায়াতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামপন্থি দলও যেন বাদ না পড়ে । নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষের বিপদ হচ্ছে এর পরিণতি কোথায় গড়াবে সেটা সম্পর্কে তারা নিশ্চিত নন। সেটা দলবাজিতা ও দুর্বৃত্তপনায় বিভক্ত দুই রাজনৈতিক পক্ষের বিরুদ্ধে জনগণের অভ্যূত্থানেও রূপ নিতে পারে। রূপ নিতে পারে সেই ইসলামপম্থার বিরুদ্ধেও যারা সাম্রাজ্যবাদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে দেশে দেশে সামরিক আগ্রাসন ও ইসলামের নামে রাজতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের সমর্থক। যারা প্যালেস্টাইন, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সাম্প্রতিক মিশর ও সিরিয়ার ঘটনার পরেও নিষ্ক্রিয় থাকে।
পরাশক্তি বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানের গুরুত্ব বোঝে। কিন্তু বাংলাদেশীরা অজ্ঞ থাকুক এটা তারা চায়। এর সুবিধা তারা নিতে পারে গণবিচ্ছিন্ন ও গণবিরোধী সরকার কায়েম থাকলে। সেটা যে পক্ষই হোক তাতে বিশেষ কিছু আসে যায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের গোড়ায় যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার সমস্যা এটা না বোঝার মতো আহাম্মক তারা নয়। যেসব কূটনীতিবিদ নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনের খোঁজখবর করতে গিয়েছিলেন তারা তবু বারবার পারাসিটামল দিয়ে ক্যান্সার চিকিৎসার বিধান দিয়ে যাচ্ছেন। এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বহাল রেখেই তারা নির্বাচন চাইছেন।
পঞ্চদশ সংশোধনীর পর রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের কী দশা ঘটেছে এটা পরাশক্তিগুলো আলবৎ জানে। কিন্তু তারপরও নির্বাচন হতে হবে এবং বাংলাদেশের মানুষকে এই অগণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকার বিরোধী হিংস্র প্রতিষ্ঠানের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে। বাংলাদেশের ভূকৌশলগত অবস্থান থেকে সুবিধা আদায় করা ছাড়াও পরাশক্তিগুলো চায় কর্পোরেট আধিপত্য আরও গভীর ও বিস্তৃত হোক। পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্ক ও ভোগী সংস্কৃতির আরও বিস্তৃতি ও প্রসার ঘটুক। তার জন্য দরকার বাজার ও বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি। যেন সেটা ‘অবাধ’ হয়। তার অর্থ পুঁজিতান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক এবং ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বেচ্ছাচারের সংস্কৃতির ওপর কোন সামাজিক, রাজনৈতিক, নৈতিক কিম্বা সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণ জারি রাখা যাবে না। সমষ্টির স্বার্থ নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না। একে নিন্দা করা হবে বাজার ও ব্যক্তির অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ হিসাবে। এটা তারা নিশ্চিত করতে চায় শ্রেণি ও শক্তির যে-ভারসাম্য এখন যেমন রয়েছে তা অটুট ও বহাল থাকুক। এতদিন এই ব্যবস্থায় তাদের আপত্তি ছিল না, এখনও আপত্তি নাই। নির্বাচন যেন এই ব্যবস্থার ধারাবাহিঙ্কতায় কোন ছেদ না ঘটায়।
কিন্তু মুশকিল ঘটেছে ওখানে যে জনগণ এই পরিস্থি্তির পরিবর্তন চাইছে এবং এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আওয়ামি লীগ ও বিএনপি উভয়ের কবল থেকে মুক্তি চাইছে। জনগণের এই আকাংখাকে তারা বিপথে নেবার চেষ্টা করেছিল ‘মাইনাস টু’ ফর্মূলার নামে। এক এগারোর ঘটনা ঘটিয়ে। তারা বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে চিরতরে দূরে সরিয়ে দিয়ে জনগণকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল, এটাই সমাধান। এতে ব্যক্তি অপসারিত হত, কিন্তু শ্রেণি ও শক্তির ভারসাম্য বহাল থেকে যেত। বহাল থাকত একই অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থা। সাধারণ মানুষকে বোকা ভাবা ঠিক না। তারা ‘মাইনাস টু’ ব্যর্থ করে দেয়।
বিভাজন নয় গণশক্তির বিকাশ
বিপরীতে জনগণের লড়াই হচ্ছে গরিব, মেহনতি ও মজলুম জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে গণশক্তির বিকাশ ঘটানোর সংগ্রাম -- যাতে তারা শ্রেণি ও শক্তির বিদ্যমান ভারসাম্য বদলিয়ে দিতে পারে। গণশক্তির বিকাশের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপান্তর সম্ভব। অন্য কোন ভাবে নয়। গণশক্তির বিকাশের মধ্য দিয়েই আগামি রাষ্ট্রের সম্ভাব্য রূপ ও তা বাস্তবায়নের কৌশল জনগণের কাছে স্পষ্ট হতে শুরু করে। সংগ্রাম করতে গিয়েই জনগণ বুঝতে পারে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের দুটি পক্ষে ভাগ করেই এতদিন আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে, এখনো সেই বিভাজন বজায় রেখেই তারা জনগণকে দমন করতে চায়। বাংলাদেশের জনগণের ওপর সাম্রাজ্যবাদ আধিপত্য বজায় রাখে আস্তিক ও নাস্তিকের বিভক্তি টেনে, ধর্ম বনাম ধর্ম নিরপেক্ষতার ভাগ দিয়ে। জনগণের দৈ্নন্দিন জীবন-জীবিকার লড়াই সংগ্রামে কে জনগণের রিজিক হরণ করে আর কে করে না সেই সত্য দিয়ে নয়। বরং সেই সত্যকে আড়াল করেই বিভক্তি ঘটানো হয়। জনগণের রিজিক হরণকারীর মধ্যে নাস্তিক আছে, আস্তিক আছে, ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী আছে এবং বলাবাহুল্য ইসলামপন্থিও কম নাই। গরিব ও মেহনতি জনগণকে যারা জুলুম করে তাদের মধ্যে সকল কিসিমের লোকই আছে। গণশক্তি বিকাশের পথ সমাজকে আস্তিক/নাস্তিকে ভাগ করা নয় বরং জালিম আর মজলুমের বিভাজন স্পষ্ট করার মধ্য দিয়ে শত্রুমিত্রের ভেদ নির্ণয়ের ক্ষমতা জনগণ অর্জন করা।
তবে সেটা শুধু তও্ব বা কেতাবি কথা বলে জনগণকে বোঝানো যাবে না। লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বরং জনগণ বুঝতে শেখে যে, শুধু আস্তিক/নাস্তিক নয়, ইসলামপন্থি ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী হিসাবে জনগণের বিভক্তি পরাশক্তির স্বার্থ রক্ষার জন্য খুবই সুবিধাজনক।। সে জন্য আন্দোলনের গুরুত্ব বিদ্যমান ব্যবস্থা বহাল রেখে সরকার পতনে নয়। অথচ বিরোধী দলগুলো হামেশা আমাদের সরকার পতনের কেচ্ছা শোনায়। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জনগণ বিদ্যমান রাষ্ট্রের চরিত্র এবং সুবিধা ভোগী শ্রেণি ও শক্তিকে চিনতে শেখার প্রক্রিয়ার যুক্ত হয়ে পড়ে। এটাই নগদ লাভ। গণশক্তির বিকাশের জন্য দরকার বিদ্যমান ফ্যাসিবাদি সমাজ, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কে বিরোধী আর কে তা রক্ষা করে সেই পার্থক্য দিয়ে রাজনীতির শত্রুমিত্র বিভাজন নির্ণয় করতে পারা। সেই রাজনৈতিক সচেতনতা বাংলাদেশে এখনও গড়ে তোলা যায় নি। এর ফলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী হোক কিম্বা হোক ইসলামপন্থি -- বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী সমাজ, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার যারা রক্ষক ও যারা এদেশে পরাশক্তির মুৎসুদ্দি -- তারা জনগণের নজর থেকে সবসময়ই আড়ালে থেকে যেতে পারছে। এই ফাঁকে বিদ্যমান ব্যবস্থা অক্ষত ও বহাল থেকে যাচ্ছে, এর রূপান্তর ঘটছে না।
রাজনৈতিক অজ্ঞানতা ও অসচেতনতার কারনে জনগণ আস্তিক/নাস্তিকের লড়াইয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে; ইসলামপন্থিরা আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ও শত্রুর রাজনৈতিক চরিত্র বিচার না করে জনগণকে যেমন ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে, ঠিক তেমনি ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীরা রাষ্ট্রের সকল সশস্ত্র ও হিংস্র হাতিয়ার নিয়ে ইসলামপন্থি দল ও ধর্মপ্রাণ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, আলেম-ওলামাদের নির্বিচারে হত্যা করার পরও গণমাধ্যমগুলো দাবি করতে থাকে কেউই মারা যায় নি। কিম্বা জঙ্গিরাই ‘তাণ্ডব’ করেছিল তাই উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
ইসলামপন্থিদের 'জঙ্গি' প্রমাণ করার বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। সাধারণ ভাবে জালিমের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামের ক্ষেত্রে ইসলামের যে বৈপ্লবিক ও সামরিক চরিত্র আছে তাকে অস্বীকার করা এর উদ্দেশ্য। এ না হলে জালিম ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা যায় না। দ্বিতীয়ত যারা সংগ্রাম করে তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করারা জন্যই এই প্রপাগাণ্ডা ব্যবহার করা হয়। যারা ‘জঙ্গি’ তাদের কোন মানবিক বা নাগরিক অধিকারের প্রশ্নই আসে না। সেটা কমিউনিস্ট হোক কিম্বা হোক ইসলামপন্থি। 'জঙ্গি' চিহ্নিত করে স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া থেকে নাগরিকদের বঞ্চিত করে তাদের ওপর অকথ্য দমন, পীড়ন ও নির্যাতন করা হয়।
নির্বিচার ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীরা সমাজকে সজ্ঞানেই বিভক্ত করে রাখে। সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে তাদের গাঁটছড়া বাঁধা। তারা এ কাজ করবেই। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় ইসলামপন্থিরা বাস্তব দিকগুলো বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়। তাদের এখনকার ঐতিহাসিক রূহানি কর্তব্য বাদ দিয়ে তারা সমস্ত শক্তি নিয়োগ করে গুটিকয়েক বেয়াদপ, নাস্তিক ও পথভ্রষ্টদের বিরুদ্ধে – যারা মোটেও বাংলাদেশের সচেতন তরুণ সমাজের প্রতিনিধি নয়। অথচ এই রাষ্ট্রব্যবস্থা বদলানো এবং সে কাজে সমাজের সকল শক্তির সমাবেশ জরুরী - ইসলামপন্থিরা সে কর্তব্য ভুলে যায়। এ কাজ করতে হলে বিপুল সংখ্যক তরুণদের পক্ষে রাখা জরুরী। এদেরকে পক্ষে রাখার নীতি ও কৌশল নিয়ে ভাবার ওপর ইসলামপন্থি রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। উলটা ইসলামের বিরুদ্ধে তরুণদের বড় একটি অংশকে শত্রুর শিবিরে ঠেলে ভুল নীতি। যা কখনই গণশক্তি বিকাশের অনুকুল নয়। বরং সেটা সাম্রাজ্যবাদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়ে উঠতে পারে না।
ইসলাম ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে ভুল ও বিকৃত ধারনার আবর্জনা জমেছে অনেক কাল ধরে। তাকে ধৈর্য ধরে মোকাবিলা করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদের যুগে ইসলামের ইতিবাচক আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বয়ান কি হতে পারে তা নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জনগণের সকল পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক ও সমঝোতা ছাড়া বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় শত্রুমিত্র স্থির হবে বাংলাদেশের এখনকার রাজনৈতিক কর্তব্য দ্বারা। আমাদের এখনকার কাজ কি সেটা স্থির করতে হবে আগে। সেই হুঁশ হারা হলে পরাশক্তি আমাদের বিভক্ত করেই যাবে। আমরা তাদের পদানত দাসানুদাস তস্য দাস হয়েই থাকব।
অতএব বুঝতে হবে একমাত্র গণআন্দোলন ও গণসংগ্রামের মধ্য দিয়েই গণশক্তির বিকাশ ঘটতে পারে। এটা শুধু রাজনৈতিক ব্যাপার নয়, একই সঙ্গে সামাজিক, সাংস্ক্লৃতিক ও ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া। কিন্তু পরাশক্তি গণআন্দোলনকে ভয় পায়। গণআন্দোলনের বিরোধিতার মূলে রয়েছে ইসলামপন্থিদের ব্যাপারে তাদের আতংক ও উৎকন্ঠা। এটাও তারা জানে বাংলাদেশের ‘তরুণ প্রজন্ম’ পাশ্চাত্য আধিপত্য ও সভ্যতাকে বিনা বিচারে গ্রহণ করে না, এটা এখন অনেক স্পষ্ট। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের উত্থানের মধ্য দিয়ে এটা বোঝা গিয়েছে বাংলাদেশে ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটাবার সামর্থ ইসলামপন্থিদের রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এতে ভীত হয়ে পড়েছে। ইসলামপন্থিরা ভোট দিয়ে বিএনপি বা আওয়ামি লীগ এই দুইয়ের যে কোন একটি পক্ষের অধীনে থাকুক, অসুবিধা নাই। কিন্তু এই দুই পক্ষের বাইরে স্বাধীন রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে তারা দাঁড়াক সেটা চৌদ্দ দল, আঠারো দল ও পাশ্চাত্য শক্তি কেউই চায় না। এই রকম কোন দুঃস্বপ্ন যেন বাংলাদেশে না ঘটে তার জন্য যথারীতি ঢাকায় এবং আন্তর্জাতিক মহলে পরাশক্তিগুলো আবার ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি মোকাবিলার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মোদ্দা কথা হচ্ছে পাশ্চাত্য মডেল ও তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অন্য কোন ধরণের সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থা পরাশক্তি মেনে নেবে না। নির্বাচন না হলে তার বিকল্প একমাত্র হতে পারে সেনা সমর্থিত আরেকটি সরকার। কিম্বা সরাসরি সেনা শাসন। সুশীল রাজনীতির অতি প্রিয় ‘তৃতীয় শক্তি’। কিন্তু তৃতীয় শক্তি তাদের বাইরে রেখে ক্ষমতায় আসুক এটা আবার তারা চায়না। তারা চায় আগের মতোই তাদের নিয়ে ও তাদের সামনে রেখে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক কিম্বা অন্য কোন নামের সরকার। অসাংবিধানিক ক্ষমতার এই রূপটা থাকলে সেই কাঠামোর মধ্যে তারা রাজনীতির কর্ণধার হতে পারে। কিন্তু যেভাবেই হোক পাশ্চাত্য শক্তির মতোই সুশীল সমাজ গণ আন্দোলন রুখে দিতে বদ্ধ পরিকর। তবে এবার যদি সেনা সমর্থিত কোন ঘটনা ঘটে সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে কিনা সন্দেহ। বরং সেটা পাঁচ থেকে দশ বছরের জন্য একটি ‘জাতীয় সরকার’ হবার সম্ভাবনাই বেশী।
বান কি মুনের টেলিফোন ?
কূটনৈতিক মহলের নির্বাচন কমিশনে যাওয়াই শুধু পরাশক্তির তৎপরতার দিক নয়, জাতিসংঘের সেক্রেটারি বান কি মুন প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী উভয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের রাজনীতির সম্ভাব্য পরিণতি কি হতে পারে সেটা তিনি খোলামেলা বলেন নি নিশ্চয়ই। তবে জঙ্গিবাদের ভীতির কথা অবশ্যই বলেছেন। এ কথা বলবার জন্য পরিপ্রেক্ষিতও তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশে। হঠাৎ আবার “ইসলামি জঙ্গিদের” গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা এখন ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ গ্রুপের নাম শুনছি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ না জানতে পারি, কিন্তু এদের সম্পর্কে গোয়েন্দারা আগে জানত না তা বিশ্বাস করা যায় না। নেতৃত্বের পর্যায়ে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা আমাদের অপরিচিত হতে পারে কিন্তু গোয়েন্দাদের অপরিচিত নয়। প্রসঙ্গটি গুরুত্বপূর্ণ। যে সময়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে সেই সময়টা তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য কে কখন কি অভিযোগে গ্রেফতার হচ্ছে তাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখার সুযোগ কম। প্রশ্ন, তাদের গ্রেফতার আগে হোল না, এখন কেন? গোয়েন্দারা জানিয়েছেন থাবা বাবা রাজিব হত্যার জন্য নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-পাঁচজন তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানির নাম এসেছে। তাহলে সেই সময় তাকে গ্রেফতার করা হয় নি বা তার বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয় নি কেন? এখন অভিযোগ হচ্ছে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি ও জিহাদের মধ্য দিয়ে সরকার উৎখাত করবার লক্ষ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম থানা ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালাবার পরিকল্পনা করেছে। গোয়ান্দারা তাদের অভিযোগ আদালতে প্রমান করবার আগেই চেনা গণমাধ্যমগুলো যথারীতি তাদের মিডিয়া ট্রায়েলে রায় দিয়ে ফেলেছে। বাকি কাজ বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল ও জাতিসংঘ করবে।
ঠিকই। সময়টাই গুরুত্বপূর্ণ। এই জন্যই কি যেন এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে বান কি মুন দুই নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন? বিবাদমান দুটিপক্ষকেই নির্বাচনে যুক্ত রাখবার এটা কি একটি প্রচেষ্টা? নাকি অন্য কিছু? কূটনৈতিক মহলে আগেই যে খবরটা চাউর ছিল সেটা হচ্ছে প্রধান মন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী উভয়কেই জাতিসংঘের কোন একটি অনুষ্ঠানে একসঙ্গে আমন্ত্রণের উদ্যোগ। সেই আমন্ত্রণ কোথায় এবং কী ধরণের অধিবেশনে অংশ গ্রহণের জন্য সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। এখন খবরে দেখছি, “বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উত্থানের আশংকায় উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ”। তিনি নাকি বাংলাদেশের দুই শীর্ষ নেত্রীর সঙ্গে সাম্প্রতিক টেলিফোনালাপের আগেই জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তার উদ্বেগ ও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। ওই সময় বান কি মুন রাষ্ট্রদূতকে বলেন, “আপনার প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূসের বিষয়টিই সমাধান করতে পারছেন না, কিভাবে তিনি হেফাজত ও আল-কায়দা জঙ্গিদের সামলাবেন।” (ইওর প্রাইম মিনিস্টার ক্যান নট হ্যান্ডেল ওয়ান ড. ইউনুস ইস্যু, হাউ শি উইল হ্যান্ডেল হেফাজত এন্ড আল কায়েদা?)। এরপর শেখ হাসিনার সঙ্গে যখন বানকি মুন কথা বলেছেন তখন তিনি বাংলাদেশে ‘হেফাজত ও আল কায়েদার উত্থানের আশংকায়’ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হাসিনাকে তিনি জানিয়েছেন বাংলাদেশে প্রধান দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়েই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। এটা গোটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে, যার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের উপরও পড়বে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন। (দেখুন বাংলানিউজ ২৪ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময়ও তিনি একই কথা বলেছেন।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এর আগে বাংলাদেশ সফর করেছে এবং দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে গেছে। ব্যাংককে থেকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলার যিনি রায় দিয়েছিলেন সেই অবস্রপ্রাপ্ত বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেগিয়েছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনীর কারণে অসাংবিধানিক হলেও আরও দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কোন আইনসঙ্গত ফাঁকফোকর বের করবার আলোচনা হয়েছে। বাইরে থেকে রেফারি এসে বাংলাদেশের ঝগড়া মেটাবার চেষ্টা নতুন কিছু নয়। মনে আছে নিশ্চয়ই ১৯৯৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এসেছিলেন কমনওয়েলথ মহাসচিব এমেকা এনিয়াওকু। এরপর ১৯৯৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকায় এসেছিলেন তার দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফ্যান। কিন্তু বান কি মুনের এখনকার উদ্যাগের সঙ্গে আগের তৎপরতার ফারাক আছে। বান কি মুনের এখনকার তৎপরতা পুরানা উদ্যাগের ধারাবাহিকতা নয়, নতুন তৎপরতা। একে বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক চিন্তা ও পরিকল্পনার মধ্যে গুণগত পরিবর্তনের আভাস হিসাবেই গণ্য করতে হবে।
জাতিসংঘের অধীনে সংঘাতক্লিষ্ট বাংলাদেশ?
তাহলে কূটনৈতিক মহলের দল বেঁধে নির্বাচন কমিশনে যাওয়া আর দুই নেত্রীকে বান কি মুনের টেলিফোন শুধু নির্বাচনী সংকট মীমাংসার উদ্যোগ নয়। ইসলামপন্থি রাজনীতির সম্ভাব্য শক্তি মোকাবিলার পদক্ষেপ। বান কি মুনের টেলিফোন বাংলাদেশে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের প্রাথমিক আলামত। এর রাজনৈতিক তাৎপর্য হচ্ছে বাংলাদেশকে সংঘাতসংকুল দেশ হিসাবে আন্তর্জাতিক ভাবে চিহ্নিত করবার প্রক্রিয়াকে এক কদম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। একটি টেলিভিশানের টক শোতে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ডঃ সাদাত হুসেন বলেছেন, ‘জাতিসংঘের খাতায় বাংলাদেশের নাম উঠে গিয়েছে’। তিনি ঠিকই বলেছেন। জাতিসংঘ বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলার বিকল্প নিয়ে যতোটা চিন্তিত তার চেয়ে অনেক বেশী চিন্তিত বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন তরুণ প্রজন্ম ও ইসলামপন্থিদের নিয়ে। বিশেষ ভাবে হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব তাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। যদিও তারা সাধারণ ভাবে বাংলাদেশে ইসলামি শক্তির আবির্ভাবে ভীত এবং একে ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান হিসাবেই প্রচার করতে আগ্রহী। কিন্তু তাদের মূল ভীতি হচ্ছে বাংলাদেশকে ইসলাম বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার বিভাজন দিয়ে এতোকাল যেভাবে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল এখন সেটা আগের মতো কাজ করছে না। তাদের ভিন্ন নীতি ও কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
এর পক্ষে আমি দুটি লক্ষণের কথা বলব । বা্ন কি মুনর টেলিফোনের আগে বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন২১ আগস্ট হোটেল রেডিসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। চিনারা কখনই এভাবে প্রকাশ্যে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ দেখায় নি। কিন্তু এখন করছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে পরিস্থিতি আগাম তৈরি করা যে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা যদি কোন মীমাংসায় না আসে তাহলে এর পরে উদ্যোগ জাতিসংঘ থেকেই নেওয়া হবে। সে রকম উদ্যোগ চিনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যাবে না। অর্থাৎ জাতিসংঘের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য চিনকে বাদ দিয়ে কোন উদ্যোগ নেওয়া অসম্ভব। বাংলাদেশের রাজনীতিতে চিনের হঠাৎ অংশগ্রহণ এ কারণে খুবই তাৎপর্য পূর্ণ। জাতিসংঘ সেই উদ্যোগ নিলে চিন যুক্ত থাক, সেটাই তাদের ইচ্ছা তা বুঝিয়ে দেওয়া হোল। চিনও কবুল করল। জাতিসংঘ থেকে কোন উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত নিতে গেলে চীনের সম্মতি দরকার তাই। একই সঙ্গে ইসলামপন্থিদের ঠেকাবার জন্যও এটা দরকার। একই দিনে ২১ অগাস্ট তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের’ পূর্বশর্ত হিসেবে প্রথমবারের মতো নির্দলীয় সরকারের পক্ষে সরাসরি মন্তব্য করেছেন। তবে তার এই উৎকন্ঠা কতোটুকু তার ব্যক্তিগত আর কতোটুকু জাতিসংঘের উদ্যাগের সঙ্গে জড়িত সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। কারন এ ধরণের কথা তিনি এর আগেও বলেছেন। নতুন কিছু নয়। দেখা যাক।
দ্বিতীয় যে লক্ষণের কথা আমি বলব সেটা হচ্ছে ২৩ আগস্ট বান কি মুন খালেদা জিয়াকে জাতিসংঘে বিএনপির দুজন জ্যেষ্ঠ নেতা পাঠাতে অনুরোধ করেছেন। বিএনপি সঙ্গত কারণে তা গোপন রাখতে চেয়েছে, কিন্তু এটা এখন আর গোপন নাই, এবং বিএনপি এতে সম্মতও হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে সাধারণ বিতর্ক। সাংবাদিকরা বলছেন ১৭ সেপ্টেম্বরের পরপরই বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা নিউইয়র্কের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। বিএনপির এখন যে নিরুত্তাপ, আপোষী ও আন্দোলন থেকে জিরিয়ে নেওয়া ভাব তার কারন এখানেই নিহিত।
যদি তাই হয় পরিস্থিতি কী দাঁড়াল তাহলে? শেখ হাসিনা এক চুলও নড়বেন না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র ‘বৈধ’ প্রতিনিধি ক্ষমতাসীন সরকার। এই সরকার নির্বাচিত, ফলে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই বৈধতাই স্বীকৃত, ফলে তারা বিরোধী দলেরও প্রতিনিধি। কিন্তু যদি বাংলাদেশের জাতীয় পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে বিরোধী দলকে অংশগ্রহণের জন্য ডাকা হয় তার মানে দাঁড়ায় বিভক্তি ও সংঘাতের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে অখণ্ড রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে নয়, দুটি বিবাদমান পক্ষ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে, যারা তাদের বাংলাদেশের রাজনীতির সীমানার মধ্যে রাজনৈতি দ্বন্দ্বসংঘাতের মীমাংসা করতে অক্ষম। ব্যর্থ রাষ্ট্র ও সংঘাতক্লিষ্ট পূর্ণ দেশের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি আমরা আন্তর্জাতিক মহলে দেখি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সেই দৃষ্টিতেই দেখছে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র বৈধ’ প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকৃতি হারাতে চলেছেন, কিম্বা ইতোমধ্যেই হয়ত হারিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে আরেকটি অংশের প্রতিনিধি হিসাবে আন্তর্জাতিক মহল গণ্য করতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের বৈধতার ক্ষয় আগেই শুরু হয়েছিল। সেই ক্ষয় এতে ত্বরান্বিত হতে শুরু করল কিনা সেটা অচিরেই বোঝা যাবে। বিরোধী দলের দিক থেকে দেখলে এই স্বীকৃতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য নগদ লাভ মনে হতে পারে। কিন্তু সেটা সাময়িক এবং দেশের সার্বভৌমত্বের দিক থেকে ভয়ানক বিপজ্জনক। একে বাড়তে দেওয়ার অর্থ বাংলাদেশকে লিবিয়া, বা সিরিয়ায় মতো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পথ সাফ করা।
আমরা আশা করি খালেদা জিয়া এই ফাঁদে পা দেবেন না। তাঁকে বুঝিয়ে দিতে হবে শেখ হাসিনা যদি বর্তমান সংকটের সমাধান না করেন, তিনি বরং জনগণের আন্দোলন সংগ্রামের ওপর নির্ভর করবেন, কিন্তু জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের নামে পরাশক্তির অশুভ হস্তক্ষেপ তিনি মেনে নেবেন না। সেটা জাতিসঙ্ঘের অধীনে হলে আরও বিপজ্জনক। অন্যদিকে আমরা আশা করব শেখ হাসিনা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বের হবার জন্য পরাশক্তির খেলার গুটি হবেন না। তিনি যদি শেখ মুজিবের কন্যা হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের ক্ষতি স্বীকার করেও দেশের সমস্যা দেশের মধ্যেই মীমাংসা করবেন। অন্যথায় দুইজনের কাউকেই জনগণ ক্ষমা করবে না।
কিন্তু গণআন্দোলন গড়ে তোলার নীতি ও কৌশলের দিক থেকেও এই বাস্তবতা নতুন। অতএব জনগণকেও নতুন করে ভাবতে হবে। আগামি কিস্তিগুলোতে সে সম্পর্কে আলোচনা করব (অসমাপ্ত)
২ সেপ্টেম্বর ২০১৩। ১৮ ভাদ্র ১৪২০।