বাংলাদেশের প্রতি ভারত ও মার্কিন অবস্থানের ভিন্নতা
প্রসঙ্গ একঃ আমেরিকা ভারতের কথা শুনল না
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে স্থানীয় মিডিয়ার জন্য একটা প্রেস রিলিজ পাঠানো হয়েছে ০৯ নভেম্বর সন্ধ্যায়। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ইংরাজীর সাথে বাংলাতেও বিবৃতিটি দেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি নিউজপোর্টালে খবরটি ছাপা হয়েছে, প্রিন্ট পত্রিকাতেও এসেছে। প্রথম আলোর ১০ নভেম্বর প্রিন্ট কিম্বা অনলাইন সংস্করণেও তাদের নিজেদের করা বাংলা অনুবাদ দেয়া আছে। আমি সেটাই এখানে ব্যবহার করব। ওর কিছু অংশ এরকমঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “গত কয়েক দিনের ঘটনাবলি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পথ খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা দুই দলকে সহিংসতা এড়িয়ে চলতে বলছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের সহিংসতার স্থান নেই এবং তা গ্রহণযোগ্যও নয়।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অবশ্যই এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ থাকতে হবে যেখানে সব দল অবাধে ও শান্তিপূর্ণভাবে মত প্রকাশ করতে পারে। সহায়ক রাজনৈতিক পরিবেশ গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নির্বাচনের দিনক্ষণ খুব দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। তাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সমাধানের পথ খুঁজে নিতে প্রধান দলগুলোকে অবশ্যই ইতিবাচক আলোচনায় যুক্ত হওয়া উচিত”।
সাদা চোখে এই বিবৃতি তাৎপর্যহীন রুটিন কূটনৈতিক বক্তব্য মনে হতে পারে। তবে বাংলাদেশের ঘটমান রাজনীতির দিক থেকে এর তাৎপর্য বেশ গভীর। শুধু কুটনৈতিক বক্তব্য হিসাবে নয়, এটা প্রকাশ্য বা পাবলিক স্টেটমেন্ট হবার কারণে। এই বিবৃতি কেন্দ্র করে আমাদের কিছু নিরীক্ষণ এখানে পেশ করছি। (এখানে দেখুন)
গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ বিষয়ে আমেরিকা ও ভারতের মতভিন্নতা বিভিন্ন খবর ও বিশ্লেষণে চারদিকে ছেয়ে আছে। এটা মনে করার কারণ নাই, বাংলাদেশের রাজনীতির গতিমুখ একমাত্র দিল্লী কিম্বা ওয়াশিংটন ঠিক করবে। পরাশক্তি যতই চেষ্টা করুক তারা কখনই সবকিছুর নির্ধারক নয়। এটা অসম্ভব। আমাদের ভাগ্য বিদেশীরা ঠিক করে দেয় এই প্রপাগাণ্ডা তারাই করে যারা চায় না অথবা আগেই হাল ছেড়ে দিতে চায় কিছু না করে যে, জনগণ তাদের নিজেদের সামষ্টিক স্বার্থের জায়গা থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হোক। এই ধরনের প্রপাগাণ্ডা রাজনীতিতে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সামষ্টিক স্বার্থ রক্ষার জায়গা থেকে সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকাকে ম্লান করে দেওয়া বা নিরুৎসাহিত করবারই প্রচেষ্টা। রাজনীতির বর্তমান অভিমুখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখনও বাংলাদেশের জনগণই নির্ধারক হবে। তবে জনগণকে সঠিক তথ্য ও সম্ভাব্য বিশ্লেষণ ধরিয়ে দেওয়া এখনকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার কুটনৈতিক সম্পাদক ইন্দ্রাণী বাগচীর ৩০ অক্টোবরের রিপোর্ট, পরবর্তিতে তা নিয়ে একই পত্রিকায় সুবীর ভৌমিকের ১ নভেম্বরের কলামের কথা মার্কিন বিবৃতিটি বিশ্লেষণের আগে স্মরণ করা যেতে পারে। ইন্দ্রাণী বাগচী তাঁর লেখার শিরোনামেই বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের প্রশ্নে মার্কিন ও ভারতের মতভিন্নতার কথা বলেছেন । (India, US at odd over Bangladesh policy – ইন্ডিয়া আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নীতিতে দুই মেরুতে)। সুবীর ভৌমিক বলছেন, বাংলাদেশ এক সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে আছে, ভারতকে তাদের বন্ধুপ্রতিম সরকারকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য যা কিছু করার দরকার সব করতে হবে (Bangladesh is in a violent phase and India must do all it can to see a friendly regime return to power)। এরপর রয়েছে বীণা সিক্রির বিবিসিতে সাক্ষাৎকার। আর এছাড়া গত পুরা সপ্তাহ ধরে রয়েছে প্রথম আলোর এই বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনের রিপোর্ট আর মিজানুর রহমান খানের নিয়মিত কলাম – এভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশ নীতির প্রশ্নে দিল্লী ওয়াশিংটনের টানাপড়েনের খবর। খবরটা মিডিয়াতে তাতিয়ে ওঠা ও দীর্ঘায়িত হবার মুল কারণ হাসিনাকে ক্ষমতার রাখবার জন্য ভারতীয় খায়েস ও প্রচেষ্টা - তা নয়। বরং দিল্লীর আশংকা যে, মতভিন্নতার ফলে ভারতের খায়েসকে (ভারতের তিন চাহিদাপত্র বলে আগের লেখা দেখুন ) উপেক্ষা করে আমেরিকা বাংলাদেশে নিজেদের স্বাধীন পদক্ষেপ নিয়ে ফেলতে পারে। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমের মধ্যে ভারতপন্থীদের দাপট অজানা কিছু নয়। তারা এর বিপদ ভালই বুঝে। তারা এতদিন মার্কিন ছাতার আড়ালে দিল্লীর স্বার্থ রক্ষা করে চলত। সেই ছাতা সরে গেলে স্বাধীন ভাবে দিল্লীর স্বার্থ ও এজেন্সি রক্ষা করে চলা বাংলাদেশে তাদের জন্য কঠিনই হবে। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের আওয়ামি সংশ্লিষ্টতাকেও তারা “অসাম্প্রদায়িক”, “লিবারেল” রাজনীতির দোহাই দিয়ে ঢেকেঢুকে রাখতে পারত, সেটাও কঠিন হয়ে যেতে পারে ভেবে ব্যাপারটাকে এ কয়দিন মোটামুটি তাতিয়েই রেখেছে।
আমেরিকা ও ভারতের বাংলাদেশ বিষয়ক মতভিন্নতা চলছে কূটনৈতিক ভাষায়। আমেরিকান অবস্থানের প্রকাশিত ভাষার সুরটা হচ্ছে, সবাইকে নিয়ে (ইনক্লুসিভ) মুক্ত, সুষ্ঠ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। বিপরীতে ভারতীয় অবস্থানের ভাষা হলো, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে। উভয়ের মতভিন্নতা এই দুই ধরণের কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহারের লড়াই হিসাবেও পর্যালোচনা করা যায়।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে দেওয়া আমেরিকার বিবৃতিটির দিকে তাকালে আমরা দেখব, তারা কুটনৈতিক ভাষা বদল করে নাই, “সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন” লেখে নাই। বরং “সংবিধান” শব্দটাই নাই। ফলে দিল্লীর সঙ্গে অন্তত মতভিন্নতার মূল পয়েন্টই তারা বজায় রেখেছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা বলতে পারি গতমাসের ২৩ অক্টোবর তারিখে মজিনার ভারত সফরের পর থেকে শুরু করে এই বিবৃতি দেবার সময় অবধি – অর্থাৎ ১৮ দিন পরেও আমেরিকা তার অবস্থান বদলায় নি। কূটনৈতিক ভাষার মধ্যে বাহ্যিক কিছু আমরা দেখছিনা যাতে তাদের অবস্থান বদল হয়েছে বলে শনাক্ত করা যায়। প্রকারান্তরে এই বিবৃতির এই মানেই আমরা করতে পারি যে ভারতের অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও নাকচ করে চলেছে।
এই নাকচ করার অর্থ অবশ্য আবার দুটো অবস্থানের একটি হতে পারে। এক, হয়তো এটা শুধু আমেরিকার বক্তব্য নয়, ভারতের ইচ্ছাও এর মধ্যে ইনক্লুডেড বা অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ হতে পারে যে এটাই বাংলাদেশ প্রশ্নে দুই দেশেরই কমন অবস্থান। যদি তাই হয় ভারত কি তার শক্ত অবস্থান ছেড়ে দিচ্ছে? হাসিনার আচরণ দেখে তা মনে হয় না। দুই, এটা আমেরিকার নিজের শক্ত অবস্থান, যেখানে ভারতের অবস্থান সম্পুর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নীতির প্রশ্নে দিল্লীর ওপর ঠিক আগের মতো নির্ভরশীল হতে চায় না। দিল্লীর বাইরে নিজের স্বাধীন নীতি অনুসরণ করতে চায়। শুধু তাই নয়। এই মতভিন্নতা পাবলিকলি স্পষ্টও করতে চায়।
প্রসঙ্গ দুইঃ কর্তৃত্ত্ব নিজের হাতে নেবার উদ্যোগ আমেরিকার
ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের দেওয়া বিবৃতি যদি ওয়াশিংটনের নতুন নীতির প্রতিফলন হয় তাহলে এর আরও অর্থ হলো, হাসিনার পঞ্চদশ সংশোধনীর কন্সটিটিউশন অনুযায়ী নির্বাচনের পক্ষে আমেরিকা নাই। অর্থাৎ সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করার বিষয়টার সুরাহা হবার আগে, নির্বাচন আপাতত স্থগিত বা বাতিলের পক্ষে আমেরিকা। নির্বাচন বাতিল বা স্থগিত করা এবং পরবর্তিতে নির্বাচন কোন মেকানিজমে হবে তার কোন ইশারা বিবৃতিতে নাই। তবে এর ইঙ্গিতপুর্ণ জবাব পাওয়া যেতে পারে ০৯ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটার একুশে টিভিতে, এরশাদের এক বিরল সাক্ষাৎকারে। ওখানে এরশাদ বলেছেন একটা আর্মিব্যাকড সিভিল সরকার নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করতে পারে। অর্থাৎ তিনি এক এগারোর সেনা সমর্থিত ধরণের সুশীল-সামরিক সরকারের কথাই বলছেন। সেইসাথে তিনি এও বলেছেন যে যদি করতে হয় তবে সেই সিদ্ধান্তও কনস্টিটিউশনে অনুমোদিত করিয়ে নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে ঠিক হুবহু কী বলেছেন, সেটা আশা করি ক্লিপ দেখে নিলে জানা যাবে। তবে সার কথা এটাই। ওদিকে লন্ডনের সাপ্তাহিক ইকোনমিষ্টের রিপোর্টের শেষ প্যারাটাও এরকমই ইঙ্গিতপুর্ণ – ‘Sheikh Hasina has no interest in alienating it’। সেনা সমর্থিত সুশীল সরকার আসবার সম্ভাবনা থাকলেও তাদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাকে দূরে সরিয়ে দেবার কোন আগ্রহ শেখ হাসিনার নাই।
“If a boycott takes place, then elections could be delayed and street violence is likely in the next few months. If so, the army, which also has the job of providing security at polling stations, would play a decisive political role. Sheikh Hasina has no interest in alienating it.”
আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে মার্কিন এই বিবৃতি বিএনপির পক্ষে থাকা কুটিল চেষ্টা। যেন, মজিনার ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন’কে কূটনৈতিক ভাষায় নাকচ করে দিয়ে ‘ইনক্লসিভ’ নির্বাচনের পরামর্শ সেই চেষ্টারই প্রতিফলন। সন্দেহ নাই, এমন ভাবা একটা ভুল পাঠ হবে। সুবীর ভৌমিক সেই ভুল পাঠ করে এর বিপদ দেখেছেন। এরই প্রতিক্রিয়ায় এক অনামী ভারতীয় কুটনীতিকের বরাতে সুবীর ভৌমিক মজিনা যেন “বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য” বলে তাকে তুচ্ছ করার দিকে মত্ত হয়েছেন। অথচ এতে তিনি বুঝে উঠতেই পারলেন না যে তিনিই, দিল্লীর বাংলাদেশ নীতি প্রণেতাদের মতই আঞ্চলিক মুদি দোকানদারির চরিত্র নিয়ে নিয়ে হাজির হয়েছেন। বাংলাদেশকে ভারতের বাজার ভাবা অথবা নিজেরই আর একটা রাজ্য ভাবা ছাড়া আর অধিক কিছু ভাববার সামর্থ দিল্লীর যেমন নাই, সুবীর ভৌমিকের মতো ক্ষুদ্র বুদ্ধির লোকদেরও নাই। যদি থাকত তার লেখা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট কিভাবে উসকে দিতে পারে সেই হুঁশ তাঁর থাকত। তাঁর শিরোনামই ছিল মারাত্মক উস্কানিমূলক। এভাবে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে মর্যাদা না দিয়ে দিল্লী নিজের জন্যই বিপদ ডেকে আনছে। বাংলাদেশের জনগণ কাকে নির্বাচিত করবে কি না করবে সেটা দিল্লীর মাথাব্যথার কারণ হওয়া উচিত ছিল না। শেখ হাসিনার নীতি ভারতীয় রুস্তমি দেখানোর জায়গা আর তার ব্যবসায়ীদের মুনাফার পরিমান বাড়িয়েছে বটে, কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে যে অবনতি ঘটিয়েছে তা পুনরুদ্ধার করা সহজ হবে না। দিল্লীর উচিত ছিল প্রতিবেশীর আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতি গ্রহণ। কিন্তু দিল্লী বাংলাদেশকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে রেখে স্রেফ লুটতরাজ করতে চায়। গায়ের জোর ও দম্ভের রুস্তমি দেখাতে চায়, শেখ হাসিনার সরকার সে জন্যই তাদের দরকার। দিল্লীর এই লুন্ঠন নীতি একটি বৃহৎ দেশ হিসাবে উপমহাদেশে উলটা তাদের রাজনৈতিক আধিপত্যকেই খর্ব করবে, সন্দেহ নাই। অথচ দিল্লীতে দুরদর্শী কোন নেতৃত্ব থাকলে ক্ষুদে দোকানদারী মানসিকতা নয়, নিদেনপক্ষে আমদানি-রফতানির ব্যবসায়ীর মতো হলেও আরও একটু বড় চোখে আদান-প্রদানের মানসিকতা দেখা যেতো। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক করতে হবে একতরফা লুন্ঠন নয়, দেওয়া নেওয়ার। আর দিল্লী যদি মাড়োয়ারি মানসিকতা বাদ দিয়ে উপমহাদেশের সাধারণ স্বার্থ তার নিজের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য জরুরী মনে করতো তাহলে “একসাথে বেড়ে উঠার” নীতিই অনুসরণ করত। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য রোধ করা, কিম্বা চিনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের সংকট কাটিয়ে তোলা সহজ হোত। বহু কিছু করার সুযোগ ছিল আমাদের। কিন্তু যতটুকু খোঁজখবর রাখি ভারতের এমন নেতৃত্ব ও নীতি আগামি বছরগুলোতে দেখার কোন সম্ভাবনা নাই।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত ৫ মের ঘটনার পর ঘটনার মধ্যে সবার আগে মার্কিন দূতাবাস তাদের বিপদটা টের পেয়েছে। ঢাকার কূটনৈতিক মহলের কাছে ক্রমে তা পরিষ্কার হয়েছে। বিপদটা হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের ভাষায় ‘রেডিক্যাল এলিমেন্ট’ হাজির হবার সম্ভাবনা। শাহবাগকে চ্যালেঞ্জ করে শাপলা চত্বরের আবির্ভাব বাংলাদেশে শ্রেণী ও শক্তির ভারসাম্য যে বদল ঘটিয়ে দিয়েছে, তা আর পাঁচই মের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপযোগী শ্রেণি ও শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখার দিকেই মার্কিন নীতি ঝুঁকবে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নাই। সেই উদ্বেগ নিরসন ও ভারসাম্য বজায় রাখার দিক থেকে আওয়ামি লীগের চেয়ে বিএনপিই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছের মিত্র হতে পারে। সেক্ষেত্রে ‘রেডিক্যাল এলিমেন্টগুলোকে’ আঠারো দলীয় জোটের মধ্যে ধারণ বা আটক রেখে, জোটকে সামনে রেখে দেশে একটা নির্বাচনী লিবারেল রাজনীতি টিকিয়ে রাখা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জন্য জরুরী হয়ে পড়েছে। কারণ ‘রেডিক্যাল এলিমেন্ট’ সামলানোর এটা খুবই উপাদেয় ও কার্যকরী উপায় হতে পারে।
ভারতের এই অঞ্চলকে মধ্যপ্রাচ্যের মতো সহিংস পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার স্বার্থের জন্য অনুকুল মনে করে না। আফগানিস্থান থেকেও আগামি বছর থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হবে। বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে সঠিক অবস্থানই নিতে হবে। মার্কিন দূতাবাসের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে এই রেডিকাল সম্ভাবনাকে মোকাবিলা করা। আর দিল্লির এখনকার ভূমিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে উলটা উস্কানি দিয়ে দক্ষিণ এশিয়াকে আরও অস্থির ও সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়া্। যেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের মার্কিন নীতিকে জোর করে আরও উগ্র ও আগ্রাসী জায়গায় নিয়ে গিয়ে ইসলামী জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা যায়। এ কারণেই দিল্লী বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে দিয়ে লিবারেল নির্বাচনী রাজনীতির পরিমণ্ডল পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে, বাংলাদেশকে সহিংস ও বিপর্যয়গ্রস্ত করে তুলেছে। দিল্লী ও ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র নীতির মধ্যে এই টানাপড়েন অনিবার্য ভাবেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। সামনের দিনগুলোতে আমরা আরও সহিংসতা দেখব।
মধ্যপ্রাচ্যের অভিজ্ঞতার কারণে ওয়াশিংটন সম্ভবত এই পরিস্থিতি এড়াতে চায়। বিএনপিকে সামনে রেখে সম্ভাব্য রেডিক্যাল ইসলামী শক্তিগুলোকে লিবারেল রাজনীতির মধ্যে আটকে রেখেই সেটা সম্ভব। এতে রেডিক্যাল ঝোঁক সামলানো সহজ। এছাড়া এডেড ফ্যাক্টর, পপুলার পারসেপশন বা ভোটের জনমতও এখন বিএনপিরই দিকে। ফলে পরিকল্পনাটা সফল হবার ভাল সম্ভাবনা আছে। তাহলে মজিনার কাছে মুল উৎকন্ঠা সম্ভাব্য রেডিক্যাল রাজনীতি সামলানোর উপায় খুজে পাওয়া। সেই ইচ্ছাপুরণের ক্ষেত্রে বিএনপির জায়গায় আওয়ামি লীগকে রাখলে যদি তা সম্ভব হোত সম্ভবত তিনি সেটাই করতেন। আমেরিকান উদ্বেগটা গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের স্বার্থের দিক থেকে সাম্রাজ্যবাদের সাধারণ রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্বেগ। আন্তর্জাতিক পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে পুরাপুরি সম্পৃক্ত করার প্রক্রিয়া যেন ব্যাহত না হয় বাংলাদেশে মার্কিন নীতির ভরকেন্দ্র সেই দিকেই। এই অঞ্চলকে সেই আলোকেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিচার করে। এই ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থও অবশ্যই নিহিত রয়েছে। ভূরাজনৈতিক স্বার্থের কথা তো আমরা জানি। কিন্তু বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার অন্তর্গত একটি গতিশীল পুঁজিতান্ত্রিক বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক স্বার্থের অনুকুল। অন্যদিকে এই ব্যবস্থার সুবিধাভোগী ও একইসঙ্গে ইসলাম-বিদ্বেষী শক্তিশালী শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও তাদের মতাদর্শের নিরন্তর পয়দাই ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মার্কিন রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।
বিপরীতে দিল্লীর উদ্বেগ, আগেই বলেছি, নিতান্তই ভারতের ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ স্বার্থ। বাংলাদেশকে রাজনৈতিক ভাবে শুধু নয়, একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ভাবে উঠতে না দেওয়া। বাংলাদেশ ভারতের বাজার হোক, ভারতের আত্মঘাতি ইসলাম বিদ্বেষী ও অকার্যকর নিরাপত্তা নীতির স্বার্থে নিজেকে বলি দিয়ে দেক দিল্লী শুধু তাই চায় না। অর্থনৈতিক ভাবে ভারতের প্রতিযোগী না হয়ে উঠুক দিল্লী তাও চায়। একেই বলছি গোঁয়ার ক্ষুদে দোকানদারীর মানসিকতা, একটি আঞ্চলিক শক্তির দূরদর্শিতা এখানে শোচনীয় ভাবে অনুপস্থিত। এই ক্ষুদে দোকানদারী মানসিকতা গায়ের জোরে সবকিছু মোকাবিলা করা সম্ভব মনে করে। যদি গায়ের জোরে আর রুস্তমিতে সবকিছু হত তবে বুশের ওয়ার অন টেরর পলিসি ব্যর্থ হত না, ওবামাকে বুশের নীতি থেকে সরে আসার চেষ্টা করার প্রয়োজন পড়ত না। গ্লোবাল ইকোনমিকে ২০০৭-৮ সালের রিসেশন দেখতে হত না। কোন ফল হাতে না নিয়েই ২০১৪ সালে খালি হাতে আফগানিস্তান থেকে উলটা দেনা নিয়ে ফিরার পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পড়তে হোত না।
এতদিন সাম্রাজ্যবাদীর বলয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশের মত দেশে সরকারে কে থাকবে তা একচেটিয়া নির্ধারণ করাবার যাঁতাকাঠিটা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। সেটা এক হিসাবে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের উপর ব্যবহার করতে আমেরিকা ধার দিয়েছিল ভারতকে। ব্যাপারটা ক্ষুদে দোকানদারের পিঠে বড় ভাইয়ের হাত রাখার মত। যাঁতাকাঠির কথাটা কোন গল্প বা অনুমান নয়। একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষকের।
ডঃ ওয়াল্টার এন্ডারসন, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এসোসিয়েট ডিরেক্টর। তাঁর এক গবেষণার বিষয় ছিল চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ভারতের নতুন সম্পর্ক এলায়েন্স গড়ার ভালমন্দের দিক খুজে দেখা। [আগ্রহিরা দেখুন, CONGRESSIONAL TESTIMONY: India and the United States - A Different Kind of Relationship।] এরপর ২০০৮ সালে সেই কাজের ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্ট তিনি আমেরিকান সিনেটের হাউস কমিটিতে পেশ করেছিলেন এবং কমিটির সদস্যদের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে সাক্ষ্যে (testimony) তিনি যা বলেছিলেন তার ঐ রিপোর্টে আছে। ঐ রিপোর্টে ব্যবহৃত শব্দ ছিল ‘লিভারেজ’। আমি সেটাকে এখানে বাংলায় যাঁতাকাঠি বলছি। এই যাঁতাকাঠির চাপে গত পাঁচ বছর আমরা সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছি। মজিনা দুসপ্তাহের জন্য ওয়াশিংটনে গিয়েছেন ভারত সফরের পরেই। অনুমান করি এন্ডারসন সাহেব এখন নিজের যাঁতাকাঠি তত্ত্বের জন্য হাত কামড়াচ্ছেন, তওবা পড়ছেন। আমরা সবাই যাঁতাকাঠি তত্ত্বে ক্ষুদে দোকানদারের শিকার হয়ে আছি। একথাগুলো বললাম আমেরিকার দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়া নীতির কাফফারার দিকটা বুঝানোর জন্য। আমেরিকান স্বার্থ আমেরিকাকেই দেখতে হবে, ভুগতেও হবে। তা তারা ভুগুক অথবা লাভ খুঁজে পাক। কিন্তু আমাদেরটা আমাদেরকেই দেখতে হবে। ফলে আমেরিকা ও ভারতের মতভিন্নতাকে আমরা যেন এমন আনাড়ি ব্যাখ্যা না করি যে হাসিনার পক্ষে ভারত, সেজন্যই খালেদার পক্ষে আমেরিকা। সাম্রাজ্যবাদ অর্থনৈতিক দিক থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে, আবার রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্বব্যাপী পুঁজির সাধারণ স্বার্থ রক্ষাও তার কাজ। মার্কিন নীতি সেই সাধারণ স্বার্থ দেখভাল করতে গিয়ে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করেছে তা নয়, দিল্লীর সঙ্গে তার ভিন্নতার কারণ এই দুই স্তরেই নিহিত রয়েছে।
প্রসঙ্গ তিনঃ ভারত কি এখনও হাসিনার পক্ষে থাকবে?
এর উত্তর নির্ভর করছে মার্কিন বিবৃতি আমরা কিভাবে পাঠ করি। যদি মনে করি মার্কিন বিবৃতি একই সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উভয়েরই এখনকার কমন অবস্থান তাহলে উভয়েই শেখ হাসিনাকে একটা বার্তা দিচ্ছে। পরিষ্কার ভাবেই। আমেরিকার বিবৃতিতে কি ভারত ইনক্লুডেড নাকি নয় সেটাই হচ্ছে মূল বিষয়। যা আমরা আজ না হলেও দ্রুতই বুঝব। যদি ইনক্লুডেড না হয় তাহলে ভারতের কাছে আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য। সেই ক্ষেত্রে হাসিনাকে ভারত শক্ত ভাবেই সমর্থন দেবে, বা দিতে হবে যাতে গোঁয়ারের মতো একা নির্বাচনের পথে শক্ত ভাবে ক্ষমতাসীনরা এগিয়ে যেতে পারে। দিল্লী ও ঢাকাকে তখন মুখোমুখি সংঘাতের জন্য তৈরি হতে হবে। অন্যভাবে বলতে পারি, মাঠে চরম সংঘাতের পথে জিতে ফয়সালার রিস্ক নিতে হবে। অথবা হার। দিল্লী হাসিনাকে নিয়ে এতো বড় ঝুঁকি নেবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
সংঘাত আসলে আবার একদিক থেকে আমেরিকার কাম্য। তবে সেটা অবশ্যই সীমিত আকারে যদি ঘটে। যেমন সংঘাত যেন আনুমানিক দুদিনের বেশি না গড়ায়, মোটকথা তা যেন নিয়ন্ত্রণে ও সীমিত থাকে। তবে অবশ্যই ঐ দুদিনে ভাল রক্তারক্তি প্রচুর হতে হবে। নইলে ব্যারাক ছেড়ে সেনাবাহিনী বাইরে বের করে আনার যুক্তিকে ন্যায্য প্রমাণ করা যাবে না। ওদিকে আবার যদি একে নিয়ন্ত্রণে ও সীমিত পর্যায়ে রাখা না যায় তবে আন্দোলন রেডিকেল মুড নিবে; গণভ্যুত্থানের দিকে মোড় নিয়ে নিতে পারে। আর গণভ্যুত্থানের দিকে মোড় নেয়া মানে এখন যেমন ১৮ দলকে মজিনার সাথে সম্পর্ক রেখে মুখ চেয়ে থাকতে হচ্ছে তখন হবে উলটা। মজিনাকেই বিজয়ী গণভ্যুত্থানের নায়কদের দিকে চেয়ে থাকতে হবে।
প্রসঙ্গ চারঃ কেন মজিনার আর্মিব্যাকিং দরকার?
একথা ভাবা ভুল হবে যে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভারতের সাথে কুটনৈতিক বিরোধ আমেরিকা চরমে নিবে। বিরোধ আছে এটা সত্যি হওয়া সত্ত্বেও। আবার পরিস্কার মনে রাখতে হবে, মাইনাস হাসিনা আমেরিকান প্রভাবে একটা আর্মিব্যকড সরকার এমন সিনারিওতে অতি অবশ্যই সবচেয়ে বড় হারু পার্টি হবে ভারত। কারণ হাসিনা ক্ষমতায় নাই মানে আমেরিকার সাথে বাংলাদেশ বিষয়ে গলার আওয়াজ তুলে কথা বলার কার্ড ভারতের হাতে নাই। যেমন খালেদার প্রস্তাবের পরদিন সেটা উড়িয়ে দেবার জন্য সৈয়দ আশরাফের ডাকা প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতে একা মজিনার অনুরোধ হাসিনা শুনতে রাজি হয়নি। ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের শরণাপন্ন হয়ে মজিনাকে তা বন্ধ করতে হয়েছিল। মজিনার এই দুর্দিনের কথা তাঁর ভুলে যাবার নয়। আবার একদিনের মধ্যে ভারত-আমেরিকার একটা কমন বাংলাদেশ নীতি বা দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে বের করতে মজিনা পারবে না। সময় লাগবে, কমপক্ষে ৬ মাস-এক বছর। হয়ত আরও বেশি। অর্থাৎ বিরোধ চরমে নেয়া আমেরিকার লক্ষ্য বা স্বার্থ নয়। কারণ এই অঞ্চলে সম্ভাব্য চীন-ভারত টেনশন বিরোধের ফয়দা হিসাবে সে ওদের মাঝখানে বসে থাকতে চায়। এর জন্য সবচেয়ে ভাল জায়গা বাংলাদেশ। আবার চীন-আমেরিকা বাণিজ্য-নৌপথ দখলের লড়াইয়ে আমেরিকা ভারতকে পাশে পেতে চায়। (এটাও ঐ এন্ডারসন সাহেবের রিপোর্টে পরামর্শ ছিল।) যদিও ভারত আমেরিকার মতিগতিতে চীনের চেয়ে আমেরিকাকে কম ভয় পায় বা কম সন্দেহ করে তাও নয়। বরং ভারতও মনে করে এই রিজিয়নের কোন সংঘাতে আমেরিকাকে পাশে না পেলে তার পক্ষে একা নিজের স্বার্থ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত হবে না। ফলে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারত-আমেরিকার কমন নীতি বের করাই এর সমাধান। যদিও কাজটা সহজ নয়। এবং বলা বাহুল্য এই কমন নীতি আমাদেরকে ভারতের নাগপাশ থেকে বের হতে দিবে না। বরং ভারতের অন্যায় আবদার মেনে নেবার জন্য আমেরিকা আমাদের উপর চাপ অব্যাহতই রাখবে। ফলে এক কথায় বললে কোন কমন বাংলাদেশ নীতি সবসময় বাংলাদেশের বিপক্ষে যাবেই। ফলে বাংলাদেশের স্বার্থ, মুক্তি লুকিয়ে আছে পরিস্থিতিকে গণভ্যুত্থান ঘটানোর পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে শক্তিশালী গণসমর্থনের ওপর দাঁড়ানো একটি রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা কায়েম।
প্রাসঙ্গিক নয় বলে চীনের বিষয় প্রসঙ্গ হিসাবে আনিনি। প্রয়োজনে সে আলোচনা আলাদা ভাবে করা যাবে।