সংগ্রাম কমিটি শক্তিশালী করা দরকার
বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন কমিশনের তপসিল ঘোষণা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গতি ও চরিত্রে গুণগত রূপান্তর ঘটিয়ে দিয়েছে। আন্দোলন ক্রমশ তীব্র হবে। তীব্র হচ্ছে। শুরুতেই জনগণের লড়াই-সংগ্রামকে বানচাল করে দেবার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘরে আগুন দেওয়া ও দাঙ্গা লাগিয়ে সেটা ইসলামপন্থিদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা চলেছে। বিশেষত গরিব ও অসহার মানুষদের। জনগণের সতর্কতার ফলে এই অন্তর্ঘাত চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। কিন্তু বিপদ কাটে নি। কারন এই আন্দোলনকে বিনাশ করার জন্য এই ইস্যুটাই যথেষ্ট। অতএব সতর্ক নজর রাখতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে, কিভাবে এই ধরণের ঘটনা নিজেরা ঘটিয়ে ইসলামের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। তারপর দুনিয়াব্যাপী প্রচার চলে ইসলাম কতো বর্বর ধর্ম। মুসলমানরা কতো নিষ্ঠুর ও নির্মম। প্রমাণ করা হবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নাই। তাদের জীবন ও জনপদ হুমকির মুখে। কোন ভাবেই সেটা ঘটতে দেওয়া যাবে না।
আন্দোলন এখন যে স্তরে পৌঁছেছে সেই স্তরে স্থানীয় সংগ্রাম কমিটিগুলি শক্তিশালী করা প্রধান কাজ। দরকার শৃংখলা ও সুনির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে আন্দোলন পরিচালনা। বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত তৎপরতা ক্ষতির কারন হতে পারে। গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকার কারণে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে উঠবে। গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যের কারণে ক্ষমতাসীনরা মিথ্যা প্রচার ও প্রপাগান্ডার সুযোগ পুরো মাত্রায় গ্রহণ করছে। আন্দোলনের এটা খুব বড় একটি দুর্বলতা।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে তাঁর অধীনেই একতরফা নির্বাচন করবেন, এই সিদ্ধান্ত তিনি হঠাৎ নেননি, ভেবেচিন্তেই নিয়েছেন। আঠারো দলীয় জোট – বিশেষত বিএনপি নির্বাচনে না আসুক – এটাও, অভিযোগ উঠেছে, তার পরিকল্পনারই অংশ। তফসিল ঘোষণা হবে এবং বিএনপি ও বেনপির নেতৃত্বাধীন জোট তা প্রত্যাখান করবে -- এটাই হবার কথা ছিল। তাই ঘটেছে। বিনপির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের প্রপাগাণ্ডার মূল সুর হচ্ছে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চায়, বিএনপি মৌলবাদী, ইসলামপন্থি এবং ইসলামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা, ইত্যাদি। জামায়াতে ইসলামির একাত্তরের ভূমিকার কারণে এই প্রপাগাণ্ডা সহজ ছিল। একটা সময় পর্যন্ত তা কাজ করেছে। এখনও কিছুটা করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নানা কারনে বিতর্কিত হয়ে যাওয়ায় এই প্রপাগাণ্ডায় একটা ছেদ পড়েছে। সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে এই সংশয় তৈরী হয়েছে যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া শেখ হাসিনা চান না। দুই একজনকে ফাঁসি দিয়ে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের মন জয় করিতে চান।
সেই ছেদ গভীর হয়েছে হেফাজতের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থানের কারনে। হেফাজত জামায়াতে ইসলামি নয়, কিন্তু দেওবন্দী আলেম ওলামাদের আন্দোলনকে তিনি জামাতের সমার্থক বানিয়ে ছাড়লেন এবং প্রমান করলেন আসলে ইসলাম নিয়েই তাঁর সমস্যা। আলেম ওলামাদের হত্যা করে ঘোর ইসলাম বিরোধী ও ইসলাম বিদ্বেষী হিসাবেই নিজের নাম ইতিহাসে অক্ষয় করে রাখলেন। ব্যাক্তিগত জীবনে তার ধর্মাচার নিয়ে প্রচার প্রপাগান্ডা কোন কাজে আসে নি। আসছে না। হাজার হাজার আলেম ওলামা হত্যা করেছেন এই অভিযোগে সাধারণ মানুষের চোখে তিনি অভিযুক্ত। এই অভিযোগ ভুতের মত তাকে ও আওয়ামি লীগকে তেড়ে বেড়াবে।
শেখ হাসিনার প্রপাগাণ্ডায় বিএনপি কিছুটা নাস্তানাবুদ হয়ে গিয়েছিল। এতে কোন সন্দেহ নাই। পাশ্চাত্য ঘেঁষা একটি রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের এই কালে বিপর্যস্ত করবার সমস্ত কৌশল শেখ হাসিনা ব্যবহার করেছেন। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি পুরাপুরি তার অনুকুল ছিল। কিন্তু সেখানেও এখন বদল ঘটছে। দিল্লি ছাড়া শেখ হাসিনার পক্ষে কোন দেশ নাই। বিএনপির মধ্যে বিরাট একটি অংশ ক্ষমতাসীনদের ইসলামবিরোধী প্রচারে নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। তারা ইসলামপন্থিদের সঙ্গে সকল প্রকার সংশ্রব ত্যাগ করবার জন্য উন্মুখ ও কাতর হয়ে গিয়েছিল।
অথচ ইসলাম এই দেশে জাতপাত বিরোধী রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই-সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত। সুলাতানি আমলে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে তার অবদান অসামান্য। অন্য যে কোন ধর্ম বা আন্দোলনের মতো তারও উত্থান পতন ভালমন্দ বিচার হতে পারে। অতএব ইসলামকে স্রেফ ধর্ম হিসাবে নয়, ইতিহাস হিসাবেও বুঝতে হবে – আর ইতিহাস থেকেই ইতিহাস সৃষ্টি হয় – কাল্পনিক রূপকথা থেকে নয়। হেফাজতে ইসলামের কারনে বাংলাদেশের রাজনীতির হিসাবনিকাশ উলটে পালটে গিয়েছে। বিএনপি সেটা কতোটা বুঝতে পারে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়; আওয়ামি লীগ রাজনীতিতে পুরানা। তারা বুঝলেও অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ইসলাম প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক উপলব্ধি কাটিয়ে না উঠলে বিএনপি গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নির্ধারক ভূমিকা রাখতে পারবে না।
এদেশের আলেম ওলামারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, অকাতরে শাহাদাত বরণ করেছেন। সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে যারা শহিদ হয়েছেন তারা এই দেশেরই সাধারণ মানুষ – কৃষকের সন্তান। তারা জমিদার তনয় ছিলেন না, কিম্বা আমির ওমরাহও না। বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পর তাদেরই লাশ ঝুলে ছিল বুড়িগঙ্গার প্রতিটি গাছের ডালে। তাদের শেষ নিঃশ্বাসের শব্দ ঢাকা শহরের আধুনিক শিক্ষিতদের কাছে না পৌঁছাতে পারে – কিন্তু গ্রামের সাধারণ মানুষ সেই ইতিহাস ভোলে নি। তাদের পারিবারিক ইতিহাসের স্মৃতির মধ্যে সেই সব হেফাজতেই আছে। এই দেশে কৃষকরা জমির অধিকারের জন্য জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়েছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ভুলে গেলে চলবে না। কৃষকদের কিভাবে জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে সেই ঔপনিবেশিক ইতিহাস মুছে ফেলা সহজ নয়। আর তার বিরুদ্ধে লড়েছে এই দেশের কৃষকরাই। আর ইসলাম সেই ক্ষেত্রে তাদের সংগঠিত করতে ভূমিকা রেখেছে। ইসলাম যখনই ইনসাফের জন্য লড়েছে গণমানুষকে তা আকৃষ্ট করেছে। যখনই মজলুমের পক্ষে দাঁড়িয়ে জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, তখনই জালিম ব্যবস্থা তাসের ঘরের মতো উড়ে গিয়েছে। যখন করেনি – ধর্মের সেই প্রতিক্রিয়াশীল ও গণবিরোধী অধঃপতনের বিরুদ্ধেও জনগণ লড়েছে। অতএব ধর্মের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনীতির সম্পর্ক অতো সোজাসাপ্টা নয়। যারা তা মনে করেন তাদের ঐতিহাসিক অজ্ঞতা ও মূর্খতার কাফফারা তাদেরকেই গুণতে হবে।
শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন জামাত ও হেফাজতিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা হিসাবে তিনি বিএনপিকে ধূলায় মিশিয়ে দেবেন। কিন্তু সেটা হয় নি। ফল হয়েছে বরং উল্টা। কারন জনগণ তার ইসলাম বিরোধী রাজনীতির মর্মকে একই নিঃশ্বাসে দুঃশাসন ও দুর্নীতি, গণহত্যা, আলো নিবিয়ে নিরস্ত্র আলেম-ওলেমাদের খুন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করবার জন্য সংবিধান পালটানো, বিচার বিভাগ ধ্বংস এবং আইন শৃংখলা বাহিনীকে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়াই বুঝেছে।
আসলে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনার মুহূর্ত থেকেই বোঝা যাচ্ছিল শেখ হাসিনা দেশকে সংঘাত ও রক্তপাতের দিকেই নেবেন। তিনি দাবি করেছেন, সেনাবাহিনী যেন অসাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতা দখল করতে না পারে তার জন্যই তিনি সংবিধান বদলিয়েছেন। অসাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতা দখল করার পথ বরং সংবিধানের পূর্ণ গণতন্ত্রায়ন, অর্থাৎ নাগরিক ও মানবিক অধিকারের পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধান করা। যেন নাগরিকরা তাদের প্রাণ দিয়ে তা রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা ও তাগিদ বোধ করে। কিন্তু শেখ হাসিনা ভিন্ন পথ নিয়েছেন, তিনি সংবিধান সংশোধন করে এমন ভাবে নাগরিক ও মানবিক অধিকার হরণ করেছেন যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কলংক হয়ে থাকবে। জনগণ যদি মনে করে এই সংবিধান তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার হরণ করবার জন্যই প্রণীত কিম্বা তাদের নিপীড়নের জন্যই সংশোধিত হয়েছে, তাহলে তিনি কিভাবে আশা করেন এই সংবিধান দৈবগুণে বা কোন এক অলৌকিক শক্তির বলে রক্ষা পাবে? আসলে তিনি একটি দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্যই সংবিধানকে হাতিয়ার বানিয়ে নিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত দিল্লীর সঙ্গে তিনি বিভিন্ন চুক্তি ও সম্পর্ক করেছেন। সেই চুক্তি বা সম্পর্ক দ্বপাক্ষিক ছিল না। এই অর্থে যে সেইসব একতরফা দিল্লীর স্বার্থ রক্ষা করা ছাড়া বাংলাদেশের স্বার্থের ছিঁটেফোঁটাও রক্ষা করে নি। বাংলাদেশকে দিল্লীর অধীনস্থ করবার এই নীতি জনগণ পছন্দ করে নি। এখন তারা জানছে দিল্লী যেভাবেই হোক তাকেই ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে চায়। দিল্লির ভরসায় তিনি বাংলাদেশকে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত করবেন। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বদলে গেলেও দিল্লি ইসলামি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়তে চায়। দিল্লি মনে করে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা না থাকলে পুরা দেশ তালেবান হয়ে যাবে। অতএব নির্বাচনে হারা যাবে না। আবারও আওয়ামি লীগকে জিতিয়ে নিয়ে আসতে হবে। যেভাবেই হোক ইসলামপন্থিদের রুখে দিতে হবে। দিল্লি বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিকে শেখ হাসিনার মহাজোট বনাম ইসলামের লড়াইয়ে পর্যবসিত করেছে। তার পরিণতি আমরা ভোগ করতে শুরু করেছি।
ঐতিহাসিক কারণে বাহ্যিক রূপ যাই হোক বাংলাদেশের সচেতন জনগণ এই লড়াইকে মর্মের দিক থেকে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের লড়াই মনে করে না, তারা সংগ্রামকে সেইদিকে পর্যবসিত হতে দেবে না। ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের আত্মমর্যাদা বোধ অপমানিত হবার পরেও শেখ হাসিনা কোন ব্যবস্থা নেন নি, ইমান-আকিদা রক্ষার ক্ষেত্রে ধর্ম প্রাণ মানুষ হুমকি বোধ করেছে। তারা ক্ষোভ জানাতে এসে হয়ে কেউ লাশ হয়ে, কেউ পঙ্গু হয়ে ফিরে গিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার দাবি করেছে, নির্বাচিত সরকারের কাছে যারা তাদের ক্ষোভ জানাতে এসেছে তারা 'জঙ্গী', 'ইসলামী মৌলবাদী'। নিজদের রাজনৈতিক অসারতা ও পরাশক্তির স্বার্থ রক্ষা করবার জন্য নিজের দেশের জনগণের ওপর চড়াও হবার নীতি বাংলাদেশকে রক্তাক্ত করেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক লড়াই দিল্লির সমর্থনে শেখ হাসিনা ও মহাজোট যতোই চেষ্টা করুক সেকুলার বনাম রেডিকাল ইসলামের রূপ নেবে না। মূলত সেটা রূপ নিচ্ছে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াই হিসাবে।
একই সঙ্গে এ লড়াই দিল্লির আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের লড়াই। অবশ্যই এই ক্ষেত্রে ইসলামের ভূমিকা থাকবে। সেই ইসলাম ঔপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে যে নিরাপোষ লড়ে। জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ে পরিণত করার সামর্থ্যের ওপর এই লড়াইয়ের জয়পরাজয় নির্ভর করবে। এ লড়াইয়ে হিন্দু, মুসলমান বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসহ প্রত্যেকে জড়িত। এ লড়াই বাংলাদেশের জনগণের লড়াই। আন্দোলন-সংগ্রামের এই গণচরিত্র বজায় রাখার মধ্যেই এর সাফল্য নিহিত রয়েছে। এ লড়াই গণতন্ত্র কায়েমের লড়াই; একই সঙ্গে বাংলাদেশকে দিল্লির আগ্রাসন, আধিপত্য ও আভ্যন্তরীণ অন্তর্ঘাত থেকে মুক্ত করা এই লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ দিক। দিল্লী বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা থেকে আলাদা কিছু নয়। গণতন্ত্রের সংগ্রাম একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রাম। এর অন্যথা নাই। এই লড়াইয়ে শত্রুমিত্র চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। গণমাধ্যমের ক্রমাগত মিথ্যাচার ও প্রপাগাণ্ডা এর অভিমুখ ও শক্তিকে আর রুখে দিতে পারবে বলে মনে হয় না।
প্রশ্ন জাগে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে এসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা যদি গণতান্ত্রিক রাজনীতির শক্তিশালী ধারা বিকশিত করতে পারতেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো মজবুত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন এবং তার দল ও জোটের শরিকদের রাজনৈতিক ভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের ওপর জোর দিতেন তাহলে আসাংবিধানিক ভাবে কারুরই ক্ষমতা দখলের কোন শর্তই আর উপস্থিত থাকত না। কিন্তু তিনি সে পথে যান নি। তিনি বিচার বিভাগের ক্ষয় ত্বরান্বিত করেছেন। রাষ্ট্র বলতে এখন যা অবশিষ্ট আছে তা হিংস্র বলপ্রয়োগের ক্ষমতা।
এই নগ্ন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস যতোই তিনি প্রদর্শন করবেন, ততোই তিনি জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাবেন। তার বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষিপ্ত করে তুলবেন। আরও রক্তক্ষয় ঘটাবেন।
এই আত্মঘাতী পথ থেকে তিনি সরে আসবেন, এই দুঃসময়ের মধ্যে তবুও আশা করি। রক্তপাত ও প্রাণহানি আমরা কেউই চাই না।
২৭ নভেম্বর ২০১৩। ১৩ অগ্রহায়ন ১৪২০।