বৈচিত্র ও পার্থক্য নিয়েও ঐক্য সম্ভব


আরেকটি ঈসায়ী বছর শেষ হচ্ছে। নতুন বছরের জন্য সবাইকে শুভেচ্ছা।

নতুন বছরে আমরা সবাই ভবিষ্যতের কথা ভাবি। গতবছরগুলো যতো মন্দই হোক, সামনের বছরগুলো অতীতের চেয়ে ভালোভাবে কাটবে আশা করি। সেই আশাটা নতুন বছরে প্রকাশ করাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও প্রায়ই ভাবি, যে-বছর চলে যাচ্ছে সেটা যদি পিছিয়ে পড়া ব্যর্থতার বছর হয় তারপরও তো নতুন বছরের উৎসব করি আমরা। সেটা তো দোষের না। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। সম্ভবত এই সংস্কৃতি আমরা রপ্ত করতে চাইছি যে নতুন বছরে মন্দ কথা বলা ঠিক না। আমিও আজ এখানে ব্যর্থতার কথা বলব না।

দাবি উঠতে পারে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমখুন, ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়ন, নির্যাতনসহ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের মধ্যে আমি আবার ভাল কি আবিষ্কার করব? এই ঘটনাগুলো ঘটা ভাল মোটেও না, কিন্তু ভাল দিক শনাক্ত করতে চাইলে বলা যায়, এইসব এখন চোখের আড়ালে ঘটানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আগে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বছরওয়ারি রিপোর্টে এইসব প্রকাশ করত, তথাকথিত লিবারেল (অর্থাৎ মুখে উদার গণতন্ত্রী কিন্তু কাজের দিক থেকে গণবিরোধী, অনেকে মানবাধিকার বিরোধী) পত্রিকাগুলো তা উপেক্ষা করে যেতো। আজকাল তারা কিছু কিছু প্রকাশ করে। ভালো তো, ভালো না?

তারা করছে, কারন উদার রাজনৈতিক পরিবেশ সংকুচিত হয়ে আসছে, সরকারের নির্লজ্জ দালাল না হলে গণমাধ্যমের কর্মীরা দেয়ালের চিপার মধ্যে পড়ে যাওয়া হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ অফিসে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এতে গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সকলেই চরম উৎকন্ঠিত। এই সেই সময় যখন প্রতিবাদ জানানো এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নানা মত ও পথের মানুষকে একত্র থাকা দরকার। বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের নেতৃত্বে এই ধরণের ঐক্য তৈরি হয়েছিল। তারা এর নাম দিয়েছিলঃ ‘রেইনবো কোয়ালিশান’। রেইনবো মানে রঙধনু। নানান রঙের নানান মতের মানুষ একটি ইস্যুতে একত্রিত হবার চেষ্টা। আমরা তা পারি কিনা ভেবে দেখতে পারি।

বাংলাদেশ চিন্তাশীল দেশ নয়। সজীব ও সক্রিয় চিন্তাশীলতার চেয়ে এখানে মতেরই প্রাধান্য। মতের বাহাদুরেরা এখানে বুক চিতিয়ে হাঁটে, চিন্তার কোন বালাই নাই। ডান বলি কি বাম বলি মতান্ধতা ও অসহিষ্ণুতা এই দেশে প্রবল। এই পরিস্থিতিতে অচিরে কোন চিন্তাশীল ঐক্য আমি আশা করি না। সে কারণের ‘রংধনু’ কথাটা মনে এল। বাংলাদেশে গণতন্ত্র কায়েমের প্রশ্নে দুই হাজার পনেরো সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারা ও প্রবণতার মধ্যে মত ও পথের পার্থক্য সত্ত্বেও বাস্তবের ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়ানো অসম্ভব নয়। আগামি দিনে বাংলাদেশের এগিয়ে যাবার পথে এটাই সবচেয়ে বড় বাধা। এই সম্ভাব্যতা কিভাবে বাস্তবায়িত করা যায় সেটাই সবাইকে ভাবতে অনুরোধ করব।

বাংলাদেশে যদি আমরা ফ্যাসিবাদের পরাজয় চাই তাহলে ঐক্যের একটা পথ বের করতেই হবে। সকলের কাছে গ্রহণ যোগ্য ন্যূনতম নীতির ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে সাময়িক হলেও একটি উদার, সহনশীল শাসন ব্যবস্থার পক্ষে দাঁড়ানো দরকার। সাময়িক কারণ গণতন্ত্র রাষ্ট্রের একটি বিশেষ ধরণ, এটা নিছকই নির্বাচন নয়। সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্য আরও বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক প্রস্যুতির দরকার। শেষের দিকটা -- অর্থাৎ নির্বাচনই গণতন্ত্র নয় ব্যাপারটা আমরা আজকাল কিছুটা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝলেও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রূপ ও মর্ম নিয়ে আমাদের দেশে যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা নাই। ইউরোপের অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা শিখতে চাই না। গণতন্ত্র সেখানে আপসে আপ লিবারেল কায়দায় আসে নি। (দেখুন, 'লিবারেলিজম বা উদারবাদ') অথচ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হবার কোন বিকল্প আপাতত আমাদের নাই। আমাদের মনে রাখা দরকার কৌশলের দিক থেকে সংস্কার আর বিপ্লবী রাজনীতির সীমা খুবই ক্ষীণ। মার্কস একটা ভাল কথা বলেছিলেন; বড় বড় বিপ্লবী বুলির চেয়ে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষে্পটাই সবচেয়ে বেশী কাজ করে। রাষ্ট্রের মৌলিক রূপান্তরের কাজও ব্যাতিক্রম নয়।

এটা আন্দাজ করা যায় যে বর্তমান সরকার আগামি ৫ জানুয়ারি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উদযাপন করবে। রাজনীতির মাঠ সরগরম করে তুলবে তারা। এটা নিশ্চয়ই ভাল খবর নয়। সেটা হবে ফ্যাসিবাদের বিজয় উৎসব। আমি অবশ্য তা পুরাপুরি মনে করি না। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও সরকার তো তাদের সাফল্যের মহিমা কীর্তন করবেই। এটা বছর মন্দ ভাবে শুরুর লক্ষণ নয়। ভালো দিক হচ্ছে সেটা করলেও ক্ষমতাসীনরা নিজেদের নৈতিক ও সাংবিধানিক দিক থেকে বৈধ দাবি করতে পারবে না। আমি তাদের মুখোশ পরা মুখগুলো এখন আগাম দেখছি। তারা জানে তারা যা বলে সেটা সত্য কথা না। বলতে হয় বলে বলা।

সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতার অজুহাত তুলে গত ৫ জানুয়ারিতে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছিল। সংবিধান বদলিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় থেকে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের কাজে খাটিয়ে। যে সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল সেই সংবিধান জনগণের কাছ থেকে কোন ম্যাণ্ডেট ছাড়াই বর্তমান সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে নির্বাচনের আগেই বদলে দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটায় এবং কম পক্ষে আরও দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনের জন্য আদালতের পরামর্শ উপেক্ষা করে।

ক্ষমতাসীনরা অবশ্য এতেও ক্ষান্ত হয় নি। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দমন, পীড়ন, হত্যা, গ্রেফতারসহ অকথ্য দমন নীতি চালিয়ে তাদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা অসম্ভব করে তোলে। নিজেরা ক্ষমতাসীন থেকে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত করে এনে মোট ৯ কোটি ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ৮৬১ জন ভোটারের মধ্যে ৪ কোটি ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করে।

সরকারের কাজ হচ্ছে নাগরিকদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। বিরোধী জোট নির্বাচনে আসে নি বলে এক তরফা নির্বাচন করার ক্ষমতা এই সরকারকে কেউই দেয় নি। সেটা সংবিধানের লংঘন। কারন ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবার অধিকার ক্ষমতাসীনরা লঙ্ঘন করেছে। অপরাধ বিরোধী দলের ঘাড়ে এখন চাপিয়ে দেওয়া হাস্যকর। দমন পীড়নের মধ্য দিয়ে বিরোধী দলকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে বাধ্য করাও সংবিধান লংঘন।

তাহলে এটা পরিষ্কার বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকা কোন নৈতিক বা রাজনৈতিক সম্মতির ভিত্তিতে নয়; সরকারের কোন নৈতিক বা রাজনৈতিক ভিত্তি নাই। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান বদলিয়ে সেই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন ফাসিস্ট চর্চার নয়া নজির মাত্র। যে সংবিধান ক্ষমতাসীনরা নিজেরাই কোন ম্যান্ডেট বা সামাজিক-রাজনৈতিক সম্মতি ছাড়া বদলিয়েছে তাকে মাথায় তুলে তর্ক করার কোন মানে নাই যে নির্বাচন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে হয়েছে। জনগণ এই খামাখা তর্ক শুনতে মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের কেচ্ছা মেনে নেয় নি। এটা ভালো।

কেউ দাবি করতে পারে, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্দোলন হচ্ছে না কেন? যারা এই যুক্তি দিচ্ছেন তারা বলছেন, যাও বন্দুক তাক করা আছে, এমনকি কামানও – তার সামনে গিয়ে দাঁড়াও। ক্ষমতাসীনরা যে কোন আন্দোলনকে নিষ্ঠুর ও নির্মম ভাবে দমন করতে বদ্ধ পরিকর। প্রয়োজনে রক্তের সমুদ্র বইয়ে দিতে তারা বদ্ধ পরিকর। এই পরিস্থিতিতে প্রাণ দেবার বাহাদুরিকে বীরত্ব বলা যাবে না।

কিন্তু এটাও সত্যি বাংলাদেশের ইতিহাস একাত্তরের মতো আবার নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের দাবি সামনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু জনগণ কী অর্জনের জন্য প্রাণ দেবে সেটা যতক্ষণ না বিরোধী দল স্পষ্ট ভাবে সামনে নিয়ে আসতে না পারবে, তখন বিরোধী দলের ডাকে রাস্তায় নেমে মানুষ জীবন দেবে না। জীবনের দাম যেন বিরোধী দলকে শুধু ক্ষমতায় বসানো না হয় জনগণ তা নিশ্চিত করতে চায়।

অতএব সুস্পষ্ট কর্মসূচির জন্য জনগণের অপেক্ষাকেও আমি খারাপ দেখছি না। বিরোধী দলকে নিদেন পক্ষে বলতে হবে স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার বা ইনসাফের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নতুন ভাবে গড়ে তোলাই আমাদের এখনকার প্রধান কর্মসূচি। গত বেয়াল্লিশ বছর নানান কানাগলিতে আমরা ঘুরেছি। আমাদের দরকার এমন একটি ঐতিহাসিক মিলনবিন্দু যার ওপর দাঁড়িয়ে একাত্তরের মতো আমরা সকলকে আবার ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। স্বাধীনতার ঘোষণা সেই ঐক্যের জায়গা। কারণ স্বাধীনতার ঘোষণায় দেওয়া প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। জনগণ জীবন দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়বার জন্য উদ্বুদ্ধ করবার জন্য এটাই এখনও সঠিক অবস্থান। এই প্রতিশ্রুতির জন্য একাত্তরে জনগণ জীবন দিয়েছে, আবারও দেবে। কিন্তু একটি দলকে হঠিয়ে অন্য আরেকটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য যথেষ্ট রক্তক্ষয় হয়েছে। এই নিরর্থক জীবন নাশ বন্ধ করতে হবে।

স্বাধীনতার ঘোষণাকে ফ্যাসিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্য ও মিলনের জায়গা বলার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ঐতিহাসিক সত্য ও বর্তমান করণীয় বিষয়ও সামনে চলে আসে।

১. ফ্যাসিস্টরা মুক্তিযুদ্ধের শক্তি নয়। বাংলাদেশের জনগণ ছয় দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল; সেই ক্ষেত্রে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি ও শেখ মজিবর রহমানের অবদান অপরিসীম।

২. মওলানা ভাসানি পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সমস্যার সমাধান অসম্ভব মনে করেছিলেন। তাই তিনি লিগাল ফ্রেইম ওয়ার্ক অর্ডারের অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন নি। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ছাড়া ইসলামাবাদের শাসন ও শোষন থেকে মুক্তি অসম্ভব, এটাই ছিল তাঁর অবস্থান। কিন্তু শেখ মুজিবরের চেষ্টার তিনি বিরোধিতা করেন নি। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন ও আন্দোলন এই দুই পথকে বিচ্ছিন্ন ভাবে নি। শেখ মুজিবর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী হলে তাঁকে কারাগার থেকে বের করে আনার সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি।

৩. ছয় দফার আন্দোলন ও সামরিক শাসনের অধীনে নির্বাচিত হয়ে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ণের কৌশল ভাসানির মূল্যায়ন সত্য প্রমাণ করে ব্যর্থ হয়। পঁচিশে মার্চে শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তানীদের হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দেন। তারপর মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। অতএব ছয় দফার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আলাদা। ইতিহাসের নায়ক এই দেশের জনগণ। এদেশের কৃষক, শ্রমিক খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, সৈনিক, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্যরা। জনগণের সামষ্টিক অর্জনকে একটি দলের কুক্ষিগত করবার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো এখনকার কর্তব্য।

৪. মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ নিশ্চিত করবার লক্ষ্যে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণায় এই তিন নীতির কথাই শুধু বলা হয়েছে। এই তিন নীতি জনগণের আদর্শিক ঐক্যের ভিত্তি। ধর্ম নিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র একটি দলের কর্মসূচী – কিন্তু কোন জাতীয় কর্মসূচী নয়। কখনই তা জাতীয় কর্মসূচি বা জাতীয় চেতনা ছিল না। যারা তা বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে তাঁদের কর্মসূচি প্রচারের অধিকার আছে। কিন্তু তা দেশের পুরা জনগোষ্ঠির ওপর চাপিয়ে দেবার কোন অধিকার তাদের নাই।

৫. স্বাধীনতার ঘোষণা হিসাবে গৃহীত তিন নীতির বাইরে ধর্ম নিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন সম্পর্ক নাই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মানেই ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। যারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের কর্তব্য বাদ দিয়ে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’র ধ্বজা তোলে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষের কারণেই সেটা তোলে। এরা মোটেও ধর্ম নিরপেক্ষ না। যারা স্বাধীনতার ঘোষণা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তারা মূলত ফ্যাসিবাদী চেতনার ধারক ও বাহক। এরাই এখন বাংলাদেশের জনগণের প্রধান শত্রু।

৬. একটি নতুন গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র বা কন্সটিটিউশান প্রণয়নের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণার তিন নীতি বা আদর্শকে এখন ২০১৫ সালে কে কিভাবে বুঝি এবং ব্যাখ্যা করি সেটা সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা, কথাবার্তা, শলাপরামর্শ করে একটি সর্বসম্মত বা নিদেন পক্ষে সংখ্যা গরিষ্ঠ অবস্থান ও নির্দেশনা তৈয়ার করাই এখনকার কাজ – বাংলাদেশকে নতুন ভাবে পুনর্গঠনের গতিকে বেগবান করার এটাই পথ।

আসুন, ২০১৫ সালে শপথ নেই। বিভাজন ও বিভক্তির রাজনীতি আর নয় – ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক ঐক্য – এটাই আগামি দিনের কাজ।

বাংলাদেশের জনগণের জয় অবশ্যম্ভাবী।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৪। ১৭ পৌষ ১৪২১, শ্যামলী, ঢাকা

 

 

 

 

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।