২. গণতন্ত্র ও শিক্ষাব্যবস্থার সম্পর্ক


কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা: প্রপাগান্ডা, অনুমান ও ধারণা

সিস্টার্স অব দ্য হোলি নেইমস অব জেসাস এন্ড মেরি। কেন নামটি মনে পড়ল তার আগে আরও কিছু কথা বলা দরকার।

শিক্ষা আইন ও শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে কওমি মাদ্রাসার আলেম-ওলেমাদের লড়াই-সংগ্রাম গুরুত্ব না পাবার পেছনে কিছু অনুমান কাজ করে থাকতে পারে। যেমন, ১. মওলানা-মৌলবিরা ‘অনাধুনিক’ ও চিন্তাচেতনায় ‘পশ্চাতপদ’, অতএব তাদের কথাবার্তা তৎপরতাকে গুরুত্ব দেবার কিছু নাই, কওমি আলেম-ওলেমাদের খবর প্রচার না করাই ঠিক কাজ; ২. মাদ্রাসা জঙ্গী তৈরির কারখানা, কওমি মাদ্রাসার খবরাখবরের গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ জঙ্গীদের সমর্থন দেওয়া, এই সকল পশ্চাতপদ প্রতিষ্ঠান তুলে দিয়ে দরকার সকলের জন্য একই পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা, অতএব ইত্যাদি। আধুনিকতা/অনাধুনিকতার তর্ক একটি ক্লিশে ও নিরর্থক তর্ক। এই বিষয়ে আমার অন্যন্য লেখায় আমি আলোচনা করেছি, প্রয়োজনে অন্যত্র আলোচনা করা যাবে। বাংলাদেশে সরকারী ভাষ্য অনুযায়ী যাদের ‘জঙ্গী’ বলে চিহ্নিত করা হয় তারা যে মাদ্রাসা – বিশেষত কওমি মাদ্রাসায় পয়দা হয় না, এটা এখন তথ্য হিসাবে অস্বীকার করা কঠিন। কওমি মাদ্রাসাকে ‘জঙ্গি’ তৈরির কারখান হিসাবে শনাক্ত হওয়ার পাশ্চাত্যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের নীতি ও কৌশল হিসাবে। ফলে এই অভিযোগ একান্তই বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের প্রপাগান্ডা, এর কোন ভিত্তি নাই।

তবে সবচেয়ে প্রবল ও প্রকট অনুমান হচ্ছে, ৩. আধুনিক সমাজ ও আধুনিক রাষ্ট্র বানাতে হলে মাদ্রাসাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখা যাবে না। সকল প্রকার শিক্ষা শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক রাষ্ট্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রাষ্ট্রকে ‘একই পদ্ধতির শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার কারিকুলাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা নীতি, পাঠ্য পুস্তক লেখা, পাঠ্য বিষয় নির্ধারণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ সহ সব কিছুই থাকতে হবে রাষ্ট্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে। যারা ক্ষমতায় থাকবে তারাই ঠিক করবে আমরা কি শিক্ষা দেবো, কি বিষয় পড়াবো, কিভাবে মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি পরিচালনা করব, ইত্যাদি। গণতন্ত্র ও শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্ক বিচারের দিক থেকে এটাই এখানে আমাদের আলোচনার মুখ্য বিষয়। প্রশ্ন হচ্ছে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে পাশ্চাত্যে যা গড়ে উঠেছে সেখানে কি রাষ্ট্রের এরকম সর্বগ্রাসী এখতিয়ার মেনে নেওয়া হয়? নাকি সকলের জন্য ‘একই পদ্ধতি’র শিক্ষার ধারণা এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে রাষ্ট্রের কুক্ষিগত করবার চিন্তা এবং চেষ্টা চরম ফ্যাসিস্ট, অগণতান্ত্রিক ও প্রতিক্রিয়াশীল ধারণা।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আছে তারা গণতান্ত্রিক দল না, ফ্যাসিস্ট দল। রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সরকার যদি ফ্যাসিস্ট হয় তাহলে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও ভূমিকা হবে যত্ন করে ফ্যাসিস্ট মন মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গী উৎপাদন। শিক্ষা নিয়ে আমাদের সাম্প্রতিক বাগাড়ম্বরের গোড়ার সার কথা এটাই। বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে বিস্তর লম্বাচওড়া কথা শুনি। মেলা লেখালিখি দেখি। যার নিরানব্বই ভাগই আবর্জনা। ভারকেন্দ্র একটাই: একটি কেন্দ্রীভূত ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার অধীনে শিক্ষা ব্যবস্থাকে মতাদর্শিক ও প্রাতিষ্ঠানিক হাতিয়ার হিসাবে গড়ে তোলা। এ জন্যই 'একই পদ্ধতি'র শিক্ষা ব্যবস্থা দরকার। এর বাইরে কেউ থাকতে চাইলে তাদের দমন, উৎখাত ও বিনষ্ট করাই কর্তব্য। 'একই পদ্ধতি'র শিক্ষা মূলত একটি ফ্যাসিস্ট প্রকল্প। এই আলোকেই সম্প্রতি বেফাক আয়োজিত ওলেমা সম্মেলন থেকে ক্ষমতাসীনদের কাছে পাঠানো প্রস্তাবগুলো পড়ছিলাম। তখনই মনে পড়ল, সিস্টার্স অব দ্য হোলি নেইমস অব জেসাস এন্ড মেরি।

শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা নীতি নিয়ে বস্তা বস্তা লেখায় কার কতোটুকু আমোদ হয় বলা মুশকিল। শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থার তর্ক -- ব্যবহারিক কি দার্শনিক -- সব দিক থেকেই বিশাল একটি ক্ষেত্র। আলেম-উলামারা জানেন মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা হঠাৎ আসমান থেকে পাকা ফলের মতো ঝরে পড়ে নি। এর পেছনে দীর্ঘ ইতিহাস আছে। তদুপরি কওমি মাদ্রাসার ক্ষেত্রে আছে দেওবন্দীদের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। দেওবন্দী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠার ঐতিহাসিক পটভূমি এবং তার পেছনে স্বনামধন্য আলেম-ওলেমাদের চিন্তা, পরিশ্রম ও দূরদর্শিতা সম্পর্কে কোন খোঁজখবর ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে কিছু বলা চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটা সামগ্রিক পর্যালোচনা এবং সম্ভাব্য সংস্কার নিয়ে আলাপ আলোচনা এ কারনে বাংলাদেশে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বলাবাহুল্য সে আলোচনা একই সঙ্গে আধুনিক কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের পর্যালোচনাও বটে।

শিক্ষা সম্পর্কে অনেক বিশেষজ্ঞদের লেখা পাই। পড়ি। এই ক্ষেত্রে যারা শিক্ষা ‘বিশেষজ্ঞ’ তাঁরা সময়ে অসময়ে ভাল কিছু বলেন না তা নয়, তবে সেই ভালমন্দের তর্ক ফুটা বাটিতে পানি ঢালা আর কী! কারন সবার আগে দরকার শিক্ষা সম্পর্কে গোরার অনুমানগুলো পর্যালোচনা করা। আমরা শিক্ষাব্যবাস্থার আলোচনায় কি নিয়ে তর্ক করছি যদি সেই তর্কের অনুমানগুলো শনাক্ত ও পর্যালোচনা করতে গোড়াতেই অক্ষম হই তাহলে ফালতু বিশেষজ্ঞবাদিতার কোন অর্থ নাই। নিতান্তই কাণ্ডজ্ঞানেই বোঝা যায় যে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণই যদি অনুমান হয় তো আমরা মোটেও শিক্ষা নিয়ে কথা বলছি না, বরং কেন্দ্রীভূত ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র তোলার পরিকল্পনা করছি মাত্র। সেই ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনা অর্থহীন। এটা পরিষ্কার যে আমাদের সমাজে শিক্ষা চিন্তা খুবই দুর্বল। আমরা শিক্ষা নিয়ে চিন্তা করবার ক্ষেত্রে এখনও অক্ষম।

কিন্তু অক্ষম বলে শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রশ্নকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। নিদেন পক্ষে দরকার সজীব ও সক্রিয় ভাবে চিন্তা করবার চেষ্টা করা। অর্থাৎ বাঁধাবুলি না আউড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করা শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের তর্ক ঠিক কিভাবে কোন্‌ প্রসঙ্গে তুললে আমাদের জন্য ফলপ্রসূ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে আমার দাবি হচ্ছে সমাজ ও রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে আলোচনা না করে গণতন্ত্রের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্ক বিচার দিয়ে আমরা আলোচনায় প্রবেশ করতে পারি। কারন বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার আন্দোলন সংগ্রাম এই প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে পর্যালোচনার দরকার আছে। অবশ্যই। কিন্তু বাংলাদেশে যারা নিজেদের গণতন্ত্রী বলে দাবি করেন ‘শিক্ষা’ সম্পর্কে তাদের অনুমান ও মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে তাদের অবস্থান কেন গণতন্ত্র বিরোধী সেটাই সবার আগে বোঝানো দরকার। আধুনিক গণতন্ত্র শিক্ষার সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কিভাবে অনুমান করে এবং বাংলাদেশে আমরা চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রে কোথায় পড়ে আছি সেই দিকগুলো আগে স্পষ্ট করা দরকার। যাতে সজীব ও সক্রিয় চিন্তার জমি থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারি।

দর্শন বা সজীব চিন্তার কাজ হচ্ছে মানুষ সম্পর্কে খুবই গোড়া প্রশ্ন তোলা। যেখানে আমরা গোড়ার প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে অভ্যস্ত নই, সেখানে শিক্ষা নিয়ে কে কী বলল তা বিনোদন হতে পারে, এতোটুকুই। ‘মানুষ’ সম্পর্কে ধারনার উৎপত্তি, ইতিহাস ও পর্যালোচনা ছাড়া শিক্ষা নিয়ে কোন আলোচনা শুরু হতে পারে না। সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ‘মানুষের বিকাশ’ কিভাবে সফল ভাবে সম্পন্ন করা যায় সেই বাস্তব বা ব্যবহারিক প্রশ্নের সঙ্গে শিক্ষার ধারনা জড়িত, যা একই সঙ্গে দর্শনেরও বিষয়। এই দিকটি বোঝানোর জন্য কিছু কথা বলে রাখা দরকার।

‘মানুষ’ কথাটা সকলে একরকম অর্থ করেন না বা বোঝেন না। অতএব ‘মানুষ’ বা ‘মানুষের বিকাশ’ কথাটার অর্থও সবার কাছে এক রকম নয়। মানুষ কী, বা মানুষের অর্থ কী, এই প্রশ্ন আলবৎ দর্শনের বিষয়। কিন্তু শিক্ষার কাজ যদি মানুষকে ‘মানুষ’ করা বোঝায় তাহলে শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থার তর্ক দর্শনের ঘর থেকেই শুরু করা ছাড়া উপায় থাকে না।

আমাদের আলোচনার জন্য আমরা এই অনু্মান করতে পারি যে ‘মানুষ’ সম্পর্কে সব ধর্ম বা দর্শনেরই নিজস্ব কিছু অনুমান আছে। ইসলামের কিছু অনুমান আছে যা তার বৈশিষ্ট্য। আলেম-ওলেমাদের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যে (discursive tradition) তা নিয়ে তর্কবিতর্ক আলোচনা-পর্যালোচনা আছে। যেমন, যদি মানি যে মানুষ কোরানুল করিমের কথা মতো আল্লার খলিফা – অর্থাৎ আল্লার প্রতিনিধি -- তাহলে ইসলামে ‘মানুষ’ নামক ধারণা মানুষের দিব্যতাকে শুরুতেই স্বীকার করে নিয়ে ‘মানুষ’ ধারণা নির্ণয়ের দিকে অগ্রসর হয়। তাকে আদিপাপে অভিশপ্ত কিম্বা দুনিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেছে বলে পূর্বজন্মে পাপী ছিল – এই ধরণের কোন অনুমান দিয়ে শুরু করে না। এহেন মানুষকে মাদ্রাসায় শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা কোরানের প্রস্তাবনাকে আশ্রয় করে আবর্তিত হওয়াই স্বাভাবিক। মাদ্রাসা শিক্ষা মানুষকে ‘মানুষ’ তৈয়ার করার সুনির্দিষ্ট অনুমান নিয়েই কাজ করে। বলাবাহুল্য সে অনুমানের ভিত্তি কোরান। শিক্ষা নিয়ে যারা আলোচনা করেন তারা যদি শিক্ষা নিয়ে আদৌ কোন অর্থপূর্ণ আলোচনা করতে চান তাহলে মাদ্রাসা শিক্ষার এই ভিত্তির ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তারা কোরান বিশ্বাস করেন কি করেন না তাতে কিছুই আসে যায় বা। অর্থাৎ মানুষ ইহলোকে আল্লার খলিফা বা প্রতিনিধি, এই অনুমান বা বিশ্বাস যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা বা সামগ্রিক ভাবে শিক্ষার পদ্ধতি ও প্রকরণ চর্চা করবে, যারা এই অনুমান করেন না বা ভিন্ন বিশ্বাসে বিশ্বাসী শিক্ষা সম্পর্কে তাদের ধ্যান ধারনার সঙ্গে কওমি মাদ্রাসার বিরোধ হবেই। এই বিরোধগুলোও চিহ্নিত করা জরুরী।

আল্লার খলিফা ধারনাটিকে ইসলামি ধর্মতত্ত্বের আলোকে বোঝা শিক্ষা নিয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক তর্কবিতর্কের জন্য জরুরি নয়। যারা সেকুলার কিন্তু শিক্ষা নিয়ে – বিশেষত কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করতে চান -- তাদের কোরানহাদিস কিম্বা দেওবন্দের ইতিহাস পড়ে মাদ্রাসা বুঝতে হবে ব্যাপারটা এতো জটিল নয়। কাণ্ডজ্ঞান থাকলে তাদের পক্ষে সহজেই আন্দাজ করা সম্ভব যে কোরানুল করিম মানুষের দিব্যতা বা তার দিব্যসত্তার ওপর বিশেষ ভাবে জোর দেয়। সেটা সেকুলাররা না মানেন অসুবিধা নাই। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা সংক্রান্ত তর্কে প্রবেশের সময় তারা ধরে নিতে পারেন না  যে 'মানুষ' সম্পর্কে তাদের অনুমান বা ধারণাই সঠিক। বিশেষত যে ধারণা পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে তৈয়ারি। যেমন মানুষ মাত্রই ভোগী, ইন্দ্রিয়াদি বিষয়ের প্রতি অনুরক্ত এবং বৈষয়িক জীবনের বাইরে তার কোন  আত্মিক বা পরমার্থিক জীবন নাই,  ইত্যাদি। 

ইসলামে মানুষ আল্লার খলিফা হিসাবে ইহলোকে ভূমিকা পালনের জন্য হাজির হয়, তার জন্ম যেমন মানুষের নিজের ইচ্ছায় ও অভিপ্রায়ের দ্বারা হয় নি, ঠিক তেমনি তার জীবনের উদ্দেশ্য বা তাৎপর্য অনুধাবন তার নিজের পক্ষে সম্পূর্ণ উপলব্ধি সম্ভব নয়। মাদ্রাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য তার মধ্যে সেই বোধ বা উপলব্ধি জাগিয়ে তোলা। সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ও শিক্ষা নীতির ( শিক্ষানীতিমালা ২০১০ এবং প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬) বিরুদ্ধে কওমি মাদ্রাসার আন্দোলনে আলেম-ওলামারা তাই বারবারই বলছেন, সরকারি সনদ বা চাকুরি পাওয়া দ্বীনি শিক্ষার উদ্দেশ্য না। মাদ্রাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য মাদ্রাসার শির্ক্ষার্থীদের জন্য চাকুরি জোগাড় করে দেওয়া বা সরকারের সনদ পাইয়ে দেয়া নয়।  এই শিক্ষার স্বীকৃতি রাষ্ট্র বা সরকার দিতে পারে না। এর উদ্দেশ্য একটাই, আল্লার সন্তুষ্টি লাভ। মাদ্রাসার যেসকল ছাত্র সরকারের স্বীকৃতি বা চাকরিবাকরির লোভে তাদের দীর্ঘ শিক্ষা জীবনের ত্যাগকে রাষ্ট্র ও পুঁজির কাছে বিকিয়ে দিতে চাইছেন তারা আল্লাহহর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে স্বোইরশাসকদের দরবারে ভিক্ষা করতে নেমেছেন। আধুনিক ভোগী সমাজ দ্বারা বিভ্রান্ত।

ইহলোকে জন্ম লাভ করেছে বলেই মানুষ জন্মসূত্রে আল্লার খলিফা হয়ে যায় না। দাবি অতোটুকুই যে আল্লার খলিফা হওয়ার সম্ভাবনা কিম্বা অপরিসীম সম্ভাবনা নিয়েই মানুষ ইহলোকে জন্মগ্রহ করে। যদি এতোটুকু আমরা বুঝি যে মানুষের মধ্যে এই অপার সম্ভাবনা আছে, আর কোরানুল করিম সেটাই দাবি করে, তাহলে মাদ্রাসা ব্যবস্থায় শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে  মানুষের দিব্য সত্তার বিকাশ। এই দাবির মর্মার্থ কারো না বোঝার কথা নয়। মাদ্রাসার ভাষায় এই বিকাশকেই বলা হয়, ‘সাচ্চা মুসলমান’ তৈয়ারি। মেনে নেওয়া যাক যে 'সাচ্চা মুসলমান' বানানো কথাটা সেকুলার ভাষা নয়; হতে পারে ঐতিহাসিক কারণে এর পেছনে সম্প্রদায়গত চেতনা কাজ করে। তা নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় 'শিক্ষা'র ধারণা সম্পর্কে ওয়াকিভাল না থাকা এবং তথাকথিত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে 'আদর্শ' শিক্ষা গণ্য করার কোন যুক্তি নাই।  

কোরানি শিক্ষা শেখা আর শেখানো - অর্থাৎ আদম সন্তান হিসাবে যে অপার সম্ভাবনার ঘোষনা আল্লা কোরানুল করিমে দিয়েছেন শিক্ষার্থীর মধ্যে সেই রূহানি শক্তির বিকাশ ঘটানোই কওমি মাদ্রাসার কাজ। এর সঙ্গে যুক্ত দুনিয়া ও আখেরাতে নিজেদের মুক্তি ও সাফল্য; দ্বিতীয়ত ঈমান আমল ও আখলাক গঠনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের রূহানিয়াতের শক্তি দৃঢ় করা যার অভাব ঘটলে বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকা অসম্ভব এবং তৃতীয়ত দ্বীন কায়েম, সংরক্ষণ ও প্রচার, ইত্যাদি। আলেম ওলেমারা এই কথাগুলোই বলেন; শক্তিশালী রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে বাংলাদেশের বিকাশের জন্য এর প্রতিটি দিকই নিয়েই তর্কবিতর্ক জরুরী। সেই দিকে না গিয়ে ঢালাও ভাবে মাদ্রাসা শিক্ষাকে নাকচ করা অযৌক্তিক।

যাদের কোরান হাদিস সম্পর্কে কোন ধারণা নাই, তাদের পক্ষে ধর্মীয় পরিভাষার অর্থ বোঝা কঠিন। একই কথা আমরা সেকুলার ভাষায় বলতে চাইলে বলতে পারি মানুষের মধ্যে অপার সম্ভাবনা বিরাজ করে এবং মানুষের অপার সম্ভাবনাময় সেই দিব্যসত্তার বিকাশই শিক্ষার উদ্দেশ্য। আশা করি বোঝাতে পেরেছি মাদ্রাসা শিক্ষাসহ যে কোন শিক্ষা ব্যবস্থার তর্ক শেষাবধি ‘মানুষ’ সংক্রান্ত দার্শনিক বিচার বা দার্শনিক তর্কের সঙ্গে যুক্ত। যা গোড়ার প্রশ্ন না তুলে অগ্রসর হতে পারে না।

কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা নিয়ে আলেম ওলেমাদের সঙ্গে তর্ক হতেই পারে। কিন্তু মাদ্রাসা পশ্চাতপদ কিম্বা দ্বীনি শিক্ষার ধারণা ‘যুগোপযোগী’ নয় ইত্যাদি অনুমান নিতান্তই পাশ্চাত্যের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গীরই নামান্তর। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষাকে ‘যুগোপযোগী’ করার অর্থ শিক্ষাকে পুঁজি বাজারের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করবার কারখানা এবং পুঁজিতান্ত্রিক জালিমী সমাজ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখবার জন্য জাহেলি মতাদর্শ মজবুত করা। ‘যুগোপযোগী’ হবার বিরোধিতা করবার মধ্য দিয়ে মাদ্রাসা পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিপরীতে নিজেকে জারি রাখে। এখানেই ‘আধুনিক’ শিক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসা – বিশেষত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার মৌলিক পার্থক্য। এই দিকটি আমি এর আগেও আমার লেখায় উল্লেখ করেছি। যারা বিদ্যমান পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিরোধী তাঁরা কওমি আলেম-ওলেমাদের সঙ্গে এই প্রতিরোধ কিভাবে আরো জোরদার করা যায় সেই বিষয়ে অবশ্যই কথা বলবেন। একই সঙ্গে সম্ভাব্য মৈত্রী ও পার্থক্যের ক্ষেত্রগুলো বোঝার চেষ্টাও অব্যাহত রাখবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। সেই ক্ষেত্রে সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ও শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে কওমি মাদ্রাসার আলেম-ওলেমাদের সমর্থনের মধ্য দিয়েই অগ্রসর হতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে ‘যুগোপযোগী’ করবার পুঁজিতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদী দাবির পক্ষে দাঁড়িয়ে সেটা হবে না।

গোড়ার চিন্তা: শিক্ষার দরকারই বা কি?

গোড়ার চিন্তা কথাটা কথা প্রসঙ্গে উঠেছে। এই বিষয়ে দুই একটি কথা বলা দরকার। গোড়ার চিন্তা মানে কেমন? অর্থাৎ কী বোঝাতে চাইছি? সহজ মানে হচ্ছে যে চিন্তা বা অনুমানের ওপর দাঁড়িয়ে কোন একটি বিষয় বা যুক্তি আমরা খাড়া করি। গোড়ার চিন্তা সবসময়ই সহজ এবং সরল হতে বাধ্য। অর্থাৎ যা নিয়ে যে কোন মানুষই ভাবতে সক্ষম। ভাবেও, কারণ মানুষ মাত্রই ভাবুক।

শিক্ষা বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেবার জন্য আমরা আজকাল ‘বিশেষজ্ঞ’দের দেখি। বিশেষজ্ঞ নির্ভরতা আমাদের কোন বিষয়ের গোড়ার কথা বুঝতে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তথাকথিত ‘বিশেষজ্ঞতা’ বা যাকে ইংরেজিতে স্টাইলাইজড চিন্তা বলা হয় – বিশেষ কায়দায় রপ্ত করা ভাষায় কথা বলা বা প্রশ্ন করা – সেটা সজীব চিন্তার জন্য বিপদ ডেকে আনে। সাধারণ মানুষকে কায়দাদুরস্ত বিশেষজ্ঞ চিন্তা টেররাইজ করে। আতংকিত করে তোলে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধারণা জাগিয়ে তোলা হয় যে তার স্বাভাবিক চিন্তা কোন চিন্তাই নয়। ‘শিক্ষিত’ বা বিশেষজ্ঞদের মতো কথা না বললে সেটা চিন্তা না। ফলে শিক্ষা সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞরা যখন কথা বলেন তখন সাধারন মানুষ মনে করে শিক্ষা নিয়ে কোন চিন্তা করবার অধিকার বা ক্ষমতা কিছুই তাদের নাই। কারন তারা বিশেষজ্ঞদের ভাষায় কথা বলতে পারে না। জ্ঞান বিজ্ঞান দর্শন ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে এটা সত্য। আলেম ওলেমারাও মনে করেন ধর্ম নিয়ে তাঁরা ছাড়া আর কেউ কথা বলতে পারবেন না, ধর্ম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেবার অধিকারী শুধু তাঁরা, তাঁরাই ধর্ম বিষয়ে ‘বিশেষজ্ঞ’। সজীব চিন্তার জন্য মুশকিল সর্বত্র, সবদিকেই।

তাহলে গোড়ার চিন্তা যদি সরল ও সহজ ভাবে চিন্তার ক্ষমতা হয় তাহলে সেটা কোন স্টাইলাইজড বা বিশেষজ্ঞ চিন্তা না। অতি সাধারণ মানুষ শিক্ষা নিয়ে যে সকল প্রশ্ন করে আমরা সেই সকল প্রশ্নের কথাই বলছি। যে সকল সহজ সরল প্রশ্ন ঘিরে তার চিন্তার আবর্তন ঘটে, যার ওপর সমাজের গতিপ্রকৃতি নির্ভর করে সেই সকল সওয়াল প্রায়ই আমাদের মনোযোগের বাইরে থেকে যায়। সেই সকল প্রশ্ন সাধারন মানুষ বিশেষজ্ঞদের সামনে করতে সাহস পায় না। কারন অনেক সময় বেকুবদের সমাজে তাকে বেকুব হয়ে যেতে হয়। স্টাইলাইজড বা বিশেষজ্ঞবাদী চিন্তা, নীতি, পরিকল্পনা ইত্যাদির কারণে পুরা সমাজ বেকুবদের সমাজে পরিণত হতে পারে। কারন তখন মানুষের চিন্তা বা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবুকতা বিশেষজ্ঞদের সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়। সমাজে তখন সহজ, সাবলীল স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তার আর কোন নির্ধারক ভূমিকা থাকে না। সমাজে বিদ্যমান মতাদর্শ ক্রমে ক্রমে পাথর হয়ে সমাজের চিন্তাশীলতার টুঁটি টিপে ধরে। বিদ্যমান ‘মত’ বা ‘মতাদর্শে’র শৃংখল থেকে সমাজ আর বেরুতে পারে না। খাবি খেতে থাকে। তখন মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ গোড়ার প্রশ্নও হয়ে ওঠে বেকুবের মতো প্রশ্ন। অধিকাংশ সময় বেকুবদের জগতে চিন্তাশীল প্রশ্নও বেকুব প্রশ্ন হিসাবেই হাজির হয়। চিন্তাশীল প্রশ্নও বেকুবের মতো শোনাবে বলে আমরা ভয়ে আর করি না, করতে চাই না। গোড়ার চিন্তার চরিত্র এমনই। অথচ মানুষের জীবনের জন্য সহজ সরল এবং অ্নেক সময় বেকুবের মতো চিন্তাগুলোই সবচেয়ে বেশী জরুরী এবং উপকারী।

আশা করি বোঝাতে পেরেছি গোড়ার চিন্তা মানে তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের চিন্তা নয়। যেমন শিক্ষা সম্পর্কে খুবই সাধারণ অথচ গোড়ার একটি প্রশ্ন হচ্ছে তথাকথিত ‘শিক্ষা’র দরকারটাই বা কি? এটা তো আসলে সহিংস না হলেও এক প্রকার বল প্রয়োগের মতো যাতে একটি শিশু বা কিশোরকিশোরির চিন্তা ভাবনা দৃষ্টিভঙ্গিকে বিদ্যমান সমাজের অধিপতি চিন্তার অধীনে নিয়ে আসা হয়। নিয়ে আসা হয় তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য, তাকে বিদ্যমান মতাদর্শের দাসে পরিণত করাই তো শিক্ষার কাজ।

এই ধরনের শিক্ষার পরিণতি ভয়ংকর। এখন আমরা যাকে শিক্ষা বলি তার কাজ হচ্ছে আমাদের শিশুদের ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী মতাদর্শের গোলাম তৈরি করা। ইউরোপের কাছ থেকে আমরা শিখব না তা নয়। কিন্তু তা নির্বিচার হতে পারে না। কিন্তু আজও আমরা অনুকরণ ছাড়া আর কোনকিছুই স্বাধীন ভাবে করতে জানি না। পরাধীন মনমানসিকতা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া ভয়ংকর ব্যাপার। পরাধীনতার চর্চাকেই আমরা বলি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ইত্যাদি। তাহলে এই শিক্ষার কী দরকার যা আমাদের আজও গোলাম করে রাখে? স্বাধীন ও স্বতঃস্ফুর্ত সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে যে শিক্ষার কোন ভূমিকাই নাই সেই শিক্ষা দিয়ে আমরা কী করব? শিক্ষা নিয়ে যদি আমরা গোড়ার চিন্তা শুরু করি তাহলে এই দিকগুলো নিয়েই তো ভাবতে হবে। তখন আমাদের প্রথম কাজ হয়ে ওঠে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা উৎখাত, নিদেন পক্ষে তার সংস্কার বা রূপান্তর। কিন্তু ইন্টারেস্টিং দিক হোল, আমরা সেটা বলি না। আমরা বলি, কওমি মাদ্রাসাসহ সকল ধর্মীয় শিক্ষালয়গুলোকে ‘আধুনিক’ করতে হবে। কারন কি? এর কারন আমাদের পরাধীন চিন্তায় আমরা যাকে ‘শিক্ষা’ বলি তার সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা মেলে না। অতএব মার্কিন যুদ্ধের নীতি প্রয়োগ করে আমরা বলতে থাকি মাদ্রাসাগুলো ভাঙ্গো, তাদের জন্য নতুন শিক্ষা আইন ও শিক্ষা নীতি চাপিয়ে দাও, ইত্যাদি।

মাদ্রাসা ধোয়া তুলসি পাতা নয়। তারও পর্যালোচনার দরকার আছে। সাধারণ মানুষ সেটা করেও বটে। মাদ্রাসা শিক্ষারও সংস্কার দরকার আছে। সেটা তর্কের বিষয় নয়। আমি মনে করি আলেম ওলেমারা সেটা চান এবং কিভাবে সেটা সম্ভব সে ব্যাপারে তাঁরা যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন। কথা হচ্ছে একমুখী শিক্ষা, সবার জন্য একই রকম শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা – এই সব কিছুরই উদ্দেশ্য নিজেদের স্বাধীন বিকাশের কথা না ভেবে পরাধীনতা ও অনুকরণের অন্ধকারে খাবি খাওয়া। পরাধীন থাকার প্রক্রিয়া জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়া। বলাবাহুল্য আলেম, ওলেমা মাশায়েখরা তার বিরুদ্ধে লড়ছেন। তাঁরা ‘আধুনিক’দের মতো পরাধীন মনের অধিকারী নন।

যদি দর্শনের বৃহৎ পরিসর বাদ দিয়ে আমরা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে শিক্ষা নিয়ে গোড়ার প্রশ্ন তুলি তাহলে কিভাবে সেটা তুললে ফলপ্রসূ হতে পারে? না হয় আরও সহজ জায়গায় আসি। আমরা দাবি করি যে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা গণতন্ত্র চর্চা করতে চাই। সকলে গণতন্ত্র চায়! হা হা হা। সেটা না হয় মেনে নিলাম। তাহলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিচার খুবই গুরুতর একটি বিষয়। কিভাবে সেই সম্পর্ক আমরা বিচার করব? সেই ক্ষেত্রে অর্থাৎ গণতন্ত্রের দিক থেকে শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত গোড়ার চিন্তা কি হতে পারে? সেটা এবস্ট্রাক্ট বা বিমূর্ত চিন্তা হলে হবে না। খুব কংক্রিট ও ঐতিহাসিক হতে হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আসলে সিস্টার্স অব দ্য হোলি নেইমস অফ জেসাস এন্ড মেরির কথা মনে পড়েছিল। পরের কিস্তিতে এ নিয়েই কথা বলব।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।