৩. গণতন্ত্র ও শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্ক


নাগরিক অধিকার ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা

শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ গণতান্ত্রিক আদর্শ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সংক্রান্ত ধারণার বিরোধী। এ দিকটি বাংলাদেশে খুবই অস্পষ্ট। যার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কেন চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের বিরোধী, অতএব গণবিরোধী ও ফ্যাসিস্ট, সেটা আমরা সহজে বুঝতে পারি না।  অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা নানা ভাবে শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করে বা করবার চেষ্টা করে: যেমন ‘একই পদ্ধতি’র শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন, শিক্ষার কারিকুলাম, কিম্বা শিক্ষার্থীরা কি পড়বে বা না পড়বে তা নিয়ন্ত্রণ, পাঠ্য বিষয় নির্ধারণ, ইত্যাদি। রাষ্ট্রকে সমাজের উর্ধে হাজির ঐশ্বরিক ও সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন সত্তা হিসাবে গণ্য করবার কারণে এই ধরণের অগণতান্ত্রিক গণবিরোধী ও ফ্যাসিস্ট চিন্তা বাংলাদেশের সমাজে জারি রয়েছে। যে কারনে শিক্ষাকে রাষ্ট্রের কুক্ষিগত করাই উচিত -- এই ধরণের অবিবেচক চিন্তায় আমরা সহজে সায় দিতে কসুর করি না।

শিক্ষা ব্যবস্থা চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িত একটি বিষয়। কাণ্ডজ্ঞানেই বোঝা যায় সেটা রাষ্ট্রের একতরফা নিয়ন্ত্রণ গণতন্ত্রের মৌলিক অনুমান ও নীতির সম্পূর্ণ বিরোধী একটি ধারনা। গণবিরোধী ও গণতন্ত্র বিরোধী  ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র শুধু সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে  সেটা একদমই ভুল ধারণা। রাষ্ট্র শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর একাট্টা নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়েও চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করে, চিন্তা ও বিবেকের বিকাশের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর রাষ্ট্রের প্রধান ও প্রকট হস্তক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম। চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার আলোকেই আধুনিক গণতন্ত্র ধর্মচর্চা ও ধর্মশিক্ষার স্বাধীনতা বিচার করে। বলা বাহুল্য, তথাকথিত আধুনিক গণতন্ত্র যেসব দেশে কায়েম আছে বলে আমরা জানি সেই সকল দেশে গণতন্ত্র ও শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্ক একই রকম নয়। তবে এই সম্পর্ক বিচারের জন্য যে বিষয়গুলো আমাদের নজরে রাখা দরকার তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা আমাদের বর্তমান আলোচনার জন্য প্রাসঙ্গিক। মার্কিন আদালতের একটি রায় আছে,  যে রায় পর্যালোচনা করলে মার্কিন গঠনতন্ত্রের আলোকে শিক্ষা ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক  নির্ণয়ের সূত্রগুলো আমরা সহজে বুঝতে পারি।  সিস্টার্স অব দ্য হোলি নেইমস অফ জেসাস এন্ড মেরি নামটি আদালতের তেমনি একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই মনে পড়েছিল। এখানে এখন সেই প্রসঙ্গেই লিখছি।

অন্য যে কোন ধর্মাবলম্বীদের মতো খ্রিস্ট ধর্মও বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও চর্চায় বিভক্ত, যার মধ্যে ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্ট বিভক্তি প্রকট।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন দেশে বিস্তর অভিবাসীর আগমন ঘটেছিল।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রটেস্টানদের প্রাধান্য। অভিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাস যেন সমাজকে ‘কলুষিত’ না করে তা ঠেকাবার জন্য প্রটেস্টান্ট অধিবাসীরা পাবলিক বা সরকারী স্কুলগুলোকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার কথা ভাবল। প্রটেস্টন্টরা বিশেষ ভাবে ভয় পাচ্ছিল ক্যাথলিকদের।

যদি সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে বেসরকারি প্রাইভেট শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকে তাহলে সমাজে ক্যাথলিক চিন্তার শক্তি বৃদ্ধি হয়। তো এর সমাধান হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  অরেগন অঙ্গরাজ্য হাতিয়ার হিসাবে শিক্ষা আইন ব্যবহারের উদ্যোগ নিল। তারা ৭ নভেম্বর ১৯২২ সালে তাদের ‘বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন’(Compulsory Education Act) সংশোধন করল। যে সকল ধর্মীয় স্কুল সরকার বা রাষ্ট্রের কোন সহায়তা বা হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজেদের অর্থে ও স্বাধীন ভাবে পরিচালিত হচ্ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য। জনগণের চাঁদায় জনগণ নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা --  বিশেষত ধর্ম শিক্ষা –যার মধ্যে ক্যাথলিক ইস্কুলগুলো বিশেষ ভাবে অন্তর্ভূক্ত -- সেই শিক্ষা বেসরকারী পর্যায়ে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেন চালু থাকতে না পারে তা নিশ্চিত করাই ছিল বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য।  ক্যাথলিক কিম্বা অন্য বিশ্বাসে দীক্ষিত বা শিক্ষিত হয়ে যাবার ভয় থেকেই  অরেগন রাজ্যের শিক্ষা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়।

বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইনে ৮ থেকে ১৬ বছর বয়েসীদের অবশ্যই সরকারী বিদ্যালয়ে আসতে হোত। কিন্তু সেখানে ব্যাতিক্রম ছিল। যারা ঘরে বসে পড়ছে, বা অন্যত্র বেসরকারী উদ্যোগে পড়ছে, তারা তাদের মতো করে পড়ত। তাছাড়া প্রাইভেট বেসরকারি স্কুল তো ছিলই।  রাজ্য সরকার বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার মান ঠিক আছে কিনা তার ওপর নজর রাখতে পারত, মান ঠিক থাকলে তা স্বীকার করত বা মেন নিতো। একে ইংরেজিতে  accredition বলা হয়। এটা শিক্ষার পদ্ধতি বা শিক্ষার কারিকুলাম নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং শিক্ষালয়গুলোর কারিকুলাম ও নিজের মতো করে পাঠদান ও শিক্ষা পদ্ধতির স্বীকৃতি। নতুন সংশোধনী এই সুযোগ বা ব্যাতিক্রমগুলোকে নাকচ করে দিল। নতুন আইন হোল, পাবলিক ইস্কুলের বাইরে আর কোন পড়াশুনা হবে না। সকলকেই রাজ্য বা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনাধীন শিক্ষা ব্যবস্থার অধীন হতে হবে।

নতুন সংশোধন কার্যকর হোল ১ সেপ্টেম্বর ১৯২৬। কিন্তু বেসরকারী স্কুলগুলো এই আইন মেনে নিলো না। এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিরোধিতা দেখা গেল। এক প্রকার বিরোধিতা ছিল বেসরকারি হিলার মিলিটারি একাডেমির পক্ষ থেকে। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে নালিশ জানালো। তাদের কথা হোল প্রাইভেট স্কুল হিসাবে এই আইন বা নতুন সংশোধনী তাদের বেসরকারী ব্যবসার অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে। শিক্ষা বেচাকেনারও বিষয়। অতএব নাগরিক হিসাবে সেকুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমি কাকে কি শিক্ষা দেবো সেটা আমার এবং আমার দেওয়া শিক্ষা যারা তাদের  সন্তানদের জন্য চাইছে তাদের বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র আমার ব্যবাসায়িক অধিকার ক্ষুণ্ণ করবার  সংশোধনী আনতে পারে না। দ্বিতীয় প্রকার নালিশ নিয়ে আদালতে গেল সোসাইটি অব দ্য সিস্টার্স অব দ্য হোলি নেইমস অব জেসাস এন্ড মেরি। একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সিস্টার্স  ব্যবসার কথা তুলেছিল, কিন্তু সেটা ছিল গৌণ। কোথায় নিজেদের বাচ্চাদের  পড়াবে কি পড়াবে না মা বাবার সেটা পছন্দ করবার অধিকারের কথা তারা তুলেছিল। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ধর্ম চর্চার অধিকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ধর্ম চর্চার অধিকারে হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। এটা প্রাইভেট ব্যাপার। সরকারি স্কুলে ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি আছে, কারন সরকারী স্কুলের পয়সা রাষ্ট্র জোগায়। কিন্তু বেসরকারি প্রাইভেট স্কুলে মা বাবারা কোথায় তাদের সন্তানদের পড়াবে সেটা রাষ্ট্র বা সরকার নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। এটা তাদের প্রাইভেট ব্যাপার। এই ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নীতির পরিপন্থি।

এই নালিশের ভিত্তিতে আদালতে যে সওয়াল জবাব ও রায় তা সেকুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্ক বিচার সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯২৫ সালে সওয়াল-জবাব হয়। রায় দেওয়া হয় ১ জুন ১৯২৫ সালে। এই বিচার ‘পিয়ার্স বনাম সোসাইটি অফ সিস্টার্স অফ দ্য হোলি নেইমস অব জেসাস এন্ড মেরি’ নামে পরিচিত। 

সিস্টার্সের নালিশ ছিল এই যে, the enactment conflicts with the right of parents to choose schools where their children will receive appropriate mental and religious training, the right of the child to influence the parents' choice of a school, the right of schools and teachers therein to engage in a useful business or profession. (268 U.S. 510, 532).

(নতুন সংশোধিত) আইন গৃহীত হওয়া আত্মিক ও ধর্মীয় শিক্ষা সন্তানরা কোথায় ঠিকঠাক পাবে অভিবাবকদের সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার, কোন্‌ স্কুল বাচ্চার পছন্দ সি ব্যাপারে বাবামায়ের মতামত শিশুর প্রভাবিত করারা অধিকার, স্কুল প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষককদের নিজেদের দরকারি ব্যবসা ও পেশায় নিয়োজিত হবার অধিকার ইত্যাদির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।। অর্থাৎ শিক্ষা আইনের সংশোধনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বিল অব রাইটসের বিরোধী, যেমন, স্বাধীন ভাবে ধর্ম চর্চা করবার অধিকার। দ্বিতীয়ত, সম্পত্তি রক্ষা। স্কুলের সঙ্গে বাচ্চাদের বাবা মায়ের ব্যবসায়িক চুক্তি রয়েছে, যা স্কুলের আর্থিক আয়ের উৎস। তাহলে সম্পত্তি রক্ষা করবার রাষ্ট্রীয় দায়ও শিক্ষা আইন সংশোধনীর ফলে লংঘিত হয়েছে।

অরেগন রাজ্যের এই বিচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রায় বেসরকারী স্কুলের পক্ষে গিয়েছে। রায় সিস্টার্স অফ দ্য হোলি নেইমস অব জেসাস এন্ড মেরিঢ় পক্ষে গিয়েছে বলে আমরা তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলছি না। গণতন্ত্র ও শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্কের চরিত্র নির্ণয়ের জন্য এই রায়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে রয়েছে। বিচারকরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে নতুন সংশোধনী মার্কিন সংবিধানের বিরোধী। নাগরিকদের গণতান্ত্রিক বা নাগরিক  অধিকার এই সংশোধনী ক্ষুণ্ণ করে। অতএব তা বাতিল। যে যুক্তিতে আদাদলত তা বাতিল করেছে সেই যুক্তিই এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। সারকথা হচ্ছে, গণতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে স্বাধীন ভাবে ধর্ম চর্চার অধিকার। ধর্ম শিক্ষা দেওয়া ও পাওয়া সেই অধিকারের অংশ। রাষ্ট্র তা কেড়ে নিতে পারে না।

সওয়াল-জবাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিস্তারিত আলোচনার চেয়েও ইস্যুটিকে আপাতত ধরিয়ে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।

একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র পক্ষ থেকে এরকম দাবিও করা হয়েছিল শিশুরা হচ্ছে ‘রাষ্ট্রের শিশু’, অতএব রাষ্ট্রের এখতিয়ার রয়েছে আগামি দিনের নাগরিক ও ভোটার কী ধরনের শিক্ষা পাচ্ছে  তা নিয়ন্ত্রণ করার।  রাষ্ট্রের এই এখতিয়ার অভিবাবকদের এখতিয়ারের উর্ধে। রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেছিল রাষ্ট্রের এই এখতিয়ার অভিভবাবকরা কোথায় বাচ্চা পড়াবে এবং শিক্ষার্থী কী ধরণের শিক্ষা চায় সেই বিষয়ে তার মা বাবাকে প্রভাবিত করবার অধিকারকে অতিক্রম করে যায়। অর্থাৎ অভিবাবকদের অধিকার নাকচ করে রাষ্ট্রের অধিকার কায়েম করাই রাদালতের কর্তব্য। এই যুক্তিতে রাষ্ট্রপক্ষের উকিলদের দাবি ছিল শিক্ষা আইন সংশোধনী বৈধ। রাষ্ট্র তার এখতিয়ারের মধ্যে থেকেই আইন সংশোধন করেছে।

স্কুলের পক্ষে বলা হোল ইস্কুল শিশুদের কিভাবে  শিক্ষা দিচ্ছে রাষ্ট্র তা মনিটর বা তদারকি করুক, ঠিক আছে,  কেউই রাষ্ট্রের সেই অধিকারের  বিরোধিতা করছেন না। এতে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু রাষ্ট্র চাইছে পুরা শিক্ষাব্যবস্থার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই ধরণের ক্ষমতা রাষ্ট্রের নাই, থাকতে পারে না। বাচ্চারা কোথায় যাবে কি শিক্ষা নেবে তা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার রাষ্ট্রকে দেওয়া যায় না। এটা মার্কিন সংবিধানের পরিপন্থি।

দশ সপ্তাহ ধরে সওয়াল জবাব চলে। বিচারকদের একজন বললেন, বাচ্চারা ‘রাষ্ট্রের জীবজন্তু নয়’ (not the mere creature[s] of the state)। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী লিবার্টি বা স্বাধীনতা কথাটার প্রকৃতি এমন যে শিক্ষার্থীরা কোথায় কিভাবে শিক্ষা নেবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া রাষ্ট্রের কাজ না। এই জবরদস্তি খাটাবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে নিরস্ত করা হয়েছে।  শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয় থেকে সরকারি শিক্ষাই ছাত্রদের নিতে হবে এই জবরদস্তি রাষ্ট্র করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে দায়িত্ব গার্ডিয়ান বা বাচ্চাদের বাবা মা বা অভিভাবকদের। মার্কিন সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এই এখতিয়ার বাবা মা ও অভিভাবকদের  দিয়েছে।

তবে রাষ্ট্রের আইনের দ্বারা কোন ব্যবসায়িক সংগঠন বা করপোরেশানের ক্ষতি হলে তাদের ক্লিয়েন্টদের সঙ্গে করা কোন চুক্তিকে ‘সম্পত্তি’ বিবেচনা করে রক্ষা করতে হবে আদালত তা মেনে নেয় নি। অর্থাৎ বেসরকারি স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের বাবামার সঙ্গে শিশুদের শিক্ষা দেবার যে ‘চুক্তি’ করেছে নতুন শিক্ষা আইনের সংশোধনীর কারণে তাতে স্কুলের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে এই নালিশ আদালত মেনে নেয় নি। তবে আদালত বলেছে, অন্যায় বা অবৈধ ভাবে চাপিয়ে দেওয়া আইনে ক্ষতি করবার অধিকার রাষ্ট্রের নাই।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের চরিত্র বিচার সম্পর্কে এই রায় একটি যুগান্তকারী রায় বলে গণ্য করা হয়। এই রায়ে  শিক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের এখতিয়ারের সীমা যেমন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, একই ভাবে বাবা মা বা অভিভবাকরা কোথায় তাদের সন্তানদের পড়াবেন তার অধিকারকেও গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকার হিসাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। সেকুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ধর্মকে ব্যাক্তিগত ব্যাপার বলে গণ্য করে বটে, কিন্তু একই সঙ্গে ধর্ম চর্চার পূর্ণ অধিকার – যার মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া ও নেবার অধিকার অন্তর্ভূক্ত – সেই অধিকারও মান্য করে।

গণতন্ত্রে রাষ্ট্র ও শিক্ষাব্যবস্থার সম্পর্ক কি? এটা তাহলে একালে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। যদি এই প্রশ্ন সহজ ও সরল ভাবে আমরা তুলতে শিখতাম তাহলে ব্যবহারিক বা আইনী  দিক থেকে এর মীমাংসা কি হতে পারে তার খোঁজও আমরা করতাম।মার্কিন আদালতে শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে অরেগন রাজ্যের সংশোধনীর বিরুদ্ধে সিস্টার্স অব দ্য হোলি নেইমস অফ জেসাস এন্ড মেরির নালিশ ও তার রায় সম্পর্কে আমরা তাহলে জানতাম।পাশ্চাত্যকে যারা আদর্শ গণ্য করেন আধুনিক রাষ্ট্র ও শিক্ষাব্যবস্থার সম্পর্ক সেখানে কিভাবে দর্শন,আইনী বিধিবিধান ও ব্যবহারিক চর্চার মধ্যে গড়ে উঠেছে সেই ইতিহাস তাদের – বিশেষত সেকুলারদের জানা কর্তব্য ছিল। 

আসলে গণতন্ত্রে বাংলাদেশের তথাকথিত গণতন্ত্রী ও সেকুলারবাদিদের বিশেষ আগ্রহ নাই। আমাদের উৎসাহ ফ্যাসিবাদে। আমরা ইসলাম নির্মুল করতে চাই। মাদ্রাসা তুলে দিতে চাই। সেটা চাই ‘একমুখী শিক্ষা’, যুগোপযুগী শিক্ষা ইত্যাদি নানান কিসিমের বেয়াড়া চিন্তার মাধ্যমে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীভূত ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের অধীনস্থ করার প্রতি আমাদের উৎসাহ প্রবল। পাশ্চাত্য গণতন্ত্র কিম্বা সেকুলার চিন্তার ধারার একটা ইতিহাস আছে এবং একালে তার উপযোগিতা এই জন্যই বলেছি শিক্ষা নিয়ে যেসব লেখালিখি পড়ি তার অধিকাংশই আবর্জনা ছাড়া কিছু না।

এতোটুকু যদি বুঝি তাহলে  ১৭ অক্টোবর আলেম ওলেমারা মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা ষল আনা গণতান্ত্রিক দাবি, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে একশ ভাগ সঙ্গতিপূর্ণ। এর সঙ্গে মাদ্রাসা বা ধর্মীয় শিক্ষার সম্পর্ক একান্তই বাহ্যিক। অর্থাৎ দাবিদাওয়া কওমি মাদ্রাসার স্বাধীনতায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা শুরু নয়, ধর্মশিক্ষা ও ধর্ম চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ধর্মীয় শক্ষা সংক্রান্ত ইস্যু না, বরং রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে বাধ্য করারা দাবি। আলেম ওলেমাদের দাবি বলে এটা ইসলামি দাবি নয়। বরং তাঁদের দাবি দাওয়া একান্তই গণতান্ত্রিক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্ক বিচারের প্রশ্নই তাঁরা তুলেছেন।  এইখানে ইসলামি কিছু নাই। আছে গণতন্ত্রের সারকথা আছে। গণতন্ত্রে ধর্ম চর্চা ও ধর্ম শিক্ষার স্বাধীনতা থাকতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে আলেম ওলেমারা যে আন্দোলন করছেন তা চরিত্রের দিক থেকে অতএব একান্তই গণতান্ত্রিক আন্দোলন। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এবং কিভাবে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়েছে তা অনুসরণ করেন তারা কওমি মাদ্রাসার আন্দোলন সমর্থন করবেন।

কওমি আলেম ওলেমারা বলছেন,

১. প্রস্তাবিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষানীতি ২০১২ এবং তার আলোকে তৈরি  কওমি মাদ্রাস শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৩ এর খসড়া বাতিল করতে হবে।

২. ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬’ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সকল কার্যক্রম বাতিল করতে হবে। যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করার নামে কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য বিলুপ্ত হয় এমন যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সরকারকে বিরত থাকতে হবে।

৩. দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের সন্তানদেরকে ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা দেওয়া ফরযে আইন। আবহমান কাল থেকে এ ফরযে আইনের কাজটিই আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। এই অধিকার নিশ্চিত করা ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করবার রাষ্ট্রীয় দায়ের সঙ্গে যুক্ত। রাষ্ট্র ধর্ম শিক্ষায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এটা রাষ্ট্রের কাজ না। গণতান্ত্রিক বিদ্যমান সকল নূরানি মক্তব, হাফেজিয়া ও কওমি মাদরাসা, পুরাতন ও নতুন মক্তব, হাফেজিয়া ও কওমি মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনাকে সরকারী নিবন্ধনের আওয়াতামুক্ত রাখতে হবে। 

৪. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এবং তার আলোকে প্রণীত শিক্ষা আইন ২০১৬ এর খসড়া অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। কারন এগুলো গণতান্ত্রিক রীতি নীতির বিরোধী।

তাঁদের এই দাবিগুলো আমি সমর্থন করি। যারা নিজেকে গণতন্ত্রী ভাবেন এই দাবি তাদের সমর্থন করা করাকর্তব্য। কওমি মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে আলেম-ওলেমাদের প্রতিটি দাবি গণতান্ত্রিক অধিকারের সঙ্গে পুরাপুরি সঙ্গতিপূর্ণ। সমাজে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে তাদের এই আন্দোলন ও সংগ্রামের তাৎপর্য আশা করি আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো।

গোড়ার চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ুক
শেষ করার আগে এই লড়াইয়ে প্রাজ্ঞ আলেম-ওলেমাদের অবগতির জন্য আন্তর্জাতিক বিধিবিধান ও মানবাধিকারের দিক থেকে দুই একটি বিষয় সবসময় মনে রাখতে অনুরোধ করছি। শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক বিচারের তর্কে যে বিষয়টা বারবারই পাশ্চাত্যে সামনে এসেছে সেটা হোল অভিভাবকদের অধিকার। মা বাবা অভিভাবকরা কোথায় তাদের বাচ্চাদের পড়াবেন সেটা তারাই ঠিক করবেন। সেই এখতিয়ার মোটেও রাষ্ট্রের না। তাহলে বাংলাদেশের বাবা মায়েরা তাদের সন্তানদের কী ধরণের শিক্ষা দিতে চান সেটা বাবা মায়েদের ব্যাপার। রাষ্ট্র একচেটিয়া একমুখী একরকমের ‘আধুনিক শিক্ষা’ চাপিয়ে দিতে পারে না। এই দিক থেকে কওমি  মাদ্রাসার স্বধীনতা ও স্বাতন্ত্র রক্ষার দাবি শুধু ন্যায়সঙ্গতই  নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই তর্কের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুদের কি ধরণের শিক্ষা দেওয়া হবে সেটা সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার অভিভাবক বা বাবা-মায়েদের, তবে সেটা শিশুর অধিকারের দিক থেকেই সাধারণত দেখা হয়। এই দিক থেকে যে শিশুদের অধিকার রয়েছে তারা যে শিক্ষা পেতে চায় তা পাবার জন্য বাবা মায়ের মতকে প্রভাবিত করবার। জার্মান দেশের সংবিধানে অবশ্য এটা একান্তই বাবা মা বা অভিভাবকদের ‘স্বাভাবিক অধিকার’ বলে তাদের সংবিধানে স্বীকৃত।

দ্বিতীয়ত নাগরিকদের কাছ তোলা ট্যাক্সের টাকা বিশেষ ধরণের একাট্টা শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে রাষ্ট্র ব্যায় করতে পারে কিনা সেটাও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির দিক থেকে তর্কের বিষয়। কওমি মাদ্রাসা একটি প্রাইভেট বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রশ্ন হচ্ছে  সমাজের বৃহৎ অংশকে বাইরে রেখে শিক্ষা আইন ও শিক্ষানীতি প্রণয়নের কোন অধিকার আদৌ কি রাষ্ট্রের আছে? রাষ্ট্র কি শুধু ইসলাম বিদ্বেষী ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের? নাকি জনগণের?  

জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘Parents have a prior right to choose the kind of education that shall be given to their children.’ শিশুদের অধিকার আছে বটে, কিন্তু সবার আগে বাবা মা অভিভাবককরাই ঠিক করবেন তারা শিশুকে কী ধরণের শিক্ষা দিতে চান। নিজের সন্তানকে যদি অভিভাবক কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনার জন্য পাঠায় তবে সেই সিদ্ধান্তের অধিকার রাষ্ট্রের না, সেটা শিক্ষার্থীর বাবা মায়ের। এই অধিকার গণতান্ত্রিক নীতি ও আইন হিসাবে স্বীকৃত। (দেখুন Universal Declaration of the Human Rights, section 26)

কিন্তু বাংলাদেশ এক অদ্ভূত দেশ যেখানে ফ্যসিস্ট শক্তি এই অধিকার নস্যাৎ করতে বদ্ধ পরিকর।
International Covenant on Civil and Political Rights- এর ১৮ অধ্যায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে: চিন্তা, বিবেক ও ধর্ম পালনের অধিকার সকলেরই আছে। সেটা তারা একা একা পালন করুক, কিম্বা সবাই মিলে সামাজিক ভাবে করুক – এই অধিকারের বাত্যয় ঘটানো যাবে না। যেটা জোর দিয়ে বলা হয় সেটা হোল এই পালন বা চর্চা প্রাইভেট কিম্বা প্রকাশ্যে সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে করবার অধিকারও তাদের আছে। প্রকাশ্যে চর্চা হতে পারে এবাদতবন্দেগি বা পূজা-অর্চনা ইত্যাদিতে, কিম্বা যে কোন প্রকার ধর্ম পালন, চর্চা ও শিক্ষা দেবার মধ্য দিয়ে।

সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে ধর্ম চর্চার অধিকার রাষ্ট্র  শর্ত সাপেক্ষে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বটে, তবে সেটা শুধু জন নিরাপত্তা, জন শৃংখলা, জনস্বাস্থ্য কিম্বা অপরের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে কিনা সেইসব দেখভাল করবার জন্য। সেটাও করতে পারে উপযুক্ত আইন ও আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর বলা হয়েছেঃ The States Parties to the present Covenant undertake to have respect for the liberty of parents and, when applicable, legal guardians to ensure the religious and moral education of their children in conformity with their own convictions.

বলা হচ্ছে, যে সকল রাষ্ট্র এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে তারা অভিভাবকদের স্বাধীনতাকে মর্যাদা দেবে যাতে তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী সেই ধরণের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা তাদের সন্তানদের দিতে পারে। এটা পরিষ্কার যে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও অধিকারের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা দেওয়া ও পাবার অধিকার অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। যারা একাট্টা একমুখী শিক্ষার কথা বলে এবং মাদ্রাসাকে রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনবার দাবি তোলে তারা মানবাধিকারের বিরোধী, মানবাধিকারের দুষমন। মানবাধিকার কায়েমের জন্যই এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছাড়া গত্যন্তর নাই। আলেম-ওলেমারা তাদের সংগ্রামকে ইসলামি আন্দোলন ভাবলে ভুল করবেন। এটা গণতন্ত্রের লড়াই। সকল প্রকার হীনমন্যতা ত্যাগ করে তাদের এই সংগ্রাম জোরদার করতে হবে।

একই ভাবে আমরা International Covenant on Economic, Social and Cultural Rights এর section 13, ১৯৬০ সালের ১৪ ডিসেম্বর United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization-এর গৃহীত Convention against Discrimination in Education দেখতে পারি। ইউরোপের অবস্থান বোঝার জন্য দেখতে পারি European Convention on Human Rights (ECHR), Additional Protocol I, section 2, “No person shall be denied the right to education. In the exercise of any functions which it assumes in relation to education and to teaching, the State shall respect the right of parents to ensure such education and teaching in conformity with their own religions and philosophical convictions.”

শেষে আবারও বলি: গোড়ার চিন্তা করবার ক্ষমতা আমাদের বাড়ুক। এটাই আমার কামনা।

২১ অক্টোবর, ২০১৬। ৬ কার্তিক, ১৪২৩, শ্যামলী

( দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত লেখা মাসিক মইনুল ইসলাম  পত্রিকায় প্রকাশের সময় পরিবর্ধন করেছিলাম। এখানে বোঝার সুবিধার জন্য আরেকটু সম্পদনা করেছি– ফ.ম)


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।