মিডিয়াদস্যুতা
গত ২ মার্চ রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মোটামুটি বড় একটা গণ্ডগোল হয়ে গেল। প্রথমে ঘটনা তুচ্ছই ছিল। গাড়ি পার্কিং করা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় (১ মার্চ দিবাগত রাতে) ওই এলাকার এক নিরাপত্তারক্ষী ও এক ছাত্রের মধ্যে। এর জের ধরে ছাত্রটিকে পিটিয়ে আহত করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। বিভিন্ন পত্রিকার খবর অনুযায়ী, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্র শাহরিয়ার হাসনাত তপুকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছাত্রদের এবং স্থানীয় অনেকের অভিযোগ হচ্ছে, ওখানকার নিরাপত্তরক্ষীরা প্রায়ই বাড়াবাড়ি করে থাকেন। কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। এ নিয়ে ওই এলাকায় বাস করা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের মধ্যে একটা ক্ষোভ ছিল । আগের ক্ষোভের সাথে সহপাঠিকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা মিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে নর্থসাউথের কিছু শিক্ষার্থী। তারা তাদের দল ভারী করে পরদিন বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করে। এ জন্য ১ মার্চ দিবাগত রাতে সামাজিক মাধ্যমের সহায়তায় নর্থসাউথের সব শিক্ষার্থীকে, এবং সম্ভব হলে ওই এলাকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নেয়ার আহবান জানায়। ফেসবুকে স্ট্যাটাস, ভিডিও পোস্ট করে তারা তাদের বক্তব্য প্রচার করে। (দেখুন, Assault on students sparks clash' : ডেইলি স্টার)।
এরপর ২ মার্চ সকালে বিক্ষোভ করতে এসে প্রথমে তারা প্রগতি সরণি অবরোধ করে। আবাসিক এলাকাটির ভেতরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর ঘটে। এই ধরণের স্থানীয় ইস্যুকে সঠিক ভাবে পরিচালনার দূরদর্শিতা ছাত্রদের ছিল না, অতি উৎসাহীরও অভাব ছিল না। ফলে মোটামুটি একটা উছৃংখল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্যাংকসহ কয়েকটি অফিসের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে পুলিশ এসে হাজির হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একদিন ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেন। এরপর ওইদিনই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়।
মাঠের পরিস্থিতি শান্ত হলে কী হবে! শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষ হতেই শুরু হয় বসুন্ধরা গ্রুপের তাণ্ডব। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ব্যক্তির সাথে সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতার যে বিষয়টি ছিল, সেটাকে পুঁজি করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমগুলো নামে নতুন জঙ্গি প্রচারণায়। দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সেদিনই অনলাইনে এবং নিউজ২৪ চ্যানেল তাদের বুলেটিনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে ‘জঙ্গি হামলা’ ‘জঙ্গি তাণ্ডব’ বলে অভিহিত করে এক দফা সংবাদ প্রচার করে।
২ মার্চ নিউজ২৪ চ্যানেলে সাড়ে তিন মিনিটের একটি প্যাকেজ রিপোর্ট সম্প্রচার করে ইউটিউবে তা ছেড়ে দেয়া হয়। নিউজ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে রিপোর্টটির শিরোনাম ছিল “তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে ভয়াবহ জঙ্গি তাণ্ডবের অপচেষ্টা নস্যাৎ”। লিংক এখানে https://www.youtube.com/watch?v=iYzfysZhb-c
নিউজ২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে রিপোর্ট
কিছুক্ষণ পর এই ভিডিওটির স্ক্রিপ্টে কথাগুলো কপি করে ভিডিওর লিংকসহ একটা রিপোর্ট প্রকাশ করে কালের কণ্ঠ অনলাইন। রিপোর্টটি শিরোনাম “"ভয়াবহ জঙ্গি তাণ্ডবের অপচেষ্টা নস্যাৎ করলো র্যাব -পুলিশ (ভিডিওসহ)”। লিংক এখানে- http://www.kalerkantho.com/online/national/2017/03/02/469941
এই রিপোর্টের ইন্ট্রোতে লেখা হয়েছে, “তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে ভয়াবহ জঙ্গি তাণ্ডবের অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে র্যা ব আর পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে আর তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে বুধবার মধ্যরাতের পর থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা জুড়ে চরম অরাজকতা তৈরির চেষ্টা চালায় এই জঙ্গি গোষ্ঠি। পেছন থেকে উস্কানি দিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের।” এখানকার টেক্সট নিউজ২৪ এর প্যাকেজ রিপোর্ট থেকে হুবহু ‘ট্রান্সক্রাইব’ করা।
অন্য একটি প্যারায় লেখা হয়েছে, “এদিকে বুধবার রাতে ফেসবুকে এ ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা ছড়িয়ে দেয়া হয়। বলা হয় সবাইকে রাতটা একসঙ্গে পার করে সকাল ১০টায় কালো কাপড় মুখে বেঁধে ঝাপিয়ে পড়তে। তবে জঙ্গিদের এ অপতৎপরতা নস্যাৎ করে দিয়েছে র্যাাব-পুলিশ।”
ঘটনাকে ‘জঙ্গি’ রূপ দিতে যত ধরনের শব্দ/শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা যায় তা করা হয়েছে। ‘জঙ্গি তাণ্ডব’ ‘জঙ্গি গোষ্ঠি’ ‘জঙ্গিদের অপতৎপরতা’ ইত্যাদি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রকাশ করে “ভয়াবহ জঙ্গি তাণ্ডবের অপচেষ্টা নস্যাৎ করলো র্যাব-পুলিশ (ভিডিও)”। লিংক এখানে- http://www.bd-pratidin.com/city-news/2017/03/02/212124 । মূল নিউজটি অনলাইন থেকে সম্ভবত সরিয়ে ফেলেছে পত্রিকাটি। (১২ মার্চ লিঙ্কটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এখন আবার পাওয়া যাচ্ছে। না পাওয়া গেলে ক্যাশে লিংকে গেলে দেখা যাবে।
এই রিপোর্টের ভেতরের টেক্সট নিউজ২৪ এর ভিডিওতে যা বলা হয়েছে তা-ই। ওইদিন বাংলানিউজের এ সংক্রান্ত রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, “তুচ্ছ ঘটনার জেরে তাণ্ডবের অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দিলো র্যাব-পুলিশ”। লিংক এখানে- http://www.banglanews24.com/national/news/bd/557903.details
বাংলানিউজের শিরোনাম কালের কণ্ঠ-বাংলাদেশ প্রতিদিনের মতো একই রকম হলেও ভেতরের টেক্সটে নিউজ২৪ এর স্ক্রিপ্ট এর সাথে আরও বহু কিছু যোগ করা হয়েছে। এটি ছিল দীর্ঘ একটি রিপোর্ড় বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন উপরিউক্ত সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রথম দিনের প্রচারণার মূল বিষয়বস্তু একটিই- নর্থসাউথের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বসুন্ধরায় জঙ্গি হামলা চালানোর চেষ্টা করে পুলিশ-র্যা বের কারণে ব্যর্থ হয়েছে। এই কথাটিকে প্রতিষ্ঠিত করেত যা যা করা প্রয়োজন তা-ই করা হয়েছে।
কিন্তু একই দিন অনলাইনে দেশের অন্যান্য সংবাদমাধ্যমগুলো কী বলেছে দেখা যাক। ২ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনে সংবাদ শিরোনাম ছিল “নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীকে মারধর, বিক্ষোভ-ভাঙচুর”।
ইন্ট্রোতে বলা হয়েছে, “এক ছাত্রকে নিরাপত্তারক্ষীদের মারধরের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও আশপাশে বিক্ষোভ-ভাঙচুর চালান। সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ অবস্থা চলে। পরে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা চলে যান।”
বিবদমান দুইপক্ষের দায়টা এখানে স্পষ্ট। একপক্ষ মারধর করেছে। জবাবে মার খাওয়া পক্ষ এসে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। কোনো কিছুর প্রতিবাদ করতে গিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা বাংলাদেশে অত্যন্ত স্বাভাবিক ও প্রাত্যহিক ঘটনা। এতে জঙ্গিবাদের কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন পড়ে না। বসুন্ধরায় ভাঙচুরও কোনো জঙ্গিবাদী কিছু ছিল না। নিছকই একটি ছাত্রবিক্ষোভ। অন্তত বসুন্ধরার মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোর বাইরে সব সংবাদমাধ্যমের তথ্য তা-ই বলছে।
অবশ্য কেউ বলতেই পারেন- তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছাত্রদের পাল্টা প্রতিক্রিয়াটা মাত্রাতিরিক্ত হয়েছে, অন্যায় হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অতি সাধারণ এই অন্যায়ের ঘটনাটিকে ‘জঙ্গিবাদ’ হিসেবে আখ্যা দেয়া চেষ্টাকে মূলত বর্তমান সময়ে জঙ্গিবাদিতার স্পর্শকাতরদতাকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটার মানসিকতা হিসেবেই চিত্রিত করা যায়।
ঘটনার বিবরণে প্রথম আলো উপরে যা বলেছে সেরকমই বলেছে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমও। ইত্তেফাকের অনলাইনে শিরোনাম, “নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি একদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা”। জনকণ্ঠের শিরোনাম ছিল, “নিরাপত্তারক্ষীদের পিটুনিতে নর্থসাউথের ছাত্র আহত: বিক্ষোভ”। চ্যানেল২৪ এর শিরোনাম “নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীকে মারধর, অবরোধ-বিক্ষোভ”। বিডিনিউজের শিরোনাম: “বসুন্ধরায় নর্থ সাউথ ছাত্রদের অবরোধ-ভাংচুর”।
বসুন্ধরা গ্রুপের সংবাদমাধ্যমের জঙ্গিবাদী প্রচারণা অনলাইনেই সীমাবদ্ধ ছিল না। পরদিন ৩ মার্চ কালের কণ্ঠের প্রিন্ট সংস্করণের প্রধান খবরটি হচ্ছে, “অপপ্রচার চালিয়ে জঙ্গি তাণ্ডব”। লিংক এখানে- http://www.kalerkantho.com/online/national/2017/03/02/469946
এই রিপোর্টের ইন্ট্রোতে লেখা হয়েছে, “গুলশানে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলাসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার প্রমাণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়ায় র্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দারের পক্ষ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে আগেই। পাশাপাশি রাজধানীর বারিধারায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলাকাটির কয়েকটি গেট রাতে বন্ধ রাখা এবং নিয়মিত তল্লাশিসহ বেশ কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উগ্রপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠীর ভয়ংকর তাণ্ডবের শিকার হয়েছে রাজধানীর শান্তিপূর্ণ অভিজাত আবাসিক এলাকা বসুন্ধরা। পরে র্যাব-পুলিশ এবং বসুন্ধরা গ্রুপের সতর্ক তৎপরতায় আরেকটি পরিকল্পিত বড় ধরনের জঙ্গি হামলার অপচেষ্টা রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।”
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার (গুলশান) ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়ে কালের কণ্ঠ আগের দিনের ছাত্রবিক্ষোভটিকে অভিহিত করছে ‘আরেকটি পরিকল্পিত বড় ধরনের জঙ্গি হামলার অপচেষ্টা’ হিসেবে! অথচ, পুলিশ-র্যা বের এরকম কোনো দাবি তুলে ধরতে পারেনি পত্রিকাটি। বিক্ষোভের ঘটনাটিকে ‘জঙ্গি হামলা’ হিসেবে দেখানোর কাজটি পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বেই করেছেন!
ওইদিন বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রিন্ট সংস্করণের প্রধান শিরোনাম “রহস্যময় তাণ্ডবে ওরা কারা: দিনভর ভাঙচুর, চিহ্নিত কিছু জঙ্গি ছিল তৎপর”। লিংক এখানে- http://www.bd-pratidin.com/first-page/2017/03/03/212156
শিরোনামেই বুঝা যাচ্ছে ভেতরে কী থাকতে পারে। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি সান এর লিড নিউজ ছিল “Mayhem by miscreants at Bashundhara: Some identified militants were active”। একই বক্তব্য শুধু ভাষা পরিবর্তিত। লিংক এখানে- http://www.daily-sun.com/printversion/details/209558/Mayhem-by-miscreants-at-Bashundhara
অন্যদিকে ৩ মার্চের ডেইলি স্টার প্রথম পাতায় সিঙ্গেল কলামে “Assault on students sparks clash” শিরোনামের প্রতিবেদনে লিখেছে, “Talking to this correspondent, several locals alleged that many Bashundhara security guards have a cavalier attitude and often treat locals poorly.”। এখান থেকে ছাত্রদের বিক্ষোভের (সহিংসতার নয়) কারণটির যৌক্তিকতা অনুমান করা যায়।
যাইহোক, বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া ক্যাম্পেইন ৩ মার্চেই শেষ হয়ে যায়নি। ৪ মার্চ বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরোনাম “হলি আর্টিজান কল্যাণপুর শোলাকিয়া ও ব্লগার খুনে নর্থ সাউথের নাম”। লিংক এখানে- http://www.bd-pratidin.com/first-page/2017/03/04/212413
প্রথম দিনের রিপোর্টগুলোতে বসুন্ধরার মিডিয়া গোষ্ঠির ক্ষোভের লক্ষ্যবস্তু ছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শেষমেশ তা গিয়ে ঠেকে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। উপরের রিপোর্টটি পুরোপুরি নর্থসাউথে বিরুদ্ধে একটি ক্যাম্পেইন রিপোর্ট। ছাত্রবিক্ষোভের সাথে রিপোর্টের কনন্টেটের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছিল সেগুলোকে নতুন করে সামনে এনে চাপে রাখার কৌশল হিসেবেই বাংলাদেশ প্রতিদিন রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে।
একই দিনের বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতায় আরেকটি শিরোনাম: “নর্থ সাউথের এক ডজন শিক্ষক জঙ্গিবাদে জড়িত : ইউজিসি”। অন্য আরেক শিরোনাম ছিল “ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হচ্ছে অপরাধীদের”। তিনটি রিপোর্টের মধ্যে শুধু এটিই ছিল বিক্ষোভের ফলোআপ।
৪ মার্চ কালের কণ্ঠেও নর্থসাউথ বিরোধী ক্যাম্পেইন প্রতিবেদন ছিল। শিরোনাম “চাপের মুখে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়: উগ্রপন্থী শিক্ষকদের মদদেই কিছু শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদে”। লিংক এখানে- http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/03/04/470352
অবশ্য ৪ মার্চ নর্থসাউথ ও বসুন্ধরা উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাওয়ার পর এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ করে বসুন্ধরা গ্রুপের সংবাদমাধ্যমগুলো। ওইদিন থেকে অনলাইন/প্রিন্ট আর কোথাও এ সংক্রান্ত কোনো খবর নেই!
কোনো ঘটনাকে ঘিরে এভাবে কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক ভুল প্রচারণার (disinformation) ঘটনা বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে এখন নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ছাত্রবিক্ষোভকে ভিন্নখাতে প্রবাহে বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া গোষ্ঠির উপরিউক্ত চেষ্টা এর একটি ভাল উদাহরণ। এই ধরনের নগ্ন প্রচারণার কথার বুঝাতে ‘সাংবাদিকতা’ শব্দটিকে কোনোভাবেই ব্যবহার করা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। এমনকি ‘অপসাংবাদিকতা’ শব্দটি দিয়েও এমন আচরণকে বুঝানো সম্ভব নয়। এটাকে বলা যেতে পারে- মিডিয়াদস্যুতা। বনদস্যুতা, জলদস্যুতা, ভূমিদস্যুতা ইত্যাদি শব্দের পাশাপাশি বাংলায় এই শব্দটির প্রচলন এখন সময়ের দাবি!