১৯. করোনাভাইরাস, জীবানু মারণাস্ত্র এবং বৈশ্বিক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ
বিল গেইটস নিয়ে আলোচনায় আমরা দেখেছি তিনি কিভাবে মহামারীকে সিরিঞ্জ, শিশি, ভ্যাকসিন, নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের ঘুলঘুলি দিয়ে দেখেন। এই দেখা খণ্ডিত দেখা। অর্থাৎ ভাইরাস যাকে আক্রমণ করে সেই ‘হোস্ট’ বা আক্রান্ত দেহের দিক থেকে দেখা। অথচ ‘হোস্ট’, দেহ বা জীবন সমাজ, পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদি কোন কিছু থেকে কোন ভাবেই বিচ্ছিন্ন কোন সত্তা নয়। কিন্তু দেহ, জীবন বা ‘হোস্ট’কে বিল গেইটস তাদের সামগ্রিক জাগতিক সম্পর্ক থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। 'দেহ'কে আলাদা করে ফেলার পর বিচ্ছিন্ন দেহ এবং সংক্রামক ভাইরাসের ‘হোস্ট’ পুঁজি বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র হিশাবে হাজির হয়। ‘হোস্ট’ কেন্দ্র করে তাই সংক্রামক অণুজীব, ভাইরাস ও মহামারী সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পুঁজিতান্ত্রিক মতাদর্শ গড়ে ওঠে।
তাহলে বিল গেইটসের চিন্তার ভরকেন্দ্র হচ্ছে মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের দেহকে পুঁজি বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র হিশাবে আবিষ্কার এবং বিশ্বব্যাপী নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা। এই ভরকেন্দ্র আশ্রয় করে গত কয়েক দশক ধরে বিল গেইটস মহামারী সম্পর্কে যে আতংকের কথা বলে বেড়িয়েছেন, তার বিজয় আমাদের চোখের সামনেই ঘটতে শুরু করেছে। ‘কর্পোরেট বিজ্ঞান’ নামক যে ধারণাটিকে আমরা শুরু থেকেই চিহ্নিত করে আলোচনা শুরু করেছি, তাকে বোঝার জন্য জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে কিভাবে জীবন, দেহ, ভাইরাস ইত্যাদি ধারণার বিবর্তন ঘটেছে, বিশেষত পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় তাদের মতাদর্শিক পরিণতি কি হয়েছে সেই ইতিহাস আমাদের অবশ্যই পর্যালোচনা করতে হবে।
বলাবাহুল্য বিল গেইটসের এই দেখা বিকৃত। কারণ এই দেখা বিশেষ ধারণার মানদণ্ড দিয়ে দেখা, আক্রান্ত দেহকে সমাজ, প্রকৃতি পরিবেশ ইত্যাদি থেকে আলাদা করে, বিচ্ছিন্ন ভাবে বিচার করা। ভাবখানা এরকম যে মানুষের দেহ প্রাকৃতিক, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সম্পর্কের বিবিধ জটিলতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উর্ধে ভাসতে থাকে। দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন সেই সকল সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলোতে মারাত্মক যেসকল বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে সেইসব আমাদের আর দেখা কিম্বা বিচার করার দরকার নাই। কারন তারা মানুষের দেহের বাইরের ব্যাপার। পরিবেশ ও প্রকৃতির বিনাশ, বন ধ্বংস, জীবাশ্ম ভিত্তিক সভ্যতা ও শহর গড়ে তোলা, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কায়দায় খাদ্য উৎপাদন, পোল্ট্রি ও পশুর মাংস তৈরির ইন্ডাস্ট্রি – এইসব নিয়ে আমাদের কিছুই ভাবতে হবে না আর। এমনকি মেরামত করবার খুঁটিনাটি সংস্কারেরও দরকার নাই। দরকার সিরিঞ্জ, শিশি আর ভ্যাকসিন। পৃথিবী নামক এই জীবন্ত গ্রহের সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধ নতুন করে বিচার করবার কঠিন কর্তব্য নিয়ে চিন্তা করারও কোন দরকার নাই। জগতের সঙ্গে সম্বন্ধ রচনার জন্য নতুন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে্রও কোন প্রয়োজন নাই। সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে বিল গেইটস। ভূতের মতো তেড়ে আসা সিরিঞ্জ, শিশি ও ভ্যাক্সিন। নিরাময়ের একমাত্র চিন্তা হোল দেহে ভ্যাক্সিন পুশ করা। তা না হলে আক্রান্ত দেহের আর কোন মূল্য নাই। সেই দেহ জোম্বির মতোই আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের সকলকে সংক্রমিত করে ছাড়বে।
কেন এই বিশেষ ভাবে দেখা? এই বিশেষ ভাবে দেহকে দেখা কেন্দ্র করে যে মহামারী তত্ত্ব ও চিকিৎসা বিদ্যা গড়ে ওঠে তাতে দেহ পুঁজি বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র মাত্র হয়ে ওঠে। বিল গেইটসের মহামারী তত্ত্বের উদ্দেশ্য এটাই। মানুষের দেহকে নতুন ভ্যাক্সিন উৎপাদন ও ব্যবহারের সূত্র বা উসিলা হিশাবে পর্যবসিত করা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ভয়াবহ দিকটা হচ্ছে সংক্রমণ প্রতিরোধ এখানে উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে সংক্রমণ ঘটতে দেওয়া। এরপর দেহকে দূষণ মুক্ত বা বিশুদ্ধ রাখার জন্য দেহে ভ্যাক্সিন পুশ করা। ।
শুধু দেখাদেখি বা ভ্যাক্সিন উৎপাদনেই এই দেখা সীমিত থাকে না। কারণ চাইলেই মানুষকে ধরে ভ্যাক্সিন দেওয়ানো যায় না। তাই ভ্যাক্সিন মতাদর্শ বাস্তবায়নের আনুষঙ্গিক ধাপ হচ্ছে চরম আতংক ছড়ানো এবং মানুষ নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশল আবিষ্কার করা। সেটা আগে কঠিন ছিল। কিন্তু নজরদারির উন্নত ডিজিটাল টেকনলজি আবিষ্কারের ফলে সেটাও আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। নজরদারির নতুন কৃৎকৌশলের ব্যবসার ক্ষেত্রেও আমরা দেখি বিল গেইটস সহ অল্প দুই একটি বহুজাতিক কোম্পানিরই একচেটিয়া। বিল গেইটস মাইক্রোসফট থুয়ে কেন মহামারী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং মেলিন্দা ও বিল গেইটস ফাউন্ডেশান প্রতিষ্ঠা করলেন, তার কারণও এখানে।
অবাধ বাজার ব্যবস্থার কালে তথাকথিত 'আধুনিক রাষ্ট্র' পুঁজি – বিশেষত অল্প কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পনির ব্যবসা ও বিনিয়োগের হাতিয়ারে পর্যবসিত। অন্যান্য ছোট পুঁজি মূলত বৃহৎ পুঁজির স্ফীতি ও পুঞ্জিভবন প্রক্রিয়ার অংশ মাত্র। আধুনিক রাষ্ট্রকে এখন আর আমাদের প্রথাগত বা প্রাচীন ধারণা দিয়ে একদমই বোঝা যায় না, তাই পুরানা চিন্তা দিয়ে তার মোকাবিলাও সম্ভব নয়। অর্থাৎ রাষ্ট্র শুধু বল প্রয়োগের হাতিয়ার নয়। কিম্বা ক্ষমতা শুধু আধুনিক রাষ্ট্রে কেন্দ্রীভূত ’রাষ্ট্রশক্তি’ হিশাবে একালে হাজির নাই। ক্ষমতা বরং দেহ, রোগ, মহামারী, ভাইরাস, সংক্রমণ, কোরান্টাইন, আইসোলেশান, লকড-ডাউন ইত্যাদি ধারণা এবং তার প্রয়োগের মধ্য দিয়েই নিজেকে বাস্তব করে তুলছে। নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ একালে ক্ষমতা চর্চার প্রধান কলাকৌশল হিশাবে আমাদের চোখের সামনেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
কিন্তু মানুষ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারী মেনে নেয় কেন? মেনে নেয় কি? না। মোটেও সহজে মেনে নেয় না। এই জন্যই আতংক প্রচার ও মহামারী সংক্রান্ত ফেনানো ফাঁপানো প্রপাগাণ্ডা জরুরী হয়ে পড়ে । আতংকে মানুষ নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের ফাঁদে ধরা দেয়। মানুষ স্বেচ্ছায় নয়, ভীত হয়ে, নিজের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা পুঁজি ও রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়। শুধু জীবন বাঁচানো রাজনীতির কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে পড়ে। অথচ এই 'জীবন' দিয়ে মানুষ করবে, হাজার বছর ধরে মানুষের এই গভীর জিজ্ঞাসা অতলে তলিয়ে যায়।
এটা আমাদের মনে রাখা দরকার মানুষ স্বাধীন, কারো নিয়ন্ত্রণের অধীনস্থ নয় – এই ধারনার উদ্ভব এবং আধুনিক কালে তাকে রাজনৈতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষকে শত শত বছর লড়াই করতে হয়েছে। অথচ আমরা এখন স্বেচ্ছায় তা বিল গেইটস এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে তুলে দিচ্ছি। আমাদের স্বাধীন ভাবে চলাফেরার ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা মেনে নিচ্ছি।
মানবেতিহাসে এই পরাজয় মূহূর্তগুলো খুবই ট্রাজিক, করুণ ভাবরসে সিক্ত। নজরদারির নতুন টেকনলজি আবিষ্কার ও ব্যবহারের অধীনে জীবনকে সঁপে দেওয়ার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনার চেয়ে আর কিছুই হতে পারে না। যে দাসত্বের বিরুদ্ধে মানুষ হাজার বছর ধরে লড়েছে, কিছুটা হলেও নিজের স্বাধীন সত্তা আস্বাদন করতে পারছে, তাকে করোনাভাইরাসের ভয় দেখিয়ে বিল গেইটস ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা কতো অনায়াসে ছিনিয়ে নিতে পারছে। ইতিহাসে মানুষের এই ট্রাজিক দৃশ্যটুকে দেখে যাচ্ছি আমরা।
যেন কেউই ভ্যাক্সিন নিজ দেহে নেওয়া এড়িয়ে যেতে না পারে তার জন্য তোড়জোড় ও পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। এক দেড় বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে যাতে মানুষ ভ্যাক্সিন নিজ দেহে নিতে বাধ্য হয়। নইলে তাকে কার্যত বন্দী করে রাখা হবে। কারণ সে দূষিত। সেই বন্দীত্বের মোচন ঘটাবার একমাত্র পথ হয়ে উঠবে বিল গেইটস এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের কাছ থেকে এক ধরণের ‘ইমিউনিটি পাসপোর্ট’ পাওয়া বা জোগাড় করা। অর্থাৎ বিল গেইটসের ভ্যাক্সিন না নিলে সমাজে মেলামেশার অনুমতি বা ‘পাসপোর্ট’ পাওয়া যাবে না। সীমান্ত অতিক্রম দূরে থাক, ঘর থেকেও এখনকার মতো বের হওয়া যাবে না। ঘরবন্দী থাকতে হবে। বায়োমট্রিক ইনফরমেশানের মধ্য দিয়ে অনায়াসেই কার ইমিউনিটি পাসপোর্ট আছে বা কার নাই সেটা পরীক্ষার পদ্ধতি তৈরি হয়েই আছে। খুবই সোজা কাজ। এখন বাকি কাজ খুবই সহজ। কারো কোথাও লুকাবার কোন উপায় নাই। কারণ আমরা তো আঙুলের ছাপ দিয়েই চলেছি। এমনকি স্মার্ট ফোনে আমাদের আঙুলের যে ছাপ পড়ছে তাকে সংগ্রহ ও প্রসেস করাও এখন টেকনলজির দিক থেকে সহজ কাজ। অতএব নজরদারির টেকনলজিকে আরও নিখুঁত করাও সহজ। সেটাও নিয়ন্ত্রণ করবে মাইক্রোসফটের বিল গেইটস এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা। নজরদারি মেনে নিতে মানুষ বাধ্য হবে।
তাহলে বিল গেইটসের চোখে মহামারী দেখা এবং ভ্যাকসিন, সিরিঞ্জ ও শিশির বুদ্ধি দিয়ে মানুষকে দেখার ব্যাপারটিকে আমরা যতো সহজ ভাবে মেনে নিচ্ছি ব্যাপারটা মোটেও অতো সহজ নয়। সকলের জন্য অচিরেই এই মেনে নেওয়া আত্মঘাতী স্টুপিডিটি বলে প্রমাণিত হবে।
ব্যাপারটিকে বিল গেইটসের ‘ষড়যন্ত্র’ গণ্য করলে বোঝা গেল এতক্ষন আমরা যা বললাম তার কিছুই বুঝি নি। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হচ্ছে অলস মস্তিষ্কের বিলাসিতা। অর্থাৎ খবর নেবনা কী ঘটছে, ষড়যন্ত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করব। আমাদের বুঝতে হবে পুঁজি শুধু বিল গেইটসকে নয় একই সঙ্গে আমাদের, সাধারণ মানুষের দৃষ্টিও অন্ধ করে দিয়েছে। আমরা নিজেরা কিভাবে একেকজন বিল গেইটস হয়েছি সেটা বোঝার জন্য জ্বলজ্যান্ত নজির হিশাবে বিল গেইটস নিয়ে আলোচনা করছি। নজির ধরে আলোচনা অধিক শিক্ষাপ্রদ।
মহামারীকে এই বিশেষ ভাবে দেখার তত্ত্ব, পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন বিল গেইটসের হাতেই সফল ভাবে ঘটছে। তাই উদাহরণ হিশাবে বিল গেইটস আসলেই দুর্দান্ত। ভিন্ন ভাবে ভাবতে তিনি অক্ষম এটাই স্বাভাবিক। আমাদের পক্ষেও ভিন্ন ভাবে পুঁজিতান্ত্রিক মহামারীর কালে ভিন্ন ভাবে ভাবা কঠিন। গেইটসের মতো আমাদের দেখাদেখি বা চোখও একান্তই পুঁজিতান্ত্রিক দৃষ্টি্র দোষে অন্ধ এবং মুনাফাকারী স্বার্থের বর্গ দিয়ে মাপা। বিল গেইটসের দেখাদেখির কায়দা ও মতাদর্শের আধিপত্যই সারা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের চোখের সামনেই। পুঁজির মতাদর্শ তৈরি, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া কিভাবে ‘দেহ’, ‘চিকিৎসা, ‘মহামারী’ ইত্যাদি ধারোণাগুলোরও উৎপাদন করে সেইসব পর্যালোচনা ও বোঝার চেষ্টা করলেই আমরা বিকল্প সন্ধানের রাস্তাটুকু পাব।
এর থেকে বেরুবার উপায় কি? বেরুবার একমাত্র উপায় নতুন করে চিন্তা করতে পারার সামর্থ অর্জনের মধ্যে। যদি বর্তমান বাস্তবতা আমাদের শুধু বিল গেইটসীয় কায়দায় চিন্তা করবার অভ্যাস তৈরি করে তাহলে সেই অভ্যাস ত্যাগের প্রাথমিক আরম্ভ হতে পারে বর্তমানে বসে অনাগত সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চেষ্টা করা।
আমি নিজে তাই ‘দেহ’ নিয়ে ভাবি। ‘মানুষ’ নিয়ে ভাবি। মানুষ এবং পৃথিবী নামক গ্রহের সঙ্গে নতুন ভাবে সম্বন্ধ নির্ণয়ের সম্ভাবনা আছে কিনা ভাবি। এই মূহূর্তে মহামারী থেকে বাঁচতে হবে অবশ্যই, কিন্তু একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে। অবশ্যই। বুঝতে পারি, প্রাণ পরিবেশ ও প্রকৃতি বিধ্বংসী সম্বন্ধ পরিবর্তনের কথা বাদ দিয়ে অন্য সকল কথাবার্তা স্রেফ বকোয়াজগিরি। বাচালতা। বর্তমান বিধ্বংসী সম্বন্ধ বদলাতেই হবে, কোন বিকল্প নাই।
কিভাবে সম্ভব সেটা হাতেকলমে বোঝার জন্য আমরা ‘নয়াকৃষি’ করি। প্রকৃতিকে আবাস গণ্য করে তার সঙ্গে নতুন ধরণের প্রাণোৎপাদক সম্বন্ধ চর্চা আমাদের জন্য ভবিষ্যত নতুন ভাবে নির্মাণের বর্ণশিক্ষার মতো। কৃষিকাজের মানে কি, আমরা এখন ভুলে গিয়েছি। কৃষি মানুষসহ পুরা প্রকৃতির উৎপাদন, পুনরুৎপাদন ও বিকাশের ক্ষেত্র। যে ক্ষেত্র ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পাশ্চাত্য সভ্যতা ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই ক্ষেত্র এখনও বাংলাদেশে কিছুটা হলেও অবশিষ্ট আছে। আসুন, কৃষি ও কেঋষককে রক্ষার লড়াইয়ে নেমে পড়ুন।
মানুষের ‘দেহ’ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে আলাদা কিছু না। এটা আমি ফকির লালন শাহের কাছে শিখেছি। চাইলে মানুষই তা বদলাতে পারে, এতে আমি আশ্বস্ত বোধ করি। দয়া করে লালনকে বাউল, গাঁজাখোর না বানিয়ে, তাঁকে ঠিক ভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। আল্লার সঙ্গে নৈকট্যবোধ দৃঢ় না হলে লালনকে বোঝা কঠিন। অনেক আলেম ওলেমা লালন সম্পর্কে মিথ্যচার করে থাকেন। আল্লাহ যেন তাঁদের হেদায়েত করেন।
আমি সবসময় ভাবি, আল্লা ‘জগত’ সৃষ্টি করে তাঁর পরমার্থিক কর্তব্য শেষ হয়ে গিয়েছে মনে করেন নি কেন? বারবার ভাবি। তাঁর সৃষ্টির সুরক্ষার নিশ্চিত করবার জন্য তিনি আদম বা মানুষ কেন সৃষ্টি করলেন? কেন মানুষকে তাঁর ‘খলিফা’ বললেন। মানুষের কর্তব্য কি? তার ‘দ্বীন’ সে কিভাবে পালন করলে সে ইহলোকে আসলেই ‘খলিফা’ বা বিশ্বব্রহ্মাডের হেফাজতকারী হবে? এইসব গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা, যে ভাবনার প্রণোদনা আমি কোন আলেম ওলেমার কাছে পাই না, কিন্তু কোরানুল করিম থেকেই পাই।
অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতির মধ্যে ‘দেহ’ , ‘মানুষ’, ‘পৃথিবী’ ‘জগত’ ইত্যাদি কথা জাগতিক ও বাস্তবিক অর্থ পরিগ্রহণ করে। এইসব শব্দ নিয়ে আক্ষরিক বা বিমূর্ত আলোচনা সময়ের অপচয় ও ফালতূ বিষয়। জাগতিক ‘জীব’ বা ‘জীবন’ কথাটার অর্থ অন্বেষণের জন্য ডিকশিনারি খুঁজলে হবে না। কিভাবে জীবন আমাদের সামনে খাড়া, বাস্তব জগতে উপস্থি্ত সেটা বুঝতে হবে। মানুষের ‘জীবন’ রক্ষার জন্য কাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে তাদের চিনতে হবে। তারা কি আসলে আমাদের জীবন রক্ষা করতে চায়? না। তারা মো্টেও তা চায় না।
‘জীবন’ কিম্বা মানুষের ‘দেহ’ এখন বিশ্ব রাজনীতি ও লড়াইয়ের নতুন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, যেখানে যোদ্ধা হয়ে বিল গেইটস গংদের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে আমরা মানুষের শুধু নয়, আদৌ কোন জীবের জীবন রক্ষা করতে পারব না।
আসুন। নতুন রাজনীতির ময়দানে আহ্বান জানাচ্ছি।