সবাই অরুন্ধতী নয়
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নানা কিসিমের হয়, কিন্তু সবাই অরুন্ধতী রায় নয়। অরুন্ধতীই বলতে পারেন, ‘কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়, কখনোই ছিল না, ভারত সরকারও তো তা মানে।’ এই সত্য কথা বলার তৌফিক ভারতের কংগ্রেসি কিংবা সিপিআই/সিপিএম মার্কা প্রগতিবাদীদের মধ্যে দেখি না। কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ কখনও ছিল না, এই ঐতিহাসিক সত্য অস্বীকার করার মুরোদ ভারতের সরকার বিশেষত বাম ও বামসমর্থিত কংগ্রেসিদের কখনোই ছিল না। ঐতিহাসিক সত্য অস্বীকার করার কোনো যুক্তি তাদের নেই।
কিন্তু অরুন্ধতীর হিম্মত আলাদা, অতএব তার সাহিত্য, রাজনীতি, মায় ধর্মনিরপেক্ষতাও আলাদা। ভারতকে ‘অখণ্ড’ রাখার দায় তার আছে বলে মনে হয় না, যদি ভারত সবার ভারত না হয়ে ওঠে। যদি সেটা শুধু হিন্দুর, কর্পোরেট দুনিয়ার ও হাতেগোনা গণমাধ্যমের ভারত হয়, তো সেই ভারত অরুন্ধতীর নয়। এতটুকু বুঝতে পারি। বিজেপি দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার পর ভাবছিলাম, কী ঘটতে যাচ্ছে উপমহাদেশে? কী হবে বাংলাদেশের প্রতি দিল্লির নীতি? অরুন্ধতীর কথা মনে হল। বিজেপি মাত্র ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি বা দিল্লির ওপর আস্থা রাখার কোনোই কারণ নেই। কিন্তু ভারতের লড়াকু জনগণের প্রতি পূর্ণ আস্থা থাকা দরকার। বাংলাদেশে যাদের ভারতবিরোধী অস্বস্তি আছে বা দিল্লি আর ভারতের জনগণকে যারা একাকার করে ফেলেন, তারা অরুন্ধতী রায় পড়ে দেখতে পারেন। হিন্দু হোক কি মুসলমান -- সব ধরনের বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, জা্তিবাদী হিংসার বিরুদ্ধে উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক ঐক্যের জায়গাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করাই এখনকার কাজ।
‘কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়’- এ কথা বলার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি অরুন্ধতীর কল্লা চাইছে মেলা দিন ধরে। অরুন্ধতীকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চায় তারা। পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ভারতের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলবে তাদেরই ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে।’ সাবধান! বাংলাদেশ থেকেও এখন কিছু বলা যাবে না। অরুন্ধতীর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র মামলা হয়েছে। ভারতের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কিছু বলা ভয়ংকর অপরাধ। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সেই বিজেপিই ক্ষমতায় এসেছে, যারা অরুন্ধতী রায়ের মতো ভারতীয় নাগরিকদের ফাঁসি দিতে চায়। অরুন্ধতীর অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। তিনি শুধু কাশ্মীর নয়, আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সশস্ত্র সংগ্রামের পাশে দাঁড়াতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। ভারতের রাষ্ট্রীয় বা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মাওবাদীদের সঙ্গে বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ান, তাদের মতাদর্শ মান্য না করলেও নিজেকে তাদের কথার বাহন হতে দেয়ার নৈতিক দায় নিতে ভীত বোধ করেন না। ধর্মনিরপেক্ষতার ভণ্ডামি তার মধ্যে নেই এবং প্রগতির নামে হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের পতাকা ভ্যানিটি ব্যাগে লুকিয়ে রেখে প্রগতির ভ্যানিটি প্রদর্শনও তার ধাতের মধ্যে নেই। এই তো দেখি। বিজেপির মতো গর্ব সহকারে হিন্দুত্ববাদের পতাকা ওড়ানো তো অনেক দূরের ব্যাপার।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের সাত রাজ্যও ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে এসব সত্য হজম করা কঠিন। অরুন্ধতী অবশ্যই ভারতীয়, ধর্মনিরপেক্ষও বটে, কিন্তু তিনি এই প্রকার জাতীয়তাবাদী খোপের মধ্যে পড়েন না।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী জাতীয়তাবাদের মর্মে রয়েছে অখণ্ড ভারতের ধারণা, ফলে ভারত ভাগের কারণ হিসেবে কংগ্রেসের হিন্দুত্ববাদ নয়, দায়ী করা হয় জিন্নাহ ও মুসলিম লীগকে। বলা হয়, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ইংরেজের ভারত ভাগ হয়েছে। এ অভিযোগের অনুমান খুবই কৌতুকজনক। ভারত ভূগোল সূত্রেই নাকি এক ও অখণ্ড, তার মানচিত্রে পার্টিশান টানা ঠিক হয়নি। যারা এ কাজ করেছে তারা ‘মুসলমান’। তারাই দাবি করা শুরু করেছে, ‘মুসলমান’ একটি আলাদা জাতি, ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদের জন্য তারা আলাদা ভূখণ্ড চেয়েছে। ভারত দুই ভাগ নয়, তিন ভাগে পরিণত হয়েছে। ভারত হিন্দুদের, তার আর্য গৌরবই তার সভ্যতার মানদণ্ড, মুসলমানরা এ দেশে আগ্রাসী শক্তি, ইংরেজের চেয়েও মন্দ। তারা ভারতের বাইরে থেকে এসেছে। ইসলাম একটি সাম্রাজ্যবাদী ধর্ম ইত্যাদি। অখণ্ড ভারত তত্ত্ব হিন্দুত্ববাদী হোক কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ হোক, দুয়ের মধ্যে পার্থক্য অতিশয় ক্ষীণ।
বহু জাতি, বহু ধর্ম, বহু ভাষা ও বহু সংস্কৃতির দেশ ভারত। সেই হিসেবে ভারতের আরও কয়েক টুকরা হয়ে যাওয়াটা অসম্ভব কিছু ছিল না। সেটাই ছিল স্বাভাবিক। একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে হাজির করে। উপমহাদেশে বাংলাদেশের আবির্ভাব নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের জন্ম দেয়। পাকিস্তানি শাসনামলে জাতিগত নিপীড়নের কারণে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের রূপ পরিগ্রহণ করে। যার আগুনে পাকিস্তানের ভাঙন শুরু হয়, দাহ্য পদার্থের মতো তা দ্রুত পাকপবিত্র পাকিস্তানকে পোড়ায়, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে ‘ইসলামাবাদ’ সামরিকভাবে পরাজিত ও পর্যুদস্ত হয়।
অখণ্ড ভারততত্ত্বের জন্য তা নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়। ধর্ম এক হলেও ভাষা ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে জাতি হিসেবে উপমহাদেশে যদি একটি ভিন্ন রাষ্ট্রের আবির্ভাব ন্যায্য হয় এবং আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিচারে স্বীকৃতি লাভ করে, তাহলে হিন্দু ভারতের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী বা জাতিসত্তারও আলাদা আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হওয়ার অধিকার আছে। না থাকার কোনোই কারণ নেই। পাকিস্তান যেমন ইসলাম ধর্মের কারণে এক বা অভিন্ন নয়, ভারতও তেমন হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে এক জাতি নয়।
দ্বিজাতিতত্ত্ব কথাটার মানে কী? পাকিস্তান ‘মুসলমান জাতি’ আর ভারত ‘হিন্দু জাতি’র দেশ। বাংলাদেশের অভ্যুদয় যদি ধর্মবাদী দ্বিজাতিতত্ত্বের মূলে কুঠারাঘাত করে থাকে, তাহলে একই কোপে তা অখণ্ড ভারততত্ত্বের শেকড়ও উপড়ে ফেলেছে। এর ফলে শুধু পাকিস্তানবাদের ভিত্তি বেকার হয়ে যায় তা নয়, হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভিত্তিও মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়ে। অথচ আমরা দেখব অখণ্ড ভারতের প্রবক্তারা দ্বিজাতিতত্ত্বের ধ্বংসের কথা বলতে যত পুলক বোধ করে, অখণ্ড ভারতের বিনাশের কথা শুনলে ততটাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আর বাঙালি জাতীয়তাবাদ অখণ্ড ভারততত্ত্ব থেকে তার রস সংগ্রহ করে।
ইংরেজের ‘ভারতবর্ষ’ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভাগাভাগির পর মুসলিম জাতীয়তাবাদীরা তাদের জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় রূপ খুঁজতে থাকে ধর্মতাত্ত্বিক (theological) রাষ্ট্রের মধ্যে। মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বা পাকিস্তানের রাজনীতি একই সঙ্গে সংবিধান প্রণয়নের রাজনীতিতে পরিণত হয়। যার ব্যর্থতা পাকিস্তানের ভাঙন ত্বরান্বিত করে। বিপরীতে হিন্দুত্ববাদের চর্চা অখণ্ড ভারত প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ভারতের সংবিধান প্রণয়নের মধ্যে তার প্রতিফলন কিভাবে ঘটেছে সেটা বোঝা খুবই জরুরি। অখণ্ড ভারততত্ত্বের অভিপ্রকাশ ঘটেছে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের ধারণার মধ্যে। জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতা এবং বিভিন্ন রাজ্যের ইতিহাস আলাদা হলেও অনুমান করা হয়, হিন্দু ভারতের জাতীয়তা বা ‘জাতিস্বার্থ’ একমাত্র শক্তিশালী কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানেই নিশ্চিত করা সম্ভব। রাজ্যকে কেন্দ্রের অধীন হয়ে থাকতে হবে। হিন্দুত্ববাদের ধর্মনিরপেক্ষতা বাহ্যিক, রাজ্যগুলোকে দুর্বল ও দিল্লির অধীনস্থ রেখে যে শক্তিশালী কেন্দ্র ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ চর্চা করা হয়েছে, তা হিন্দুত্ববাদেরই নামান্তর মাত্র। লক্ষ্য একটিই- ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা।
তারপরও কংগ্রেসে ও কংগ্রেস ঘেঁষা বামদের ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে হিন্দুত্ববাদী ভারতের ইচ্ছা, সংকল্প ও কল্পনা কাজ করতে পারছিল। এই যুক্তিতে যে, জাতীয়তাবাদ একটি ধর্মনিরপেক্ষ ধারণা। হিন্দুত্ববাদের ধর্মনিরপেক্ষ অখণ্ড ভারত প্রকল্প রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়ন ধর্মনিরপেক্ষতার ছদ্মবেশেই সম্ভব। উপমহাদেশের রাজনৈতিক পার্টিশানের পর এই সক্রিয়তা হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের রূপান্তর ঘটানোর দিকেই যাচ্ছিল। কংগ্রেস ও নির্বাচনবাদী বামদের ছদ্মবেশী হিন্দুত্ববাদ এ প্রক্রিয়াকে দীর্ঘস্থায়ী করে। নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির নিরংকুশ বিজয়ের পর এই বিভ্রান্তির অবসান ঘটল।
ঠিক। ধর্মনিরপেক্ষতার খোলস ভেঙে হিন্দুত্ববাদের প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসার জন্য সময় লেগেছে বেশ। নরেন্দ্র মোদির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ভারতকে। কেন্দ্র ও রাজ্যের দ্বন্দ্বও দিল্লিকে দুর্বল করে রেখেছে। বিজেপির নিরংকুশ বিজয় একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের আকাক্সক্ষাকে পূরণ করেছে। বিজেপি দিল্লির শক্তিকে আরও কেন্দ্রীভূত করার ম্যান্ডেট পেয়েছে। এই অপার ক্ষমতা বিজেপি কীভাবে ভারতের সংবিধান পরিবর্তনে ব্যবহার করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। মোদি অচিরেই তা করবেন, এটা আমি মনে করি না। কিন্তু পুঁজি ও বহুজাতিক কর্পোরেশনের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে ভারতে শ্রেণী সংগ্রামের আসন্ন ও অনিবার্য বিস্তার দমন করার জন্য বিজেপি রাষ্ট্রশক্তি ও রাষ্ট্রকাঠামোকে সাংবিধানিকভাবে ব্যবহার করবে এতে কোনোই সন্দেহ নেই। কীভাবে করে সেটাই দেখার বিষয়।
অনেকে বলছেন, শেখ হাসিনার কাছ থেকে নরেন্দ্র মোদি শিক্ষা নিতে পারেন। প্রস্তাব হিসেবে খারাপ নয়। শেখ হাসিনার মতো সংবিধান চরিত্রগতভাবে বদলানোর সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার রয়েছে। ফলে তিনি ভারতের সংবিধানের ওপর স্বস্তিকা এঁকে দেবেন না সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। দিতেও পারেন। মনে রাখা দরকার, তিনি জনগণের সমর্থনে এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটে জিতে এসেছেন। তিনি জিতেছেন বলে ভাবার কারণ নেই যে তিনিই ভারতের জনগণের একমাত্র প্রতিনিধি, যারা ভোট দিয়েছেন তাদের একশ’জনের মধ্যে তিনি পেয়েছেন তিনজনের চেয়ে একটি বেশি ভোট। একত্রিশ শতাংশ। কিন্তু রাষ্ট্রশক্তি তার অধীন, লোকসভায় তিনি ও তার মিত্ররাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইচ্ছা করলে যেদিকে খুশি সেদিকে তিনি ত্রিশূল ঘোরাতে পারেন।
মোদির বিজয়ের পর ভারতীয় পত্রিকা ‘আউটলুকে’ বিখ্যাত লেখক সালমান রুশদির একটি বক্তৃতার অনুলিপি পড়ছিলাম। বেশ হাসতে হয়েছে। সালমান রুশদি এতদিন পর বুঝেছেন যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটাভুটির মাধ্যমে ভোট দেয়াকে নাকি গণতন্ত্র বলে না। খুবই করুণ উপলব্ধি। কেন সালমানের মনে মোদির বিজয় এত কষ্টের কারণ হল? কারণ ভারতে মত প্রকাশের অধিকার দমিত হচ্ছে। লেখকদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চলছে ইত্যাদি। তিনি একটা মস্ত তালিকা দিয়েছেন। সালমানের বাকস্বাধীনতার মানে অবশ্য রাষ্ট্রের নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো নয়। তার তথাকথিত বাকস্বাধীনতা খোদ দিল্লিতে শিরদাঁড়া সিধা রেখে কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়- এ কথা বলার দুঃসাহস তো নয়ই, সেই মেরুদণ্ড সালমান রুশদির নেই। তিনি অরুন্ধতী রায় নন। মনে রাখতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষতার যেমন হেরফের আছে, তেমনি চিন্তা, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা চাইলেই কেউ সবার জন্য চাইছে ভাববার কোনো কারণ নেই। সালমান যা খুশি তা-ই লেখার স্বাধীনতা চাইছেন বলে লেখকের স্বাধীনতার বাইরে তার এই চাওয়ার অন্য কোনো অর্থ নেই।
অরুন্ধতী যখন চান, তখন তিনি শুধু নিজের জন্য চান না। কাশ্মীরের জনগণ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তির লড়াইয়ে যারা লড়ছেন, তাদের কথা তিনি ভোলেন না। মাওবাদী গেরিলাদের তো অবশ্যই না। কিন্তু তাতে তিনি তাদের রাজনীতির সমর্থক বনে যান না। বরং সামনে নিয়ে আসেন রাজনীতি ও রাষ্ট্রের সেই সব কদর্য দিক, যেগুলো অন্যেরা লুকিয়ে রাখে। যেমন বলেছেন, কংগ্রেসের হত্যার টার্গেটে যেমন মাওবাদীরা আছে, তেমনি বিজেপির আছে মুসলমান, ফারাকটা কী? কেউ কারও চেয়ে কম যায় না।
জ্বি, সবাই অরুন্ধতী রায় নয়। কিন্তু এই উপমহাদেশে এ ধরনের মানুষ আছেন। এই সত্য মনে রাখলে ভারতের জনগণকে বুঝতে আমরা ভুল করব না। এটাও বুঝব, হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর্পোরেট পুঁজির বিরুদ্ধে সংগ্রাম থেকে আলাদা কিছু নয়।
উপমহাদেশে সেই লড়াইয়ে ঐক্যের জায়গা নির্মাণ করাটাই এখনকার কাজ।
২৩ মে ২০১৪। ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২১। আরশিনগর।
এই লেখাটি যুগান্তর ২৪ মে ২০১৪ ছাপা হয়েছিল।