১. সাত থেকে দশ ডিসেম্বর


শেষ পর্যন্ত যা অনুমান করেছিলাম তাই হোল। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সংঘর্ষকে ব্যাপক হানাহানি এবং গৃহযুদ্ধের দিকে ঢেলে দিচ্ছে। দশ তারিখে বিএনপির ঢাকা সমাবেশ করতে না দিয়ে বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশি হামলা এবং গুলি করে হত্যার নিন্দা জানাবার ভাষা নাই। দশ তারিখের বিএনপির সমাবেশের আগেই বাংলাদেশকে সংঘাতের দিকে সামনে ঢেলে দেওয়া হোল। এর রাজনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে আওয়ামি লীগ অজ্ঞ তা নয়। এটা বিপজ্জনক এবং পরিস্থিতি যে কোন দিকেই গড়াতে পারে। বিএনপির মহা সচিব ঘ্টনাস্থলে গিয়ে সকলকে শান্ত ও স্থির থাকবার যে অনুরোধ করেছেন তা সঠিক ও দুরদর্শী হয়েছে। কারন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ সকল পরাশক্তি গভীর ভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এই সময় বিএনপিকে অবশ্যই শান্ত, ধৈর্যশীল এবং দূরদর্শী হতে হবে। প্রতিটি পদক্ষেপ নেবার সময় ভুরাজনৈতিক বাস্তবতা আমলে নিতে হবে। অতি উৎসাহীদেদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

এটা পরিষ্কার যে সংঘাত, নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং পুরা দেশকে অস্থিতিশীল করে অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ করা ছাড়া ফ্যাসিস্ট শক্তি ক্ষমতা থেকে নিষ্ক্রান্ত হবার অন্য কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না। গতকাল আমরা দেখেছি লাঠি হাতে যুব লীগের মহড়া , তারা তাদের গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকতে কোন ভাবেই পল্টনে বিএনপিকে জনসভা করতে দেবে না। তারা বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে রীতিমতো লাঠি হতে যুদ্ধ করতে নেমেছে। আমরা আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের গুলি চালাতেও দেখেছি। এগুলো নতুন কোন দৃশ্য বা অভিজ্ঞতা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে এর পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকতে পার?

দশ ডিসেম্বর বিএনপির দলীয় ঢাকা সমাবেশ। বিএনপি এর আগে বলেছে আমরা আগে আমাদের নিজেদের দল গোছাতে চাই, এরপর অন্যান্য ছোট বড় দলের সঙ্গে যুগপৎ নাকি যৌথ ভাবে আন্দোলন করব আমরা তার সিদ্ধান্ত নেব। বিভিন্ন দল অভিযোগ করেছে ১০ তারিখের সমাবেশ সম্পর্কে তাদের কিছু জানানো হয় নি। সেটা পুরাপুরি ঠিক নয়। বিএনপির অবস্থান যৌক্তিক। বিএনপি বলেছে সরকারের সঙ্গে কোন দলের কি সমঝোতা বা ‘আন্ডারস্টেন্ডিং’ রয়েছে সেটা তারা বুঝতে চায়, সেটা আন্দোলনে তাদের স্বাধীন ভাবে অংশগ্রহণের দ্বারাই বোঝা যাবে। তাই বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনাটা আসলে কী সেটা ১০ তারিখের আগে আমরাও বুঝব না এর আগে তারা বিপুল বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও গণসমাবেশ করেছে। সেটা সফল হয়েছে এবং বিএনপি সফল ভাবে বাংলাদেশের আগামি রাজনীতির নির্ধারক শক্তিতে দ্রুত নিজেদের পুনর্গঠিত করতে পেরেছে। বিএনপির প্রতি গণসমর্থের এটা বড় একটা কারন। সরকারি উস্কানি থাকা সত্ত্বেও বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। দশ ডিসেম্বর বিএনপি তার কর্মসূচি বা রাজনৈতিক কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করার কথা। আওয়ামি লীগ মহল্লায় মহল্লায় বিএনপিকে মোকাবিলা করবার নির্দেশ দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে সংঘর্ষ ও সন্ত্রাসকে মহল্লায় মহল্লায় ছড়িয়ে দিতে চায় আওয়ামী লীগ। নৈরাজ্য, সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ নিজের প্রস্থানের সুড়ঙ্গ পথ খুঁড়তে চাইছে। এটা বিপজ্জনক খেলা।

প্রশ্ন হচ্ছে এর পর কি? যে খানে দেশের কোট কোটি মানুষের ভাগ্য এবং আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি দেশের অস্তিত্ব টিকে থাকা না থাকার প্রশ্ন জড়িত, সেখানে আওয়ামী মুখব্যাদানকারী কুৎসিত ‘খেলা হবে!’ হুংকার জনগণকে ভয়ংকর বার্তা দিয়েছে। ‘খেলা হবে’ বলে ফ্যাসিস্ট শক্তি মানুষের জীবন ও রক্ত নিয়ে যে নিষ্ঠুর উৎসবে মেতে উঠেছে তার সঙ্গে শুধু এরশাদ শিকদারের খুন করে এসে দুধ দিয়ে স্নান করাবার স্মৃতিই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। ফ্যাসিস্ট শক্তি শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরা উপমহাদেশকে অস্থির ও অনিশ্চিত অবস্থায় মধ্যে ঠেলে দিতে কুন্ঠিত নয়।

আওয়ামী লীগ কি সারা দেশকে খণ্ড বিখণ্ড করতে চাইছে? এর পরিণতি কি আওয়ামী নেতানেত্রীরা ভেবেছেন? ঠাণ্ডা মাথায় রাজনীতির মঞ্চ থেকে ‘খেলা হবে’ হুংকার কুৎসিত শুধু নয় -- আওয়ামী লীগ আবারও প্রমাণ করল বাংলাদেশ নিছকই দিল্লীর খেলার মাঠ। সাত তারিখে পুলিশী হামলা এবং ছাত্র লীগের সন্ত্রাস ও সহিংসতা সেটাই জোরেশোরে প্রমাণ করেছে। ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট শক্তি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ গঠনমূলক সমাধান চায় না, আরেকটি গৃহযুদ্ধ চায়।

(পরের কিস্তি অনুসরণ করুন)

#বিএনপি, #বাংলাদেশ


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।