৩. সাত থেকে দশ ডিসেম্বর
আওয়ামী লীগ আরেকটি গৃহযুদ্ধ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। ফ্যাসিস্ট শাসনের দায়ভার এড়াবার এটাই সবচেয়ে শস্তা কিন্তু ভয়ংকর বিপজ্জনক পথ। তাঁর বিরুদ্ধে আনা ফালতু অভিযোগ আইনী ভাবে মোকাবিলার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া আন্তর্জাতিক ভাবে প্রমাণ করেছেন তিনি আইন ও আইনী প্রক্রিয়া মানেন, সেই আইন ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে প্রতিহিংসার হাতিয়ার হলেও তিনি শান্তিপূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংঘাতের মীমাংসা চান। তাঁকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাবার অনুমতি দেওয়া হয় নি। আইন ও আইনী প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধার যে উদাহরণ খালেদা জিয়া সৃষ্টি করেছেন আজ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেটাই বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক পুঁজি হয়ে উঠেছে। এটা বিএনপির রাজনৈতিক কর্মীদের – বিশেষত তরুণদের বুঝতে হবে। তিনি বারবারই এর আগে নিশ্চিত করেছেন তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না। আজ আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক মহলে এটা নিশ্চিত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে বাংলাদেশে বিপুল রক্তক্ষয় ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়াই নির্ধারক ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
আসলে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ শুরু হবার পরপরই খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভাগ্য আন্তর্জাতিক মহলে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। এরপর এক এগারোর ঘটনা এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট শক্তির ক্ষমতারোহন, বাংলাদেশে ইসলাম বিদ্বেষ এবং ইসলাম নির্মূল রাজনীতির বিপুল শক্তিবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিএনপি-জামাত জোটকে মৌলবাদী সন্ত্রাসী হিশাবে হাজির করবার আওয়ামী প্রপাগান্ডা আমরা দেখেছি।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন দেখছি। বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি ভাল একটা সুযোগ। এই সময় বিএনপির নিজেকে বদলাবারও উপযুক্ত সময়, বাংলাদেশের ইতিবাচক রূপান্তর ঘটাবার আন্তর্জাতিক সুযোগও এখন আগের চেয়ে বেশী। এই সকল দিক বিবেচনা করলে দীর্ঘ ফ্যাসিস্ট শাসনামলে আইনের প্রতি আনুগত্য, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি অঙ্গীকার এবং বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হোক যারা চান তাদের কাছে খালেদা জিয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। তাই মনে রাখতে হবে আইনী প্রক্রিয়ার প্রতি খালেদা জিয়ার আনুগত্য প্রদর্শন ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বিএনপির মূল্যবান অর্জন হয়ে রয়েছে। আওয়ামি লীগ যতোই মিথ্যা প্রপাগান্ডা করুক, এই সত্য এখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। বিএনপি সম্পর্কে যে ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে ফ্যাসিস্ট শক্তি গড়ে তুলেছে তার কার্যকারিতা খুব একটা আছে বলে আমি মনে করি না। তবে চিনের প্রশ্ন আলাদা। তা নিয়ে অন্যত্র আলোচনা করব। খালেদা জিয়া নৈরাজ্যবাদী নন, সন্ত্রাস বা সহিংসতার মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতায় যেতে চান না – ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটা আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা। সেটা তিনি দীর্ঘকাল নির্যাতন ও অপমান স্বীকার করারা মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় প্রমাণ করেছেন।
কিন্তু বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই অবস্থা শাঁখের করাতের মতো। বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চায়, শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতার বদল হবে সেটা জনগণ মনে করে না। শেখ হাসিনার গতকালের বক্তব্যে সেটা আরও পরিষ্কার। সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং রক্তপাত ছাড়া ফ্যাসিস্ট শক্তি ক্ষমতা ছাড়বে না। তারা শুধু হাতে লাঠি নিয়ে নামবে না, তাদের সশস্ত্রতার মাত্রা সর্ব কালের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আগামিতে কি ঘটবে সেটা একমাত্র রাস্তার লড়াইতেই নির্ধারিত হবে। এটাই কমবেশী স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের রাজনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপির দিক থেকে বিপজ্জন দিক হচ্ছে এই যে জনগণ মনে করে বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমনকি রাষ্ট্রের গণবিরোধী ক্ষমতার চরিত্রে কোন বদল বা পরিবর্তন হবে না। পরিবর্তনের কোন হদিস বা ইঙ্গিত বিএনপির কোন নীতি বা কর্মসূচিতে আমরা পাই না। এমনকি বিএনপির নেতৃত্ব যদি জিয়ার ১৯ দফা কর্মসূচি বিশ্বাস করেন তাহলে তা কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন, তার কৌশল কি হবে সে বিষয়ে আজ অবধি কোন ব্যাখ্যা আমরা দেখি নি বা পাই নি। বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের তরফ থেকেও কোন সারবস্তু সম্পন্ন বক্তব্য দেখি নি। এই অভাব জাতীয় রাজনীতিতে কিভাবে প্রভাব ফেলে, আমরা তা দেখব।
তাহলে যাহা বাহান্ন তাহাই তেপ্পান্ন। এটা জেনেও অর্থাৎ বিএনপির ওপর রাষ্ট্র ও সমাজ পুনর্গঠনের কোন আশা বা ভরসা না রেখেও বাংলাদেশে দিল্লী সমর্থিত ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান হোক এই ন্যূনতম লক্ষ্য জনগণ অর্জন করতে চায়। বিএনপির ডাকে জনগণের সাড়া দেওয়ার মধ্যে এই সত্য পরিষ্কার।
আমরা তাই তো দেখছি।
#বিএনপি, #বাংলাদেশ