গোলাপবাগ জিন্দাবাদ
বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দলের বিভাগীয় সমাবেশ সফল হোক।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মধ্য দিয়ে ফ্যসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের এই কৌশল সঠিক। আওয়ামী লীগের যেসকল ফ্যাসিস্ট বলছে পল্টনে সভা করার দাবি ত্যাগ করে গোলাপবাগে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত মানা বিএনপির ‘অর্ধেক পরাজয়’, তারা ভুল। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের উৎকন্ঠা আমলে নিয়ে সংঘর্ষ ও সন্ত্রাস এড়ানোই এই মূহূর্তের সঠিক কৌশল। ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের জনগণের আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ জরুরি। কারন এই লড়াই সবে দানা বাঁধছে মাত্র। এটা দীর্ঘস্থায়ী লড়াই হতে পারে।
ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট শক্তি ইতোমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা লাঠিসোঁটা হাতে সশশ্ত্র ভাবে জনগণকে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় মোকাবিলা করবে। কিন্তু ঢাকা শহর বাংলাদেশ না। ক্ষমতায় বসে যেভাবে গৃহযুদ্ধের হুংকার তোলা হচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে কৌশলে ভুল হলে জনগণকে চরম মূল্য দিতে হবে। প্রতিরোধের ধরণ হিশাবে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ বিএনপির দিক থেকে অতএব বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও প্রতিরোধই হচ্ছে উপযুক্ত জবাব।
এখন ১০ ডিসেম্বর বিএনপি কি কর্মসূচি বা পরিকল্পনা হাজির করে তার ওপর আগামি দিনের রাজনীতির গতি প্রক্রিয়া নির্ভর করবে। আমরা তার জন্য অপেক্ষা করে রইলাম।
#বিএনপি, #বাংলাদেশ
---
বিএনপির শান্তিপূর্ণ বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হয়েছে, দশ দফাও এখন মাঠে। ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শক্তির সন্ত্রাস ও সহিংসতার ক্ষমতা বিবেচনা করে গণরাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকে এই 'শান্তিপূর্ণ' সমাবেশ অবশ্যই সঠিক ছিল, বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিজয় হয়েছে। এটা পরিষ্কার। কার্ল মার্কসের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে তাই আবারও বলব বিশাল বকোয়াজি আর তত্ত্ব কথার চেয়েও সঠিক সময়ে সঠিক ও বাস্তবোচিত পদক্ষেপই সঠিক কাজ। বিএনপি সঠিক পদক্ষেপের জন্য বিপুল ভাবে লাভবান হবে।
কিন্তু তত্ত্ব কি লাগবে না? আলবৎ লাগবে। শুধুই কি সঠিক পদক্ষেপ যথেষ্ট? অবশ্যই না। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ঠাট্টা করে বলছে, গোলাপবাগ ছিল গরুর হাট। একে প্রতীকী কিন্তু সিরিয়াসলি নিলে স্বীকার করতে লজ্জা নাই আমরা জনগোষ্ঠি হিশাবে রাজনৈতিক চেতনার দিক থেকে এখনও গরুর পর্যায়েই আছি। যারা বলছে তারা নিজেরা গরু বলে গরুর মেটাফোর তাদের আমোদ দিয়েছে, তবে তারা নিজেদের বাদ দিলে হবে না। কথা হোল, রাজনীতিকে উচ্চ পর্যায়ে নিতে হলে তত্ত্ব লাগবে। জনগণকে পরিষ্কার বোঝাতে হবে আমরা এখন কি চাই। যেমন, ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ কেন এখনই জরুরি, এবং তার জন্য কেন বিএনপিকে সমর্থন জরুরি সেটা পরিষ্কার আগে বলতে হবে, তারপর সমালোচনা হোক। বিএনপিকে তো বলতে হবে খালি ক্ষমতায় যেতে চান কেন? গিয়ে আগামিতে কি করবেন? কি অর্জন করা আমাদের উদ্দেশ্য -- সেই সব পরিষ্কার ভাবে বলুন। আমরা হাওয়ায়া বড় হই নি। ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ক্ষমতা থেকে অপসারন করবার কৌশল ও ধরণের ওপর নির্ভর করবে কি এখন বাস্তবায়ন সম্ভব আর ন্যূনতম কতোটুকু পেলে জনগন মেনে নেবে।
যদি আন্দোলনের মধ্য দিয়েই অপসারণ ঘটে তাহলে ফ্যাসিস্ট সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমরা টিকিয়ে রাখব কেন? ফ্যাসিস্ট সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ রেখে তার অধীনে নির্বাচন চাওয়ার অর্থ ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থাটাই টিকিয়ে রাখা। অতএব এখন কি করব, কি করতে চাই, কেন করতে চাই এবং কিভাবে সেটা অর্জন সম্ভব সেই সবের তত্ত্ব লাগবে। এই অভাব সমাজের। বিএনপির ১০ দফায় চিন্তা ও দূরদর্শিতার অভাবও অত্এব সমাজের। কিন্তু এই অভাব যে কোন মূহূর্তেই বিএনপিকে বিশাল গহ্বরে আবার আগের মতো ফেলে দিতে পারে। বিএনপি যদি এই ফ্যাসিস্ট শক্তিকে মোকাবিলা করতে চায়, তাহলে ফ্যাসিস্ট শক্তি বিরোধী চিন্তা চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তি, সংস্কৃতি সবকিছুকে আমলে নিতে হবে।
তাহলে তত্ত্ব, চিন্তা ও দূরদর্শিতা অর্জন বিএনপির একার কাজ না। ফ্যাসিস্ট শক্তি বিরোধী সকলেরই কাজ। সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যালোচনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিকাশের কাজ করে সমাজের অগ্রবর্তী বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তাহলে বিএনপিকে আগে অভিনন্দন জানান, তারপর কথা বলুন।
বিএনপি কোন বিপ্লবী দল না। শ্রমিক, কৃষক মেহনতি শ্রেণীর দল তো নয়ই। দলটির মধ্যে নানান প্রবণতা আছে। ধনি ও সমাজের সুবিধাভোগীরা ছাড়াও পেটি বুর্জোয়া শ্রেণির বৃহৎ একটি অংশ বিএনপিতে রয়েছে। তাদের সঙ্গে পেটিবুর্জোয়া আওয়ামি ফ্যাসিস্টদের কি পার্থক্য? সেটা এই যে বিএনপিতে বাঙালি জাতিবাদী পেটি-বুর্জোয়া ফ্যাসিস্টদের সংখ্যা কম। বিপরীতে বুর্জোয়া চিন্তাচেতনা সম্পন্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রাধান্য বেশী। পেটবুর্জোয়ার ফ্যাসিস্ট প্রবণতা নাই, বলব না। আছে। কিন্তু বুর্জোয়া চিন্তাচেতনায় আস্থাশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণীই বেশী। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ব্যাক্তি স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের গুরুত্ব তারা আগের চেয়ে অধিক উপলব্ধি করতে এখন সক্ষম এটা আশা করা যায়। আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় 'মানবাধিকার একটি ইস্যু, সেটা তারা মার্কিন সেংশান থেকেও হয়তো বুঝবে।
কিন্তু মিল হচ্ছে ইসলাম প্রশ্নে, বাঙালি জাতিবাদীদের মধ্যে আমরা যে ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলাম ভীতি দেখি, বিএনপির মধ্যেও একটি শক্তিশালী ধারার মধ্যে সেটাই দেখি। ইসলামকে গণতান্ত্রি ও মানবাধিকারের রাজনীতির দিক থেকে মোকাবিলার নীতি ও কৌশল বিএনপির জানা নাই। তাই তারা হেফাজতের বড় একটি অংশের সমর্থন হারিয়েছে। জামায়াতে ইসলামি থেকে বিএনপি নিজেদের দূরে রাখছে। বিএনপিকে এর মীমাংসা করতে হবে। নইলে এটাই বিএনপির কাল হবে। শেখ হাসিনার তাহাজ্জতের নামাজ এবং লম্বা সময় ধরে ইসলামপন্থি প্রভাবশালী একাংশের সন্ধিকে বিএনপি রাজনৈতিক গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফ্যাসিস্ট শক্তির মোকাবিলায় জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করবার পথ অনুসন্ধান করতে হবে।
বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিএনপির পশ্চাপদতা দলটির সীমাবদ্ধতা বলে আমি মনে করি না। কারণ বাঙালি জাতিবাদী ফ্যাসিস্টদের মোকাবিলা -- বিশেষত তাদের ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলাম নির্মূল রাজনীতির জন্য জরুরি বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বাংলাদেশে এখনও অপরিণত। কিন্তু আমরা পিছিয়েছি বলা যাবে না। এগুচ্ছি। তবে আস্তে আস্তে। সাধারণ ভাবে বাংলাদেশে বুর্জোয়া চিন্তা চেতনার বিকাশের অভাবই বিএনপির 'বুর্জোয়া' চরিত্র বিকাশের মন্থরতার জন্য দায়ী। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে শুধু রাষ্ট্রের নয়, ফ্যাসিস্ট বিরোধী লড়াইয়ে জিততে হলে বিএনপি ও ইসলাম্পন্থি রাজনৈতিক দলগুলোরও সংস্কার লাগবে। হাসিনা ঠিকই বলেছেন,তাঁকে ক্ষ্মতা থেকে হঠানো 'এতো সোজা নয়।
ঠিক, এগুলো তত্ত্ব কথা, কিন্তু জরুরি। তত্ত্ব ছাড়া ভেড়ার পালও কোরবানি হয়ে যায়। একাত্তরে আমাদের দিল্লীর পদতলে উৎসর্গ করা হয়েছিল। আমরাও সানন্দে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মন্দির সোপান তলে বলী হয়ে গিয়েছিলাম। বিএনপিকে পরিষ্কার করবার দরকার আছে যে মার্কিন ও ন্যাটো ভূক্ত পরাশক্তির গির্জায় তারা আমাদের নতুন করে বলী দেবে না। অর্থাৎ মার্কিন সেংকশান আর মার্কিন সমর্থনে ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি মার্কিন স্বার্থ রক্ষার খুঁটি হবে না। আমাদের নিজেদের নিরপেক্ষ কিন্তু বাস্তবোচিত পথ বের করতে হবে। বাংলাদেশ একটা সম্ভাবনার মোহনায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভুল করা যাবে না।
বাংলাদেশের নির্লজ্জ মার্কিনপন্থি গণমাধ্যমগুলো গুলো ১০ তারিখের আগে বেশ বিএনপিমুখী হয়ে উঠেছে মনে হোল। দশ তারিখের পর তাদের ভাব আগের মতোই আবার। শেখ হাসিনা তো বলেই দিয়েছেন তাঁকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ 'এতো সোজা না' । কিন্তু বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, সহিংসতা এবং ফাঁদে ফেলে মেরুদণ্ড ভেঙে দেবার ফন্দি শেষমেষ কাজে লাগে নি। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা তাদের গৃহযুদ্ধের কৌশল থেকে এক কদমও সরে আসে নি। রাস্তায় রাস্তায় মহল্লায় মহল্লায় 'জয় বাংলা' শ্লোগান ধ্বনিত হচ্ছে। এটা জনগণের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়েও হতে পারে। তবে আমি একে আসন্ন গৃহযুদ্ধের রণধ্বণি হিশাবেই শুনছি।
এরই মধ্যে মাঝে মধ্যে 'একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার' ধ্বনিও শুনেছি। প্রথমে এই শ্লোগানের মর্ম বুঝি নি। জামায়াতের আমীর ডা শফিকুর রহমানের গ্রেফতার দেখে বুঝেছি, যুদ্ধের ময়দান আওয়ামী লীগ পুরানা নকশা অনুযায়ী সাজাচ্ছে, পুরানা ছকের বিশেষ হেরফের নাই। বিএনপি আর জামাতকে একত্র রাখা এবং ইসলামি মৌলবাদী শক্তি বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতি সামনে আনা দিল্লীর নীতিরই পুনরাবৃত্তি। দিল্লী নিজেও এই নীতির কার্যকারিতা আর আছে কিনা সেটা সন্দেহ করে। জামায়াতের আমীরের গ্রেফতারের পর আমরা এখন শুনব জামায়াত এবং বিএনপি মিলে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। বিএনপি অফিসে খিচুড়ি আসলে খিচুড়ি ছিল না, ছিল বিশেষ প্রকার বিস্ফোরক রেসিপি। পুলিশ সেই মহা বিস্ফোরক খিচুড়ি উদ্ধার করেছে। মীর্জা আলমগীর আর মীর্জা আব্বাস পুলিশকে পটকা মেরেছেন। স্ক্রিপ্টা খুবই ফালতু ও দুর্বল হওয়ায় এখন জামায়াতের আমীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াত-বিএনপি মিলেই মহা ষড়যন্ত্র করেছে। দেশবাসী হুঁশিয়ার!!
খালেদা জিয়ার আপোষহীন অবস্থান, ফ্যাসিস্ট অত্যাচার-নিপীড়ন-অপমান সহ্য করার মধ্য দিয়ে তাঁর ভাবমূর্তি বৃদ্ধি এবং মহাসচিব মীর্জা আলমগীরের প্রায় অসাধ্য সাধন -- অর্থাৎ তাঁর নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ছাড়া বিএনপির দশদফা নতুন কোন রাজনৈতিক প্রেরণা তৈরি করবে না। সামনে অনেক বিপদ্ আসবে। সেই সব মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিএনপি কোন বর্ম দাঁড় করাতে হলে তাদের আরও ভাবতে হবে। আগেই বলেছি, দশ দফা যেই লাউ সেই কদু হয়েছে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন -- এর বাইরে বিএনপির কি আর কিছুই বলার নাই? জনগণকে কিছুই দেবার নাই?
#বিএনপি, #বাংলাদেশ, #গণতন্ত্র