ইসজরায়েল ও মোদির ভারতের মধ্যে স্বাভাবিক দোস্তি বর্তমান


“Today’s Israel and Modi’s India are natural partners, sharing values of racist ethnocracy and illegal annexation, and, for Israel, offering a market for military and other advanced technology". (Noam Chomsky)

জায়নবাদি ইজরায়েল আর হিন্দুত্ববাদী মোদির ভারতের মধ্যে স্বাভাবিক দোস্তি বর্তমান। অথচ কেউ কেউ দাবি করেন ফিলিস্তিন অনেক দূরের ব্যাপার, ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রাম নিয়ে আমাদের না ভাবলেও চলবে।

বাংলাদেশে যারা এই দাবি করে তারা শুধু যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, এবং জায়নিস্ট রাষ্ট্র ইজরায়েলের নীরব সমর্থক তা নয়, তারা একই সঙ্গে বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী দিল্লির স্থানীয় বরকন্দাজ। ফ্যাসিস্ট শক্তি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের লড়াইকে তারা খাদে ফেলে দিয়েছে। নোম চমস্কির ওপরের বক্তব্য যদি বুঝি এবং বিশ্ববাস্তবতার খোঁজখবর নিতে থাকি তাহলে সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়।

চমস্কি পরিষ্কার বলছেন, এখনকার ইজরায়েল আর হিন্দুত্ববাদী মোদীর ভারত অতি স্বাভাবিক মিত্র। তাদের দোস্তি চিন্তাচেতনার দিক থেকে অতিশয় স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক, এই দোস্তালির বিপদ সম্পর্কে তিনি বারবারই সতর্ক করেছেন। তারা একই আদর্শ ও একই লক্ষ্য ধারণ করে। তারা অন্যায় ভাবে অন্য জনগোষ্ঠির জমি নিজেদের দখলে নিতে চায়: প্যলেস্টাইন ও কাশ্মির যেমন। দিল্লি কাশ্মির দখল করে নিয়েছে, বাংলাদেশ সরাসরি দখল করা তাদের জন্য ডালভাত। তাদের বর্ণবৈষম্যবাদ, জাতিবিদ্বেষ এবং পরধর্ম ঘৃণার চরিত্র একই।

অপরাপর আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরাধীনতার চেয়েও বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য ভয়ংকর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী ভারত, মোদির দিল্লি। ইজরায়েলের দোসর হিন্দুত্ববাদী দিল্লি বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের সকল জাতিসত্তা ও রাজনৈতিক জনগোষ্ঠির অস্তিত্ব যাপন, রাজনৈতিক সত্তার বিকাশ এবং নিজ নিজ রাষ্ট্র সুরক্ষার প্রধান চ্যালেঞ্জ।

মণিপুরসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বাস্তবতা আমরা জানি। তেমনি বাংলা ও বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হিশাবে হিন্দুত্ববাদ হাজির হয়েছে। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান রণধ্বণি বাংলাভাষী ও বাংলা সংস্কৃতির ধারক ও বাহকদের কৃত্রিমভাবে বিভক্ত করে রেখেছে। এই দিক থেকে ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে হিন্দুত্ববাদই প্রধান জাতীয় ও উপমহাদেশীয় সংকট। এই অবস্থা মোকাবিলার প্রধান পথ হচ্ছে জনগণকে এই বিপদ সম্পর্কে ক্রমাগত অবহিত রাখা। বাংলাদেশে যারা এই কর্তব্য থেকে সরে গিয়েছে রাজনৈতিক শক্তি হিশাবে তাদের ক্ষয় অনিবার্য। এই আত্মঘাতি ভুল তারা আদৌ কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা তা প্রশ্নসংকুল হয়ে গিয়েছে।

ইজরায়েল ও হিন্দুত্ববাদী ভারত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রূপান্তরের গণসংগ্রামও জায়নিবাদী ইজরাইয়েল এবং হিন্দুত্ববাদী দিল্লির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই আবর্তিত হবে। কেন? নোম চমস্কি সেটা ঠিকই ধরেছেন: হিন্দুত্ববাদী ভারত ইজরায়েলের অস্ত্রের প্রধান বাজারও বটে। উপমহাদেশ যুদ্ধ ও অস্থিতশীলতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে দ্রুত।

কাশ্মির ও বাংলাদেশ অচিরে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিলে অবাক হওয়ার কিছু নাই। যুদ্ধাস্ত্র তৈরি এবং তা যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে ব্যভার ও খরচ ছাড়া আধুনিক পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। অস্ত্র ব্যবহার না করলে তার বেচাবিক্রি হবে কিভাবে? কিভাবে এই পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করব?

দরকার রাজনৈতিক সচেতনতা এবং উপমহাদেশে জনগণের গণতান্ত্রিক মৈত্রীর বিকাশ। শক্তিশালী গণমৈত্রী ছাড়া নব্য সাম্রাজ্যবাদের ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল হত্যাযজ্ঞ রুখে দেবার সহজ কোন পথ নাই।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।