শাহবাগের সুরতহাল

এই লেখাটির প্রথম অংশে ওয়ার অন টেররের বয়ান বিশ্লেষণের মাধ্যমে কিছু প্রাথমিক যুক্তিকাঠামো (logical framework) দাঁড় করানো হয়েছে। এরপর শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে পূর্ববর্তী যুক্তিকাঠামোর সাযুজ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। পরিশেষে আছে উদাহরণ আকারে একটি লেখার (ফেসবুক পোস্ট) পর্যালোচনা।
মার্কিন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ (War on Terror) একটি ইচ্ছাকৃত নির্বুদ্ধিতা বা উৎকল্পনার ওপর প্রতিষ্ঠিত, যা কিনা ‘সন্ত্রাস’ এবং ‘যুদ্ধ’-কে পরস্পরবিরোধী ধারণা আকারে দেখাতে সক্ষম। যেখানে ‘জঙ্গ’ জিনিসটা কেবল এক বিশেষ পক্ষের জন্যেই চিরন্তন ন্যায্য, মানে সন্ত্রাসীদের যুদ্ধ করবার কোনো ‘ন্যায্য অধিকার’ থাকতে পারে না। যা এই সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী করে তোলে তা শুধু ন্যায্য অধিকারের অভাব নয় বরং তারা মজ্জাগত শয়তান (Inherent Evil) বলে। অপরদিকে আমরা, যুদ্ধবাজেরা, সত্তাগত ফেরেশতা (ontologically Good); আমরা যা করি না কেন, আমাদের স্বভাব নিরন্তর ভালোর পক্ষে। আমরা শয়তানী চক্রান্তের (Axis of Evil) বিরুদ্ধে এক সংযমী জোট (alliance of moderation)। এটাই ভালো এবং খারাপের মরমীকরণ (essentialisation), সোজা ভাষায় ‘দ্বিবিভাজন’ (binary)।
তাই যখন “আমরা” “ভূলবশত” বাচ্চাকাচ্চায় ঢাসা সারি সারি দালানকোঠা আমাদের সংযত বোমার আঘাতে মাটির সাথে মিশিয়ে দিই, তখনও আমরা সংযমী। “তাদের”, মানে শয়তানদের, এবং “আমাদের”, মানে ফেরেশতাদের, একমাত্র ফারাক কেবল নিয়তের; সন্ত্রাসীরা ইচ্ছা করে বেসামরিকদের তাক করে। সেটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য, কেননা তারা শয়তান। যদিও আমরা আরো বেশি বেসামরিকদের হত্যা করে থাকি, আমরা আসলে এমনটা ‘চাই’ না। অয়তেব আমরা ফেরেশতাই। ফরহাদ মজহার তার ‘ক্রুসেড, জিহাদ ও শ্রেণীসংগ্রাম’ (২০০১) প্রবন্ধে ওয়ার অন টেররের ব্যাখ্যা দেন এভাবে: “কে সন্ত্রাসী আর কে সন্ত্রাসী নয়, সেটা বৃথাবাহাস। ‘সন্ত্রাস’ সম্পর্কে গুরুগম্ভীর তত্ত্ব ও নীতিকথাও বাজে, ফালতু তর্ক। প্রশ্নটা আসলে অতি সহজ ও সরল। আমরা এবং তোমরা। হয় তোমরা আমাদের সঙ্গে অথবা তোমরা ওদের পক্ষে—অতয়েব আমাদের দুশমন। সন্ত্রাসী। হয় তোমরা আমাদের আধিপত্য ও অধীনস্থতা মেনে নাও—অথবা ধ্বংস হয়ে যাও। এই হচ্ছে পরিপ্রেক্ষিত” (২০০২:১৭)।
সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ও দার্শনিক মার্ক ফিশারের দাবি, এই উৎকল্পনার বাসনাগত গোড়ায় রয়েছে এক অতি-সামরিকায়িত রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবচেতন। অনিবার্যভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আসল রূপ ছিল চাক্ষুষ (spectacular)। এর উৎস ৯/১১-পরবর্তী সামরিক-শিল্প-বিনোদন কমপ্লেক্সের চাহিদার ভেতর, যেখানে রাষ্ট্রের কেবল কাজ করলেই হচ্ছে না তাকে কাজটা দেখিয়ে দেখিয়ে করতে হয়। জঁ বোদ্রিয়ারের বরাতে ফিশার প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের (Gulf War 1) কথা উল্লেখ করেন, যে যুদ্ধ মিডিয়াকরণের নিয়মে (logics of mediatisation) ঘটেছিল। কোনো প্রকার সম্মুখ সমরে লিপ্ত না হয়ে চকচকে মরুভূমির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবল কার্পেট বোমাবাজি করে যুদ্ধের নাটক সাজিয়েছিল, এই একপাক্ষিক বোমাবাজিই ‘যুদ্ধ’ আকারে বিজ্ঞাপিত হয়েছে কেননা ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরাজয়ের চিহ্ন মুছে দিয়ে আরো উন্নত যুদ্ধপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ মার্কিন সামরিক-শিল্প বহরের বিকল্পহীন বৈশ্বিক ক্ষমতা আকারে আবির্ভূত হতে হতো।
সেজন্যে বোদ্রিয়ার মজা করে বলেন, “গাল্ফ ওয়ার নামের কিছু ঘটেই নাই”, কেননা বাস্তবের ‘যুদ্ধ’-এর চেয়ে সেখানে যুদ্ধের বিজ্ঞাপন-বাণিজ্য বা ভাবপ্রদর্শন (spectacle) বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাস্তব যুদ্ধের সত্য অস্বীকার করা বোদ্রিয়ারের উদ্দেশ্য না। উদ্দেশ্য এই নতুন বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কিভাবে ‘যুদ্ধ’ নামক ঘটনার বাস্তবতা (facticity) অন্যান্য শর্তের দ্বারা অতিনির্ধারিত (overdetermined), তা দেখানো। যেখানে কৌশলী ও কার্যকর সামরিক বলের চেয়ে ‘দৃশ্যমান বল’ (conspicuous force) আকারে হাজির হতে পারাটাই রাজনীতির মুখ্যে। যখন থেকে গুলি-করে-উড়ায়-দেও-মার্কা (shoot-em-up) ভিডিও গেম ব্যবসার আদলে আগামী দিনের সকল সেগা-সনি-সিএনএন যুদ্ধ (Sega-Sony-CNN war) পরিচালিত হওয়া শুরু হয়। ১৯৮৩-৮৪র ভিডিওগেম ধসের পর সেগা, সনি এবং নিন্টেন্ডো প্রমুখের খোলা বাজারে প্রবেশের পরোক্ষ অথচ দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ছিল নতুন যুগের যুদ্ধপ্রযুক্তির স্বাভাবিকীকরণ এবং সহিংসতার প্রতি সামাজিক অসংবেদনশীলতা গড়ে তোলা।
দেখা যাচ্ছে দৃশ্যমান বলের আরেকটা দ্বিতীয় নির্বুদ্ধিতার আশ্রয় নিতে হয়: শত্রুর কীটাণুকরণ (verminisation of the enemy)। এটা কার্ল স্মিটের শত্রুমিত্র ধারণার ঠিক উল্টো। স্মিট বলেন: “আমার রাজনৈতিক শত্রু আমার প্রতিদ্বন্দ্বি (hostis), আমার অপ্রিয় (inimicus) না; তার সাথে আমার সম্পর্ক যুদ্ধের (polemios), ঘৃণার নয় (exthros)।” তবে এই চাক্ষুষ যুদ্ধের যুগে শত্রু আমার সম্মানিত প্রতিযোগী হতে পারেনা, বরং সে এক অজ্ঞাত সত্তা যার নিধনই একমাত্র জুতসই। সেখানে শত্রু মানে মজ্জাগত শয়তান, অতয়েব হত্যাযোগ্য। অথচ স্মিটের অনুমান শত্রুমিত্রের সহাবস্থান খোদ রাজনৈতিক পরিসরের অস্তিত্বের প্রশ্ন। রাজনৈতিক পরিসরে কথা বলে যুক্তি, বুদ্ধি, ভালোবাসা, আপস, কৌশল, ফুসলানি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে মতাদর্শিক স্তরে প্রভাব বিস্তারের পাল্টাপাল্টি প্রয়োগ চলতে থাকে—এটাই রাজনীতি। তবে নির্মূলের আকাঙ্ক্ষা রাজনৈতিক পরিসরের অস্তিত্বের লোপ ঘটায় কেননা তা রাজনৈতিক সহাবস্থানের শর্ত বিনষ্ট করে, তা সমাজ কিংবা জনগোষ্ঠী পরিগঠনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মূল আলাপে ফিরি।
মৃত্যু এবং ধ্বংস নিয়ে নতুন যুগের যুদ্ধের এই অধিবাস্তবিকরণ (hyperrealisation), বিনোদন-বাণিজ্যের এই বিকৃত সংখ্যাকাম ব্যাপক মাত্রায় বাস্তব মৃত্যুর শর্ত প্রতিনিয়ত উৎপাদন এবং পুনরুৎপাদন করতে থাকে—এই সত্য ওয়ার অন টেরর সহজে এড়িয়ে যায়। কীটাণুকরণ কেবল শত্রুকে অযৌক্তিক নিধনযোগ্য মানবেতর ঝাঁকে (subhuman swarm) পরিণত করেনা, তা ‘আমাদেরকে’ ‘এদের’ জঘন্য আগ্রাসী কাল্পনিক জুলুমের মজলুম বানায়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ জারি রাখার ‘ন্যায্য অধিকার’ মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে আসে এই সামষ্টিক মজলুমিয়াত (victimhood) থেকে। জেমস ক্যামেরুনের ‘এলিয়েনস’ (১৯৮৬) চলচ্চিত্র প্রথম মার্কিন সামরিক-শিল্প-বিনোদন বহরের পোস্ট-ভিয়েতনাম নতুন রূপটি সবার সামনে নিয়ে আসে: “আমাদের” “নারী ও শিশুকে” নির্মমভাবে অনবরত হত্যা করা হচ্ছে, অপর দিকে এই কীটগুলো (xenomorph) জীবিত যাদের না আছে কোনো স্মৃতি না আছে উদ্দেশ্য; বিবেচনাহীনভাবে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করা যার নিয়তি। এই সংক্রামক (contagion) স্বাস্থ্যবিধির প্রতি হুমকিস্বরূপ (hygienic concern) । এদের নির্মূল করাটাই বাস্তবিক সমস্যা: একমাত্র সমাধান কীটের ঢিবি (nest) খুঁজে বের করা এবং সঠিক ও উন্নত থেকে উন্নততর যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োগ করা।
ফিশারের মতে এই বয়ানটাই ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’, এটাই মার্কিন সমরনীতি: ‘এদের’ সকল অবকাঠামো উড়িয়ে দাও, ‘এদের’ সকল কর্মীদের নির্মূল করো। তবে এটা করার মধ্য দিয়ে যে ‘আমরা’ আরো সন্ত্রাসের রূপকে আকার দেব; অক্ষয় এবং অসীমতক পুনঃপ্রদর্শনযোগ্য (replayable) এক অনুভূতির ভান্ডার (repositories of affect) তৈরি হবে, যা প্রতিক্রিয়া দাবি করতে থাকবে এবং পাল্টা (ন্যায্য) অভিযোগ তৈরি করবে, খোদ সন্ত্রাসের এর থেকে তীব্র পরিবর্ধক আর হতে পারেনা। অর্থাৎ ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ একটা সাইবার চাক্ষুষে যুদ্ধে (cyber-spectacular war) পরিণত হওয়ায় নিজে নিজেই সন্ত্রাসের শর্ত পুনরুৎপাদন করতে থাকে এবং নিজের ‘অপর’-কে জিইয়ে রাখে। প্রতি মুহুর্তে নতুনতর যুদ্ধপ্রযুক্তির মহরা ‘দেখিয়ে’ দিতে পারা এবং নিরন্তর যুদ্ধব্যবসা বা সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স টিকিয়ে রাখা—এটাই মার্কিন ‘অনন্ত যুদ্ধ’ (perpetual war)। এখানে যুদ্ধের ছবি (war imagery) বিচরণ করে এবং আত্মস্ফীতি ঘটায় পুঁজির প্রতিক্রিয়া চক্রের (feedback loop) নীতি অনুসরণ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভাষায় যাকে কলনবিধি (algorithm) বলে ঠিক তার মতো। আজ পর্যন্ত যেভাবে ‘এলিয়েন’ ফ্রাঞ্চাইজ জারি আছে, মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস দমনের নামে অনন্ত ক্রুসেড জারি আছে। বাৎসরিক অন্তত এক ট্রিলিয়ন ডলার (১০০০০০,০০,০০,০০০ $) মার্কিন ফেডেরাল সরকার সামরিক খাতে ব্যয়ও করছে। আবার আজ অবধি ইজরায়েল তার সকল বোমাবাজিতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধ অনন্ত যুদ্ধের’ বয়ান অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আসছে।
এই পর্যায়ে আমার দুই সিকি হলো: বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে ‘শাহবাগ’ নামক ঘটনার পেছনে যে ‘লজিক’ তা ঠিক এই ফিশারীয় ‘ওয়ার অন টেররের’ বিশ্লেষণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। স্বাভাবিকভাবেই শাহবাগকে ‘কেবল’ ওয়ার অন টেরর দিয়ে বোঝা যাবে না। বরং বাংলাদেশে আশির দশক থেকে পাকিস্তান, ইসলাম ধর্ম, প্রতিক্রিয়াশীলতা ইত্যাদির বিপরীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, প্রগতিশীলতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে যে ‘আওয়ামীকরণ’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তার সাথে ‘ওয়ার অন টেররের’ সফল মিউটেশন ঘটানোর মধ্য দিয়ে এখানে শাহবাগ আন্দোলন দাঁড়ায়। অনেকটা যেমন মোহাম্মদ আজম তার ‘সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ’ (২০২২) বইয়ের সূচনাপত্রে বলছেন, “ভূরাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন ব্যাকরণ এবং দুনিয়াজোড়া ‘সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধ’ নিশ্চয়ই ‘রাজনৈতিক’ অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। কিন্তু ওই উপাদানগুলো কার্যকর হয়ে বাংলাদেশ-রাষ্ট্রের কাঠামোগত ধ্বংস ত্বরান্বিত করতে পেরেছে সাংস্কৃতিক রাজনীতির জল-অচল বৈপরীত্যকে কাজে লাগিয়েই” (২০২২:১৯)। এই অর্থে রেট্রোস্পেকটিভলি (পেছনে ফিরে তাকিয়ে) আমরা ‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’-কে একটা ৯/১১-পূর্ববর্তী প্রোটো-শাহবাগী ফেনোমেনা আকারে দেখতে পারি। মোহাম্মদ আজম বলেন, “বাহ্যত যতটা মনে হয়, শাহবাগ আন্দোলন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তারচেয়ে অনেক বেশি আত্মীয় এবং ধারাবাহিকতা। দুটিই আগের দেড়-দুই দশক জুড়ে তৈরি-হওয়া ভাষা-কাঠামোর গহ্বর থেকে উৎপন্ন, এবং তার অধীনেই কাজ করেছে... ভাষা ও চিহ্নের ব্যবহার ও উৎপাদন, এবং বিদ্যমান দ্বি-বিভাজনকে আরো গভীর করে তোলা ইত্যাদির ক্ষেত্রে দুয়ের মিল প্রায় আক্ষরিক” (২০২২:২০)। তবুও ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন যে এক বিশেষ ঘটনা তা এড়িয়ে একে স্রেফ অশীতিপর আওয়ামীকরণ (post-80s Awamification) দিয়ে ব্যাখ্যার চেষ্টা করার দোষ হলো তা ‘শাহবাগের পাপ’ লঘু করে তোলে।
হাসিনা রেজিমের ফ্যাসিবাদের চিহ্নতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক জন্মলতিকা (semiotic and cultural-political geneology) খুঁজতে নিশ্চয়ই আমাদের একে পঁচাত্তর-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে পাঠ করতে হবে, তবে সেটা ‘শাহবাগী অস্তিতত্ত্ব’-কে (Shahbagi ontology) এড়িয়ে কখনোই না। শাহবাগ আন্দোলন আদিতে ন্যায়বিচারের দাবিতে এক স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল যাকে পরবর্তীতে গণজাগরণ মঞ্চের দ্বারা রাষ্ট্রপক্ষ হাইজ্যাক করেছিল—এমন কৈফিয়ত বাজারে চাউর থাকলেও—শাহবাগী অস্তিতত্ত্ব কাঠামোগতভাবে ওয়ার অন টেররের ঐ রাজনৈতিক-গণমাধ্যমিক অবচেতনের (politico-mediatic unconscious) মধ্যেই প্রোথিত। রাজনৈতিক অস্তিতত্ত্বের জায়গা থেকে, শাহবাগের শব্দচয়ন বা বাচনভঙ্গি নিঃসন্দেহে ছিল বৈশ্বিক ওয়ার অন টেররের স্থানীয় (local) এবং বিশেষ (particular) বহিঃপ্রকাশ। এটাকে ওয়ার অন টেররের আওয়ামীকরণও বলা যেতে পারে।
শাহবাগের নানারকমের কুসুম কুসুম সমালোচনার মধ্যে একটা হলো, শাহবাগের একমাত্র সমস্যা ছিল বিচারের দাবি না করে ফাঁসি চাওয়া। এই সরল ব্যাখ্যা অনুমান করে বিচার-নামক ঘটনা শাহবাগের উদ্দেশ্যের ভেতর হাজির থাকতে পারত বা গণজাগরণ মঞ্চের দ্বারা আওয়ামী লীগ যদি শাহবাগ আন্দোলন দখল না করত তাহলে আমরা একটা ‘গুড শাহবাগ’ পেতাম, যেখানে যুদ্ধাপরাধের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার অনুষ্ঠিত হতো। আমরা দেখব শাহবাগের রাজনৈতিক অবচেতনের ভেতর বর্গ আকারে ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’ কখনো স্থান পেতে পারত না দেখেই তা বিচারের সকল শর্তের বিলোপ ঘটিয়েছিল। শাহবাগের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার ছিল ‘রাজাকার’ শব্দের এমন এক ব্যবহার যা খোদ ন্যায়ের সম্ভাবনা নিষ্কৃয় বা তামাদি করে দেয়। একবার এই শব্দের প্রয়োগ ঘটে যাবার পর বিচারিক প্রক্রিয়ার আর কোনো দরকার পড়ে না। ‘রাজাকার’ সাব্যস্ত হওয়া মাত্রই আপনার একমাত্র সম্ভাব্য পরিচয় ‘রাজাকার’, এই আগাম নির্ধারিত দোষের (pre-determined guilt) সঙ্গে প্রমাণ করা না-করার কোনো সম্পর্ক নেই, ন্যায়বিচারের কোনো সম্পর্ক নেই।
শাহবাগ ঘৃণা এবং বিভাজনের রাজনীতির ওপর ভর করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের যে মরমীকরণ ঘটিয়েছে তা হলো: (আওয়ামী লীগের পার্টিজান হয়ে কিংবা না হয়ে) আমরা যারা প্রগতিশীল, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি, যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদী, যারা ‘হাজার বছরের সংস্কৃতি’-বান, যারা সেকুলার, আমরা সত্তাগত ফেরেশতা (ontologically Good)। এর বিপরীতে বাকিরা যারা পাকিস্তানের দোসর, রাজাকার, প্রতিক্রিয়াশীল, ইসলামী, জঙ্গি, জামাত-বিএনপি-হেফাজত, তারা মজ্জাগত শয়তান (Inherent Evil)। এখানে বিভাজনের বয়ানটা দাঁড়ায়: আমরা খারাপ ‘পাকিস্তানের দোসর’ এবং ‘রাজাকার’-দের বিরুদ্ধে ভালো ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’। এর দ্বারা শাহবাগ নিজের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দির অস্তিগত মর্ম (ontological essence) মানে “সে-আসলে-যা” তা নির্ধারণ করে দেয়, যেখানে ‘রাজাকার’ বর্গের প্রয়োগমাত্র নিরীহতার সকল সম্ভাবনা নাকচ হয়ে যায় এবং বিচারিক প্রক্রিয়া মামুলি নিয়মবাদিতায় পর্যবসিত হয় কেননা দোষ আগাম (apriori) নির্ধারিত।
শাহবাগের প্রশ্নটা আসলে অতি সহজ ও সরল। “আমরা বনাম তোমরা”। হয় তোমরা আমাদের সঙ্গে মানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, সেকুলার-বাঙালী জাতীয়তাবাদী-প্রগতিশীল অথবা তোমরা ওদের পক্ষে মানে পাকিস্তানের দোসর- ইসলামপন্থী-প্রতিক্রিয়াশীল—অতয়েব আমাদের দুশমন। সন্ত্রাসী। হয় তোমরা সত্যের ওপর আমাদের একাধিপত্য (monopoly of truth) মেনে নাও—অথবা ধ্বংস হয়ে যাও। এই হচ্ছে পরিপ্রেক্ষিত: শাহবাগ মানে হককে বাতিল এবং বাতিলকে হক বলার ফ্যাসিস্ট ক্ষমতা। ‘রাজাকার’ বা ‘যুদ্ধাপরাধী’-র চিহ্নায়ন বা নামকরণের ভেতর দিয়ে বিচার-নামক ঘটনা ipso facto ঘটে যায়, যেই বিচারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়াটা কেবল বাকি। সেজন্যে “রাজাকারের ফাঁসি চাই” দাবিটাই শাহবাগের একমাত্র শ্লোগান হতে পারত এবং হয়েছে: বিচার এবং রায় যেহেতু ভূতাপেক্ষা হয়েই গেছে, তাই ফাঁসি চাওয়াটাই পথ। ফাঁসি চাওয়া ছাড়া শাহবাগের অন্য কোনো শ্লোগানের সম্ভাবনা ছিল না এবং ফাঁসি চাওয়ার মধ্য দিয়ে শাহবাগের কোনো তথাকথিত নৈতিক স্খলন ঘটেনি। অপরের প্রাণের অধিকার, বিচারের অধিকার এবং সত্যের অধিকার হরণ করার নামই শাহবাগ।
বিচারের অধিকার কেবল ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির’ থাকতে পারে এবং ‘রাজাকার’ বা অপরের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার অপ্রাসঙ্গিক, শুধু দ্রুত নির্মূলই সমাধান। শাহবাগী লজিকে, ন্যায়বিচারের একমাত্র সংজ্ঞা এভাবেই অপরকে নির্মূল করতে পারা। এটা ফিশারকথিত শত্রুর অপরায়ন (otherisation), কীটাণুকরণ (verminisation) বা নির্মূলের যুক্তি (exterminatory logic) থেকে আলাদা কিছু না। এই নির্মূলের অধিকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাছে ন্যায্য হয়ে ওঠে তার ‘তিরিশ লক্ষ শহীদ দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত’ নামক আদি মজলুমিয়াতের (victimhood) বরাত দিয়ে। ঠিক যেভাবে জামায়াত-শিবির, ইসলামী ডানপন্থী শক্তি ও জঙ্গিবাদের উত্থানের দোহাই দিয়ে হাসিনা রেজিমকে ন্যায্যতা দেয়া হতো। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হাতে কোনো যুদ্ধাপরাধ, কোনো ‘বিহারী ও চাকমা গণহত্যা’ বা ‘শাপলা গণহত্যা’ ঘটতে পারেনা, কারণ তার অস্তিগত নির্মাণের ভেতর এই সম্ভাবনা নাই। ওয়ার অন টেররের মঞ্চে ‘সন্ত্রাসী’-র যে চিত্র এবং শাহবাগে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বা ‘রাজাকার’-এর যে ছবি, তা একই পটে আঁকা। অস্তিত্বই তথাকথিত ‘সন্ত্রাসী’ এবং ‘রাজাকার’-দের অপরাধ। যেখানে বোমা মেরে দেশের পর দেশ সমান করে দেয়া যুদ্ধবাজেরা কথিত পটকাফুটানো ‘সন্ত্রাসী’-দের চেয়ে ন্যায্য। ন্যায় এবং সত্য ভালোর পক্ষে এবং যুদ্ধবাজেরা ভালো অতয়েব ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ’ ন্যায্য ও সত্য। একইভাবে, ন্যায় ও সত্য ভালোর পক্ষে এবং ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ ভালো অতয়েব শাহবাগ ন্যায্য এবং সত্য। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এখনো আমরা দেখতে পাই কিভাবে ‘উগ্রপন্থী’, ‘ডানপন্থী’, ‘বাল্কায়েদাপন্থী’ ইত্যাদি পুরাতন জঙ্গিজুজুর নতুন বাজারজাতকরণ ঘটছে। এটাই শাহবাগের ভূত।
তাছাড়াও আমরা যেন না ভুলি, ‘ব্লগার হত্যাকাণ্ড’ নামক আরেক উৎকল্পনার ভিত্তিতেই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছিল, যা শাহবাগের অন্যতম তাসের তুরুপ। শাহবাগ যে অপরের জুলুমের শিকার, ইসলামপন্থী উগ্রবাদী জঙ্গিদের কাছে ভিক্টিম—এই বয়ান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শাহবাগের অস্তিতত্ত্বীয় ন্যায্যতা ভিন্ন মাত্রা গ্রহণ করেছিল। এমনকি ব্লগার রাজিব হায়দার ওরফে থাবা বাবা শাহবাগের ‘প্রথম শহীদ’ ঘোষিত হন, অথচ হায়দার সহ তৎকালীন সকল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরকারি সংস্থার সরাসরি ইন্ধনের সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। বদ্রিয়ারের মতো বলা চলে, “বাংলাদেশে ব্লগার কিলিং বলে কিছু ঘটেই নাই”। কেননা বাস্তবের ‘হত্যাকাণ্ড’-এর চেয়ে সেখানে হত্যাকাণ্ডের বিজ্ঞাপন-বাণিজ্য বা ভাবপ্রদর্শন (spectacle) বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশে পাকিস্তানের দোসর, রাজাকার, জামাত-বিএনপি-হেফাজত, ইসলামপন্থী জঙ্গিরা আদি হত্যাকারী এবং ‘নাস্তিক ব্লগার’-সহ সকল মুক্তমনা ‘শাহবাগী’ হত্যাযোগ্য প্রাণ (homo sacer)—এই মিথ্যা বারবার বলার মধ্য দিয়ে শাহবাগ একমাত্র সত্য আকারে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। যেই উৎকল্পনার সঙ্গে সমস্ত সরকারি সংস্থা এবং পত্রপত্রিকা-মিডিয়া জড়িত। বাস্তব হত্যাকাণ্ডের সত্য অস্বীকার করা কারো উদ্দেশ্য নয়, তবে কিভাবে ‘ব্লগার হত্যাকাণ্ড’ নামক ঘটনার বাস্তবতা (facticity) অন্যান্য শর্তের দ্বারা অতিনির্ধারিত (overdetermined) তা দেখতে পারা জরুরি। হাসিনা রেজিমের জঙ্গিজুজুর অন্যতম ভিত্তি এবং বৈধতাদানকারী এই বর্গকে ঘিরেই শাহবাগের রাজনীতি আবর্তিত। ‘ব্লগার হত্যাকাণ্ড’ শাহবাগের সেই আদিমিথ যার ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগের সকল সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক অস্তিতত্ত্বীয় নির্মাণ বৈধতা পেয়েছিল। এই ‘ব্লগার হত্যাকাণ্ড’-জাত জঙ্গিজুজু কেবল ইসলামপন্থী শত্রুকে অযৌক্তিক নিধনযোগ্য মানবেতর ঝাঁকে (subhuman swarm) পরিণত করেনি, তা শাহবাগের পক্ষে এক হাওয়াই মজলুমিয়াতের বয়ান দাঁড় করাতে পেরেছিল। শাপলা চত্বরে ‘অপারেশন ফ্লাশ আউট’ চালানোর সামাজিক বৈধতা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছে আসে মিডিয়া-সংস্থা-দূতাবাস-শাহবাগজাত এই মজলুমিয়াতের বয়ান থেকে (যেখানে রাতের আঁধারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে শাপলা গণহত্যা হয়ে যায় ‘অবরুদ্ধ ঢাকায় ব্যাপক সহিংসতা’, ‘Hefajat Strikes Horror’ বা ‘Hefazat's barbarity’)।
শুরু থেকেই শাহবাগের কাছে সুষ্ঠু এবং পদ্ধতিগত বিচারিক প্রক্রিয়ার চেয়ে ‘দৃশ্যমান বল’ (conspicuous force) আকারে হাজির হতে পারাটাই মুখ্য ছিল। দৃশ্যমান বল আকারে শাহবাগের আবির্ভাব ঠিক যুদ্ধের মিডিয়াকরণের নিয়মে (logic of mediatisation) ঘটেছে। শ্লোগান, লালসবুজের পতাকা, অনশন, আবৃত্তি-গান, জাতীয় সংগীত, দেশপ্রেম, স্যালাইন ইত্যাদির যে সম্প্রচার ও পরিবেশন তাতে সাংস্কৃতিক চিহ্নব্যবস্থার প্রয়োগ পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের আকার গ্রহণ করেছিল। কেন কতিপয় বুদ্ধিজীবী শাহবাগকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ ডেকে বসলেন তা বুঝতে কষ্ট হয়না। শাহবাগের আসল রূপও ছিল চাক্ষুষ (spectacular) যুদ্ধের ন্যায়। যার উৎস অজ্ঞান ‘আওয়ামী’ ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদী’ বাসনার ভেতর। ক্যালকেশীয় রাবীন্দ্রিক সংস্কৃতিচর্চার পুরাতন আওয়ামীকরণের সঙ্গে নতুন পোস্ট-৯/১১ পোস্ট-জেএমবি ‘ব্লগার হত্যা’-র আবহাওয়ায় জঙ্গিজুজু মিশিয়ে শাহবাগে ফ্যাসিবাদের মহড়া চলতে থাকে। ওয়াল্টার বেনিয়ামিনের ভাষায় যেটাকে আমরা ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা আকারে চিনি: ‘রাজনীতির নান্দনিকীকরণ’ (aestheticisation of politics), তার পূর্ণাঙ্গ সর্বশক্তিমান প্রদর্শন আমরা শাহবাগে দেখেছি।
বিচারের সম্ভাবনা অস্তিগতভাবে নাই করে দিয়ে শাহবাগের এই তামাদি ন্যায় (foreclosure of justice) যে ব্যাপক মাত্রায় অন্যায় এবং জুলুমের শর্ত প্রতিনিয়ত উৎপাদন এবং পুনরুৎপাদন করেছে—এই সত্য শাহবাগ যত সহজে এড়িয়ে যায়, ব্যাপারটা তত সরল ও নির্দোষ নয়। শাহবাগকে ঘিরে বাংলাদেশের সমাজের ভেতর হাজির চিড়গুলোকে যেভাবে চিরস্থায়ী অমেরামতযোগ্য দুই চিরায়ত ভাগে বিভক্ত করা হলো, এই বিভক্তিবাদী মেরুকরণের খেসারত আমাদের জনগোষ্ঠীকে যুগের পর যুগ দিতে হবে। বিভাজনকে সমাজের স্থায়ী সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ‘শাহবাগী’ প্রকল্পের প্রত্যক্ষ সুবিধা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতি নিয়েছে। হাসিনার ফ্যাসিবাদী রেজিমের সকল গুম, বিচারিক-বিচারবহির্ভূত হত্যা, দুর্নীতি, লুটপাট, মানহানি ইত্যাদির সঙ্গে শাহবাগের সরাসরি অস্তিগত, মতাদর্শিক এবং কাঠামোগত আঁতাত/সহঅপরাধিতা (ontological, ideological and structural complicity) রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, “২০১৩-র গণজাগরণ মঞ্চে আওয়ামী লীগের বাইরে অন্য কারো কোনো আকাঙ্ক্ষা নিবৃত্তি সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের বাম দলগুলো এবং বাম-ভাবাপন্ন বিপুল মানুষ আদতে ওই ভাষাকাঠামো ও মতাদর্শিক নির্মাণেরই অংশ, যা জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে কাজ করবে আওয়ামী বলয়ের অংশ হিসেবে” (২০২২:২৩)। তাই একমাত্র ‘শাহবাগী লজিক’-এর মধ্যেই, শাহবাগকে নিরীহ কল্পনা করা কিংবা শাহবাগের দায়মুক্তি সম্ভব। একমাত্র সম্ভাব্য ‘শাহবাগের রাষ্ট্রপ্রকল্প’ হলো হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিম।
পরীক্ষামূলকভাবে এক জনৈক শাহবাগীর (ট্যাগিং না, এটা এখানে বর্ণনামূলক বর্গ (descriptive category) আকারে ব্যবহার করছি) লেখা উদাহরণ আকারে বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে, ‘শাহবাগী অন্টোলজি’ বা ‘শাহবাগী লজিক’ বলতে আমি যা প্রস্তাব করেছি তার মর্ম স্পর্শ করা যাক। লেখাটার শুরু অনেকটা এভাবে, “শাহবাগকে আঙ্গুল তোলে কারা? কারা চায় শাহবাগ মুছে দিতে?” এই বারবার ‘কারা’ উচ্চারণ করার ভেতর যে বৈধতা ও কর্তৃত্বের দাবি, এর পেছনে এক নৈতিক ফয়সালা (value judgement) কাজ করছে: শাহবাগের দিকে আঙুল তোলার ‘ন্যায্য অধিকার’ কারো থাকতে পারেনা। শাহবাগ শুরুই হয় এভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রদ করার মাধ্যমে। এরপর বলা হচ্ছে, “কারা বলে শাহবাগ শুধু আওয়ামীলীগের প্রজেক্ট? কারা গণজাগরণ মঞ্চকেই শাহবাগ মনে করে? শাহবাগ একটা আলাদা অস্তিত্ব আর গণজাগরণ মঞ্চ একটা ফ্যাসিবাদী প্রকল্প।” শাহবাগ আন্দোলন সরকারবিরোধীতা কিংবা প্রতিষ্ঠানবিরোধীতার জায়গা থেকে শুরু হলেও, যে ভাষার একার্থকতা, চিহ্নব্যবস্থার মাস্তানি, মতাদর্শিক হাতিয়ারের প্রয়োগ এবং অস্তিতত্ত্ব নির্মাণের কৌশল আমরা শাহবাগ এবং গণজাগরণ মঞ্চে দেখেছি, তাতে তাদের আলাদা করে দেখানো কখনোই সম্ভব না। তবে শাহবাগ এমন এক পৈশাচিক সত্তা, আত্মরক্ষার জন্য তা নিজেকে নিজে বলি দিতে রাজি। এমনকি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতেও আওয়ামীবিরোধিতার উপাদান ছিল। সকল দোষ এবং দায় গণজাগরণ মঞ্চের ওপর চাপিয়ে ‘শাহবাগ’ বর্গটিকে পরিশুদ্ধ করতে চাওয়া বা নিষ্পাপ দেখাতে চাওয়া নিরীহ ব্যাপার নয়। সম্ভবত গণজাগরণ মঞ্চ থেকে শাহবাগের এই জবরদস্তিমূলক বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়ার বাসনা আসলে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ‘আওয়ামী লীগ’ বর্গ থেকে দ্রুত দুরত্ব তৈরি করার বাসনা।
গণজাগরণ খারাপ শাহবাগ ভালো—এই বয়ানের ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে এভাবে, “শাহবাগ হলো আর্টকালচার, নারী স্বাধীনতা, মুক্তবাক, বুদ্ধির চর্চা, আজিজের সিনেমা, হাসাহাসি, ফুলের দোকান, আনন্দ, বেলুন, শোভাযাত্রা, মশাল মিছিল, স্বৈরাচারবিরোধী কবিতা, চারুকলা, মাটির পুতুল, খালার ভাতের দোকান, মনুমেন্ট, বাংলাদেশের কৃষ্টি, নজরুলের কবর, বিদ্রোহের গান, হারমোনিয়াম, হিন্দুর অনুষ্ঠান, মাজার, হাত ধরে ঘুরতে আসা হুজুরদের সেলফি, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন আর প্রেমও।” এভাবে ন্যায়ের প্রশ্ন আড়াল করে নিজেকে চাক্ষুষ দৃশ্যমান সাংস্কৃতিক চিত্রাবলীতে (spectacular cultural imagery) পরিণত করা এবং রাজনৈতিক জীবনকে ফুল-পাখি-লতা দিয়ে নান্দনিক করে তোলার (aestheticizing of political life) অপর নাম ফ্যাসিবাদ। ফ্যাসিবাদের সকল নান্দনিকীকরণের প্রচেষ্টা শেষ হয় যুদ্ধকে সুন্দর করে তোলার মধ্য দিয়ে। একটা জনগোষ্ঠীর ভেতর বিভাজন ও অপরায়নের অনন্ত যুদ্ধ (stasis) জারি রাখার সকল ইন্তেজাম শাহবাগ করেছিল মিডিয়াকরণের মধ্য দিয়ে, সাংস্কৃতিক মহিমায়নের মধ্য দিয়ে। শাহবাগকে সভ্যতার দলিল বা সংস্কৃতির স্বারক আকারে দেখানোর পিছে যে অনিবার্য বর্বরতা বিরাজ করে তা আমরা জানি।
ওয়াল্টার বেনিয়ামিন ফ্যাসিবাদ কিভাবে যুদ্ধের মহিমায়ন ঘটায় তার উদাহরণ দিতে ফিলিপ্পো মারিনেত্তির ‘ইথিওপিয়ায় ঔপনিবেশিক যুদ্ধের ইশতেহার’ (১৯৩৫) গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করেন, যাকে উপরের শাহবাগের ফুল-পাখি-লতামার্কা ব্যাখ্যার সঙ্গে পাশাপাশি পড়া যায়: “যুদ্ধ সুন্দর কেননা গ্যাসমুখোশ, ভয়ঙ্কর মেগাফোন, অগ্নিনিক্ষেপক এবং ছোট ছোট ট্যাঙ্কগুলো যন্ত্রের ওপর মানুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে। যুদ্ধ সুন্দর কেননা এটা মানব শরীরের স্বপ্নদৃষ্ট ধাতবকরণ (the dreamt-of metallization of human body) ঘটায়। যুদ্ধ সুন্দর কেননা তা মেশিনগানের জ্বালাময়ী বাগানের এক ফুলেল প্রান্তর তৈরি করে দেয়। যুদ্ধ সুন্দর কেননা এটা বন্দুকের গুলি, কামানের গোলা, যুদ্ধবিরতি, আতরের সুবাস এবং পচনের দুর্গন্ধকে ঐকতানে (symphony) পরিণত করে। যুদ্ধ সুন্দর কেননা তা তৈরি করে নতুন স্থাপত্য, বড় বড় সাঁজোয়াযানের মত, বিমানের জ্যামিতিক মহড়ার মত, পোড়া গ্রাম থেকে বেরুনো ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মত ইত্যাদি।” শাহবাগ এভাবেই সংস্কৃতির নামে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায় এবং সেই যুদ্ধকে ফুল-পাখি-লতার ওয়াস্তে ন্যায্য বলে। শাহবাগ বাংলাদেশকে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল—এই সরল সত্য উপরের মনগড়া ভ্যালু-লোডেড কালচারাল চিত্রায়ন সবসময় লুকিয়ে রাখে। তাছাড়া রাবীন্দ্রিক কলকাতার আদলে টিএসসি ও চারুকলার বাইরে শাহবাগের সত্যিকার অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ‘বাম’ জীবনপ্রণালির বাইরের জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত কোনো সাংস্কৃতিক প্রস্তাবনাও নেই। অথচ নিজেকে তা ‘জাতীয় সংস্কৃতি’ বা ‘দেশের কালচারাল পরিবেশ’ দাবি করে। এটাই শাহবাগের কালচারাল ফ্যাসিবাদ।
শাহবাগের যে বিরোধিতা করে, তাদের সম্পর্কে সেই লেখা বলে: “ওদের আসল ইচ্ছাটা হচ্ছে প্রগতির মৃত্যু রচনা করা, বামবিদ্বেষ ছড়ানো, নারীকে নিপীড়ন করা, নাস্তিক-মুরতাদ ঘোষণা করা।” এখানে প্রচ্ছন্ন বার্তা হলো: শাহবাগ মানে প্রগতিশীলতা, নারীবাদ, বামপন্থা এবং সেকুলারিজম। এবং শাহবাগের বিরোধিতা যারা করে তারা প্রতিক্রিয়াশীল, নারীবিদ্বেষী, বামবিদ্বেষী এবং ইসলামপন্থী। অর্থাৎ সেই একই ‘সেকুলার বনাম ইসলামিস্ট’ বিভাজনের বাইনারি রাজনীতি: সত্যের ওপর একাধিপত্য কায়েমের মধ্য দিয়ে নিজ এবং অপরের অস্তিগত মর্ম (ontological essence) নির্ধারণ করবার ফ্যাসিস্ট ক্ষমতা। এক পর্যায়ে লেখাটিতে শাপলার ঘন ঘন উল্লেখ হতে থাকে এবং শাহবাগকে শাপলার মতো মজলুম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দেখতে পাওয়া যায়, “আওয়ামী লীগের অত্যাচারের শিকার ছাত্র-জনতাদের অনেকেই শাপলার লোক না, শাহবাগের লোক।” এখানে আরেকটা বিষয় মনে রাখা জরুরি: শাহবাগ তার সত্য প্রতিষ্ঠা করবার জন্য যে অপরের ছবি দাঁড় করায় তাকে ‘শাপলা’ নামবন্ধের ভেতর কল্পনা করাটাও ‘শাহবাগী লজিকের’ ফাঁদে পড়া। তাই ‘শাহবাগের লোক/শাপলার লোক’ কথাটা শাহবাগের ‘সেকুলার বনাম ইসলামিস্ট’ বিভাজনের রাজনীতিরই অংশ। শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতৃত্বে সংগঠিত গণজমায়েত ছিল শাহবাগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির বিপরীতে নিম্নবিত্ত জনগণের গণতান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া (যদিও তা ধর্মীয় মতাদর্শের আবরণে)। শাহবাগ নিজের অপরের আদলে শাপলাকে আলাদা অস্তিত্ব আকারে দাঁড় করানো ছাড়া ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারত না। যেহেতু শাপলা-শাহবাগ বাইনারি খোদ শাহবাগেরই সৃষ্টি, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের অভিমুখ হলো ‘জনগণ বনাম শাহবাগ’।
‘জনগণ বনাম শাহবাগ’ আবার কোনো মতাদর্শিক বাইনারি নয়, এটা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণের পোস্ট-ইডিওলজিকাল গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামের নামান্তর। মোহাম্মদ আজমের ভাষায়: “গত অন্তত চার দশক ধরে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক অঙ্গনের ... প্রধান দ্বন্দ্ব—ইসলাম বনাম প্রগতিশীলতা” (২০২৫:৩০)। শাহবাগ এই দ্বন্দ্বকে ত্বরান্বিত করবার মধ্য দিয়েই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বৈধতা ও সম্মতি উৎপাদন করেছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণ শাহবাগের বিভাজনের রাজনীতিকে কাটিয়ে উঠতে পারার মাধ্যমে একটা এজমালি ভাষা এবং পাটাতন তৈরি করতে পেরেছে: “বিরোধমূলক সাংস্কৃতিক নির্মাণ ... যেহেতু গত রেজিমের প্রধান ভাবাদর্শিক অ্যাপারেটাস ছিল, তার বিরুদ্ধে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান স্বভাবতই সেই বিরোধমূলক দ্বিবিভাজনের বিপরীতেই নিজের ভাষারূপ দাঁড় করিয়েছিল” (২০২৫:১২৯) আগের কথায় ফিরি: শাহবাগের বাইরে শাপলার কোনো ‘অস্তিত্ব’ নেই। শাহবাগের অস্তিতত্ত্বের বাইরে, শাপলা বলতে যদি কিছু থেকে থাকে তা হলো ফ্যাসিবাদবিরোধীতা, গণতন্ত্র এবং গণঅভ্যুত্থান। শাহবাগী লজিক দিয়ে কখনো জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। শাহবাগ চায় সবসময় শাপলাকে ইসলামপন্থী জগতকল্পনা বা ধর্মীয় প্রতিক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ করে রাখতে। এদিকে গণমানুষের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের ধারা খ্রিস্টধর্মের মতো সেকুলার জগত (kingdom of man) এবং ইসলামের জগতের (kingdom of God) মধ্য কোনো ফারাক বা বিরোধ কল্পনা করে না।
এবার ঐ লেখাটার শেষ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আমরা সরাসরি ফ্যাসিস্ট দ্বিবিভাজন (binary) টিকিয়ে রাখার ‘শাহবাগী’ প্রবণতা দেখতে পাবো: “শাপলা-শাহবাগ বাইনারি মুছতে হবেনা ... ওরা ওদের মত ফুল হয়ে ফুটে থাকবে যার যার সৌন্দর্য নিয়ে” এবং “শাহবাগ-শাপলা উভয়কেই আমাদের লাগবে দেশ গঠনে।” আগেই বলেছি কিভাবে শাহবাগ চায় সবসময় শাপলাকে ইসলামপন্থী বানিয়ে রাখতে, এই ফ্যাসিস্ট চাওয়াকে সহাবস্থান ও সহনশীলতার মোড়কে হাজির করা হয় এবং উচ্চতর নৈতিক অবস্থান (higher moral ground) বা অন্তর্ভুক্তিমূলক (inclusive) পিঠ-চাপরানি আকারে দেখানো হয়। শাপলাকে সমকক্ষীয় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দি আকারে দেখানো (যেমন, শাপলা চত্বরে নিরস্ত্র গণমানুষের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান পরদিন হয়ে যায় “হেফাজতে ইসলাম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ”) শাহবাগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির পক্ষে কাল্পনিক জুলুমের বয়ান জারি রাখতে সাহায্য করে। শাহবাগ যে নিজেকে ভিক্টিম আকারে কল্পনা করে, এটা অবশ্যই নতুন কিছু না। এই মজলুমিয়াত থেকে শাহবাগের নির্মূলের অধিকার (right to exterminate) ও ন্যায়রদের (foreclosure of justice) এখতিয়ার জাত।
গণজাগরণ মঞ্চ ফ্যাসিবাদ কিন্তু শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ না; হাসিনা ফ্যাসিস্ট শাসক কিন্তু শাপলার পাশাপাশি শাহবাগও হাসিনার শিকার—এসব সূত্র আসলে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে শাহবাগের যে অস্তিগত সম্পর্ক তা লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা। শাহবাগের বাইরে হাসিনা বা ফ্যাসিবাদকে ব্যাখ্যা এবং শাহবাগের ভেতরে জনগণ বা গণঅভ্যুত্থানকে ব্যাখ্যা—এই দুটি অসম্ভব। এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে শাহবাগ নিত্যনতুন সূত্র উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছে—যে লেখাটি আমরা বিশ্লেষণ করলাম সেটিও একই ধাঁচের। সত্য হলো: শাহবাগ মানেই ফ্যাসিবাদ, ‘ভালো ফ্যাসিবাদ’ বলে কিছু নেই। শাহবাগ গণমানুষের বিরুদ্ধে নিজের ঘোষিত যুদ্ধকে আর্টকালচার ডাকলেই তা আর্টকালচার হয়ে যায় না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে শাহবাগের ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপ্রকল্পের বাইরে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের পর্বে প্রবেশ করেছে, সেটা আমাদের উপলব্ধি করতে পারতে হবে। ২০২৪র গণরায় হলো: বাংলাদেশের জনগণ শাহবাগের ভূত কাঁধে বহন করতে চায় না। একটা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী পরিগঠনের লক্ষ্যে ‘শাহবাগ’ নামবন্ধের পিছে থাকা ফ্যাসিস্ট অস্তিতত্ত্বকে চিনতে শেখা এবং সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিকভাবে কাটিয়ে ওঠা জরুরি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিসর গঠনের জন্যে সমাজের ‘দ্বিবিভাজন’-কে চূড়ান্ত এবং চিরায়ত মনে করে অনন্ত যুদ্ধ জারি রাখার বদলে মতাদর্শিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্য এবং সহাবস্থানের কোনো বিকল্প আমাদের নেই। রাষ্ট্র আকারে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে যা যুক্ত। সেক্ষেত্রে প্রচলিত এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে প্রতাপশালী ফ্যাসিস্ট বর্গগুলোর পর্যালোচনার মধ্য দিয়েই আমাদের এগুতে হবে।
দোহাই:
১। Mark Fisher, k-punk: The Collected and Unpublished Writings of Mark Fisher (2004-2016), p. 654-657
২। ফরহাদ মজহার, ক্রুসেড জেহাদ ও শ্রেণীসংগ্রাম: আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা পত্রমালা-২ (২০০২)
৩। Carl Schmitt, The Concept of the Political (The University of Chicago Press), p. 28-29
৪। মোহাম্মদ আজম, সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ (২০২২)
৫। ঐ, সাংস্কৃতিক পুঁজি ও নতুন বাংলাদেশ (২০২৫)
৬। Mohammad Ashraf Aziz Ishrak Fahim, On Shahbag’s Sins (https://maaif.wordpress.com/2023/05/31/on-shahbags-sins/)
৭। Walter Benjamin, The Work of Art in the Age of Mechanical Reproduction (1935)
৮। Walter Benjamin, On the Concept of History (1940)