ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আবার তলব


আদালত অবমাননার অভিযোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ফের তলব করেছে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল । আগামী ২২শে জুলাই তাকে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালত অবমাননার অভিযোগে এর আগে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এক ঘণ্টা আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল-২। ডা. জাফরুল্লাহ রায়ের পর আদালতকে বলেছিলেন তিনি উচ্চ আদালতে  আপিল করবেন তার শাস্তি স্থগিত রাখা উচিত। কিন্তু আদালত তাঁকে সেই সুযোগ না দিয়ে দ্রুত আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন। যদিও সংবিধান অনুযায়ী তাঁর সে অধিকার আছে বলে রায়ে বিচারপতিরা নিজেরাই উল্লেখ করেছেন। তারপরও লিখিত আদেশ পাবার পর আইনের প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ আদালতের কাঠগড়ায় এক ঘন্টা দাঁড়ান। এসময় ট্রাইব্যুনালের করা জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। তবে জাফরুল্লাহর আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত পরে ওই জরিমানার আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে রেখেছেন। বিষয়টি এখন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির অপেক্ষায়।

রায়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায় সম্পর্কে বলেছেন:

"যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না। যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না যুক্তি থাকে না বলেই আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন"। তিনি বলেছেন, আদালত অবমাননা মামলার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বোঝার আছে।  আদালত অবমানায় কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে  ' তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। scandalizing the court, কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, obstructing the administration of justice, বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, অথবা আদালতের ডিগনিটি ক্ষূণ্ণ করা'।

এরপর তিনি জোর দিয়ে বলেন "বিচারপতিরা কোন জায়গাতে প্রমাণ করেন নি, সুস্পষ্ট ভাবে বলেন নি -- এই তিনটি জায়গায় কোথায় আমরা -- বিশেষত আমি ভঙ্গ করেছি। এটা নাই বলে, তাদের যুক্তি নাই বলে, তিন বিচারপতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এই মামলার শুরু থেকে, আজকেও তাই"।

তিনি আরও বলেন, "এটা অত্যন্ত অভদ্রজনিত ব্যবহার, যখন রায় পড়েন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন, এটা প্রাগৈতিহাসিক মধ্যযুগের ঘটনা, কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বয়স, তারপরে বলছেন বয়েস, কিন্তু বয়সের সম্মান আমি উনার কাছে কামনা করি না"। 

ডেভিড বার্গম্যানের আদালত অবমাননা সংক্রান্ত বাংলাদেশের ৪৯ জন নাগরিকের মন্তব্য আদালত অবমাননা কিনা তা নির্ধারণ করবার ক্ষেত্রে তিনটি অভিযোগ সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রমাণের প্রয়োজনীয়তাসহ সামগ্রিক ভাবে বিচার প্রক্রিয়া যেভাবে চলেছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ”।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ্‌ চৌধুরীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ এনে হয়রানি করার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।  রণাঙ্গনে লড়েছেন এরকম ৯২ জন মুক্তিযোদ্ধা তাঁর বিরুদ্ধে 'মুক্তিযোদ্ধা নামধারী'দের তৎপরতায় বিস্ময় প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে ফের আদালত অবমাননার মামলা দায়েরের আবেদনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।

আট জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে 'আমরা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা' নামে সংগঠ্নের ব্যানারে লিখিত বিবৃতিতে তারা বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ্'র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়েরের আবেদনে তারা বিস্মিত ও মর্মাহত। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, " যেসব নামধারী মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহর মতো মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্ত করার সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তারা"।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ান, ফারুক-ই আজম বীরপ্রতীক, নঈম জাহাঙ্গীর, মিজানুর রহমান বীরপ্রতীক, মেজর (অব.) আক্তার আহমেদ বীরপ্রতীক, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, মেজর (অব.) মঞ্জুর আহমেদ বীরপ্রতীক, মেজর (অব.) মনিবুর রহমান, ফতেহ আলী চৌধুরী, ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বীরপ্রতীক, হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, শাহ মো. আবু জাফর, কমরেড খালেকুজ্জামান ভূঁঁইয়া, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, কর্নেল (অব.) জয়নুল আবদিন, মেজর (অব.) আসাদুজ্জামানসহ প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা।

 


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।