চিন্তা


চিন্তা ও তৎপরতার পত্রিকা

টাকা আসলে কি ?

পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদিত জিনিস (product) কে বলা হয় পণ্য (commodity)। পণ্য বা কমোডিটির বৈশিষ্ট্য হল তার মূল্য বা ভ্যালুকে দুইভাবে বিবেচনা করা হয়ঃ একটি হল তার use value বা ব্যবহারিক মূল্য আর আরেকটি হল তার exchange value বা বিনিময় মূল্য। Use value বা ব্যবহারিক মূল্য হল পণ্য স্বয়ং। আর Exchange value বা বিনিময় মূল্য হল পণ্যটির মূল্য (value), যা দামের (price) মাধ্যমে টাকায় প্রকাশিত হয়। পণ্যের এই use value এবং exchange value দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। অর্থাৎ, একপ্রান্তে থাকে পণ্যটি আর অপর প্রান্তে থাকে টাকা।

 

পণ্যের মধ্যে যুগপৎভাবে নিহিত থাকা ইউজ ভ্যালু ও একচেঞ্জ ভ্যালুকে আলাদা ভাবে বিবেচনা করার মাধ্যমে বিমূ (আরো পড়ূন)

৪. মার্কসের 'পুঁজি': 'পণ্য' দিয়ে শুরু কেন?

৯ নভেম্বর, ২০১৯, চিন্তা পাঠচক্রের পঞ্চম বৈঠকে আমরা বসেছিলাম। দুই সপ্তাহের বিরতির পর আবার বসা। কার্ল মার্কসের ‘পুঁজি’ গ্রন্থ ধারাবাহিক পাঠ হিসেবে মার্কসের মুদ্রাতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রধান আলোচক জনাব ফরহাদ মজহার।

পাঠের শুরুতে নতুন সদস্যদের জন্যে পূর্ব-পাঠের একটা সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হয়। এরপর থেকে যারা যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই পাঠচক্রের নোটগুলো পাঠ করে আসতে হবে। প্রয়োজনে দুই একটি প্রসঙ্গ বারবার ফিরে আসতে পারে। কিন্তু দ্রুত এগিয়ে যাবার জন্য পাঠচক্রে যারা আন্তরিক ভাবে আগ্রহী তাঁদের নিজের চেষ্টা থাকতে হবে।

‘মুদ্রাতত্ত্ব’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয় মার্কসের খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি মন্তব্য দিয়ে। এই মন্তব্য তিন (আরো পড়ূন)

৩. মার্কসের 'পুঁজি': পণ্য

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯। মার্কসের ‘পুঁজি’ পড়বার চতুর্থ পাঠ শুরু হয়। মূল্যের রূপ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শেষ হয়। ‘পণ্যের ভতুড়ে কারবার’ নামক গুরুত্বপূর্ণ অংশ আপাতত বাদ রাখা হয়। কারন এর সঙ্গে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও সমাজতত্ত্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তর্কবিতর্ক জড়িত। আগামিতে সেই বিষয়ে আলাদা ভাবে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  এখানে আলোচনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ পেশ করা হোল।

১. আবারও নতুন যাঁরা যোগ দিয়েছেন তাঁদের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে ‘পুঁজি’ সম্পর্কে বাংলাদেশে বিভ্রান্তিকর নানান চলতি অনুমান নিয়ে আলোচনা ওঠে। বাংলাদেশের বামপন্থি শিবিরে ‘পুজি গঠন’ নামক একটি অনুমান বা ধারণা কাজ করে। সেটা অনেকটা এরকম যে (আরো পড়ূন)

২. মার্কসের 'পুঁজি': প্রাথমিক বিষয়াদি

২৪ আগস্ট, ২০১৯। চিন্তা পাঠচক্রের ‘পুঁজি’ পড়ার ছিল দ্বিতীয় পাঠ। প্রধান আলোচক ছিলেন ফরহাদ মজহার। ‘পণ্য’ নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, এই ক্লাস ছিল তারই ধারাবাহিকতা। পাঠ শুরুর আগে ‘পুঁজি’ পাঠের ভূমিকা হিশাবে কিছু বিষয় আলোচনা করা হয়।

১. ‘চিন্তা পাঠচক্রের ‘পুঁজি’ পাঠের ক্লাস সকলের জন্যে। যারা অর্থনীতি নিয়ে পড়েছেন কিম্বা পড়েন নাই তাতে কিছু আসে যায় না। আগ্রহ এবং নিয়মিত থাকার চেষ্টাই প্রধান। আমাদের তরুণ সমাজের জন্যে, যাদের কার্ল মার্কস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা রয়ে গেছে। সেসব ভুল ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে মার্কসের ‘পুঁজি’ গ্রন্থটি নিষ্ঠা ও মনোযোগের সঙ্গে পড়বার আগ্রহ তৈরির জন্যই এই উদ (আরো পড়ূন)

১. মার্কসের 'পুঁজি': প্রাথমিক বিষয়াদি

[এই লেখাটি গত ১৭ আগস্ট, শনিবার চিন্তা পাঠচক্রে ‘পুঁজি’ বইটি পাঠের পরিপ্রেক্ষিতে ফরহাদ মজহারের আলোচনার ভিত্তিতে লেখা। আলোচনায় আমার কাছে যে কথাগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তুলে দিচ্ছি। এটি চলবে। অন্যদের গুরুত্বপূর্ণ কোন পয়েন্ট বা প্রশ্ন  থাকলে আশা করি যোগ করবেন।  ‘পণ্য’ নিয়ে সরাসরি আলোচনা আরেকটি পোস্টে পেশ করা হবে]

১. সতেরো অগাস্টে পাঠচক্রে নির্ধারিত আলোচনার বিষয় ছিল পুঁজি গ্রন্থে বিধৃত মার্কসের ‘পণ্য’। গ্রন্থের প্রথম কয়েক পাতা পড়া এবং বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করা ছিল উদ্দেশ্য।

‘পণ্য’ নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে ফরহাদ মজহার‘পুঁজি’ সম্পর্কে আমাদের (আরো পড়ূন)

তরুণ মার্কসের হেগেল 'ক্রিটিক'

হেগেলের রাষ্ট্রতত্ত্ব নিয়ে তরুন বয়সের মার্কসের পর্যালোচনামূলক রচনা (Kritik des Hegelschen Staatsrechts (§§ 261-313)) নানান ভাবে পড়া সম্ভব এবং তার গুরুত্বকে নানান দিক থেকে পর্যালোচনা করা যায়। এই লেখাটির দুটো ইংরেজি অনুবাদ সহজ লভ্য। একটি রদনি লিভিংস্টোনের অনুবাদ (Marx 1975)। লুসিও কোলেত্তির সম্পাদিত Early Writings'-এ অন্তর্ভূক্ত: Critique of Hegel' Doctrine of the State ((§§ 261-313)) । আরেকটি হচ্ছে, এনেট জোলিন ও জোসেফ ও'মালের অনুবাদ Critique of Hegel's Philosophy of Rights'; এই অনুবাদ সম্পাদনা করেছেন জোসেফ ও'মালে এবং তিনি একটি ভূমিকাও লিখেছেন (Marx, Critique of Hegel's 'Philosophy of Right'; tr. Annette Jolin & Jose (আরো পড়ূন)

রাজনৈতিক রূহানিয়াত ও মিশেল ফুকো

‘রাজনৈতিক রূহানিয়াত’ (spiritualite politique) ধারণাটি ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো (১৯২৬-১৯৮৪) ব্যবহার করেছেন। মার্কসের ব্যবহারিক সম্বন্ধ চর্চার পরিপ্রেক্ষিতে ফুকোর 'রাজনৈতিক রূহানিয়াত' নিয়ে এখানে আলোচনা করব।

ইরানে গত শতাব্দির সত্তর দশকের শেষে বৈপ্লবিক উত্থান পতনের সময় ফুকো ১৯৭৮ সালে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে একবার এবং দ্বিতীয়বার নভেম্বরের শুরুতে ইরানে গিয়েছিলেন। ইটালির সংবাদপত্র ‘করিয়েলে দেরা সেরা’ (Corriere Derra Sera) আন্তর্জাতিক ঘটনা নিয়ে ফুকোকে লিখবার অনুরোধ করায় ফুকো লিখতে রাজি হন। সেই প্রতিশ্রুতির কারণে তিনি ইরানে যান। ইটালির সংবাদপত্রের সম্পাদক অবশ্য খুবই উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু এর আগে ইরানের শাহের শাসনের বি (আরো পড়ূন)

ব্যবহারিক সম্বন্ধ ও রূহানিয়াত

এর আগের আলোচনায় আমরা দেখিয়েছি মানুষ ও জগতের সম্বন্ধ বিচারই মার্কসের দার্শনিক পর্যালোচনার প্রধান ভরকেন্দ্র। বিমূর্ত দর্শনের পরিমণ্ডল বাদ দিয়ে অর্থশাস্ত্রের পর্যালোচনা দার্শনিক জিজ্ঞাসারই অনিবার্য পরিণতি। অর্থশাস্ত্রীয় বিচার মানুষ ও জগতের সম্বন্ধ বিচার, সেকারণে মার্কসের অর্থশাস্ত্র দর্শনেরই বিষয়।

দুটো শব্দ সাধারণত অদল বদল করে প্রায় একই অর্থে অনেক সময় আমরা ব্যবহার করি: জগত এবং প্রকৃতি। যেন গোলমাল না হয় তার জন্য বলে রাখা দরকার মানুষের সঙ্গে জগতের সম্বন্ধ কথাটাকেই আমরা আরও সংকীর্ণ অর্থে সাধারনত বলি, মানুষ ও প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার। যা কিছুই মানুষের বাইরে মানুষের ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি, কল্পনা বা ইচ্ছা-অভিপ্রায়ের বিষয় হিসাবে মানুষ হাজির দেখতে পা (আরো পড়ূন)

অর্থশাস্ত্রের দার্শনিক চাবি: ‘ব্যবহারিক সম্বন্ধ’

মার্কস পাঠের ক্ষেত্রে এই সাধারণ ভুলটা মার্কস অনুসারী কিম্বা মার্কস বিরোধী প্রায় সকলেই করে থাকেন যে মার্কস দর্শন থেকে প্রস্থান করেছেন। বাংলাদেশে এর অতিশয় স্থূল মানেও আছে। সেটা অনেকটা এরকম যে মার্কস বলেছেন, চিন্তাভাবনা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যা করবার সেটা এ যাবতকাল দার্শনিকরা করেছেন। দর্শনচর্চা বা তত্ত্ব গিরি করা বিপ্লবীর কাজ নয়। এখন কাজ হচ্ছে দর্শন বা চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে শুধু বিপ্লব করা। মার্কস সম্পর্কে এই ধারণা যে একদমই ভুল সেটাই আমরা এখানে আলোচনা করব।

এরপর মার্কসের অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণার সঙ্গে আমরা পরিচিত হব। সেটা হচ্ছে মানুষ ও জগতের ‘ইন্দ্রিয়পরায়ন মানবিক ব্যবহারিক চর্চা’ (practical, human sensuous ativity) বা সংক্ষ (আরো পড়ূন)

‘জর্মান ভাবাদর্শ’: পাঠ প্রস্তুতি

মার্কস আর এঙ্গেলস-এর তরুণ বয়সের যৌথ রচনার খসড়া ‘জর্মান ভাবাদর্শ’। তাঁদের জীবদ্দশায় এই খসড়া ছাপা হয় নি। কমিউনিজম সম্পর্কে কমিউনিস্ট পার্টির সরকারি ভাষ্যের সঙ্গে এর মর্ম পুরাপুরি মেলানো কঠিন। ফলে ছাপা হবার পরে এর যে সারকথা ও ব্যাখ্যা সরকারি ভাবে হাজির করা হয়েছিলো তার সীমাবদ্ধতা ধরা পড়তে দেরি হয় নি। আমরা অধিকাংশই জানিনা যে ‘মার্কসবাদ’ নামে যা আমাদের কাছে পরিচিত তার নির্ধারক  ভাষা,পরিভাষা বা বর্গ-- যেমন, ‘ঐতিহাসিক বস্তুবাদ’, ‘দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ’, ‘ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা’, ইত্যাদি মার্কসের নয়, এঙ্গেলসের। মার্কসকে এঙ্গেলস যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং কমিউনিস্ট পার্টি যে ভাষ্য (আরো পড়ূন)

মার্কস-এঙ্গেলস বনাম মার্কস এবং এঙ্গেলস

আমরা মার্কস ও এঙ্গেলসের নাম এক নিঃশ্বাসে নিতে অভ্যস্ত। অনুমান করি তাঁদের চিন্তা অবিভাজ্য। কিন্তু ব্যক্তি হিসাবে তাঁরা আলাদা এবং তাঁদের চিন্তাও গড়ে উঠেছে ভিন্ন প্রক্রিয়ায়। এই ভিন্নতার কথা মনে রেখে উভয়কে তাঁদের নিজ নিজ চিন্তার জায়গা থেকে বোঝা দরকার। দুজনে নামের মাঝখানে হাইফেন দিয়ে যুক্ত করে এক না ভবে বরং তাঁদের স্বতন্ত্র সত্তাকে 'এবং' দিয়ে যুক্ত রাখাই যুক্তি সঙ্গত সেটাই এই লেখায় ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।

আমাদের আগ্রহ বিশেষ ভাবে মার্কস সম্পর্কে। পাশ্চাত্য দর্শনের ভেতর থেকে গড়ে ওঠা মার্কসের দার্শনিক প্রকল্প নতুন ভাবে পর্যালোচনা এবং একালে তার উপযোগিতা নির্ণয় আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যে কিছু বদ্ধমূল অনুমানকে প্রশ্ন করা জরুরী হয়ে (আরো পড়ূন)