না জানি ভাব কেমন ধারা। না জানিয়ে পাড়ি ধরে মাঝ-দরিয়ায় ডুবল ভারা।। হরনাল করনাল মৃণালে শুকনালে সু-ধারায় চলে বিনা সাধনে এসে রণে পুজি-পাট্টা হলাম হারা।। সেই নদীর ত্রিধারা কোন ধারে তার কপাট মারা কোন ধারে তার সহজ মানুষ সদাই করে চলাফেরা।। অবোধ লালন বিনয় করে এ কথা আর বলবো কারে রূপদর্শন দর্পণের ঘরে হ’লাম আমি পার হারা।।
দেখবি যদি সোনার মানুষ
দেখে যারে মন পাগলা
অষ্টাঙ্গ গোলাপী বর্ণ
পূর্ণ কায়া ষোলকলা ।।
ময়ূরীর কেশ ফিঙেরি নাক
দেখবি যদি তাকিয়ে দেখ
ঐ রূপ দেখে চুপ মেরে থাক
বংশহীন তাঁর হংস গলা ।।
উরু দুটি তাঁর দেখতে গোল
সিংহ মাজা দেখি কেবল
তাহাতে রয়েছে যুগল
অনাদি কালা ।।
বক্ষস্থলে চাঁদের ছটা
নাভি মূলে ঘোরে ল্যাটা
দুটি বাহু বেলন কাটা
দুটি হস্ত জবা ফোলা ।।
যে দেখে সে মহা যোগী
সে হয় না অন্যভোগী.
লালন কয় সেই তো ত্যাগী
হয়েছে তাঁর পূর্ণ কলা ।।
সহজ মানুষ ভজে দেখনারে মন দিব্যজ্ঞানে
পাবিরে অমূল্য নিধি বর্তমানে।।
ভজ মানুষের চরণ দু’টি
নিত্য বস্তু হবে খাঁটি।
মরিলে সব হবে মাটি
ত্বরায় এই ভেদ লও জেনে।।
শুনি ম’লে পাবো বেহেস্তখানা
তা শুনে তো মন মানে না।
বাকির লোভে নগদ পাওনা
কে ছাড়ে এই ভুবনে।।
আসসালাতুল মেরাজুল মোমেনিনা
জানতে হয় নামাজের বেনা।
বিশ্বাসীদের দেখাশোনা
লালন কয় এই জীবনে।।
সহজ মানুষ ভজে
সহজ মানুষ ভজে দেখনারে মন দিব্যজ্ঞানে
পাবিরে অমূল্য নিধি বর্তমানে।।
ভজ মানুষের চরণ দু’টি
নিত্য বস্তু হবে খাঁটি।
মরিলে সব হবে মাটি
ত্বরায় এই ভেদ লও জেনে।।
শুনি ম’লে পাবো বেহেস্তখানা
তা শুনে তো মন মানে না।
বাকির লোভে নগদ পাওনা
কে ছাড়ে এই ভুবনে।।
আসসালাতুল মেরাজুল মোমেনিনা
জানতে হয় নামাজের বেনা।
বিশ্বাসীদের দেখাশোনা
লালন কয় এই জীবনে।।
সোনার মানুষ ভাসছে রসে
যে জেনেছে রসপান্তি সেই দেখিতে পায় অনাসে।।
তিনশো ষাট রসের নদী
বেগে ধায় ব্রহ্মাণ্ড ভেদি
তার মাঝে রূপ নিরবধি
ঝলক দিচ্ছে এই মানুষে।।
মাতাপিতার নাই ঠিকানা
অচিন দেশে বসতখানা
আজগুবি তার আওনা-যাওনা
কারণবারির যোগ বিশেষে।।
অমাবস্যায় চন্দ্র উদয়
দেখিতে যার বাসনা হৃদয়
লালন বলে থাকো সদাই
ত্রিপিনেতে থাকো [১] বসে।।
[১] পাণ্ডুলিপিতে 'থাকো' আছে, তবে 'ঘাটে' গাওয়া হয়।
(শুদ্ধ পাঠ নির্ণয়: ১৭ এপ্রিল ২০১৮)
(শাহ, ২০০৯, পৃষ্ঠা ৫৪)
(আরো পড়ূন)
খেলছে মানুষ নীরে ক্ষীরে ক্ষীরে,
আপন আপন ঘর খোঁজ
কেন হাতড়ে বেড়াও কালের ঘোরে।।
নীরসিন্ধু গভীর অতিকায়
ডুবলে কত আজব কাণ্ড দেখা যায়
নীরের ভাণ্ড, পুরা ব্রহ্মাণ্ড
কাণ্ড বলতে নয়ন ঝরে।।
শূন্যদেশে হয় মেঘের উদয়
নীরদ বিন্দু বারি বরিষণ তায়
ফলছে কত ফল, রঙ বেরঙের হল
আজব কুদরতি ফল ভাবের ঘরে।।
ইন্দ্র ডঙ্কা নাহি সে রাজ্যে
সহজ মানুষ ফেরে সহজে
সিরাজ সাইর বচন, মিথ্যা নয় লালন
ডুব দিয়ে দেখ স্বরূপ দ্বারে।।
(আরো পড়ূন)
এই মানুষে মানুষ রয়েছে মিশে
সর্বদা সে রসে খেলিছে সাঁতার,
সেই রসরাজ করিছে বিরাজ
শম্ভু রসের মাঝ করে দীপ্তকার।।
না জেনে রসিক যারা, তারা ধরতে চায় অধরা
যায় না সে চাঁদ ধরা মিছে শ্রম করা
দৃষ্ট হয় সেতারা,গম্ভু পাওয়া ভার।।
নিরন্তর সাঁই খেলিছে রসে, চিনিতে বালিতে রয়েছে মিশে
হস্তী না পায় দিশে, তথ্য চেঁউটি এসে
বেওরা করে সাধন পূর্বাপর।।
মহারসে বর্ত আছে রস বিহারী
সেহি নৌকায় আছে সাঁই রসের কাণ্ডারী
তার হাতে রস মুরারী, মুখে রসশ্বেরী,
লালন বলে প্রেম তরি অখণ্ড শেখর।।
(আরো পড়ূন)
মানুষে মানুষে কামনা সিদ্ধি কর বর্তমানে,
দেখ দেখ খেলছে খেলা।।
বিনোদ কালা এই মানুষের তন ভূবনে
শতদল কমলে কালার আসন, স্বর্ণ সিংহাসনে
চৌদ্দ ভুবন ফিরায় নিশান, ঝলক দিচ্ছে নয়ন কোণে
মুরশিদের মেহের মোহর, যার খুলেছে সেই জানে
বলছে লালন, ঘর ছেড়ে ধন,খুঁজিস কেন বনে বনে।।
(আরো পড়ূন)
মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি
মানুষ ছেড়ে খ্যাপারে তুই মূল হারাবি॥
দ্বিদলের মৃণালে
সোনার মানুষ উজ্জ্বলে
মানুষ গুরুর কৃপা হলে
জানতে পাবি॥
এই মানুষে মানুষে গাঁথা
দেখনা যেমন আলেক লতা
জেনে শুনে মুড়াও মাথা
জাতে তরবি॥
মানুষ ছাড়া মন রে আমার
পড়বি রে ঐ শূন্যকার
মানুষ বলে মানুষ আকার
ভজলে তরবি॥
ভোলাই শার খাতা, গান নং-১৩২
(আরো পড়ূন)