আসুন, নতুন করে ভাবি
বাস্তবকে জানুন, জেগে উঠুন
সরলীকরণের দোষ স্বীকার করেও সহজে পাঠকদের বোঝাবার জন্য উপমা দিয়ে বলিঃ ধরুন আপনি জানেন আপনি যে গাড়িতে উঠতে চাইছেন তা ভাঙা গাড়ি। চলে না। তদুপরি মোটেও নিরাপদ না, ভেঙে পড়তে পারে। আপনাকে নিরাপদে পৌঁছানোর পরিবর্তে আপনাকে এমন এক জায়গায় এসে এই গাড়ি নামিয়ে দিতে পারে যা বিপদ সংকুল। দেখলেন, আপনি হাজির হয়েছেন একটি ভয়ংকর যুদ্ধক্ষেত্রে। ধরুন সিরিয়ায় কিম্বা ইরাকে? ফিরে যাবার আর উপায় নাই? আপনি কী করবেন?
আপনাকে নতুন বাহনের কথা ভাবতে হবে। ভাবতেই হবে। আপনার পুরানা বাহন সংস্কারের সুযোগ বা সুবিধাও নাই। একদমই। পুরানা ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। আসলে নতুন বাহনের ধারণা, নকশা ও তৈয়ারির পরিকল্পনা সবই এখন আপনাকে করতে হবে। আপনি যদি সত্যি সত্যি আপনার নিজের পরিবারের সমাজের বিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে চান তাহলে আপনাকে নতুন করে চিন্তা করতেই হবে। চিন্তার শক্তি বাড়াতে হবে, সব কিছু পর্যালোচনার ক্ষমতা অর্জন করাই এখনকার কাজ। এর কোন বিকল্প নাই।
ধরুন এই উপমা রাষ্ট্র নিয়েই। রাষ্ট্রকে ‘বাহন’ ভাবা সরল উপমা হোল। কিন্তু যদি ভাবেন আপনি রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রশক্তির হাত থেকে অনেক দূরে তাহলে সেটা হবে ভুল ধারণা। আপনি আসলে রাষ্ট্রের ভেতরেই আছেন এবং থাকেন। এটা বোঝাবার জন্যই ‘বাহন’ বলছি। একে গহ্বর বলতে পারেন, কারণ আপনি এই খাদে পড়ে গিয়েছেন, সহজে ওপরে উঠতে পারছে না, আরও নীচে তলিয়ে যাচ্ছেন। তলিয়ে যাওয়াই আপনার পরিণতি কিনা সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। কারন মানুষ অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে। । সেই চেষ্টা করতে চাইলে রাষ্ট্রের ভেতরে থাকা কথাটার মানে আপনাকে খুব সতর্ক মনোযোগ দিয়ে বুঝতে হবে।
রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন, প্রশাসন সব কিছুই আপনার জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না। আপনি অন্ধ হতে পারেন, রাষ্ট্রের সঙ্গে আপনার বন্ধন আপনি চোখে নাও দেখতে পারেন, তাতে কিছুই আসে যায় না। যতো দূরেই থাকেন আপনি রাষ্ট্রের টিকিট কিনে বসে আছেন।
শুধু তাই নয়, এতদিন রাষ্ট্রের অতো খোঁজ খবর না নিলেও চলত। কিন্তু এখন আপনি না চাইলেও রাষ্ট্র আপনার হাতে টিকিট ধরিয়ে দিচ্ছে। যার নামঃ ‘জাতীয় পরিচয় পত্র’। আপনি চান বা না চান আপনার ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য বায়োমেট্রিক সারভেইলেন্স মজবুত করছে রাষ্ট্র। এখন চাইলেই গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে আপনি হারিয়ে যেতে কিম্বা অন্য কোন যানবাহনে উঠতে পারছেন না। আপনি যেখানেই যান সেখানেই রাষ্ট্র হাজির। পালাবার পথ নাই।
আপনি এখন ডিজিটাল ও তথ্য প্রযুক্তির নজরদারির অধীন। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে শাসন ও শৃংখলার কারিগরি হিসাবে ভাবুন। শাসন ও শৃংখলার নতুন নতুন পদ্ধতি আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে ওঠার পর থেকেই গড়ে উঠতে শুরু করেছিল, এখন তা ষোল কলায় বিকশিত হয়েছে। কৃৎকৌশলের বিপ্লব সেটা আরও ত্বরান্বিত করেছে। এখন জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের কারণে আপনার প্রতিটি গতিবিধি নজরে রাখা সম্ভব। আপনাকে কেউ ধরতে চাইলে আপনি কখন কোথায় কিভাবে যাচ্ছেন সেটা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে এলসিডি স্ক্রিনেই দেখা যায়। পুরানা কায়দায় কোন গোয়েন্দা বা টিকটিকিরও এখন আর দরকার পড়ে না। আপনাকে হত্যা করতে চাইলে সেটা খুবই সুবিধার আর আরামের হয়ে উঠেছে। আপনি যে অবস্থানে আছেন রাষত্রের নজরদারির কারণে রাষত্রের জানা। সেই অবস্থান লক্ষ্য করে প্রিসিশান টেকনলজির কোন একটা আবিষ্কার দিয়ে হামলা করে আপনাকে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। যেমন ধরুন, ড্রোন।
এ থেকে আপনি কী বুঝলেন? বুঝতে পারছেন যে দুনিয়ার অল্প কিছু কর্পোরেশান কিম্বা ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠি শুধুমাত্র তাদের স্বার্থে বাকি সবাইকে নিয়ন্ত্রণ, শাসন ও শৃংখলাবদ্ধ করে রেখেছে। রাষ্ট্র হচ্ছে তাদের হাতিয়ার। কিন্তু এগুলো পুরানা কথা। আপনি পুরানা কায়দায় বলতে পারেন, রাষ্ট্র হচ্ছে বল প্রয়োগের হাতিয়ার। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রাষ্ট্র কিভাবে এই কাজ করে সে সম্পর্কে আপনি অবহিত নন। রাষ্ট্রের এই কারিগরি আপনি যেহেতু বোঝেন না ফলে আপনি রাষ্ট্র বুঝেছেন দাবি করতে পারবেন না। যদি না বোঝেন তাহলে আপনার রাজনীতি অন্ধ। কয়েক ছটাক আবেগ, সাড়ে তিন আনা প্রপাগান্ডা আর তেরো আনা হুজুগে আপনি চলছেন। এর দ্বারা কারো কোন উপকার হবে না। আপনি নিজেকে নীতিবান প্রমাণ করবার জন্য শ্রেণী দরদী বা গণমুখী হবার ভাণ করতে থাকবেন, এতে বাস্তবে কিছুই পরিবর্তন হবে না। তাহলে রাষ্ট্র নিয়ে আপনাকে নতুন করে ভাবতেই হবে। অর্থাৎ ক্ষমতা কিভাবে তৈরি হয়, সমাজে তার বিন্যাসের চরিত্র কেমন, কিভাবে সেটা সমাজে কাজ করছে সেই সকল কারিগরি দিকের প্রতি আপনার মনোযোগ নিবদ্ধ থাকপ্তে হবে। সীমা ও সম্ভাবনার আলোকে সমাজে ক্ষমতার সম্পর্ককে কিভাবে সাজাবেন এবং কোথায় কিভাবে সমাজের বদল ঘটাতে চান নতুন করে ভাবতে হবে। একালে এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পুরানা চিন্তা দিয়ে কোন কাজ হবে না।
রাষ্ট্র শুধু বল প্রয়োগ করে টিকে থাকতে পারে না। তাকেও মতাদর্শ ও নীতিনৈতিকতার সাফাই গাইতে হয়। যেমন, আইনের শাসন। কোন্ আইন আপনার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ কিম্বা আপনাকে দমন নির্যাতন করছে কিনা সেটা বিচার্য না। এখানে মতাদর্শের দিকটা হোল এই যে আপনাকে আইনের শাসন মানতে হবে। পুলিশ আপনাকে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আপনি গুম হয়ে যাচ্ছেন, আপনাকে গুলি করে হত্যা করছে কিন্তু রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মোকাবিলা করবার অধিকার আপনার নাই। গণ্মাধ্যমগুলো ক্রমাগত মথ্যাচার করে যাচ্ছে, কিন্তু তারপরও আপনাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা মানতে হবে। এটা আইন। বলপ্রয়োগের বিরুদ্ধে পালটা বল প্রয়োগ আপনি করতে পারবেন না। তখন আপনি নিমেষে সন্ত্রাসী হয়ে যাবেন। রাষ্ট্র না।
অর্থাৎ রাষ্ট্র ভাল। রাষ্ট্রের আইন অলঙ্ঘনীয়। একে আমাদের সর্বাবস্থাতেই মেনে নেওয়া উচিত -- সমাজে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে ওঠে। আইনের শাসন এবং রাষ্ট্রবাদী চিন্তার কারনে যারা সন্ত্রাস করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে আরও কঠিন ভাবে সন্ত্রাসী হবার পরামর্শ দিয়ে থাকি। বোঝা যায়, এই সমর্থনটুকু পায় বলে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র নিজেই নানান সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটায়। নানান নাটক তৈরি করে। কিন্তু আমরা তা বুঝেও না বোঝার ভান করি। তাই বলছিলাম শুধু বল প্রয়োগের কেচ্ছা দিয়ে রাষ্ট্রকে বোঝা যায় না। সমাজে বিশেষ মতের আধিপত্য, সেই মতের তৈরি হওয়া এবং বদ্ধ মূল যাওয়া ইত্যাদি কারিগরির দিকেও আমামদের মনোযোগ দিতে হবে। মতাদর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
কিন্তু রাষ্ট্রের এই চরিত্রেও একালে ব্যাপক রূপান্তর ঘটেছে। রাষ্ট্র এখন আর শুধু শাসনব্যবস্থা বা মতাদর্শিক আধিপত্যের ওপর নির্ভর করে নাই। কৃৎকৌশলের অভাবনীয় বিপ্লবের এই যুগে ডিজিটাল নজরদারি রাষ্ট্রের প্রধান তৎপরতা হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি প্রিসিশান টেকনলজির ক্ষেত্রে উন্নতি ও তা ব্যবহারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। আর তার যত্র তত্র পরীক্ষা নিরীক্ষাও চলছে। যারা আমামদের প্রভু তারা আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির অধীন রাখতে চায়। একালে নজরদারির কারগরী খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নজরদারি ও প্রিসিশান টেকনলজি ব্যবহার করে ড্রোন হামলাও চলছে। সন্ত্রাস দমনের জন্য এটা দরকার, সেটা মেনে নিচ্ছি আমরা। ড্রোন হামলা পরিচালিত হতে পারে দিল্লী, ওয়াশিংটন, চিন, জাপান বা যে কোন দেশে বসেই। এর ফলে তথাকথিত ‘টার্গেট’ ছাড়াও একই সঙ্গে নির্দোষ মানুষ – যাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে – তাদেরকে হত্যা করতে হত্যাকারীদের বিবেকে একদমই বাঁধছে না। তারা বলছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ চালাবার জন্য এটাই করতে হবে। নইলে আমরা নিরাপদ থাকবো না। নির্দোষ মানুষকে নির্দয় ভাবে হত্যাকে সহনশীল আর বৈধতার আবরণ দেবার জন্য এর একটা দারুন নামও দিয়েছে তারাঃ ‘কোলেটারাল ডেমেজ’। যারা এলসিডি স্ক্রিনে বিন্দুবৎ শুধু একটি টার্গেট খোঁজে, তারা ক্ষতবিক্ষত মানুষটিকে দেখে না। বিমূর্ত বিন্দুটিকেই শুধু দেখে। তখন বোমার আঘাতে উড়ে যাওয়া রক্ত, মাংস অস্থি মজ্জার ভয়াবহ পরিণতি তারা প্রত্যক্ষ করে না। এলসিডিতে তারা টার্গেটকে টার্মিনেট বা ধ্বংস করতে পেরেছে শুধু সেই সাফল্যের সংবাদটুকু ভেসে ওঠে। টেকনলজি মানুষের আবেগ, বিবেক, অপরের প্রতি সম্বন্ধের চরিত্র সব কিছুর মধ্যে বিপুল পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
বোঝাতে চাইছি। আপনি নতুন বিশ্ব বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন। জেগে উঠুন।
আপনাকে আসলে কারাগারে রাখারও দরকার নাই। আপনি শৃংখলিত। দিল্লি কাঁটা তাঁরের বেড়া দিয়ে আপনাকে ঘিরে রেখেছে, আপনি নিত্য সীমান্তে নিহত হচ্ছেন। দুনিয়ার সবচেয়ে রক্তাক্ত সীমান্তের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এখন আলোচিত। এখন আর আপনাকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্দী রাখার দরকার দিল্লির আছে কিনা সেটা কৃৎকোশলের বিপুল বিপ্লবের মুখে ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। দিল্লী চাইলে মোবাইল কম্পানিগুলোর কাছ থেকে আপনার বায়োমেট্রিক ডাটা অনায়াসেই সংগ্রহ করতে পারে। আপনি আনন্দ চিত্তে আপনার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে সিম নিয়ে ফিরে এসেছেন। আপনার পায়ে সত্যি কথা বলতে কি, পুরানা শেকলের জায়্গায় নতুন অদৃশ্য শেকল পরানো হয়েছে। প্রিয় কমরেডগণ, একে পুরানা হাতুড়িকাস্তে দিয়ে ভাঙ্গবেন সে উপায় নাই। মজুরি দাসত্ব তাই বলে মিথ্যা হয়ে যায় নি। কিন্তু এই অদৃশ্য শৃংখলের কারিগরি সম্পর্কে আপনার কোন ধারণাই নাই। এ নিয়ে আপ[অনি ভাবেন না, ভাবতে অক্ষম। আপনার বিশেষ হুঁশ নাই যে কাস্তে হাতুড়ি দিয়ে এই অদৃশ্য শেকল ভাঙার চেষ্টা এ যুগে বেকার। আপনাকে নতুন রাজনীতির কথা ভাবতে হবে।
যদি এতোটুকু বুঝে থাকেন, তাহলে সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার প্রচলিত ধ্যান ধারণাকে প্রশ্ন করবার এবং তাকে নিবিড় পর্যালোচনার অধীনে আনবার হিম্মত আপনাকে অর্জন করতে হবে। রাষ্ট্র সম্পর্কে বাকুনিন কিম্বা শুধু মার্কসের ধারণা দিয়ে নতুন বাস্তবতার বিচার কিম্বা তার রূপান্তরের কর্তব্য নির্ণয় করতে পারবেন না। কিম্বা লেনিন বা মাও জে দং। উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে বাগাড়ম্বর করে যেতে পারবেন, কিন্তু খোলা মাঠে ভেড়ার চিৎকার ছাড়া আর কিছু হবে না। খোলা চাপাতি হাতে মানুষ কুপিয়ে যেতে পারবেন কিন্তু এতে বিশ্বব্যবস্থার চরিত্রে বিন্দু মাত্র দাগও ফেলতে পারবেন না।
যদি শৃংখল থেকে মুক্তি ও মুক্ত মানুষের সমাজ আপনি আসলেই বাসনা করেন, তাহলে আপনাকে চিন্তা করতে শিখতে হবে। নতুন বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে নতুন ভাবে চিন্তা – এটাই এখনকার রাজনীতির প্রধান দাবি।
পেছনের অভিজ্ঞতা
এবার পেছনের কথা একটু ভাবুন। কিছু উদাহরণ দিয়ে ফের আবার এখনকার বাস্তবতায় ফিরে আসি। এক সময় বলা হোত রাষ্ট্র হচ্ছে জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের অভিব্যাক্তি। আর একে বলা হোত গণতন্ত্র। কারণ রাষ্ট্রের ইচ্ছাকেই ‘গণ’-এর ইচ্ছা হিসাবে পরিগণনা করা হোত। এটা হোল মূদ্রার এক পিঠ। অপরদিক থেকে রাষ্ট্র যদি জনগণের ইচ্ছার অভিব্যাক্তি হয়ে না উঠতে পারে তাহলে তা অগণতান্ত্রিক বা গণবিরোধী রাষ্ট্র। সেই ক্ষেত্রে জনগণের কর্তব্য কি? এই অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিলয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিস্থাপন। সংস্কার নাকি বিপ্লবের মাধ্যমে হবে সেটা হবে অবস্থা ও বাস্তবতাই তা নির্ণয় করবে । কিন্তু অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বহাল রাখা যাবে না, সেখানে কোন অস্পষ্টতা ছিল না।
জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের রূপ কি? সেটা রাষ্ট্র গঠনের চরিত্রে এবং গঠনতন্ত্রে হাজির থাকে। গঠনতন্ত্র লিখিত বা অলিখিত হতে পারে। দুইয়ের ভালমন্দ নিয়ে অন্য সময় দীর্ঘ আলাদা আলোচনা হতে পারে। আমরা জানি যে বাংলাদেশের লিখিত ‘গঠনতন্ত্র’ (Constitution) রয়েছে। কিন্তু যারা সংবিধান মুসাবিদা করেছেন তাঁরা একে গঠনতন্ত্র না বলে অনুবাদ করেছেন ‘সংবিধান’। কেন তারা কনস্টিটিউশানের সঠিক অনুবাদ ‘গঠনতন্ত্র’ না করে ‘সংবিধান’ করলেন তা নিয়ে আলাদা গবেষণা ও আলোচনা হওয়া দরকার। কারণ শুধু অনুবাদের পার্থক্য নয়, ধারণা হিসাবেও তারা আলাদা। জনগণ কী ধরণের রাষ্ট্র চায়, তার রূপ ও কাঠামো কী হবে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ – বিশেষত নির্বাহী, আইন প্রণয়ণী ও বৈচারিক ক্ষমতার পার্থক্য, তাদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যসূচক চর্চার রূপ এবং তিনটি বিভাগের সম্পর্ক ও পারস্পরিকতার বজায় রাখার পরেও তারা কিভাবে পৃথক ভাবে তাদের নিজ নিজ কর্তব্য পালন করতে পারে ইত্যাদি বিষয়ে জনগণের ‘ইচ্ছা ও অভিপ্রায়’ গঠনতন্ত্র ধারণ করে। এই অর্থেই ‘গঠনতন্ত্র’ জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের অভিব্যাক্তি। এটা রাষ্ট্র কেমন হবে তার গাঠনিক দলিল।
বিধান মানে আইন; ‘সংবিধান’-এর অর্থ আইনী ধারণার সঙ্গে যুক্ত। এই ধারণা গঠনতন্ত্রের (Constitution) ধারণা থেকে একদমই পৃথক। ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসকরা তাদের ঔপনিবেশিক আইন দিয়ে আমাদের শাসন করেছে। জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় ধারণ করবার কোন প্রয়োজন তাদের ছিল না। আমাদের ক্ষেত্রেও যারা সংবিধান লিখেছিলেন তারাও জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় ব্যক্ত করবার জন্য কোন ‘গঠনতন্ত্র’(Constitution) প্রণয়ণের তাগিদ বোধ করেন নি। ঔপনিবেশিক কিম্বা পাকিস্তানী শাসকদের মতো তারা বাংলাদেশের জনগণকে শাসন করতে চেয়েছে মাত্র। তাই তারা শাসন করবার হাতিয়ার হিসাবে একটি ‘সংবিধান’ চেয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় ধারণ করে জনগণের দ্বারা প্রণীত গঠন্তত্নত্রের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গঠিত হোক এটা তারা চান নি। খুব গভীরে না গিয়ে কন্সটিটিউশানের অনুবাদ ‘সংবিধান’ কেন হোল তা বিচার করেই আমরা তা বুঝতে পারি। স্বাধীনতার ঘোষণার প্রতিশ্রুতি ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাহাত্তরের সংবিধান প্রণেতারা তাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে তাদের দলীয় ও সংকীর্ণ চারটি নীতির ভিত্তিতে ‘সংবিধান’ জারি করে আমাদের শাসন করতে চেয়েছে মাত্র। যে রাষ্ট্র তারা বানিয়েছিল তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’। দারুন প্রহসন! প্রশ্ন করা যায় গণতন্ত্র কি করে আবার ‘প্রজাতন্ত্র’ হয়? রাজা কে? প্রজাই বা কারা? কিভাবে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ রাজা আর প্রজার সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠিত রাষ্ট্র হয়?
তবুও যারা সংবিধান মুসাবিদা করেছিলেন তাদের সততাকে প্রশংসা করি। তারা যে রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছেন সেটা জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠিত হোক সেটা চান নি। রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের আন্তরিক সম্পর্ক বা সম্বন্ধ মজবুত রাখা তাদের আদর্শ ছিল না। তারা রাষ্ট্র চেয়েছেন শুধুমাত্র শাসনের হাতিয়ার হিসাবে। চেয়েছিলেন রাষ্ট্র হবে কলোনিয়াল মাস্টারদের মতো শাসক আর শাসিতের সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠিত। আমাদের রাজা অথবা রানি থাকবেন আমরা হব তাদের প্রজা। যার চূড়ান্ত রূপ আমরা আগেও দেখেছি, এখনও দেখছি। তাদের আমরা রাজা কিম্বা রানির উপাধি দেই নি। কিন্তু যারা আমাদের শাসঙ্করেন তারা কার্যত সার্ব্বহৌম ক্ষমতা সম্পন্ন। আমরা তাদের প্রজা মাত্র। যে কারণে তারা অনায়াসেই বলেছেন বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র।
ইংরেজি People’s Republic এর অনুবাদ হতে পারে ‘জনগণতন্ত্র’ কিন্তু তারা তো পিপলস রিপাবলিক চান নি। তাই ইংরেজিতে পিপলস রিপাবলিক লিখলেও বাংলায় তাঁরা তার অনুবাদ করেছেন গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ। সাধু!
নব্য বাজারবাদী রাষ্ট্র এবং গণপ্রতিরক্ষা
ব্যবহারিক রাজনীতির দিক থেকে এর পরের প্রশ্ন হোল জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় নির্মাণ, তা ব্যক্ত করে তোলা ও বাস্তবায়নের পথ কি? সেই তর্ক এখন এখানে আমরা করব না। ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখলাম। আপাতত রতোটুকু বুঝি যে সমাজের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন এবং সর্বোপরি জনগণের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণ তার ইচ্ছা ও অভিপ্রায় নানান ভাবে ব্যক্ত করে। তাকে শনাক্ত করা এবং বোঝা বুদ্ধিবৃত্তিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে স্পষ্ট করে তোলা, দাবি দাওয়ার তাৎপর্য অনুধাবন ও বিশ্লেষণ ইত্যাদি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কাজ। সমাজে যখন সেই কাজের ঘাটতি তৈরি হয় তখন তা মারাত্মক পরিণতির দিকে আমাদের নিয়ে যায়। বাংলাদেশে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে বিপদে পড়েছি বললে ভুল হবে। সেটা আংশিক সত্য অবশ্যই। কিন্তু শুধু সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সত্য যদি আমরা মনে করি বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থা বহাল রেখে আমরা শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল চাইতাম। কিন্তু রাষ্ট্র যে জনগণের ইচ্ছা অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠন করতে হয় সেটাই তো আমরা জানি না। কিম্বা এর গুরুত্ব এখনও উপলব্ধি করতে অক্ষম। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র ক্ষমতার যে বিবর্তনের ইঙ্গিত আমরা ওপরে উল্লেখ করেছি সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হলে বুদ্ধিবৃত্তিক দায় দায়িত্বই এই ক্ষেত্রে প্রধান।
এটা বুদ্ধিজীবিদেরই দায় যে আমরা যখন ফ্যাসিবাদ বা ফ্যসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বলি তা কোন্ অর্থে এবং কেন বলি সেটা পরিষ্কার করে বলা। ফ্যাসিবাদ কোন গালি নয়, রাষ্ট্রব্যবস্থার সামনে ‘ফ্যাসিবাদী’ বিশেষণ কোন সেন্সেশান তৈরির জন্য নয়। পঞ্চদশ সংশোধনী, বিচার বিভাগের নৈতিক ও বৈচারিক বিধিবিধানের ক্ষয়, ঘাতক বাহিনী হিসাবে পুলিশ র্যাযব বিজিবির ভূমিকা, গুম খুন, আইন বহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকারের চরম লক্ষণকে একসঙ্গে বোঝাবার জন্যই ‘ফ্যাসিবাদী’ কথাটার প্রয়োগ। শব্দটি ক্লিশে, অর্থাৎ অতি ব্যবহারে জীর্ণ। কিন্তু আমাদের হাতে এখন এর চেয়ে ভালো শব্দ নাই।
বুদ্ধিবৃত্তিক দায় আমাদের সকলকেই নিতে হবে। এই সরকার ক্ষমতার আসার পরপরই ‘ডিজিটাল ফ্যাসিবাদ’ নামে যে পুস্তিকাটি আমি পাঠকদের কাছে পেশ করেছিলাম তখন ডিজিটাল টেকনলজি ও তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে নব্য ফ্যাসিবাদের সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত দেবার চেষ্টা করেছি। যা এখন তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা কিম্বা বায়োমেট্রিক নজরদারি বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্র ও ব্যবসায়িক বহুজাতিক কর্পোরেশানের তৎপরতা জড়িত। আমরা বারবার ব্যাখ্যা করবার চেষ্টা করেছি কেন রাষ্ট্র সিকিউরিটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সেই রাষ্ট্রকেই সিকিউরিটি স্টেইট বলা হয় যে রাষ্ট্র তত্ত্বে ও আচরণে প্রমাণ করে যে তার দায়িত্ব নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয়, বরং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই রাষ্ট্র তখনই ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠে যখন জনগণের সুবিধাভোগী শ্রেণির একটি অংশ মনে করে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের সিকিউরিটি নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখলেই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সমাজের নিরাপত্তা যখন বিঘ্নিত হয়, তখন কাজ হচ্ছে সমাজকে আরও সামাজিক করে তোলা, কিন্তু ব্যক্তি তখন সমাজ থেকে আরও আলাদা হয়ে যায়, নিজেকে সমাজ থেকে ভিন্ন ভাবতে শুরু করে। ভিন্ন হয়ে যায়। ব্যক্তি সমাজে আরও আন্তরিক ভাবে মিশে ও অংশগ্রহণ করে সামাজিক ভাবে নিজের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করে না। করবার কথা ভাবতেও অক্ষম হয়ে পড়ে। ভাবতে শুরু করে পুলিশ ও র্যাাবই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। সমাজের সকলে সকলকে সন্দেহ করতে শুরু করে। কার কল্লা কে কখন চাপাতির কোপে আলাদা করবে এই ভীতি সমাজে পেয়ে বসে। জঙ্গী ভীতি সমাজে প্রবল হয়। ফ্যসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে গণ সমর্থন এভাবেই তৈরি হয়।
এই ভীতি কাটিয়ে উঠতে হলে ব্যাক্তি, সমাজ রাষ্ট্র বলতে আমরা কি বুঝি, কেন মানুষের সঙ্গে মানুষের সাক্ষাৎ সম্পর্কের কোন বিকল্প নাই, পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার পরিসর গড়ে তোলার চেয়ে অধিক কোন রাজনীতি নাই – এই দিকগুলো বুদ্ধিজীবী হিসাবে সমাজে বার বার ব্যাখ্যা করে বলাই আমাদের দায়।
নিউলিবারেলিজম বা বাজারবাদ বলে একটি ধারণা ও তার বাস্তবায়ন চলছে কয়েকযুগ ধরে। বাজারবাদের বক্তব্য হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ইত্যাদি নিশ্চিত করবার কোন দায় রাষ্ট্র নেবে না, রাষ্ট্র অদক্ষ এবং আকামের হদ্দ। এটা করবে বাজার ব্যবস্থা, অর্থাৎ ব্যবসায়িক কম্পানি। রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে কম্পানিগুলো যেন নির্বিঘ্নে মুনাফা কামাতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া।
প্রশ্ন ওঠে, তাহলে রাষ্ট্রের কাজ কি? বাজারবাদীদের উত্তর: রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই তো দরকার র্যাব, পুলিশ ব্যাটেলিয়ন, সেনাবাহিনী, ইত্যাদি। রাষ্ট্র জনগণের সেবা করবে সেই রাষ্ট্র আর নাই। এটা এখন গুজব মাত্র। এই কথাটাই আমি গত দুই দশক ধরে নানান ভাবে সকলকে বোঝাবার চেষ্টা করে গিয়েছি। টেকনলজির বিবর্তন ও নজরদারির এই পর্বে তা আরো ভয়ংকর হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আমি সবসময় গণপ্রতিরক্ষার কথা বলেছি। এ নামে আমার একটি পুস্তিকাও আছে। বুঝতে পারি নতুন উপলব্ধির আলোকে তা নতুন করে লেখা দরকার। কিন্তু দিকনির্দেশক ধারণা হিসাবে আমরা তা আমলে নিয়ে রাখতে পারি। নিজেদের রক্ষা করার দায় সমাজের উর্ধে এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বল প্রয়োগের প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যস্ত করার বিপদ আমাদের বুঝতে হবে। কিন্তু আমাদের কোন সেনাবাহিনী লাগবে না কিম্বা সমাজকে নিজের প্রতিরক্ষার জন্য সৈনিক হবার দরকার নাই – এই ধরণের চিন্তাও বিশুদ্ধ আহাম্মকদের চিন্তা। দরকার হচ্ছে নিউলিবারেল রাষ্ট্র এবং নজরদারি করবার নব্য বাজারবাদী রাষ্ট্রের চরিত্র ভাল ভাবে বিশ্লেষণ করা ও বোঝা। তাহলে বুঝব, বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা একই সঙ্গে একটি যুদ্ধক্ষেত্রও বটে। তাহলে সৈনিকতার চর্চা ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কোনভাবেই নিজেদের রক্ষা করতে পারব না। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আমামদের ঘিরে রাখা দিল্লী এবং রোহিঙ্গা নিধনে সিদ্ধ হস্ত মায়ান্মারের দিকে তাকালেই আমরা বুঝব কী ভয়ংকর বিপদের গহ্বরে ষোল কোটি মানুষ রয়েছে। তাহলে এখন দরকার কিভাবে প্রতিটি নাগরিককে সৈনিক এবং প্রতিটি সৈনিককে নাগরিক করে তোলা যায় সেই বিষয় নিয়ে গভীর ও দায়িত্বশীল হয়ে ভাবা। উপলব্ধির দিকটা হোল এই যে নিজেদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করবার জন্য জনগণকে একই সঙ্গে সৈনিক এবং নাগরিক হয়ে উঠতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আর কোন বিকল্প আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। পেশাদার সৈনিকতার অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন শোষক শ্রেণির পাহারাদার হিসাবে স্থায়ী সেনাবাহিনী গড়ে তোলার যে রীতিকে আমরা 'জাতীয় প্রতিরক্ষা' বলে দাবি করছি সেই দাবির কোন ভিত্তি নাই। আমামদের চাই গণপ্রতিরক্ষা। সৈনিকতা ও নাগরিকতার যুক্ত কিম্বা যৌথ অপ্রিতিরোধ্য শক্তি।
যে রাষ্ট্র বা বাহনের অভ্যন্তরে আমরা চড়ে আছি তার রূপান্তর নিয়ে ভাবতে হবে। পুরানা চিন্তা খুব একটা কাজে আসবে না। বরং প্রথাগত চিন্তাকে পর্যালোচনার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের কর্তব্য নির্ণয় করা যাবে।
আজ এতোটুকুই।
৩০ বৈশাখ, ১৪২৩, ১৩ মে ২০১৫/ শ্যামলী