ইতালিয়ান নাগরিক হত্যা ও তিনটি অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত


মনে হচ্ছে পাশ্চাত্য দেশগুলো ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লার হত্যাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসাবে মানতে নারাজ। ঘটনা হোল, সিজার গত সোমবার ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান-২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কের গভর্নর হাউসের দক্ষিণ পাশের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষা ফুটপাতে খুন হন। দুই অস্ত্রধারি রিভলবার দিয়ে পর পর তিনটি গুলি করে আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা একজনের মোটরসাইকেলে চড়ে ৮৩ নম্বর সড়ক ধরে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে সিজারের মৃত্যু হয়। তিনি নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও কো-অপারেশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মী। প্রুফ নামে ওলন্দাজ সরকারের উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অর্থ সহায়তায় পরিচালিত একটি বড়সড় প্রকল্পে সিজার কাজ করতেন। ইকো করপরেশানের তথ্য অনুযায়ী প্রকল্পের ক্ষেত্র ছিল উত্তর বঙ্গ (গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি ও রংপুর)। ইকোর ওয়েব সাইটের এই প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্যে (Profitable Opportunities for Food Security) দেখা যাচ্ছে একটি বীজের দোকানের সামনে প্লাস্টিকের প্যাকেটে বাণিজ্যিক বীজ হাতে হাসিমুখে একজন কৃষক দাঁড়িয়ে আছেন। পেছনে থরে থরে প্লাস্টিকের বীজের প্যাকেট সাজানো। সিজার তাভেল্লার হত্যার ঘটনার আগে আমি নিজেও জানতাম না ওলন্দাজ সরকারের উন্নয়ন সহায়তায় উত্তর বঙ্গে ইকো করপোরেশান এতো বড় একটি ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ প্রকল্প পরিচালনা করছে।

সিজার কোন কুটনৈতিক মিশনের কেউ নন, কিন্তু তাঁর প্রকল্পের সঙ্গে কূটনৈতিক স্বার্থ জড়িত। ওলন্দাজদের জন্য বীজ ব্যবসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এশিয়ায় বিনিয়োগ কর্মসূচির (Asia Invest Program ) অর্থায়নে তৈরি একটি প্রতিবেদনে (The seed sector in the Netherlands: An overview of production, trade and related institutions) দেখেছি ইউরোপে বীজ ব্যবসার দিক থেকে ওলন্দাজদের স্থান সামনের সারিতে। বিশ্ববাজারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলো থেকে যে বীজ রপ্তানি হয় তার ৪৭% ভাগের ব্যবসা করে নেদারল্যান্ডস। তুলনায় জর্মনরা করে ১০% আর ফরাসিরা ১৮%। বাংলাদেশের বীজের বাজারে ভাগ বসাবার জন্য ওলন্দাজ কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বহুদিন থেকেই। এটা নতুন কিছু নয়। বীজের বাজারের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের কৃষকের ঘরে রাখা বীজ ব্যবস্থার বিপরীতে কোম্পানির ব্যবসাভিত্তিক বীজের বাজার সম্প্রসারণকে ওলন্দাজ বাণিজ্যিক স্বার্থের দিক থেকে উন্নয়নের কাজ বটে। ইকো করপোরেশানের এই বাণিজ্যিক বীজ সম্প্রসারণের কাজে যুক্ত হওয়াটা নতুন ঠেকল।

সিজার তাভেল্লার হত্যাকাণ্ডের কোন ক্লু বা কুলকিনারা দেখা যাচ্ছে না। নিঃসন্দেহে এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বিদেশি বড় একটি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকের হত্যাকে বিদেশিরা কেন মেনে নিতে পারছে না সেটা বোঝা কঠিন নয়। ঢাকার যে এলাকায় এই খুনের ঘটনা ঘটেছে সেটা কঠিন গ্রিন জোন বা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও নজরদারির অধীন অঞ্চল। সেখানে এই হত্যাকাণ্ড ঘটা বিদেশিদের পক্ষে মেনে নেওয়া আসলেই কঠিন। বাংলাদেশকে নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে অনেক দেশ। তারা বিদেশিদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। যেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকার কথা রাজধানীর সেই এলাকায় একজন বিদেশি খুন হয়েছেন, বিদেশিদের সতর্কতা জারির পেছনে এটা যথেষ্ট ভাল একটি যুক্তি।

কিন্তু ব্যাপারটা এতো সিম্পল নয়।

দুই

বাংলাদেশ সন্ত্রাসের ঝুঁকির মধ্যে আছে এটা সিজার তাভেল্লার খুন হওয়ার আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়া বলে আসছিল। ঝুঁকির অজুহাত তুলেই তাদের ক্রিকেট টিম আদৌ বাংলাদেশ সফর করবে কিনা সে ব্যাপারে গড়িমসি শুরু করে। এরপর বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আসে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি দল। ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনশৃংখলা বাহিনী ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডসহ (বিসিবি) বিভিন্ন পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। সব জায়গা থেকেই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। ঠিক এমন সময়েই সিজার তাভেল্লা খুন হন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি দল কোনো সিদ্ধান্ত না জানিয়েই বাংলাদেশ ত্যাগ করে। প্রতিবেদনে একটি জঙ্গি গোষ্ঠির সন্ত্রাসী হামলার আশংকা করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল তাদের সফর বাতিল করেছে। বাংলাদেশের জন্য এটা চরম ভাবমূর্তি ক্ষয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। এই ধকল যেতে না যেতেই যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হুগো সোয়ারে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছেন। ৩ অক্টোবর তাঁর সফরের কথা। ক্ষমতাসীন সরকার বেশ কঠিন একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ দাবি করছে এই হত্যাকাণ্ড একটি ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা। অন্যান্য হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশ সরকার যেভাবে সন্ত্রাসীদের কাণ্ড বলে প্রচার করতে অতিশয় আগ্রহী থাকে এই হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ ভিন্ন। একে কিছুতেই ইসলামি সন্ত্রাস বা তথাকথিত জঙ্গিবাদ বলতে তাঁরা নারাজ। এই হত্যাকাণ্ড থেকে আন্তর্জাতিক সুবিধা শেখ হাসিনা আদায় করতে পারতেন; কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই ক্ষেত্রে তাঁর বেশ অনীহা রয়েছে। ইসলামি সন্ত্রাসীরা এর সঙ্গে কোন ভাবেই যুক্ত নয় কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে এটাই সরকার তারস্বরে প্রচার করছে।

একটি বিষয় পরিষ্কার থাকা দরকার। সিজার তাভেল্লা খুন হয়েছেন বলে অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করেছে তা নয়। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশংকা করেই অস্ট্রেলিয়া এই সফরে আসতে চাইছিল না। কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরণের হামলা হতে পারে তার আভাস বা সূত্র অস্ট্রেলিয়া কোথা থেকে পেল সেটা একটা প্রশ্ন হিসাবে উঠছে স্বাভাবিক ভাবেই। দ্বিতীয়ত সিজার তাভেল্লার ঘটনাকে এই আগাম সতর্কতার আলোকেই বিচার করা হচ্ছে। অনেকটা এরকম যে আমরা তো বলেছি বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশংকা রয়েছে। আর দেখলে তো সেজার তাভেল্লাকে খুন করা হয়েছে। জঙ্গি হামলার যে আশংকা আমরা করেছি এটা তারই প্রমাণ। যদি তাই হয় তাহলে জঙ্গিরা কেন সিজার তাভেল্লাকে টার্গেট করবে তার কোন যুক্তি কিন্তু কেউ দিচ্ছে না। পুরা ব্যাপারটাই একটা রহস্যের গর্তে পড়ে ধোঁয়াশা হয়ে রয়েছে।

সিজার তাভেল্লা বিদেশিদের কাছে হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশংকার জ্বলজ্যান্ত প্রমান। এই পরিস্থিতিতে এটি আদৌ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও সেটা প্রমান করা বাংলাদেশ সরকারের কাছে এখন অসম্ভবই বটে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করে তুলবার জন্য প্রাণাতিপাত করছেন। এতে তাঁর খুশি হবার কথা। কিন্তু এখন মাছের গলায় বঁড়শি আটকে যাবার দশা হয়েছে তাঁর। বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসাবে প্রমাণ করা তাঁর মিশনের আদ্ধেক মাত্র। গল্পের বাকি অর্ধেক ছিল এরকম যে বাংলাদেশের জঙ্গী পরিস্থিতি একমাত্র তিনিই শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে পারবেন। খালেদা জিয়া জঙ্গিবাদের নেত্রী, বিএনপি-জামাত জঙ্গিবাদের হোতা। একমাত্র তিনিই এই জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে সক্ষম। কিন্তু তাঁর জঙ্গিবাদের কেচ্ছার বাকি আর্ধেকটা এবার মারাত্মক ভাবে মার খেয়ে গেল। কারন তিনি যখন ক্ষমতায় তখন গুলশান কূটনৈতিক পাড়ায় ‘জঙ্গি’রা (?) একজন বিদেশি নাগরিককে খুন করে চলে গেল! তাঁর সরকার ও আইনশৃংখলা বাহিনী কিছুই করতে পারলো না? এটা কী করে হয়!

প্রথম অর্ধেকের সঙ্গে একমত হয়ে বিদেশীরা শেখ হাসিনার বিরোধী দল দমন পীড়ন আইন বহির্ভূত হত্যা, গুম খুন ইত্যাদিকে নীরবে কার্যত সমর্থন দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সিজার তাভেল্লার হত্যার পর তারা এই বার্তাই দিচ্ছে যে গল্পের বাকি অর্ধেকের সঙ্গে তারা এখন আর একমত নয়। শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমন করবার জন্য সবচেয়ে দক্ষ সরকার নয়। কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে এটা এক নতুন ধরণের সংকেত। শেখ হাসিনা তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন বলে মনে হয় না। আর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে ঘটনার মঞ্চে রিতা কাৎজ (Rita Katz) ও তার প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্সের (Site Intelligence) আবির্ভাব। এই সাইটের সূত্র ধরেই দাবি করা হচ্ছে ইটালির নাগরিক হত্যার পেছনে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আইসিস। রিতা কাৎজের সাইট ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী এই হত্যার দায় নিজেই স্বীকার করেছে আইসিস। সাইট ইন্টেলিজেন্সের তথ্যই হোল তার একমাত্র প্রমাণ।

মুশকিল হচ্ছে, যে সব দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে সতর্কতা দেবার তারা জঙ্গিবাদের সতর্কতা দিচ্ছে জোরেসোরেই। কিন্তু তাদের এই সতর্কতার ভিত্তি সম্পর্কে কিছুই তারা বাংলাদেশের সরকারকে জানায় নি। ইতালির নাগরিক খুনের সঙ্গে আইএসের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। যারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আরেকটি গ্রুপ দ্রুত ধরা পড়বে বলে আশা করেছিলেন তারা এতে খুবই হতাশ হয়েছেন। আসাদুজ্জামান তেমন কোন ইঙ্গিত দিতে নারাজ। তিনি দাবি করেছেন এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নাই বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিদেশী নাগরিক ও তাদের স্বার্থের ওপর জঙ্গি হামলা বিষয়ে কোনো হুমকির তথ্য বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে নাই, তিনি সেটাও বেশ জোর দিয়েই বলছেন। বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষে যারা পরিস্থিতি যাচাই করতে এসেছিলেন তারাও বাংলাদেশ সরকারকে কোন তথ্য দেয় নি। তাদের কাছ থেকে এ ধরনের হামলার বিষয়ে বাংলাদেশ কিছু জানতে পেরেছে কিনা প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, তাদের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা কিছুই জানাতে চায়নি। ফলে তথ্য বলতে এখন একটাইঃ রিটা কাৎজ ও সাইট ইন্টেলিজেন্স। SITE পুরোটা হচ্ছে (Search for International Terrorist Entities)। এটা কোন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা নয়। একটি প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা, যার কাজ হচ্ছে সারা দুনিয়ায় জিহাদিদের ওপর নজরদারি করা এবং তা সরকার বা যে কোন প্রাইভেট ক্লিয়েন্টকে তা সরবরাহ করা।

তিন

এখন কি করা?

বাংলাদেশের নাগরিকদের তিনটা অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত বা সংকেত নিয়ে এখন ভাবতে হবে।

এক. যে রাজনৈতিক দল, তাদের সমর্থক ও সরকার সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসাবে প্রমাণ করবার জন্য সবসময় প্রাণান্ত সিজার তাভেল্লার হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে কোন প্রকার জঙ্গী সম্পৃক্ততা আছে তা প্রাণপণ এখন অস্বীকার করছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কী এমন পরিবর্তন ঘটল যে নিজেদের থুতু এখন ক্ষমতাসীনরা নিজেরা গিলতে বাধ্য হচ্ছে।

দুই. যেসব রাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার আশংকা রয়েছে সেই সকল দেশ সেই আশংকার ভিত্তি বা যুক্তিসঙ্গত কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে কোন তথ্য বা সূত্র দিয়ে সাহায্য করছে না। কিম্বা করতে চাইছে না। কেন? জঙ্গিবাদ দমন তো একটি গ্লোবাল প্রকল্প! তাহলে এই অসহযোগের কারন কি?

তিন. জঙ্গী সম্পৃক্ততার সূত্র কোন সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা নয়, একটি বিতর্কিত প্রাইভেট ইহুদি বা জায়নিস্ট গোয়েন্দা সংস্থা। আজ আমি এসবের উত্তর দেব না। পাঠককে শুধু ভাবতে ও ঘটনার ওপর নজরদারি তীক্ষ্ণ রাখতে বলব। আপাতত রিতা কাৎজ এবং তার গোয়েন্দা সংস্থা কেন বিতর্কিত এবং একই সঙ্গে তাদের সূত্র কেন বিপজ্জনক সে সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলে আজকের লেখা শেষ করব।

রিতা কাৎজ ও সাইট ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে বিডি নিউজ ২৪ ডট কমের প্রশংসা সূচক অতি আপ্লূত রিপোর্টিংয়ের ধরণ পাঠক আগে একটু দেখে নিতে পারেন। বিডিনিউজ২৪ বলছে, গত বছর সাইট ইন্টেলিজেন্স সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলো। কারণ জিহাদিরা প্রচারের আগেই সাইট ইন্টেলিজেন্স মার্কিন সাংবাদিক স্টিভ জোয়েল সটলফ হত্যার ভিডিও আগেই প্রচার করেছিল। ব্রিটিশ পত্রিকা ইন্ডিপেন্ডেন্টের সূত্র দিয়ে বিডিনিউজ বাংলাদেশের পাঠকদের জানাচ্ছে যে সাইট ইন্টেলিজেন্স ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ও দুনিয়া জুড়ে তৎপর জিহাদি’ সংক্রান্ত পরামর্শ দাতা প্রতিষ্ঠান। ভাল।

বাংলাদেশের পাঠকদের একটু ভেবে দেখতে হবে যে রিতা কাৎজ সম্পর্কে ইন্টারনেটে যেসব তথ্য অতি অনায়াসেই পাওয়া যায়, বিডি জিউজ ২৪ সেইসব কিছুই উল্লেখ করলো না কেন? উইকিপেডিয়ার তথ্যই ধরা যাক। সেখানে রিতা কাৎজ সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে রিতা খুব ভাল আরবি বলতে পারেন। জন্ম বসরায় একটি ধনি ইরাকি ইহুদি পরিবারে। সাদ্দাম হোসেনের বাথ পার্টি ১৯৬৮ সালে ক্ষমতা দখলের পর রিতা কাৎজের বাবা ইসরাইলের পক্ষে গোয়েন্দাবৃত্তির জন্য ধরা পড়ে, তাদের সম্পত্তি জব্দ করা হয় এবং পরিবারের সকলকেই গৃহে অন্তরীন করে রাখা হয়। এরপর রিতা কাৎজ-এর পিতার ইসরাইলের পক্ষে গোয়েন্দাবৃত্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রায় অর্ধ লক্ষ ইরাকির হর্ষধ্বনির মধ্যে তাকে বাগদাদের প্রকাশ্য একটি স্কোয়ারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রিতার মা তিন মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যান এবং ইরান হয়ে ইসরায়েলে বসতি শুরু করেন। রিতা কাৎজকে তার বাবার জন্য আমরা অবশ্যই অভিযুক্ত করতে পারি না। তবে রিতা কাৎজ ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করেছেন। উইকিপেডিয়া লিখছে, রিতা একজন একনিষ্ঠ জায়নিস্ট। এবং কখনই ইসরায়েল ছাড়তে চান নি। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘I believed that Jews belonged in Israel’।

পাঠক মনঃক্ষূণ্ণ হলেও এখানে স্থানাভাবের কারনে উইকিপেডিয়ায় পাওয়া তাঁর তথ্য সম্পর্কে আমি আর কিছু লিখতে চাই না, এমনকি রিতা ও সাইট ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে অন্যান্য যেসব ওপেন সোর্স তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায় সেই সব খোঁজ খবর করবার ভারও পাঠকের ওপর ছেড়ে দেব। বিডি নিউজ ২৪ যেভাবে রিতা কাৎজ ও সাইট ইন্টেলিজেন্সের তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে আইএস এসে গিয়েছে বলে প্রমাণ করবার চেষ্টা করছে সেই কারনেই বিপরীত তথ্যগুলো হাজির রাখা জরুরী মনে করেছি।

সিজার তাভেল্লার হত্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য আদৌ কোনদিন জানতে পারব কিনা আমরা জানিনা, তবে পুরা ঘটনার সম্পর্কে আমার নিজের অনুভূতি বা উপলব্ধি মোটেও ভাল নয়। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে আমাদের অনেক বেশী সতর্ক ও বিচক্ষণ হবার প্রয়োজন রয়েছে।

আজ এতোটুকুই।

২ অক্টোবর, ২০১৫, ১৭ আশ্বিন, ১৪২২, শ্যামলী

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।