১. তবু কমিউনিজমের কথাই বলতে হবে...
কেন?
কারণ বিশ্ব ইতিহাসে অবদান রাখবার হিম্মত ও সম্ভাবনা কমিউনিজমের এখনও ফুরিয়ে যায় নি। আছে।
মানুষ সামাজিক এবং নিজেকে সে কোন না কোন সমাজ বা কমিউনিটির মধ্যেই আবিষ্কার করে। ফলে সামাজিকতার বা সামাজিক বন্ধনের যে কোন অভাবই তাকে পীড়া দিতে বাধ্য। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যখন পরিবার ও সমাজের বন্ধনগুলি ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায় তখন 'উম্মাহ' বা সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একই মানব্জাতির অন্তর্ভূক্তিকরণ ও পুনর্গঠনের তাগিদ বাড়ে বৈ কমে না। কমিউনিজম কোন আজগবি বা আসমানি ধারণা নয় এবং এই ধারণার উৎপত্তি, ইতিহাস ও বিকাশের ওপর কমিউনিস্টদের কোন একচেটিয়া নাই। নিজেকে অপরাপর মানুষের সঙ্গে স্রেফ মানুষ হিসাবে সম্পর্কিত হবার ও সম্বন্ধ রচনার ধারণা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মানুষ নিজেকে ঐতিহাসিক কাল থেকেই প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ভাবেই অপরের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত পেয়েছে ও দেখেছে। যখন পরস্পরের সঙ্গে সামাজিক সত্তা হিসাবে মিলনের জন্য মানুষ সকল প্রকার জুলুম, অর্থনৈতিক শোষণ , অত্যাচার ও অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং যখন তা রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা হিসাবে হাজির হয় তখন সেই প্রবল রাজনৈতিক শক্তি অনিবার্য ভাবেই শোষণহীন শ্রেণিহীন সমাজেরই বাসনা করে। সেই আকাঙ্ক্ষা ধর্মের পোশাক পরে আসুক, কিম্বা স্রেফ ইহলৌকিক মানুষের লড়াই সংগ্রামের দাবি হয়ে আসুক। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়েছে, চিন পুঁজিতান্ত্রিক পথে চলেছে, তাতে বাস্তবের এই সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার ওপর মানুষ আস্থা হারিয়েছে, নিজের ভুল শুধরে নিচ্ছে, কিন্তু মানুষের ঐতিহাসিক বাসনা এক তিলও দমিত হয় নি। সেটা হবার নয়। কারণ সেই বাসনার বারামখানা মানুষের স্বরূপের মধ্যে নিহিত। সেই বাঞ্ছা বাস্তবায়িত করবার নতুন কর্তাসত্তার আবির্ভাব ঘটছে এবং ঘটবে।
এই লেখাটি ‘বিশেষ নিবন্ধ' হিসাবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে দুই কিস্তিতে ছাপা হয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনীতির আসন্ন তুফানের পূর্বাভাস তখন দানা বাঁধছিলো। সেই সবের ছাপ লেখাটির মধ্যে আছে। ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী ইসলামবিদ্বেষী ও বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের ধর্ম প্রাণ মানুষের বিরোধের মাত্রা ও গুরুত্ব তখন ভারী হয়ে উঠছে। ‘তবুও কমিউনিজমের কথাই বলতে হবে’ – সেই সময়ের লেখা।
এই লেখার কিছু বিষয় জরুরী মনে করে এখন খানিক পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে দুই কিস্তিতে আবার পেশ করা হোল।
... ... ... ... ...
‘শেষমেষ এটা তো পরিষ্কার যে মানুষ নতুন কোনো কাজ ধরবে না, বরং সচেতনভাবে তার পুরানা কাজটাই সম্পূর্ণ করবার দিকে নিয়ে যাবে’ – কার্ল মার্কস
থতমত খেয়ে আছি...
একটু থতমত খেয়ে রয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, কীভাবে হরতাল করতে হয় সেটা যেন সিপিবি, বাসদ আর বাম মোর্চার ১৮ তারিখের হরতাল থেকে বিরোধী দল শিক্ষা গ্রহণ করে। বামপন্থীদের দুটি জোট সিপিবি-বাসদ আর গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা প্রায় কাছাকাছি ইস্যুতে ১৮ই ডিসেম্বর (২০১২) সারাদেশব্যাপি হরতাল ডাকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, তেলের মূল্যবৃদ্ধি, তাজরীন ফ্যাশনস এর হত্যাকাণ্ডসহ আরো কিছু ইস্যু কেন্দ্র করে এই হরতাল ডাকা হয়েছিল। এই হরতাল ‘আওয়ামীলীগের হরতাল’ হিসেবে অনেকে সমালোচনা করেছিলেন। । আওয়ামী লীগ তো আর আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে হরতাল করতে পারছে না, তাই বামদের দিয়ে হরতাল করানো হচ্ছে বলে বামদলগুলো সমালোচিত হয়েছিলো। নাগরিকদের সভা সমাবেশ ও কথা বলার স্বাধীনতা যখন ক্ষমতাসীনরা দমনপীড়নের মধ্য দিয়ে অসম্ভব করে তুলছিলো তখন বামপন্থিদের হরতাল চরম পরাবাস্তব বিনোদনের আমোদ তৈরি করেছিল।
ঠিক যে বামপন্থীরা হরতালের আগের দিন রাতে কোনো গাড়িতে আগুন দেয়নি। তাদের পিকেটিং ছিল শান্তিপূর্ণ। তারা রাস্তার মাঝখানে বসে গান করেছে। তবে পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়ে। তাদের প্রতি পুলিশের আচরণও ছিল দোস্তির। অবশ্য নেতারা দাবি করেছেন তাদের কোথাও কোথাও গ্রেফতার করা হয়েছে। হতে পারে, তবে পত্রিকায় তাদের দাবির পক্ষে কোনো খবর দেখিনি। কোনো মামলা হয়েছে বলেও শুনিনি। যেখানে শাসক ও শোষক শ্রেণীর স্বার্থ যেসব দল রক্ষা করে তাদের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা আক্রমণাত্মক ও সহিংস সেই ক্ষেত্রে কমিউনিস্টদের প্রতি পুলিশের এই মমতা আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। এই আনন্দঘন হরতালের রূপ দেখবার জন্য আমাদের মন ও দৃষ্টি প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু মহীউদ্দিন খান আলমগীরের মন্তব্যে আমাদের রসবোধ পুনরায় জাগ্রত হয়েছে। আমরা দারুন মজা পেয়েছি।
সিপিবি, বাসদ আর বামমোর্চার দুর্ভাগ্য—হরতালের সাফল্য তাদের জন্য গৌরব নয়, চিরদিনের জন্য কলঙ্কের তিলক এঁকে দিয়ে গেল। তাদের এই হরতাল আসলে ‘সরকারি হরতাল’ বলেই হাজির হয়েছে। তদুপরি তার চরিত্র ছিল ভাড়াটিয়া। তারা ক্ষমতাসীনদের জন্য নিজেদের অবস্থান নীচে নামিয়ে এনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভাড়া খেটেছেন মাত্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে যেমন তার সায় আছে, পত্রপত্রিকার খবরেও তার প্রমাণ মেলে। যারা হরতালের দিন রাস্তায় বেরিয়েছেন তাদের অনেকেই তার সাক্ষী। আগের রাত থেকেই জানাজানি হয়ে যায় যে, ক্ষমতাসীন সরকারই মঙ্গলবারের হরতাল সফল করে দেবে। রাস্তায় গাড়ি বের না করার জন্য পরিবহন মালিকদের বলে দেয়া হয়েছে। হরতাল সফল করার জন্য পুলিশের উৎসাহ ছিল রীতিমত দেখার মতো। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশই রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। এর আগের যে কোনো হরতালে পরিবহন স্বাভাবিক প্রমাণ করবার জন্য বেসরকারি গাড়ি না হোক সরকারি মালিকানাধীন বিআরটিসি চলত। এবার দেখা গেল, বাসগুলো বাস ডিপোতেই সারি বেঁধে কচ্ছপের মতো মুখ লুকিয়ে ঘুমাচ্ছে। সরকারের মদতে পুলিশের সক্রিয় পিকেটিংয়ে যে হরতাল হয়ে গেল, তা বাংলাদেশ শুধু নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে বামপন্থার কলঙ্ক হয়ে থাকবে।
সিপিবি, বাসদ আর বাম মোর্চার মূল দাবি হচ্ছে মহাজোট সরকার জামাত-শিবিরসহ সব সাম্প্রদায়িক দল নিষিদ্ধ করুক, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারও নিষিদ্ধ হোক এবং সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ‘দ্রুত শেষ করে শাস্তি কার্যকর করা’ হোক। উদ্ধৃতি দিচ্ছি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতন্ত্রী দলের (বাসদ) যৌথভাবে প্রচারিত একটি হ্যান্ডবিল থেকে। এটাই তাদের প্রধান দাবি। তাদের প্রচারে ও বক্তৃতায় অন্যান্য দাবি গৌণ হয়ে গিয়েছে। তারা গার্মেন্ট অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী মালিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান চান, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন, এমনকি ক্ষীণভাবে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার দাবিও করা হয়েছে। অন্যান্য দাবির ভিড়ে মেহনতি মানুষের দাবি ছিল, ক্লিন্ন, ক্লিষ্ট আর অবহেলিত। সেটা যেন মূল দাবির অলঙ্কার মাত্র। আর মূল দাবি শেখ হাসিনা যেন জামাত-শিবিরসহ সব সাম্প্রদায়িক দল নিষিদ্ধ করেন, কারন এদের সঙ্গে তারা রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে পেরে উঠছেন না, এখন আইন করে নিষিদ্ধ করা ছাড়া উপায় কী! তারা ধর্মের মোকাবিলা করতে অক্ষম এবং জনগণ তাদের মার্কসবাদ নামক ‘ধর্ম ব্যবস্থা’ মানতে রাজি না, যার সঙ্গে মার্কস বা লেনিনের কোন যোগই নাই, অতএব এই দেশ থেকে রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসাবে ইসলাম নিষিদ্ধ হোক, ধর্ম ব্যবস্থা হিসাবে মার্কসবাদ কায়েম হোক। মার্কসকে যেভাবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট এই সকল অর্বাচীন ধারা পরাবিদ্যার বিষয়ে পরিণত করে ফেলেছে আসলেই তার কোন তুলনা নাই।
মার্কস আইন বা রাষ্ট্রকে উপরি কাঠামো বললেও ধর্মকে কোথাও অর্থনৈতিক উপরিকাঠামো বলেন নি, একে সমাজে আর দশটা মতাদর্শের মতোই মতাদর্শ বলেছেন। অর্থনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে মতাদর্শের সম্পর্ক বিচার এখনও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার ক্ষেত্র যার মীমাংসা হয়েছে বলে মার্কসের সনিষ্ঠ পাঠকেরা মনে করেন না। এখানে ঘাটতি আছে। এই ক্ষেত্রে বরং মার্কসকে আরও ভালভাবে পাঠ ও বোঝার দরকার আছে। মার্কস ধর্মগুরু নন, তাঁকে পড়লে কারও ধর্ম নষ্ট হবার ভয় নাই। ধর্ম নিয়ে বা ধর্মের বিরুদ্ধে তিনি ‘পুঁজি’ গ্রন্থের মতো আলাদা কোন কেতাব লিখবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন নি। এই কাজগুলো তাঁর অনুরাগী ও অনুসারীদের ওপর দিয়ে রেখেছেন।
কোন ধর্মেরই কোন একাট্টা এক রকমের ব্যাখ্যা নাই, ইসলামও নানান মজহাব ও তরিকায় বিভক্ত। যে সকল ব্যাখ্যা গণমানুষের স্বার্থের বিরোধী, শোষক শ্রেণির শোষণের হাতিয়ার, শ্রমিক শ্রেণির রাজনীতির প্রতিবন্ধক তার বিরুদ্ধে শোষিত শ্রেণির রাজনীতি যাঁরা করেন বিশেষত সেই কমিউনিস্টদের অবশ্যই লড়তে হবে। অতএব ধর্মের নানান মজহাব, তরিকা ও ব্যাখ্যাকে মতাদর্শিক ভাবেই মোকাবিলা করা কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক-দার্শনিক কাজ, যাতে শোষক শ্রেণি তাদের স্বার্থে ধর্মের এমন কোন ব্যাখ্যা দিতে না পারে যা শোষণ ও নিপীড়নের শৃংখল থেকে মানুষের মুক্তি কঠিন হয়ে ওঠে। দেশকালপাত্র ভেদে ধর্মসহ যে কোন মতাদর্শের বাস্তবিক ওইতিহাসিক ভূমিকা পরিচ্ছন্ন করে তোলাই কমিউনিস্টদের কর্তব্য। দেশভেদে ও অবস্থা ভেদে ধর্মীয় মতাদর্শের ভিত্তিতে সংগঠিত রাজনীতির সঙ্গে শত্রুতা বা সম্পর্ক একটি দেশের শ্রেণি রাজনীতির বাস্তবতাই নির্ণয় করে দেবে। সাধারণ ফর্মুলা হিসাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি তারাই তোলে যারা শ্রেণি রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। কারণ তারা তাদের রাজনীতি শ্রেণির বিচারের দিক থেকে নয়, ধর্ম বিদ্বেষের জায়গা থেকে শুরু করে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট নামধারী দলগুলোর ক্ষেত্রে সেটা খুবই স্পষ্ট। বিশেষ ভাবে স্পষ্ট এ কারণে যে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধের ব্যবহার তারা তুলছে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে। যাদেরকে, বিস্ময়কর হলেও তারা তাদের মিত্র মনে করে এবং বল প্রয়োগের মাধ্যমে তারা ধর্মের নিকুচি করতে চায়।
'হরতাল হচ্ছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট' -- মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
তো রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়ে শ্রেণি রাজনীতির দিক থেকে ভালমন্দের তর্ক হতেই পারে। কিন্তু সেটা বিমূর্ত কায়দায় না। এঙ্গেলস জার্মানির কৃষক বিদ্রোহে ধর্মের ব্যবহারকে ইতিবাচক ভাবে দেখেছেন। অসুবিধা কোথায়? শোষক তার মতো ধর্মের ব্যাখ্যা দেবে, আপনি তাদের ব্যাখ্যার মিথ্যা উন্মোচন করে দিন। মওলানা ভাসানী সেটা করেছেন। জাতপাতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসলাম এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদারী ব্যবস্থায় জমিহারা নিপীড়িত কৃষকদের পক্ষে ইসলাম ব্যবহৃত হয়েছিল। পাকিস্তান আন্দোলন বাংলাদেশের কৃষকরাই সমর্থন করেছিলো। যখন পাকিস্তান আমলে ধর্মকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হয়েছিল সেই কৃষকই আবার তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, রক্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। বাস্তব ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়াই জরুরী কাজ। সাধারণ ভাবে বিমূর্ত কায়দায় রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি অতিশয় অবাস্তব দাবি। খড়ের গাদাকে অন্ধকারে ভূত জ্ঞান করে চিল্লাচিল্লি করে পাড়া মাত করবার কোন যুক্তি নাই।
রাষ্ট্রকে ধর্ম নিরপেক্ষ করবার কথা বললেও আধুনিক সেকুলার সমাজ বা রাষ্ট্রও বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের মতো রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করবার কথা বলে না। গির্জা আর রাষ্ট্র আলাদা হওয়ার অর্থ সমাজ,সংস্কৃতি ও রাজনীতি থেকে ধর্ম উবে যাওয়া নয়। ফলে সেই সকল সমাজে বা রাষ্ট্রে ইহুদি কিম্বা খ্রিস্টিয় মতাদর্শের আধিপত্য আমরা অনায়াসেই দেখি। যাকে আমরা সেকুলার চিন্তা গণ্য করি সেটা আসমান থেকে নাজিল হয় না, সেটাও একটি সমাজের ধর্মচিন্তা এবং তার সঙ্গে যুক্ত নানান অনুমান ও সিদ্ধান্তকে জ্ঞানে কিম্বা অজ্ঞানে ধারণ করে। কার্ল মার্কসের চিন্তাও খ্রিস্টিয় চিন্তার পরিমণ্ডলের বাইরে নয়। তিনি ধর্ম বলতে খ্রিষ্ট ধর্মই বুঝেছেন। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা অবাস্তব শুধু নয়, নিষিদ্ধ করবার দাবি চরম আহাম্মকি। ধর্ম মানুষের চিন্তাকে নানান ভাবে প্রভাবিত করে, তথাকথিত সেকুলার চিন্তাও ধর্ম চিন্তার ধারাবাহিকতা কিম্বা ধর্মের পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। ফলে কিভাবে ধর্ম রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে সেটা সমাজতাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয় হতে পারে, তবে পরিণতি গুনে পড়ে বলা অসম্ভব। সেটা ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিম্বা বিলাতের রাজনীতি বিচার করলেই আমরা দেখব। যা বোঝা কঠিন তাকে আইন দিয়ে নিষিদ্ধ করবার দাবি চূড়ান্ত আহাম্মকি ছাড়া আর কী! ধর্ম্ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, বরং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকলের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করবার কথাই বলা হয়।
অথচ ‘রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ‘দ্রুত শেষ করে’ শাস্তি কার্যকর করা’ – এটাই নাকি কমিউনিস্টদের প্রধান দাবি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হোল তারা স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া কিম্বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবার কথা বলছে না। বলছেন ‘দ্রুত বিচার’। ‘দ্রূত বিচার’ অর্থ কি? যাদের ফাঁসি দিতে হাত নিশপিশ করছে তাদের ফাঁসি দিয়ে দাও। তাই কি?
অথচ প্রহসন এই যে যারা হরতাল ডেকেছেন তারা নিজেদের শ্রমিক শ্রেণীর দল বলে দাবি করেন। কিন্তু তাজরীন ফ্যাশনে আগুনে শ্রমিকরা পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার মতো এত বড় নিষ্ঠুর ঘটনায় সারা দেশের মানুষ যখন শ্রমিকদের পক্ষে ও মালিকদের বিরুদ্ধে সংবেদনশীল হয়ে উঠল তখন শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা, কারখানায় তালা মেরে রাখা কিম্বা তাদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারের জন্য তারা হরতাল ডাকেননি। বাংলাদেশে বারবার কারখানায় শ্রমিকদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, কিম্বা বিল্ডিং ধসে গিয়ে শ্রমিকদের জ্যান্ত কবর দিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশে শ্রমিকদের প্রতি সংবেদনা সাধারণ মানুষের বেড়েছে। তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ড নতুন কোনো ঘটনা নয়। শ্রমিক পুড়িয়ে মারা সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রতি সমবেদনা ও সংবেদনায় মানুষ যখন কাতর হয়েছে, শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের পক্ষে বিপুল জনমত তৈরি হয়েছে তখন এই সকল বামদের শ্রমিকদের স্বার্থে কোনো হরতাল দিতে দেখিনি, কোনো ধর্মঘটের কর্মসূচি দেননি তারা। অথচ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ ধরনের কর্মসূচিতে জনগণ অংশগ্রহণ করার সমূহ সম্ভাবনা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে শ্রমিকের স্বার্থ আদায় করে নেয়ার সেটা ছিল মোক্ষম সময়। তাজরীন ফ্যাশনে শ্রমিক পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতিকে জাতীয় রাজনীতির মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার সমস্ত সম্ভাবনাই বিদ্যমান ছিল। অথচ এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্ত তারা হেলায় পার করে দিয়েছেন। কেন” এই সকল কারখানার মালিকরা তাদের মিত্র। তাদের দুষমন হচ্ছে ইসলাম।
সে যাই হোক। বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন এমনিতেই দুর্বল ও ক্ষীণ। শ্রমিক, কৃষক নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলার কেউ নাই। লড়াই করা তো দূরের কথা। এই পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট পতাকা হাতে নিয়ে কমিউনিস্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতাসীন ফ্যসিস্টদের ছত্রছায়ায় হরতাল পালনের মতো যে কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটে গেল সেই কলঙ্কের ওপর আরও কালি আরোপ করা আমি আমার কাজ বলে মনে করি না। এই কুকর্ম করবার লোকের অভাব নাই বাংলাদেশে। কমিউনিজমের দাফন কাফন সম্পন্ন করা এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসাবে কমিউনিস্টদের দিকে করুণার দৃষ্টিতে চাইবার লোকের সংখ্যা আগের চেয়ে বিস্তর বেড়েছে। কোন অভাব এখন আর নাই। এদের সংখ্যা আর বাড়াবার দরকার নাই। সিপিবি, বাসদ বা বাম মোর্চা তাদের বিরুদ্ধে এই কলংকের অভিযোগ ও সমালোচনার জবাব কি দেবেন সেটা তাদের ব্যাপার। কমিউনিজম মানে আর যাই হোক, ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারি কর্মসূচি সফল করা যে নয় এই সত্য বাংলাদেশের জনগণকে অন্তত বুঝিয়ে বলার কোন দরকার কখনই হয় নি। তবে এই হরতালের মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন তারা যাকে কমিউনিজম কিম্বা শ্রেণি রাজনীতি বলেন সেটা হচ্ছে ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লোক দেখানো কর্মসূচি সফল করা।
তথাকথিত 'কমিউনিস্ট'দের মোকাবিলা করব তবু আমরা কমিউনিজমের বিপক্ষে দাঁড়াব না
কিন্তু তারপরও আমরা কমিউনিজমের বিপক্ষে দাঁড়াবো না। বরং আমাদের দাঁড়াতে হবে কমিউনিজমেরই পক্ষে, যেখানে আস্তিক/নাস্তিকের ভেদ দিয়ে রাজনীতি ঠিক হয় না, ঠিক হয় কে জালিম আর কে মজলুম সেই বিভাজন দিয়ে। ঠিক হয় না ইহকাল/পরকালের ভেদ দিয়ে; পরকালের কথা তো আমরা ইহকালেই বলি, পরকালে কি আছে সেটা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেয়াই বরং মোমিনের কাজ। আজ সেই কমিউনিজমের পক্ষেই আমাদের দাঁড়াতে হবে যে কমিউনিজমের কাছে কে টুপিলুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরে আর কে প্যান্ট-শার্ট সেই ভেদ নাই, ভেদ আছে কে নিপীড়িতের পক্ষে আর কে বিপক্ষে, কে মাদ্রাসায় আর কে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে সেই বিভাজনও কমিউনিজম মানে না, মানে গরিব আর ধনির, শ্রমিক ও পুঁজিপতির শ্রেণী বিভাজন। গরিব ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করে কমিউনিজ সন্তুষ্ট নয়, লেনিন যাকে অর্থনীতিবাদী আন্দোলন বলতেন, বরং নিপীড়িতের নজর দিয়ে জগত ও ইতিহাসকে দেখা, সব কিছুকেই নিপীড়িতের নজরদারির মধ্যে আনা এবং সব মানুষের স্বার্থ রক্ষার রাজনৈতিক নীতি ও কৌশল সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করা -- কমিউনিস্ট আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যসূচক কাজ এগুলোই।
আজ আমাদের সেই কমিউনিজমের কথাই বলতে হবে যে কমিউনিজম মাদ্রাসা ও ইসলামী শিক্ষাকে আধুনিক করে তাকে পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা ও সাম্রাজ্যবাদের অধীনস্থ করতে চায় না, বরং যে কমিউনিজম গরিব-নিপীড়িত মাদ্রাসার ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে ঔপনিবেশিক ইংরেজের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের গৌরবের দিকগুলো চিনিয়ে দিতে চায়। ইতিহাস স্মরণ ও ব্যাখ্যা করে দেখাতে চায় কীভাবে এই কালে তাদের লড়াই সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত করতে হবে, দেখাতে চায় কীভাবে ইসলাম যুগে যুগে নিপীড়তের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে নিজের সংস্কার নিজে করতে সক্ষম হয়েছে, গরিব ও নিপীড়তের পক্ষে ইসলামের ভূমিকাকে স্পষ্ট করেছে। ইউএসএইড, ডিএফআইডি বা অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দাতা সংস্থার সাহায্য দরকার হয়নি। মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার করতে হবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দাস হওয়ার জন্য নয়, বরং জালিমের বিরুদ্ধে আরও তীব্র আরও শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলবার জন্য। দেশে দেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী কীভাবে নিজেদের অধিকার রক্ষা করেছে সেই শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই কমিউনিজম দরকার। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আরও কার্যকরভাবে লড়াই করার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অর্জনের জন্যই শিক্ষার সংস্কার দরকার। গোলাম হওয়ার জন্য নয়। তাছাড়া আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলাম একাট্টা একরকম নয়। কোরআন নিজের তাফসির নিজে করে না, করে মানুষেরাই। আর মানুষের মধ্যে যদি জালিম ও মজলুমের ভেদ থাকে সেই তাফসিরের মধ্যেও জালিম ও মজলুমের ভেদ আছে। ভেদ ঘটে। ঘটতে বাধ্য।
ঠিক। আজ সেই কমিউনিজমের পক্ষেই দাঁড়াবার সময় হয়েছে, যে কমিউনিজম ইসলামের ইতিহাসের দিকে আমাদের নির্মোহ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তাকাতে সহায়তা করে, আমাদের দেখিয়ে দেয় একাট্টা ইসলাম বলে কিছু নাই। ইসলামের ইতিহাসেও একটি পক্ষ আছে যারা জালিম রাজা-বাদশা ভূস্বামী, ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর, সুদখোরদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। হয়তো ইতিহাসে তারাই এ যাবতকাল শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে এবং ইসলামকে তাদের মতো করে ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু আরেক পক্ষে আছে বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত জনগণের পক্ষের ইসলাম। যে ইসলাম পরকালের কথা বলে বর্তমানের লড়াই থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে না। ইহলোকে ইনসাফ কায়েমের লড়াই স্থগিত রাখে না।
আজ মনে করিয়ে দিতে হবে কমিউনিজম কোনো ধর্ম বিশ্বাস নয়। কার্ল মার্কসের ক্যাপিটাল কোরআন শরিফের মতো কোন কেতাব নয়। একটির বিপরীতে অপরটিকে স্থাপন করার বিদ্যা আমরা জালিমদের কাছ থেকে শিখেছি। কার্ল মার্কসও পর্যালোচনার উর্ধে নন। কমিউনিজম মানে মাথায় আগে থাকতেই মনগড়া বদ্ধমূল ছক এঁকে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন নয়। মানুষের জীবন্ত লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কমিউনিজম নিজের গতি ও দিক নির্ধারণ করে।
আসলেই। তাহলে কমিউনিজম ব্যাপারটা কি? কার্ল মার্কস তাঁর তরুণ বয়সে বন্ধুকে লেখা বিখ্যাত একটি চিঠিতে বলেছিলেন, এটা নতুন কোনো কাজ নয়, মানুষের আদি কাজটাই বাস্তবায়িত করা। লিখেছিলেন, ‘শেষমেষ এটা তো পরিষ্কার যে মানুষ নতুন কোনো কাজ ধরবে না, বরং সচেতনভাবে তার পুরানা কাজটাই সম্পূর্ণ করবার দিকে নিয়ে যাবে’[১]। তাঁর গুরু হেগেলের ছাত্র হিসেবে কার্ল মার্কস ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ধর্মের দিকে। ‘নতুন’ কথাটার ওপর জোর দিতে তার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। দুনিয়াতে মানুষের কর্তব্য বা ভূমিকা কি সেটা তো আদি কাল থেকেই নানাভাবে মানুষের চিন্তা ও কাজের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসছে। কিন্তু সেটা হাজির হয়েছে নানান রহস্যে মোড়ক পরে, ধোঁয়াশার মধ্যে আলো হয়ে। সেই আদি কাজ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলাই কমিউনিস্টদের কাজ। সেই কাজের হদিস ধর্মের মধ্যেও আছে। কিন্তু অনেকে বলবেন ধর্ম তো অযৌক্তিক, বায়বীয় জিনিস, কাল্পনিক চিন্তায় ভরপুর। কল্পনাও তো চিন্তা। চিন্তার বাইরের কিছু তো নয়। চিন্তার মানে তো শুধু যুক্তি নয়। মার্কস বলছেন, ‘যুক্তি তো সব সময়ই ছিল, কিন্তু আগে যুক্তি নিজের স্বরূপে হাজির থাকেনি’। তাহলে কমিউনিস্টদের কাজ কি? ক্রিটিক করা বা বিচার করতে শেখা। অর্থাৎ বিচারবুদ্ধি খাটিয়ে বের করা মানুষের কর্তব্য এর আগে মানুষ কীভাবে নির্ণয় করেছে? কিভাবে সমাজে হাজির করেছে। বিচার মানে সমালোচনা নয়, নাকচ করা নয়। বিচার মানে রহস্যের মোড়কে যখন সত্য লুকিয়ে থাকে তাকে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন করে তোলা। পর্যালোচনা। বিচার শুরু করতে হবে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক রূপ নিয়ে চেতনার বিভিন্ন প্রকাশগুলোকে এক এক করে ধরে ধরে।
তত্ত্ব ও দৈনন্দিন চর্চা হিসাবে ধর্ম বাস্তবেরই জিনিস। বায়বীয় কিছু নয়। তবে, মার্কসের কথা হছে, ‘যদি সত্যিকারের এখনকার জীবনের কথাই ধরি, তাহলে রাজনৈতিক রাষ্ট্রের রূপের মধ্য দিয়ে যুক্তি তার সব প্রস্তাবনা আধুনিক কায়দায় পেশ করে’। তফাতটা মর্মের নয়, হাজির হবার ধরনের মধ্যে। এখানে ধর্মের সঙ্গে আধুনিক রাষ্ট্রের পার্থক্য বিচারের একটা সূত্র তরুণ মার্কসের কাছে আমরা পেতে পারি। আধুনিক রাষ্ট্র তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের ধর্মতাত্ব্বিক প্রকল্পই বটে।
অতএব, কমিউনিজম শেষ হয়ে গেছে এটা একটা বাজে গুজব। জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই যতদিন থাকবে ততদিন কমিউনিজম কায়েমের জন্য মানুষের আকাঙ্ক্ষার কোনো ঘাটতি হবে না। হতে পারে ভিন্ন নামে, হয়তো ভিন্ন পতাকা হাতে তার আবির্ভাব ঘটবে। হয়তো ভিন্ন ঐতিহাসিক আর বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে যেভাবে বুঝেছি সেই বোঝাবুঝির মধ্যে ভুল আছে, অসম্পূর্ণতা আছে। বলাবাহুল্য 'কমিউনিজম' কথাটার মানে ও তার বাস্তব ইতিহাস অবশ্যই একালে আমাদের নতুন করে পর্যালোচনা করে দেখা দরকার।
কমিউনিজমকে যে নামেই ডাকি, কিছুই আসে যায় না। যে ব্যবস্থা দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষের রিজিক ধ্বংস করে দিয়ে বেঁচে থাকার জন্য তার শরীরের সৃষ্টিশীল শক্তি অন্য মানুষের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করে সেই ব্যবস্থার উচ্ছেদ ছাড়া কমিউনিজমের বাসনা উবে যাবার চিন্তা হাস্যকর। যে-সম্পর্কের অধীনে কোনো মানুষের পক্ষেই পুঁজির দাস হয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোনো মানবিক অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব, তাকে যতই ‘আধুনিক সভ্যতা’ বা ইতিহাসের শেষ অবস্থা দাবি করা হোক সেই সম্পর্কের ওপর গড়ে ওঠা ব্যবস্থা উচ্ছেদের আগে কমিউনিজমের বিলুপ্তি অবাস্তব। তবে এযাবতকালের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এতোটুকু বরং এখন বুঝি যে পুঁজির বিলয় ঘটানোকেও আমরা ফ্রান্সিস ফুকোয়ামার মতো মানুষের ইতিহাসের শেষ অধ্যায় বলতে পারি না; সেটা পুঁজির ইতিহাসের সমাপ্তি বটে, কিন্তু মানুষের ইতিহাসের শুরু মাত্র। পুঁজির বিলয়ের মধ্য দিয়ে নিজের স্বরূপে ‘মানুষ’ নামক ঐতিহাসিক কর্তার আবির্ভাব ঘটতে পারে। পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কের দাসত্ব থেকে মুক্তির লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের স্বরূপ আবিষ্কার করি, উপলব্ধি করি। মার্কসসহ অনেকের কাছেই এই ইঙ্গিত আমরা পাই সেটা হচ্ছে মানুষের সামাজিকতা। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সে মানুষের ‘উম্মাহ’ গড়তে বদ্ধ পরিকর। সমাজের মধ্যেই সে বাস করে, সমাজের মধ্যেই তার বিকাশ। ফলে বিভিন্ন ও বিচিত্র মানুষের সঙ্গে ঐক্য ও সম্বন্ধ রচনা কিম্বা একের মধ্যে বহুকে ধারণ, এবং বহুর মধ্যে নিজেকে উপলব্ধি – এই আনন্দের মধ্যেই সে তার দিব্যসত্তার মাধুর্য উপলব্ধি করতে পারে। পুঁজির বিলয় নিশ্চিত করা গেলেই আমরা বুঝতে শুরু ‘মানুষ’ ব্যাপারটা আসলে কী, এবং তার ঐতিহাসিক সম্ভাবনা ও সীমা আসলে কতোটুকু।
দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হবার নানান আকাঙ্ক্ষা বিভিন্ন নামে সমাজে হাজির হতেই থাকবে। এমনকি সেটা হতে পারে ধর্মের নামেও। অতীতে যেমন হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। সত্যিই যিনি কমিউনিস্ট তার পক্ষে সেসব চিহ্ন পাঠ করে ইতিহাসের অভিমুখ চিনে নেয়া মোটেও কঠিন হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সে চিহ্নগুলো আমরা ঠিকভাবে শনাক্ত ও পাঠ করতে পারছি কি? তার সঙ্গে সঙ্গতিপরায়ণ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, সংস্কৃতি ও রাজনীতি গড়ে তোলা কি আমাদের পক্ষে সম্ভব?
আমি মনে করি সম্ভব। কিন্তু এই দায় শুধু যারা কমিউনিজমের পতাকা হাতে রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করছেন তাদের একার নয়। যাঁরা বাংলাদেশের গরিব ও মেহনতি মানুষের কথা বলেন তাঁদের সবারই কাজ। কর্তব্য তাঁদেরো যাঁরা ধর্মের মধ্যে সকল মানুষের মুক্তি সন্ধান করেন। সে কারণে সিপিবি, বাসদ ও বাম মোর্চার সমালোচনা আমার প্রধান কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। আমার বরং যাদের ত্যাগ, আকাঙ্ক্ষা ও সংকল্পে সন্দেহ করার কোনো কারণ আমি দেখি না তাদের কাছে বিনীত আবেদন থাকবে, আসুন খোলা মনে সাধারণভাবে কমিউনিজমের দিক থেকে ধর্মকে বিচার করবার সঠিক নীতি ও কৌশল সম্পর্কে আমরা আলোচনা করি। এসব দলের আন্তরিক কর্মীরা আশা করি আমার আকুতিটুকু বুঝবেন । নিবেদন হচ্ছে, বিশেষত মার্কস, লেনিন বা এঙ্গেলস বিষয়টিকে কীভাবে বিচার করেছেন তার কিছু খোঁজ-খবর নেই। আর এই বাস্তবতাটুকু যেন আমরা মানি যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলাম নিয়ে আলোচনা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নাই। আমাদের দেশে আগামী দিনে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে শক্তিশালী আদর্শগত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে ইসলাম প্রশ্নের একটা মীমাংসা দরকার। সেই দিক থেকে কমিউনিস্টদের মধ্যে কীভাবে আলোচনা হলে তা সবচেয়ে ফলপ্রসূ হবে সেই দিক নিয়েও ভাবতে হবে।
ফলপ্রসূ বলতে আমি কি বুঝি? এটাই বুঝি, যে-আলোচনায় কমিউনিস্টরা ছাড়াও ধর্ম প্রাণ মানুষ নিশ্চিন্তে যোগ দেবেন। তাঁদের ঈমান হারাবার ভয়ে ভীত বা আতংকিত থাকবেন না। এমনকি যাঁরা ইসলাম কায়েমের রাজনীতি করেন তাঁরাও যোগ দিতে আগ্রহ বোধ করবেন। কমিউনিজম সম্পর্কে তাদের বিভ্রান্তি কাটিয়ে তোলার তাগিদ তাঁরা বোধ করবেন। এই বিতর্কে সততার সঙ্গে কেউ অংশগ্রহণ করবেন কিনা জানি না। কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মন থেকে কমিউনিজম ও কমিউনিস্টদের সম্পর্কে ভুল ধারণা কাটিয়ে তোলার একটা বুদ্ধিবৃত্তিক দায় আমি বহন করি। বাংলাদেশের কমিউনিস্টরা কমিউনিজম ও কার্ল মার্কসের শিক্ষা সম্পর্কে যে সকল আত্মঘাতী ভুলের পাহাড় গড়ে তুলেছে সেই সব সাফ করা আমার দায় নয়। কিন্তু জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা – তার ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা এবং সর্বোপরী মার্কস, লেনিন বা মাওজে দং-এর চিন্তা পরিচ্ছন্ন ভাবে তুলে ধরা আমার কাজ। যাতে তাদের চিন্তার পর্যালোচনা আমরা করতে পারি এবং এ কালে কি নেবো আর কি পরিহার করব সেই বিষয়ে সজ্ঞান সিদ্ধান্ত নেবার ধী শক্তি আমরা অর্জন ও চর্চা করতে পারি। এই সকল বিষয়ের মীমাংসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টাও আমি করি।
তবে কমিউনিস্টদের বোঝা টানার মতো বলদ আমি নই। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী মানুষের চিন্তার বিপুল ও বিস্তর বিকাশ ঘটেছে। আমাদের কাজ হচ্ছে বৈশ্বিক চিন্তার সীমান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে আমাদের কর্তব্য নির্ধারণ করা।
আমি বহুদিন ধরে বলেই আসছি যে, ধর্ম বা ইসলামের নির্বিচার বিরোধিতা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্য আত্মঘাতী হয়েছে। ধর্মের বিরোধিতা ও ইসলাম বিদ্বেষ কমিউনিস্টদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। বাংলাদেশে শ্রমিক, কৃষক মেহনতি মানুষের লড়াই মুখ থুবড়ে পড়েছে। আজ মজলুম জনগণের পক্ষে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মতো ‘খামোশ’ বলে দাঁড়াবার কেউ নাই। এই দেশের অধিকাংশ মানুষের ধর্ম ইসলাম। অথচ ইসলাম বা ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে খুব কম কমিউনিস্টই খোঁজ-খবর রাখেন। এই দেশের মানুষের মন জয় করতে হলে অবশ্যই ইসলাম ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার।
আমার কাছে ইসলামের সঙ্গে এই মোকাবিলা নিছকই কৌশলের প্রশ্ন নয়, নীতিগত প্রশ্ন। অর্থাৎ কাকের মতো নিজের গায়ে কোকিলের পাখা গুঁজে কোকিলগিরি করা নয়। ইসলামকে পিঠ চাপড়ে দিয়ে ধর্ম প্রাণ জনগণকে নিজের দলে ভেড়ানো নয়। আমি মনে করি ইসলামকে শুধু ধর্মতত্ত্ব হিসেবে নয়, একই সঙ্গে দর্শন বা চিন্তার ইতিহাসের দিক থেকে পর্যালোচনা, বোঝা এবং এখনকার কর্তব্য নির্ণয়ের ক্জগুলোও অসম্পূর্ণ হয়ে আছে। যাঁরা দর্শন নিয়ে কাজ করেন তাঁরা জানেন চিন্তাকে ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন—এভাবে বিভক্ত করে বোঝা ঠিক না। গোলমেলে। কারন চিন্তা আমাদের ইন্দ্রিয়োপলব্ধি স্তরে যেমন কাজ করে ঠিক তেমনি বুদ্ধির স্তরেও কাজ করে। বিশ্বাসকে চিন্তাহীন-যুক্তিহীন গণ্য করা এবং চিন্তাকে বিশ্বাসমুক্ত যুক্তিসর্বস্ব প্রক্রিয়া ভাবা আধুনিকতার অসুখ, সক্রিয় ও সজীব চিন্তাকে যে ব্যারাম থেকে মুক্ত করে তোলাই একালের দর্শ্ন চর্চার মুখ্য বিষয়। ঠিক যে ইসলাম নিজে নিজেকে এভাবে ভাগ করে না। কিন্তু এটা কি শক্তি নাকি দুর্বলতা? সেই তর্কের মীমাংসার জন্য দর্শন -- অর্থাৎ চিন্তার বিকাশ ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই। আধুনিক কালে চিন্তার বিকাশ মানে আধুনিকতার বদ্ধ ও সংকীর্ণ ভুগোল অতিক্রম করে চিন্তার স্বরূপ সন্ধান করা। সেকারণে ধর্মতত্ত্ব নয়, ইসলামের নিজের তাগিদেই দর্শনের দিক থেকেও ইসলামের বিচার দ্রুত হওয়া দরকার। কারণ আধুনিকতার ভূগোল অতিক্রম করে যাবার ক্ষেত্রে ইসলামের বিভিন্ন দার্শনিক প্রস্তাবনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই কাজ না করা গেলে শুধু পাশ্চাত্যচিন্তার পরিমণ্ডল -- ঔপনিবেশকিতা ও ও সাম্রাজ্যবাদের ভূগোল থেকে যাকে আলাদা করা অসম্ভব -- সেই মরুভূমির মধ্যেই আমাদের নিরন্তর খাবি খেয়ে যেতে হবে। আমরা কোনো পথ খুঁজে পাব না। এ না হলে ইসলাম অপরের সঙ্গে যেমন তেমনি পরস্পরের বিরুদ্ধে নানান পরিচয়, ধারা, মজহাব বা ফেরকায় হানাহানি ও সহিংসতায় পর্যবসিত হবে। আত্মপরিচয়ের রাজনীতির ফেতনা ও ফ্যাসাদের অধিক কোন অবদান সাম্প্রতিক ইতিহাসে রাখতে পারবে না। গ্রিক-খ্রিস্টিয় পাশ্চাত্য চিন্তা ও দর্শনের সঙ্গে ইসলামের বিরোধ আছে, কিন্তু সেটা শুধু মুসল্মানিত্বের অহমিকা দিয়ে মোকাবিলা করা যাবে না, সক্রিয় ও সজীব চিন্তার জায়গা থেকেই বর্তমানের মোকাবিলা করতে হবে।
এক কিস্তিতে কথা শেষ হবে না। দুটো বিষয়ের উল্লেখ করে এই কিস্তি শেষ করব। প্রথমে বলা দরকার, আমি কমিউনিস্ট আন্দোলনকে নাস্তিক্যবাদী আন্দোলন মনে করি না। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট এবং তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীদের সঙ্গে এখানে আমার ঘোর বিরোধ আছে। কেন করি না তার কৈফিয়ত আমি আমার ‘মোকাবিলা’ বইতে দিয়েছি। তার পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন মনে করি না। দ্বিতীয়ত তরুণ বয়সের বিক্ষিপ্ত মন্তব্য ছাড়া ধর্ম সম্পর্কে মার্কসের পরিণত কোন রচনা নাই। অতএব ধর্ম সম্পর্কে মার্কসের গভীর কিন্তু দার্শনিকতায় জটিল চিন্তাকে ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে রায় দেওয়া হিসাবে হাজির করা বেকার কাজ। বরং ধর্ম সম্পর্কে মার্কসের অবস্থান নিষ্ঠার সঙ্গে পর্যালোচনার কাজ সম্পন্ন করাই এখন বেশী জরুরি। কারণ তা আমাদের আধুনিক রাষ্ট্রের ধর্মতাত্ত্বিক চরিত্র বোঝার সহায়ক। আধুনিকতা, আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্র ধর্মতাত্ত্বিক জগতের বিলোপ সাধন করে না। ইহকাল আর পরকালের ভেদ লোপ করতে পারে না। উলটা ধর্মতাত্ত্বিক জগতের মতো আমাদের ইহকাল আর পরকাল এই দুই জগতে বাস করতে বাধ্য করে। প্রকাল এখানে আমাদের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল যা আর্থ-সামাজিক পরিমণ্ডল থেকে আলাদা। বাস্তবে ধনি আর গরিব সমান না, কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকরা সমান আর সকলেই ভোটার, সকলেরই এক ভোট। ভোটের অধিকার পেয়ে আমরা প্রকট বৈষম্যমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র কবুল করি, সেই সমাজ ও রাষ্ট্রে 'বিশ্বাস' স্থাপন করি। আধুনিকদের চেয়ে বড়ো অথচ মূরর্খ বিশ্বাসী আর কে আছে? আইনের চোখে সবাই সমান -- আধুনিক রাষ্ট্রের এই কলমা পড়ে আমরা নিজেদের সেই সমাজের অন্তর্ভূক্ত গণ্য করি যেখানে নিজেকে মজুরি দাস হিসাবে বাজারে বিক্রি না করে আমরা বেঁচে থাকতে পারি না। ধর্মের চেয়েও এই ক্ষেত্রে আধুনিক রাষ্ট্রের প্রতারণা ভয়ংকর।এই দিকটাই মার্কসের কাছে মুখ্য ছিল। অথচ এই আমরাই আবার তথাকথিত আধুনিক ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়িয়ে ধর্মের নিকুচি করতে দ্বিধা করিনা। 'প্রগতিশীল' হই। ফলে আমাদের কমিউনিজমের কথাই বলতে হবে কারণ সমাজ থেকে উদ্ভূত কিন্তু সমাজের ওপর পরগাছার মতো গড়ে ওঠা এই পারলৌকিকতা -- এই দানবীয় রাষ্ট্রের বিলোপ সাধন করে গণশক্তির উদ্বোধন ঘটানো এবং মানুষের সত্যকারের সমাজ বা 'উম্মাহ' গড়ে তোলার কাজ আমাদের করে যেতেই হবে।
পরের কিস্তিতে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা বাংলাদেশে জরুরি, মূলত তা উল্লেখ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব। প্রস্তাবনা হিশেবে। যাতে পরস্পরের মধ্যে আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে পারি।
২৩ ডিসেম্বর ২০১২। ৯ পৌষ ১৪১৯। শ্যামলী
এই লেখাটি ‘বিশেষ নিবন্ধ হিসাবে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে দুই কিস্তিতে ছাপা হয়েছিল। চিন্তা ওয়েবে তুলে দেবার আগে কিছু পরিমার্জনা করে দুই কিস্তিতেই পেশ করা হোল। এটা প্রথম কিস্তি। দ্বিতীয় কিস্তি এখানে দেখুন।