ট্রাম্পকে নাকচ করলেন সারা বিশ্বের নারী
ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘বিপুল’ ভোটে জয়ী হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখে। সারা বিশ্বের মিডিয়াতে এই অনুষ্ঠান দেখানো হয়েছে। বিশাল সমাবেশ হয়েছে তার এই শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে। এটা নিয়ে লেখার কোন কিছু ছিল না, কিন্তু একই দিনে ওয়াশিংটন ডিসিসহ অন্যান্য শহরে যতো প্রতিবাদী সমাবেশ হয়েছে, সেটা নতুন বিষয়। নতুন ঘটনা। ট্রাম্পের অনুষ্ঠানে যতো মানুষ হয়েছে তার আগে ওবামার অভিষেকে তার চেয়ে বেশি সমাবেশ হয়েছে বলে মিডিয়াতে খবর বের হয়েছে, তাতে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ । তিনি নাকি লোকে লোকারন্য দেখেছেন আর মিডিয়া একদিকে ফাঁকা দেখিয়ে ডাহা মিথ্যা প্রচার করেছে। এই নিয়ে মিডিয়ার সাথে ট্রাম্পের বাকযুদ্ধো দেখেছি আমরা।
তার চেয়ে বড় আঘাত ট্রাম্পের জন্যে অপেক্ষা করছিল। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যাদের সবচেয়ে বেশী ক্ষুব্ধ করেছেন তারা হচ্ছেন নারী। তিনি নারীদের অপমান করে কথা বলেছেন, নারী অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, অভিবাসী -- বিশেষ করে মুসলমানদের বের করে দেবেন বলেছেন। ট্রাম্প নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন সার্বিকভাবে বর্ণবাদের উত্থান, সাদা আমেরিকানদের কর্তৃত্ববাদ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ইত্যাদির প্রতীক হিসাবে। ট্রাম্পের চরিত্রের মধ্য দিয়ে নব্য বর্ণবাদী বিশ্ব বাস্তবতার চেহারাই দেখেছে অধিকাংশ নারী। তাই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তাদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন বিশ্বের নারীরা। এই মিছিলে নানান চিন্তা ও মতাদর্শে বিশ্বাসী নারী এক সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। নারীদের মধ্যে যার যার সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থান অনুযায়ী মিছিলের ভালমন্দ নিয়ে তর্ক চলছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নারীরা ট্রাম্পের প্রেসিডেণ্ট হিসাবে শপথ গ্রহণের পরপরই বুঝিয়ে দিতে পেরেছে যে তারা বর্ণবাদ বরদাশত করবেন না। ফলে ইসলামোফোবিয়া, অপরের প্রতি ভীতি এবং ভিন্ন বিশ্বাস বা অল্প পরিচিত মানুষ সম্পর্কে আতংক তৈরির যে বর্ণবাদী রাজনীতি ডোনাল্ড ট্রাম্প করতে চান তা তারা প্রতিরোধ করবেন। এখানেই এই মিছিলের প্রধান গুরুত্ব।
নারীদের প্রতিবাদী সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয় ২১ জানুয়ারি, যা ট্রাম্পের অভিষেকের জনসমাবেশের তুলনায় অন্তত চারগুন বড় ছিল। শুধু ওয়াশিংটন ডি সি তে নয়, প্রতিবাদ হয়েছিল সারা আমেরিকায়, সারা বিশ্বে - ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া সহ অনেক দেশে। আমেরিকার ইতিহাসে নারীদের এতো বড় সমাবেশ আর কখনো হয় নি। সংখ্যার দিক থেকে আমারিকার বিভিন্ন শহরে লস এনজেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক ও শিকাগোতে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন (৩৩ লাখ) থেকে ৪.৬ মিলিয়ন (৪৬ লাখ) নারী-পুরুষ (অধিকাংশ নারী) এই সমাবেশে এক্ত্র হয়েছিলেন । লস এঞ্জেলেসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ নারী অংশগ্রহণ করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৩ লাখ নারী অংশ নেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল লন্ডনে, প্রায় ১ লাখ। বলতে গেলে, বিশ্বের ৫০টি দেশে (ইরাক, আন্টার্কটিকাসহ) , ৬৭০ টি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতো ব্যাপক ও বড় সমাবেশ সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে, খোদ ট্রাম্পও বিশাল ধাক্কা খেয়েছেন নিশ্চয়ই। এখন দেখার বিষয় এই আন্দোলন কোন দিকে গড়ায়।
কেন এতো বিপুল সংখ্যক নারী রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন ট্রাম্পের বিরোধিতা করার জন্যে? ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তার অর্থ হচ্ছে তাকে নারী-পুরুষ উভয়ে ভোট দিয়েছে। এবং সে ভোটের সংখ্যাও খুব কম নয়। ট্রাম্পের পক্ষেও নারীরা আছেন। তারা কারা? তাদের কি ট্রাম্পের নারী বিরোধী অবস্থান খারাপ লাগে নি? এসব প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। নাকি তারাও ট্রাম্পের এই মতবাদে বিশ্বাসী?
যাই হোক, ট্রাম্পের অভিষেকের পরের দিনই তাকে বিশ্বের অধিকাংশ নারী নাকচ করলেন এতাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নারীদের সমাবেশ উচ্চ কন্ঠে এই ঘোষণা জানিয়েছে যে ট্রাম্প আমাদের প্রেসিডেন্ট নন। যারা আমেরিকার নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বক্তব্য শুনেছেন এবং তাঁর নারী বিরোধী বক্তব্য ও আচরণ দেখেছেন তাদের কাছে এটা পরিস্কার যে নারীদের ক্ষুব্ধ হবার মতো যথেষ্ট কারণ রয়েছে্ন। অনেক পুরুষও নারীদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। আমেরিকার মতো একটি ‘গণতান্ত্রিক’ (?) দেশে, এমন একনায়কতান্ত্রিক ও পশ্চাদপদ চিন্তার মানুষ কেমন করে এতো ভোট পেয়ে নির্বাচিত হতে পারে তা বিস্ময়ের ব্যাপার।
নারীদের এই বিশাল প্রতিবাদের সমাবেশ হঠাৎ করে হয় নি। এদের মধ্যে একটি অংশ ছিল যারা হিলারী ক্লিনটন আমেরিকায় প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন এমন আশা করে নারীদের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেটা হয়তো বেশিরভাগ ডেমোক্রাট এবং তাদের সহযোগীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো, কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নারীদের ক্ষোভ অনেক বেশি নারীকে সম্পৃক্ত করেছে।
এই প্রতিবাদে নারীরাই নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং নারীদের একটি বড় অংশ ট্রাম্পের শুধু নারী অধিকারের বিরোধী অবস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারেন নি, অন্যান্য বিষয় যেমন অভিবাসীদের প্রশ্নে, মুসলমানদের প্রশ্নে, এলজিবিটি, প্রতিবন্ধিতা, রিফিউজি, ডকুমেন্ট-বিহীন অভিবাসী মানুষের অধিকার হরণ ইত্যাদি তাদের ক্ষুব্ধ করেছে। বলা বাহুল্য নারীরা এই ধরণের বৈষম্যমুলক নীতির বড় শিকার হবেন। বিভিন্ন ধারার ও বিভিন্ন বিষয়ের কারণে যারা সংগঠিত করেছেন তারা একক কোন নেতৃত্বে করেন নি। শুরুতে মার্কিন সাদা বর্ণের নারীদের মধ্যে ট্রাম্পের নারী বিরোধী আচরণের প্রতিবাদ করার ধারণা থেকে শুরু হলেও পরবর্তিতে কয়েকটি ধারার নেতৃত্ব এসেছে, যার ধরণ বিশ্লেষণ করলে আমরা এর ভবিষ্যত বুঝতে পারব। তবে হ্যাঁ, সমাবেশের দিনে সকল ধারার আন্দোলনের মধ্যে এক জায়গায় ঐক্যমত ছিল তা হচ্ছে ট্রাম্প ও তার ঘোষিত নীতির বিরোধিতা করা।
একটি দৃশ্যমান ধারা ছিল গোলাপি টুপি পড়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করা, যাকে বলা হচ্ছে পুসি হ্যাট (Pussy Hat) প্রকল্প। এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নারীদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল ইঙ্গিতপুর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে। উলের এবং ক্রসেট সুতা দিয়ে গোলাপি টুপি তাতে বিড়ালের কানের ডিজাইন দিয়ে ১১ লাখ ৭০ হাজার পুসি হ্যাট বানানো হয়েছিল। ওয়াশিংটন ডিসি এবং অন্যান্য শহরে যারা সমাবেশে এসেছে তাদের এই হ্যাট দেয়া হয়। তাদের প্রতিবাদের ভাষা ছিল এই পুসি হ্যাট। সমাবেশের ছবিতে এদেরই বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তাই বলে এরাই প্রধান ধারা নয়। গোলাপি রং নারীবাদী রং নয়, নারীবাদী রং হচ্ছে বেগুনি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে যেভাবে আলাদাভাবে দেখাতে চায়, গোলাপি রং সেটাই প্রকাশ করে। ইওরোপ আমেরিকায় বাচ্চাদের কাপড়ের দোকানে বাচ্চা মেয়েদের সব কাপড় গোলাপি আর ছেলেদের জন্যে হাল্কা নীল। বারবী ডল গোলাপি রংয়ের। অন্যদিকে বেগুনি রং নারীর সংগ্রামের প্রতীক। কাজেই পুসি হ্যাট প্রকল্প যারা নিয়েছেন তারা নারীবাদী চিন্তায় কতখানি আন্তরিক নাকি ট্রাম্পের অশ্লীলতার উত্তর দিতে গিয়ে এই রং বেছে নিয়ে তারা নারীদের প্রদর্শনই করেছেন, নারীর মর্যাদা নয় – এই তর্ক উঠেছে। এদের প্রতিবাদ যদি শুধু ট্রাম্পের অশ্লীলতার বিরোধিতাই হয় এবং সুনির্দিষ্ট কোন দাবী না থাকে, তাহলে এই প্রতিবাদের মেয়াদ ক্ষণস্থায়ী হবে। এর আবেদনও সীমিতই হবে।
নারী সমাবেশে এঞ্জেলা ডেভিস। যেসব নারীরা শ্রেণি ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নারীর লড়াই সম্পর্কে অবহিত নন, তাঁদের জন্য এঞ্জেলার Women, Race and Class খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বই।
চার ঘন্টার সমাবেশ অনুষ্ঠানে অনেক বিখ্যাত নারীবাদী নেত্রী বক্তব্য রাখেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে নারী আন্দোলন এবং সামাজিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যেও অনেক ধারা ছিল। সকলেই নারী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন এমন নয়। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিংবদন্তি নারীবাদী নেত্রী এঞ্জেলা ডেভিস ছিলেন যিনি বিপ্লবী কমিউনিস্ট হিসেবেও পরিচিত। নারীবাদের মধ্যে বর্ণবাদী, পুরুষ বিরোধী এবং খেটে খাওয়া জনগণের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীলদের ব্যাপারে এঞ্জেলা সতর্ক। তাঁর লেখালিখি পড়া ছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার সঙ্গে আমার অনেক কথাও হয়েহে। এঞ্জেলা সমাবেশে উপস্থিত হয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তিনি হোয়াইট-সুপ্রিমেসি, বর্ণবাদ, এবং হেটারো-পেট্রিয়ার্কি (heteropatriarchy) সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। তিনি নিজে একজন ব্লাক-আমেরিকান এবং দীর্ঘদিন মার্কিন দেশে সাদাদের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি বলেন মার্কিন দেশের ইতিহাস থেকে কালোদের সংগ্রাম মুছে ফেলা যাবে না। এই দেশের ইতিহাস দাস ও অভিবাসীদের ইতিহাস। কোন গোষ্ঠি সম্পর্কে অহেতুক ভীতি সৃষ্টি করে কিংবা দেয়াল তুললেই ইতিহাস মুছে যাবে না। কোন মানুষই অবৈধ নয় “No human being is illegal”। তিনি নারীদের এই প্রতিবাদী সংগ্রামকে ইনক্লুসিভ এবং ইন্টারসেকশনাল করার আহবান জানান। নারীবাদী আন্দোলনে সকল ধারার সম্পৃক্ততা এবং অন্যান্য বিষয়কেও যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তাঁর কথায় ফুটে উঠেছে।
অনেক বক্তারা সোজা বলে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম বিদ্বেষি, জাতীয়তাবাদী, জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকারকারি এবং একজন বর্ণবাদী হিসেবে আমার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। মার্কিন উদার নৈতিক নীতির কারণে সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের নারীরা আজ জমি হারা হয়েছেন, হারিয়েছেন তাদের জীবন-জীবিকা। মার্কিন আগ্রাসনের নীতি ধংস করেছে দেশের পর দেশ। মাত্র ৮ জন পুরুষের হাতে বিশ্বের ৩৬০ কোটি মানুষের সম্পদের সমপরিমান সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে। ইভ এন্সেলার সেদিকেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ছাড়াও আরও অনেক সেলিব্রিটি যেমন মেডোনা, স্কারলেট জোহানসন বক্তব্য রাখেন এবং ট্রাম্পকে পরিস্কার জানিয়ে দেন তিনি তাদের প্রেসিডেন্ট নন। ট্রাম্পের নির্বাচনী ঘোষণায় গর্ভপাতের বিপক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার ছিল। তাই এই সমাবেশের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল প্লান্ড প্যারেন্টহুডের উপস্থিতি। ট্রাম্প তাদের অর্থ যোগান না দেয়ার কথা বলেছেন। গর্ভপাতের অধিকার চেয়ে নারীরা বক্তব্য রাখেন। তবে এই দলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত কিছু বর্ণবাদী গোষ্ঠিও আছে, যারা গর্ভপাতের অধিকারের কথা বলে মুলতঃ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাজই করেন। বিশেষত যারা গরিব, কালো ও ভিন্ন বর্ণের, বর্ণবাদীরা তাদের সংখ্যা কমাতে চান। অবশ্য ট্রাম্প সরকার যেভাবে তাদের কাজ কর্ম বন্ধ করে দিতে চাইছে তা কাম্য নয়। ক্ষুদ্র অংশ হলেও পরিবেশ নিয়ে যারা ভাবেন তারাও ট্রাম্পের জলবায়ু বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার বিরোধিতা করেছেন। এই সমাবেশে বক্তারা সেই প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন।
মেয়েদের মিছিলে লিন্ডা সারসোরের শক্তিশালী বক্তৃতা। লিন্ডা লক্ষ নারীর মিছিলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক। উইমেন্স মার্চ্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে বিভিন্ন ধারার নারীদের ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একত্রিত করা। সেই দিক থেকে এই সমাবেশের ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।
নারীদের এই সমাবেশের আয়োজকদের মধ্যে আছেন প্যালেস্টাইনী-আমেরিকান লিন্ডা সারসোয়ার ( Linda Sarsour) যিনি নিজেকে গর্বের সাথে মুসলিম আমেরিকান, প্যালেস্টাইনী আমেরিকান হিসেবে পরিচয় দেন। সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন আমি মার্কিন প্রেসিডেন্সীকে সম্মান করি, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্মান করি না। মাত্র ৩৭ বছর বয়সী এই লিন্ডা সারসোয়ারের ভাই ২৫ বছর ইসরাইলের কারাগারে কাটিয়েছে। লিন্ডাকে সন্ত্রাসী আর আইসিস, হামাসের সাথে সম্পর্ক আছে বলে অপবাদ দেয়া হয়। কিন্তু লিন্ডা সকল বাধা পেরিয়ে এমন একটি ঐতিহাসিক সমাবেশের তিনজনের আয়োজকের মধ্যে অন্যতম প্রধান আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব নেন। লিন্ডা আমেরিকায় শরীয়া আইন প্রবর্তনের পক্ষেও কাজ করেছেন। আর দুইজনের মধ্যে একজন তামিকা মেলোরী (Tamika D. Mallory), একজন কালো আমেরিকান এক্টিভিস্ট, যিনি ওবামা প্রশাসনে মানবাধিকার সম্পর্কিত একজন গুরুত্বপুর্ণ উপদেষ্টা ছিলেন। তৃতীয় আয়োজক হচ্ছেন কারমেন পেরেজ (Carmen Perez) একজন স্বনামধন্য সামাজিক আন্দোলন কর্মী। এরা কেউই মার্কিন দেশের মূল ধারার নারী আন্দোলন কর্মী নন , কিন্তু তাদের কাজ ছিল সাধারণ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। অবশ্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল যার মধ্যে অন্য সব ধারার নারীদের অংশগ্রহণ ছিল। আসলে ট্রাম্পের ঘোষিত নীতি এবং বক্তব্য সকল পর্যায়ের নারীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তাই সকলেই সেই নীতি নাকচ করতে ঐক্যবদ্ধ।
এই সব কিছুর মধ্যে বাংলাদেশের এক নারীর নামও উঠে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে তার ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। তার নাম মুনিরা আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রের কুইন্স অঙ্গরাজ্যে বসবাসকারী ৩২ বছরবয়সী এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নারী। ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে হওয়া 'উইমেন লং মার্চ'-এ অনেক আন্দোলনকারীর হাতে মুনিরা আহমেদের আমেরিকান পতাকার নকশায় তৈরি হিজাব মাথায় দেওয়া অবস্থায় ছবি ছিল। ছবিটি এডিট করেছেন শেফার্ড ফেইরি।
মুনিরা আহমদের ব্যাখ্যা হচ্ছে ‘এই ছবিটি যেই বার্তা দিচ্ছে,তার জন্য আমি গর্বিত। এটা শুধু কারো বিরোধিতা করার জন্য নয়। ছবিটি বলতে চাচ্ছে,আমিও তোমার মতই আমেরিকান’।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন, কিন্তু নারীরা তাকে নাকচ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের নারীরা রাস্তায় নামেন নি বটে, তবে তারাও ট্রাম্পের এই নীতি গ্রহণ করেন নি। বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের চিন্তা-চেতনায় এই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আসার সময় হয়েছে। সময় এসেছে নিজেদের আন্দোলনের একমুখিতা বাদ দিয়ে সকলের সম্পৃক্তিতে সংগঠিত হওয়া। এঞ্জেলা ডেভিস যেমন বলেছেন, ইনক্লুসিভ এবং ইন্টারসেকশনাল হওয়ার।