৪. মার্কসের 'পুঁজি': 'পণ্য' দিয়ে শুরু কেন?
৯ নভেম্বর, ২০১৯, চিন্তা পাঠচক্রের পঞ্চম বৈঠকে আমরা বসেছিলাম। দুই সপ্তাহের বিরতির পর আবার বসা। কার্ল মার্কসের ‘পুঁজি’ গ্রন্থ ধারাবাহিক পাঠ হিসেবে মার্কসের মুদ্রাতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রধান আলোচক জনাব ফরহাদ মজহার।
পাঠের শুরুতে নতুন সদস্যদের জন্যে পূর্ব-পাঠের একটা সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরা হয়। এরপর থেকে যারা যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই পাঠচক্রের নোটগুলো পাঠ করে আসতে হবে। প্রয়োজনে দুই একটি প্রসঙ্গ বারবার ফিরে আসতে পারে। কিন্তু দ্রুত এগিয়ে যাবার জন্য পাঠচক্রে যারা আন্তরিক ভাবে আগ্রহী তাঁদের নিজের চেষ্টা থাকতে হবে।
‘মুদ্রাতত্ত্ব’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয় মার্কসের খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি মন্তব্য দিয়ে। এই মন্তব্য তিনি করেছেন ‘পুঁজি’ গ্রন্থের ভূমিকায়। পুঁজি’ বই পড়া ও বোঝার দিক থেকে এই মন্তব্যটি খুবই প্রাসঙ্গিক। মার্কস বলছেন:
“সকল বিজ্ঞানের জন্যই শুরুটা সবচেয়ে কঠিন। প্রথম চ্যাপ্টার, বিশেষত যে অংশে পণ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেই অংশই সবচেয়ে কঠিন"
মার্কস কেন ‘পণ্য’ অধ্যায় সবচেয়ে কঠিন বললেন সে প্রসঙ্গে আমরা ফিরে আসব। কিন্তু তার আগে যে ব্যাখ্যা এখন জরুরী সেটা হচ্ছে কেন মার্কসের ‘মূদ্রাতত্ত্ব’ দীর্ঘকাল অর্থশাস্ত্রে উপেক্ষিত হয়ে ছিল। এই উপেক্ষা শুধু মার্কস বিরোধীদের মধ্যে নয়, মার্কসপন্থী কিম্বা মার্কসের অনুসারীদের মধ্যেও আমরা দেখি। সাম্প্রতিক আগ্রহের কারণ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাপুঁজির (Money Capital) দৃশ্যমান ভূমিকা। প্রচলিত অর্থশাস্ত্র একে বিশ্ব অর্থনীতির ‘ফাইনেন্সিয়ালাইজেশান’ হিশাবে বর্ণনা করে। কিন্তু ব্যাখ্যা করার ঘাটতি ও অক্ষমতা সম্প্রতি অনুভূত হচ্ছে। ব্যাখ্যার অভাবে মূদ্রাপুঁজি এবং ঋণ সম্পর্কের নানান মূর্ত বা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, যথা ব্যাংক, ইন্সুরেন্স কোম্পানি, শেয়ার বাজার, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ছাড়াও নানান ধরণের টাকা লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা থেকে গিয়েছে। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের বর্তমান পর্যায়ে তা আরো তীব্র হচ্ছে।
অন্যদিকে মার্কসবাদ মূলত লেনিনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এ যাবতকাল ‘সাম্রাজ্যবাদ’ ব্যাখ্যা করেছে। সেই ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতেই, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নীতি ও কৌশল নির্ধারিত হয়েছে, কিন্তু সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়িয়েছে পুঁজির নানান রাজনৈতিক অভিপ্রকাশের বিরোধিতা, ‘সাম্রাজ্যবাদ’ সংক্রান্ত ধারণা ও তত্ত্ব দিয়ে এতোকাল মার্কসবাদীদের তরফে বিশ্ব অর্থনীতির যে ব্যাখ্যা জারি রয়েছে তার পর্যালোচনা হয় নি বললেই চলে। লেনিন ১৯১৪-১৯১৮ সালের ‘পররাজ্যগ্রাসী, লুঠেরা ও দস্যসুলভ’ যুদ্ধকে ব্যাখ্য করে দেখিয়েছিলেন এই যুদ্ধ ‘দুনিয়াকে ভাগ বাঁটোয়ারা’ করার যুদ্ধ। অর্থাৎ এর উদ্দেশ্য ‘উপনিবেশ এবং ফিনান্স পুঁজির ‘প্রভাবাধীন এলাকা’ ইত্যাদিকে বিভাগ ও পুনর্বিভাগ’ করা। পুঁজির বৈশিষ্ট্য বিচারের জন্য ধারণা হিশাবে ‘সাম্রাজ্যবাদ’ নির্ধারক ভূমিকা রেখেছে বটে, কিন্তু যে অর্থে লেনিন সাম্রাজ্যবাদকে ‘পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়’ বলেছেন, সেই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ‘পুঁজির’ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ খুব একটা এগোয় নি। পুঁজির সর্বোচ্চ পর্যায়কে ‘পচনশীল’ নিয়ে তর্কেরও মীমাংসা হয় নি। লেনিন কোন্ অর্থে পুঁজিকে ‘পচনশীল’ বলেছিলেন? বরং আমরা দেখছি, যে রাজনৈতিক ধারার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে লেনিন ‘সাম্রাজ্যবাদ’ পুস্তিকাটি লিখেছিলেন সেই কাউৎস্কি এবং তাঁর অনুসারী হিলফেরদিং-দের ‘খোলাখুলি শান্তিসর্বস্ববাদী ও সংস্কারবাদী’ ধারাই পরবর্তীতে প্রবল হয়েছে। লেনিন এবং তার বিরোধী কাউৎস্কি-হিলফারদিং কোন পক্ষালম্বন না করে বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতাকে দুই পক্ষের তর্ক বিতর্কের জায়গা থেকে বিচার করবার কাজও জরুরি ছিল। কিন্তু সেই কাজও এগোয় নি। আমাদের বর্তমান বিশ্ব-অর্থনৈতিক বাস্তবতার আলোকে লেনিনের ‘সাম্রাজ্যবাদ’ পুস্তিকাটির পর্যালোচনা এখন হতেই পারে। কিন্তু এই পুস্তিকাটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আধুনিক যুদ্ধবিগ্রহকে ‘পুঁজি’র পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করার পদ্ধতি। পুস্তিকাটির 'জর্মন ও ফরাসী সংস্করণের ভূ্মিকা' থেকে একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি:
“যুদ্ধের সত্যিকার সামাজিক, কিংবা বলা ভালো, সত্যকার শ্রেণী চরিত্র কি ছিল তার প্রমাণটা স্বভাবতই যুদ্ধের কূটনৈতিক ইতিহাসের ভিতরে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাওয়া যাবে যুধ্যমান সমস্ত দেশেরই অধিনায়ক শ্রেণীগুলোর অব্জেক্টিভ অবস্থার বিশ্লেষণে। এই অবজেকটিভ অবস্থাটা তুলে ধরার জন্য কতকগুলি দৃষ্টান্ত বা বিচ্ছিন্ন সব তথ্য নিলে চলবে না (সমাজ জীবনের ঘটনাবলীর প্রচণ্ড জটিলতার দরুণ যে কোন প্রতিপাদ্য প্রমাণ করারা উদ্দেশ্যে যে কোন সংখ্যক দৃষ্টান্ত, অথবা আলাদা আলাদা তথ্য বেছে নেওয়া সব সময়ই সম্ভব); অবশ্যই নিতে হবে যুদ্ধলিপ্ত দেশের এবং সারা দুনিয়ার অর্থনৈতিক জীবনের বনিয়াদ সম্পর্কিত তথ্যের মোট ফলটাকে।”
মার্কসের ‘পুঁজি’ বই নতুন করে পড়ার উদ্দেশ্য আমাদের কাছে স্রেফ বিমূর্ত অর্থনৈতিক তত্ত্ব চর্চা নয়, বরং যে যুদ্ধ মুলত বিশ্বব্যাপী এখনও জারি বা বর্তমান তাকে গোলকায়িত বিশ্বে মানুষের ‘অর্থনৈতিক জীবনের বনিয়াদ’-এর জায়গা থেকে বোঝার চেষ্টা। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়ন আরও বিস্তৃত, স্ফীত ও গভীর হবার পর নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ‘সাম্রাজ্যবাদ’ সংক্রান্ত প্রচলিত ব্যাখ্যার দুর্বল দিকটা ধরা পড়ছে। কারণ মুদ্রাপুঁজি, বিশেষত ব্যাংক, ঋণ এবং বিভিন্ন প্রকার বণ্ড, প্রতিশ্রুতি ও শেয়ারের ভূমিকা এখন অনেক দৃশ্যমান ও নির্ধারক। অর্থনীতির সঙ্গে আধুনিক রাষ্ট্রের সম্পর্কেরও গুণগত পরিবর্তন হয়েছে, যা 'নিউলিবারেলিজম' নামে পরিচিত। ফলে ‘মূদ্রা’ কী, ‘পুঁজি’ হিশাবে তার স্বভাব বা চলনের ধরণ কেমন, ইত্যাদি জিজ্ঞাসা এই উপলব্ধিই পোক্ত করছে যে মূদ্রা ও পণ্যের বিচলন কিম্বা গতিপ্রকৃতির বিচার ছাড়া ‘পুঁজি’কে সামগ্রিক ভাবে বিশ্লেষণ ও বোঝা অসম্ভব। পুঁজি ও পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিশ্লেষণ ও বোঝার ক্ষেত্রে প্রকট অভাব বোধ হওয়াতে মার্কসের ‘মুদ্রাতত্ত্ব’ সম্প্রতিকালে অর্থশাস্ত্রে গুরুতর পর্যালোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
এটাও পরিষ্কার যে ‘সাম্রাজ্যবাদ’ সংক্রান্ত প্রাচীন ধারণা দিয়ে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা পুরাপুরি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। বিশেষত ‘পুঁজি’কে সামগ্রিক ভাবে না বুঝে, পুঁজির বিচলন ও গতিচক্রের সামগ্রিক চরিত্র না বুঝে ঝোঁক সবসময়ই পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদনের দিকে নিবিষ্ট ছিল। পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন এবং ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী উৎপাদন সম্পর্কের বিচার ভুল ছিল না, কিন্তু সেটা ছিল একপেশে এবং অসম্পূর্ণ। পুঁজির গতি, চলন ও বিকাশের ক্ষেত্রে মূদ্রাপুঁজি কিভাবে নির্ধারক ভূমিকা রাখছে সেই দিকটা গৌণ হয়ে পড়েছিল। ঔপনিবেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কিভাবে যুদ্ধবিগ্রহের মধ্যে দিয়ে দুনিয়া ভাগাভাগি করছে এবং পরাধীন দেশগুলোকে কাঁচামালের উৎস এবং তাদের পণ্যের বাজারে পরিণত করছে –এই দিকগুলোই ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। অথচ মার্কসের ‘পুঁজি'র ধারনায় উৎপাদন একটি ‘মূহূর্ত' মাত্র। ফলে সামগ্রিক ভাবে বিশ্বব্যাপী পুঁজির রূপ যতোই পরিদৃশ্যমান হতে থাকল ততোই প্রচলিত ধারণায় দুর্বলতাও ধরা পড়তে শুরু করল। ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটা ‘পদ্ধতিগত অভাব’ অনুভূত হোল। মার্কসের ‘মুদ্রাতত্ত্ব’ নিয়ে নতুন ভাবে আগ্রহের বাস্তব কারণ এখানেই: বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সামগ্রিক ভাবে ব্যাখ্যা ও বোঝার দুর্বলতা। এখানে উল্লেখ করা দরকার মার্কসের ‘পুঁজি’ বইতে কিম্বা তাঁর পরিভাষায় ‘সাম্রাজ্যবাদ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় নি। বরং ‘পুঁজি’র ধারণার মধ্যেই সাম্রাজ্যবাদ অন্তর্ভূক্ত ছিল। সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের একটি ঐতিহাসিক কালপর্ব। ‘সাম্রাজ্যবাদ’-এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে ‘পুঁজি’ বোঝা যায় না, কিন্তু ‘পুঁজি’ বোঝার পর পুঁজির পুঞ্জিভবন ও আত্মস্ফীতির ইতিহাসের বিশেষ কালপর্বে কিভাবে ‘সাম্রাজ্যবাদ’ হিশাবে হাজির হোল সেটা বোঝা যায়।
‘পদ্ধতিগত অভাব’ আমরা সহজে বুঝতে পারব যদি ‘পুঁজি’ গ্রন্থটি পড়বার সময় আমরা কিছু প্রশ্ন শুরু থেকেই মাথায় রাখি। যেমন,
১. ‘পুঁজি’ গ্রন্থের আলোচনা র্মাকস পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন দিয়ে শুরু করলেন না কেন? কেন তিনি ‘পণ্য’ দিয়ে শুরু করলেন? সাধারণত মার্কসবাদীরা এর ব্যাখ্যা করে থাকেন হেগেলের ‘ভাববাদী’ পদ্ধতি পরিহার করে মার্কস ‘বস্তুবাদী’ পদ্ধতি অনুসরণ করতে চেয়েছেন বলেই বস্তুসত্তা সম্পন্ন পণ্য দিয়ে শুরু করেছেন। পণ্য ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষে বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু। এই দাবি ঠিক না সেটা সহজেই বোঝা যায়। ‘পুঁজি’ সবকিছুকেই পণ্যে পর্যবসিত করে। যেমন ‘সেবা’, বিমূর্ত ও পারলৌকিক বিষয়াদি, যেমন ‘ওয়াজ’, চার্চের ‘সার্ভিস’ কিম্বা ‘পূজা’। অতএব ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ বা ইন্দিয়াতীত কিনা তার দ্বারা মার্কসের ‘পণ্য’ ধারণা বোঝা যায় না।
২. যেহেতু মার্কস র্সবহারা বিশেষত কলকারখানার শ্রমিকদের ওপর পুঁজিতান্ত্রিক শোষণের অবসান চেয়েছিলেন তাহলে শুরুতে কলকারখানার শ্রমিকদের অবস্থা ও পুঁজিপতিদের শোষণ ব্যাখ্যা করে ‘পুঁজি’ শুরু করলেন না কেন?
৩. র্মাকসের কথা ভাবলেই আমাদের 'বাড়তি’ বা 'উদ্বৃত্ত মূল্য' সংক্রান্ত ধারণার কথা মনে আসে। তাহলে তিনি সারপ্লাস ভ্যালু ব্যাখ্যা করে শুরু করলেন না কেন?
৪. পুঁজিকে মার্কস ‘সামাজিক সর্ম্পক' বলছেন। তাহলে তিনি ‘সমাজ' বলতে কি বোঝান তা দিয়ে শুরু করতে পারতেন। করলেন না কেন?
৫. পণ্য ব্যাখ্যার পর ‘পুঁজি’কে এরপর আরও নানান দিক থেকে ব্যাখ্যা করছেন, পাঠককে নানান দিক থেকে বোঝাতে চেয়েছেন। যেমন এক জায়গায় বলেছেন 'পুঁজি হচ্ছে পুঞ্জভিূত শ্রম'। যদি তাই হয় তাহলে ‘পুঞ্জিভূত শ্রম’ ব্যাখ্যা করে শুরু করলেন না কেন?
এই প্রশ্নগুলো মনে রাখলে আমরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারব কেন তিনি পণ্য ও পণ্যের বিনিময়/বিচলন দিয়ে শুরু করছেন। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদন মানেই হচ্ছে পণ্য উৎপাদন। পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদনের লক্ষ্য মানুষের প্রয়োজন বা চাহিদা মেটানো নয়, বরং ‘পণ্য’ উৎপাদন যা বাজারে বিক্রি করে মুনাফা কামানো যায়। উৎপাদন বা ভোগ এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে অবশ্যই, কিন্তু তারা মূলত পণ্য বিচলনের অধীন। সমাজের প্রয়োজন বা চাহিদা থাকলেও বাজারে পণ্য বিক্রি না হলে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।
পণ্য বিচলনের ক্ষেত্রে মূদ্রা নির্ধারক ভূমিকা পালন করে। পণ্যের বিচলন মানে একই সঙ্গে মূদ্রারও বিচলন। পুঁজিপতি মূদ্রা বা টাকা হাতে নিয়ে আগে শ্রমশক্তি ও মেশিনপত্র কেনে, তারপর তাদের কারখানায় একত্রিত বা যুক্ত করে পণ্য উৎপাদন করে। উৎপাদিত পণ্য সে আবার বাজারে নিয়ে আসে বিক্রি করবার জন্য। বিক্রির মধ্য দিয়ে সে আবার পণ্যকে মূদ্রা বা টাকায় রূপান্তর করে। শুরুতে সে যে মূদ্রা বা টাকা দিয়ে শুরু করেছিল সফল ভাবে বিক্রি করার পর তা স্ফীত বা বর্ধিত হয়। দুইয়ের পার্থক্যই মুনাফা। মূদ্রা বিনিময় ও উৎপাদনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িত। তাই পণ্য এবং মূদ্রার ভূমিকা বোঝা ছাড়া পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদনের চরিত্র বোঝা যায় না। খেয়াল করতে হবে ‘পুঁজি’ সম্পর্কে যে সকল পেটি-বুর্জোয়া শোষণবাদী ব্যাখ্যা রয়েছে, মার্কসের চিন্তার সঙ্গে তার মিল সামান্যই। এযাবতকাল যতো উৎপাদন ব্যবস্থা ইতিহাস আমরা দেখেছি তার সবই আলবৎ শোষণমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পুঁজিতান্ত্রিক শোষণের বিশেষ চরিত্র কী? অতীতের নানান শোষণ ব্যবস্থা থেকে আধুনিক পুঁজিতান্ত্রিক শোষণ কোথায় আলাদা। এটাই প্রশ্ন। অনৈতিখাসিক ভাবে শুধু 'শোষণ' ব্যাখ্যা করে সেটা বোঝা যাবে না।
পাঠচক্রে প্রশ্নগুলো ধরে ধরে আলোচনা হয়।
১. মাকর্স পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন দিয়ে শুরু করেন নাই কারণ পুঁজির উৎপত্তি অর্থাৎ পণ্য, তার মূল্য এবং বিচলনের ব্যখ্যাবিশ্লেষণ ছাড়া আমরা পুঁজি এবং পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা বুঝতে পারবো না। এ কারণে শুরুতে পণ্য ব্যখ্যার ওপর তিনি সব চেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছেন। কারণ পণ্য হচ্ছে এক কথায়, পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার নিউক্লিয়াস, মার্কসের ভাষায়, অর্থনীতির ‘জীবকোষ’(Economic Cell Form)। অর্থনীতির ‘জীবকোষ’কে বোঝা না গেলে ‘পুঁজি’ বোঝা যাবে না। কিন্তু তিনি আবার ‘মূল্যের রূপ’কে বলছেন ‘খুবই সরল এবং মর্মের দিক থেকে সামান্য’। কিন্তু তারপরও ‘পুঁজি’ বোঝার শুরুটা এতো কঠিন কেন?
কেন কঠিন সেটা বোঝাতে মার্কস বায়লজি বই থেকে ‘জীবকোষ’এর প্রতীক ব্যবহার করেছেন। একটা জীবের ‘জীবকোষ’ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা অর্থনীতির ‘জীবকোষ’ থেকে সহজ। কারণ জীবের জীবকোষকে অনায়াসেই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের অধীনে রাখা যায় এবং চোখে দেখা যায়। অন্যকে দেখানো যায়। দেখে দেখে বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু অর্থনীতির ‘জীবকোষ’-এর ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব না। পুরা শরীর ব্যাখ্যা একরকম। কিন্তু জীবকোষের ব্যাখ্যা কঠিন, কারণ সেই ব্যাখ্যার মধ্যে সমগ্র শরীরের ছায়া হাজির থাকতে হবে। বায়লজির ক্ষেত্রে ‘জীবকোষ’ প্রত্যক্ষ সত্তা, কিন্তু অর্থনীতির ‘জীবকোষ’ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বোঝার সুবিধার জন্য বুদ্ধির বিমূর্ত নির্মাণ। ক্ষুদ্রতম ক্যাটাগরি। যা দেখা যায় না বা কাউকে দেখানো সম্ভবও নয়। অথচ চিন্তার এই সরল বর্গ দিয়েই আমরা বোঝার চেষ্টা করি। এ কারণেই ‘শ্রমের উৎপন্ন পণ্য’ বা ‘পণ্যের মূল্য রূপ’ বোঝা এবং বোঝানো বায়লজির জীবকোষের চেয়ে কঠিন। পণ্য কিভাবে নিজের মূল্য প্রকাশ করে সেই সরল জায়গাটা বোঝা এ কারণেই সবচেয়ে দুরূহ। পণ্য একই সঙ্গে মার্কসের 'মূদ্রাতত্ত্ব' বোঝার গোড়ার জায়গা। ‘পণ্য’ অধ্যায়কে এই জন্যই মার্কস সবচেয়ে কঠিন বলেছেন।
২. সর্বহারা বিশেষ করে কলখারাখানার শ্রমিকদের উপর পুঁজিতান্ত্রিক শোষণের অবসান চেয়েছিলেন মার্কস, অথচ ‘পুঁজি’ বইয়ের শুরুতে শ্রমিকদের দুর্দশা ব্যাখ্যা করে শুরু করেন নি কেনঢ়? এটা বোঝা কঠিন নয়। যারা কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো পড়েছেন তারা জানেন কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে পুঁজিপতিতের শোষণ দূরে থাক, মার্কস এবং এঙ্গেলস বরং উল্টা বুর্জোয়াদের প্রশংসা করেছেন।
যেমন, শুরুতেই প্রমাণ করেছেন “আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণী নিজেইএকটা দীর্ঘ বিকাশ ধারার ফল।, উৎপাদন ও বিনিময় পদ্ধতি এক প্রস্থ বিপ্লবের পরিণতি’। নির্বিচারে 'বুর্জোয়া শ্রেণী'র বিরোধিতা করে নিজেদের সমাজতন্ত্রী আর কমিউনিস্ট দাবি করা আর মার্কসের অনুসারী হওয়ার মধ্যে, দেখা যাচ্ছে, ফারাক আকাশ পাতাল। এই জন্যই সমজতন্ত্রী বা কমিউনিস্ট নামে যাদের আমরা সাধারণত বাংলাদেশে দেখি এদের অধিকাংশই পেটিবুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণী। এরা শোষণবাদী, অর্থাৎ সবকিছুকেই ‘শোষণ’ দিয়ে তারা ব্যাখ্যা করে। তাদের জন্য মার্কসের এই বাক্যটি ভূত তাড়ানোর মতো হতে পারে: “ঐতিহাসিক ভাবে বুর্জোয়া শ্রেণী খুবই বিপ্লবী ভূমকা পালন করেছে”
এই প্রশংসার অর্থ আমরা ভালো করে না বুঝলে, মার্কসকে ভুল বোঝা হবে। বুর্জোয়াদের প্রশংসা করার অর্থ এই যে, পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা উৎপাদন সম্পর্কে এমন একটি বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটিয়েছিল ইতিহাসের নিরিখে যা মার্কস ইতিবাচক গণ্য করেছেন। এর ফলে দাস, সামন্ত সহ প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্ক উৎখাত হয়ে গিয়েছে। এই বিপ্লব বুর্জোয়াদের দ্বারাই সংঘঠিত হয়েছিল, ফলে, এই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জন্যে বুর্জোয়ারা প্রশংসা পাবার যোগ্য বটে। তাই কমিউনিস্ট ইশতেহার পরিষ্কারই দাবি করেছে, ‘বুর্জোয়া শ্রেণী যেখানেই প্রাধান্য পেয়েছে, সেখানেই সমস্ত সামন্ততান্ত্রিক, পিতৃতান্ত্রিক ও প্রকৃতি-শোভন সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে”।
তাছাড়া, প্রচলিত অর্থে যেভাবে শ্রমিকদের উপর বুর্জোয়াদের শোষণের কথা বলা হয়ে থাকে, বুর্জোয়ারা সেইভাবে শোষণ করেনা। পুঁজিবাদি উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যেই, পণ্য বিচললের সম্পর্ক যার অন্তর্গত, পুঁজিতান্ত্রিক শোষণের ব্যবস্থা পাকাপাকি ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। আর সেই সম্পর্ক সম্ভবত কায়েমী হতে পেরেছে পণ্য বিচলনের এবং পণ্যের মূল্য উসুল ক্রবার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ উৎপাদন মানেই ‘সাধারণ ভাবে পণ্য উৎপাদনে পরিণত’ হবার কারণে। তাহলে ‘পণ্য’ বোঝা না গেলে পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন কিম্বা পুঁজিতান্ত্রিক শোষণ কোনটিই বোঝা সম্ভব না।
এসব কারণ ছাড়াও, আরেকটা কারণে মার্কস শ্রমিকদের অবস্থা ও পুঁজিপতিদের দিয়ে শুরু করেন নি, সেটা হোল, ‘পুঁজি’ তার নিজের বিচলনের নিয়মে সাপের খোলসের মতো, তার বিভিন্ন রূপের খোলস বদলাতে বদলাতে চক্রাকারের আবর্তিত হয়। ‘পুঁজি’ বইতে পুঁজির এই চক্র বা Circuit খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। পণ্যের বিচলন প্রথমে পণ্য থেকে টাকা, তারপর উৎপাদনের উপকরণ অর্থাৎ শ্রমিক, কলকারখানা, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি, তারপর আবার পণ্য এবং শেষে আবার টাকায় রূপান্তর ঘটায় – পুঁজির এই বিচলন চক্র আগে বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। নইলে 'পুঁজি' বোঝা যাবে না। এই কারণেও মার্কসকে পণ্য দিয়েই তার আলোচনা শুরু করতে হয়েছিল।
৩. ওপরে যা বলেছি সেই একই কারণে মার্কস উদ্বৃত্ত মূল্য অর্থাৎ সারপ্লাস ভ্যালু দিয়েও শুরু করেন নি। কারণ, মূল্যের সরল রূপ বোঝা না গেলে উদ্বৃত্ত মূল্য বোঝা যাবেনা। উদ্বৃত্ত মূল্যের রূপ হচ্ছে পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মূদ্রা বা টাকার রূপ। অনেকে ‘উদ্বৃত্ত মূল্য’কে উৎপাদনের ‘উদ্বৃত্ত’ (surplus) বলে ভুল করেন। ফলে বুঝতে পারেন না। পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে ‘উদ্বৃত্ত মূল্য’ মানে তাই স্রেফ উৎপাদনের ‘উদ্বৃত্ত’ নয়। উৎপন্নের মূল্য রূপ।
খেয়াল রাখতে হবে, 'পণ্য ও মূদ্রা' অধ্যায়ে মূল্যের রূপ নিয়ে মার্কস আলোচনা করছেন। এই জন্যই ‘মূল্যের সরল রূপ’কে মার্কস সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। মূল্যের সরল রূপের ভেতর দুটো রূপ থাকে : ১.আনুপাতিক মূল্যরূপ এবং ২. মূল্যের সমরূপতা। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে ( এখানে মার্কসের উদারহন অনুসরণ করা হয়েছে)।
ধরা যাক, ২০ গজ লিনেন = ১ টা কোট। কোট দিয়ে লিনেনের মূল্য প্রকাশ করা হচ্ছে। আনুপাতিক বা তুলনীয় মূল্য হলো, একটা পণ্য যখন আরেকটা পণ্য দিয়ে তার মূল্য প্রকাশ করে। আমাদের উদাহরনে, ২০ গজ লিনেন হলো সেই আনুপাতিক মূল্য। কারণ, ২০ গজ লিনেন তার মূল্য প্রকাশ করছে ১ টা কোটের মূল্য দিয়ে। ২০ গজ লিনেন নিজে তার কোন মূল্য প্রকাশ করতে পারেনা। অন্যদিকে মূল্যের সমরূপতা হলো, যে পণ্য দিয়ে আর সকল পণ্য তাদের মূল্য প্রকাশ করে। এখানে কোট হলো অন্য সকল পণ্যের মূল্য প্রকাশক। যে পণ্য অন্য সকল মূল্য তার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে সেটাই মূদ্রা বা টাকা হয়ে ওঠে। টাকা সকল পণ্যের অর্থাৎ তার মূল্যের সমপরিমাণ সকল পণ্যের বিমূর্ত রূপ। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত মূল্য মূদ্রা রূপেই হাজির থাকে।
মূল্যের সমরূপতা বা ইকুইভেলেন্ট ফর্ম মানে পণ্যের নিজের যে রূপ, সেটাই তার মূল্য। অর্থাৎ অন্য কোন পণ্যের মধ্য দিয়ে তার মূল্য প্রকাশ অপ্রয়োজনীয়। এটাই মূল্যের এই সরল রূপ। এই রূপই বা মূল্যের ‘ইকুইভেলেন্ট ফর্ম’পরবর্তীতে মূদ্রা বা টাকা হিশাবে হাজির হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই মার্কসের একটি বিখ্যাত সিদ্ধান্ত হচ্ছে ‘টাকার কোন দাম নাই’। টাকা নিজেকেই নিজে প্রকাশ করে।
৪. পুঁজিকে মার্কস সামাজিক সম্পর্ক বলছেন, অথচ সমাজ ব্যাখ্যা করে ‘পুঁজি’ লিখতে শুরু করলেন না কেন? এই ক্ষেত্রেও পণ্যের গুরুত্ব আবার এসে যায়। যে সমাজে ভোগ্য পণ্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সরাসরি, যেমন প্রাচীন শিকারি ও সংগ্রাহকদের সমাজ, সেই সমাজে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক আর পুঁজিতান্ত্রিক সমাজ এক নয়। প্রথমটির ক্ষেত্রে ভোগ্যবস্তুর ব্যবহারিক মূল্য প্রধান। পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে মানুষের সাথে প্রকৃতির এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক শিকারি ও সংগ্রাহকদের সমাজের মতো নয়। তেমনি দাস ব্যবস্থার ওপর গঠিত সমাজ কিম্বা সামন্ত সমাজের মতোও নয়। ‘সমাজ’ কোন বিমূর্ত ধারণা নয়। তাহলে ‘সমাজ’ নামক বিমূর্ত ধারণা অনুমান করে ‘পুঁজি’ গ্রন্থ শুরু করা যেত না। মার্কসকে পণ্য ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে পুঁজিতান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে হোত। সেই পণ্যের ভেতর বিনিময় মূল্যের যখন আবির্ভাব ঘটে, তখন মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক নতুন রূপ পরিগ্রহণ করে। বিনিময় মূল্য একটা নৈর্ব্যক্তিক রূপ নিয়ে হাজির হয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে নির্ধারক ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। এই বিনিময় মূল্য উদ্ভবের মূল কারণ ব্যক্তিগত সম্পত্তি। পরবর্তিতে আমরা দেখি উৎপাদন সামাজিক হলেও, উৎপাদনের উপায়ের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা কায়েম থাকে। কাজেই পণ্য সম্পর্কে আগে অবহিত না হলে, পণ্যের পুঁজিতে রূপান্তরের বিষয়গুলিও বোঝা যাবেনা এবং বোঝা না গেলে, সামাজিক সম্পর্ক এবং সমাজ সম্পর্কেও কিছু বোঝা যাবেনা।
৫. মার্কসের ‘পুঁঞ্জিভূত শ্রম’ ধারণা পণ্যের বিনিময় ও বিচলনের ধারণা থেকে আলাদা কিছু নয়। প্রথমত মার্কসকে প্রমাণ করতে হয়েছে মূল্যের উৎপত্তি শ্রম থেকে , যা মার্কসের ‘মূল্যের শ্রম তত্ত্ব’ নামে পরিচিত। সভ্যতা মানুষের শ্রমেরই ফসল। শ্রমের ওপর যে সভ্যতা গড়ে ওঠে তাকে সাধারণ ভাবে আমরা ‘পুঞ্জিভূত শ্রম’ বলতে পারি। পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মার্কস যখন পুঁজিকে ‘পুঞ্জিভূত শ্রম’ বলেন তখন তিনি জোর দেন ‘পুঁজি’র রূপ নিয়ে সম্পদ হাজির থাকার ওপর। ‘পুঁজি’সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছাড়া পুঁজিকে পুঞ্জিভূত শ্রম হিশাবে বোঝা যায় না। তাই আগে তাঁকে পণ্য মূদ্রা ও পুঁজি ব্যাখ্যা করতে হয়েছে।