১৭. করোনাভাইরাস, জীবানু মারণাস্ত্র এবং বৈশ্বিক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ


বিল গেইটসের প্রবল আগ্রহ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে। মাইক্রোসফটের বিশাল সাফল্য বিচার করলে আমরা তা অনায়াসেই বুঝি। তিনি আমাদের অফিসে যেমন, তেমনি জীবনের অন্দর মহলে নিত্য হাজির রয়েছেন। প্রতিদিন যখন আমরা কম্পিউটার অন করি, মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ বা জানালা দিয়েই আমাদের জগত দেখা এবং নতুন টেকনোলজির জগতে বেঁচে থাকা শুরু হয়। কৃৎকৌশলের নিয়ন্ত্রণে আমরা ইতোমধ্যেই বিল গেইটসের হাতে বাঁধা পড়ে আছি। তবে এখন তিনি মহামারীর অজুহাতে আমাদের দেহের ওপর পুরাপুরি নিয়ন্ত্রণ চান।

শুধু মাইক্রোসফট নিয়ে গেইটস তৃপ্ত না। তিনি আরও আবিষ্কার চান। এবার এমন আবিষ্কার চান যাতে আমাদের শরীর বহুজাতিক কোম্পানির কাছে পুরাপুরি জিম্মি হয়ে পড়ে। গেইটস চাইছেন নতুন ভ্যাক্সিন ও নতুন বীজ আবিষ্কার। যাদের পেটেন্ট, বলাবাহুল্য, বহুজাতিক কোম্পানিরই থাকবে। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্যে এই দুটো ক্ষেত্রের আবিষ্কার এবং তা বহুজাতিক কোম্পানির বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া যতোই জোরদার হবে, আমাদের শরীরও ততোই বহুজাতিক কোম্পানির জিম্মি হয়ে পড়বে।

বিল গেইটস বহু আগে থেকেই সম্ভাব্য বৈশ্বিক মহামারীর কথা বলছেন। কিন্তু মহামারীর কারণ হিশাবে ভাইরাসকে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন একটা সংক্রামক জৈব পদার্থের অধিক কিছু গণ্য করেন নি। বিস্ময়ের দিক হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের এখনকার যে বিধ্বংসী সম্পর্ক সেখানে কোন মৌলিক পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে কিনা সে বিষয়ে তিনি একদমই ভাবতে রাজী না। তিনি ধরে নিয়েছেন জীবাশ্মভিত্তিক আধুনিক জীবন ব্যবস্থা, নগরায়ন বা ভোগী জীবনের কোন পরিবর্তন বা সংস্কারের দরকার নাই, অতএব প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধের সংস্কার নিয়েও তাঁর কোন চিন্তাভাবনা নাই। নতুন ভাবে সম্বন্ধ রচনার মধ্য দিয়ে মহামারী প্রতিরোধ কিম্বা তার প্রকোপ মোকাবিলা সম্ভব কিনা সে বিষয়ে তিনি আদৌ ভাবতে রাজি না। তাঁর লেখালিখি চিন্তাভাবনা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় তিনি ধরে নিয়েছেন মহামারী থাকবেই, অর্থাৎ একটির পর একটি বৈশ্বিক মহামারী ঘটতেই থাকবে।

বিল গেইটসের লেখলিখি কথাবার্তা সর্বত্র মহামারী থাকবে, মহামারী আসছে তার ওপরই জোর। ধনি দেশগুলোর একমাত্র কাজ হচ্ছে মহামারী কোথায় কিভাবে ঘটছে তার ওপর নজরদারি প্রখর রাখা, মহামারী মোকাবিলার ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া এবং সর্বোপরি ভ্যাক্সিন আবিষ্কার, উৎপাদন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা। বারবারই শুধু মহামারী প্রস্তুতির ওপর জোর দেওয়া এক বিশেষ মতাদর্শ, যার অনুমান মহামারী আছে বা থাকবে শুধু নয়, এটাও প্রতিষ্ঠিত করা যে নতুন করে আমরা আমাদের 'আবাস' মেরামত করতে পারব না, পৃথিবীতে নতুন ভাবে বাস করতে শিখবো না। অতএব বহুজাতিক কোম্পানির ওষুধ ও ভ্যাক্সিনের কাছেই আমাদের পুরাপুরি আত্মসমর্পন করে বাঁচতে হবে। চিরকাল।

বিল গেইটসের কাছে মহামারীর প্রস্তুতি মানে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা না, বরং বহুজাতিক ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিগুলো যেন ভ্যাক্সিন আবিষ্কার, উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারে সেই ব্যবস্থা জোরদার করা। ভাইরাস জীব-অণুজীব কিম্বা পাখি বা জীবের মধ্যস্থতায় সংক্রামক হয়ে কেন মানুষকে হামলা করে তার বৈজ্ঞানিক কারণ খুঁজে বের করা এবং তা প্রতিরোধের সম্ভাবনা নিয়ে কোন গবেষণায় তিনি মোটেও আগ্রহী নন। বরং তার এ যাবৎকালের চিন্তাভাবনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি আসলে মহামারী হতে দিতে চান এবং এটাও চান যে ধনীদেশগুলো মহামারী মোকাবিলার একমাত্র উপায় হোক বহুজাতিক কোম্পানির ভ্যাক্সিন আবিষ্কার ও উৎপাদন। তার জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের বড় অংশের যোগান তিনি রাষ্ট্রের কাছ থেকেই আদায় করতে চান। অনুন্নত বিশ্বের উন্নয়নের জন্য ধনি দেশগুলো যে অর্থ ব্যয় করে তিনি চান তার বড় অংশটা ভ্যাক্সিন উৎপাদনে ব্যয় হোক। বীজ ও খাদ্য ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণও গুটিকয়েক বহুজাতিক কোম্পানির একচেটিয়ায় পরিণত হোক। খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রিত হোক অল্প কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির দ্বারা। গরিবের উপকার করার উপায় বা পথও এটাই। তার জন্য বহুজাতিক কোম্পানিকে বিনিয়োগের জোগান দিতে হবে রাষ্ট্রকে। টাকা আসবে জনগণের ট্যাক্স থেকে। কিন্তু মুনাফা কামাবে বহুজাতিক কোম্পানি।

বিল গেইটস জানেন বর্তমান আধুনিক ভোগসর্বস্ব জীবন এবং বিশ্ব ব্যবস্থা যেমন আছে তাতে মহামারী হতেই থাকবে। দরকার শুধু সিরিঞ্জ, শিশি আর ভ্যাক্সিন হাতে প্রস্তুতি। তাই তিনি সম্ভাব্য বৈশ্বিক মহামারীর জন্য কোন বৈশ্বিক প্রস্তুতি নাই বলে ক্ষান্ত থাকেন নি, এই না থাকা বা অভাবকে তিনি কিভাবে বিনিয়োগের ক্ষেত্র ও মুনাফাকারী ব্যবসায়ে পরিণত করবার তত্ত্ব হাজির করছেন সেই দিকটাই আমরা বুঝতে চাই। বর্তমান বিশ্ব ব্যস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মহামারী, ভ্যাক্সিন, ওষুধ, খাদ্য, পুষ্টি ইত্যাদি নিয়ে পুঁজির বৈশ্বিক কর্তাদের চিন্তা, মতাদর্শ ও পরিল্পনা বুঝতে পারা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

মহামারী বা যে কোন মানবিক বিপর্যয়কে বিনিয়োগ ও মুনাফার ক্ষেত্রে পর্যবসিত করা কি খারাপ কাজ? আসলে এটা ভালখারাপ কিম্বা নীতিনৈতিকতার তর্ক নয়, পুঁজি সেই খাতেই বিনিয়োগ করবে যেখানে মুনাফার সুযোগ এবং মুনাফার হার অন্যান্য খাতের তুলনায় বেশী। বিনিয়োগের ক্ষেত্র সন্ধানের লজিক বোঝার জন্য কার্ল মার্কসের ‘মুনাফার হারের ক্রমাবনতির তত্ত্ব (Falling Tendency of the Rate of Profit) আমাদের কাজে লাগে। পুঁজির এই প্রবণতা পুঁজির ধর্ম বুঝতে আমাদের সাহায্য করে। সে কারণে আমরা বুঝি বিল গেইটসের তত্ত্ব ও পরিকল্পনা কোন ‘ষড়যন্ত্র’ নয়। এটা পুঁজিরই ধর্ম। বিল গেইটসের চিন্তাভাবনা কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে পুঁজির ধর্মকেই আমরা আমাদের চোখের সামনে মূর্ত রূপে দেখছি। পুঁজি এভাবেই জীবন্ত মানুষের মধ্য দিয়ে নিজেকে বর্তমান করে। অক্ষমের নীতিবাগীশ সেন্টিমেন্ট দিয়ে আমরা এই বাস্তবতা বুঝব না। অর্থাৎ বিশ্বের ধনি শ্রেণি কতো খারাপ এই নিন্দাগিরি দিয়ে নৈর্ব্যক্তিক বাস্তবতা বোঝা যায় না। বরং বিল গেইটসের মধ্য দিয়ে একালের পুঁজি কিভাবে ঐতিহাসিক কর্তার ভূমিকা পালন করছে সেটা বুঝতে পারাই আমাদের জন্য অধিক জরুরি। এই বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণ যদি আমরা করতে সক্ষম হই কেবল তখনই গণমুখি পালটা ও বিকল্প পথ নিয়ে আমরা ভাবতে পারব এবং তার সন্ধানও পাব।

অবাক হওয়ার কিছু নাই যখন দেখা যায় ২০১১ সালে ফ্রান্সে জি-২০ দেশগুলোর শীর্ষ বৈঠকে বিল গেইটস ধনি দেশগুলোর জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা হাজির করবার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন। গেইটস-ই প্রথম একজন বেসরকারি ব্যক্তি (private Individual) যিনি খুব উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় যোগ দিলেন। সামিটটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফ্রান্সে, ফ্রান্সের সেই সময়ের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি বিল গেইটসকে জি-২০ সদস্যভূক্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার কাছে একটি রিপোর্ট চেয়েছিলেন। কিভাবে উন্নয়ন সহায়তার অর্থ আরও ‘সৃষ্টিশীল’ ভাবে ব্যবহার করা যায় সে সম্পর্কে বিল গেইটসের কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। বিল গেইটস প্রতিবেদন দিয়েছেন। পুঁজির সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়ন ক্ষেত্র হিশাবে বিল গেইটসের পরামর্শ চাওয়া হয় স্বাস্থ্য এবং কৃষি ক্ষেত্রে ‘আবিষ্কার’ সম্পর্কে (Gates, 2011)।

‘গ্রুপ অফ টুয়েন্টি’ বা সংক্ষেপে জি-২০ গঠিত হয়েছে ১৯৯৯ সালে, বিভিন্ন দেশের অর্থ মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং আন্তর্জাতিক পুঁজি লগ্নিকারক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল নিয়ে। নব্বই দশক থেকেই নতুন ভাবে বৈশ্বিক অর্থ ব্যবস্থার সংকট দৃশ্যমান হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে শক্তিশালী শিল্পোন্নত দেশগুলো পরস্পরের সঙ্গে কথা বলার তাগিদ বোধ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশ ছাড়াও গ্রুপ-২০তে চিন, ভারত, ব্রাজিলও যুক্ত রয়েছে। গ্রুপ-২০ সেই সভার যে প্রতিবেদন তৈরি করে, সেখানে সংক্ষিপ্ত হলেও বিল গেইটসকেও উল্লেখ করে। বিল গেইটস বিশ্ব ব্যবস্থার শাসক শ্রেণীর জন্য অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি।

জি-২০ দেশগুলোর সামিট সম্পর্কে বিল গেইটস লিখছেন, “আমার কাছে জি-২০ আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিশ্ব অর্থনীতি একটা ভয়ংকর বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। যদি তা আরও দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে দুনিয়ার গরিব মানুষগুলোর ভোগান্তি সবচেয়ে বেশী হবে”। দারুন। অর্থাৎ ধনিদের অসম ও শোষণমূলক বিশ্ব ব্যবস্থার অসঙ্গতি ও বিপর্যয় সত্ত্বেও টিকিয়ে রাখতে হবে ‘গরিবদের ভালোর জন্য’! বিল গেইটস অবশ্য উল্লেখ করেছেন ধনি দেশগুলোর জন্য অবস্থা খুবই খারাপ, কারণ তাদের বেকারত্বের হার উর্ধমুখী। অতএব বিশ্ব অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা ছাড়া উপায় নাই। বিল গেইটস বলছেন, “জি-২০ উন্নয়ন সাহায্য নিয়ে ভাবছে তাতে আমি খুশি, শুধু মানবিক দায়বোধের জন্য নয়, বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও চাহিদাকে স্থিতিশীল করবার একটা উপায় হিশাবে ভাবার জন্য” সম্পর্কে (Gates, 2011)।

বিল গেইটস জি-২০র জন্য যে রিপোর্ট পেশ করেছেন সেখানে তিনি আগামি দিনে জি-২০ দেশগুলোর কোথায় বিনিয়োগ করা উচিত, সেটা উল্লেখ করেছেন। জোর দিয়েছেন বৈজ্ঞানিক ‘আবিষ্কার’ এবং তা বাজারজাত করার ওপর; বাজারজাত করার অর্থ তাঁর ভাষায় ‘গরিবদের কাছে পৌঁছে দেবার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা'। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বে ‘আবিষ্কার’ স্রেফ জনস্বার্থের জন্য নয়; ‘আবিষ্কার’ একই সঙ্গে পণ্য এবং যে ব্যক্তি বা কোম্পানি কোন কিছু আবিষ্কার করে সেটা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি (Intellectual Property Right)। বিল গেইটসের দাবি নতুন আবিষ্কার এবং সেই আবিষ্কারে বিনিয়োগই বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবং গরিবের প্রতি আস্তে আস্তে ন্যায় বিচার প্রদর্শনের পথ।

প্যারিসের জি-২০ গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোর জন্য নতুন আবিষ্কারের ক্ষেত্র কি? বা কোনগুলো? কি পরামর্শ দিয়েছেন বিল গেইটস? তিনি দুটো ক্ষেত্র পরিষ্কার চিহ্নিত করেছেন। একটি হোল বীজ এবং অপরটি হোল ভ্যাক্সিন। তাঁর রিপোর্টের শুরুতেই তাই তিনি দাবি করছেন বিশ্বব্যবস্থার সুদূরপ্রসারী স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব যদি কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতকে বিনিয়োগের প্রধান ক্ষেত্র হিশাবে চিহ্নিত করা যায়। বলছেন, “আমি রিপোর্ট শুরু করছি আবিষ্কারের অবিসংবাদিত গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে। যেমন বীজ এবং ভ্যাক্সিনের মতো আবিষ্কার”। গরিব দেশগুলোর উন্নয়ন খাতে ধনি দেশগুলো যে বিনিয়োগ করছে তার সুফল বহুগুণে ফিরে আসবে যদি জি-২০ দেশগুলো বীজ ও ভ্যাক্সিন আবিষ্কারে মনোযোগী হয়। আমরা (অর্থাৎ ধনি দেশগুলো) ইতোমধ্যেই বিশাল পরিবর্তন ঘটিয়েছি, কিন্তু উন্নয়নের মৌলিক হাতিয়ারগুলোর আরও উন্নতি করা যায়, অর্থাৎ আরও কম দামে দেওয়া, ব্যবহার সহজ করা, দক্ষতা বাড়ানো, অথবা সম্পূর্ণ নতুন হাতিয়ারও আমরা আবিষ্কার করতে পারি সম্পর্কে (Gates, 2011)। ।

বলাবাহুল্য, ভ্যাক্সিন ও টিকাদান কর্মসূচীর জন্য Global Alliance for Vaccines and Immunisation বা GAVI কর্মসূচিতে ধনি দেশগুলোর উন্নয়ন বরাদ্দ বেড়েছে, যার সুবিধা ভোগ করছে ধনি দেশের বহুজাতিক কোম্পানি, কিম্বা মেলিন্দা এন্ড গেইটস ফাউন্ডেশানের মতো সাহায্য সংস্থা। কিন্তু এইডস, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়ার (Global Fund to Fight AIDS, Tuberculosis and Malaria) জন্য বরাদ্দ বাড়েনি, বরং অনেক কমেছে। তেমনি কমেছে উপেক্ষিত অসুখ গুলোর বেলাতেও (Global Funding of Innovation for Neglected Diseases)। অধিকাংশ দেশ উপেক্ষিত বা অপরিচিত অসুখের জন্য গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য অনুদান বেশ বড় পরিমানে কমিয়ে দিয়েছে। তবে কৃষি ক্ষেত্র বিশেষত সার, কীটনাশক, আগাছা নাশক ও বীজের বাজার অল্প কয়েকটি কোম্পানির একচেটিয়ায় পরিণত হয়েছে।

মানুষের মন ও শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিছকই রাজনৈতিক কলাকৌশল নয়, বিজ্ঞান ও টেকনোলজির চরিত্র সেই কলাকৌশলের বাইরের কিছু না। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থায় বিশেষ ধরণের টেকনোলজির ওপর কেন বহুজাতিক কোম্পানি এবং ধনি দেশগুলোর উন্নয়ন বিনিয়োগ কেন্দ্রীভুত, সেটা আমাদের বুঝতে হবে এবং পালটা চিন্তা, গবেষণা, বিজ্ঞান ও কৃৎকৌশল আবিষ্কারে মনোযোগী হতে হবে।

নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নতুন ভাবে জগতের সঙ্গে সম্বন্ধ রচনা করা সম্ভব, এটাই একালে একমাত্র বিপ্লবী প্রতিশ্রুতি।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।