ভাসানী আছেন, আমাদের ভয় নাই
আজ মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর (১২ ডিসেম্বর ১৮৮০ – ১৭ নভেম্বর ১৯৭৬) জন্ম দিন। বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স আজ ১৩৫ বছর হোত। তাঁর মৃত্যু আর জন্মের দিনটি আমি সাধারণত মনে রাখার চেষ্টা করি। গত বছরও এই দিনে তাঁকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম। একটা সময় গিয়েছে যখন তাকে বিদ্রোহ ও বিপ্লবের খুব সরল ফ্রেমে বেঁধে রেখে ভাবতাম তাঁকে বোধহয় আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু সেই বাঁধানো ফ্রেম ভেঙ্গে যেতে খুব সময় লাগে নি। আমরা যখন বাংলাদেশে বড় হচ্ছিলাম তখন আসামের ভাসান চরের মওলানা সম্পর্কে আমরা খুব একটা জানতাম না। সেটা জেনেছি পরে, তাঁকে আরও ভালোভাবে বোঝার তাগিদে। বাংলাদেশের তরুণরা তাঁর সম্পর্কে কতোটা জানে তা এখন আমি আর নিশ্চিত নই। কিন্তু তাঁকে না জেনে বাংলাদেশের পক্ষে সামনে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কেন, সে কথা বলার জন্যই আজকের লেখা।
তাঁকে বুঝতে হলে শুরুতেই বুঝতে হবে এই দেশের কৃষকরা পাকিস্তান আন্দোলন সক্রিয় ভাবে সমর্থন করেছে এবং অংশ গ্রহণ করেছে। ভাসানী, শেখ মুজিব, শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি প্রত্যেকেই এই দেশের জনগণের রাজনৈতিক প্রতিনিধি হবার কারণে নানান মাত্রায় এবং নানান অবস্থান থেকে পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেছিলেন। এর পেছনে দুটো কারণ সহজেই বোঝা যায়। প্রথম হচ্ছে বর্ণাশ্রম প্রথা, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ– বিশেষত গ্রামের নির্যাতীত নিপীড়িত কৃষক – জাতপাতের অত্যাচার বরদাশত করতে রাজি ছিল না। দ্বিতীয়ত, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমির মালিক হিসাবে নতুন জমিদার ও মহাজনদের যে শ্রেণি গড়ে উঠেছিল তাদের অকথ্য নিপীড়ন। কৃষকরা জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচার থেকে মুক্তি চাইছিল। আবদুল হামিদ খান ছিলেন এই মজলুমের নেতা।
অন্যদের সঙ্গে তাঁর পার্থক্য হচ্ছে তিনি মজলুমের রাজনীতি করেছেন, জালিমের স্বার্থ রক্ষা তাঁর ধাতে ছিল না। ইসলামের বৈপ্লবিক ভূমিকার সারবস্তু তিনি সেভাবেই বুঝেছেন। তাই জালিমের বিরুদ্ধে ইসলামের সার কথা তাঁকে সবসময়ই আকৃষ্ট করেছে, তিনি তা মনে প্রাণে গ্রহণ করেছেন, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণকে তিনি আরব হবার বা আরব দেশের সংস্কৃতি গ্রহণ করে আরবদেশীয় হয়ে যাবার পরামর্শ দেন নি। কিম্বা উর্দুভাষী হয়ে পাকিস্তানী হয়ে যেতেও বলেন নি। নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে শেকড় চ্যূত হয়ে নিজের মুসলমানিত্ব প্রমাণ করতে হবে কোরানে বা হাদিসে এমন কোন নির্দেশনা নাই। কিন্তু তারপরও আরবি বাংলাদেশের মজলুম জনগণের প্রিয় ভাষা, কারণ কোরান এই ভাষাতেই নাজিল হয়েছে আর আখেরি নবি এই ভাষাতেই কথা বলতেন। উর্দুর বিরুদ্ধে কোন বিদ্বেষও তাঁর ছিল না। কারণ উপমহাদেশের মজলুমদের বিশাল একটি অংশ উর্দুতেই কথা বলে। ভাসানী শেখালেন নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে ইসলামের বিপ্লবী শিক্ষা আত্মস্থ করাই একটি শক্তিশালী জনগোষ্ঠি হিসাবে গড়ে ওঠা ও বিকশিত হবার পথ।
কথাগুলো এখন আগের চেয়ে আরও অনেক ভালো ভাবে বোঝা দরকার। কেউ একজন কোন এক মধুর প্রভাতে ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ নামে একখানা তত্ত্ব লিখেছেন আর তারপর এই দেশে হিন্দু আর মুসলমান দুটো দেশে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল এই কেচ্ছা আমরা হামেশা শুনি। এই কেচ্ছা আসলে উচ্চ বর্ণের হিন্দুর আক্ষেপ মাত্র। এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নাই। বাংলাদেশের মজলুম কৃষক-জনতা পাকিস্তান চেয়েছে ও তার জন্য রাজনৈতিক ভাবে লড়েছে এব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। আরও অনেকের সঙ্গে আবদুল হামিদ খান ছিলেন তাদের নেতা। এটা ঠিক পাকিস্তান আন্দোলনে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষাকারী অন্যান্য শ্রেণিও ছিল, পাকিস্তান আন্দোলন সফল করবার জন্য ভাসানী তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছেন। সেখানে তাঁর দ্বিধা ছিল না। কিন্তু যখনই মুসলমানদের মধ্যে জালিম আর মজলুমের ফারাক দেখা দিল, তিনি জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের পক্ষে দাঁড়ালেন। এখানেই তাঁর ঐতিহাসিক কৃতিত্ব।
ছায়াকে ছুরি দিয়ে দুই ভাগ করা
ভাসানীর কৃতিত্বের দিকগুলো ম্লান করে দেবার জন্য ঔপনিবেশিক আমলে তাঁর রাজনীতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলা হয় না। তিনি আপনা আপনি এই ধরণের রাজনীতি আবিষ্কার করেছেন তা নয়। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তিনি বড় হয়েছেন। বাস্তবের লড়াই সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে রাজনীতিতে এসেছিলেন ১৯১৭ সালে। বয়স তখন ৩৭ বছর। মওলানা মোহাম্মদ আলীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন ১৯১৯ সালে। গ্রেপ্তার হন ১৯২০ সালে। জেল থেকে বেরিয়ে খেলাফত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন ১৯২১ সালে। আবার জেল খাটেন। এরপর মুসলিম লীগে যোগ দেন। আমরা অনেকেই এখন জানি না যে তিনি ১৯৩৭ – ১৯৪৬ সাল অবধি ধুবড়ি থেকে আসামের আইন সভার নির্বাচিত সদস্য (এম এল এ) ছিলেন। ভাসানী ১৯৪৪ সালের এপ্রিলে মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এরপর থেকে পুরোপুরি পাকিস্তান আন্দোলনে মনোনিবেশ করেন।
পেছনের ইতিহাস বলছি এ কারণে যে ভাসানীর কাছে মুসলিম লীগ হচ্ছে মজলুম কৃষকের জমির অধিকার ফিরে পাবার আন্দোলন। লর্ড কর্ন ওয়ালিস ১৭৭৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে জমির ওপর কৃষকের অধিকার হরণ করে সেখানে জমিদারদের চিরস্থায়ী মালিকানা কায়েম করেছিলেন। সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি ঘটেছে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানে– জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তান আন্দোলনকে যারা কৃষকের জমির অধিকার ফিরে পাবার লড়াই-সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিবেচনা করেন, তাদের চিন্তা ও রাজনীতি বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থ চিন্তা থেকে একই ভাবে বিচ্ছিন্ন ও অনৈতিহাসিক। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বুঝতে হলে এই প্রেক্ষাপটগুলো মনে রাখতে হবে।
ইতিহাস ভুলে যায় বলে বাংলাদেশের সেকুলার বা ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। ভাসানীর রাজনীতি কক্ষনোই ইসলাম বনাম ধর্ম নিরপেক্ষতা ছিল না, বরং সেটা ছিল জালিম বনাম মজলুমের দ্বন্দ্ব নিরসনের রাজনীতি। কেউ রাজনীতিতে ইসলামপন্থী হতেই পারে, কিন্তু সেই ইসলামপন্থা যদি খেটে খাওয়া শ্রমিক কৃষক ও মজলুম জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা না করে শোষক শ্রেণির মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার বিরুদ্ধেই দাঁড়াবেন। তেমনি সেকুলারিজম কিম্বা ধর্ম নিরপেক্ষতার সঙ্গেও তাঁর কোনবিবাদ ছিল না, কমিউনিস্টদের নিয়েই পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পর্বে রাজনীতি করেছে্ন। কিন্তু সেই রাজনীতি যদি গরিব নিপীড়িত মানুষের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে ইসলাম বিরোধিতাকেই রাজনীতির প্রধান উপজীব্যে পরিণত করে ভাসানী অবশ্যই তার বিরোধী হবেন। হয়েছেনও তাই। ধর্ম নিরপেক্ষতা কিম্বা ইসলামপন্থা – এই প্রকার বিভাজন বা বাইনারি আগাম অনুমান করে ভাসানীর ওপর খাটাতে গেলে সেটা ছায়াকে ছুরি দিয়ে দুই ভাগ করে কাটার মতো হাস্যকর কাণ্ড হয়ে পড়ে। ভাসানী সম্পর্কে যে সকল লেখালিখি পড়ি তাদের গুরুগম্ভীর পাণ্ডিত্য তাই অধিকাংশ সময় ভাসানীকে বোঝার চেয়ে তিনি কোন পক্ষে তা নিয়েই যারপরনাই চিন্তিত থাকতে দেখা যায়।
ষাট দশকে তাঁর নেতৃত্বে উপমহাদেশের ইতিহাস কিভাবে বদলে গিয়েছে আমরা তা প্রত্যক্ষ করেছি। তাঁর বিদ্রোহের ধরণ ও গণ আন্দোলনে বৈপ্লবিক ভূমিকা ইতিহাসকে কান ধরে কিভাবে ওঠাতে বসাতে পারে, সেটাও আমরা দেখেছি। ফলে মওলানা আমাদের মগজে ও রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন। যারা সেই উত্থান ও গণশক্তির গর্জন যারা দেখে নি তাদের এখন ব্যাখ্যা করে বোঝানো মুশকিল। তবে তাঁর কাছ থেকে আমরা কি শিখেছি সেটা ব্যাখ্যা করে বলার চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন, মওলানা শিখিয়েছেন, ইতিহাসের একটা নৈর্ব্যক্তিক চরিত্র আছে তা সত্য, মানুষের ইচ্ছা ও অনিচ্ছা দ্বারা তার গতিপথ পরিবর্তন কঠিন। কিন্তু ইতিহাস সবসময়ই একটা সম্ভাবনাও বটে, সেই সম্ভাবনাকে শনাক্ত করতে পারা এবং বিশেষ দেশকালে ইতিহাস নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে তাকে বাস্তবায়িত করতে পারা না পারা মানুষের ইচ্ছাধীন। রাজনীতি হচ্ছে ইতিহাসের সম্ভাবনাকে বাস্তিবায়িত করা। পাকিস্তান আন্দোলনে ভাসানী সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সেই আন্দোলনের সফলতার মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক আমলের জমিদারী ও মহাজনী প্রথা থেকে কৃষকের মুক্তি দেখেছেন এবং তা অর্জনও করেছেন। আবার সেই একই মানুষ মাত্র এক দশকের মধ্যে বাংলাভাষীদের ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বায়ত্ব শাসনের দাবির মধ্য দিয়ে বিশ্বে নতুন এক রাজনৈতিক জনগোষ্ঠির আবির্ভাবের সম্ভাবনা দেখতেও ভুল করেন নি। এই ক্ষেত্রেও দেখা যায় তিনি তা আদায় করে ছেড়েছেন। এই ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ। কেচ্ছা গেয়ে লাভ নাই, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হোত না।
মুজিবকে কারাগার থেকে বের করেন ভাসানী
যাঁরা শেখ মুজিবকে ভালবাসেন তাঁরা আমার কথায় গোস্বা করতে পারেন, কিন্তু শেখ মুজিব তাঁর ভুমিকা রেখেছেন, তার জন্য তাঁর মর্যাদা তাঁকে দিতে হবে। কিন্তু শেখ মুজিব ভাসানী নন। শেখ মুজিব আমাদের যা দেবার তা দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে শেখ মুজিবের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু শেখ মুজিব আমাদের বাকশাল ও সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদও দিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের পরিবর্তে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের চার নীতি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে গেছেন। পনেরো সংশোধনীর পরে তা এখন এক কিম্ভূত রূপ পরিগ্রহণ করেছে। ভাসানী ইতিহাসের বিভিন্ন মুহূর্তের সম্ভাবনার সুযোগটুকু যেমন গ্রহণ করেছেন, তেমনি তার সীমা সম্পর্কেও হুঁশিয়ার ছিলেন। তিনি জাতীয় মুক্তি আন্দোলন সমর্থন করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের আবির্ভাবের সম্ভাবনা বুঝতে ভুল করেন নি। সেই সম্ভাবনার বাস্তবায়নের জন্য জান পরান লড়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নেবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। বুঝেছিলেন নিজের ভাষা থেকে একটি জনগোষ্ঠিকে বঞ্চিত করা তাকে হত্যার শামিল। কিন্তু তিনি জাতীয়তাবাদী ছিলেন না। যেহেতু কমিউনিস্টদের সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণির রাজনীতি করতেন তাই আন্তর্জাতিকতায় আস্থা ছিল, সংকীর্ণ জাতিবাদে নয়। অন্যদিকে ইসলামের সঙ্গে জাতিবাদের বিরোধ সম্পর্কেও সচেতন ছিলেন। তিনি একটি শক্তিশালী জনগোষ্ঠির স্বপ্ন দেখেছিলেন যারা হীন হবে না কিম্বা জাতিবাদী সংকীর্ণতায় ভুগবে না। বরং নিজদের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সারাৎসার নিয়ে বিশ্বসভায় নতুন বিশ্ব গড়বার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। শেখ মুজিব জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ। কিন্তু মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আন্তর্জাতিক। তাঁর মর্ম এখন ধীরে ধীরে আরও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। দিন দিন আরও স্পষ্ট হবে।
গত হপ্তাখানেক ধরে বারবার একটি কথাই মনে পড়ছে। শেখ মুজিব আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে; বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র আর দেশদ্রোহিতার অপরাধে পাকিস্তানী শাসকরা তাকে ফাঁসিতে ঝোলাবার চেষ্টা চালাচ্ছে। ভাবুন একবার, তখন মওলানা যদি রাজপথে দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তুলবার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব না দিতেন এবং গণ অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবকে কার্যত ফাঁসির রজ্জু থেকে নামিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত করে না আনতেন তাহলে আজ কোথায় থাকত বাংলাদেশ? আফসোস, গণতন্ত্রের মানস কন্যা শেখ হাসিনা পাঠ্যপুস্তক থেকে এই মওলানা ভাসানীরই জীবন কাহিনী বাদ দিয়েছেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে মওলানা ভাসানীকে বাদ দেওয়া – এমনকি বাদ দেবার চিন্তা করাও বাংলাদেশের জনগণকে চরম ভাবে অপমান করা ছাড়া আর কিছু নয়। জাতীয় সংসদের শিক্ষা সংক্রান্ত কমিটির পরামর্শ উপেক্ষা করে এই কাজটি হয়েছে। ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ পত্রিকা শিক্ষা বোর্ডের সেক্রেটারি বিজয় গোপাল ভৌমিক ও চেয়ারম্যান শফিকুর রহমানকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে ভাল কোন উত্তর পায় নি। তারা দাবি করেছেন এই নির্দেশ ওপর থেকে দেওয়া। জাতিবাদী চিন্তার অসুখগুলো এভাবেই ধরা পড়ে।
আসলে ক্ষমতার দম্ভ নতুন কিছু নয়, কিন্তু দম্ভের অক্ষর দিয়ে ইতিহাস লিখিত হয় না। মানুষের স্মৃতি ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে বৃহৎ মানুষগুলোর পায়ের চিহ্ন পড়ে থাকে, তরুণ বিপ্লবীরা সেই চিহ্ন পড়তে জানে এবং ইতিহাস নতুন করে লিখবার হিম্মতও তারা অর্জন করে। তাই অনায়াসে বলা যায় ইতিহাস অনেককেই ম্লান করে দেবে, কিন্তু মওলানা দাপটের সঙ্গেই ফিরে আসবেন, এই দেশের গণমানুষের চেতনা, বিশেষত মজলুমের জগতে তিনিই বাদশাহ। এ এমন এক বাদশাহী যেখান থেকে কাউকে অভ্যূত্থান ঘটিয়ে হটানো যায় না। বিকৃত ইতিহাস লিখে তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলাও অসম্ভব। হাওয়া থেকে বাংলাদেশের জন হয় নি। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সরানো কঠিন। তিনি দিন দিন উজ্জ্বল হতে থাকবেন। জাতিবাদীদের দিন শেষ হয়ে গিয়েছে, আগামি দিন বিশ্ব সভায় নেতৃত্ব দেবার কাল। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রত্যাবর্তন করবেন আরও বড় ক্যানভাসে, আরও বিশাল চিন্তাস্রোতের প্রেরণা হয়ে উঠবার সকল শর্ত তাঁর ক্ষেত্রে হাজির রয়েছে দেখা যায়।
দাপটের সঙ্গে মওলানার প্রত্যাবর্তন
মওলানা দাপটের সঙ্গে কেন প্রত্যাবর্তন করবেন সেটা বিস্তৃত ভাবে ব্যাখার দরকার রয়েছে। আজ শুধু দুই একটি ইঙ্গিত দিয়ে শেষ করব।
সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার প্রধান দ্বন্দ্ব আজ পাশ্চাত্য বনাম ইসলামের দ্বন্দ্ব হিসাবে হাজির হয়েছে। বিশ্ব ইতিহাসকে এই দ্বন্দ্বের মীমাংসা করেই অগ্রস্রর হতে হবে। পাশ্চাত্য এই দ্বন্দ্বের মীমাংসা সামরিক ভাবে করতে চাইছে। সমাধান খুঁজছে যুদ্ধে, বোমা মেরে প্রতিপক্ষকে হত্যা করে। অথচ এর সমাধান কক্ষনোই সামরিক ভাবে সম্ভব নয়। এর মতাদর্শিক দিক যেমন আছে, ঠিক তেমনি এর দ্বন্দ্বের গোড়ায় রয়েছে শ্রেণীর প্রশ্ন। মতাদর্শিক দিক হচ্ছে আধুনিকতা মানুষকে মুক্তি, উন্নতি ও শান্তির যে প্রতিশ্রুতি এতোকাল দিয়ে এসেছিলো সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারে নি। চতুর্দিকে সেই ব্যর্থতা প্রকট রূপ ধারণ করছে। যক্ষার মতো ক্ষয়ে যাওয়া তথাকথিত 'আধুনিকতা' ও 'প্রগতি'র মুখস্থ আদর্শ এখন বয়ে বেড়ানোর কোন যুক্তি নাই। সব কিছুকেই মানুষ নতুন ভাবে পর্যালোচনা ও পরখ করে দেখছে। আহাম্মক বা গর্দভ না হলে পুরানা ‘মতবাদ’-এর বস্তা সক্রিয় ও সজীব কোন চিন্তাশীল তরুণ আর বইতে নারাজ। তরুণরা আর মুখস্থ বিদ্যায় সন্তুষ্ট নয়, ভবিষ্যতে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে চায়। মানুষ তাই নতুন ভাবে ভাবছে, ভাবতে বাধ্য হচ্ছে। কেন্দ্রীভূত যে আধুনিক রাষ্ট্র সমাজের টুঁটির ওপর পরগাছা হিসাবে শোষণ ও লুন্ঠনের হাতিয়ার হিসাবে টিকে রয়েছে তার বিলয় ঘটিয়ে সমাজকে নতুন নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবার তাগিদ বিশ্বব্যাপী বেড়েছে। নতুন বিপ্লবী চিন্তাকে তা আমলে নিতে হচ্ছে। শ্রমিক শ্রেণির নামে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা সম্পন্ন তথাকথিত ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ যে সমাধান নয় এ নিয়ে এখন বিতর্ক খুব কম। স্টালিনের জন্য মায়া থাকা অন্যায় কিছু না, কিন্তু স্টালিনবাদের যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নামে যে সকল রাষ্ট্র ঐতিহাসিক ভাবে আমরা দেখেছি তারা আসলে আধুনিক রাষ্ট্রেরই প্রতিচ্ছবি ছিল। কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা সম্পন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থার তত্ত্ব মাথায় রেখে এবং তাকেই বিপ্লবের নামে পুনরায় নির্মাণ করে সমাজকে নতুন ভাবে সাজাবার কথা চিন্তা করা চিন্তার পশ্চাতপদতা মাত্র। ইতিহাস থেকে অভিজ্ঞতা নিতে না শেখার জন্যই চিন্তার এই দুর্দশা ঘটে।
এই ক্ষেত্রে মওলান আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অসাধারণ। অবাক যে তিনি নতুন ধরণের রাষ্ট্রের কথা ভেবেছেন। একে রাষ্ট্র না বলে এক ধরণের সমাজ পরিচালনা ব্যবস্থা বলা যায়। তাঁর ভাষায় এর নাম হচ্ছে ‘হুকুমতে রব্বানিয়া’। এর আদর্শ হচ্ছে ‘রবুবিয়াত’ বা পালনবাদ। অর্থাৎ এই ব্যবস্থার চরিত্র হবে লালন পালনের। পশু পাখী জীব জন্তু মানুষ সহ সকল জীব অণুজীবকে আল্লাহ যেভাবে পরম মমতায় লালন পালন করেন নতুন সমাজ পরিচালনা ব্যবস্থার নীতিও হবে সেই প্রকার পালনবাদ। আল্লা শুধু ‘প্রভু’ নন, তিনি পালনকর্তাও বটে। তাহলে নতুন ধরণের সমাজ পরিচালনা ব্যবস্থা আল্লার সন্তুষ্টির জন্য আল্লার লালন পালন গুণাবলীরই চর্চা করবে। তিনি ইসলামের মর্ম থেকে যে রাজনৈতিক আদর্শের প্রস্তাব করেছেন তার পেছনে অনুমান হচ্ছে তাঁর ভাষায় ‘শাসনবাদী’ বা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট ব্যবস্থার ধারণার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। ‘শাসনবাদ’-এর বিপরীতে ‘পালনবাদ’-এর প্রস্তাব চিন্তা ও রাজনীতির জগতে রীতিমতো বৈপ্লবিক ঘটনা।
ভাসানী জনগণকে স্বপ্ন দেখাতে চান। তিনি গণমানুষের নেতা, মানুষ নিয়েই তার কারবার। স্বপ্ন দেখেছেন মানুষ সহ আল্লার সৃষ্টি সকল পশু পাখি জীব জন্তু জীব অণুজীবকে পালন করবার ব্যবস্থা কী হতে পারে? এই প্রশ্নটি তোলাই হচ্ছে একালে দুর্ধর্ষ ব্যাপার ও দুর্দান্ত প্রশ্ন। মানুষ এই স্বপ্ন দেখতে শিখলে কিভাবে তা বাস্তবায়ন করবে তার নীতি ও কৌশল জনগণই নির্ণয় করতে পারবে। এই বিষয়ে তিনি বলেছেন অনেক, কিন্তু তাঁকে নিয়ে সত্যিকারের গবেষণা হয় নি বলে তাঁর চিন্তার এই সকল বৈপ্লবিক দিকগুলোর হদিস পেতে আমাদের অনেক সময় লেগে গিয়েছে। যারা আগ্রহী তারা এদিকে ওদিকে ছিটিয়ে থাকা লেখা পড়তে পারেন। তাঁর ‘রবুবিয়তের ভুমিকা’, ‘তোমরা রব্বানি হইয়া যাও’ এবং ‘অহিংসা ও বিপ্লব’ ইত্যাদি তরুণ বিপ্লবীদের অবশ্যই পাঠ্য হওয়া উচিত।
পাকিস্তান আন্দোলনেও তিনি এভাবেই স্বপ্ন দেখিয়েছেন, একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপ্নও মওলানাই আমাদের দেখিয়েছেন। নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে পালনবাদের আদর্শ বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও তিনি দেখেছিলেন। এই ক্ষেত্রেও তাঁর অন্যথা হবার কথা ছিল না। কিন্তু আয়ু তাঁকে সেই সুযোগ দেয় নি। চিন্তার দিক থেকে ভাসানী কতো অগ্রসর ছিলেন সেটা সহজেই আজ প্যারিসে কার্বন নিঃসরণ কমাবার জন্য জলবায়ু সম্মেলনের কথা মনে রাখলে বোঝা যাবে। এই লেখাটি যখন লিখছি তখন যদি মনে রাখি পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র বিধ্বংসী আধুনিক জীবাশ্ম সভ্যতার পরিণতি সম্পর্কে মওলানা ভাসানী পাক্কা ওয়াকিভাল ছিলেন। শুধু তাই নয়, এর রাজনৈতিক সমাধান চাইলে শাসনবাদী রাষ্ট্রের পরিবর্তে পালনবাদী সামাজিক ব্যবস্থাপনার কথা নিয়ে ভাবতে হবে এই দুর্দান্ত সহজ সত্য কথা কতো অনায়াসেই না তিনি বলে গিয়েছেন। বিস্মিত হতে হয়, কিভাবে সাধারণ মানুষকে বোঝানোর মতো করে তিনি ভাষা, চিন্তা, কল্পনা ও সংকল্পের বয়ান বুনতে পারতেন। আধুনিক কালের সংকট মীমাংসার জন্যই তাঁর এই প্রস্তাব ইয়ে যতো ভাবি ততোই বুঝতে পারি সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্য শাসনবাদ চাই না, পালনবাদ চাই -- এর চেয়ে সহজ বয়ান আমাদের এই কালে আর হাতে নাই। যুদ্ধ বলি, সংগ্রাম বলি একালের ইতিহাস আধুনিকতা, জীবাশ্মভিত্তিক সভ্যতা ও মানুষকে উৎখাত করে টেকনলজির সাম্রাজ্য কায়েমের ধ্বংসাত্মক বিপদ মীমাংসার তাগিদ থেকেই নিজের অভিমুখ নির্ণয় করবে। যে কারণে বলছি বাঙলাদেশে জাতিবাদীদের যুগ শেষ হয়ে গেলেও ভাসানী যুগ সবে শুরু হয়েছে। পাশ্চাত্যের সঙ্গে পাশ্চাত্য শক্তির দ্বন্দ্ব থেকে আমরা তা অনুমান করতে পারি। ভাসানীর যুগকে শনাক্ত করতে শেখার অর্থ হচ্ছে বিশ্ব সভায় বাংলাদেশের তরুণদের নেতৃত্ব দেবার ক্ষেত্রটিকে চিহ্নিত করতে শেখা।
বলা বাহুল্য, এই দ্বন্দ্বের গোড়ায় শ্রেণির প্রশ্ন রয়েছে, যদি আমরা তা মনে রাখি তাহলে আমরা বুঝব মওলানা ভাসানী শ্রেণি প্রশ্ন থেকে এক চুলও সরে আসেন নি। যারা বলেন ভাসানী শেষ বয়সে ইসলামী হয়ে গিয়েছেন, তাদের ধারণা ভাসানীকে পাশ্চাত্যের ভাষায় কথা বলতে হবে; কার্ল মার্কস, লেনিন বা মাওজে দং –এর ভাষায় কথা না বললে তাঁর কমিউনিজম ছহি হবে না। সত্য হচ্ছে এই যে এ যাবতকাল কমিউনিজম নামে যা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়েছে। অতএব ভাসানীকে প্রকার প্রাচীন অর্থে কমিউনিস্ট হবার কোন ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা আর নাই। অনেক আগেই তার ভূমিকা ফুরিয়েছে। কমিউনিস্টদের যে কারণে ভাসানী শেষ জীবনে বিপ্লবের প্রতিবন্ধক মনে করেছেন, বন্ধু মনে করেন নি।
ভাসানীকে ভাসানীর বয়ানেই আমাদের বুঝতে হবে। এবং তাঁর রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু শ্রেণি সংগ্রাম – জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের নিরাপোষ লড়াই -- এব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নাই। ইসলামকে শোষক শ্রেণির ভাড়া খাটবার সুবিধা করে দেবার জন্য বৈপ্লবিক ইসলামকে তার ইমান আকিদা ত্যাগ করতে হবে এর চেয়ে চরম মূর্খতা আর কিছু হতে পারে না। শ্রেণি রাজনীতিকে নাস্তিক্যবাদিতায় পর্যবসিত করারা অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বিশ্বাস, ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকে উৎখাত করা এবং পাশ্চাত্য চিন্তা ও মতাদর্শের অধীনস্থ করবার শর্ত তৈরি করা। পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বাস্তবতার ভিন্ন; ভিন্ন অবস্থা থেকে পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে ভ্লড়াইয়ের বয়ান, নীতি ও কৌশলও আলাদা হতে আধ্য – ভাসানী এই দিকটাই আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। এই সকল বিষয়ে চরম মূর্খতার কারণে অনেককেই ভাসানী সম্পর্ক নানান কথা বলতে শুনি। কেউ তাঁকে ‘লাল’ আর কেউ তাঁকে ‘সবুজ’ বানিয়ে আনন্দ লাভ করে। তিনি দুটোই। সারা বিশ্বে তিনিই একমাত্র মানুষ যার মধ্যে কার্ল মার্কস ও ‘পালনবাদী’ ইসলাম – বিপ্লব ও রবুবিয়াত -- এক বিন্দুতে এসে মিশেছে। এই এক দুর্দান্ত ঘটনা। তাঁকে ছাড়া বিশ্বের চলবে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের দুই পক্ষই দাবি করছে পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে ইসলাম মিশ খাবে না। তেলেজলে মিলবেনা। ভাসানীর কাছে এটা ইসলাম বনাম পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্ব নয় – এটা জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ আর ইসলাম এই শ্রেণি যুদ্ধে অবশ্যই ভূমিকা রাখবে। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবার এটাই পথ। কারন মানবেতিহাস ও মানুষের সভ্যতা একটাই – সেটা দুইটা হতে পারে না। জালিমের সভ্যতা এবং তার কঠিন বিশ্বব্যবস্থার পতন ঘটবে। অবশ্যই। আর বিশ্ব মজলুম বর্তমান জালিম ব্যবস্থার ধ্বংসস্তুপের ওপর মানুষের বিজয় পতাকা উড়িয়ে দেবে।
স্পষ্ট যে তাঁর দূরদৃষ্টি অসাধারণ। হতে পারে তিনি তাঁর চিন্তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেন নি। তিনি তত্ত্ববাগীশ ছিলেন না। কিন্তু তরুণ বিপ্লবীরা তাঁর ভাষা দ্রুতই বুঝতে সক্ষম হবে। আজ তাঁর জন্মদিনে এই কথা বলে শেষ করি:
আমাদের আবদুল হামিদ খান ভাসানী আছেন, আমাদের কোন ভয় নাই।
১১ ডিসেম্বর ২০১৫। ২৭ অগ্রহায়ন ১৪২২। শ্যামলী।