- মনসান্তোর জিএমও কারসাজি
- আমাদের এখনকার সংকট
- আওয়ামি লিগের ইতিহাসও পারিবারিক ইতিহাসে পর্যবসিত হয়েছে...
- বাংলাদেশে 'নিউকনি' সিপাই
- রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চ আদালত নিয়ে রাজনীতি
- রোকেয়া পাঠের স্থান কাল পাত্র
- গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য
- মোদীর ভারত এবং বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য বদল
- দেখলেই গুলি?
- আদালতের কর্তৃত্ব ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
ভাসানী, রবুবিয়াত ও নতুন বিপ্লবী রাজনীতি
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে বাংলাদেশের উদয়, বেড়ে ওঠার ইতিহাস এবং উপমহাদেশের জনগনের লড়াই সংগ্রাম থেকে যেভাবে মুছে ফেলা হয়েছে সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির পুনর্গঠনের প্রশ্ন মওলানা ভাসানীকে নতুন ভাবে জানা, পড়া ও চর্চায় নিয়ে যাবার ওপর নির্ভরশীল। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে মওলানা ভাসানী সম্পর্কে লেখাগুলোর পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গঠনের গলদ, গণতন্ত্র ও এখনকার কর্তব্য
বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন ও বিচারব্যবস্থার গোড়ার গলদ হচ্ছে শুরু থেকে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও গঠন করা যায় নি। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু ও সংঘটিত হয়েছিল একাত্তরের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে -- যার ঘোষিত ও লিখিত মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বা ইনসাফ কায়েম ও চর্চার উপযোগী গণমানুষের রাষ্ট্র গড়ে তোলা। কিন্তু ডান কি বাম প্রতিটি রাজনৈতিক দল বা ধারা মুক্তিযুদ্ধ ও গণমানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গণশক্তির বিকাশ ও বিজয় ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক বিপ্লবই অসমাপ্ত যুদ্ধ সম্পন্ন করতে পারে, এটাই এখনকার রাজনৈতিক কাজ। এদেশের সকল মানুষের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, লোকায়ত জ্ঞান ও ভাবুকতা সবই রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে গড়ে ওঠার আন্তরিক ও ঐতিহাসিক উপাদান। কিন্তু গণ ঐক্য ও গণশক্তি বিকাশ বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা ধর্মের নামে, ধর্ম বিরোধিতার নামে কিম্বা বাস্তবতা বিবর্জিত নানান আসামানি মতাদর্শের দোহাই দিয়ে জনগণকে বিভক্ত ও আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন ও কর্তব্য পূরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে তারাই -- ডান কিম্বা বাম -- জনগণের শত্রু।
- চতুর্থ সংশোধনীতে হারানো ক্ষমতা সামরিক আইনে ফিরে পাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে আদালত
- আইনের শাসনের তামাশা ও বাকশাল ‘দর্শনের’ জের
- আদালত অবমাননার বিচার ও দণ্ড প্রসঙ্গ
- ‘কমিউনিস্ট’দের রিমান্ড সমস্যা
- হাসিনার কনস্টিটিউশন সংশোধন: আসলে কি হতে যাচ্ছে?
- সংজ্ঞাহীন অবারিত এখতিয়ার বন্ধ হবে কবে?
- ছয় বছরেও চূড়ান্ত হয় নাই আদালত অবমাননা আইন
বাংলার ভাবসম্পদ
লালন ও ভাবান্দোলন
চিনিয়ে দেওয়া, ধরিয়ে দেওয়া
কয়লা নীতি সম্পর্কে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিবৃতি
'কয়লা নীতি নিয়ে কিছু কথা' - এই শিরোনামে প্রফেসর নুরুল ইসলাম সম্প্রতি কয়লা নীতি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তুব্য করেছেন [১] । তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ; তিনি আব্দুল মতিন পাটোয়ারী খসড়া কয়লা নীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য।
তাঁর বক্তব্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে আমরা যেভাবে বুঝেছি তা এখানে তুলে ধরছিঃ
একঃ আইআইএফসি নামের একটা প্রতিষ্ঠানকে কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দ্রুত কয়লা নীতি করা হয়েছে। ফলে এই নীতির জন্মই হয়েছে সন্দেহ নিয়ে।একটি সার্বভৌম দেশের জাতীয় নীতি বানালো ভাড়াটিয়া কন্সাল্টেন্ট, এই চর্চাটাই অশুভ।
দুইঃ এই নীতির ১ম সংস্করণ (১ ডিসেম্বর ২০০৫) এবং ২য় সংস্করণ (২৩ জানুয়ারি, ২০০৬) লিখে দেয়া হলো যে ২০১১ সালে বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনির ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা তোলা বন্ধ করা হবে। বলা হোল বড়পুকুরিয়া খনি থেকে ভারতের টাটা কোম্পানি ২০১০ সাল থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলব এবং এশিয়া এনার্জি ২০০৮ সাল থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লা খনি থেকে কয়লা তুলবে। নীতিটাই মনে হয়েছে টাটা এবং এশিয়ান এনার্জিকে খোলা পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পূর্বানুমতি। বহুজাতিক কম্পান্র স্বার্থ রক্ষার নীতি। জাতীয় স্বারথ বিরোধী এই নীতির বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের প্রথম দিকে বিভিন্ন সেমিনারে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা এবং বহুজাতিক কম্পানির হাতে জ্বালানি সম্পদ তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়।
তিনঃ পরবর্তীতে আইআইএফসি অতি দ্রুততার সঙ্গে কয়লা নীতির ৩য় সংস্করণ (১২ মার্চ, ২০০৬), ৪র্থ সংস্করণ (৪ এপ্রিল, ২০০৬) এবং ৫ম সংস্করণ (৩০ মে, ২০০৬) প্রণয়ন করে। বিদেশি প্রাইভেট সেক্টর, অর্থাৎ বহুজাতিক কম্পানির হাতে জ্বালানি সম্পদ তুলে দেবার নীতিই মুলত গৃহিত হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে কয়লা উত্তোলন এবং অবাধ রপ্তানির সুযোগ প্রদান করে আইআইএফসি কয়লা নীতির খসড়া প্রণয়ন করে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ৩০ মে ২০০৬-এ আইআইএফসি কর্তৃক প্রণীত খসড়া কোল পলিসির ৫ম সংস্করণ অনুমোদনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরণ করে।
চারঃ ১ আগস্ট, ২০০৬-এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিসের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নুরুল ইসলামের অফিসে এসে খসড়া কয়লা নীতির ৫ম সংস্করণের ওপর মতামত দিতে অনুরোধ করেন।অধ্যাপক নভ্রুল ইসলাম চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানাতে বললে উক্ত কর্মকর্তা বলেন বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি এবং চিঠি দেয়ায় একটু অসুবিধা আছে। ব্যক্তিগতভাবে কর্মকর্তা এসেছেন এটাই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝায়। তিনি তখন তাকে তার অফিসে ফিরে গিয়ে তার বসের মাধ্যমে ফোনে বুয়েটের উপাচার্যকে অনুরোধ করলে কাজটি করে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। তখন উক্ত কর্মকর্তা তাই করলেন। বিকেলে উপাচার্য ফোনে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে কাছে কেউ এসেছে কিনা খোঁজ নেন এবং তাঁকে কাজতি করে দিতে বলায় কাজটি করে দেন।
পাঁচঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে পাওয়া ২৯ পাতার খসড়া কয়লা নীতি লাইন বাই লাইন পড়ে টেকসইভাবে দেশের কয়লা উন্নয়নে সহায়তার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে আধ্যাপক নুরুল ইস্লামের লিখিত মতামত ৯ আগস্ট, ২০০৬-এ প্রধানমন্ত্রীর অফিসে পাঠানো হয়। কয়েকটি উলেখযোগ্য মতামত ও সুপারিশ ছিল নিম্নরূপ।
ক - দেশের জ্বালানি চাহিদা নিরূপণ না করে অবাধ কয়লা রপ্তানির সুযোগ প্রদান করা হলে জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। খসড়া কয়লা নীতিতে বিদেশি কোম্পানিকে কয়লা উত্তোলনের আগাম অনুমতির ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
খ - জাতীয় জ্বালানি নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কয়লা নীতি প্রণয়ন করা উচিত।
গ - পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের দুর্বলতার সুযোগে বিশ্বব্যাংকের ইকুইটেলিয়াল প্রিন্সিপাল অনুসারে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করা হলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে।
ঘ - পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে খনি উন্নয়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি প্রাক খনন অবস্থায় পুনরুদ্ধারের পর ফসলের উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করে উক্ত ভূমি পূর্বের মালিকদের কাছে ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা রাখা উচিত। ভারতের কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের অনুরূপ 'কোল বাংলা' নামে সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব প্রদান করা উচিত।
ছয়ঃ প্রধানমন্ত্রীর অফিস প্রফেসর নুরুল ইসলামের মন্তব্য অনুসারে কয়লা পলিসির খসড়াটি যথাযথ সংশোধন করার জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করে। তখন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে সংবাদ মাধ্যমে বলা হলো যে তারা প্রফেসর ইসলামের মতামত অনুসারে কেন সংশোধন করবে? জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ নিজস্ব উদ্যোগে মার্চ, ২০০৭ তারিখে কোল পলিসির ষষ্ঠ সংস্করণ প্রণয়ন করে। যে সংস্করণে কয়লার ভবিষ্যৎ চাহিদা সম্বন্ধে কোনো উপাত্ত ছিল না। পরবর্তীতে কয়লা নীতি সংশোধিত খসড়া প্রণয়নের জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। উক্ত কমিটি প্রধানমন্ত্রীর অফিসের নির্দেশ অনুসারে প্রফেসর ইসলামের মতামত পর্যালোচনা শুরু করে।
সাতঃ এ পর্যায়ে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম আন-অফিসিয়ালি নতুন কমিটিকে তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করার আগ্রহ জানাই। এ প্রসঙ্গে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান আপডেট-২০০৬ অনুসারে ২০২৫ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে কি পরিমাণ কয়লা প্রয়োজন হবে তার হিসাবের ছক সরবরাহ করি। কয়লা পলিসি প্রণয়নে প্রথমবারের মতো কয়লার ভবিষ্যৎ চাহিদা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জুন, ২০০৭ সময়ে খসড়া কয়লা নীতির ৭ম সংস্করণ প্রণয়ন করে। এবং প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে।
আটঃ গত দুবছরে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ কর্তৃক খসড়া কয়লা নীতির ১ম থেকে ৭ম সংস্করণ পর্যন্ত প্রণয়নের বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সমালোচনা প্রেক্ষিতে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে তৎকালীন জ্বালানি উপদেষ্টা জনাব তপন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মতিন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন। উক্ত কমিটিতে পরবর্তীতে প্রফেসর ইসলাম এবং জনাব মোঃ এহসান উল্লাকে সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করা হয়। প্রফেসর পাটওয়ারী কমিটিতে কাজ করার সময় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বদরুল ইমাম অক্টোবর, ২০০৭ কলকাতায় সার্ক আয়োজিত একটি কয়লা সম্বন্ধীয় কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এবং এ বিষয়ে ২৭ অক্টোবর, ২০০৭ তারিখে কমিটির সভায় একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কয়লা উন্নয়ন সম্বন্ধে নীতি প্রণয়নে অনেক সহায়তা হয়েছে।
নয়ঃ ভারতের ২০০ বছরের কয়লা উত্তোলনের অভিজ্ঞতার আলোকে ভারত আইন করে ১৯৭৩ সাল থেকে কয়লা উন্নয়ন ও উত্তোলন সম্বন্ধীয় সকল কার্যক্রম জাতীয়করণ করে এবং পাবলিক সেক্টর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা করে। ভারতের ৯৫ শতাংশ কয়লা পাবলিক সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং ৫ শতাংশ প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহ উত্তোলন করে। প্রাইভেট সেক্টরের কার্যক্রম শুধু ক্যাপটিভ মাইনের জন্য সীমিত। ভারতে টাটার ব্যবস্থাপনায় যে কয়লা খনি আছে সে কয়লা টাটার স্টিল কারখানায় ব্যবহৃত হয়। বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশে যত কমিটিই করেন না কেন সেখানে বিদেশি তেল-গ্যাস ও কয়লা কোম্পানির স্বার্থ দেখার জন্য তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি থাকবেই। কোল পলিসি কমিটিতেও ছিল। ধ্যাপক নুরিল ইস্লামের নেতৃত্বে এশিয়া এনার্জির প্রস্তাব মূল্যায়নের কমিটিতেও ছিল। তারা নোট-অব-ডিসেন্ট দিয়ে বিদেশি কোম্পানির পে কমিটির সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেছে। এসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে দেশের স্বার্থে কমিটির কার্যক্রম সম্পন্ন করা খুবই চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। কমিটির সুপারিশে বলা হয় যে আইনগত, প্রযুক্তিগত, পরিবেশগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি দুর্বলতার কারণে এশিয়া এনার্জির দাখিলকৃত প্রকল্পটি গ্রহণযোগ্য নয়। এশিয়া এনার্জির প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটিতে মোট ১২ জন সদস্যের মধ্যে মোট ৪ জন সব সুপারিশ সম্বন্ধে সম্মতি প্রদান করেছেন। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে প্রথমবার ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৬-এ এবং দ্বিতীয় বার ২৩ ফেব্র“য়ারি, ২০০৯-এ এশিয়া এনার্জি কর্পোরেশন কর্তৃক দাখিলকৃত ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের ফিজিবিলিটি রিপোর্ট মূল্যায়নের জন্য সরকার কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়নি। এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি বাংলাদেশের কয়লা নীতি প্রণয়নকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে।
দশঃ প্রফেসর পাটওয়ারীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি জুন ২০০৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৭ পর্যন্ত মোট ১৯টি উন্মুক্ত সভায় আলোচনার মাধ্যমে খসড়া কয়লা নীতির ৮ম সংস্করণ প্রণয়ন করে জানুয়ারি, ২০০৮ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে দাখিল করে। ইতোমধ্যে জনাব তপন চৌধুরী জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে পদ ত্যাগ করেন। প্রফেসর পাটওয়ারীর কমিটির খসড়া কয়লা নীতির প্রধান কয়েকটি সুপারিশ ছিল নিম্নরূপ
(১) কয়লা নীতি, জাতীয় জ্বালানি নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে,
(২) পাবলিক সেক্টর প্রতিষ্ঠান ‘কোল বাংলা’ কয়লা উত্তোলনের সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজন হলে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জয়েনভেঞ্চার করা যাবে,
(৩) দেশে বর্তমানে আবিষ্কৃত কয়লা ক্ষেত্রসমূহ থেকে উত্তোলিত কয়লা রপ্তানির কোনো সুযোগ নেই,
(৪) দেশের আগামী ৫০ বছরের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কয়লা রপ্তানির বিষয় বিবেচনা করা যাবে,
(৫) দেশের কয়লার চাহিদার সঙ্গে সমতা রেখে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে,
(৬) খনি উন্নয়নকারীকে খনি মুখে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে,
(৭) কয়লা উত্তোলনের জন্য পরিবেশগত আইন, বিধি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে,
(৮) খনি উন্নয়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসীদেরকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে,
(৯) কয়লা উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমিসমূহ পুনরুদ্ধার করে উৎপাদনের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে এনে ভূমির মূল মালিকদের কাছে ফেরৎ দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে
(১০) কোল পলিসিতে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসারে বাস্তবসম্মত কয়লার রয়্যালটির হার নির্ধারণ করতে হবে,
(১১) সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা চলবে,
(১২) বাংলাদেশের খনি অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাইড্রো-জিওলজিক্যাল অবস্থার কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তর দিকে পরীামূলকভাবে একটি উন্মুক্ত কয়লার খনি বাস্তবায়ন করা যাবে। সন্তোষজনকভাবে উক্ত প্রকল্প বাস্তাবয়ন করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন করা যাবে।
এগারঃ পরবর্তীতে প্রফেসর তামিম দায়িত্ব নেয়ার পর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ খসড়া কয়লা নীতির ৮ম সংস্করণ পুনরায় সংশোধন করে ৯ম সংস্করণ প্রণয়ন করে কেবিনেটের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে। উক্ত সংশোধনীতে যে বিষয়গুলো পরিবর্তন করা হয় তা হলো
(ক) পুনরুদ্ধারকৃত ভূমি মূল মালিকদের কাছে ফেরত না দেয়া,
(খ) পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়গুলো মূল নীতি থেকে স্থানান্তরিত করে গুরুত্বহীন করার উদ্যোগ নেয়া,
(গ) ভবিষ্যতে রয়্যালটি নির্ধারণের জন্য পদ্ধতি বাদ দিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতির জন্য ৬ শতাংশ হারে এবং সুড়ঙ্গ পদ্ধতির জন্য ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা।
কয়লা নীতির এ উদ্দেশ্যমূলক পরিবর্তন সম্বন্ধে সংবাদপত্রে প্রতিবাদ ছাপা হয় (দৈনিক প্রথম আলো: ১৩ আগস্ট, ২০০৮)। সম্ভবত সে কারণে কেবিনেট উক্ত কোল পলিসির ৯ম সংস্করণ অনুমোদন করেনি। শোনা যায় যে, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ/ পেট্রোবাংলা ১৫ জুন ২০০৯ তারিখে যমুনা রিসোর্টে অনুষ্ঠিতব্য বিদেশে অবস্থনাকারী বিশেষজ্ঞদের এবং দেশীয় নীতি নির্ধারক ও বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে কোল পলিসির ৯ম সংস্করণ উপস্থাপন করেছে।
(১) দেখুন:http://www.somewhereinblog.net/blog/poruya/28972181
