তালেবান, স্বাস্থ্যকর্মী, গোয়েন্দা এজেন্ট ও জাতিসংঘ


তালেবান হামলায় স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু। প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধের গোয়েন্দা এজেন্ট হয়েই কি জাতিসংঘ নিজেকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে?

গত ১৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানের করাচী ও পেশোয়ারে ছয় জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে পাকিস্তানে এধরণের গুলিতে নিহত বা বোমা বিস্ফোরণ কিম্বা আত্মঘাতি বোমার আঘাতে হতাহত হওয়া প্রায় রুটিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সেই বিচারে ১৮ ডিসেম্বরের এই ঘটনা আলাদা বা নতুন কিছুনা। কেউ কেউ হয়ত বলবেন, সংখ্যার দিক থেকে এটা হতাহতের পরিসংখ্যানে সংখ্যা বৃদ্ধির বেশি কিছু নয়। কিন্তু একে আর দশটা রুটিন ঘটনার মতো করে দেখার বিপত্তি আছে। এই ছয় জন স্বাস্থ্যকর্মী হত্যার ঘটনায় চোখ ফেলার কারণ এখানে ভিন্ন। সে দৃষ্টিকোণের কেন্দ্রে আছে জাতিসংঘ ও জাতিসংঘের ভূমিকা। কিন্তু কোথায় এবং কিভাবে?

একথা বলবার অপেক্ষা রাখে না ২০০১ সালে আমেরিকায় বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে হামলার ঘটনা থেকে বিশ্ব-ইতিহাস নতুন যুগে, পুনরায় মুখ্য এক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে প্রবেশ করেছে। এই দ্বন্দ্বের বৈশিষ্ট্য গ্লোবাল হলেও বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমরা এটাকে পক্ষে অথবা বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বিভক্ত হয়েই দেখব। এটাই স্বাভাবিক। এর এক পক্ষে আছে আলকায়েদা বা যারা ইসলামিষ্ট রাজনৈতিক উত্থানকে ন্যায্য মনে করেন, আর অপর পক্ষে আছেন এতদিন একচ্ছত্র হয়ে যে সভ্যতার বয়ানে পশ্চি্মের কর্তৃত্বে ও আমেরিকান নেতৃত্ব আমরা আছি, ছিলাম এমন কাছে-দূরের সকলে। আমেরিকায় ঐ (৯/১১) হামলার ঘটনার পর প্রকাশ্য হয়ে পড়া দ্বন্দ্ব আমাদের আর এই প্রশ্নে ঘটনার বাইরে থাকতে দেয়নি, সাক্ষ্যাৎ মুখোমুখি করে ছেড়েছে। আমরাও যার যার বক্তি, জনগোষ্ঠিগত বা রাষ্ট্রস্বার্থ অনুসারে বৈষয়িক ও চিন্তা-রাজনীতির স্বার্থে যা সঠিক মনে করেছি সেই বিবেচনায় পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছি। গ্লোবাল দ্বন্দ্ব ও এর বয়ানের ঘটনাকে দেখার দিক থেকে এরকমটা হওয়ারই কথা । এখানে কে সঠিক কে বেঠিক তার বিচার নিয়ে বসাও এই লেখার মূল উদ্দেশ্য নয়। দুনিয়ার ইতিহাস এরকম হাজারো গ্লোবাল বা লোকাল দ্বন্দ্ব সংঘাতের ভিতর দিয়ে নানান যুদ্ধ মৃত্যুতে, একভাবে না একভাবে, ক্ষণস্থায়ী অথবা চিরস্থায়ীভাবে দ্বন্দ্ব নিরসন করেই এপর্যন্ত এসেছে। এই অর্থে আমরা ধরে নিতে পারি চলমান দ্বন্দ্বও একভাবে না একভাবে ক্ষণস্থায়ী বা চিরস্থায়ীভাবে মীমাংসায় নিরসন ঘটবে, ইতিহাস এভাবেই পথ করে আগাবে। শেষমেষ কেমন চেহারায় দাঁড়াবে তা দেখবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, তা নিয়ে কথা বলবার সময় সুযোগ সামনে আছে। এর আগে এভাবেই দুনিয়ার ইতিহাস গড়াতে গড়াতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) এক পর্যায়ে জাতিসংঘ নামে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠাটির জন্ম হয়েছিল।

সেই জাতিসংঘ এখন বিশ্ব-ইতিহাসের সাথে নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে টিকে আছে। বিশ্ব-ইতিহাসের চলমান এই পর্যায়ে মাও সেতুংয়ের ভাষায় বললে দৃশ্যত দুনিয়ায় প্রধান দ্বন্দ্ব হলো, ইসলামি রাজনীতি বা আলকায়েদা ফেনোমেনা বনাম পশ্চিম (আলকায়েদার বয়ানে ইসলাম বনাম ক্রসেডার-জায়নিস্ট মিত্রশক্তি); যা এর আগের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব শ্রম বনাম পুঁজি অথবা কমিউনিজম বনাম গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম—এই দ্বন্দ্ব এর আড়ালে কাজ করে যাচ্ছে। প্রথম কথা হলো, সব পরিস্থিতিতেই দুনিয়ায় একটা প্রধান দ্বন্দ্ব থাকবেই আর সেক্ষেত্রে জাতিসংঘকে ভূমিকা নিতে হবে যা হলো,

১। ঐ দ্বন্দ্ব থেকে পরিস্থিতি কোন আঞ্চলিক অথবা গ্লোবাল যুদ্ধের দিকে যেতেও পারে। দুনিয়া থেকে যুদ্ধ চিরতরে মুছে ফেলার মত অসম্ভব চিন্তা নয় বরং জাতিসংঘের ভূমিকা অতটুকুই যে যুদ্ধ এড়ানো, বা ছড়াতে না দেওয়া, অথবা কথা বলা বা বিবাদে ডায়লগের সুযোগ যদি থাকে তবে নিঃশেষে একে ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া, অথবা কোন গৃহীত কনভেনশন যদি আগে থেকে থাকে তার ভিত্তিতে বিরোধ নিরসনের সুযোগ নেয়া ইত্যাদি। ২। একাজে আগাম এটা মনে করা ভুল যে যুদ্ধ কোন খারাপ সমাধান। কারণ অনেক দ্বন্দ্ব আছে যেখানে যুদ্ধই ভাল সমাধান। মনে রাখতে হবে যুদ্ধ বিরোধে উপস্থিত ক্ষমতা ভারসাম্যের বিরুদ্ধে নতুন ক্ষমতার উত্থান, নতুন ভারসাম্য—ফলে পালাবদলে নতুন ক্ষমতার উত্থান একটা স্বাভাবিক এবং কাম্য ঘটনা; একটা ভাল সমাধান। সেটাকে তথাকথিত যুদ্ধবিরোধী অবস্থান দিয়ে কেউ আড়ালে নিতে চাইতে পারে তবে ইতিহাস একে জায়গা দেয় না। একারণে, বিরোধ মীমাংসার লক্ষ্যে এপর্যন্ত যতগুলো জাতিসংঘের কনভেনশন এসেছে এখানে কোথাও ধরে নেয়া হয় নাই যুদ্ধ কোন খারাপ অপশন। বরং জাতিসংঘের সিদ্ধান্তেই জাতিসংঘের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছে—এই উদাহরণও কম নয়।

৩। যে কোন বিবাদে মধ্যস্ততার ভূমিকা রাখতে চাইলে ওর প্রথম শর্ত মধ্যস্ততাকারীকে নিরপেক্ষ হতে হয়, কাজে আচরণে নিরপেক্ষ একটা ইমেজ থাকতে হয়। ফলে স্বভাবতই মধ্যস্ততাকারীর নিরপেক্ষতার ইমেজ বিবদমান রাষ্ট্র বিরোধে জাতিসংঘের ভূমিকায় কাজ করার জন্য মুখ্য আমানত। এই আমানত জাতিসংঘ অনেক সময় ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, তবু একথা বলবার সময় হয় নাই যে জাতিসংঘের দিন ফুরিয়েছে। জাতিসংঘের কোর ডিপ্লোমেট হিসাবে যারা ক্যারিয়ার চান, তাদের জাতিসংঘ ধারণাকে পরিপূর্ণ উপলব্দি করা, চার্টার ম্যান্ডেটগুলো জানা, এগুলো কোন প্রেক্ষিতে কেন এমনভাবে লেখা হয়েছে সে ষ্টাডি থাকা খুবই জরুরী। সদস্য ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নানাভাবে জাতিসংঘকে নিজের পক্ষে ব্যবহার, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু চার্টার ম্যান্ডেটগুলো দেখিয়ে তাদের বিরত রাখা জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল সহ একজন কোর ডিপ্লোম্যাটের মূল কাজ। যেমন ইরাক দখলের পর সেক্রেটারী জেনারেল কফি আনান পাবলিকলি বলতে পেরেছিলেন, “ইরাকে আমেরিকা এক দখলদার শক্তি”। এতে ইরাক দখলমুক্ত হয়ে যায়নি কিন্তু মরালের দিক থেকে আমেরিকা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।

দ্বন্দ্ব বিবাদের দুনিয়ায় জাতিসংঘের জন্ম ইতিহাস ও কেমন ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এটা, কি ভূমিকা রাখার এর সুযোগ আছে তা নিয়ে আলাদা আলোচনা করতে হবে। আপাতত আলোচ্য প্রসঙ্গে মানে পাকিস্তানের ছয় স্বাস্থ্যকর্মী হত্যা নিয়ে আলাপের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে জাতিসংঘের কথা বলে নেয়া হলো। এখন আমরা মূল প্রসঙ্গে যাব।

পাকিস্তানের যে ছয় স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যার বিষয় এখানে আমলে নিয়েছি এই স্বাস্থ্যকর্মীরা জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের স্থানীয় কর্মী। এরা সকলে ইউনিসেফের পাকিস্তান কান্ট্রি অফিসের ফিক্সটার্ম চাকরী শর্তে নিয়োজিত। সোজা কথায় তাঁরা জাতিসংঘের স্থানীয় কর্মচারী। অনেকেই জানেন, ইউনিসেফ দেশে দেশে Expanded Programme on Immunization (EPI) পরিচালিত করে থাকে। (EPI) মানে শুণ্য থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের নিয়মিত টিকা দেয়া, ড্রপ খাওয়ানো বা ইনজেকশন দিয়ে বাচ্চার শরীরে রোগ প্রতিষেধক তৈরির কার্যক্রম এটা। আলোচ্য ঘটনা সুনির্দিষ্ট করে বাচ্চাদের পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত হবার বিরুদ্ধে ওষুধের ড্রপ খাওয়ানোর বা পোলিও ভ্যাকসিন বিতরণের। এপর্যন্ত এই প্রোগ্রামকে সাফল্যজনক ও কাজ করে বলে মনে করা হয়। গ্রাম শহরে পরিচালিত এই সামাজিক কর্মসূচীর তাৎপর্য হলো, সমাজকে সংগঠিত করা, উপযুক্ত দক্ষ জনশক্তি সংগঠিত করে একটা মনিটরিং ব্যবস্থার অধীনে এটা পরিচালিত করা। লক্ষ্য সমাজকে পোলিও ভাইরাস থেকে মুক্ত করা। কারণ সময়ে এই যত্ন না নিলে পোলিও আক্রান্ত বাচ্চা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে থাকতে পারে, নিজের ও সমাজের জন্য বোঝা হয়ে জীবন কাটাতে হতে পারে তাকে। যেমন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা পোলিও মুক্ত সমাজের জায়গায় পৌছেছি মনে করা হয়। তাই কোন ডাক্তারখানা, সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল কোথাও পোলিও রোগীর খবর যদি পাওয়া যায় (গত কয়েক বছরে এই রেকর্ড নাই) তবে তৎক্ষনাৎ তা সিরিয়াস গবেষণার বিষয়। কারণ এটা সম্ভাব্য প্রোগ্রাম পরিচালনার কোন ত্রুটি ফাঁকফোকড় কিনা তা জানা খুবই জরুরী। তাই গবেষক ডাক্তারের টিম সেখানে ঘটনার খুটিনাটি খুঁজে দেখতে ছুটে যায়। যদি ঘটনা সত্যি হয় তবে ত্রুটি নিরসন করতে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়। বাংলাদেশের EPI মনিটরিং ব্যবস্থা এই পর্যায়ে উন্নীত করা গেছে। এই প্রগ্রামের এত বিস্তারিত বর্ণনা করলাম এজন্য যে একটা রোগের সামাজিক অভিশাপ থেকে আমরা কি করে বাচ্চাদের মুক্ত করতে পারি, এর উপায় যে চাইলে করা সম্ভব এই সাফল্যের দিকটা খুলে বলা । এটা একই সঙ্গে আমাদের সামাজিক উৎপাদনের জন্য সবল জনশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও বটে। জাতিসংঘ প্রতিবছর বিভিন্ন রাষ্ট্র সামাজিক উন্নয়নে কতটুকু আগালো তা মাপামাপির একটা সূচক প্রকাশ করে। এই সূচকে তুলনায় পাশের বিরাট অর্থনীতির দেশ ভারতের থেকে গত কয়েক বছর আমরা এগিয়ে আছি। এর মানে হলো, বড় অর্থনীতি বা তুলনায় বেশি আয়ের দেশ হলেই সামাজিক উন্নয়নের সূচক আপনাআপনি ভাল অবস্থানে চলে যাবে এমন কোন মানে, সম্পর্ক নাই। কারণ কাজটা সমাজকে সংগঠিত করে দেখানোর ব্যাপার, এটা গরীব বা বড়লোক দেশের ব্যাপার না। এছাড়াও সমাজকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করা আর সামাজিকভাবে সংগঠিত করা দুটো আলাদা বিষয়, আলাদা কাজ; দুটোর মূল্য আলাদা। এই হোল এক পোলিও রোগকে কেন্দ্র করে ঘটনার সুতায় জড়ানো নানান ঘটনার পারস্পরিকতা।

পাকিস্তানে পরিচালিত (EPI)প্রোগ্রামের অবস্থা খুবই নাজুক। এখন পর্যন্ত কোন এক বছরেও ঐ বছরে জন্ম নেয়া সব বাচ্চাকে এই প্রোগ্রামের আওতায় আনা যায় নাই। এছাড়া দ্বিতীয় ডোজ খাওয়ানোর ব্যাপার আছে, মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাপনা দাঁড় করানোর ব্যাপার আছে। এর একটা বড় কারণ পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা, বিশেষত ৯/১১ এর পর থেকে আমেরিকান ওয়ার অন টেররের ফ্রন্টলাইন রাষ্ট্র হয়ে বেগাড় খাটতেই ওর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ঐ ছয়জন কর্মীর মৃত্যুর পর আলজাজিরার এক রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তানের তালেবান রাজনৈতিক গোষ্ঠি ইউনিসেফের (EPI)প্রোগ্রামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা বারবার এই প্রোগ্রাম নিয়ে তাদের প্রভাবাধীন এলাকায় প্রবেশ করতে সাবধান করেছিল। কারণ এই কর্মসূচিকে তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত কাজ বলে সন্দেহের চোখে দেখে থাকে। তাই অনুমান করা হচ্ছে যে করাচী ও পেশোয়ারের কয়েক জায়গায় একযোগে চালানো আক্রমনে তালেবানেরা ঐ হত্যার অন্য দায়ী। এতদূর পড়ার পর কারও মনে হতে পারে ‘পশ্চাদপদ’ ইসলামী রাজনীতির কারবার এটা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনার বিচার করা সহজ এবং তা পপুলারও বটে। ঘটনার পর এনিয়ে দেশে-বিদেশের মিডিয়ায় যে রিপোর্টগুলো বেরিয়েছে তার মূলসুরও এটাই। কিন্তু ঘটনাকে দেখবার পথ কি আসলেই সহজ? দুনিয়া এক ইসলামি ‘পশ্চাদপদতা’ ‘কুপমন্ডুকতার’ খপ্পড়ে পড়েছে ফলে এদের নিন্দা জানানো ও হাত ধুয়ে বসে থাকাই এখন আমাদের কাজ?

তালেবানদের EPI প্রোগ্রাম বিরোধীতার কারণ হিসাবে তারা কি বলছে সেদিকে নজর দেয়া যাক। টিকা ইনজেকশন ড্রপ ইত্যাদি পশ্চিমের, এই বিজ্ঞান পশ্চিমের তাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু তালেবানেরা তাদের বিরোধিতার হিসাবে এটা বলে নাই। বরং তারা মনে করে এই কর্মসূচির ছলে এরা পশ্চিমের পক্ষে তালেবান প্রভাবাধীন এলাকায় গোয়েন্দাগিরি করছে। তাই তারা এই কর্মসূচিকে পশ্চিমা ষড়যন্ত্র মনে করে ও সন্দেহের চোখে দেখে, নিজেদের বিরোধি মনে করে। অভিযোগের এই গুরুত্বের দিকটা সব মিডিয়া রিপোর্টে উপেক্ষা করেছে। অভিযোগের সারকথা হলো, জাতিসংঘ বা তার এজেন্সী সংগঠন ইউনিসেফ পশ্চিমা রাষ্ট্রস্বার্থের পক্ষে সামরিক সুবিধা নিতে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে দেবার উপায় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা সাংঘাতিক গুরুতর অভিযোগ। আর এর প্রমাণ বা উদাহরণ হিসাবে তাঁরা বলছে এক পাকিস্তানী ডাক্তার ভেকসিনেশন প্রোগ্রামের ছদ্মবেশে বিন লাদেনকে ধরতে তথ্য সংগ্রহে নেমেছিল আর ঐ সুত্রেই লাদেন সিআইএ এর অপারেশনে গ্রেপ্তার হয়েছে ও মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের সংশ্লিষ্ট এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গুল নাজ এ প্রসঙ্গে মিডিয়াকে জানিয়েছে, “পোলিও এর নামে পশ্চিমা ‘অবিশ্বাসী’দেরকে যারা সহায়তা করবে তারা পরে পস্তাবে” – এই মর্মে স্বাস্থ্যকর্মীরা টেলিফোম হুমকি পেয়েছিল। সিনিয়র এক পুলিশ অফিসার শহীদ হায়াত একইভাবে তালেবান যোদ্ধাদের ভেকসিনের বিরুদ্ধে “ফতোয়া” দেবার অভিযোগ এনেছেন। এমনিতেই পিছিয়ে থাকা অনিয়মিত কর্মসুচিকে স্থগিত ঘোষণা করে পাকিস্তান ইউনিসেফের মুখপাত্র Matthew Coleman বলছেন, ‘তাদের ফ্রন্টলাইন কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন’। “ঐ কর্মীরা এখন তাদের কাছে সত্যিকারের হিরো’। পাকিস্তানের জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু বা WHO) এবং ইউনিসেফ এক যৌথ বিবৃতিতে বেশ জ্ঞানী এক অভিযোগ এনেছে। ঐ হত্যাকে নিন্দা করে তাঁরা বলছে, ‘ এই ঘটনা পাকিস্তানের দুস্থ শিশুদেরকে মৌলিক জীবনরক্ষাকারী স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা এক হস্তক্ষেপ”। কিন্তু কোথাও তালেবান যোদ্ধাদের ষড়যন্ত্র ও সন্দেহের অভিযোগের কোন জবাব দিতে কাঊকে দেখা যায় নাই। সকলে যে সহজ পথটা নিয়েছেন তাহলো, ইসলামি ‘পশ্চাদপদতা’ ‘কুপমন্ডুকতার’ থেকে তাঁরা কে কতটা মুক্ত সেই হিরোইজমের লাশের পাহারাদার, অধিকারের পাহারাদার সবাই। তাদের এই অবস্থানকে তালেবান রাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের অফিসিয়াল কাজ তৎপরতার পক্ষে সাফাই দেয়া। বিশেষত হু এবং ইউনিসেফ এর বিবৃতি ও লাশের হিরোইজমের বয়ান প্রমাণ করে তারা বলতে চাচ্ছে তাদের মহান ব্রত নিয়ে কাজের মহত্ব ইসলামি ‘পশ্চাদপদতা’ ‘কুপমন্ডুকতা’ বুঝতে পারছে না। আমাদের অনেকেরও এমনটাই মনে হতে পারে। আমি সবাইকে ঘটনার ভিন্ন দিকটার দিকে নজর ফেলতে অনুরোধ করব।

পাকিস্তানের এই ঘটনার নীট পরিণতি হলো, একদিকে ছয়জন কর্মীর মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া অপরদিকে কর্মসুচি স্থগিত করায় শিশু স্বাস্থ্যের যাবতীয় বিপর্যয়ের কারণ তৈরি রাখা – এর জন্য সম্পুর্ণ দায়ী ও এর দায়ভার পাকিস্তান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু বা WHO) এবং ইউনিসেফ কান্ট্রি অফিসের কর্তাব্যক্তিদের এবং সেই সুত্রে বান কি মুন সহ জাতিসংঘের কোর ডিপ্লোম্যাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের। উপরে লেখার শুরুতে জাতিসংঘের জন্মের পিছনের কাজ করা চিন্তা সম্পর্কে কিছু ধারণা দিয়ে জাতিসংঘের ভুমিকা কি হতে পারে তা নিয়ে তিনটা পয়েন্ট বলেছিলাম। ঐ আলোকে এখন সেকথা ব্যাখ্যা করব।

১। বলেছিলাম দুনিয়ায় ইতিহাসের এই সময়ে এখন প্রধান দ্বন্দ্ব হয়ে আছে ইসলামী রাজনীতির আলকায়েদা ফেনোমেনা বনাম দুনিয়া শাসনকারী শক্তি আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিম। জাতিসংঘ বা এর পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেঊই কোন না কোন মুখ্য দ্বন্দ্বে থাকা দুনিয়ায় কারও পক্ষ নিতে পারে না; এনিয়ে জাজমেন্টাল হতে পারে না অথবা নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাস দিয়ে এই দ্বন্দ্ব বিচারে প্ররোচিত হতে পারে না। তাদের মনে থাকা দরকার যে কোন দ্বন্দ্ব জাতিসংঘের মুল ভুমিকা মধ্যস্থতাকারীর, কথা বলার সুযোগ থাকলে তা তালাশ ও উন্মোচনের। এই কোর ভ্যালু বা মুল্যবোধ এবং জাতিসংঘের ম্যান্ডেট সম্পর্কে উপযুক্ত বুঝাবুঝি তৈরির প্রয়াস , চাকরিতে প্রবেশ মাত্রই সম্পন্ন করতে হয়। এটা বাধ্যতামুলক। পাকিস্তানের ঘটনায় আলোচ্য ইউনিসেফের কথাই ধরা যাক। পাকিস্তানের সমাজ কি রাজনৈতিক বিরোধ বিবাদে আছে তাতে ইউনিসেফ কোন অবস্থান নেয়া, বিচারক হয়ে যাওয়া অথবা সে বিবাদে কে সঠিক কে ভুল সে বিচারে প্রলুব্ধ হয়ে জড়িয়ে যাওয়া ইউনিসেফকে বা জাতিসংঘের কাউকে দেয়া হয়নি, এটা জাতিসংঘের ম্যান্ডেট বা দেখবার কাজও নয়। ইউনিসেফের প্রধান কাজ ছিল সফলভাবে (EPI)প্রোগ্রাম পরিচালিত করা। কান্টি ডিরেক্টর ষ্টেশনে যোগদানের পরই কর্মসুচি চালাতে বাধা ও সুবিধাগুলো এসেসমেন্ট করা ব্রিফিং নেয়া ছিল তার প্রথম কাজ। একাজে অবশ্যই তিনি জানতেন তালেবান যোদ্ধাদের মনোভাব, আপত্তির বিষয়ে। তালেবান যোদ্ধাদের EPIপ্রোগ্রামের প্রতি এই মনোভাব, আপত্তির বিষয়ের পিছনে তাদের রাজনীতি সঠিক না ভুল এর বিচার করা তার কাজ নয়, কাজের টার্গেট নয়। তার টার্গেট এসব বাধা বিপত্তিগুলো এড়িয়ে শিশুদের কাছে পোলিও টিকা বা ড্রপ নিয়ে পৌছানো, সম্ভব করে তোলা। এই লক্ষ্যে কাজের একটা ষ্ট্রাটেজির ছক আঁকা। শেষ বিচারে ভ্যাকসিন বিতরণে তাঁর সফলতা কতখানি এটা দিয়েই তার দায়িত্ব প্রাপ্ত কাজ তিনি কতটা করতে পারলেন এর বিচার হবে।

একাজে তার সম্ভাব্য ষ্ট্রাটেজি কি হতে পারত এবং যা ঘটেছে তার জন্য কারা কেন দায়ীঃ

১। সবার আগে নিজেকে তালেবানদের কাছে নিজের নিরপেক্ষতা, বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করা।

২। তালেবানদের রাজনীতি ভাল না মন্দ এনিয়ে তার কোন লেনাদেনা নাই, তাঁর কাজের উদ্দেশ্য বাচ্ছাদের কাছে পৌছানো একথা বিশ্বাসযোগ্যভাবে হাজির করা।

৩। সেক্ষেত্রে তার প্রথম কাজ তালেবান নেতাদের কাছে পৌছানো, কথা বলার সুযোগ পরিস্থিতি তৈরি করা বা সে লক্ষ্যে কাজ করা। শুরুতে পরস্পরকে বিশ্বাস করা, নিরাপত্তা ইত্যাদির সমস্যা বাধা থাকবে এটা ধরেই নেয়া যায়। ফলে এটা প্রত্যক্ষভাবে করা না গেলেও মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমেও হতে পারে; একাজে স্থানীয় সরকারি বা বেসরকারি স্থানীয় মুরুব্বি গোছের নাগরিক যে কারও সহায়তা নেয়া যেতে পারত।

৪। মনোযোগ দিয়ে তালেবানদের অভিযোগ শোনা প্রথম কাজ। আর সেখানে তার টার্গেট হত - কি হলে তালেবানরা তাকে প্রোগ্রাম শুরু করতে স্বাগত জানিয়ে নিজেরাই আগিয়ে নিতে পারে, সাহায্য করতে পারে তা এসেস করা। এবং সে অনুযায়ি আগানোর রাস্তা বের করা।

৫। যদি না তিনি আগাম জাজমেন্টাল হয়ে ধরে নেন যে তালেবান মানেই ইসলাম ধর্মের ‘পশ্চাদপদতা’ ‘কুপমন্ডুকতা’য় ডুবে থাকা কিছু প্রাণী তবে একথা মেনে নেবার কোনই কারণ নাই যে তালেবান নেতারা তাদের সন্তানদের পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লুলা হয়ে আছে দেখতে পছন্দ করবে। ফলে কেন বাচ্চাদের ভ্যাকসিন নেয়া দরকার, না নিলে এর সম্ভাব্য সামাজিক ব্যক্তিগত ক্ষতি বিপদ যতটা সম্ভব পরিস্কার ও বিশ্বাসযোগ্য করে প্রচার করতে হবে।

৬। এটা ঠিক যে ইউনিসেফের স্বাস্থ্যকর্মীরা সিআইএর পক্ষে গোয়েন্দাগিরির কাজ করে কি না এনিয়ে তাদের গভীর সন্দেহ, অবিশ্বাস আছে। এই সন্দেহ অবিশ্বাস দূর করতে তালেবানরা নিজেই কোন স্ক্রিনিং ও আইডেনটিফিকেশন প্রক্রিয়ার প্রস্তাব করতে পারে। এই আইডেন্টিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ইউনিসেফের কোন কর্মী পাশ না করতে পারলে তার বদলে অন্যকেও দেয়া যেতে পারে।

৭। মনে রাখতে হবে, স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস সবার আগে জাতিসংঘ বা ইউনিসেফ ভেঙ্গেছে। ওবামার রাষ্ট্রস্বার্থ বা সামরিক স্বার্থ বিশ্বাসভঙ্গ করে ছলেবলে নকল ডাক্তার দিয়ে বিন লাদেনকে ধরে মেরে মিটানো যেতে পারে। কিন্তু বিশ্বাসভঙ্গের দায় জাতিসংঘ বা ইউনিসেফের। কারণ লাদেনকে ধরতে ফেক ডাক্তারের কথা প্রকাশ হয়ে পড়ার পর জাতিসংঘ বা ইউনিসেফের দিক থেকে দায়িত্ব নিয়ে নিজের নামে এই বদনাম কালো দাগ ধুতে কিছুই করেনি। সোজা কথাটা হলো, ওবামা জাতিসংঘ বা ইউনিসেফের প্রতি যে মানুষের আস্থা বিশ্বাস ছিল তা বিক্রি করে দিয়েছে। সে হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারে জাতিসংঘ বা ইউনিসেফে নিজের দায়িত্বে অবহেলা করেছে। নিজেকে বিক্রি হতে দিয়েছে। ঐ ডাক্তারের সাথে জাতিসংঘ বা ইউনিসেফের কোন সম্পর্ক থাকলে বা না থাকলেও নিজের ইমেজ বিক্রি হয়ে গেছে অথচ তারা চুপ থেকেছে। জাতিসংঘের ম্যান্ডেট অনুযায়ী আমেরিকার হয়ে গোয়েন্দাগিরির কাজে জাতিসংঘের নাম ইমেজ ব্যবহারের অভিযোগ একটা মারাত্মক ও কঠিনতম অভিযোগ। অথচ সে অভিযোগ থেকে নিজেকে মুক্ত ও আবার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জের কোন উদ্যোগ জাতিসংঘ বা ইউনিসেফ নেয়নি তা তো বলাই বাহুল্য। জাতিসংঘের উচিত হত খোদ ওবামার বিরুদ্ধেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠানের নাম, সুনাম ইমেজ নষ্ট করার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা। এর কিছুই তারা করেনি। তালেবানদের কোন অভিযোগকে আমলেই নেয়নি।

৮। মুল সত্য জাতিসংঘ বা ইউনিসেফ নিজ অপরাধ কর্মের কারণে আজ বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে কাতরাচ্ছে। অথচ প্রোগ্রাম বন্ধ হওয়ার জন্য তালেবানদেরকে দুষছে।

৯। সুনির্দিষ্ট করে বললে তালেবানদের অভিযোগ জানার পরও ঐ ছয় স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে পাঠানোর সম্পুর্ণ (জীবনবীমা ইত্যাদির অর্থনৈতিক ও অফিসিয়াল) দায় ইউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেকটর ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা বিভাগের। এই দায় জাতিসংঘ অফিসের বা বীমা করা থাকলেও (থাকাটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক, না থাকলে সেটার দায়ও কান্ট্রি ডিরেকটরের) সে বীমা কোম্পানী নিবে না।

১০। প্রত্যেক রাষ্ট্রে ইউনিসেফের মত জাতিসংঘের সব এজেন্সী অফিসগুলো ও তাদের স্থানীয় ও বিদেশী কর্মীদের নিরাপত্তার দিক দেখা, মনিটর, মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির কমন দায়িত্ব প্রতিষ্টান হলো ডিএসএস (ডিপার্টমেন্ট অফ সেফটি এন্ড সিকিউরিটি)। এদের লিখিত ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কোন কর্মীর অফিসিয়াল চলাফেরা নিষিদ্ধ। বিশেষত পাকিস্তানের মত দেশে থ্রেট লেভেল যেখানে অনুমান করি সর্বোচ্চের (সর্বোচ্চ মানে ইভাকিউয়েশন বা অফিসগুটিয়ে দেশত্যাগ) একধাপ নিচে। এবং আগেই টেলিফোনে থ্রেট বা বিপদের কথা নিরাপত্তা বিভাগ সহ সকলে জানত। ফলে এই হত্যায় সবচেয়ে বেশি ডিএসএস দায়ী। আর বীমা কোম্পানী ক্ষতিপুরণ তখনই দিতে বাধ্য যখন ঘটনা পরবর্তি তদন্তে দেখা যায় আগেই প্রেসক্রাইব রুল অনুযায়ী সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা ডিএসএস নিয়েছিল। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে ডিএসএস থ্রেট উপেক্ষা করেছে। ইসলামাবাদের কায়েদে আজম ইউনিভার্সিটির এক প্রফেসর জাফর জসপাল জানিয়েছেন, করাচীর মত বড় শহরে স্বাস্থ্যকর্মীরা সহজ টার্গেট, কারণ এদের নিরাপত্তা দেয়া অসম্ভব। বলা বাহুল্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা নিয়ম ব্যবস্থা সম্পর্কে ভদ্রলোক কোন ধারণাই রাখেন না।

১১। ইউনিসেফের যে মুখপাত্র ঘটনার ভিওতর হিরোগিরি দেখেছে, এই বক্তব্যের জন্য জাতিসংঘের আভ্যন্তরীন পরিচালনা বা ষ্টান্ডার্ড বিজনেস রুল অনুযায়ী চাকরির সব বেনিফিট পাওনা ছাড়াই বরখাস্ত হওয়ার কথা। কারণ, হিরোগিরি দেখানো ডিএসএস এর সিকিউরিটি গাইডলাইন অনুযায়ী অপরাধ। কর্মীদের যে কোন কাজে নামার আগে প্রথম বিবেচ্য নিরাপত্তা। নিরাপত্তার দিক উপেক্ষা করে একশ না খাওয়া লোকের মাঝে খাদ্য বিতরণ করে জান বাচিয়ে আসলেও সেটা বিশাল গর্হিত অপরাধ। একাজে কোন সুপারভাইজার উদ্বুদ্ধ করলে সে অপরাধী। আর সুপারভাইজারের কথা অমান্য করলেও অমান্যকারির জন্য সেটা কোন শৃখলাভঙ্গের বা অন্য কোন অপরাধ নয়।

১২। সবশেষে, WHO এবং ইউনিসেফ যে যৌথ বিবৃতিতে দিয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে তারা তালেবানরা রাজনৈতিকভাবে ভাল না মন্দ সে বিচারকের আসনে নিজেদেরকে বসিয়েছে। অন্যভাবে বললে নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাস বা আমেরিকার রাজনীতির পক্ষে তারা অবস্থান নিয়েছে, যেটা জাতিসংঘের কোর ভ্যালুর বাইরে চলে যাওয়া, ভঙ্গ করা। চাকরিতে জয়েন করার আগেই ডিএসএস এর ওয়েব সাইটে জাতিসংঘের নিরাপত্তা ধারণা বিষয়ে পাঠ নেয়া ও অন লাইন দুটো পরীক্ষায় বসতে হয় সকলকে ও পাশ করতে হয়। পাশের সার্টিফিকেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে চাকরিতে যোগ দিয়েছে বলে গণ্য করা হয়। ঐপাঠের প্রথম শিক্ষা হলো স্থানীয় কোন রাজনীতিক পক্ষের প্রতি কোন অনুরাগ বিরাগ না দেখানো, স্থানীয় কালচারাল ভ্যালুর প্রতি সেন্সেটিভ থাকা ও সম্মান করা, মাল্টিকালচারিজমের চর্চা করা ও মনেরাখা ইত্যাদি।এরা সকলে সে শিক্ষার বিপরীত আচরণ করেছেন। ফলে তালেবানদের রাজনীতির প্রতি অপছন্দ প্রকাশ দূরে থাক, যে কোন অনুরাগ-বিরাগে পক্ষাবলম্বনই বিজনেস রুল ভঙ্গ করা। এই অভিযোগে তাদের বরখাস্ত হবার কথা।

জাতিসংঘ দিন কে দিন দুনিয়ার বিবদমান পরিস্থিতিতে কোন না কোন পক্ষ নেবার কারণে নিজই নিজের অস্তিত্বের বিপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেক জায়গায় নিজেই আলকায়েদা বা তালেবানের টার্গেট হয়ে উঠছে। এই বিবাদে আগামি দিনে সম্ভাব্য মধ্যস্ততাকারির কোন ভুমিকা নেবার শর্ত নিজেই মুছে ফেলছে। অবস্থা দাড়িয়েছে এমন কফি আনানই সম্ভবত আমাদের শেষ দেখা সেক্রেটারি জেনারেল। এভাবে চলতে থাকলে দুনিয়ায় বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে একদিন যেমন জাতিসংঘের আবির্ভাব ঘটেছিল ঠিক সেভাবে এই প্রতিষ্টানের বিলোপ ঘটবে। বদলে যাওয়া সে পরিস্থিতিতে খোলনলচে বদলে বদলানো জাতিসংঘ এর আদলে নতুন কোন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আসন্ন হয়ে উঠবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।