নতুন রাষ্ট্র গঠনের পাঁচটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু মৌলিক দাবি


এ লেখা যখন লিখছি তখন আঠারো দলের হরতাল ও সমাবেশের প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছে। বিরোধী দলের ওপর নতুন করে দমন পীড়ন শুরু হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গভীর রাতে খালেদা জিয়ার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার সময় গ্রেফতার হয়েছেন ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমূল বিশ্বাস। বেগম জিয়ার গুলশানের বাসা ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য।

অন্যদিকে শেখ হাসিনা তার ভাষা বদলান নি। একদিকে বিরোধী দলের ওপর দমন পীড়ন জেল জুলুম আর অন্যদিকে তাদের সংলাপে ডাকা – এ এক পরাবাস্তব পরিস্থিতি। সরকার পক্ষীয় গণমাধ্যমগুলো নির্লজ্জ ভাবে ক্রমাগত প্রচার করে বেড়াচ্ছে হরতালে কতো ক্ষতি। মানুষের প্রাণহানির দায়দায়িত্ব তারা একতরফা বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে নিজেদের দায়দায়িত্ব থেকে খালাস পেতে চাইছে। অথচ উচিত ছিলো আইনশৃংখলা বাহিনী কোথায় কোথায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে প্রাণ হানি ঘটিয়েছে, নাগরিকদের আহত করেছে, আর কোথায় হরতালকারীদের কারণে ক্ষতি হয়েছে সেসবের সঠিক সংবাদ পরিবেশন।

এর মধ্যেও শেখ হাসিনা ভোটের দাওয়াত দিচ্ছেন, ভোট চাইছেন। ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে তিনি ভোট চাইতে পারেন কিনা এই প্রশ্ন তুলতে কোন গণমাধ্যমকে তেমন দেখি নি। বলাবাহুল্য আঠারো দলীয় জোট আরো কঠোর কর্মসূচী দিয়েছে। এই লেখা যখন লিখছি হরতাল তখন চলছে। রাজনৈতিক বিভাজন দেশকে নিশ্চিত সংঘাতের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে এর পরিণতি কী দাঁড়াবে তা আন্দাজ করা মুশকিল। তবে ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক বৈধতা হারিয়েছে অনেক আগেই। এর বিপরীতে আঠারো দলীয় জোটের পক্ষে গণসমর্থনের জোর কতোটুকু তা গণমাধ্যমের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের কারনে বোঝা মুশকিল। তবে ক্ষমতাসীনদের প্রতি সমর্থন যে কমেছে সেটা নানান জরিপে আগেই প্রকাশিত। উদার রাজনৈতিক পরিমণ্ডল বজায় থাকলে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠ নির্বাচনে বিএনপিই ক্ষমতায় আসত সমাজে এমন ধারণাই প্রবল। ক্ষমতাসীনরা সে কারণেই সংবিধান বদলিয়েছে, এবং দমন পীড়ন এমন ভাবে চালাচ্ছে যাতে বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করা সম্ভব হয়।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বলপ্রয়োগের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা ও রাজনৈতিক ইস্যুর মীমাংসা ছাড়া অন্য কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব আর বলপ্রয়োগের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তির হিসাব আলাদা। প্রথম পর্ব থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের বাস্তবতার কারনেই প্রবেশ করতে চলেছে। সেই ক্ষেত্রে বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হতে হলে জনগণের আশা আকাংখাকে আরও সুনির্দিষ্ট ভাবে ধারণ করতে হবে। যদি শেখ হাসিনা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রত্যাখান করে তথাকথিত সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করবার পথে যেতে সফল হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আর কোনই উপযোগিতাই থাকবে না। সংলাপের রাজনীতির কফিনে শেখ হাসিনা শেষ পেরেকটি মেরে দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতাদের গ্রেফতার করে। খালেদা জিয়ার ব্যাক্তিগত সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করার রাজনৈতিক অর্থ সুস্পষ্ট। তিনি দলীয় নন। খালেদা জিয়া গৃহে অন্তরীণ নাকি মুক্ত এই প্রশ্ন এখন প্রধান জিজ্ঞাসা (১)। এই পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মৃত লাশের কফিন গোরস্থানে বহন করে যাবার অধিক রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে না। শেখ হাসিনা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পার্থক্য মীমাংসা করতে চান না, তিনি রাষ্ট্রের সশস্ত্র শক্তিকে বিরোধী দল ও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। এই পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামে জয়ী হতে হলে গণতান্ত্রিক দাবি দাওয়া সুস্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন ভাবে হাজির করা দরকার। খালেদা জিয়া ও বিরোধী দলীয় জোটের সামনে এটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।

অনেকে দাবি করতে পারেন বিএনপি বা আঠারো দলীয় জোট কোন গণতান্ত্রিক দল বা রাজনৈতিক মোর্চা নয়; এটা নির্বাচনী মোর্চা। যারা একথা বলেন, তারা মিথ্যা বলেন না। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সমাজের শ্রেণি ও শক্তির দ্বন্দ্ব যেভাবে জাতীয় পরিসরে বুর্জোয়া লিবারেল রাজনীতিতে হাজির হয়েছে তাকে তারা কিভাবে মোকাবিলা করবেন সে সম্পর্কে তাদের কোন অবস্থান দেখি না। অনেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের বাইরে দরকারী ও গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক দাবিদাওয়া নিয়ে কাজ করছেন। সেইসব অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু রাজনৈতিক সংগ্রাম ও অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া আদায়ের সংগ্রামের মধ্যে যে পার্থক্য লেনিনের কাছ থেকে শিখবার কথা তাকে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের কোন সফল নজির বাংলাদেশে নাই। এর সঙ্গে যুক্ত মতাদর্শিক আধিপত্য বিস্তার ও পালটা ক্ষমতা তৈরির রাজনৈতিক কর্তব্য। এগুলো ব্যবহারিক রাজনীতির বিষয়, কাগুজে আলোচনা নয়। ফলে এই ধরণের মূল্যায়ন এক প্রকার নিষ্ফলা একাডেমিক আলোচনার বেশী কোন তাৎপর্য বহন করে না। বুর্জোয়া রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বুর্জোয়া শ্রেণির সংকট তীব্র হয়ে হাজির হওয়ার পরেও রাজনৈতিক লড়াই-সংরাম থেকে দূরে থাকবার পক্ষে বিস্তর অলস কথন হতে পারে। কিন্তু এই সময় মেহনতি শ্রেণি ও গরিব জনগণের দিক থেকে সঠিক রাজনৈতিক মীমাংসা কী হতে পারে তা হাজির করা জরুরী। জনগণের পক্ষে পালটা ক্ষমতা তৈরির কাজ এতে প্রশস্ত হয়। অতএব কখন কিভাবে কী উদ্দেশ্যে আমরা বুর্জোয়া রাজনীতির সমালোচনা করি এবং সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কি ধরণের কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে থাকি তারা দ্বারাই জাতীয় রাজনীতিতে আমরা আদৌ কোন ভূমিকা রাখতে সক্ষম কিনা বোঝা যায়। একটি রাজনৈতিক দল বা গ্রুপ যতো ছোটই হোক সঠিক নীতি ও কৌশল অবলম্বন করতে সক্ষম হলে বুর্জোয়া রাজনৈতিক সংকটের মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে অর্থবহ ভূমিকা রাখতে পারে।

আঠারো দলীয় জোট শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়। এই ব্যবস্থার রূপান্তরের কোন দাবি বা কর্মসূচি আমরা তাদের কাছ থেকে পাই নি। একথা আমরা বারবার বলে আসছি। কিন্তু আঠারো দলের প্রতি জনগণের সহানুভূতি মধ্যে এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিহিত রয়েছে। ফলে আমাদের কাজ হচ্ছে বুর্জোয়া রাজনীতির সংকটের সময় জনগণকে এ ব্যাপারে আরও সচেতন করে তোলা। এই দিক থেকেই আঠারো দলের চ্যালেঞ্জের কথা আমরা বলি। বলা খুবই দরকার মনে করি। উদারনৈতিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে বর্তমান সংকট যতো সমাধানের অতীত মনে হবে ততোই আঠারো দলকে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। নইলে জনগণ তাদের ডাকে রাস্তায় মরতে যাবে না। এ কথাটা বারবার জানান দেওয়া জরুরী।

ফলে যারা বিরোধী দলের চরিত্র বিচার করে বর্তমান আন্দোলন সংগ্রামের চরিত্র নির্ণয় করেন এবং উভয়কই সমার্থক গণ্য করে আন্দোলনের থেকে দূরে থাকার কথা বলেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা একমত নই। আমরা বিনয়ের সঙ্গে তা অমান্য করবার পক্ষপাতী। অধিকাংশই বিদ্যমান ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্য ঘরে বসে থাকার উসিলা হিসাবে এই ধরণের মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্তের কথা বলেন। ব্যতিক্রম আছেন নিশ্চয়ই। তবে বুর্জোয়া রাজনীতির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এদের সারকথা হচ্ছে দুইপক্ষই মন্দ, অতএব কারো পক্ষ না নিয়ে ঘরে কিম্বা বড় জোর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মজা দেখা। অথচ এদের বড় অংশ কোন বাম আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে চায় না। উন্নাসিক মধ্যবিত্তের এই অবস্থান এই সময় কোন কাজের কাজ হতে পারে না। এই উন্নাসিকতার সঙ্গে আমরা একমত নই।

অনেকে আবার মূল্যায়নেই ক্ষান্ত থাকেন না। নিরন্তর ‘তৃতীয় শক্তির’র উত্থানের স্বপ্ন দেখেন। ‘তৃতীয় শক্তি’ কথাটা নানান জনে নানান ভাবে বোঝেন। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বলে, শেষতক সেটা হয়ে দাঁড়ায় সুশীল সমাজের সমর্থনে সামরিক সরকার কিম্বা সেনাসমর্থিত বেসামরিক সরকার।

বুর্জোয়া রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের রীতি ও ছক যেভাবে আঁকা হয় সেখানে গণবৈপ্লবিক রাজনীতির কোন করণীয় নাই – এটা একটি প্রাচীন কিন্তু মারাত্মক ভুল ধারণা। সমাজের আর্থ-সামাজিক দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সবসময় দুটো পক্ষ হয়েই হাজির হয়। ফলে তর্কটা পক্ষাবলম্বনের প্রশ্ন নয় – এই দ্বন্দ্বের অভিমুখ কোনদিকে এবং সে অভিমুখ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিকশিত হবার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা তার বিচার সবসময়ই কর্তব্য।

জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে পারে সেই ধরণের দাবিদাওয়া কেমন হতে পারে? সে ব্যাপারে আলাদা ভাবে বিস্তৃত আলোচনা জরুরী। তবে কয়েকটি বিষয় জনগণের কাছে স্পষ্ট। জনগণের প্রথম ও প্রধান গণতান্ত্রিক দাবি হচ্ছে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থার বিপরীতে নাগরিক ও মানবিক অধিকার সম্বলিত একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র। এর জন্য দরকার ইসলাম-বিদ্বেষী রাজনীতি জনগণকে যেভাবে বিভক্ত ও বিষাক্ত করেছে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসাবে জনগণের মধ্যে সেই বিভক্তির নিরসন। বিশেষ বিশেষ আত্ম-পরিচয়ের সামাজিক পরিমণ্ডলের উর্ধে জনগণের মধ্যে নাগরিক চেতনার উন্মেষ ঘটানো। যাতে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে জনগণের পরিগঠন মজবুত করা যায়। নতুন গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা এ কারনেই আমরা বারবার বলি।

দুই, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করবার জন্য জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ক্ষুদ্র দেশ চতুর্দিকে বৈরী রাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকলে চরিত্রের দিক থেকে এই ব্যবস্থা গণপ্রতিরক্ষার চরিত্র পরিগ্রহণ করে বা করতে বাধ্য। এই ব্যবস্থার আরেকটি নীতি বা দর্শন হচ্ছে প্রতিবেশী দেশের গণতান্ত্রিক জনগণের সঙ্গে মৈত্রীর চর্চা। এই মৈত্রী জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্যও জরুরী। দিল্লীর আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার অর্থ ভারতের কিম্বা মায়ানমারের গণতান্ত্রিক জনগণের বিরোধিতা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য এই মৈত্রীর চর্চা দরকার। সামগ্রিক ভাবে বাংলাদেশে পরাশক্তির নিরন্তর হস্তক্ষেপ বা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান অবশ্যই জরুরী। কিন্তু দিল্লীর প্রশ্ন এখন বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ । কারণ হচ্ছে দিল্লী পরিষ্কারই জানিয়ে দিয়েছে যে শেখ হাসিনাই ক্ষমতায় আবার প্রত্যাবর্তন করুক, তারা তাই চায়। এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম মূলত দিল্লীর আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামেরই নামান্তর। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

জনগণের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, জীবন জীবিকা ও সামাজিক ইনসাফ নিশ্চিত করবার দাবি। শ্রমিকদের ন্যূনতম আট হাজার টাকা মজুরী নিশ্চিত করা এবং কৃষককে অবাধ বাজার ব্যবস্থার শোষণ থেকে রক্ষা করা; বিশেষত কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থাকে বহুজাতিক কোম্পানি ও দেশের দুষ্ট ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করা প্রধান কর্তব্য হয়ে উঠেছে। কৃষকের হাতে থাকা খাদ্য ও বীজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে তা কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পথ আত্মঘাতী পথ। এই পথ থেকে দ্রুত ফিরে আসতে হবে। চতুর্থ ইস্যু হচ্ছে, প্রাণ, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র রক্ষা। এই দিকটির পূর্ণ মনোযোগ ছাড়া এ কালে কোন সমাজ বা রাষ্ট্রই টেঁকসই হতে পারে না।

পঞ্চম দাবি হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থান মজবুত করা। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সক্ষম ও মজবুত করে তোলার সঠিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন ও সঙ্গতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এই নীতির মর্ম কথা বাজার ব্যবস্থাকে ‘অবাধ’ করা নয়, আবার রাষ্ট্রায়ত্বকরণও নয়, সমাজতন্ত্রের নামে ব্যক্তির প্রণোদনা ও উদ্যাগকে যেভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল তাও নয়। বরং দরকার বাজার ব্যবস্থাকে উপযুক্ত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নীতি ও শৃংখলার অধীনে এনে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অভিমুখী করা। রাষ্ট্রীয়করণ বা সমাজতন্ত্রের নামে অচল অদক্ষ আমলাদের হাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তুলে দেওয়া নয়। বরং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পথে সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অপসারণ করা এই নীতির প্রাথমিক পদক্ষেপ। এই নীতি বাজার ব্যবস্থা অবাধ করার নামে মুনাফাখোরী ও অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়নকে বাধাহীন করে না, বরং পুঁজির গতিশীলতাকে সমাজের অন্তর্নিহিত উদ্যোগ ও শক্তিকে বিকশিত হবার সুযোগ করে দেয়। বিশ্ব পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রান্তে থেকেও বিভিন্ন দেশ কিভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগেই গিয়েছে সে উদাহরণ এখন আমাদের সামনে আছে। তার সীমা, সম্ভাবনা ভালমন্দ বিচার করে বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত অর্থনৈতিক উন্নতির নীতি প্রণয়ন কঠিন কোন কাজ নয়।

আমি মনে করি এই পাঁচটি সংক্ষিপ্ত অথচ মৌলিক গণতান্ত্রিক দাবি লিবারেল রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব। যারা ন্যূনতম বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী তাদের এই দাবিগুলো সমর্থন না করার কোন কারন নাই।

১০ নভেম্বর, ২০১৩/ ২৬ কার্তিক, ১৪২০, আরশিনগর

... ... ... ... ... ... ... ... ... ...

[ লেখাটি ‘জনগনকে আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে ছাপা হয়েছিল। পাঠকের সুবিধার জন্য সে লেখার প্রথম অংশ খানিক পরিমার্জনা করে এখানে পেশ করছি, যাতে এ বিষয়ে আরও ইতিবাচক আলোচনা  তর্কবিতর্ক করা যায়]

(১) এই লেখা যখন লিখছিলাম তখন এটাই বাস্তবতা ছিল।

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।