গ্রামে সম্পর্ক ক্ষয়ের একটি নজির
ভাবছিলাম কোন ঘটনা কিম্বা ছোটখাট লক্ষণ দেখে সমাজে চিন্তাভাবনার গতি প্রকৃতি সম্পর্কে কমবেশী নিশ্চিত কোন ধারণা করা সম্ভব কিনা। যার ভিত্তিতে সমাজের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে আগাম কিছু বলে দেওয়া হয়তো সম্ভব।
এভাবে কল্পনা করুন। চৈত্রের দাবদাহ, খাঁ খাঁ রোদ। আপনি গ্রামে। দেখছেন গ্রামের একজন অসহায় অভাবী মহিলা একটি পুকুরের প্রশস্ত পাড়ের পাশে এসে অঝোরে কাঁদছে। এটা ছোটখাট পুকুর নয়। গ্রামের মোটামুটি ধনির পুকুর। মহিলার হাতে তার ছাগলের দড়ি্র একটি প্রান্ত। হয়তো এই পশুটিই তার জীবনের একমাত্র সম্বল। একটি পুকুরের পাড়ে ছাগলকে ঘাস খাওয়াবার জন্য চরাতে এসেছিল। কিন্তু এসে দেখছে পুকুরের মালিক আগাছানাশক দিয়ে সবগুলো ঘাস মেরে ফেলেছে। ঘাসগুলো যেন কেউ আগুনে পুড়ে দিয়েছে। সেই পোড়া ঘাস দেখে এই কান্না। আজ অনেক দিন পর লিখতে বসে এই ছবিটিকে কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারছি না। কারন এবার গ্রামে এই ছবিটি দেখলাম।
প্রায়ই গ্রামে থাকি। এবার গ্রামে বহু পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। বিশেষত মানুষের চিন্তায়, মানসিকতা এবং আচরণে। গ্রামে আগে দ্বন্দ্ব-সংঘাত থাকতো না তা নয়, অবশ্যই থাকত এবং তা মারাত্মকও হতে পারত। কিন্তু সেই দ্বন্দ্বের মধ্যেও সমাজকে চেনা যেতো। কোথায় সমাজের সীমা শুরু আর ব্যক্তির অধিকারের প্রান্তচিহ্ন সেটা বোঝা যেত। ব্যক্তির স্ফূর্তি সমাজের মধ্যে, সমাজের বাইরে নয়, এই বোধটুকু গ্রামের মানুষ হারিয়ে ফেলে নি। এই বোধ সজ্ঞান ও সচেতন উপলব্ধি থেকে জাত বলে দাবি করা যাবে না, হয়তো মানুষ নিজেকে গ্রাম সমাজেই আবিষ্কার করতো বলে সামাজিক বোধ নিতান্তই প্রাকৃতিক বোধ হিসাবেই জারি থাকত। দ্বন্দ্ব ও বিরোধ সমাজ থেকে উদ্ভুত হোত সন্দেহ নাই, কিন্তু তার সমাধানও সমাজের মধ্যেই মানুষ খুঁজত। এখন পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্ক ও সেই সম্পর্কের পরিব্যাপ্ত গোলকায়নের ফলে ব্যাক্তিতান্ত্রিকতা প্রবল ও প্রকট হয়ে উঠেছে। সমাজকে আর আগের মতো চেনা যাচ্ছে না। অর্থাৎ ব্যাক্তি কোথায় ও কিভাবে সমষ্টির অংশ সেই উপলব্ধি হারিয়ে ফেলছে। নিজের ব্যাক্তিতান্ত্রিক স্বার্থের বাইরে তার নিজের সামাজিক বা সামষ্টিক পরিচয় নিজে আর সে নির্ণয় করতে পারছে না। চেনা না যাবার কারণে সমষ্টির স্বার্থ নির্ণয় ব্যাক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্যই কঠিন হয়ে পড়েছে। সকলের মঙ্গলের কথা ভেবে ইতিবাচক কোন উদ্যাগ গ্রহণ ও সফল হওয়া খুবই কঠিন। একটি ছোট উদাহরণ দিচ্ছি।
এই প্রথম ঈশ্বরদির একটি গ্রামে বিশাল বিশাল মাছের পুকুরের পাড়ের সমস্ত ঘাস আগাছা নাশক বিষ দিয়ে নষ্ট করে ফেলার উৎসব দেখলাম। এই ঘাস আগেও দেখেছি। গ্রামের গরিব, অনাথ ও ক্ষমতাহীন পরিবারগুলো এখানে তাদের ছাগলগুলো চরাতো। বিশেষত মহিলা বা কিশোরিরা। একটু অবস্থাপন্নরা তাদের গবাদি পশুগুলো নিয়েও এখানে রাখাল দিয়ে চরাতেন। একটি পুকুরের পাড়ে একজন মাঝ বয়েসী মহিলা ছাগল চরাতে এসে দেখলাম অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছেন। তাঁর ছাগলের জন্য ঘাস এখন তিনি কোথায় পাবেন?
যে আগাছা নাশক বিষ দিয়ে ঘাসগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে তার নাম প্যারাকুয়েট। এটি একটি মারাত্মক বিষাক্ত আগাছা নাশক (Herbicide)। প্যারাকুয়েট এতো বিষাক্ত যে অতি অল্প পরিমান শরীরে প্রবেশ করলে তা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এটি বহুজাতিক কোম্পানি সিনজেন্টা বাজারজাত করে। বাণিজ্যিক নাম ‘গ্রামক্সোন’। তবে ভারত থেকে চোরাই পথে এই ধরণের বিশ নিয়মিত আসে এবং গ্রামে নজরদারির অভাবে তা হরদম ব্যবহার হয়। বিষ হিসাবে প্যারাকুয়েট কতোটা মারাত্মিক তা সিনজেন্টার দেওয়া তথ্য থেকেও পরিষ্কার। (এখানে দেখুন) ।
পৃথিবীতে প্রথম প্যারাকুয়েট প্রস্তুত করা হয় ১৮৮২ সালে। সে সময় থেকে শুরু করে ১৯৫৫ সাল অবধি কোনো দেশে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদন পপায় নি । ১৯৬২ সালে সর্বপ্রথম বহুজাতিক কোম্পানি আইসিআই এই বিষ বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে।
প্যারাকুয়েট এতো বিষাক্ত যে কৃষিকর্মী এবং কৃষক শস্য উৎপাদনে এটি ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। প্যারাকুয়েটের কারণে দীর্ঘমেয়াদী জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হয় এমনকি দ্রুত মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান অবধি প্যারাকুয়েটের প্রতিষেধক সৃষ্টি করা সম্ভব হয় নাই। প্যারাকুয়েট প্রধানত ফুসফুস, চামড়া ও স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। এটি মানুষসহ সকল প্রাণিকূলের জন্য মারাত্মক বিষ।
প্যারাকুয়েট শরীরে প্রবেশ করে কলিজা, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড ও বৃক্কাশয় বা কিডনি লিভার, লাংস, হার্ট এবং কিডনি অকেজো করে দেয়। ফলে মানুষ কয়েক দিনের মধ্যে মৃত্যুমুখে পতিত হয় অথবা কলিজা, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড ও বৃক্কাশয়ের অসুখে ভোগে।
বাংলাদেশে জলজ আগাছা নিধনের জন্য প্যারাকুয়েট ব্যবহারের কথা বলে আমদানি করা হয়। কিছু কিছু বিজ্ঞানী কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে গবেষণার নামে প্রমাণ করতে সচেষ্ট যে জলজ আগাছা নিয়ন্ত্রনের জন্য শ্রমিক খরচ কমানো ও দ্রুত জমি চাষাবাদের জন্য পারাকুয়েট ব্যবহার সাশ্রয়ী। এই বিষের ভয়াবহ ক্ষতির দিকটা তারা চেপে যায়। বাংলাদেশের বরিশাল জেলার দুটি এলাকার জলজ আগাছা নিধনের জন্য প্যারাকুয়েট ব্যবহার করা হয় এবং প্যারাকুয়েটের আগাছা নিধনের কর্মক্ষমতা কতটুকু তা পরিমাপ করার জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা গবেষণা বিভাগ এ কাজটি করে। এখানে একটি লিঙ্ক দিচ্ছি যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের জলাভূমিতে আগাছা নিধনের জন্য পারাকুয়েট ব্যবহার কার্যকর। বিজ্ঞানীদের বড় একটি অংশ বহুজাতিক কোমাপ্নির স্বার্থ রক্ষার জন্য এই ধরণের প্রচারমূলক গবেষণা করে।
প্যারাকুয়েটসহসহ সকল বিষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
প্যারাকুয়েট ব্যবহারের ফলে কয়েক গন্টার মধ্যেই পুকুরের পাড়ের ঘাসের কী দশা হয়েছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। এই বিষ গড়িয়ে পানিতে যাবে এবং নানাভাবে ছড়িয়ে মানুষ, পশু, পাখির খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে প্রাণের মারাত্মক ক্ষতি ঘটাবে।
কমন প্রপার্টি বলে ইংরেজিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা আছে। ব্যাক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে এনক্লোজিওর বা একটি জমি ঘিরে রাখার বিপরীতে কমন প্রপার্টির ধারণাটিকে কিছুটা বোঝা যায়। আমরা সেটা বুঝি গ্রামের খাস পতিত জমি হিসাবে, যদিও তা আসলে রাষ্ট্রের ‘ব্যক্তিগত’ সম্পত্তি। অর্থাৎ রাষ্ট্র ইচ্ছা করলে গরিব মানুষকে সেই জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে। এমন কোন জমি বা জল মহাল যা কারো সম্পত্তি নয়, কিন্তু সকলেরই তা ব্যবহারের অধিকার আছে সে প্রকার জমি গ্রামে নাই বললেই চলে। কিন্তু নৈতিক জায়গা থেকে বাংলাদেশের গ্রামের সাধারণের অধিকার হিসাবে কিছু বিষয় মেনে চলা হয়। যেমন আমার জমির আইলের ঘাস যদি আমি ব্যবহার না করি তাহলে তার ওপর গ্রামের গবাদি পশুর অধিকার মেনে নেওয়া হয়। যে কেউই তা কেটে নিয়ে তার গবাদিপশুকে খাওয়াতে পারে। একই অধিকারের বলে বড় বড় পুকুরের উঁচা পাড়ের ঘাস গ্রামের গরিবদের ছাগল বা গবাদিপশু চরবে – এই অধিকারটুকু গ্রামের মানুষ সব সময় স্বীকার করে নিয়েছে। বলা বাহুল্য ফসলের বা মাছের কোন ক্ষতি না করে। গবাদি পশুর গোবর বা চনাটুকু জমির মালিকের বটে। বিনিময়ে হয়তো অন্য কাজে অবস্থাপন্নরা গরিবদের পেয়েছে।
ঘাসগুলো পুকুরের মালিক আগাছা নাশক দিয়ে ধ্বংস করছে কেন? যা আবার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি? এর উত্তর খোঁজা জরুরী মনে করে একজন জমি – অর্থাৎ পুকুরের মালিককেই জিজ্ঞাসা করি। তার সোজা উত্তর তিনি চান না তার পুকুরের পাড়ে কোন মহিলা ছাগল চরাতে আসুক, তিনি সে কারনে আগাছা নাশক দিয়ে ঘাস নষ্ট করে ফেলছেন। একটু অবাক ও থতমত হয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, এলে কী ক্ষতি? তাঁর উত্তর এটা তাঁর জমি, অন্যে এখানে আসবে কেন? কিন্তু তারা তো কোন ক্ষতি করছে না এই কথা বলার পর তিনি ক্ষতির মস্তো এক ফিরিস্তি দিলেন যার কোন সত্যতা নাই। সারমর্ম হোল ব্যাক্তিগত সম্পত্তি্র ধা্রণা্র সঙ্গে নৈতিক অধিকারের অনুষঙ্গ আগে যেভাবে জড়াজড়ি করে বিরাজ করতো তার ক্ষয় হয়ে গিয়েছে। ফলে গরিব মহিলা তার ছাগল চরাতে পারছে না, এটা গ্রামে আগের মতো কোন নৈতিক সংকট তৈরি করছে না। এই ঘটনাটির গুরুত্ব বোঝার সামর্থও সমাজ হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের কোন সামাজিক গবেষণায় এর আদৌ কোন স্থান হবে কিনা সন্দেহ। নীতিনৈতিকতা বা গরিবের হক নামক কোন ধারণ বা উপলব্ধি গ্রামে যেভাবে আগে টের পাওয়া যাতো তার ছিঁটেফোঁটা আর অবশিষ্ট আছে কিনা সন্দেহ। ব্যাক্তিগত সম্পত্তির আইনী ধারণা আগের তুলনায় পোক্ত হয়ে গেছে সেখানে নৈতিক অধিকারের আর কোন বালাই নাই। এর অর্থ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্ক এখন কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের আইনী ব্যবস্থার অধীনস্থ হয়ে পড়েছে। ‘সমাজ’ নামক যে ব্যবস্থা বিভিন্নপর্যায়ে ক্রিয়াশীল থাকত তার ক্ষয় ঘটেছে।
প্যারাকুয়েট ব্যবহারে ঘাসগুলো কয়েকঘন্টার মধ্যেই মরে শুকনো খড় হয়ে যায়। এই ঘাস কোন কাজে লাগে না। বিষাক্ত বর্জ্য হিসাবে ক্রমাগত পুরা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাতে থাকে।
সম্পত্তিতে সাধারণের অধিকার গ্রামে নৈতিকতা বোধের সঙ্গে জড়িত। কোন আইনী বা বিধি বলে নয়। অর্থাৎ গরিবের ‘হক’ এই ক্ষেত্রে আইন দিয়ে বলবৎ যোগ্য নয়। সেখানে ধর্ম, নীতিনৈতিকতা, গ্রামীন ঐতিহ্য ইত্যাদির ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সম্পত্তির মালিক আমি হলেও আমি যা ব্যবহার করি না, বা যার কোন ব্যবহার আমার নাই তার ওপর গরিবের ‘হক’ আছে। ঘাস জমির মালিক লাগায় নি। এটা আল্লার দান। পশুপাখি কীট পতঙ্গ সকলেরই এই দানের ওপর অধিকার আছে। ফলে গরিব মহিলারা যখন ছাগল চরাতে আসে তখন তারা সেই নৈতিক অধিকারের শক্তিতেই আসে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি আইনী অধিকার, রাষ্ট্র যা বলবৎ করে। কিন্তু গরিবের হক আইনের বিধিবদ্ধতা দিয়ে নির্ণয় বা কার্যকর হয় না। সেটা আইনের অতিরিক্ত নৈতিক অধিকার স্বীকার করবার মধ্য দিয়ে বিধিবদ্ধ আইনের আওতা অতিক্রম করে যায়। গরিবের হক বা নৈতিক অধিকারের মাত্রা দ্দ্বারা আমরা একটি গ্রাম বা সমাজকে বুঝতে পারি। বাস্তবে ব্যাক্তিগত সম্পত্তি নামক ‘বিমূর্ত কোন ব্যবস্থা নাই। একে সব সময়ই সুনির্দিষ্ট সামাজিক-ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে বিদ্যমান বাস্তবতা বিচার করেই বুঝতে হবে। এই কারনে গ্রামে দড়ি হাতে মহিলা বা কিশোরিরা যখন ছাগল চরায় তার তাৎপর্য অনেক গভীর। নৈতিক অধিকার ব্যাক্তিগত সম্পত্তিকে এই ক্ষেত্রে বিশেষ রূপ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে বাম বা কমিউনিস্ট আন্দোলনের ব্যার্থতার একটা বড় কারণ ব্যাক্তিগত সম্পত্তিকে একটি বিমূর্ত ধারণা হিসাবে গণ্য করা এবং এর বিরুদ্ধে ডন কিয়োটের মতো ছায়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। আসলে দরকারি কাজ হচ্ছে সম্পত্তির বিশেষ ধরণকে চেনা ও সম্পত্তির বিশেষ রূপ কিভাবে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত তৈরি ও নতুন বৈপ্লবিক রাজনীতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয় তা ভালোভাবে বোঝা। সন্দেহ নাই, বাংলাদেশের আগামি দিনের লড়াই সংগ্রামের নীতি ও কৌশল নির্ণয় গ্রামীন বাস্তবতাকে সুনির্দিষ্ট ভাবে বোঝার ওপর নির্ভর করবে।
বিষয়টি এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন? গুরুত্বপূর্ণ কারণ যে সকল নীতিনৈতিকতার ক্ষেত্র সমাজের ভিত্তি টিকিয়ে রাখছিল তা দ্রুত অপসৃয়মান। গ্রামে ‘সমাজ’ কথাটা এই নীতিনৈতিকতার পরিমণ্ডলেই অর্থপূর্ণ হয়। অনাথ ও গরিবের অধিকার বা ‘হক’ মেনে নেওয়ার অর্থ নিজেকে একই সমাজ বা জনগোষ্ঠির অন্তর্গত গণ্য করা। যেখানে সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষটিরও কিছু হক বা অধিকার আছে যা নৈতিক কারণে বহাল থাকে। কোন আইনী কায়দায় আধুনিক রাষ্ট্রের শক্তির দ্বারা বলবৎ হয় না।
আমি ঠা ঠা চৈত্রের রোদে আগাছা নাশক দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা ঘাসের সামনে একটি অবোধ পশুর দড়ি ধরে কান্নায় ভেঙে পড়া মহিলার ছবি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। গ্রামের রূপান্তর সম্পর্কে যে ধারণাগুলো এই ধরণের ছোটখাট ঘটনার মধ্য দিয়ে দেখি, তাতে বুঝতে পারি আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
২ বৈশাখ, ১৪২৩, আরশীনগর