দুই: তুখমি রক্ষায় তাজিক নারী


মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানে মানুষের সংখ্যা খুব কম, মাত্র ৭৫ লাখ, তাদের দেশের আয়তন ১৪৩,১০০ বর্গ কিলোমিটার। তুলনায় বাংলাদেশের আয়তন ১৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার অথচ জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। অর্থাৎ প্রায় একই সমান আয়তনে তাজিকিস্তানে ১৭ গুন কম মানুষের বাস। শুধু বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরেই প্রায় ২ কোটি মানুষ থাকে। তাজিকিস্তানে উঁচু পর্বত থেকে শুরু করে নিচে সমতল ভূমি – তার মানে এই সব অঞ্চলে যতো রকম ফসলের বৈচিত্র্য পাওয়া যাওয়ার কথা তাদের কাছে সবই ছিল এককালে, এখন অনেক কিছু হারিয়ে গিয়েও আছে। তাজিকিস্তান বিশ্বের শুষ্ক অঞ্চলের অন্যতম, তাই শুষ্ক অঞ্চলের ফসল এখানকার কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্য।

তাজিকিস্তান মূলত কৃষি প্রধান দেশ। কিন্তু পাহাড়ি। উঁচু পর্বতের উচ্চতা বিশেষে বছরে কয়েকমাস বরফে ঢাকা থাকে। বসন্তকাল থেকেই তাদের কৃষি কাজ শুরু হয়ে যায়। পাহাড়ের ভূমি কৃষি কাজেই ব্যবহৃত হয়। কৃষিই জনগণের প্রধান কর্মসংস্থানের উপায়, এবং দেশের জিডিপির ৩০% অবদান রাখে। মূল ফসল তুলা, গম, ফল (বিশেষ করে আপেল, আনারসহ নানা রকম ফল), কিছু সব্জি এবং গবাদি পশু (বিশেষ করে গরু, ভেড়া)। বন এলাকা খুব কম, মাত্র ৩ -৫%।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার পর তাজিকিস্তান স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হিশেবে স্বীকৃতি লাভ করে, কিন্তু ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত দেশে গৃহযুদ্ধ চলে। তাজিকিস্তানের কৃষি বুঝতে হলে সোভিয়েত ইউনিয়নের কৃষি নীতি, গৃহযুদ্ধ এবং তার পরের আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের ভূমিকা জানা দরকারি। বীজ ও প্রাণসম্পদ রক্ষায় যারা নিয়োজিত তাঁরা এই প্রসঙ্গ টেনে আনবেনই।

তাজিকিস্তান খুব চোখে পড়ার মতো দেশ নয়। তার বিমান বন্দরে টুরিস্টদের ভিড়ও তেমন নেই। উন্নয়ন সংস্থাগুলো এসেও খুব ভিড় করে নি। কিন্তু তবুও তাজিকিস্তানের ফসলের বীজ বাইরের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায় নি। তাজিকিস্তানের কৃষক নিজেরা যে বীজ সংরক্ষণ করতেন সেই বীজ ব্যবহার না করে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার কৃষকদের হাইব্রীড বীজের ব্যবহারে বাধ্য করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের আধুনিক কৃষি নীতি, (১৯২৯ -১৯৩৩) সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্রাডিশানাল কৃষিকে বদলে দেবার লক্ষ্যে করা হয়েছিল; একই সাথে ধনী কৃষকদের (কুলাক) ক্ষমতা টেনে ধরাও স্টালিনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।


 

Tukhmi

তাজিক কৃষক নারীরা নিজ নিজ এলাকা থেকে বিভিন্ন ফসলের বীজ এনেছেন। তেল বীজ, ছোলা, ফুলের বীজ, সীম, গমসহ অনেক ফসলের বীজ এনেছেন। এর মধ্যে অনেক বীজ হারিয়ে যেতে বসেছে, যা তাঁরা নিজের মতো করে চাষ করে ধরে রেখেছেন।


কৃষকদের ব্যক্তিগত মালিকানায় কোন জমি নাই। তাদের বড় কালেক্টিভ ফার্মের অংশ হয়ে কাজ করতে হয়। ব্যক্তি মালিকানায় জমি না থাকার ভাল দিক আছে, বাংলাদেশের মতো জমি অনুপস্থিত মালিকদের কাছে জিম্মি নাই। তবে বর্তমান তাজিকিস্তানে ব্যক্তি মালিকানায় জমি না থাকলেও কালেক্টিভ ফার্মের অস্তিত্ব খুব একটা নেই। কৃষকের কাছে যৌথ খামার নীতি খুব জনপ্রিয়তা পায় নি, তার একটি প্রধান কারণ আমার মনে হয়েছে, কৃষকের ওপর জবরদস্তি স্থানীয় বীজের পরিবর্তে হাইব্রীড বীজ চাপিয়ে দেয়ার নীতি। রাষ্ট্রের অধীন যৌথ খামার কেন্দ্রীয় ভাবে কৃষকদের ওপর হাইব্রিড বীজ চাপিয়ে দেবার নীতির বিরুদ্ধে কৃষকদের তরফে ক্ষোভ ও প্রতিরোধ ছিল। এখনও রয়েছে।

 

তুখমি হচ্ছে ফারসি ভাষায় ফসলের বীজ। ২০১৯ সালের জুনের ২২ থেকে ২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত ‘জান ওয়া জমিন’ (নারী ও জমি) প্রতিষ্ঠান ৩২ জন অংশগ্রহণকারি নিয়ে কমিউনিটি সীড ব্যাংক করার লক্ষ্যে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেন। এতে বাংলাদেশের নয়াকৃষি আন্দোলনের বীজ সম্পদ কেন্দ্র পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আমাকে প্রশিক্ষক হিশেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তাই এখানে আসার এই দুর্লভ সুযোগ হোল।

অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশ ছিল কৃষক। আবার কয়েকটি সংগঠন ছিল যারা সরাসরি কৃষকের সাথে কাজ করে এবং তুখমি সংরক্ষণের চেষ্টা করছে। এই প্রশিক্ষণে কৃষকরা তাদের নিজ নিজ এলাকার তুখমি নিয়ে এসেছেন দেখাবার এবং আলোচনার জন্যে। তারা তুখমি নিয়ে জানার জন্য অস্থির হয়ে আছেন। কারণ তুখমি বা বীজ হারিয়ে যাচ্ছে, একে রক্ষা করতে হবে।

রুশ বিজ্ঞানী নিকোলাই ভাবিলভ (১৮৮৭-১৯৪৩) বিংশতাব্দির শুরুতে বীজ সংগ্রহের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছিলেন। প্রয়োজনীয় খাদ্য ফসলের বীজ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভাবিলভ তাজিকিস্তান এসেছিলেন। বিশেষ করে গমের বীজ সংগ্রহ করার জন্য। কয়েকটি বিশেষ জাতের গমের বীজ, যা তাজিকিস্তান ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় নি, সংগ্রহ করে লেলিনগ্রাডে ( বা বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গ) তাঁর সংগ্রহশালায় রেখেছিলেন। এই সংগ্রহশালা পৃথিবীর সর্বপ্রথম বীজ বা জার্মপ্লাজম সংরহশালা। এখনও বৈশ্বিক বিচারে প্রধান বীজ সংগ্রহশালা বলে পরিচিত। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই সংগ্রহশালা অবহেলায় পড়ে আছে। ভাবিলভের সংগ্রহ করা গমের বীজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “সুখাক” নামের লাল গম বা গন্দম। গ্রামের নারীরা আজও সেই গমের চাষ ধরে রেখেছেন, যদিও তা জাতীয় পর্যায়ের গম চাষের তুলনায় অনেক কম।

প্রশিক্ষণে বীজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন কবে থেকে এবং কেন এসেছে বোঝার জন্যে অংশগ্রহণমূলক গবেষণার ‘টাইম লাইন টুল’ ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা আমরা লোকায়ত জ্ঞাঞ্চর্চার পদ্ধতি হিশাবে কানাডার কার্ল্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তৈরি করেছিলাম। তাজিক নারী ও পুরুষ ১৯৭০ সাল থেকে গত ৫০ বছরে ফসলের কি পরিবর্তন হয়েছে, এবং কেন হয়েছে তারই বিস্তারিত আলোচনা করেন। আধুনিক কৃষি সোভিয়েত ইউনিয়নে গুরুত্ব পেলেও তাজিকিস্তানে অত গুরুত্ব পায়নি। তবে সোভিয়েত রাশিয়ায় বেশি ফলনের নীতি তাজিক কৃষি নীতিতে পরিবর্তন ঘটিয়েছিল ১৯৮০ সালের দিকে। তখন তাজিকিস্তানে হাইব্রীড বীজ আমদানী করা হয়। কৃষকদের ধারণা ১৯৯০ সালের দিকে আমদানি করা বীজের কারণে বিভিন্ন ফসলে রোগ দেখা দেয় এবং তার কারণে অনেক জাত নষ্ট হয়ে যায়। উল্লেখ্য সেই সময় হাইব্রীড ছাড়া অন্য ফসল করতে দেয়া হোত না।

১৯৭০ সালে কৃষকরা মূলত স্থানীয় জাতের ফসল আবাদ করতেন। এর মধ্যে প্রধান ফসল ছিল গন্দম বা গম (জাত -সুখাক/শিয়ালেশ), ছোলা (Cicer, Chazchi ) টমেটো (জাত-গুলুবি, শি্রিনাক), শসা (জাত -ববুই), বার্লি (সেকালে)। রান্নার জন্যে ফ্লেক্স বীজ থেকে তেল তৈরি করা হোত। কালো মুগ ডাল এবং সাদা মুগ ডাল ও চাষ হোত। তুলা-বীজের তেল দিয়েও রান্না করা হোত, এটা সোভিয়েতের সময়কালে বিশেষ নির্দেশনা ছিল।

স্থানীয় জাতের তুখমির বড় গুন ছিল যে এগুলো ছিল রোগমুক্ত এবং খেতে খুব স্বাদ ছিল। বীজ সংরক্ষণ করা হোত কাপড়ে বেঁধে। বীজ সংরক্ষণের কাপড়ের ব্যবহার বিশেষ আদ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্যে খুব সহায়ক।


Tukhmi_2

দুসাম্বে শহরে সেন্টার ফর জেনেটিক রিসোর্সেস এ বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ বীজ সংগ্রহ করা আছে। তার মধ্যে ছোলা (chick-pea) অন্যতম, স্থানীয় জাত শুরোবদ, যা পৃথিবীর অন্য কোনখানে পাওয়া যায় না। 


সোভিয়েত নীতি মেনে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি চালু করা হোল, এবং এই সময় থেকেই তুখমির ওপর আগ্রাসন দেখা গেল। এই সময় হাইব্রীড বীজ প্রবর্তন করার মাধ্যমে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হোল। কিন্তু আসলে তাতে খাদ্য উৎপাদনের সমস্যা আপাতত মিটলেও দীর্ঘ মেয়াদে মেটে নি, কারণ হাইব্রীড বীজ তিন বছরের মধ্যেই তার উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কৃষককে বারে বারে বাজার থেকে বীজ কিনতে হয়। এভাবে তাদের নিজেদের সংগ্রহ করা বীজের ব্যবহার কমতে থাকে এবং মূল্যবান স্থানীয় জাতের বীজ হারিয়ে যেতে থাকে।

 

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর দেশে ১৯৯১ সালে গৃহযুদ্ধ লেগেছিল। তাতে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল; মানুষে মানুষে, পরিবারের ভেতর, বন্ধু-বান্ধব একে অপরের শত্রু হয়ে উঠেছিল। সেই সময়ের কথা বলতে গিয়ে অনেকে মন খারাপ করেন। এই কঠিন সময়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মানবিক সাহায্য “Humanitarian Assistance” নামে এগিয়ে এসেছিল। তারা বিদেশ থেকে খাদ্য নিয়ে আসে, বিশেষ করে গম। তাজিকিস্তানের তুখমি এই সময়েই সত্যিকারের আগ্রাসনের শিকার হয়। গন্দম বা গম তাদের অত্যন্ত প্রিয় একটি ফসল। এটাই তাদের প্রধান খাদ্য ফসল। সেই গন্দমের স্থানীয় জাতের বীজ চাষ করতে না দিয়ে তাদের আমদানি করা বিদেশী জাতের হাইব্রীড গমের চাষ শুরু করতে বাধ্য করা হোল। এখন যে গম তাজিকিস্তানে হয় তার বেশির ভাগই হাইব্রীড এবং বিদেশী জাতের। গমের বামুন জাত প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৩ সালে এই বামুন জাতের গমে রোগ দেখা দেয়। ২০০০ সালের মধ্যে কৃষকরা দেখেন তাদের নিজস্ব গমের জাতগুলো আর নেই। ২০১০ সালে সাদা গমের তুখমি আর পাওয়া যাচ্ছিল না। অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করলেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সাহায্যের নামে অনেক ক্ষতি করেছে, তারা চাইতো কৃষকরা শুধু আমদানি করা খাদ্য ব্যবহার করুক। ফলে কৃষকরা অলস হয়ে যেতে শুরু করলো। এই প্রবণতা ১৯৯১ সালের গৃহযুদ্ধের পর থেকে এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য আসার পর থেকে দেখা যাচ্ছিল।

নতুন ধরনের খাদ্য প্রবর্তন করতে গিয়ে দেখা অন্য ফসল নষ্ট হচ্ছে। আলুর বেশ কিছু স্থানীয় জাত ছিল, কিন্তু মাশরুম চাষ করতে গিয়ে আলুতে রোগ দেখা গেল। গোলাপি রংয়ের আলু, খরবুজ (তরমুজ), স্থানীয় জাতের শসা বিশেষ ভাবে হারিয়ে যেতে শুরু করলো, এর পরিবর্তে যেসব আলু, তরমুজ, শসা চাষ হচ্ছে এবং বাজার ভরে আছে, কিন্তু তাতে কোন স্বাদ নেই। ছোলার কয়েকটি জাত ছিল যা হারিয়ে যেতে শুরু করলো। ফসলের উৎপাদনের পরিমান বাড়লো কিন্তু খাদ্য মানের দিক থেকে খুব খারাপ হতে লাগলো।

সবচেয়ে বড় কথা কৃষকদের নানা রোগ দেখা দিতে শুরু করলো। কৃষকের ডায়াবেটিস রোগ আগে হয় নি, কিন্তু ২০০১ সালের পর থেকে এই রোগ দেখা দিতে শুরু করলো।

যেসব ফসলের বীজ হারিয়ে যাচ্ছে বলে কৃষক কষ্ট পাচ্ছে তা হচ্ছে গম, ছোলা, শসা, তরমুজ ও আলু।

তুখমি হারিয়ে যাচ্ছে তাজিক কৃষদের এই আহাজারি বাংলাদেশের কৃষকদের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। তাই তাজিক নারী তুখমি রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। তাঁরা নিজেরাই এতোদিন যতোটুকু পেরেছেন স্থানীয় জাতের বীজ রক্ষা করেছেন। অল্প করে হলেও চাষ করে বীজ টিকিয়ে রেখেছেন। এখন তাঁরা সামাজিক বীজ সংগ্রহ পদ্ধতি অনুসরন করে পুরো জনগোষ্ঠির দায়িত্ব নেবেন। এগিয়ে এসেছেন অভিজ্ঞ নারী কৃষক কোভালিন জেলার হারামগুল রিযোয়েভা, হামাদোনি জেলার ইওরমাতোভা হাদিসা, মোমিনবোদ জেলার মামাদোভা মোমাগুল, শোহিন জেলার নাজিমোভা গুলদস্তা। রানো, জমজম ও ইওকসু নামের তিনটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন জানালেন তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে হারানো বীজ উদ্ধার করা। উন্নয়ন সংগঠন রানোর মতে উঁচু পর্বতে থাকা তাজিকরা বীজ সংরক্ষণে উপত্যকার (ভ্যালী) কৃষকদের তুলনায় ভাল ভাবে রক্ষা করছে। তাজিকিস্তানে বেশ কিছু অঞ্চল আছে যেখানে পানির সংকট আছে, আবার কিছু এলাকায় পানির প্রাচুর্য্য দেখা যায়। স্থানীয় জাতের বীজের চাষ বেশির পানি-সংকট এলাকায় হচ্ছে, অন্যদিকে হাইব্রীড ফসলের চাষ হচ্ছে পানি-প্রাচুর্য্য এলাকায়।

জমজম সংগঠন জানায় তারা কৃষকের মাঝে বীজ বিনিময় শুরু করেছেন। তারা কৃষকদের নিয়ে সভা করে স্থানীয় জাতের বীজ রাখা এবং এর মান রক্ষা করা নিয়ে আলোচনা করেন। দীর্ঘ দিন হাইব্রীড চাষ করার কারণে অনেক কৃষক স্থানীয় জাতের বীজ রক্ষার বিষয়টি ভুলে গেছেন। আবার এমনও দেখা গেছে যে বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া বীজ ফিরে পাওয়া গেলেও অনেক কৃষক তার চাষ ভুলে গেছে। এই সময় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার কথা তাদের বলা হোল। নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকরা মনে করেন বীজ রক্ষার অর্থ শুধু সাজিয়ে রাখার জন্যে বীজ রক্ষাই নয়, এর সাথে জড়িত যে জ্ঞান তাকেও রক্ষা করতে হবে। এবং সেটা আসবে সরাসরি চাষের মাধ্যমে। নয়াকৃষির কৃষকরা মনে করেন, কোন বীজ যদি পাওয়া নাও যায়, কিন্তু তার সম্পর্কে জ্ঞান যদি কৃষক সমাজে ‘জীবিত’ থাকে তাহলে এই বীজ অবশ্যই ফিরে পাওয়া যাবে। নয়াকৃষির এই গল্প তাজিক নারীদের খুব অনুপ্রাণিত করে। তারা হারিয়ে যাওয়া বীজ উদ্ধারে আশাবাদী হয়ে ওঠেন। কারণ তাদের অনেকের এই জ্ঞান জীবিত আছে।

সাজিদামো এক পর্যায়ে উঠে বলতে থাকেন, “দয়া করে, দয়া করে আসুন হারিয়ে যাওয়া বীজ ফিরিয়ে আনতে আমাদের যা করতে হয় তাই করি। মামাগুল বলেন, “আসুন আমরা হারিয়ে যাওয়া বীজ উদ্ধারে অভিযানে বের হই, যেমন ভাভিলভ ঘুরেছেন।“

তারা আফসোস করে বলেন, “মানুষের একটি ভুল সিদ্ধান্ত মানবজাতির সব কিছু ধ্বংস করে দিতে পারে”।

কিন্তু আফসোস করে লাভ নেই। কাজ করতে হবে। নয়াকৃষি বীজ রক্ষায় বিখ্যাত শ্লোগান ‘বোনেরা বীজ হাতছাড়া করবেন না’ , যা একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতা অক্ষূণ্ণ রাখার রণধ্বনি, সেটা তাজিক নারীদেরও শ্লোগান হয়ে ওঠে। ভাবতে ভালে লাগে যে বাংলাদেশে যে লড়াই নয়াকৃষি শুরু করেছে, তা আজ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

 

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।