২. চিন ও আমরা
আমরা চিন নিয়ে কথা বলছি, কিন্তু যেভাবে চিন নিয়ে কথা হয় তাতে আমাদের বিশেষ আগ্রহ নাই। যেমন, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা কি ভারত ছেড়ে পিকিং-এর দিকে ঝুঁকছে? ভারতকে শায়েস্তা করতে হলে আমাদের কি চিনের পক্ষে থাকা উচিত? ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কি চিন সমর্থন দিচ্ছে? এইসব নিরর্থক কৌতুহল ও গালগল্পের আবর্জনার বাইরে ভাবতে পারার সামর্থ্য আমাদের এতদিনে হওয়া উচিত ছিলো। হয় নি। তা নিয়ে দুঃখ করার কিছু নাই। কারণ ফ্যাসিস্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদী (পড়ুন, হিন্দুত্ববাদী) মতাদর্শ এবং উপমহাদেশ থেকে ইসলাম নির্মূলের বিরুদ্ধে লড়াই বাংলাদেশের জনগণের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। কখনই না। সামনে দিনগুলোতে আরও কঠিন হবে। একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির লড়াই ছিল একই সঙ্গে পুরা উপমহাদেশব্যাপী ছোটবড় সকল জাতিসত্তার মুক্তির লড়াই। কিন্তু বাংলাভাষী ও বাঙালি এখনও মুক্ত নয়। তারা সীমান্তের দুদিকে কাঁটাতারের বেড়ায় বিভক্ত। রক্তাক্ত। কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানিদের লাশ ঝুলে থাকে। প্রায়ই গরিব, সর্বহারা মানুষকে দিল্লির খুনি বাহিনী হত্যা করে। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বীজ বপন করা হয়েছে, তা আজ হোক কাল হোক পুরা ভারতবর্ষকে বদলে দেবে।
ভারত বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি বহু জাতির দেশ, শুধু 'হিন্দু'র দেশ না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রমান করে কোন জনগোষ্ঠিকে ধর্মের নামে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত করা যায় না। অসম্ভব। ঠিক একই ভাবে ভাষা এবং সংস্কৃতির নামে কোন জনগোষ্ঠিকে তার বিশ্বাস এবং ধর্ম থেকেও বঞ্চিত করা যায় না। ইম্পসিবল। তার ফল হয় ভয়াবহ। কিন্তু চিন্তা ও সংস্কৃতির আদান-প্রদানের মধ্য দিয়েই মানুষ পরস্পরের কাছ থেকে শেখে, ইতিহাসেরও বিবর্তন ঘটে।
এই উপমহাদেশে ইসলাম এসেছে হিন্দুস্তানের মাটিতে নিজেকে কায়েম করবার জন্য। উপমহাদেশের হাজার বছরের সনাতন ঐতিহ্য, প্রজ্ঞা ও সাধনার সঙ্গে মৈত্রী ও আদান প্রদানের সম্বন্ধ মজবুত করার মধ্য দিয়েই সেটা সম্ভব। কার্ল মার্কসের ভাষায় ‘হিন্দুভূত’ হবার একটা ভূমিকা আছে। একে স্রেফ মুঘল শাসন কিম্বা সুলতানি আমল হিশাবে বুঝলে চলবে না। সাংস্কৃতিক দিক থেকে উপমহাদেশে ইসলামের একটা হিন্দুস্তানী রূপ আছে। তেমনি বাংলাদেশে তার একটা বঙ্গীয় রূপও আছে। ইসলামকে শুধু আরব, ইরান, পাঠান, তুরানের সংস্কৃতি ভাবলে হবে না। তার মধ্যে ঐক্য যেমন আছে, তেমনি বৈচিত্র্য এবং বিভিন্নতা আছে। ইতিহাস এভাবেই নানান অবয়ব ধারণ করে। মুঘল বা সুলতানরা এই দেশ থেকে সম্পদ লুন্ঠন করে অন্য দেশে পাচার করবার জন্য আসেন নি। সিন্ধু অববাহিকা থেকে শুরু করে পুরা ভূখণ্ডকে নিজেদের বসত বা দেশ মনে করেছেন তারা। সুফি দরবেশরা এই দেশেরই পথে প্রান্তরে ঘুরে এই দেশেই লীন হয়েছেন। নিবিড় সম্বন্ধ এবং আত্মিক বন্ধনের মধ্য দিয়েই নতুন সভ্যতা গড়ে তোলা সম্ভব। ‘হিন্দু’ কোন ধর্ম নয়, কিন্তু ইসলামের সঙ্গে সিন্ধু নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা সনাতন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশ্রণের মধ্য দিয়ে বাস্তবের যে ‘হিন্দুস্তান’, সেও কোন ধর্মের নামে নাম নয়। অবশ্যই একটি সভ্যতার নাম। কবি ইকবাল এই হিন্দুস্তানেরই জয়গান গেয়েছেন।
চিন যেমন একটি সভ্যতা, ‘হিন্দুস্তান’ও একটি সভ্যতা। চিন নতুন যে যুগের উদ্বোধন ঘটাচ্ছে, তা ক্রমশ প্রাচীন ওয়েস্টফেলিয়ান ‘জাতি-রাষ্ট্র’ মূলক ধারণার ক্ষয় আরও ত্বরান্বিত করবে। পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়ন এবং নিউ লিবারাল ইকনমিক পলিসি তথাকথিত আধুনিক জাতরাষ্ট্রের ক্ষয় ও পুনর্বিন্যাস অনেক আগেই শুরু করেছে। চিনের 'বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'এর ভূমিকা হবে কফিনে শেষ পেরেক মারার মতো ঘটনা। অনেকে বলছেন বটে যে চিনের উত্থান নতুন বিশ্বব্যবস্থার উন্মেষ। ঠিক। কিন্তু সেটা স্রেফ পুরানা কাঠামো বদলে চৈমিক কাঠামো বানানো না। বরং পাশ্চাত্য চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা বুদ্ধিবৃত্তিক বর্গগুলিরও রূপান্তর। পুরানা ও প্রাচীন চিন্তার অভ্যাস দিয়ে উদীয়মান বিশ্ব ব্যবস্থাকে বোঝা যাবে না।
রাষ্ট্রের চরিত্রে পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়ন যে রূপান্তর ঘটাচ্ছে তাকে দ্রুততর করবে চিনের উত্থান। নানান দিক থেকে তা বিচার করে দেখা দরকার। মাত্র এক দশকের মধ্যে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা দ্রুতই আমূল বদলাতে শুরু জরেছে। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি আগামির অনিবার্য বাস্তবতার ওপর নজর রেখে আমাদের এখনকার রাজনৈতিক কর্তব্য ঠিক করতে পারব? ইনশাল্লাহ। আলবৎ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাহলে আজবাজে গুজব ও কল্পনা বাদ দিয়ে কাজে নেমে পড়তে হবে।
একাত্তর স্রেফ বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। একই সঙ্গে সাঁওতাল, চাকমা, ম্রং, মান্দিসহ পাহাড় ও সমতলের সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি, নিজ নিজ জাতিগোষ্ঠির মাতৃভাষার অধিকার, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং বৈচিত্র্য সুরক্ষার লড়াইও ছিল। কিন্তু বর্ণবাদী বাঙালি জাতিবাদীরা একে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির মুক্তির লড়াইয়ে পর্যবসিত করেছিল, ক্ষুদ্র জাতি সত্তাগুলোর ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্য কায়েম করবার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি নি। ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যের মধ্যে যে ঐক্য ও শক্তি আমরা তারই উদ্বোধন ঘটাতে চেয়েছি। আমাদের ব্যর্থতা আছে, কিন্তু লক্ষ্যে কোন বদল হয় নি।
ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কি চিন সমর্থন দিচ্ছে? এই প্রশ্নের একটা উত্তর ইতোমধ্যেই চিন দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৭৬তম জন্মদিন ছিল ১৫ অগাস্ট। শনিবার। এর একদিন আগে শুক্রবার খালেদা জিয়াকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ঢাকার চিনা দূতাবাস উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছে। দূতাবাস কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনা করেন। উল্লেখ করা দরকার ৭০তম জন্মবার্ষিকীর পর থেকে বিএনপির আনুষ্ঠানিকভাবে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেখানে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে চিনের তরফে জন্মদিনের শুভেচ্ছা প্রেরণ অনেক তাৎপর্য বহন করে। প্রথমত চিন বোঝাতে চায়, কোন দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলানো চিনাদের খাসিলতের মধ্যে পড়ে না। অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগের সম্বন্ধকে তারা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে আলাদা রাখতে চায়। বিএনপির নেতৃত্ব বেগম খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো ও উপহারের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য আদৌ বুঝবেন কিনা সন্দেহ। তবে জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যদি কিছু পরিমানও অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তাদের উচিত, চিনের উত্থানের মধ্য দিয়ে যে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পর্যালোচনা করা। হয়তো তরুণ নেতারা সামনে এগিয়ে যাবার নীতি ও কৌশল কিছুটা হলেও নির্ণয় করতে পারবেন। চিন সম্পর্কে পাশ্চাত্যের প্রচারণা দ্বারা আমাদের বিভ্রান্ত হলে ক্ষতি ছাড়া লাভ নাই। যেভাবে আমাদের কাজে লাগে সেভাবেই আমরা চিনের শক্তিশালী উত্থানের অভিজ্ঞতা পাঠ করতে চাই। কারণ আমরা – বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ -- পড়ে পড়ে মার খেতে চাই না।
আমাদের এখানে বুদ্ধি চর্চা কতো দেউলিয়া সেটা বোঝা যায়, যখন একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার ভিডিও দেখে আমরা ভাবতে শুরু করি এর পেছনেও কি চিনের হাত আছে? চিনের আর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই। নাকি হাত রয়েছে ভারত-মার্কিন-ইস্রাইল অক্ষ শক্তির? অথচ তাদের পছন্দের মানুষই ক্ষমতায়। ইন্টারেস্টিং হোল এই ধরনের সমীকরণে প্রায়ই ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্য বাদ পড়ে যায়। বাস্তবে দক্ষিণ এশিয়াকে যে ঔপনিবেশিক শক্তি প্রায় দুই'শ বছর পদানত করে রেখেছিল, সেই ঐতিহাসিক কারণেই এই অঞ্চলে যুক্তরাজ্যের প্রভাব ও হস্তক্ষেপ অনেক অনেক বেশী। সেটা শুধু অর্থ ও রাজনৈতিক সম্পর্ক, গোয়েন্দা তৎপরতা কিম্বা সাহায্য সংস্থাগুলোর পুরানা ঔপনিবেশিক শক্তির বরকন্দাজগিরির জন্য নয়। সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
ঔপনিবেশিক প্রভাব ও আধিপত্যের যে দিকটা আমরা উপেক্ষা করি সেটা হোল কিছু কিছু মতাদর্শের নির্ধারক ভূমিকা। আমাদের সমাজে বিভিন্ন মতাদর্শ কিভাবে তৈরি হয় এবং তারা কি ধরণের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করে ও পরিণতি ডেকে আনে, সে সম্পর্কে আমরা একদমই আলোচনা করি না। যেমন, সাম্রাজ্যবাদ বলতে আমরা সবসময়ই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বুঝি। যেন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস বা ইউরোপীয় দেশগুলো ধোয়া তুলসিপাতা। দ্বিতীয়ত মতাদর্শিক দিক থেকে সংবিধান ও গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কিছু বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে। এই ধারণাগুলো ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত। আমরা রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছি, কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আমাদের ইতিহাস সচেতন করে নি, বরং ইতিহাস বলতে আমরা শেখ মুজিবরের নেতৃত্বে নয় মাস বুঝি। বিশ্ব ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ খবর তো দূরের কথা। কোনদিনই আমরা ফরাসি বিপ্লবের মর্ম, কিম্বা মার্কিন দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং মার্কিন ‘গঠনতন্ত্র’ (Constitution) রচনার ইতিহাস পড়বার, জানবার বা বুঝবার চেষ্টা করি নি। আমরা ধরে নিয়েছি মার্কন যুক্তরাষ্ট্র একটি সাম্রাজ্যবাদী দেশ অতএব তারা কিভাবে একটি ‘গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র’ বৈপ্লবিক কায়দায় প্রণয়ন করলো সেখান থেকে আমাদের কিছুই শিক্ষণীয় নাই। ইংলন্ডে কোন লিখিত গঠনতন্ত্র বা সংবিধান নাই। সেখানে আইন আছে। অতএব আমরাও গঠনতন্ত্রকে কলোনিয়াল আইনের মতো ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া আইনই বুঝেছি। কন্সটিটিউশানেরও বাংলা কামাল হোসেন ও আনিসুজ্জামান করেছেন ‘সংবিধান’। অর্থাৎ আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের কোন প্রক্রিয়ার দরকার নাই। শুধু দরকার ওপর থেকে চাপিয়ে দেয়া কামাল হোসেন প্রণীত ‘আইন’। একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠির রাষ্ট্র গঠনের দলিল প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে অস্বীকার ও নস্যাৎ করবার আদিপাপ আমাদের রাজনীতি ধারণ করে। এখনও এই পাপ থেকে নিষ্ক্রান্ত হতে পারে নি। ঔপনিবেশিক খাসিলত আওয়ামী লীগ পুরা মাত্রায় ধারণ করে। তারা মনে করে স্বাধীন বাংলাদেশও তাদের একটি উপনিবেশ মাত্র। দিল্লির তরফে এই দেশ ঔপনিবেশিক কায়দায় ড. কামাল হোসেন প্রণীত সংবিধান দিয়ে শাসন করা তাদের একচেটিয়া অধিকার।
ইউরোপ যেহেতু সরাসরি আমাদের কলোনিয়াল মনিব ছিল না, অতএব ইউরোপীয় এনলাইটমেন্টের তর্ক বিতর্ক থেকেও যেন আমাদের কিছুই শিক্ষণীয় নাই। যেমন ফরাসি বিপ্লব। আমাদের পুরানা মনিবই রাজ রাজেশ্বর। যা কিছু শিখতে হবে সেটা ঔপনিবেশিক ইংরেজদের কাছ থেকেই আমরা শিখি। আমাদের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি কিভাবে ঔপনিবেশিক মন- মানসিকতা দ্বারা প্রভাবিত এবং আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে তার ফল কি দাঁড়িয়েছে তা বিশাল গবেষণার একটা ক্ষেত্র। যেহেতু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদই আমরা চিনি, তাই সি আই এ নিয়ে আমাদের সকল দুশ্চিন্তা। তার দরকার আছে। কিন্তু ব্রিটিশ গোয়েন্দা এবং তাদের বাংলাদেশী এজেন্ট আমাদের নজরের বাইরেই থেকে যায়। আজ হোক কাল হোক, ইতিহাসের লেজ ও পুচ্ছ শনাক্ত করবার জন্য এই অঞ্চলে যুক্তরাজ্যের প্রভাব ও হস্তক্ষেপ নিয়ে আমাদের আলাদা গবেষণা করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক দুর্দশার জন্য কলোনিয়াল মতাদর্শের ভূমিকা বিচার জরুরি হয়ে পড়েছে।
চিন নিয়ে আমাদের বর্তমান আলোচনা পুরানা মতাদর্শিক বোঝা থেকে মুক্ত হবার একটা চেষ্টা। কিম্বা বের হবার জন্য পথ অন্বেষণও বলা যায়। চিন নিয়ে আলোচনায় যে দুটি কলোনিয়াল মতাদর্শ বাংলাদেশে আমাদের জন্য বিশেষ ভাবে প্রাসঙ্গিক সেটা হচ্ছে সংসদীয় গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র। ‘সমাজতন্ত্র’ বাংলাদেশে শুধু ফ্যাসিস্ট মতাদর্শের ভিত্তি হিশাবে কাজ করে নি, একটা গতিশীল বাজার ব্যবস্থা বিকাশের ক্ষেত্রেও মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। একে আওয়ামি-সিপিবি বা পেটিবুর্জোয়া সমাজতন্ত্র বলা যায়, কারণ রাজনীতির এই ধারাটি মূলত প্রতিক্রিয়াশীল সমাজতন্ত্রের ধারক ও বাহক। এর সঙ্গে মার্কস, লেনিন বা মাও জে দং-এর সমাজতন্ত্রের সঙ্গে মিল নাই, এটা এংলো বা বাংলাদেশের বিশেষ চরিত্রের পেটিবুর্জোয়া সমাজতন্ত্র।
বাংলাদেশে ‘সমাজতন্ত্র’ এবং ‘সংসদীয় গণতন্ত্র’ সংক্রান্ত ধারণাকে আমি ‘এংলো’ বলছি, কারন এই দুটোই মূলত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ এবং এংলো আধিপত্যের কুফল। ফলে পাশ্চাত্য যখন দাবি করে চিনে একদলীয় শাসন চলছে আমরা মনে করি সেটা বুঝি চিন দেশে ‘সংসদীয় গণতন্ত্র’ নাই বলেই বলা হচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্রের নামে যেসব তামাশা করি, সেটাই বুঝি ‘আদর্শ’। আমরা বুঝতে পারি না গণতন্ত্রের নানান ধরণ হতে পারে। প্রতিটি দেশই সেটা নিজের ইতিহাস ও অভিজ্ঞতার আলোকে আবিষ্কার ও রূপ প্রদান করতে পারে। নির্বাচন সর্বস্ব তথাকথিত বঙ্গীয় সংসদীয় গণতন্ত্র বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং ফ্যাসিস্ট একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম করেছে। এই তিক্ত অভিজ্ঞতার পরও নির্বাচন ও সংসদীয় গণতন্ত্র আমাদের পর্যালোচনার বিষয় হয়ে ওঠে না। আমরা চোখের সামনেই দেখছি, তথাকথিত সংসদীয় গণতন্ত্র বাংলাদেশে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চোর ডাকাত ছেঁচ্ছরদের নির্বাচিত করবার ব্যবস্থা করেছে। ডাকাতি ও লুটপাটের ব্যবস্থা পোক্ত করেছে। তারপরও আমরা গণতন্ত্রের মুখস্ত ফর্মূলা হিশাবে সংসদীয় গণতন্ত্রকেই গণতন্ত্রের ছহি ও উচ্চতর রূপ ভেবে বসে আছি। যেন অর্থনীতি এবং তার রাজনৈতিক রূপের মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লুটপাটই রাষ্ট্রের সংবিধান ও রূপের নির্ণায়ক – এই সহজ সত্য আমাদের নজরে পড়ে না। নতুন সংবিধান প্রণয়ণ এবং নতুন ভাবে বাংলাদেশকে নির্মাণের কোন বিকল্প নাই। বাংলাদেশের ‘সংবিধান’আকাশ থেকে আমদানি হয় নি। যে শ্রেণী বাংলাদেশকে লুটের ভাণ্ডার মনে করে সংবিধান মূলত তাদের ‘ইচ্ছ ও অভিপ্রায়ই’ ধারণ করে।
এখান থেকে শিক্ষণীয় কি? আমাদের বদ্ধমূল ধারনা, রাষ্ট্রের বিদ্যমান রূপ ও মর্মের সঙ্গে আর সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে। এটা ভুল। যদি বাংলাদেশের অবস্থা বুঝি তাহলে এটাও আমরা কাণ্ডজ্ঞানেই বুঝব যে চিনের বিশাল অর্থনৈতিক উল্লম্ফন বিশেষ ধরণের রাষ্ট্র এবং প্রশাসনিক আবিষ্কার ছাড়া অসম্ভব ছিল। আবারও বলি ‘বিশেষ ধরণের রাষ্ট্র এবং ‘প্রশাসনিক আবিষ্কার’। চিন পাশ্চাত্য কোন দেশ না। কিন্তু চিন পাশ্চাত্য চিন্তা বা জ্ঞানকাঠামোর বাইরে তাদের মতো করে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের শাসন ব্যবস্থা আবিষ্কার করতে পেরেছে। এটা সম্ভব সেটা আমরা ঘূণাক্ষরেও আমাদের ঔপনিবেশিক বুদ্ধি-বিবেচনার কারণে ভাবি নি। ভাবতেও পারি না। তাহলে চিন নিয়ে আমাদের আলোচনার শিক্ষণীয় দিক হবে চিনাদের শাসন ব্যবস্থা বোঝার জন্য আগ্রহ তৈরি করা। দ্বিতীয়ত কি ধরণের গণশক্তি বা গণক্ষমতা কায়েম করতে পারার সাফল্যের কারনে চিন মহাশক্তিধর দেশ হিশাবে ক্রমশ হাজির হচ্ছে। যদি আমরা সেই আগ্রহ তৈরি করতে পারি তাহলে রাষ্ট্রের রূপ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সম্পর্ক বা সম্বন্ধ বিচারের প্রাথমিক সূত্রগুলো হয়তো আমরা খানিক বুঝতে শিখব। এবং বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার বাস্তব পদক্ষেপগুলো কি হতে পার সেটাও বুঝব।
দ্বিতীয় যে কলোনিয়াল বা এংলো মতাদর্শ আমাদের বুদ্ধি গ্রাস করে রেখেছে তার ফলে বঙ্গীয় ‘সমাজতন্ত্র’ আমাদের মারাত্মক বিভ্রান্ত করে রাখে। সমাজতন্ত্র মানে বাংলাদেশীরা ‘কমিউনিজম’ বোঝে, যার মানে ব্যক্তিগত সম্পত্তির আমূল উচ্ছেদ। তাদের বোঝানো হয়েছে কমিউনিজম মানে কারো কোন সম্পত্তি থাকবে না, সব রাষ্ট্র নিয়ে যাবে। এইসব সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম সম্পর্কে বিশুদ্ধ অজ্ঞতা, সে সম্পর্কে অন্যত্র আলোচনা করব। কিন্তু বাংলাদেশীদের সমাজতন্ত্র সম্পর্কে এংলো বা পেটিবুর্জোয়া ধারণার কারণে আমরা মনে করি চিনে যদি কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় থাকে তাহলে তো চিনে কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকার কথা না, সবই রাষ্ট্রীয় মালিকানার অধীনস্থ হবার কথা। কিন্তু উৎপাদন শক্তির দ্রুত বিকাশ এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য চিনের কমিউনিস্ট পার্টি যখন সীমিত ক্ষেত্রে পরিকল্পিত ভাবে ব্যক্তিগত মালিকানা ব্যবস্থা কায়েম করলো, তখন বাংলাদেশীরাও পাশ্চাত্য প্রপাগান্ডায় বিশ্বাস করে ভাবতে শুরু করল, চিন এখন পাশ্চাত্যের মতোই একটি পুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে চলেছে। এটা ফাঁপা গল্প। চিন বাজার ব্যবস্থা উজ্জীবিত করেছে, এটা সত্য। কিন্তু তাকে পাশ্চাত্যের ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যায় না। চিন অনেক সময় একে ‘মার্কেট সোশিয়ালিজিম’ বা ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থা’ বলে থাকে। এতে বিভ্রান্তির মোচন হয় না, আরো বাড়ে। চিন বলতে চায়, বাজার রয়েছে বটে, কিন্তু তার ওপর কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এটা মোটামুটি বোঝা যায়। কিন্তু বাস্তবে তার রূপটা কেমন তা নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে।
রাষ্ট্র যদি সব সম্পত্তির ‘মালিক’ হয় তাতে গরিব ও সর্বহারা শ্রেণীর অবশ্য কিছুই যায় আসে না। কারন তারা আগেই সব হারিয়ে বসে আছে। কিন্তু সমাজতন্ত্রের এই পাতি বুর্জোয়া ধারণার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিক্রিয়া ঘটে মূলত পেটি বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যে। পেটিবুর্জোয়া শ্রেণির কাছে এই ধরণের ‘সমাজতন্ত্র’ই আদর্শ হয়ে ওঠে। কেন? কারণ এ ছাড়া সম্পদ লাভের আর কোন পথ পেটি বুর্জোয়ার জানা নাই। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে পেটি বুর্জোয়া সব সময়ই গরিব ও সর্বহারায় পরিণত হবার ভয়ে আতংকিত থাকে। তাই রাষ্ট্রের মাধ্যমে তারা সম্পদের মালিক হতে চায়। বাংলাদেশে কমিউনিস্ট বলতে এদেরকেই -- পোটিবুর্জোয়া সমাজতন্ত্রীদেরই – বোঝায়।
বাংলাদেশে পেটি বুর্জোয়া সমাজতন্ত্র যেমন প্রবল, তেমনি তার বিরুদ্ধে উঠতি বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিক্রিয়াও সমান প্রবল। কিন্তু পেটি বুর্জোয়া সমাজতন্ত্রের ধারণা সাধারণ মানুষকেও প্রভাবিত করে। সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা হচ্ছে যদি কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসে আর কারো কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি যদি না থাকে, সবই যদি রাষ্ট্রীয় মালিকানার অধীন হয়ে যায়, তাহলে সম্পত্তির মালিক হবার যে গোপন ইচ্ছা তাদের মধ্যে কাজ করে তা বাস্তবায়িত হবে কিভাবে? অতএব কমিউনিস্টদের তারা কখনই ক্ষমতায় দেখতে চায় নি। এমনকি কমিউনিস্ট মওলানা ভাসানীকেও তারা বিশ্বাস করে নি। সমাজতন্ত্রের সামনে বিশেষণ হিশাবে ইসলাম বসিয়েও ভাসানি অনুসারীরা বিশেষ সুবিধা করতে পারেন নি। এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ট্রাজেডি। কিন্তু সম্পত্তির মালিক হবার পেটিবুর্জোয়া আকাঙ্ক্ষা জারি থাকার কারণে বঙ্গীয় পেটিবুর্জোয়া শ্রেণীর সমাজতন্ত্রের শ্লোগানও অপ্রিয় হয়ে যায় নি। কমিউনিস্টদের সাইনবোর্ড বাংলাদেশে এখনও আছে। কিন্তু তাদের পেছনে জনগণ যায় নি, গিয়েছে শেখ মুজিবরের পেছনে। পেটিবুর্জোয়া সমাজতন্ত্রীরা শেখ মুজিবর রহমানকে দিয়ে সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছে। পরিণতিতে বাংলাদেশ বাকশাল পেয়েছে। সবই ইতিহাসের প্রকট প্রহসন বটে। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। উপেক্ষা করার উপায় নাই।
কমিউনিজম মানে ব্যক্তিগত সম্পত্তির আমূল উচ্ছেদ, কমিউনিস্ট ইশতেহারে এ রকম কোন প্রলাপ নাই। মার্কসের তো বলার প্রশ্নই আসে না, কিন্তু সমাজতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের ধারণার দৌড় এতোটুকুই। কমিউনিস্টদের কাছে বিবেচ্য বিষয় ব্যক্তিগত সম্পদ বা সম্পত্তি নয়, সম্পত্তির মালিকানাও নয়। বরং সবাই সম্পদ ভোগ করতে চাই বলেই তো আমরা বিপ্লব চাই। তাই ব্যক্তিগত সম্পত্তি না থাকলে মানুষ ভোগ করবে কিভাবে? কমিউনিস্ট রাজনীতির বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে উৎপাদনের উপায়ের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা। আবারও খেয়াল করতে হবেঃ ‘ব্যাক্তিগত সম্পত্তি না, উৎপাদনের উপায়ের ওপর ‘ব্যাক্তিগত মালিকানা’। কিন্তু ‘ব্যক্তিগত মালিকানা’ নামক কোন বিমূর্ত সোনার পিতলের কলস নাই । কিন্তু আছে তো বটেই। যা আছে বা থাকে তা সুনির্দিষ্ট ভাবে জমির মালিকানা, কলকারখানার মালিকানা কিম্বা পুঁজির মালিকানা, ইত্যাদি। কমিউনিস্ট অর্থনৈতিক সংস্কারের বৈশিষ্ট্ হচ্ছে কি ধরণের ‘মালিকানা’ – অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে কি ধরনের উৎপাদন, বিতরণ, বিনিময় ও ভোগ ব্যবস্থা গড়ে তুললে উৎপাদন শক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটে এবং জনসংখ্যার বিপুল অংশকে আমরা দারিদ্রের ভয়াবহ জীবন যাপন থেকে টেনে তুলতে পারি। ‘মালিকানা’ কমিউনিস্ট চিন্তায় স্রেফ আইনী বর্গ না। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক বা উৎপাদন সম্পর্ক। তাই চিনের অর্থনৈতিক সংস্কারের আলোচনায় আইনী অর্থে সম্পত্তির মালিকানার তর্ক দিয়ে আমরা কিছুই বুঝব না। আমাদের বুঝতে হবে সামগ্রিক ভাবে: চিন কি ধরনের উৎপাদন, বিতরণ, বিনিময় ও ভোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলে বিশ্বে শক্তিশালী সাম্রাজ্য হিশাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছে, সেটাই আমাদের বোঝা দরকার। চিন যদি পারে, আমাদের অবস্থারও আমরা রূপান্তর ঘটাতে পারব। আমাদেরকেও আমাদের উপযোগী উৎপাদন, বিতরণ, বিনিময় ও ভোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে অতি দ্রুত আমরা দরিদ্র অবস্থা থেকে মুক্তি পাই এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের জন্য একটা শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করতে পারি। এই বিশ্বাসটুকু ফিরিয়ে আনার দরকার। চিন নিয়ে আমাদের আলোচনার আগ্রহ এখানে।
বিপ্লবোত্তর চিন যখন ১৯৭৮ সালে অর্থনৈতিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে সীমিত ক্ষেত্রে উৎপাদনের উপায়ের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা ব্যবস্থার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু পার্টির অবস্থান দুর্বল করে নয়। চিনার উদ্দেশ্য রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন ভাবে বিন্যস্ত করা যেন বিশ্ব বাজারে চিন নিজের জন্য একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারে। কিন্তু আমরা পাশ্চত্যের প্রপাগান্ডাতেই বিশ্বাস করেছি। সেটা হোল, কমিউনিজমের দিন শেষ, ইতিহাসের অমোঘ পরিসমাপ্তি ঘটেছে, ‘এন্ড অফ হিস্ট্রি’। পাশ্চাত্যেরই জয় হোল। চিনকেও শেষাবধি পুঁজিতন্ত্রকেই মেনে নিতে হোল, ইত্যাদি। বলা হোল, লিবারেল রাজনীতি এবং কাছাখোলা পুঁজিতন্ত্র – যাকে নিউ লিবারেল ক্যাপিটালিজম বা ফাইন্যান্সিয়াল ক্যাপিটালিজম ইত্যাদি নানা নামে এখন ডাকা হয় – তারই জয় হোল। কিন্তু এই চিন সেই চিন না, যে চিনকে তারা তাদের প্রতিচ্ছায়া হিশাবে দেখবার জন্য পাশ্চাত্য উদ্গ্রীব। পাশ্চাত্য চিনকে বুঝবার আগেই চিন বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।
অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য চিন নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিগত ‘মালিকানা’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। বাজার ব্যবস্থাকে কাজ করতে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থায় প্রতিযোগী হয়ে নেমেছে। সবই করেছে তার বিশাল জনগোষ্ঠিকে দারিদ্র থেকে টেনে ওপরে তুলে আনতে। কিন্তু চিনের এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মানে বোঝার জন্য পাশ্চাত্য বিশেষ আগ্রহী হয় নি। আমরাও পাশ্চাত্য প্রপাগান্ডার জোরে নত মস্তকে মেনে নিয়েছিলাম কমিউনিজমের দিন শেষ, চিনও বুঝি শেষ পর্যন্ত...।
না। শেষ তো মোটেও না। পাশ্চাত্যের বিপরীতে এশিয়ার জাগরণ সবে শুরু হয়েছে মাত্র!